#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৫+১৬
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া
অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে এনা। এক ফোটা পানির জন্য কাতরাচ্ছে কিন্তু কেউ পানি দিচ্ছে না। সারাদিন ধরে সে এখানে বাধা অবস্থায় আছে।
মুখ বাধা যার জন্য চিৎকার দিতে পারছে না। কে তাকে বেধে রেখেছে এনা জানে না। কারণ সারাদিন কেউ তার খুঁজ নিতে আসেনি।
কিছুক্ষণ পরে
রুমে একটা লোক প্রবেশ করে তার পিছন পিছন আরো কয়েকটা লোক প্রবেশ করে। অন্ধকারে লোকটির মুখ বুঝা যাচ্ছে না শুধু অবয়ব দেখা যাচ্ছে। লোকটি ইশারায় তার পিছনে থাকা একজনকে বলে এনার মুখের বাধন খুলে দিতে। এনার মুখের বাধন খুলে দিতেই রুমে আলো জ্বলে ওঠে। এনা এবার লোকটির মুখ স্পষ্ট দেখতে পায়।
এনা: আদ্র।
আদ্র: চিন্তে পেরেছিস তাহলে আমাকে?
এনা: তুই আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে এসে বেঁধে রেখেছিস কেনো?
আদ্র: তোর সাহস হয় কী করে আমার শুভ্রতার দিকে হাত বাড়ানোর?
এনা: তোর শুভ্রতা মানে?
আদ্র: আমি শুভ্রতাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি। শুভ্রতা আমার জীবন আর তুই তার দিকে হাত বাড়িয়েছিস। তাক ক্ষতি করতে চাইছিস।
এনা: শুভ্রতা তো রিদের সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করছে।
আদ্র: তাতে আমার কিছু যায় আসে না। শুভ্রতা ভালো থাকুক সেটাই আমার কামনা।
এনা: তুই তো একেবারে দেবদাসের মতো কথা বলছিস। চল আমরা দুজন মিলে রিদ আর শুভ্রতাকে আলাদা করে দেই।
আদ্র: শুভ্রতা শুধুই আমার। শুভ্রতাকে পাওয়ার জন্য তোর মতো ঘর শত্রু বিভিষণ লাগবে না। তুই আমার শুভ্রতাকে অনেক কাঁদিয়েছিস তার শাস্তি তোক পেতেই হবে।
এনার দিকে বন্ধুক তাক করে আদ্র।
এনা: আদ্র তুই এটা করতে পারিস না। আমি তোর বেষ্টফ্রেন্ড ছিলাম না।
আদ্র: সে তো শুভ্রতাও তোর মামাতো বোন তার ক্ষতি করতে চাইছিলি।
আদ্র কোনো কথা না বলে এনার কপাল বরাবর ৩ বার শুট করে দেয়।
আদ্র: আজ থেকে এনার খেলা এখানেই শেষ।
হাহাহা
এইদিকে
রিদ অফিসে বসে কাজ করেছিল হঠাৎ শুভ্রতার কথা মনে হলো।
রিদ:দেখি তো শুভ্রতা কী করছে?
রিদ তার ল্যাপটপে নিজের রুমের সিসি টিভি ফোটেজ অন করে। কিন্তু সারা ঘরে কোথাও শুভ্রতাকে দেখতে পায় না। রিদের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
রিদ: আবার পালিয়ে যায়নি তো।
রিদ দৌড়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। পার্কিং এড়িয়া থেকে গাড়ি নিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
——————————————————-
রাত: ফুল কতদিন পর তোমাকে নিজের কাছ থেকে মন ভরে দেখতে পাচ্ছি।
ফুল: আমিও।
ফুল রাতকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।
রাত: ফুল প্লিজ কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়। আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ফুল: তাহলে তুমি আমাকে এতোদিন কী করে কাঁদালে। আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কীভাবে থাকলে তুমি এতোদিন।
রাত: তোমাকে ছাড়া আমি একটুও ভালো ছিলাম না। তোমার চোখের প্রত্যেকটা অশ্রুর ফোটা আমার ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।
ফুল: তাহলে কেনো তুমি আমার থেকে লুকিয়ে ছিলে?
রাত: সব তোমাকে বলবো। কিন্তু তোমাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
ফুল: তুমি না বলেছিলে আজকে সব বলবে।
রাত: এসব কথা বলে আজকে মোমেন্টটা আমি নষ্ট করতে চায়ছি না। সময় হলে সব তোমাকে বলবো। শুধু এতটুকু জেনে রাখো আমি কোনো অন্যায় করছি না আর আমি কারো ক্ষতি হতে দিবো না।
ফুল: কিন্তু…..
রাত: হুশশশ। কোনো কথা নয়। আমার সাথে চলো।
রাত ফুলের চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দেয়।
ফুল: কী করছো?
রাত: আমার সাথে চলো।
রাত ফুলের চোখ হাত দিয়ে ঢেকে বোলকনিতে নিয়ে যায়। বেলকনিতে গিয়ে চোখ থেকে হাত সরিয়ে নেই রাত। ফুল চারপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুল। বেলকনিটা রঙে বেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো। বেলকনির এক সাইডে দোলনা রাখা। দোলনাটা সাদা গোলাপ দিয়ে ডেকোরেশন করা। রাত ফুলের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
রাত: কী গো আমার সুন্দরী তোমার এসব সাজানো পছন্দ হয়েছে।
ফুল রাতকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে,
ফুল: আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
রাত: চলো আমার সাথে।
রাত ফুলের হাত ধরে নিয়ে দোলনায় বসায়। দোলনার পিছন গিয়ে পিছন থেকে ফুলকে জড়িয়ে ধরে দোল দিতে থাকে।
———————————————————-
রিদ বাসার সামনে গিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।
রিদ: শুভ্রতা, শুভ্রতা, শুভ্রতা।
আনিকা: রিদ এভাবে চিৎকার করে শুভ্রতাকে ডাকছিস কেনো?
রিদ: মামুনি শুভ্রতা কোথায়?
আনিকা:শুভ্রতা তো ছাদে আছে।
রিদ আর কোনো কথা না বলে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠতে থাকে। রিদ সিঁডি দিয়ে ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থমকে যায়। কারণ শুভ্রতা ছাদের এক সাইডে অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে।
রিদ:শুভ্রতততা।(চিৎকার করে)
রিদ দৌড়ে শুভ্রতার কাছে যায়। রিদ শুভ্রতার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।
রিদ:শুভ্রতা এই শুভ্রতা কথা বলো। তুমি আমার সাথে কথা বলো প্লিজ। আমার সাথে কথা বলবে না।
রিদ শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে। রিদের চিৎকার শুনে রাইহান আর আনিকাও রিদের রুমে চলে আসে। আনিকা গিয়ে শুভ্রতার মাথার কাছে বসে।
আনিকা: রিদ শুভ্রতার কী হয়েছে?
রিদ: মামুনি শুভ্রতা অঙ্গান হয়ে ছাদে পড়েছিল।
আনিকা: রাত থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খায়নি অঙ্গান হওয়ারই কথা।
রিদ: শুভ্রতা এখন পর্যন্ত খায়নি। আর তুমি আমাকে একবার জানালে না।
রাইহান: এসব কথা বাদ দাও আমি ডক্টরকে ফোন করছি।
রিদ: হুম।
রাইহান ডক্টরকে ফোন দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ডক্টর চলে আসে। ডক্টর এসে শুভ্রতাকে চেকআপ করে মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।
চলবে…..