বস বর পর্ব ২১+২২+শেষ

#বস_বর (পর্ব-২১ ও ২২)
পর্ব-২১
Writer : Eti Chowdhury
.
রোদের চোখ আটকে গেলো পাশে রাখা ভাজ করা একটা খাম আর কাগজে। মনের ভিতর অজানা একটা ভয় কাজ করতে লাগল রোদের। সামন্য একটা কাগজ তাও খুলতে রোদের এতো ভয় লাগছে। কাগজটা খুলতেই একটা শব্দে তার চোখ আটকে গেলো।


রোদ কি দেখছে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। চিঠিটা পড়া শুরু করলো।

চিঠি,

স্যার,

স্যার ছাড়া আপনাকে অন্য কিছু বলে সম্ভোধন করতে পারলাম না। কি বলে সম্ভোধন করবো বলে দিতে পারেন আমায়? কে আপনি আমার? আমি বলবো? আপনি আমার সব। হ্যাঁ, আপনি আমার সব। এক বছর আগে যখন বললাম আপনার হেল্প করব বিশ্বাস করেন আমি ভাবতেও পারিনি আপনাকে ছেড়ে যেতে আমার এতো কষ্ট হবে। কেনো হয় এতো কষ্ট বলতে পারেন? কেনো আমার বুকটা জ্বালা করে। আপনাকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবলেই আমার বুকটা ভিষন জ্বালা করে জানেন। জানেন আপনি কেন এমন হয়? ভালোবাসি, হ্যাঁ, বড্ড ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি আপনাকে তাই চলে যাচ্ছি বহুদূরে চিরতরে। আর আপনাকে কষ্ট দিবো না। পাশের ওই খামটায় আমার রিজায়েন লেটার রাখা আছে। আপনার কাছে আরেকটা জিনিস চাইবো দিবেন প্লিজ। আমার জন্য একটু দোয়া করবেন আল্লাহ যেনো আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করে। আমার কোল জুড়ে যেন একটা ছোট্ট রোদ আসে। আপনাকে পাবার মতো সৌভাগ্য তো আমার নেই তাই যেন আপনার অংশ আমার জীবনে আসে। ভাববেন না কখনো ওকে নিয়ে আপনার কাছে এসে কোন অধিকার দাবি করব না। আমি পারবো না আপনার নামটা নিজের থেকে মুছে ফেলতে তাই ডির্ভোস পেপারটায় সাইন করতে পারিনি। এটুকু থাক আমার কাছে। অনেক কথা বলে ফেললাম ভালো থাকবেন। আজ আপনার জীবনের অনেক বড় একটি দিন। ওগো ভালোবাসি।

ইতি

আপনার না আমার #বস_বর এর বউ।
।।
।।
রোদ চিঠিটা নিয়ে মাটিতে বসে পরলো।

– এটা কি হলো। সব আমার দোষ কেনো আমি বললাম না কেনো কেনো কেনো। আমার জন্য ও এতো কষ্ট পেলো। আমিও যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি। কেনো বলার সুযোগটা দিলে না আমায়? একটু অপেক্ষা করতে আমার জন্য। আমি যে মরে যাবো তোমাকে ছাড়া। প্লিজ জান একবার ফিরে আসো প্লিজ।

ডির্ভোস পেপার টায় রোদের চোখ গেলো সত্যি ইতি সাইন করেনি। পেপারটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলল রোদ।

– নাহ ওকে আমি খুজে বের করবোই।

রোদ বেরিয়ে পরলো ইতিকে খুঁজার জন্য।


অফিসে,

রোদ আর ইতি অফিসে আসেনি তা দেখে রাফসান আদিক বলে,

– কি ব্যাপার আজ স্যার এলেন না ইতিকেও দেখছি না।

– হুম….বুঝতে পারছি না।

রোদ বার বার ইতিকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু মেয়েটার ফোন বন্ধ।

রাফসান আদিকে জিজ্ঞেস করে,

– ইতি কিছু বলেনি?

– নাহ তো। আচ্ছা আমি একটু আসছি।

রাফসান ইতির কথা বলায় আদির মনে পরে গেলো ইতি গতকাল একটা বক্স দিয়ে ছিলো তাকে। ওটা দেখা হয়নি তার এখনো। আদি কেবিনে গিয়ে বক্সটা খুলল। বক্সে একটা রিং। রিংটা আদি ইতিকে দিয়ে ছিলো। ইতি বলেছিলো বিয়ের পর পরবে সে রিংটা আগে পরতে চাচ্ছে না। রিংটার সাথে একটা চিঠি।

চিঠি,

আদি,

জানি আমার কথায় তুমি কষ্ট পাবে কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না। তুমি আমায় ভালোবাসো আমি জানি। কিন্তু আমি যে তোমায় কোন দিনও ভালোবাসতে পারবো না। এই কথা শুনে তুমি হয়ত বলতে সময় সব ঠিক করে দেয় কিন্তু তা সম্ভব নয় আমি যে আমার স্বামীকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। হ্যাঁ, তোমাকে বিয়ে করলে তোমার সাথে অন্যায় হতো। রাফসান না থাকলে জোকের ঘোরে হয়ত ভুলটা হয়েই যেতো। কিন্তু সময় থাকতে যেহেতু ভুলটা বুঝতে পেরেছি তাই এবার ভুলটা সুধরে নেবার পালা। তাই আমি চলে যাচ্ছি। এভাবে প্রতিনিয়ত স্যারকে না পেয়ে তার সামনে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এতোটাও শক্ত নই। তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে যেন আর কখন তোমাদের কারো সাথে দেখা না হয়। একটা উপরকার করবে প্লিজ। তোমার আমার #বস_বর টাকে একটু দেখে রেখো প্লিজ। অনেক ভালোবাসি তাকে।

ইতি।

– সিট মেয়েটা কি করলো।

আদি দৌড়ে ক্যান্টিনে গেলো। রাফসান আর রিমি কথা বলছে। হুমরি খেয়ে পরলো আদি ওদের টেবিলে। রাফসান বলে,

– সাবধান পরেই তো যেতি।

– ইতি চলে গেছে।

– মানে?

– সব ছেড়ে চলে গেছে।

রাফসান আর রিমি একসাথে বলে উঠে,

– ওয়াট !!!!

– হুম ডোস বেশি হয়ে গেছিলো মনে হয়। মেয়েটা মনের কথা স্যারকে না বলে উল্টা সব ছেড়ে চলে গেলো।

– সিট মেয়েটা এতো বোকা কেন।

রিমি, রাফসান আর আদির কথা শুনে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকায় আর আদিকে বলল,

– তুমি জানতে ম্যাম স্যারকে ভালোবাসে?

রিমির প্রশ্নের উত্তরে আদি কিছু বলার আগে রাফসান বলে,

– আদি আমার ছোটবেলার বন্ধু।

– মানে?

আদি বলে,

– ওসব পরে হবে। এখন ইতিকে খুঁজে বের করতে হবে আগে আমাদের।

রাফসান বলে,

– আমি স্যারকে ফোন দেই।

রাফসান রোদকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু তার ফোন বিজি। এতো কার সাথে কথা বলে কে জানে। অনেক্ষণ পর লাগলো লাইন।

রাফসানের ফোন রিসিভ করেই রোদ বলে,

– ইতি কি অফিসে এসেছে?

– না স্যার। আমরাও বের হচ্ছি ওকে খুঁজতে।

– তোমরা কিভাবে জানলে?

– সেটা ফ্যাক্ট না স্যার এখন ইতিকে আগে খুঁজতে হবে।

– হুম…. কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। রিমিকে বলো আমদের ইন্টালিজেন্স ডির্পাটমেন্টে ইতির নম্বরটা দিতে যেন খোলার সাথে সাথেই ট্রেক করে ও কোথায় আছে। আর ওর সাস্ট লোকেশনটা বের করতে।

– ওকে স্যার। বাট স্যার ওকে পাবো তো।

– ওকে আমার পেতেই হবে রাফসান।

ফোন রেখে দিয়ে পাগলের মতে ড্রাইভ করতে লাগলো রোদ।

রাফসান আর আদিও বেরিয়ে গেলো ইতিকে খুঁজতে আর রিমিকে বলে গেলো,

– রিমি তুমি ট্রেকিংটা খেয়াল রেখো। কিছু জানতে পারলে সাথে সাথে আমাদের জানাবে।

সবাই মিলে খুঁজতে লাগলো ইতিকে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।


ইতি অনেক্ষণ হাটলো। ইতি তার বাবার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। ভিতরে যাওয়ার মতো সাহস তার নেই। বাবা-মাকে কি বলবে ইতি। উনারা যদি জানতে পারেন হয়ত মরেই যাবে। নাহ সম্ভব না। ইতি পারবে না উনাদের এই কষ্ট দিতে। বাবা-মার বলা সেদিনের কথা মনে পরে গেলো ইতির। ইতির মা ইতিকে বলেছিলো, “স্বামী যেমনই হয় বিয়ের পর সেই সব। আর রোদ তো সে হিসেবে অনেক ভালো ছেলে। আর বাবা বলেছিলেন একটা মেয়েই প্রতিটা ঘরকে পূর্ণ করে। সংসারের সুখের কারণ হয় মেয়েটা”। আর ইতি কিনা সে ঘর সংসার ছেড়ে চলে এলো। এ কথা সে কিভাবে বলবে তাদের। নাহ তাদের কাছে যাওয়া যাবে না তাই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে পা বাড়ালো ইতি। কোথায় যাচ্ছে তা সে নিজেও জানে না। শুধু হেটেই যাচ্ছে, হেটেই যাচ্ছে।

বেলা ফুরিয়ে এলো কিন্তু রোদ কোথাও পেলোনা ইতিকে। রোদের বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। ইতিকে ছাড়া ওই বাসায় রোদ কিভাবে থাকবে। হঠ্যাৎ পথেই রাফসান আর আদির সাথে দেখা হলো। রোদকে দেখে রাফসান জিজ্ঞেস করে,

– এনি নিউজ স্যার?

– নাহ।

আদি বলে,

– আপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমরা ঠিক ওকে পেয়ে যাবো।

– আদি তুমি..

– ওসব কথা পরে হবে স্যার এখন ইতি বেশি ইম্পর্টেন্ট।

– হ্যাঁ, স্যার। এখন তো দেরি হয়ে গেছে আপনি বাসায় চলে যান। কাল সকালে না হয় আগে থানায় একটা জিডি করবো। আর এমনও তো হতে পারে ও বাসায় ফিরে আসতেও পারে।

– হ্যাঁ, স্যার রাফসান ঠিক বলছে।

– হুম,,,,,

ওকে হ্যাঁ বলে দিলেও রোদের মনটা মানছে না। তাই সে আরো একটু খুঁজলো ইতিকে। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রোদ বাসায় ফিরলো। নিজের মধ্যে কোন শক্তি পাচ্ছে না। ইতিকে ছাড়া রোদ ফিরতে চায়নি। বাড়ির গেটের সামনেই গাড়িটা থামিয়ে দিলো রোদ আর গাড়ি চালানোর শক্তি পাচ্ছে না সে। গাড়ি থেকে নামতেই পাশে চোখ পরলো রোদের কেউ একজন বাসায় সমানের আইলেনের উপর মাথা নিচু করে বসে আছে। হালকা আলো তাও বুঝা যাচ্ছে সে কে। কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে তাকে দেখলো রোদ। পা গুলো আগাচ্ছে না তার। তাও ধীরে ধীরে তার সামনে গিয়ে হাটু গেরে রাস্তায় বসে পরলো রোদ। সে এখনো হাতের ভাঁজে মাথা দিয়ে রেখেছে যেভাবে মানুষ টেবিলে মাথা রাখে সেভাবে। রোদ বসে পরলো মাটিতে। রোদের চোখ দিয়ে কেবল পানি পরছে। গলাটা শুকিয়ে গেছে তার। কথা বের হচ্ছে না কোন। তাও সে বলল,

– ব…বউ

ইতি কানে বউ শব্দটা যেতেই স্তম্ভতি ফিরে পায় সে। মাথা উচু করতেই দেখে রোদ হাটু গেরে বসে আছে তার সামনে। রোদকে পাগল পাগল লাগছে দেখতে। বাচ্চাদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে মানুষটা। রোদকে দেখে ইতির চোখের পানি আর তার কথা শুনছে না। ইতির চোখের বাধ ভেংগে গেলো। রোদ আবার ডাকলো ইতিকে,

– বউ

আবার রোদের মুখে বউ ডাকটা শুনে ইতি রোদকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। হাউমাউ করে দুজন কাঁদতে লাগলো। রোদ নিজেও ইতিকে জড়িয়ে ধরলো। ইতির বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো ইতি। কেউ কোন কথা বলছে না। শুধু কান্না করছে তারা। অনেক্ষণ বসে এভাবেই কান্না করলো দুজন। ইতির বুকটা ভেসে যাচ্ছে রোদের চোখের পানিতে।

ইতি হাত দিয়ে ধরে রোদের মুখটা তুলে ধরলো।

রোদ ইতির চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। হাতটা বাড়িয়ে দিলো ইতির দিকে। ইতির উঠতে কষ্ট হচ্ছে তাও রোদের হাতটা নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে উঠল ইতি। দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে ইতিকে। তাই রোদ ইতিকে কোলে তুলে নিলো। কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো। লিফ্টেও ইতিকে কোল থেকে নামায়নি রোদ। কোলে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো। বাসায় ডুকে ইতিকে রুমে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো। ইতিকে বসিয়ে দিয়ে রোদ উঠে যাচ্ছিলো। ইতি খোপ করে রোদের হাতটা ধরে ফেলল। ইতি হাতটা ধরায় রোদ দাঁড়িয়ে গেলো। ইতি উপেরর দিকে মাথা তুলে রোদের চোখে চোখ রেখে বলে,

– পারলাম না। আই এম সরি। কোথায় যাবো বুঝতেই পারছিলাম না। আমার যে যাওয়ার কোন….

– ব্যাস…

বলে চিৎকার করে উঠলো রোদ।

– ভাবো কি নিজেকে তুমি? তুমি চলে যাবে আর আমি পাগলের মতো খুঁজবো তোমায়? হ্যাঁ, পাগলের মতোই খুঁজেছি তোমায় সারাটাদিন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। পাগলের মতো খুঁজেছি তোমায়। কে তুমি? এই মেয়ে কে তুমি যে তোমাকে আমি পাগলের মত খুঁজবো? আবার সরি বলা হচ্ছে।

রোদ ঝটকরে ইতিকে কাছে টেনে নিলো।ইতিও কাঁদছে। রোদ ইতিকে আরো কাছে টেনে নিলো। রোদ নিজের ঠোঁট দিয়ে ইতির চোখের পানি মুছে দিলো। মূহুর্তের মধ্যেই মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। রোদ ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

– এই বলো না তুমি আমার কে?

ইতি লজ্জায় রোদেরর বুকে মুখ লুকালো। তা দেখে রোদ ইতির মাথা তুলে ধরে বলে,

– আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে?

ইতি তাও নিচে তাকিয়ে আছে। রোদ ইতির থুতুনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বলল,

– তাকাও আমার দিকে।

ইতি রোদের চোখের দিকে তাকালো। মেয়েটা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে মনে মনে। ইতিকে আরেকটু বেশি লজ্জা দিতে রোদ বলে,

– ও বউ বল না তুমি আমার কে?

ইতি হুট করেই রোদকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– আমি আপনার বউ।

– ভালোবাসি বউ অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি বউ।

ইতি আবার হাউমাউ করে কান্না করে দিয়ে বলে,

– অনেক ভালোবাসি।

– আজ তোমাকে না পেলে মরেই যেতাম আমি।

ইতি খোপ করে রোদের মুখ ধরে ফেলল,

– একদম বাজে কথা বলবেন না। খুন করে ফেলবো। আপনি মরতে পারবেন না।

রোদ ইতির হাতে একটা চুমু দিয়ে হাতটা ধরে বলে,

– তাহলে কেনো গেলে আমায় ছেড়ে? আর যাবে না বলো।

– যাবো তো।

– তাহলে আমি মরেই যাবো।

ইতি এবার রাগি চোখে তাকালো রোদের দিকে আর বলে,

– বারে আমি বাবার বাসায় যাবোই।

– না তুমি যাবা না বা….এ্যা বাবার বাসায়?

– তো কতদিন বাবার বাসায় যাই না। আমি যাবোই আর অনেক দিন থাকবোও।

– সেটা তো আমিও যাবো।

বলেই রোদ একটা হাসি দিলো।

– জি না আপনাকে নিচ্ছি না। আপনি গেলে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না।

– হুহ বললেই হলো তাহলে তোমাকেও যেতে দিবো না।

– হুহ….

বলে ইতি রোদকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু রোদ ইতির হাত ধরে ফেলল। ধরে ইতিকে টেনে কাছে নিয়ে গেলো। রোদর পিছন থেকে ইতিকে জড়িয়ে রাখলো। মুখটা ইতির কাছে নিয়ে বলে,

– কি যেনো বলছিলে চিঠিতে? কি দোয়া করব? আমার অংশ, আমার সন্তান, তোমার কোল আর কি কি যেনো বলছিলে?

– এমা….

কি লজ্জা কি লজ্জা দু হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো ইতি।

রোদ ইতির কাধে একটা চুমু দিলো। ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

– এতো কম আদরে চলবে? জুনিয়র চৌধুরীর জন্য যে আপনাকে আর অনেক অনেক আদর করা লাগবে। আমার অংশে যে, এতো সহজে ধরা দিবে সে?

– ইসস…. আপনি না।

– এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে। চাই না জুনিয়র চৌধুরী?

ইতি ঘুরে রোদকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– চাই চাই চাই…

– সো ফাস্ট তিনটা চাই?

নিজের কথায় নিজেই বোকা হয়ে যায় ইতি। রোদের বুকে কিল ঘুষি দিতে লাগলো আর বলে,

– আপনার মুখে কিছু আটকায় না? বেহায়া।

– হ্যাঁ, বেহায়া আমি তোমার প্রেমে বেহায়া।

– এখন ছাড়ুন ফ্রেস হয়ে আসি। মুখের কি অবস্থা করেছেন নিজের সেটা কি জানেন? সারাদিন তো কিছু খাননি।

– আসলেই অনেক খুদা লেগেছে। কিন্তু তোমাকে যে যেতে দিতে মন চাইছে না।

ইতি পা উচু করে দাঁড়িয়ে রোদের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

– আর কোথাও যাচ্ছি না।

ইতি ফ্রেস হতে চলে গেলো।

রোদের অনেক শান্তি লাগছে। মনের ভিতরের তুফানটাও তার কিনারা ফিরে পেয়েছে। রোদের মনে পরে রাফসান আর আদিকেও তো বলা দরকার যে ইতিকে সে খুঁজে পেয়েছে। তাই রোদ রাফসান আর আদিকে কনফারেন্স কল দিলো।

– হ্যালো।

– একটু ওয়েট করো আদি জয়েন করছে।

– হ্যালো।

রোদ বলে,

– ইতি কে পেয়েছি।

– রিয়্যালি স্যার। পাগলটা কোথায়?

– ফ্রেস হচ্ছে। সারাদিন বাইরে ছিলো ক্লান্ত এখন অনেক।

– যাক ফাইনালি পাওয়া তো গেলো।

– বাট কোথায় পেলেন স্যার?

– বাসার সামনেই বসে ছিলো। কিন্তু আদির ব্যাপারটা আমি ক্লিয়ার না।

আদি বলে,

– কাল সরাসরি না হয় সব বলব।

– ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে।

রাফসান এবং আদি একসাথে বলে,

– ওকে স্যার টেক কেয়ার ইউ বোথ।


কিছুক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে রইল রোদ।

ইতি পিছন থেকে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরল।

রোদ বলে,

– আমার বউটা ফ্রেস হয়ে গেছে?

– জি এখন আপনি যাবেন।

– আমার যে যেতে মন চাইছে না।

– এ্যা মন চাইছে না বললেই হলো। আসুন।

ইতি রোদের হাত ধরে টেনে বাথরুমে ডুকিয়ে দিয়ে নিজে কিচেন চলে এলো নিজেদের জন্য খাবার রেডি করতে। রোদ ফ্রেস হয়ে সোজা টেবিলে চলে এলো।

– তুমি এখানে কি করো? আমি তোমাকে খুঁজছি।

– কেনো?

– তোমাকে দেখবো তাই।

– তাই, তো খাবে কে?

ইতির কথার সাথে সাথে রোদ চেয়ার টেনে বসে পরে খেতে। কিন্তু একটা প্লেট দেখে রোদ বলে,

– একটা প্লেট যে? তুমি খাবে না?

– খাবো তো। আজ আমি আপনাকে খাইয়ে দিবো। নিন হা করেন।

রোদের পাগলীটা তাকে অনেক বেশি ভালবাসে। আর রোদ তাকে কি কষ্টটাই না দিলো। ইতি বলে,

– ওসব কথা ভাবতে হবে না যা হয় ভালোর জন্যই হয়। এখন ওসব ভেবে মন খারাপ করা লাগবে না।

রোদ ভ্রু কুচকে ইতির দিকে তাকায়। ইতি বলে,

– বারে আপনি আমার মনের কথা শুনতে পারলে আমি পারবো না কেনো আপনার মনের কথা বুঝতে।

দুজনেই হাসতে লাগলো। ইতি পরম আদরে রোদকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষ করেই দুষ্টু বুদ্ধি এলো রোদের মাথায়। যা ভাবা তাই করা। রোদ ইতিকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।

– এ্যা কি করছেন। খবরদার আমার সহ্য হয় না।

– তাই বুঝি?

রোদ ইতির দিকে আগাতে লাগলো কাতুকুতু দিবে বলে,

– নাআআআ…..

বলেই ইতি দিলো দৌড়।

রোদ নিজেও ইতির পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল। সারা বাসায় দৌড়ালো ওরা। ইতি হেসেই যাচ্ছে। আর ইতির এই হাসি দেখার জন্যই ওর সাথে এতো পাগলামী করছে রোদ। এই হাসিটার জন্য যে রোদ সব করতে পারে সব সব। একপর্যায় ইতিকে নিয়ে রোদ বিছানায় পরে গেলো। দুজনই খিলখিল করে হেসে দিলো। ইতি রোদের বুকে মাথা রাখল। রোদ ইতির কপালে একটা চুমু খেয়ে উঠে বসল। হাতটা ইতির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

– এসো।

ইতি রোদেরর হাতটা ধরে উঠে বসলাম।

রোদ ইতিকে নিয়ে মিররের সামনে দাড়াল আর বলে,

– তুমি দাড়াও আমি আসছি।

রোদ একটা পেকেট এনে ওকে পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরলো। প্যাকেটটা সামনে দিয়ে বলল,

– যাও রেডি হয়ে আসো। আর আমি না ডাকা পর্যন্ত প্লিজ বের হবে না। আমি তোমাকে টেক্সট দিবো।

– কিন্তু কেনো?

– প্লিজ কোন প্রশ্ন কর না প্লিজ। আমি যা বলছি কর।

– আচ্ছা।

ইতি প্যাকেটটা রোদের হাত থেকে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।

রোদ এদিকে সব রেডি করে নিলো।

– ব্যাস সব রেডি। লুকিং নাইস। নিজের সাথেই বলে আবার নিজেকে একবার মিররে দেখে এরেকটু পারফিউম দিয়ে নিলো রোদ।

ইতি বাথরুমে গিয়ে প্যাকেট খুলে লজ্জায় শেষ।

– ইসস….উনি এটা কি করেছেন পাগল একটা। লজ্জায় ইতি শেষ হয়ে যাচ্ছে তাও রোদের মনের ইচ্ছা সে পূরণ করবেই।

রোদ ইতিকে টেক্সট পাঠিয়ে দিলো, “ চলে এসো”।

রোদের টেক্সটও পেয়ে ইতির সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে কিভাবে যাবে সে রোদের সামনে। ইতি বাথরুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রোদ দরজা খুলার শব্দ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে হা করে রইল।

– মাশাহ আল্লাহ

কথাটা জোরেই বলে ফেলল রোদ,

– এ আমি কি দেখছি। সুবহান আল্লাহ। আমার বউকে যা লাগছে। মনে মনে বলছে রোদ।

ইতি রোদের চাহনি দেখে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। লজ্জায় নিচে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। চোখ তুলতেই পারছে না।

ইতি সামনে আসতেই রোদ ইতির চারিদিকে একটা চক্কর দিলো। ইতিকে সে আপাদমস্ত দেখছে। আর ইতি লজ্জায় মাথাই তুলতে পারছে না। রোদ ইতির আমার চারিদিক ঘুরে ওর সামনে আসতেই লজ্জায় রোদের বুকে মুখ লুকালো ইতি। সে যে কি লজ্জা। রোদ ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

– তোমার এই লজ্জাটাই তো আমাকে আরো পাগল করে তোলে তোমার জন্য।

আজ সকালে বাসায় আসার সময় অনেক খুঁজে ইতির জন্য একটা নাইটি কিনেছে রোদ। তার বউটাকে মানায় এমন কিছু।

ইতি কখনও এমন কিছু পরেনি। আজ প্রথম রোদের জন্য পরলো তাও তারই দেয়া। কি যে লজ্জা লাগছে মেয়েটার।

রোদ ইতির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে আবার বলল,

– হ্যাপি ফাস্ট এনিভার্সারি মাই দিয়ার ওয়াইফ।

এনিভার্সারির কথা শুনে ইতি অবাক হয়ে রোদের দিকে তাকায়। এতো কিছুর মাঝে তার তো খেয়ালই ছিলো না আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী। একবছর হয়ে গেছে। ইতি পিছনে ফিরেই রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ ইতিকে ঘুরিয়ে দাড় করালো। কেক এনেছেন রোদ। ইতি তো লজ্জায় মাথায়ই উঠাতে পারেনি কেক কিভাবে দেখবে। রোদ রুমটা হালকা ডেকরেট করেছে। রোদ বলে,

– এসো।

ইতিকে নিয়ে কেকটা কাটলো।

ইতি রোদকে কেক খাইয়ে দিয়ে কানে কানে বলল,

– হ্যাপি এনিভার্সারি আমার #বস_বর।

বলেই ইতি রোদের গালে একটা চুমু একে দিলো।

রোদ আর ইতিকে পালাতে দেয়নি। ইতিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলো। আজ রোদ তার বউটাকে বিনা সংকচে আদর করবে। আর কোন বাধা নেই আর আসতেও দিবে না সে। তার বউটা যে ছোট্ট একটা রোদ চেয়েছে তার আবদার কি না রেখে পারে রোদ। ইতির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠল রোদ।

ভোরে,

ভোরের হালকা আলো এসে ইতির চেহারায় পরছে কি মায়াবী লাগছে দেখতে অপলক চেয়ে রইল রোদ।
.
চলবে……..
.
.
.
#বস_বর
পর্ব-২২ (শেষ পর্ব)
Writer : Eti Chowdhury
.
ভোরে।

ভোরের হালকা আলো এসে ইতির চেহারায় পরছে কি মায়াবী লাগছে দেখতে অপলক চেয়ে রইল রোদ। ইতি ঘুমাচ্ছে আর রোদ তাকে দেখছে।

ইতির হঠ্যাৎ ঘুম ভাংঙ্গতেই দেখে রোদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদের তাকানো দেখে ইতির যে কি লজ্জা লাগছে মনে হয় সে শেষ হয়ে যাচ্ছে। রোদ যেন তার দৃষ্টি দিয়েই ইতিকে আদর করছে।

রোদ ইতির কপালে একটা চুমু একে দিলো। ইতি লজ্জায় রোদের বুকে মুখ লুকালো। রোদ ইতিকে জিজ্ঞেস করে,

– কেমন কাটল আমার বউয়ের রাতটা?

– ইসস…..আপনার মুখে কিছুই আটকায় না?

– হাহাহাহা…….কেন গো?

– আমার লজ্জা করে আপনি বুঝেন না?

– তাই….আর আদরের সময়…

বলেই ইতিকে বিছানায় ফেলে ওর উপরে উঠে গেলো রোদ।

– এই কি হচ্ছে একদম না ঠিক হচ্ছে না কিন্তু….

– তাই……

বলেই ইতির হাত দুটো খাটের উপর চেপে ধরলো রোদ। ইতির ঘারে মুখ দিলো। চুমু খেতে লাগলো।

– একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু এই এ..এ….ই

ইতি আর কথা বলতে পারছে না। তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। ইতি মাতাল হয়ে যাচ্ছে। ইতি আর রোদকে বাধা দিচ্ছে না। ইতি নিজেও রোদকে তার সাথে উন্মাদ করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। রোদ উন্মাদের মতো ওকে নিয়ে আবার সুখের সমুদ্রে পারি জমালো।

প্রায় ৯ টা বাজে দুজন দুজনকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছি। রোদের বউয়ের চোখ ভরা লজ্জা। ওকে টান দিয়ে বুকে নিয়ে নিলো রোদ। ইতি বলে,

– অফিসে যেতে হবে না?

– নাহ আজ যাবো না।

– কেনো?

– আজকের দিন শুধু তোমার আমার?

– আর অফিসের কাজ? আপনি না গেলে অফিস যে গোল্লায় যাবে।

– উফফ….. আমার বউটা যে কেন এতো আনরোমান্টিক…

ইতি রোদের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,

– কি বললেন?

রোদ মুখ ভার করে বলে,

– ঠিকি তো বলেছি আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আর তুমি আমাকে জোর করে অফিসে পাঠাচ্ছো।

– আমিও তো যাবো অফিসে।

– ওহ তাও তো ঠিক। তুমি তো আমার সামনেই থাকবে রোমেনন্স করা যাবে।

বলেই একটা চোখ মারলো রোদ ইতিকে।

– ইসসসস….. লোকাটার কেমব রোমান্স। এখন উঠুন।

অফিসে।

রোদ গাড়ি অফিসের সামনে থামালো। নেমে ইতির দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দেয়। ইতি হাসি দিয়ে আজ অধিকারের সাথে রোদেরর হাতটা ধরলো।

আজ ইতির হাত ধরাটা অন্য রকম লাগছে রোদের কাছে। ইতির হাত ধরে ওকে নিয়ে উপরে গেলো রোদ। অফিসের লবিতে গিয়ে দুজনেই চমকে গেলো। রাফসান, রিমি, আদি আর বাকি সবাই ফুল হাতে দাড়িয়ে আছে ওদের ওয়েলকাম করার জন্য। রোদ আর ইতি অনেকটাই অবাক হয়।

সবাই ফুল দিয়ে ওয়েলকাম করল ওদের। তারপর যার যার জায়গায় চলে গেলো।

রোদ বলে,

– রাফসান, রিমি, আদি তোমরা থাকো। আমাদের অনেক কথা বাকি।

সাবই ক্যান্টিকে বসলো। রোদ নিজে ইতির চেয়ার টেনে দিলো। এটা দেখে ওরা তিনজন উউউ বলে খুশি প্রকাশ করল আর উৎসাহ দিলো । রোদ নিজের চেয়ারটা ইতির একদম কাছে নিয়ে গিয়ে গা ঘেষে বসল। তারপর রোদ বলে,

– এখন বলো কাহিনি কি?

রাফসান বলে,

– আমি শুরু করি।

আদি বলে,

– হা তুই শুরু কর। যেহেতু নাটের গুরু তুই।

ইতি বলে,

– মানে? কিসের নাটক?

রাফসান বলে,

– ওয়েল, আদি আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড।

এই কথা শুনে, রোদ, ইতি আর রিমি তিনজনই অবাক।

ইতি বলে,

– ওয়াট !!!

রোদ বলে,

– মানে?

রিমি বলে,

– কিভাবে?

রাফসান বলে,

– ইটস ট্রু…

ইতি বলে,

– আমি আর তুমি মিলেই তো ওর ইন্টারভিউ নিলাম তুমি তো কিছু বললা না আর এতো দিনেও তো…

রাফসান ইতিকে বাঁধা দিয়ে বলে,

– সব বলছি। আদি আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড আমরা একসাথে পড়ালেখা করেছি। তোমাদের ব্যাপারটা আমি ওর সাথে সেয়ার করে ছিলাম তখন ও নিজেই আমাকে বুদ্ধি দেয় তোমাদের মাঝে কোন তৃতীয় ব্যাক্তি আসলেই হয়ত বা তোমরা এঁকে অপরকে হারানোর ভয়ে একে অপরকে নিজের মনের কথা বলবা। আর কখনই অফিসে লোক নেয়া হবে। জানতে পেরেই আমি ওকে বলি ইন্টারভিউটা এটেন্ট করতে। আর আমাদেরই প্লেন ছিলো আমরা কাউকে বলব না আদি আমার ফ্রেন্ড। তাহলে তুমি ইজিলি ওর সাথে ফ্রি হতে পারবে আর তাই হলো।

ইতি বলে।

– আদি যদি ইন্টারভিউ তে সিলেক্ট না হত তাহলে?

রাফসান একটা হাসি দিয়ে বলে,

– আদি লেখাপড়ায় আমার থেকেও ভালোছিলো। সো সিলেক্ট হবে সেটা আমি সিওর ছিলাম। আর ব্যাস শুরু হয়ে যায় তোমাদের মিলানোর কাজ। আদির কথা মতোই আমি তোমাকে সেদিন রাতে ফোন দিয়ে ছিলাম। সবগুলো কথা আদির সাজানো ছিলো শুধু ভয়েস আমার ছিলো।

এবার আদি বলে,

– আর ওই ডোসটাই বেশি হয়ে যায়। তুমি স্যারকে মনের কথা না বলে উল্টো বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে।

রাফসান বলে,

– এই তো কাহিনি আর বাকিটা সবার জানা নাও ইউ বোথ আর টুগেথার।

সব শুনে রোদ বলে,

– আসলে তোমাদের থ্যাংকস দিলেও কম হবে।

ইতি বলে,

– আচ্ছা বিয়ের জন্য এতো শপিং হলো যে….

ইতির কথা শুনে রাফসান আর আদি হেসে দিলো। ওদের হাসতে দেখে ইতি জিজ্ঞেস করে,

– হাসছো কেনো? আমরা যে এতো শপিং করলাম সেগুলো?

আদি বলে,

– ওগুলো রাফসান আর রিমির জন্য।

ইতি- বলে,

– রিয়্যালি?

রাফসান বলে,

– হুম ভাবছি এবার আমিও বিয়েটা করে ফেলি।

সবাই হাসাহাসি করছে। এর মাঝে হুট করে রিমি বলে উঠে,

– ও সিট আজ তো এমএম কোম্পানির সাথে মিটিং আছে। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।

রিমির কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।

রাফসান রিমিকে কাছে টেনে বলল,

– আমি ছাড়া এই মোটা চশমাটার যে কি হবে আল্লাহই জানে।

মিটিং রুমে ডুকার আগে রোদ ইতির কিছুটা কাছে গিয়ে ইতির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলে,

– নাও ইউ আর মিসেস রোদ চৌধুরী। মিসেস এমডি অফ দ্যা কোম্পানি সুইটহার্ট।

বলেই রোদ মিটিং রুমে ডুকে গেলো। ইতি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ভিতরে গেলো।

ইতি বলে,

– হ্যাঁ, জেন্টেলম্যান।

আই এম ই…মিসেস রোদ চৌধুরী। মিসেস এমডি অফ দ্যা কোম্পানি ওয়েলকাম ইউ অল টুডে অন বিহাফ অফ মিস্টার রোদ চৌধুরী। লেটস স্টার্ট দ্যা মিটিং।ন

অনেক্ষণ মিটিং চলল। সব সময়ের মতো এবারো ডিলটা ওরা পেয়ে গেলো। মিটিং শেষ করে সবাই ওদের অবাক করে দিয়ে ওদের বিয়ের জন্য কোংগ্রাচুলেট করলো। এর আগের মিটিং এ একজন জিঙ্গেস করেছিলো ইতিকে সে রোদর বউ কি না আজ উনিও হাসি মুখে ওদের অধিন্দন জানালো।

ইতি বসে কাজ করছিলো হঠ্যাৎ রোদের আগমন ইতির কেবিনে। রোদ গিয়ে ইতির চেয়ারের পিছনে দাড়ালো। গালের কাছে মুখ নিয়ে পিছন থেকে ইতিকে একটা খাম দিলো রোদ। খাম দেখে ইতি জিজ্ঞেস করে,

– এটা কি?

– সারপ্রাইজ ফর মাই ডিয়ার লাভলি ওয়াইফ।

– খুলব?

– হুম….

ইতি খামটা খুলে অবাক হয়ে গেলো। এক্সাইটেডমেন্টে বলে,

– রিয়্যালি?

ইতি চেয়ার ছেড়ে উঠে রোদকে জড়িয়ে ধরল। রোদ ইতির মাজায় হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল। ইতি মাথা তুলে রোদের দিকে তাকায়। রোদ জিজ্ঞেস করে,

– খুশি?

– অনেক অনেক অনেক…..

– সো মিসেস রোদ চৌধুরী রেডি ফর ইউর হানিমুন?

– ইসসস……

বলেই মাথা নিচু করে নিয়ে ইতি। রোদ বলে,

– জুনিয়র চৌধুরীকে নিয়েই কিন্তু ফিরব?

রোদের কথা শুনে ইতি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। রোদ ইতির মুখের কাছে মুখটা নিলো। রোদ কাছে আসাতেই ইতি ঠান্ডায় শক্ত হয়ে গেলো। রোদ ইতির ঠোঁটে তার ঠোঁটটা রাখল আর….

– এ্যা সরিইইই…..আমি কিছু দেখিনি।

বলেই রিমি দিলো দৌড়। রোদ রিমিকে দেখে ইতিকে ছেড়ে দিলো।

– জলদি রেডি হয়ে নাও আজ রাতের ফ্লাইট।

বলেই বেরিয়ে গেলো রোদ।

ইতি গিয়ে রাফসান আর আদিকে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিলো ১৫ দিন থাকবে না ওরা। রোদ ইতিকে নিয়ে ব্যাংকক যাচ্ছে তাদের হানিমুনে।

রাত ১০টায় ওদের ফ্লাইট টেক-অফ করল।

রোদ ইতিকে নিয়ে যে কি পাগলামীটাই না শুরু করল। পাগল একটা। কিন্তু রোদের কোন কিছুতেই বাঁধা দিলো না ইতি। অনেক ভালোবাসে যে তাকে।

ব্যাংকক পৌছেই সোজা হোটেলে চলে যায় ওরা। আগেই সব বুক করে রেখেছিলো রোদ।

দুজন ফ্রে হয়ে নিলো।

ইতি ফ্রেস হয়ে মিররের সামনে দাড়াল। রোদ পিছন থেকে ইতিকে জড়িয়ে ধরল।

রোদ ইতির পেটে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল ওকে। ইতির ঘারে একটা চুমু দিতেই মেয়েটা কেঁপে উঠলো। ইতিকে কোলে তুলে নিলো রোদ। কোলে নিয়ে বিছানার দিয়ে ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

– আমার কিন্তু খুব জলদি জুনিয়র চৌধুরী চাই।

ইতি লজ্জায় রোদকে জড়িয়ে ধরল।

তারা আবার আমরা তাদের সুখের মিলনে লিপ্ত হলো।



৫ বছর পর…..

ড্রাইভার পিছন থেকে বলছে,

– মানণি সাবধানে পরে যাবে যে।

কিন্তু কে শুনে কার কথা। গুটি গুটি পায়ে আগাতে লাগলো যেন কোম্পানীর চেয়ারম্যান। সামনে এগোতেই দুম করে ধাক্কা লাগলো রিমির সাথে। রিমি পিছনে ফিরে দেখেই বলে,

– আরে মানণি যে।

বুসরা বলে,

– না মানণি না দুদমননিন বনো(গুড মর্নিং বলো)

(তোতলা তোতলা কন্ঠে বলল বুশরা) রিমি বলে,

– ওহ সরি সরি গুড মর্নিং ম্যাম।

সামনের কটা দাঁত বের করে হাসলো বুশরা। আবার সামনে এগলো সবাই গুড মর্নিং ম্যাম বলতে লাগলো আর বুশরা তার তোতলা কন্ঠে সবাইকে দুদমননিন (গুড মর্নিং) বলে সামনে যাচ্ছিল। সামনে গিয়েই পাপাআআআআআ বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেলো বুশরা।

রোদ হাসি মুখে কোলে তুলে নিলো বুশরাকে আর বলে,

– আমার মাম্মাম যে।

বুশরা রোদের গালে চুমু দিয়ে বলল,

– আনাবিউ (আই লাভ ইউ)

– আই লাভ ইউ লট মাই প্রিন্সেস।

বলেই মেয়ের কপালে চুমু দেয় রোদ।

ইতি পিছন থেকে বলে,

– একি বাবা-মেয়ে মিলে আমাকে ভুলে গেলে?

রোদ আর বুশরা একে অপরকে দেখে হাসি দিয়ে আবার ইতির দিকে তাকিয়ে বলে,

– লাভিউ মাম্মাম।

এতোক্ষণে ড্রাইভারও পিছু পিছু চলে এলো। এসে বলে,

– সরি স্যার মামণি বায়বা করল এখানে আসবে তাই নিয়ে এলাম।

ইতি বলে,

– ঠিক আছে।

বুশরা তার তোতলা কন্ঠে বলে,

– আততা তাতা দাও তাতা (টাটা)

বুশরা ড্রাইভারকে বিদায় দিলো। ড্রাইভার থাকলে যদি ওকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় তাই ড্রাইভারকেই পাঠিয়ে দিলো কত বুদ্ধি বুড়িটার।

বুশরা রোদ আর ইতির ভালোবাসার অংশ। ওদের ভালোবাসার চিহ্ন বুশরা চৌধুরী। ওদের ভালোবাসার প্রতীক। বুশরাকে নিয়েই সারা অফিস মেতে থাকে। সবাই ওকে কোলে নিতে চায় কিন্তু ওর ফেভারিট রাফসান, রিমি আর সবচাইতে ফেভারিট আদি। তাই আদিকে পেলে বুশরা আর কিছুই চায় না। বুশরাকে নিয়ে ওরা সবাই টানাটানি করে বুশরা গিয়ে আদির কোলে বসে থাকে। বুড়িটা পাকা পাকা কথা বলে। কেবিনের সামনে দাড়িয়ে রোদ আর ইতি দেখছে ওরাও যেন বুশরাকে চোখে হারায়। অনেক বেশি ভালোবাসে যে নিজের সন্তানকে।

রোদ পিছন ইতিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। ইতি বলে,

– এই কি হচ্ছে? সবাই দেখবে যে।

– দেখুক আমার কি। আমি আমার বউকে ছাড়ছি না।

– পাগল একটা….

– এই শুনো না।

– কি গো?

– এখন তো সময় হয়ে গেছে।

– কিসের?

– বুশরার খেলার সাথীকে আনার। ডাবল জুনিয়র চৌধুরীকে আনার।

– ইসস….

বলেই লজ্জায় রোদে বুকে মুখ লুকায় ইতি। এক সন্তানের মা হওয়ার পরও মেয়েটার লজ্জা এক ফোটাও কমেনি। আজও প্রতিটা রাত সেই প্রথম রাতের মতোই লজ্জা পায় পাগলীটা। রোদের মনে হয় এখন লজ্জাটা আরো বেড়েছে ইতির। ইতির এই লজ্জাটাইতো রোদকে ওর জন্য আরো অনেক বেশি পাগল করে তোলে। অনেক ভালোবাসে সে তার ইতিকে।

বুশরা এসে বলে,

– তোমলা লোমান্স কলো?

বলেই বুশরা মাজায় হাত দিয়ে বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

অবাক হয়ে রোদ আর ইতি দুজন বুশরার দিকে তাকায়। বুড়িটা কখন এলো ওরা বুঝতেই পারেনি। এতো পাকা হয়েছে যে কি বলবে। একদম বাবার মতো হয়েছে।

– ওরে আমার বুড়িটা।

বলেই রোদ বুশরাকে কোলে তুলে নিলো। বুশরা বাবা-মায়ের কপালে চুমু দিয়ে দিলো।



হয়ত আরো ২ বছর পর আরো একজন জুনিয়র চৌধুরী চলে আসবে। আর সাথে ওদের ভালোবাসাও বেড়ে যাবে এ ভালোবাসা কখনও কমার নয়। এ ভালোবাসা কেবল বাড়তেই থাকে। ভালো থাকুক ভালোবাসাগুলো। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো। প্রতিটা রোদ আর ইতির জীবনে ভালোবাসা হয়ে জন্ম নিক বুশরারা।

The End….

Eti Chowdhury

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here