#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহাদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ__৭
🌹
হয়তো আখির সাথে আকাশের ডিবোর্সের সময় ঘনিয়ে গেছে। অবশন ঘটতে যাচ্ছে তাদের দুজনার সেই কন্টাক্ট ম্যারিজের। আসিফ চৌধুরির শরিরের অবস্থাও দিন দিন অবনতি ঘটছে।
মাঝে মাঝে আসিফ চৌধুরি গলা দিয়ে ছুটছে অঝরে রক্তের শোত।
দিন যত যাচ্ছে ততো বেশি কাহিল হয়ে পরছে আসিফ চৌধুরি।
হটাৎ আসিফ আচৌধুরির অসুস্থতা তীব্র হয়ে উঠতেই, তাকে হসপিটালে ভর্তি করে আকাশ।
কিন্তু ডাক্তারও আসিফ চৌধুরির কোনো নিশ্চয়তা দিতে অক্ষম।
আকাশে ডাক্তার শুধু এটাই বলে, উপরওয়ালাকে ডাকতে। তাদের আর কিছুই করার নেই। সময় যে ধিরে ধিরে ফুরিয়ে এসেছে আসিফ চৌধুরির।
ভেতরে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে আসিফ চৌধুরিকে।
চোখ দিয়ে টপটটপ করে আকাশের গড়িয়ে পরছে পানি। কিন্তু, পুরু দেহটাই আজ নিরবতায় ঘেরা।
ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর, জীবনে চলার পথে তাকে সাপের্ট করে গেছে তার বাবা। তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় সাপোর্টের নামই হলো বাবা। তার সেই সাপোর্ট টাও হারিয়ে ফেললে খুবই যে একা হয়ে যাবে সে। বাবা আর থাকবেনা এটা ভাবতেই বুকটা আতকে উঠছে আকাশের। বাবা বিদেয় নেওয়া মাত্রই আখি চলে যাবে তার নিজের পথে। একলা জীবনে পাসে দাড়িয়ে সাপোর্ট দেওয়ার মতো এমন কোনো মানুষ থাকবেনা তার।
আকাশের দৃষ্টির অগোচরে হাত দিয়ে বারবার চোখের পানি লুকাচ্ছে আখি। কোনো দিন বাবার স্নেহ না পাওয়া সেই আখি খুজে পেয়েছিলো এক সত্যিকারের বাবাকে। মাত্র তিন-চার মাসের মাঝেই হারিয়ে ফেলছে তার সেই বাবার মতো মানুষটা কে।
হাতের ইশারায় তাদের দুজনকে ডাকছে আসিফ চৌধুরি। জোর পূর্বক চোখের পানি লুকিয়ে তার কাছে গিয়ে বসে দুজন।
মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেললো আসিফ চৌধুরি। আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— আকাশ, বাবা আমার। আমি আর কিছুক্ষন পরই বিদায় নিবো তোদের কাছ থেকে…….
— না বাবা এমনটা বলোনা।
— আমার সময় আর বেশিক্ষন নেই, দুই একটা কথা বলি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
— আমি শুনছি বাবা,
— আখি কিন্তু খুব ভালো মেয়ে, আমি চলে যাওয়ার পর কনোদিন কখনো কষ্ট দিসনা তাকে। সংসার একদিক দিয়ে খুব সহজ অপর দিক দিয়ে খুবই কঠিন। এই দুই প্রান্তের মাঝে বিশ্বাসটাই সব। সন্দেহটা সম্পর্ক বিচ্ছেদের মুল কারন। কখনো একে অপরকে সন্দেহ করবিনা। কোনো বিষয় ঝাপসা থাকলে তা দুজনে একত্রে কথা বলে জেনে নিবি এর সত্যতা কতটুকু? সম্পর্কটা এমনই রাখবি যেনো চোখ বন্ধ করে একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারিস। আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিস তো?
— চোখ মুছে আকাশ বলে উঠে, হ্যা বাবা শুনছি।
— আর হ্যা, আখি মা আমার। আমায় কথা দে আমার এই পাগল ছেলেটাকে তুই কখনো ছেরে যাবিনা?
আখি বাবার হাতটা ধরে আকাশের দিকে জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যেনো এটা সে আকাশের মুখ থেকেই শুনতে চায়। আকাশের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বাবার দিকে তাকায় আখি।
— সব সময় একে অপরের ছায়া হয়ে থাকবি। আমার যে এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছেরে। তোদের মা ডাকছে আমাকে। চলে যাচ্ছি আমি তোর মায়ের কাছেদুজ সংসার জীবনে সুখি হ এটাই প্রত্যাশা করি আমি।
কাদতে কাদতে আকাশ হটাৎ খেয়াল করল বাবা আর কথা বলছেনা। নিথর হয়ে গেছে সে। স্তব্দতায় ঘিরে ফেলেছে তাকে। এক গাদা ঘুম এসে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে যা আর জাগ্রিত হওয়ার মতো না।
বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কেদে উঠে আকাশ। একজন ডাক্তার চোখ দুটু বন্ধ করে পুরুটা দেহ ঢেকে দিলো তার। সে এখন এক গন্তব্যের পথ যাত্রি। সেই পথে সকলকেই যাত্রি হতে হবে এই কথাটা চিরন্তর সত্য।
___________________________________
বেলকনিতে ফ্লোরে বসে হেলান দিয়ে বসে আনমনায় এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। মনে মনে এখনো কেদে যাচ্ছে সে। আর তা চোখ দিয়ে প্রকাশ হচ্ছেনা। কারন সেই চোখের পানিও মনে হয় শুকিয়ে গেছে। তিন দিন হয়ে গেলো বাবা তাদের সাথে নেই। এই অবস্থায় তাকে ছেরে যেতে চাইছেনা আখিও।
এই সময় আকাশের পাসে কেও থাকাটা একান্ত প্রয়োজন।
আখির মা বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। কিন্তু আখি বার বার বুঝানোর চেষ্টা করছে তার মাকে। যে সে আকাশের সাথে আর কিছুদিন থাকাটা প্রয়োজন।
আখির মা ও এই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছেনা। তার কথা যেই ছেলে তাদের সাথে এতো বড় অন্যায় করেছে তাকে এতো দিন হেল্প করেছে এটাই অনেক।
মায়ের কাছ থেকে দশ দিনের সময় চেয়ে নেয় আখি। এই পাঁচ দিনে যতটুকু পারে আকাশকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে সে আগের অবস্থায়।
রাত শেষ হলে দিনের আলো, সূর্য ডুবলে আধার। আকাশের কাছে সবই এখন সমান্তরাল। বাবা হারা শুন্যতা অনুভবে মগ্ন হয়ে আছে সে।
হাতে খাবার বিয়ে আকাশের কাছে গেলো আখি। হাতটা আকাশের দিকে বাড়িতে দেয় আখি খাবার সহ। আকাশ তার হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে সরিয়ে উঠে সেখান থেকে উঠে যায়।
আখি বুঝতে পারে সে এখন চলে গেলে হয়তো বেখেয়ালিপনায়ই মারা যাবে আকাশ। নিজের প্রতি কোনো যত্ন নিবেনা আকাশ।
নয় দিন চলে গেলো,
আকাশ এখন মোটামুটি ঠিক আগের মতোই। তবুও প্রতি নিয়তো মিস করে যাচ্ছে বাবাকে।
রাতের আধারে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আকাশ। হাতে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট হয়ে উঠলেই। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মামার ফোন। এর আগেও কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো মামা। তার মামা পরিবার নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া থাকে।
কিছুক্ষন কথা বলে মামার সাথে আকাশ।
— মেয়েটা কি চলে গেছে আকাশ?
— কোন মেয়েটা মামা?
— ওই যে বললি, তোর বাবাকে খুশি করতে বিয়ে করেছিস তাকে।
— কাল চলে যাবে। ডিবোর্স পেপারও রেডি।
— তাহলে তো তুই খুব একা হয়ে যাবি।
— কিছু না বলে একটা দির্ঘশ্বাস নিলো আকাশ।
— তুই এক কাজ কর। সব কিছু রেডি কর। ইউ কেন কাম টু মি ইজ অষ্ট্রেলিয়া।
— ইয়াস মামা। আই ফিল ভেরি আনবারএবল হেয়ার মামা, আই ওইল কাম টু ইউ অষ্ট্রেলিয়া।
— ওকে। তারাতারি চলে আয় তাহলে দেখবি মনটা ফ্রেস হয়ে যাবে।
_______________________________
পরদিন আখির মা নিজে আসে আকাশের বাড়িতে, আখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আকাশ আখির হাতে ডিবোর্স পেপারটা দিয়ে বলে,
— এই নাও পেপার। আমি সাইন করে দিয়েছি। এখন তুমি সাইন করে দিলেই আমাদের মাঝে আর কিচ্ছু থাকবেনা। দুজনার মাঝে তৈরি হয়ে যাবে একটা বিশাল দেয়াল যা চাইলেও। আর টপকে যাওয়া সম্ভব হবেনা।
আখির হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছ তার মা। আখি একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আরেকবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। দেখতে দেখতে আকাশের চোখের আড়াল হয়ে গেলো আখি। গাড়িতে উঠা অব্দি বাড়ির দিকে চেয়ে আছে আখি এই ভেবে আকাশ বাজ পাখির মতো এসে তাকে নিয়ে যাবে তার মায়ের কাছ থেকে। কিন্তু আকাশ আর এলেনা। সোফায় বসে মুখে হাত দিয়ে চুপি চুপি কেদে যাচ্ছে সে। সে চাইলেও আর যেতে পারবেনা। ইচ্ছেটা যে আখিরই।
আখি গাড়িতে বসে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। গাড়ি যতই এগুচ্ছে ততোই আকাশের থেকে দুরুত্বটা বেরে যাচ্ছে আখির। চাইলে কি এই দুরুত্বের অবসন ঘটানো যায় না?
To be continue…………