#যদি_জানতে
Part:13
Written by: Shawon
আহিন মিস্টার সাদাফের কেবিনে নক করে ভিতরে গেল।মিস্টার সাদাফ ওকে দেখে একটু মুচকি হাসলো।আহিন ওনার সামনে গিয়ে বললো,…
-“আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো!”
-“হুম বলো,আমি শুনতেছি”
-“আসলে আমার কিছুদিনের জন্য ছুটি লাগবে!!”
-“তুমি তো এই কয়েকদিন হলো জয়েন করলে তাহলে এখনই আবার ছুটি কেন?আচ্ছা আচ্ছা তা কোনো প্রবলেম না,কিন্তু কি কারণে ছুটি নিতে চাচ্ছো জানতে পারি?”
-“হানিমুনের জন্য!!”
আহিনের কথা শুনে মিস্টার সাদাফ উঠে দাঁড়িয়ে পর,আহিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তার বুকেট ভিতর ঝড় শুরু হয়ে গেল।আহিন বলল….
-“এক মিথ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নতুন আরেকটা মিথ্যে নাটক করতে হবে তাও আবার হানিমুনের।যায়হোক প্লিজ আমাকে ছুটি টা দিয়ে দিন,আমি পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করে নিবো।”
আহিনের এখনের কথাটা শুনে সাদাফের মন শান্তি হয়।সে বুঝতে পারে এটাও সবাইকে দেখানো একটা নাটক মাত্র।তাই সে তার কপালের ঘাম মুছে বলে……
-“আচ্ছা,তোমাকে ছুটি দেওয়া হলো কিন্তু মাত্র পাঁচ দিনের।পাঁচ দিনের বেশী একটা দিনও দেওয়া যাবে না।এমনিতেও নতুন জয়েন করা লোকদের এত তারাতাড়ি ছুটি দেওয়া হয়না,তারউপর তুমি আমার নতুন পিএ,আশা করি বুঝতে পারছো।”
-“জ্বী,স্যার আমি বুঝতে পারছি,কিন্তু আমাকে আমার জব থেকে আমার বাবা মা সংসারের পরোয়া বেশী।”
-“কিসের সংসার?কোনটাকে সংসার বলছো তুমি?যেখানে তোমার কোনো দাম নেই,কোনো সম্মান নেই!”
-“আমার সংসার আমার পরিবারকে নিয়ে আমি আপনার থেকে কোনো বাজে কথা শুনতে রাজি না।আমার স্বামী যেমনই হোক না কেন ওনার পরিবার আমাকে কম ভালোবাসে না,কম আদর যত্ন করে না।ওনার বাবা মা আমাকে একদম ওনার নিজের মতো করে দেখে।তাই আমি ওদের নামে কোনো কথা শুনতে রাজি নও,আপনার যদি আমাকে ছুটি দিতে ইচ্ছে না হয় তাহলে বলুন আমি আপনার অফিস থেকে রিজাইন করিয়ে নিবো।”
-“হুয়াট!!তুমি এসব কি বলছো?তোমার মাথা ঠিক আছে?ওকে আই এম সরি আমার তোমাকে তোমার সংসার নিয়ে এভাবে বলা উচিত হয়নি,আর তোমার ছুটি মন্জুর করা হয়েছে।”
-“ধন্যবাদ!!”
আহিন আর এক মুহুর্ত না দারিয়ে চলে গেল,সাদাফ বোঝতে পারছে আহিন একটু রাগ হয়েছে।সাদাফ মনে মনে ভাবতে লাগলো,সত্যি মেয়েরা অনেক সহজ সরল আর বোকা হয়।তা নাহলে এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও সে তার সংসারের কথা ভাবছে।
পরেরদিন বিকালবেলায়,আহিন আর শাহরিয়ার রেডী হয়ে নিচে নামলো।পরিবারের বাকি সবাই নিচেই ছিলো।আহিনদের কে দেখতে পেয়ে ফারজু বললো….
-“এইতো ভাইয়া ভাবি এসে গেছে।”
ফারজুর কথা শুনে কাইফা তাদের দিকে তাকালো,শাহরিয়ার কাইফার দিকে তাকালো কারণ তাদের মাঝে একটু রাগারাগি হয়েছে।কাইফা চায়ছিল তারা হানিমুনে যাক কিন্তু শাহরিয়ারও কিছু করতে পারছিলনা।অনেক বার বোঝানোর পরও কাইফা কিছুতেই বুঝতে চেষ্টা করছে না। সবার থেকে বিদায় নিয়ে শাহরিয়ার আর আহিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলো।
শাহরিয়ার রা চলে যাবার সাথে সাথে কাইফা দৌড়ে তার রুমে চলে আসলো।সে নীরবে কান্নায় ভেঙে পরলো,বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে বালিশ ভেজাতে লাগলো।হঠাৎ করে পিছন থেকে ফারজু’র কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো আরো বেশী চমকে উঠলো তার কথাগুলো শুনে…..
-“কি কষ্ট হচ্ছে?খুব বেশী কষ্ট হচ্ছে,ভাইয়া ভাবীকে এক সাথে দেখে?তাও আবার হানিমুনে যাচ্ছে!!!!”
কাইফা চোখের পানি মুছে ফারজুর দিকে তাকিয়ে বলে….
-“তুই এগুলো কি বলছিস?আমার কেন কষ্ট হবে ওদের একসাথে দেখে।আমার তো অনেক ভালো লাগছে।একসাথে দুজনকে কত সুন্দর মানায়!”
-“এসব নাটক তুমি অন্য কারো সামনে করলে হয়তো কেউ বুঝবে না কিন্তু আমার সামনে এসব করে কোনো ফায়দা নেয়।আমি তোমার আর ভাইয়ার ব্যাপারে সবটা জানি।আমি আরও জানি তুমি আমার ভাইয়া ভাবীর সংসারটাকে কিভাবে নষ্ট করছো!!”
-“ফারজু তুই এসব কি বলছিস?আমি ওদের সংসার কেন নষ্ট করতে যাবো?”
-“কারণ তুমি ভাইয়াকে ভালেবাসো,ভাইয়াকে তুমি তোমার করে পেতে চাও!!!আমি জানি না এটা তোমার ভালোবাসা নাকি ভাবীর প্রতি তোমার জমানো জেদ বা রাগ।”
-“আহিনের সাথে আমার কিসের জেদ আর রাগ থাকবে?তোর মাথা নষ্ট হয়ে যায়নি তো!!”
-“আমি আগেই বলেছি আমার সামনে নাটক করে কোনো লাভ নেই,আমি সবকিছুই জানি।তুমি আর ভাবী এক সময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলে তারপর একটা ছেলের জন্য তোমাদের ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হয়ে যায়।আর তারপর থেকে তুমি ওর প্রতি রাগ আর জেদ করে বসে আছো।”
-“এটা অনেক আগের কথা,তাছাড়া এগুলো নিয়ে আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়ে গেছে তাহলে এগুলো এখন উঠছে কেন?”
-“উঠছে কারন তুমি এখন তার সংসার ভাঙ্গতে উঠতে পরে লেগেছো।তুমি ভাইয়াকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছো,তাদের কে এক হতে দিচ্ছো না।”
-“তুই এতকিছু জানিস তাহলে তো এটাও জানার কথা তোর ভাইয়াও আমাকে ভালোবাসে,আর সে আমাকেই তার বউ হিসেবে মর্যাদা দিবে অন্য কাউকে না!!তাহলে কেন অযথা এসব বলছিস আমাকে???”
-“বলছি কারণ তুমি ভাইয়াকে মন থেকে ভালোবাসো বলে ভালোবাসো না ভাবীর থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জিদের জন্য ওকে ভালোবাসো।”
ফারজুর কথা শুনে কাইফা ওর দিকে তাকায়,ওর চোখে পানি ছলছল করছে।ফারজু আবারো বলতে শুরু করে….
-“তুমি যদি ভাইয়াকে ভালোইবাসতে তাহলে বিয়ের আগেই সবটা সবাইকে জানাতে অযথা নিজের জন্য অন্য একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিতে না।কিন্তু তুমি তো জানতেই মেয়েটা আহিন আর আহিনকে কষ্ট দেওয়ার এই একটা সুযোগ তুমি হাত ছাড়া করলে না।”
-“ফারজু,আমি জানতাম না মেয়েটা আহিন!!!আমি যদি জানতাম আহিন হতো তাহলে…”
-“তাহলে কি???ভাবী কিন্তু তোমাকে এখনো বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে।আমি শুধু তোমাকে একটা কথাই বলবো প্লিজ ওদের মাঝখান থেকে সরে যাও,আমি তেমার কাছে হাত জোর করছি ভাবীকে আর কষ্ট দিও না।ভাবীর পাস্টটেও অনেক কথা শুনেছে সমাজের মানুষের এখন আর নতুন করে কথা শুনিও না প্লিজ!”
ফারজু কাইফার সামনে হাত জোর করে কথাগুলে বলে,তার সাথে চোখ দিয়ে পানিও পরে।কাইফা ওর হাত ধরে কান্না করে বলে….
-“কিন্তু আমি যে শাহরিয়ার কে সত্যি ই ভালেবাসি,আমি ওকে ছাড়া একটা মুহুর্তও কল্পনা করতে পারিনা।তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।”
-“একটা কথা কি জানো,ভালেবাসা সবসময় নিজের করে পেতে হয়না,ত্যাগের নামও ভালোবাসা হয়।ভাবী তোমার জন্য নিজের স্বামীকেও ত্যাগ করতে রাজি আর তুমি এতটুকু ও করতে পারবে না।”
-“ওর স্বামী তাকে ভালোবাসে না কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে ভালেবাসে।”
-“তাহলে আমি আর কি বলবো,শুধু এতটুকুই বলবো অন্যের সংসার ভেঙে নিজে সংসার গড়া যায় না।”
ফারজু এতটুকু বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।কাইফা আবারো কান্নায় ভেঙে পরলো।
পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা—
আহিনের চোখে হালকা রোদ পরতেই ঘুম ভেঙে গেল,সকালবেলা হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল তারা।ঘুম ঘুম চোখে পাশে ফিরতেই দেখতে পেল শাহরিয়ারকে।খুব ক্লান্ত থাকায় বেহুশে ঘুমিয়ে আছে,অন্য আর পাঁচটা কাপলের মতো হলে হয়তো আহিন তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে কিস করতো কিন্তু তাদের মাঝে এসব কিছুই হবে না।আহিন উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়,তারপর ল্যান্ডলাইনে কল করে হালকা নাস্তা অর্ডার করে।
নাস্তা আনতে আনতে আহিন ফ্যামিলির সবার সাথে কথা বলে নিলো।খাবার আসলে আহিন সেগুলো খেতে নিলেই শাহরিয়ার একটু নড়ে চড়ে উঠে।আহিন খাবার মুখে দিতে নিবে তখনই শাহরিয়ারের চোখ খুলে আহিনের দিকে তাকায়।শাহরিয়ার ঠিক বুঝতে পারছে না আহিন কি খাচ্ছে তাই সে এক পলকে সেদিকে তাকিয়ে আছে।আহিন খাবার নামিয়ে বলে…..
-“যদি খেতে মন চায় তাহলে অর্ডার করে নিতে পারেন,আমার খাবারের দিকে নজর দিয়ে আমার পেট ব্যাথা না বানাবেন না।”
আহিনের কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় শাহরিয়ার তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে….
-“আব আব তোমার খাবারের দিকে নজর কেন দিবো,আর তাছাড়া তুমি এমনটা কি করে করতে পারলে,তুমি একা নিজের জন্য অর্ডার করলে।আমাকে তো দেখলে আমিও কতটা ক্লান্ত ছিলাম”
-“আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন তাই অর্ডার করেনি।”
-“হুহ,হয়ছে আর মিথ্যে বলতে হবে না।”
শাহরিয়ার ওয়াশরুমে চলে গেল আহিন কিছু বলতে নিবে তার আগেই জোরে দরজা লাগিয়ে দেয়।শাহরিয়ার ফ্রেশ হয়ে এসেও দেখে আহিন একা একা খাচ্ছে তার খাবার অর্ডার করেনি।শাহরিয়ার তার সামনে গিয়ে বলে….
-“তুমি এখনো একা খাচ্ছো,আমার জন্য অর্ডার করোনি?”
-“আমি কেন করবো?আপনার পেট,আপনার খুদা লাগলে আপনি নিজে অর্ডার করে নিবেন।”
আহিন কথা বলে খেতে নিলেই শাহরিয়ার তার প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে।আহিন অবাক হয়ে শুধু তাকিয়েই আছে।কিছুক্ষণের মাঝে শাহরিয়ার পুরো প্লেট ই খালি করে দিল।আহিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো….
-“এটা কি করলেন?”
-“খাবার খেলাম!”
-“তা তো দেখলামই কিন্তু আমার টা কেন?”
-“ওহহ,এটা তোমার ছিলো কিন্তু কোথাও কোনো নাম লেখা নেই তাই বোঝতে পারিনি।”
আহিন রাগে আর কিছু বলতে পারলো না।শাহরিয়ার চোখ টিপ দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আহিন রাগে আর কোনো খাবার অর্ডার করলে না।কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার খাবার নিয়ে আসলো।টেবিলের উপর রেখে বললো….
-“রাগ করে নিজের পেট কে কষ্ট না দিয়ে চুপচাপ খাবারগুলো খেয়ে নাও।চর নেক্সট টাইম থেকে আমার সাথে লাগতে আসবে না তাহলে তোমার এরকমই হবে।”
শাহরিয়ার কথাগুলো বলে আবার রুম থেকে বেড়িয়ে গেল কারন আহিন যে জেদী তাতে ও রুমে থাকলে ওর সামনে কখনো খাবে না।শাহরিয়ার বের হয়ে যাওয়ার পর রুম লক করে আহিন চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলো।আহিনের খুব খুদা লেগেছিলো বলেই জেদ না করে খেয়ে নিলো।
রাতেরবেলা আহিন আর শাহরিয়ার বের হয়েছে,খুব ঠান্ডা এখানে।আহিন জিন্স আর জ্যাকেট পরে বের হয়েছে।আজকে প্রথমবার আহিনকে এমন ড্রেসে দেখলো।শাহরিয়ার কিছুটা অবাক হয়ে গেল,চোখ আটকে আছে তার দিকে।আহিন মাথায় টুপি দিতে দিতে দেখলো শাহরিয়ার ওর দিকে তাকিয়ে আছে,তাই সে ভালো করে জ্যাকেটের চেইন লাগিয়ে নিলো।
তারা একটা রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে আছে, দুজনের সামনে কফি আছে।আহিন বাড়িয়ে আছে।বাহিরে হালকা হালকা বরফ পরছে।শাহরিয়ার কে অনেকবার বলেছে একটু বরফে ছবি তুলে দিতে কিন্তু শাহরিয়ার রাজি হচ্ছে না।কারণ এতে আহিনের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে,হঠাৎ করে বলে।আহিনের ছবি তুলা হলো একটা বাহানা সে তো বরফ নিয়ে খেলতে চায়।শাহরিয়ার একটু ওয়াশরুমের দিকে গেলে আহিন চুপিচুপি বের হয়ে যায়।
শাহরিয়ার এসে দেখে আহিন টেবিলে নেই।সে রেস্টুরেন্টের ভিতরে খোঁজতে লাগে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।বাহিরে বের হতেই দেখলো আহিন বরফ নিয়ে খেলা করছে,শাহরিয়ার মানা করতে যাবে ওমনি তার দিকে একটা বরফের গোলা বানিয়ে ঠিল দিলো।শাহরিয়ার বলো….
-“আহিন কি করছো?চলো ভিতরে চলো!তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে তো!”
-“উহু,আমি আর ভিতরে যাচ্ছি না,আমি এখানেই থাকছি।আপনি যায় বলেন না কেন আমি শুনবো না।”
-“ওহহ,আচ্ছা তাহলে দাঁড়াও!!!”
শাহরিয়ার আহিনের দিকে যেতে নিলে আহিন আবারে বরফ ছুড়ে মারে,এবার শাহরিয়ারও বরফ নিয়ে তার দিকে ছুঁড়তে শুরু করে।এক পর্যায়ে আহিনের ছুড়া বরফ শাহরিয়ারের মুখে লাগে।তাতে করে শাহরিয়ার বেশী করে বরফ নিয়ে আহিন কে দিতে চায়,আহিন দৌড়তে শুরু করে।শাহরিয়ার আহিনকে দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘুরাতে লাগে।ঘুরাতে ঘুরাতে হটাৎ করে নিচে ফেলে দেয় আহিন’কে,তারপর তার মুখে অনেকগুলো বরফের গোলা বানিয়ে ঠিল দিতে লাগে।আহিন সেগুলো মানাতে মানাতে আরেকবার শাহরিয়ারের হাতে ধরে টান দেয়।শাহরিয়ার তাল সামলাতে না পেরে আহিনের উপর পরে যায়,আর তাদের ঠোঁট এক হয়ে যায়।হঠাৎ করে এমন একটা কিছু হয়ে যাবে তারা ভাবতে পারেনি।দুজনই দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর বুঝাোর চেষ্টা করছে একটু আগে এটা কি হলো।আহিন যখন একটু স্বাভাবিক হলো তখনি শাহরিয়ারকে নিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।উঠে দাঁড়িয়ে শাহরিয়ারের দিকে হাত বাড়ায়,শাহরিয়ার হাত ধরতে যাবে তখনই আহিন হাত সড়িয়ে আরো কতগুলো বরফ ছুড়ে দিয়ে চলে যায়।শাহরিয়ার একা একা হাসতে লাগলো আর বললো….
-“পাগলি একটা!!!”
নিমিষেই একা একা হাসার কারণ খুঁজে না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।#যদি_জানতে
Part:14
Written by: Shawon
পরেরদিন বিকেলবেলা ফারজু আহিন’কে ভিডিও কল দিলো।আহিন তার সাথে কথা বলছে….
-“ভাবী!হানিমুনে গিয়ে আমাকে একদম ভুলেই গেলে!!এটা কিন্তু ঠিক করোনি,তোমার মনে রাখা দরকার হানিমুন টা কিন্তু আমিই ঠিক করেছি।”
-“এজন্য তোমাকে হাজার কোটি শুকরিয়া করছি,এখন বলে সবাই কেমন আছে?”
-“সবার কথা বাদ দাও,আগে বলো কেমন কাটছে দিন-রাত?”
ফারজু কথাটা বলেই চোখ মারলো,আহিন বোঝতে পারলো ফারজু কি বোঝাতে চাচ্ছে তাই একটু লজ্জা পেয়ে গেল।পিছন থেকে শাহরিয়ার আহিন’কে জড়িয়ে দরে বললো….
-“ফারজু,এসব বিষয়ে দেখছি খুবই পেকে গেছিস!তাহলে তোর বিয়ে দিয়ে দেয়।তোর জামাইয়ের সাথে তোকেও সুইজারল্যান্ড পাঠাবো।”
-“হুহ,আচ্ছা ভাইয়া তোর সাথে একটা কথা ছিলো।আমার কিছু ফ্রেন্ড তোকে আর ভাবীকে দেখতে চেয়েছে,তারা সুইজারল্যান্ডেই থাকে।আর তারা আজকে একটা পার্টি’র আয়োজন করেছে।তাই আমি ওদের….”
-“তুই ওদের বলেছিস,আমারও সেখানে যাবো আর তাদের সাথে দেখা করে আসবো।তাই তো!!”
ফারজুর কথা শেষ হবার আগেই শাহরিয়ার কথাটা বলে দিলো।শাহরিয়ারের কথা শুনে ফারজু দাঁত বের করে হেসে দিলো,তাতে শাহরিয়ার বোঝে নিলো তার ধারনায়।সে ফারজুকে বললো…
-“ওকে ঠিক আছে!তুই আমাকে এড্রেস পাঠিয়ে দিস আমি আর তোর ভাবী সময় মতো চলে যাবো।”
শাহরিয়ার আহিনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।ফারজু কল কেটে দেওয়ার পর আহিন জিজ্ঞেস করলো….
-“আমরা কি সত্যি আজকে সন্ধ্যায় পার্টিতে যাচ্ছি?”
-“তোমার কি মনে হচ্ছে?আমি ওকে মিথ্যে বলছি?”
-“বলা টাই স্বাভাবিক,কারণটা আপনি জানেন নি!”
-“নাহ,এটা মিথ্যে না আমরা আজকে সন্ধ্যায় ঠিকই পার্টিতে যাচ্ছি।তুমি রেডী থেকো!!!”
সন্ধ্যায় শাহরিয়ার রেডী হয়ে বেডের উপর বসে বসে ফোন টিপছে,আহিন’কে সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু ওয়াশরুম থেকে কোনো সারা শব্দ আসছে।শাহরিয়ার এখন উঠে দরজায় নক করবে তখনই আহিন দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো।আহিন’কে দেখে শাহরিয়ারের চোখ বড় বড় হয়ে গেল,আজকে আহিন একটা রেড গাউন পরেছে,চুলগুলো এক সাউডে এনে খোঁপা করা,গর্জিয়াস ম্যাকআপ,লাল করা লিপস্টিক সাথে হাই হিল।আহিনকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো শাহরিয়ার,আহিন ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো…..
-“যাও যাক?”
-“আব,কি বললে?”
-“বললাম,আমরা কি এখন যেতে পারি?”
-“আব,হুম চলো!!”
শাহরিয়ার গাড়িতে বসেও বারবার আড় চোখে আহিনকে দেখছে।আজকে আহিন’কে সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে।আহিন কতক্ষণ পর পর তার ম্যাক আপ ঠিক আছে কিনা দেখতে বার বার সেলফি ক্যামেরা অন করছিল আর ঠোঁটের লিপস্টিক ঠিক করছিল।শাহরিয়ার ওর হাত থেকে লিপস্টিক নিয়ে বললো…
-“আব,তুমি গাড়িতে বসে আমার সামনে এমন করবে না!”
শাহরিয়ার এমন কথা শুনে আহিন কিছু বুঝতে না পেরে বলে…
-“আপনি কি বললেন আমি বোঝলাম না!আমাকে লিপস্টিক ঠিক করতে না করলেন কেন?”
-“আমার প্রবলেম হয় বার বার এরকম করতে দেখলে!”
-“আজব,আমার লিপস্টিক করায় আপনার কিসের প্রবলেম হবে?”
-“কারণ তুমি একটা মেয়ে!!”
আহিন এবার বোঝতে পারলো শাহরিয়ার কি মিন করতে চেয়েছে,তাই সে চুপ হয়ে অন্যদিকে ফিরে গেল।আহিন গাল টিপে মুচকি মুচকি হাসছে।গাড়িতে তারা আর কোনো কথা বলেনি।তারা পার্টিতে এসে গেছে,শাহরিয়ার আর আহিন কার থেকে নামার সাথে সাথে কতগুলো ছেলে মেয়ে ওদের ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানালো বোঝতে বাকি রইলো এরাই ফারজুর ফ্রেন্ড’স।
সবার সাথে হালকা পাতলা কথা বলে,আহিন এক পাশে চলে গেল।আর একটা সফট ড্রিংকস নিলো,তার সফট ড্রিংকস হলো মাল্টা জুস,হঠাৎ করে পিছন থেকে শাহরিয়ার এসে বললো…
-“কি বোরিং লাগছে?”
-“ওহহ,আপনি।আমাকে তো একদম ভয় পাইয়ে দিলেন।আর বোরিং লাগছে একটু একটু কারণ কাউকেই তেমন চিনি না।”
-“ওহহ আচ্ছা,তুমি ড্রিংকস ও করো?”
-“আরে না,এটা মাল্টার জুস!!!আপনি তো দেখছি একের পর এক প্যাগ মেরেই যাচ্ছেন।এতও গিলবেন না পরে হোটেলে ফেরায় মুশকিল হয়ে যাবে!!”
-“হাহাহা,না আমার অভ্যেস আছে,একসাথে কয়েক বোতল খেলেও কিছু হবে না।”
আহিন কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফারজুর এক ফ্রেন্ড এসে বলে….
-“আরে,ভাবী এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ওহ আচ্ছা ভাইয়াও আছে দেখছি।সরি আমি আগে দেখি নি।”
-“ইট’স ওকে,সরি বলতে হবে না।কিছু কি বলবে?”
-“হ্যা,আসলে কাপল ডান্স চলছে,আপনারা যদি চান তাহলে আপনারাও জয়েন করতে পারেন।”
আহিন না করতে যাবে তার আগেই শাহরিয়ার বলে…,
-“তুমি যাও,আমরা আসছি।”
-“ওকে ভাইয়া!”
শাহরিয়ারের দিকে আহিন চোখ বাঁকা করে তাকালে শাহরিয়ার বলে….
-“ডান্স করতে হবে চলো!”
-“আপনি আমার সাথে কেন ডান্স করতে যাবেন?”
-“তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো,এরা আমাদের স্বামী স্ত্রী হিসেবে জানে,আর ওখানে কাপল ডান্স চলছে।”
-“হুহ!”
শাহরিয়ার আর আহিন ডান্স ফ্লোরে চলে গেল।চারদিকে সবাই কাপল ডান্স করছে,কিন্তু সবথেকে সুন্দর হচ্ছে তাদের কাপল ডান্স।
অন্যদিকে ফারজু তার এক ফ্রেন্ডকে কল করে জিজ্ঞেস করে….
-“তোকে যেই কাজটা দিয়েছিলাম ঐটা হয়েছে?”
-“আরে বাবা,ওরা মাত্র ডান্স শুরু করেছে,আমি সুযোগ পেলেই কাজটা করে নিবো।”
-“আর বাকি সবকিছু?”
-“আর বাকি সবকিছু একদম ঠিকঠাক আছে,শুধুমাত্র এই কাজটাই বাকি!”
-“ওকে,এই কাজটাও কমপ্লিট করে আমাকে জানাবি আমি এখন রাখছি তাহলে!!”
শাহরিয়ার তাদের ডান্স শেষ করতেই চারদিক থেকে তালি দিতে লাগলো।আহিন একটু সাইডে চলে আসলো পিছন পিছন শাহরিয়ারও,সে কিছু বলবে তখনই একটা ওয়েটার এসে ওদের দিকে দুটো গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে….
-“স্যার আপনার রেড ওয়াইন,আর ম্যাম আপনার মাল্টার জুস!”
যদিও লোকটা ইংরেজিতে কথাগুলো বলেছে,আহিন তারা গ্লাস গুলো হাতে নিলে ওয়েটার চলে যায়।সাথে সাথে আহিন জিজ্ঞেস করে…
-“আপনি কি দিতে বলেছিলেন?”
-“নাহ,আমি তো ভাবলাম তুমি বলে এসেছো।”
-“নাহ,আমিও না।তাহলে হয়তো ফারজুর ফ্রেন্ডরা পাঠিয়েছে।”
এটা বলে আহিন এক চুমুক দিলো জুসে,আর শাহরিয়ার তার ওয়াইনে।এক চুমুক দেবার সাথে সাথে আহিন মাথা একটা চক্কর দিয়ে উঠলো,সে আরেক চুমুক দিয়ে সবটা খেয়ে নিলো।শাহরিয়ারও তার ওয়াইন বেশ অর্ধেক শেষ করে নিলো।কিছুক্ষণ আহিন বলতে লাগলো….
-“আপ আপনি দুটা কি করে হয়ে গেলেন?আরে আপনি এভাবে ঘুরছেন কেন?আপনার মুখ এমন বড় হলো কি করে?”
আহিন মাতাল হয়ে গেল,আসলে জুসে এলকোহল মেশানো ছিলো,শাহরিয়ার কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মাথাও ঘুরে গেল কারণ তার ওয়াইনেও বেশী নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশানো হয়েছে।সেও আবোল তাবোল বলতে লাগলো…
-“হাহাহা,তোমার মাথাও তো দুটো হয়ে গেছে।তুমি এভাবে বোকার মতো হাসছো কেন??”
-“হাহাহা আমি বোকার মতো হাসছি না!তুমি বোকার মতে হাসছে।”
দুজনই আবোল তাবোল বলতে লাগলো,ফারজুর দুটো ফ্রেন্ড এসে তাদেরকে একটা রুমের ভিতরে দিয়ে আসলো।আর পিছন থেকে লক করে দিলো।রুমটা একদম ফুলসজ্জার রুমের মতো সাজানো।চারদিকে ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।শাহরিয়ার ধপ করে খাটের উপর শুয়ে পরলো আর আহিন শাহরিয়ারের বুকে ধপ করে কিল বসিয়ে দিয়ে হাসতে লাগলো।শাহরিয়ার উঠে বসে বললো….
-“এই তুমি আমাকে এভাবে মারলে কেন?”
-“বেশ করেছি মেরেছি,আরে মারবো।আপনার মতো খাটুশকে মেরে তক্তা বানানো উচিত!”
-“কিহ আমি খাটুশ!”
-“তা নয়তো কি?”
-“আমি মোটেও খাটুশ না,খাটুশ হলে মেয়েরা আমার সাথে কথা বলার জন্য এত ডং করতো না।তুমি আমাকে হ্যান্ডসাম বলতে পারো আর হট ও বলতে পারো।”
-“কিহ,আপনি হট!!!হাহাহা বিড়ালের বাঘ হওয়ার ইচ্ছে!!”
-“কিহ!!কি বললে তুমি আমাকে?”
-“বিড়াল বললাম বিড়াল”
আহিন এই বলে উঠতে নিবে তার আগেই শাহরিয়ার টান মেরে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।দুজন দুজনের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।আহিনের খোঁপা খুলে ফেলল,চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো আহিন শাহরিয়ারকে জরিয়ে ধরললো।শাহরিয়ার নিজে যেন নিজের মাঝে নেই,সে আহিনের ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে লাগলো।আহিন শাহরিয়ারের ছোয়া পেয়ে কেঁপে উঠতে লাগলো।আহিন একটু উঠে যেতে নিলেই শাহরিয়ার তাকে শুয়ে দিলো।তারপর গাল হাত বুলাতে বুলাতে ঠোঁটে চলে গেল ঠোঁট হাত বুলিয়ে মাত্র কিস করতে নিবে তখনই আহিন শাহরিয়ার কে শুয়ে দিয়ে তার পরে উঠে গেল।শাহরিয়ারের মুখের উপর থেকে চুল গুলে সরিয়ে কানের পাশে গুচে দিয়ে আহিনকে চোখ টিপ মারলো।
-“চোখ কেন মারতেছেন?”
-“আমার চোক আমি মারবো।”
বলে আবারো চোখ মারলো।
-“আবার চোখ মারছেন”
-“চোখ মারলে সমস্যা কোথায়?”
-“দুশমান”
আহিন আস্তে করে শাহরিয়ারের গালে থাপ্পড় মারলো শাহরিয়ার বাচ্চা দের মতো কান্না শুরু করে দিলো।আহিন ভয় পেয়ে বললো…
-“আপনি কান্না করচেন কেন?জোরে লেগেছে বুঝি!আচ্ছা সরি সরি!এই যে কানে ধরছি আর হবে না।”
আহিন আর কথা বলতে পারলো না তার আগেই শাহরিয়ার ওর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো।আহিন কিছু বোঝার আগেই কিছু বোঝলো না।সেও রেসপন্স করতে লাগলো,শাহরিয়ার আহিনের কোমড় ধরে কিস করছে,আহিন শাহরিয়ার কে শুয়ে দিলো।শাহরিয়ারের গলায় কিস করতে শুরু করলো আহিন,আহিন কি করছে তা সে নিজেও জানে না।আস্তে আস্তে শাহরিয়ার শার্টখুলে দিলো।
তারা ধীরে ধীরে মিলনে লিপ্ত হলো যা ওদের মাঝে হালাল!!!
এদিকে ফারজুকে ফোন করলো তার ফ্রেন্ডরা,ফারজু রিসিভ করে বললো….
-“কিরে কাজ হয়েছে?”
-“একশতে একশ হয়েছে।ভাবীর জুসে এলকোহল আর ভাইয়ার ড্রিংকসে ঐটা!!”
-“কাজ হবে তো?”
-“হবে মানে,একদম হয়ে গেছে।রুমে লক করে এসেছি।”
-“এই না হলে আমার ফ্রেন্ডস”
ওরা আরো কিছুক্ষণ ফাজলামো করার পর কল কেটে দিলো।
#চলবে!!
বিঃদ্রঃ গতকাল আমি অসুস্থ(জ্বর) থাকায় গল্প দিতে পারিনি,সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত!!
#চলবে!!