বস বর পর্ব ১৭+১৮

#বস_বর (পর্ব-১৭ ও ১৮)
পর্ব-১৭
Writer : Eti Chowdhury
.
.
সকালে।

রোদের ঘুম ভাংঙ্গেই চেয়ে দেখে তার মাথার কাছে মেয়েটা বসে রয়েছে। চোখ মুখ ফুলে একাকার অবস্থা। রাতে মনে হয় খুব কেঁদেছে। অপলক চেয়ে রইলো রোদ ইতির দিকে।

কতক্ষণ ইতির পানে চেয়ে রইলো জানি না। হঠ্যাৎ ইতি নড়ে উঠলো। রোদ আবার ঘুমানোর ভান করে শুয়ে রইলো।

ইতি চোখ মেলে দেখে রোদ এখনো ঘুমাচ্ছে। একমাস পর এই মানুষটাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে তার। ভাবতেই বুকটা ফেটে কান্না আসছে ইতির। “সে কিভাবে পারলো আমাকে অন্য কারো কথা বলতে। তার কি একবারো বুকটা কামড়ে উঠলো না। আমি কি ওনার জন্য কিছুই না। উনার একটুও কষ্ট হচ্ছে না”। ভাবতেই যেন ইতির চোখে রাজ্যের কান্না চলে এলো। দৌড়ে পালিয়ে গেলো মেয়েটা। এই কষ্ট তাকে দেখাতে চায় না ইতি যে তা বুঝে না। রোদ তো ইতিকে বুঝলোই না। ইতির মনটাকেই বুঝলো না। ইতি নিজের কষ্টের ভাগ রোদকে দিবে না। যে তার ভালোবাসার ভাগ নিলো না তাকে ইতি কষ্টের ভাগ কখনোই দিবে না। “আমার কষ্ট গুলো আমারই থাক” বলে ইতি বাথরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। বাথরুমে এসে মিররের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে ইতি। পাগলের মতো নিজের শরীরে কিছু খুঁজতে লাগলো মেয়েটা। ভালোবাসা হ্যাঁ, ভালোবাসা খুঁজতে লাগলো। নিজের অজান্তে রোদের দেয়া ভালোবাসা, ভালোবাসার দাগ খুঁজতে লাগলো। আচমকাই বুকের খানিকটা কাছে পেয়েও গেলো ইতি রোডের দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন আজও নীলচে দাগটা প্রগাঢ় হয়ে সটান হয়ে ইতিকে বলছে তোর স্বামীর দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন আমি। পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো। না পাওয়া ভালোবাসা আর পাবে না বলে। শেষ যে আশাটা ছিলো তাও রোদ নিজে শেষ করে দিলো। আর কোন ভরসায় থাকবে ইতি।

রোদ উঠেই দেখে ইতি নেই। গেলো কোথায়। অনেক্ষণ অপেক্ষা করে শেষে বাথরুমে যাবে কিন্তু বাথরুমের দরজা লক করা। ওহ ইতি ভিতরে হয়ত। রোদ বাহিরে পায়চারি করতে লাগলো। অনেক সময় হয়ে গেলো কিন্তু মেয়েটা বের হচ্ছে না। রোদের ভয় লাগতে শুরু করে। এর আগেও মেয়েটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। চোখ, মুখের যে অবস্থা দেখলো রোদ নিজে একটু আগে এখন তার ভয় করছে না জানি কিছু করে বসে আবার। কিন্তু ও এমন করছে কেনো? ভেবে পাচ্ছে না রোদ। ইতি তো খুশি রোদের থেকে মুক্তি পেয়ে তাহলে কেনো এমন করছে? তাহলে কি ও চায় না মুক্তি? ও কি থাকবে আমার সাথে? কথাটা ভাবতেই কেমন আনন্দ লাগছে রোদের যদি সত্যি তা হয় আনন্দে রোদ মরেই যাবে। দূর কি সব ভাবছে সে মরলে তার পাগলীটার পাশে কে থাকবে। কিন্তু কাল রাতে যে কথা বলল রোদ তারপর কি ও থাকবে রোদের সাথে? এটা ভেবে চিন্তায় পড়ে যায় রোদ।

ইতি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। বাথরুমের দরজা খুলতেই রোদের মুখোমুখি হলো সে। একদম কাছে দুজন দুজনার। রোদ নড়ছেন না। আর ইতি তো রোদকে দেখলে নড়তেই ভুলে যায়।

ভিজা চুলে যে কি লাগছে ইতিকে দেখতে বলে বুঝাতে পারবে না তা রোড। মেয়েটা তাকে পাগল করেই মারবে। “থমকে গেলে কেনো? আসো না আরেকটু কাছে প্লিজ। আজ অধিকার থাকলে এখনি ওকে কোলে তুলে নিতাম। এরুপ যে মাটিতে পরতে দেয়া যাবে না। এরুপ, এ যৌবন সব যেন আমার জন্য”। নিজেকে দেওয়ানা দেওয়ানা লাগছে মনে মনেআকাশ কুসুম ভাবছে রোদ।

ইতি আর রোদের চোখে তাকাতে পারছে না। রোদের চোখে তাকালেই কাল রাতের কথা মনে পরে যাচ্ছে ইতির। তাই চোখ সরিয়ে নিলো। পাশ কেটে সরে গেলো ইতি।

ইতি সরে যেতেই রোদ খেয়াল করল সে বোকার মত ফ্যালফ্যাল চেয়েছিলো ইতির দিকে। ফ্রেস হতে বাথরুমে ডুকে গেলো রোদ। মনে মনে আফসোস করছে সে, “ইসসস…..একটু যদি ওকে ছুয়ে দিতে পারতাম ওকে”। ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলো রোড। গিয়েই আশ্চর্য হয়ে গেলো রোদ। ইতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– সেকি আজ নাস্তা তৈরি করোনি যে? তোমার কি শরীর খারাপ?

বলেই রোদ ইতির দিকে কিছুটা আগালো ইতির জর কিনা দেখার জন্য।

রোদের আগানো দেখে ইতি খানিকটা পিছিয়ে গেলো। জবাবে ইতি বলল,

– নাহ আমার কিছুই হয়নি। আমি ঠিক আছি।

মাথা কিছুটা নিচু করেই বলল ইতি।

ইতিকে পিছাতে দেখে রোদ থমকে গেলো। আজ ইতির পিছিয়ে যাওয়াটা অন্য রকম ছিলো। যেন পিছিয়ে যাচ্ছে না রোদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। রোদ বলল,

– তাহলে আজ কেবল জ্যাম পারুটি যে? অবশ্য এতে আমার প্রবলেম নেই।

– হুম জানি আপনার প্রবলেম নেই। অভ্যাস করার জন্য।

– অভ্যাস?

ইতি রোদের দিকে তাকিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলল,

– এক মাস পর তো আর আমি থাকবো না। তখন কে আপনাকে এতো নাস্তা তৈরি করে খাওয়াবে তাই এই মাসটা না হয় বাজে অভ্যাসটা পরিবর্তন করে নেন।

রোদ মনে মনে বলল, “বাজে অভ্যাস”। ইতির চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। রোদ আর কিছুই বলল না। বসে পরলো নাস্তা করতে জ্যাম আর পারুটি দিয়ে। ইতির হাতের এতো মজার মজার খাবার খেয়ে এসব রোদের গলা দিয়ে নামছে না। তাই পানি দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছে।

ইতি মনে মনে বলছে,

– এতোটুকু পাউরুটি খেতে আপনার কষ্ট হচ্ছে পানি দিয়ে গিলে খাচ্ছেন। আমি চলে গেলে কিভাবে থাকবেন আপনি?

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবে, “বেশ পারবেন যেমন পাউরুটি পানি দিয়ে গিলে খাচ্ছেন তখন না হয় আমার জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন”।
.
রোদ আগে বেরিয়ে গেলো।

নিচে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ইতির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

ইতি নিচে নামতেই দেখে রোদ তার জন্য গাড়ির দরজা খুলে অপেক্ষা করছে। ইতি রোদের দিকে পা বাড়ালো।

ইতি রোদ দিকে আসতেই সে সরে দাড়ালো। সেই সাথে হালকা একটা হাসি দিলো।

ইতি গাড়ির সামনে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তা দেখে অবাক হয়ে রোদ ইতির দিকে তাকালো। রোদ কিছু বলার আগে ইতি নিজেই বলল,

– এই অভ্যাস টাও যে পরির্বতন করতে হবে। আজ থেকে আমি একাই যাবো।

বলে ঘুরে দাড়ালো ইতি।রোদ সাথে সাথে ইতির হাতটা ধরে ফেলল আর বলল,

– কথা তো ছিলো শেষ কটা দিন আমরা বন্ধু হয়ে থাকবো।

ইতি রোদের দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে মুখে একটা হাসি নিয়ে সাজানো হাসি বলল,

– হ্যাঁ কথা ছিলো, কথা আছে। শুধু শেষ কটা দিন নয় বাকিটা জীবনই বন্ধু হয়ে থাকবো যত দিন বেঁচে থাকি।

রোদ অসহায়ের মত চেয়ে রইলো।ইতি রোদের হাত থেকে নিজে হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

– তাই বলে তো এক বন্ধু আরেক বন্ধুর উপর ডিপেন্ডেড হয়ে যেতে পারে না তাই না। আমিও চাই না। আশা করি আপনি বুঝবেন আমার অবস্থাটা।

ইতি রোদকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। বেরিয়ে গেলো।

রোদ ইতির চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলো। যেনো তার ইতি তার কাছ থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছে। গাড়িতে বসে রইলো রোদ। কিছুই ভালো লাগছে না তার। এতো ভালোবাসে ইতিকে তাও কেনো পারছে না ওকে আটকাতে। কেনো পারছে না আমি ওকে জোর করে ধরে রাখতে। গাড়ি ঘুরালো রোদ অফিস যাওয়ার জন্য। বাস স্টেন্ডের কাছাকাছি আসতেই রোদ দেখে ইতি দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য এই রোদের মধ্যে কি কষ্টটাই না হচ্ছে মেয়েটার। রোদের বুক ফেটে যাচ্ছে। কিছুই করতে পারছে না সে। অফিসের দিকে চলে গেলো সে।
.
অফিসে।

ইতি অফিসে ডুকতে দেখে রাফসান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

– আজ লেট হয়ে গেলো যে?

– বাস পেতে দেরি হয়ে গিয়ে ছিলো।

রাফসান অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

– বাস?

– হুম।

– তুমি…

– যাদের জীবনের রাস্তাটাই এক নয় তাদের এক সাথে অফিসে এসে লাভ কি বলো। তাই সব পথ আলাদা হওয়াই ভালো।

বলেই একটা হাসি দিলো ইতি। সাথে আরো বলল,

– প্লিজ তুমি আমায় আর কিছু বলো না। সব শেষ আর কিছুই সম্ভব না।

– কেনো?

– গতকাল রাতে উনি আমায় আদি কথা বলেছেন।

– আদি?

ইতি হাসি মুখে বলল,

– হ্যাঁ, আদি নাকি আমায় পছন্দ করে আর আমি যেন ওর কথা ভেবে দেখি। উনি আমায় সুখে দেখতে চান।

– এইসব বানোয়াট হাসি আমার সামনে একদম হাসবে না যত্তসব। এগুলোর বলার সাহস নেই ভালোবাসতে আসে আজাইরা। এই তোমাদের মতো পাবলিকের জন্যই প্রেমে ব্যার্থতা আসে। না হলে সবাই সুখে থাকতো। যত্তসব আবার ন্যাকা হাসি দেয়। আটকানোর সামর্থ্য নেই আসছে।

রাফসান অনেকটা রেগেই কথাগুলো বলে হন হন করে বেরিয়ে চলে গেলো।

রোদ অফিসে আসার পর থেকেই একটার পর একটা ফাইল দেখেই যাচ্ছে নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না। কাজ অনেক বেশি সে জন্য নয় ইতির কথা যেন মনে না পরে তাই। ইতির দিকে যেন বার বার চোখ না যায় তাই ইচ্ছে করে এতো কাজ করছে রোদ। নিজের মস্তিস্ককে সুযোগ দিতে চাচ্ছে না ইতির কথা ভাবার।

রিমি রোদের সাথে কাজ করে রিতিমতো হাপিয়ে যাচ্ছে। এতো কাজ এই মানুষটা করে কিভাবে।

রোদের মনে হয় সকাল থেকে সে এক কাপ খায়নি। কেউ তাকে এক কাপ কফিও দেয়নি।

– আমার কফি কোথায়?

রোদ চেঁচিয়ে উঠে। ভয় পেয়ে রিমি বলে,

– স্যার আমি এখুনি আনছি।

চট জলদি রিমি গিয়ে রোদের জন্য কফি নিয়ে এলো। রোদ কফি মুখে দিতেই আবার তা বেরিয়ে এলো।

– এটা কি?

রিমি থতমত খেয়ে গেলো বলল,

– ক..কফি স্যার।

– এটা কে কফি বলে? কে বানিয়েছে?

– ক্যান্টিনে স্যার।

রোদ উঠে ইতির কেবিনে গেলো কফির মগ হাতে নিয়ে। গিয়ে দেখে আদি ইতির সামনে বসে কাজ করছে। রোদকে ডুকতে দেখেই দাড়িয়ে গেলো। আদি বলে,

– স্যার আপনি?

আদির স্যার বলায় ইতি মাথা তুলে তাকায়। রোদ ডুকতে ডুকতে বলে,

– কেনো আমার কি আসতে মানা নাকি?

– না আসলে তা নয় মানে…

ইতি চুপ করেই রইলো। রাগে রোদের চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে। ইতি স্পষ্ট বুঝতে পারছে এ রাগটা কেবল তার উপর। কারণ রোদ যখন ইতির উপর রাগ করে তখন তার চোখ উজ্জল্য টকটকা লাল হয়ে যায়। আর অন্যদের উপর রাগ করলে কালচে লাল হয়। এটা সত্যি কি না ইতি জানে না। এটা কেবল ইতির মনে হয়। ইতির উপর তো রোদের সব কিছুই ভিন্ন হয় রাগটাও ভিন্ন লাগে ইতির কাছে। রোদে আদিকে বলে,

– হয়েছে আদি তুমি তোমার ডেস্কে যাও রাইট নাও।

আদি আর একটাও কথা না বলে বেরিয়ে গেলো। সরিও বলল না। আদির কোন দোষ নেই কিন্তু তাও ইউজুয়ালি ও এটাই করে দোষ থাকুক বা না থাকুক সরি বলে চলে যায়। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম হলো।

রোদ ইতির কিছুটা কাছে চলে গেলো। তবু কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে। রোদকে কাছে আসতে দেখে ইতি শক্ত হয়ে গেলো। কিন্তু রোদ পুরোপুরি কাছে এলো না ইতির থমকে গেলো সে। রোদ বলে,

– এখন কি আমার কফিটাও বানানো যাবে না?

ইতি মাথা তুলে রোদের দিকে তাকালো। রোদ নিজেও বলল,

– ও এটাও তো বাজে অভ্যাস আর এই একমাসে সেটাও পরির্বতন করতে হবে তাই না ?

বলেই চিৎকার দিলো রোদ,

– কফি মাই ফুট। খেলাম না কফি। এর চাইতে হাজার গুন বেটার কফিই খাই না আর এটা তো…

রাগে গজ গজ করতে লাগলো রোদ। বেরিয়ে আসছিলো সে ইতি ইতির কেবিন থেকে আবার ঘুরে এসে ইতি সামনে কফির মগটা আছাড় দিয়ে ফেলে চলে গেলো। নিজের কেবিনে এসে রিমিকে বলল,

– রিমি তুমি যাও তো।

রোদের চিৎকার শুনে ভয়ে রিমি বেরিয়ে গেলো।

রাগে রোদ নিজের কফির মগটা ভেঙ্গে ফেললেন। এই মগটা ছাড়া সে কফিই খায়না আর আজ। বসে মগের ভাংঙ্গা টুকরো গুলো তুলতে লাগলো ইতি। বেখেয়ালে লেগে হাত কিছুটা কেটে গেলো।

– সে কি? রক্ত পরছে যে।

– না তেমন লাগে নি।

– বললেই হলো আমি দেখছি তো কি পরিমাণ রক্ত পরছে। দেখাও দেখি।

আসলেই অনেকটা কেটেছে। কিন্তু তাকে ইতির মাথা ব্যাথা নেই।

– আহা লাগবে না বললাম তো।

আদি ধমকের সুরে বলল,

– একদম চুপ কোন কথা বলবা না।

ইতি চুপ করে রইলো। কিছু বলল না।

ইদানিং আদিটা ইতির বড্ড খেয়াল রাখছে। সব সময় পাশে পাশে থাকছে। সকালে না পারলেও অফিসের পর ইতিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছে। আদি এখনো জানে না ইতি রোদের বাসায় থাকে তাই গলির মোড়েই ইতি নেমে যায়।কারণ আদি এখনো জানে না ইতি রোদের বউ।

রোদ সারাক্ষন কাজ করে শুধু কাজ কাজ আর কাজ। একটা মানুষ কত কাজ করতে পারে। তার কাজ করা হয়ত রোবটকেও হার মানাবে। গত দশ দিনে রোদ তিনটে বড় বড় প্রোজেক্ট লঞ্চ করেছে। রোদ চাইছেন টা কি? শুধুমাত্র ইতিকে ইগনোর করার জন্য এতো কাজ করছে সে। ঠিক মতো খায়ও না। শুধু সকালে ইতির হাত দিয়ে এগিয়ে দেয়া পাউরুটি আর জ্যামটাই সময় মতো খেতে দেখে ইতি তাও পানি দিয়ে গিলে খায়। মুখটা অনেক মলিন হয়ে গেছে তার। আর যে মাত্র ২০ দিন বাকি।

কাজ রেখে অফিসে বসে বসে এসব ভাবছে রোদ। হঠ্যাৎ তখনি আদির আগমন। এসে সোজা ইতির সামনে দাড়ালো। তা দেখে ইতি বলে,

– কি হলো এভাবে দাড়ালে যে? কিছু বলবে?

– দেখো আমি এতো ভনিতা করতে পারবো না।

– কি?

– আমি সোজা মানুষ তাই সোজাসুজি বলছি।

– কি বলবে?

– আমি তোমাকে পছন্দ করি।

ইতি একটুও অবাক হয়নি। রোদ তো আগেই বলেছে ইতিকে আদির মনের কথা। ইতি তো আগে থেকেই জানতো। কিন্তু….

– প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

ইতি আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুই বল না।

– আমি জানি তুমি কি ভাবছো। তোমার আর স্যারের বিয়ের কথা তো।

ইতি চোখ বড় বড় করে আদির দিকে তাকালো। আদি বলল,

– হ্যাঁ, আমি সব জানি আর সব জেনেই বলছি আমি তোমাকে পছন্দ করি। সব জেনেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। কি ভাবছো আমি কিভাবে জানি।

একটা হাসি দিয়ে আদি বলল,

– স্যার নিজেই আমাকে সব বলেছেন।

– স্যার!!!!!

– হ্যাঁ, স্যার বলেছেন। কোন পরিস্থিতিতে, কিভাবে আর কেন তোমাদের বিয়েটা হয়ে ছিলো। আর কিছু দিন পরেই তোমরা আলাদা হয়ে যাবা। সব বলেছেন উনি আমাকে।

– সব!!

– হ্যাঁ সব কিছুই বাদ রাখেননি। উনি আমাকে এটাও বলেছেন আর ১০ স্বামী-স্ত্রীর মতো তোমাদের মাঝে কোন সর্ম্পক নেই। আর উনি এটাও বলেছেন উনার বিশ্বাস আমি তোমাকে সুখে রাখতে পারবো। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে…..

আদিকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ইতি বলে,

– আমার কোন আপত্তি নেই।

– সত্যি?? আমার যে কি খুশি লাগছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। খুশিতে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে।

– এটা অফিস।

– সেটাই তো প্রবলেম। আর শুনো আমরা বেশি দেরি করবো না তোমরা আলাদা হয়ে গেলেই কিছু দিনের মধ্যে আমরা বিয়ে করে ফেলবো। বাসায় অলরেডি বিয়ের কথা বলছে। তোমার আপত্তি নেই তো?

– না আমার কোন আপত্তি নেই। তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।

– ওকে সুইঠার্ট।

– এখন কাজ গুলো শেষ করি আমার মিটিং আছে।

– ওকে বাবা সরি। তুমি কাজ করো একসাথে লাঞ্চ করছি কেমন?

– ওকে।

ইতির কেবিনে যা যা হলো সব দেখছে রোদ বসে বসে তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। শুধু নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসছে রোদের। যেন কেউ তার গলাটা চেপে ধরেছে। ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো আর দেখতে পারছে না সে।

ইতি দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসে পরলো। সামনে রাখা গ্লাসটা নিয়ে একটানে গ্লাসের পানি সবটা খেয়ে ফেলল। ইতির মনে হচ্ছে তার বুকের ভিতর কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
.
.
চলবে…….
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-১৮
Writer : Eti Chowdhury
.
ইতির কেবিনে যা যা হলো সব দেখছে রোদ বসে বসে তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। শুধু নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসছে রোদের। যেন কেউ তার গলাটা চেপে ধরেছে। ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো আর দেখতে পারছে না সে।

ইতি দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসে পরলো। সামনে রাখা গ্লাসটা নিয়ে একটানে গ্লাসের পানি সবটা খেয়ে ফেলল। ইতির মনে হচ্ছে তার বুকের ভিতর কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

রাগে রোদ তার টেবিলে রাখা ল্যাপটপটা ফেলে দিলো।

– উনি আদিকে পাঠিয়েছেন আমার কাছে। উনি? হাউ কুড হি? হাউ? চাই না উনার ভালোবাসা আমি চাই না। আমার জীবনের ডিসিশন নেয়ার অধিকার উনাকে কে দিয়েছেন। এখন নিজের নামটাও কেরে নিতে চায় আমার থেকে?

নিজের সাথেই কথা বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে নিলো ইতি।

– নাহ আমার জীবনের ডিসিশন আমি কাউকে নিতে দিবো না। উনাকেও না।

রোদ মিটিংয়ের মাঝে এক মুহূর্তের জন্য ইতির দিকে তাকায়নি। আর তাকাবে না সে ইতির ঐ মায়া মুখের দিকে। রোদ জানেসে নিজেকে কন্ট্রোল না করলে ইতি হয়ত দূর্বল হয়ে পরবে। তাই ইতির জন্য হলেও রোদের নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। ইমোশন্স দিয়ে তো আর জীবন চলে না।

ইতিকে মিটিং শেষ করে বের হতে দেখে আদি এসে ইতির হাত ধরে রোদের সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। তা দেখে ইতি বলে,

– হচ্ছে কি?

– জাস্ট কাম উইথ মি।

আদি ইতিকে নিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে সবার এটেনশন নিলো।

– এটেনশন এভরি ওয়ান। আজ আমার জীবনের সব চাইতে বেষ্ট দিন। বিকজ টু ডে আই গোট দ্যা পারসোন হু আই লাভ দ্যা মোস্ট।

কথাটা বলেই আদি ইতির দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দেয়। ইতির ইচ্ছা না থাকা সত্বেও কেবল রোদের উপর জেদ বসত সে আদির হাতটা ধরে। ইতি আদির হাত ধরতেই আদি বলে,

– আমরা খুব জলদি বিয়ে করতে যাচ্ছি।

ইতি অবাক হয়ে যায়। সে ভাবতেই পারেনি আদি এভাবে বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করে দিবে। আদির কথা শুনে রাফসান রাগে লাল হয়ে গেলো কিন্তু কিছুই বলল না। রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। রাফসানকে যেতে দেখে রিমিও তার পিছন পিছন চলে গেলো। সবাই আদি আর ইতিকে কোংগ্রাচুলেট করছে। কিন্তু অনেকেই আদির সাথে ইতিকে দেখে অবাক হয়েছে। কারণ অনেকেই রোদের সাথে ইতিকে এক্সপেক্ট করছিলো।

ইতি নিজের কেবিনে ফিরে যেতে নিয়ে হঠ্যাৎ থমকে গেলো। রোদ তার সামনে দাঁড়িয়ে। রোদ ইতির দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– কোংগ্রাচুলেশন্স ফর ইউর বিউটুফুল ফিউচার।

ইতি নিজেও হাত বাড়িয়ে দিয়ে রোদের হাতটা ধরল। ইতির মাঝে কোন ভাবান্তর নেই। কেউ বলতেই পারবে না ইতি তারই বউ যাকে রোদ আবার বিয়ের জন্য অভিন্দন জানাচ্ছে। ইতির সে হতভাগী যার স্বামী তার স্ত্রীকে অন্য কারো সাথে বিয়ের জন্য অভিন্দন জানাচ্ছে আর ইতি তা গ্রহণও করছে। অভিন্দন নেয়াটা ইতির জন্য কেবল মাত্র একটা বাহানা সে তো এক ছুতোয় রোদকে একবার ছুয়ে দিলো।
।।
।।
রাফসানটা ইদানিং ইতির সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আর রোদ সে তো অনেক দূরে সরে গেছে ইতির থেকে। ইতির তেমন একটা কথা হয় না রোদের সাথে। কেবল মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে ইতি মন ভরে তার মানুষটাকে দেখে নেয়। কিন্তু দিন পর তো আর তাও দেখতে পারবে না। তাই এখনি দেখে নিচ্ছে। যেন এই দেখা দিয়ে বাকিটা জীবন ইতি পার করে দিতে পারে। রোদ যদি ভালো না বেসেও ইতিকে একবার বলত ইতি তুমি যেও না তাহলে ইতি থেকে যেত। কিন্তু রোদ তো নিজের জীবন থেকে ইতিকে তাড়ানোর জন্য ইতির আগেই অন্য একজনকে ইতির জন্য বেছে নিলেন।

ইতিটা আগের মতো আর কথা বলে না, হাসে না, চুলও বাধে না। ইতির চুল গুলো সব এলো মেল হয়ে থেকে। মেয়েটা কেন বুঝে না তার এলো মেলো চুলগুলো রোদকে পাগল করে। ঐ চুল গুলো যে রোদকে উন্মাদ করে দেয়। কেন বুঝে না মেয়েটা ঐ চুলে রোদের নাক ডুবাতে মন চায়। রোদ রাত ভর জেগে জেগে ইতিকে দেখে। সারাদিন তো সামনে থাকলেও দেখতে পারে না সে।

আদি অলরেডি বিয়ের শপিং শুরু করে দিয়েছে। বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে ছেলেটা। আর এক সপ্তাহ পরেই সাইনিং। সাইনিংয়ের পরের সপ্তাহেই আদি বিয়েটা করতে চায়। আদি আর বেশি অপেক্ষা করতে চাইছে না।
.
রোদ অফিসের সবাইকে হল রুমে ডাকে কিছু বলার জন্য। সবাই খুব উৎসুক ভাবে তাকিয়ে আছে জানার জন্য। রোদ বলে,

-ওয়েল, থ্যাংকিউ অল ফর কামিং।আপনারা সবাই জানেন এ মাসে খুব অল্প সময়ে আমরা সব চাইতে বড় বড় তিনটে প্রোজেক্ট লঞ্চ করেছি আর সব চেয়ে বেশি প্রফিট করেছি। আর তাই কাল একটা পার্টি থ্রো করা হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে আপনাদের জন্য। ইউ অল আর ইনভাইটেড। কাল অফিসে আসতে হবে না। ডাইরেক্ট সন্ধ্যায় পার্টিতে দেখা হবে।

সবাই খুশিতে হাতে তালি দিলো। রোদ আরো বলে,

– আরেকটা কথা। কাল পার্টিতে সবাই কালার কোদ মেইন্টেইন করবে। অর্থাৎ পার্টনাররা একি কালারের ড্রেস পরবে।

অফিসের পর বাসায়। আদি ফোন দেয় ইতিকে।

– হ্যাঁ।

– আমার জান পাখিটা কাল কি পরবে?

– আদি আমি হয়ত কাল যাবো না।

– কেন?

– এমনি ভালো লাগছে না আমার।

– শরীর খারাপ লাগছে? আমি আসছি এখনি।

– ওয়েট কথায় কথায় এতো আসি আসি করো কেন? তুমি ভুলে যাও কেন আমি আমার বাসায় থাকি না। স্যারের বাসায় থাকি। তুমি হুটহাট এলে সে কি ভাববে?

– কিছুই ভাববে না উনি। তুমি…

– আমার মাথাটা পেইন করছে এখন আমি রাখছি প্লিজ। আর তোমার আসা লাগবে না। বিশ্রাম করলেই আমি ঠিক হয়ে যাবো।

ইতি ফোনটা রাখার সাথে সাথেই দরজা খোলার শব্দ হলো। রাত প্রায় ৯টা বাজে। ইতি ঘুড়ে দাঁড়াতেই দেখে রোদ হাতে একটা বক্স নিয়ে রুমে ডুকলো।

রোদ অনেক দ্বিধা নিয়ে ইতির কাছে গেলো। রোদকে কাছে আসতে দেখে ইতি জমে শকত হয়ে গেলো। ইতি চাইলেও নিজেকে রোদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। রোদের চোখ দুটো ছলছল করছে। রোদ ইতির কাছে যেতে যেতে কখন যেন একদম ইতির কাছে চলে গেছে তা খেয়ালই করেনি। ইতির চুলগুলো উড়ে এসে রোদের মুখে পরছে। ইতি হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে নিলে রোদ ইতির হাতটা ধরে ফেলে বলে,

– উড়তে দাও না ভালো লাগছে।

রোদের কথা শুনে ইতি তার দিকে চেয়ে রইল। মনে মনে ভাবছে, “আমার চুল উড়া উনার পছন্দ”? কিন্তু মুখে কেউ আর কোন কথা বলছে না। রোদ বক্সটা ইতির দিকে এগিয়ে ধরল। ইতি চুলগুলো নিজের কানের পিছনে গুজে নিলো। ইতি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– এটা কি?

– এটা পরে কাল পার্টিতে পরো।

বলেই রোদ পা বাড়ায় ফ্রেস হওয়ার জন্য। ইতি পিছন থেকে বলে,

– আমি হয়ত কাল পার্টি এটেন্ট করতে পারবো না।

রোদ পিছন ঘুরে বলল,

– তুমি কাল যাচ্ছো এটাই ফাইনাল।

রোদ চলে যেতেই ইতি নিজের সাথে বলে,

– আমি কি তার বউ নাকি যে উনি অধিকার ফলাচ্ছেন। আসলেই তো আমি তো উনার বউ। তাহলে কি উনি সত্যি অধিকার ফলাচ্ছেন?

ইতি বক্সটা তুলে রাখল আলমিরাতে। কিন্তু খুলে দেখল না।

পরের দিন।

সেই সকালবেলা রোদ বেরিয়ে গেলো এখনো আসার নাম নেই। ইতি সারাদিন একা একাই বসে রইল। হুট করেই ইতির ফোনের টিউনটা বেজে উঠলো। ইতি হাতে নিয়ে দেখে আদির ম্যাসেজ।

ম্যাসেজে লেখা,

“আমার আজ পার্টিতে যেয়ে দেরি হয়ে যাবে। একটু কাজ আছে বাহিরে যাচ্ছি। আর যেহেতু আমার দেরি হবে তাও তোমাকে জোর করছি না। তুমি যেতে না চাইলে যেও না। আর গেলে সাবধানে যেও প্লিজ জানপাখি”।

-উফফফ……

বিরক্তি প্রকাশ করে ইতি। আদির কাছে এভাবে কথায় কথায় জানপাখি ডাকাটা ইতির একদম ভালো লাগে না। একদম সহ্য হয় না। তাও তাকে সহ্য করা লাগে।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রোদ এখনো আসছে না সে হয়ত সরাসরি পার্টিতে চলে যাবে। যাক ভালোই হবে কারণ রোদ আবার বললে ইতি তার মুখের উপর না করতে পারবে না।

কিছুক্ষণ পর ইতির ফোনটা আবার বেজে উঠলো। ইতি হাতে নিয়ে দেখে স্যার ফোন করেছে।

– হ্যালো।

– বক্সটা তো খুলেও দেখোনি। খুলে দেখো আর রেডি হয়ে আসো আমি নিচে অপেক্ষা করছি।

রোদ নিজের কথা বলে ফোন রেখে দিলো। ইতিকে কিছু বলতে দিলো না। কিন্তু ইতি ভাবছে অন্য কথা। রোদ কিভাবে জানল যে ইতি বক্সটা খুলে দেখেনি। রোদ তো বক্সটা অইতিকে দিয়ে বাথরুমে চলে গিয়েছিলো।

ইতি আলমিরা থেকে বক্সটা বের করল। বক্সটা খুলতেই ইতির মনটা ভালো হয়ে গেলো। এতো সুন্দর একটা গাউন সম্পূর্ণ কালো রঙের শুধু বুকের উপর স্টোন বসানো। সাথে একটা জুয়েলারী বক্স। বক্সটা খুলে যেন ইতির চোখ কপালে উঠে গেলো। ছোট বক্সটাতে ডায়মন্ডের কিছু জিনিস। এক জোড়া কানের টপ, ছোট্ট একটা নোস পিন, এক জোড়া চিকন চুড়ি তাও ডায়মন্ডের, আর রিং। চোখ ফেরাতে পারছে না ইতি জিনিসগুলো এতো সুন্দর। ইতি ভাবছে, “তাহলে উনি কাল এটা আনতে গিয়েই এতো লেট করে বাসায় ফিরেছেন। আচ্ছা আমি তো নোস পিন পরি না উনি কিভাবে জানলো আমার নাক ফোড়ানো আছে তাহলে কি উনি আমাকে এতোটা কাছ থেকে দেখেছেন”। গাউন টা দেখে আর না পরে থাকতে পারলো না ইতি। হালকা সাজলো ইতি। কিন্তু গয়না গুলো পরলো না। রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলো।

রোদ হুট করে পাশে ঘুড়ে তাকাতেই দেখে ইতি আসছে। রোদ নিজের চোখ ফেরাতেই পারছে না। এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে দেখতে। আজ সকল সৌন্দর্য্যও যে ইতির কাছে হার মানবে। ইতির সৌন্দর্য্য দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে সবাই। রোদ গাড়ি থেকে বেড়িয়ে ইতির কাছে গেলো।

ইতি নিজেও রোদকে দেখে হা করে রইল। থাকবে বাই না কেন। রোদকে দেখতেও কোন অংশে কম লাগছে না। রোদ নিজেও একদম্টাকালো একটা সুট করেছে সাথে লাল একটা টাই। দুজনেই মেচিং পরেছে। ইতি রোদকে দেখে হা করে তাকিয়ে রইল। লজ্জা পেয়ে রোদের থেকে চোখ নামিয়ে নিলো ইতি।

কিন্তু ইতিকে কাছ থেকে দেখার সাথে সাথে রোদের রাগটা টগবগিয়ে উঠলো। কিন্তু রোদ মনে মনে নিজেকে বলল, “কুল রোদ আজ তোর বউকে সম্ভব সুন্দর লাগছে”। রোদ ইতির কাছাকাছি সে থেমে গিয়ে বলে,

– গহনা পরনি কেন?

– আসলে অতো দামি জিনিস…

– তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি।

রোদ উপরে চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পরে সেই জুয়েলারী বক্সটা নিয়ে নেমে এসে ইতিকে অবাক করে দিলো। রোদ ইতি কাছে এসে বলে,

– দেখি এদিক ঘুড়ো তো।

রোদ ইতির কাছে হাত দিলো। একদম কাছ থেকে রোদ ইতির অনুভূতি পাচ্ছে। এতো কাছ থেকে রোদ ইতিকে স্পর্শ করছে। এই অনুভূতিটা রোদ বলে বুঝাতে পারবে না।

রোদ ইতির কানে হাত দিতেই ইতি নিজের ভিতরে একটা শিহরণ অনুভব করল। ইতি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেলল।

ইতির রোদের প্রতিটা স্পর্শে কেপে উঠছে। রোদ এক কান থেকে আরেক কানে গেলো। ইতির নাকে নোস পিন পরিয়ে দিলো। রোদ ইতির হাত ধরে হাতে চুরি পরিয়ে দিলো। ইতি অনামিকা আঙ্গুলে রিংটা পরিয়ে দিলো রোদ। এক এক করে সব ইতিকে পরিয়ে দিয়ে রোদ ইতির থেকে এক পা পিছিয়ে যায়। পিছিয়ে গিয়ে রোদ ইতির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে মনে মনে ভাবে রোদ, “ওয়াও…… জাস্ট ওয়াও লাগছে দেখতে এখন। ইতিএ সৌন্দর্য্য যেন বহু গুন বেড়ে গেছে। রোদ ইতির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

– অপূর্ব লাগছে। এখন লাগছে মিসেস রোদ চৌধুরী….

ইতি রোদের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। রোদ ইতিকে অবাক হতে দেখে বলে,

– চলো যাওয়া যাক।

রোদ গাড়ি থেকে নেমে নিজে ইতির দরজাটা খুলে দিলো। তার পরীটা বেরিয়ে এলো। নিজের কোর্টটা ঠিক করে হাত ফোল্ড করে নিলো রোদ ইতির ধরার জন্য। পার্টিতে পার্টনাররা যেভাবে ধরে ঠিক সেভাবে।

ইতির জন্য রোদের হাত ফোল্ড করা দেখে ইতির যে কি আনন্দ হচ্ছে তা সে বলে বুঝাতে পারবে না। রোদ আজ ইতির স্বামীর মতো আচরণ করছে তা দেখে ইতির খুব ভালো লাগছে। তাই ইতিও আজ আর বাঁধা দিলো না খোপ করে রোদের হাতটা ধরে ফেলল। আজ না এলে ইতি অনেক কিছু মিস করে ফেলত। এতো কাছ থেকে তার রোদকে পাওয়া হতো না।

ইতি এমনভাবে রোদের হাতটা ধরল যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ইতি ছিলো। রোদ ইতিকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আজ রোদকে কেউ আর দেখছে না। সবাই আজ রোদের পরীটাকে দেখছে। আজ সত্যি ইতিকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে।

– এই এই…

– কি?

– পিছনে দেখো।

রিমির ডাকে রাফসান পিছনে তাকাতেই দেখে ইতি আর রোদ একসাথে। দুজনকে একসাথে যা লাগছে দেখতে। এতো বেশি মানিয়েছে দুজনকে যা বলার মতো না। রাফসান সাথে সাথে ওদের কয়টা ছবি তুলে নিলো। অনেক দিন পর আজ রাফসান ইতির মুখে সত্যি হাসি দেখল। ইতিকে খুশি দেখে ভালো লাগছে রাফসানের। পাশ থেকে রিমি বলে,

– মানিয়েছে না দুজনকে?

– হুম, একদম পারফেক্ট কাপল।

সারাটা সময় রোদ ইতি এক সাথেই ছিলো। রাফসান মিউজিক অন করে দিলো। কাপল ডান্সের জন্য। সবাই ডান্স করছে।

রোদ ইতির হাত ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাড়াল। নিজের হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

– মে আই?

ইতি একটা হাসি দিয়ে রোদের হাতটা ধরল। সফট মিউজিকের সাথে ওরা ডান্স করতে লাগল। রোদ ইতিকে ঘুড়িয়ে নিলো। পিছন থেকে ইতিকে আলতো করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে ডান্স করছে। কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে আবার ইতিকে ঘুড়িয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে নেয় রোদ। ইতিকে সে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখল।

হলে লাইট কম থাকায় কেউ কাউকে সেভাবে দেখতে পারছে না। আর এই সুযোগ নিয়ে ইতি আলতো করে রোদের বুকে নিজের মাথাটা রেখে দিলো। সেই সাথে রোদকে জড়িয়েও নিলো।

দুজনে একে অপরের মাঝে ডুবে ডান্স করছে ঠিক তখনি কেউ একজন পিছন থেকে বলল,

– এক্সকিউজ মি।

ইতি আর রোদ দুজনে একে অপরের থেকে একটু সরে পিছনে তাকাতেই দেখে আদি। আদি রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– কেন আই হেভ মাই পার্টনার প্লিজ?

– সিওর।

রোদ ইতির হাতটা আদির হাতে দিয়ে চলে গেলো। আদি ইতিকে বলল,

– সেল উই ডান্স?

– আদি আমার না ভালো লাগছে না পরে…

– নো এখনি, দেখো তোমার ভালো লাগবে।

ইতিকে বাধ্য হয়ে আদির সাথে ডান্স করা লাগছে। ডান্স করতে করতে আদি ইতিকে বলে,

– থিম তো ছিলো পার্টনাররা কালার কোড পরবে। তুমি আর স্যার দেখছি একি কালার পরেছো।

আদির কথা শুনে ইতি অবাক হয়ে যায়। থতমতো খেয়ে বলে,

– না আসলে আমি এমনি নিজে নিজেই কালো পরেছি। উনার সাথে মিলিয়ে পরিনি।

-তাই? স্যার কালো সুটের সাথে লাল টাই আর তোমার কালো গাউনের স্টোনগুলোও লাল। সাধারণত স্টোন সাদা রঙের হয় অনেকটা ডায়মন্ড কাটের মতো কিন্তু তোমারটা দেখে মনে হচ্ছে…

– নাহ। আসলে…

– হা হা হা

আদি হেসে দিয়ে বলে,

– আরে তুমি সিরিয়াস হচ্ছো কেন? আই অয়াজ জাস্ট কিডিং।

ইতি আদিকে আর কিছু বলল না। ডান্স করার সময় ইতি আদির থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখল। ইতি একটু পর পর রোদকে দেখছে। রোদ বারে বসে কি যেন খাচ্ছে। ইতি আজ পর্যন্ত রোদকে ড্রিংক্স করতে দেখেনি। ইতিকে অন্য মনস্ক দেখে আদি জিজ্ঞেস করে,

– কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলে?

– এক্সকিউজ মি প্লিজ।

বলেই ইতি আসির কাছে থেকে সরে গেলো। গিয়ে রোদের পাশে বসলো ইতি। রোদ ইতিকে দেখে কিছু বলছে না তাই ইতির অনেক রাগ হচ্ছে। রাগে কি করবে মাথায় আসছে না ইতির। ওয়েটার একটা গ্লাস দিলো সামনে কি আছে না দেখেই খেয়ে নিলো। একটানে গ্লাস শেষ করে দিয়ে ইতি বলে,

– ইয়াক এটা কি ছিলো?

ইতির কান্ড দেখে হা করে থাকে রোদ বলে,

– এটা কি করলে? এটা কেন খেলে?

– আপনি যে খাচ্ছেন?

– আমি তো জুস খাচ্ছি তাও এ্যালকোহল ছাড়া।

– তাহলে আমারটা কি ছিলো?

– এ্যালকোহল ছিলো।

-ওহ!!

রোদ আর কি বলবে মেয়েটাকে। এই মেয়েটা একদম পাগল। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ইতি বলে,

– আপনি আতো দুলছেন কেন? সোজা হয়ে বসে।

– শিট ম্যান!! তোমার নেশা হয়ে গেছে। চলো বাসায় যাবো।

রোদ ইতিকে নিয়ে পার্টি থেকে বেরিয়ে যায়। বাসায় আসার পর থেকেই ইতি মুখ ফুলিয়ে বসে আসে কিন্তু হুট করে মুখ ফুলানোর কারণটা কি তা রোদ নিজেও জানে না। তাই সে গিয়ে ইতির পাশে বসলো। ইতি কোন কথা বলছে না তাই রোদ নিজেই জিজ্ঞেস করে,

– কি হয়েছে রাগ করেছো?

– হুম…

-কেন?

– আপনি আমার সাথে ডান্স করলেন না কেন?

– আদি তো ডান্স করল তোমার সাথে?

– আমার আদির সাথে ডান্স করতে ভালো লাগে না।

– তাই?

– আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পরো তোমার নেশা হয়ে গেছে।

– নাহ।

– কেন?

– আমি ডান্স করব।

রোদ হেসে দিলো তার পাগলীর কথা শুনে। হেসে দিয়ে রোদ ইতির হাত ধরে ওকে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো রোদ ইতিকে। অনেক্ষণ ইতিকে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে রেখে ডান্স করল রোদ। ইতি রোদের বুকে মাথা দিয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে তাই রোদ আলত করে ইতির মাথাটা তুলতেই দেখে মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে বুকে মাথা দিয়ে। রোদ ইতিকে কোলে তুলে নিলো। কোলে নিয়ে ইতিকে বিছানায় শুয়ে দিলো। ইতিকে শুয়ে দিয়ে উঠে আসার সময় আলতো করে ইতির কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো রোদ।
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here