প্রতারক পর্ব ৭

#প্রতারক
#লেখিকাঃফারহানা_ইসলাম
#পর্বঃ০৭

রাতের বেলা বসে বসে পড়তেছি।রাত তখন সাড়ে নয়টা বেজেছে।হঠাৎ করে মোবাইলের রিং বেজে উঠলো।।আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার।।

———–ইসঃ এইসময় আবার কে কল করলো।যত্তসব।লেখাপড়ার মুড় নষ্ট করার চক্রান্ত।।

———হ্যালো!!কে বলছেন??

———-হ্যালো!!আর্নিয়া তুমি কেমন আছো এখন??

————জ্বী মোটামোটি ভালো আছি।কিন্তু আপনি কে??আমি আপনাকে তো চিনলাম না!!!

————আর্নিয়া আমি নীল।তোমার স্যার!!

————ও আচ্ছা।।সরি স্যার।আমি আপনাকে প্রথমে চিনতে পারি নি।।

————আচ্ছা।ঠিক আছে,,,সমস্যা নাই।আর্নিয়া তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!!

———-জ্বী স্যার বলুন।

———-দুইদিন পর তো কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।তুমি যদি ঐ দিন শাড়ি পড়ে কলেজে আসতে তাহলে আমার অনেক ভালো লাগতো।।

———কী আর বলবো স্যারের কথা শোনে আমার কেমন জানি লাগলো।যেনো আমাকে আহির বলছে এইসব কথা।।

———-আগে সাংস্কতিক অনুষ্ঠানের সময় আহির আমাকে বলতো আর্নিয়া আজ কিন্তু তোমাকে শাড়ি পড়ে আসতে ই হবে।আর হ্যাঁ চুলে খোঁপা করবে।আর সাথে খোঁপায় যেনো বেলীফুলও থাকে।আজ আমি তোমাকে মন ভরে দেখবো।।

————কী হয়েছে তোমার আর্নিয়া??তুমি কোনো কথা বলছো না যে!!বোবার মত এমন চুপ করে আছো কেনো??

———-স্যার আমি কী বলবো।।বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।।

————-আর্নিয়া!!কী যে বলো!!যাইহোক সব তোমার ইচ্ছা।।রাখছি ভালো থাকবা।।

———–স্যারের কথা শোনে আমি হতবুদ্ধ হয়ে গেলাম।স্যার আমাকে বলছে শাড়ি পড়ে কলেজে যেতে।।এইটা কী ভাবা যায়!!নাকি কাউকে বললে কেউ বিশ্বাস করবে??

———পরেরদিন সকালবেলা কলেজে যাচ্ছিলাম।একটু তাড়াহুড়ো করে ই।কারন আজ বাদে কাল আবার কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।যেহেতু আমি কলেজের লিড়ার।সেহেতু আমার অনেক কর্তব্যও রয়েছে।।

———–কলেজের রাস্তা ধরে আপনমনে হাঁটছি।চারদিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনোমুগ্ধকর হয়ে গেলাম।রাস্তার দু পাশে সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছালি।চারদিকে পাখিদের কিচির-মিচির ডাক।আহঃ এই দৃশ্য দেখে সত্যি যে কেউ ই অবাক হয়ে যাবে!!

————-আমি চারদিকের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি।হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ ডাকছে আর্নিয়া দাঁড়াও।।আমিও আসছি।
সঙ্গে সঙ্গে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ ই নেই চারদিক জনশূণ্য নিস্তব্ধ।আহঃ নিশ্চয়ই এটা আমার ভ্রম ছিলো।জানি না এই অভ্যাসটা কবে বদলাবে!!

———পনেরো মিনিটের মতো হেঁটে কলেজে পৌঁছালাম।কলেজে গিয়ে দেখলাম সবাই কাজ করছে।।

———-আরে আর্নিয়া তুমি আসতে এতো দেরী করলে কেনো??

———চমকে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি মামুন স্যার।
আসলে স্যার বাড়ি থেকে ঠিক সময়ে ই বের হয়েছি।কিন্তু পায়ে হেঁটে আসতে আসতে একটু লেট হয়েছে।।

———-আচ্ছা যাও।ক্লাসে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নাও।।

———–আচ্ছা স্যার!!

————মামুন স্যার আসলে ফুফাতো ভাই।আমি যেই কলেজে পড়ি তিনি ও সে কলেজের শিক্ষক।সেই সুবাদে আমি ওনাকে মামুন স্যার বলে ই ডাকি।তাছাড়া ছোটবেলা থেকে মামুন স্যার আমাকে নিজের ছোট বোনের চোখে ই দেখে।।

————-আমি ক্লাসে গিয়ে ব্যাগ রাখলাম।কিন্তু আজ তিথিকে দেখতে পাচ্ছি না।ওর ব্যাগ কিন্তু ক্লাসে ই রাখা আছে।জানি না ঐ গাধীটা আবার কোথায় চলে গেলো??

———–সরি আর্নিয়া!!

——— হঠাৎ সরি কেনো??

———–আসলে আর্নিয়া কাল মিমির ব্যবহারের জন্যে আমি খুব ই লজ্জিত!!মিমির হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেছি।।

———–যার তার কথায় আমি কিছু মনে করি না।আপনার স্ত্রীকে ভালো করে বুঝাবেন কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়।।

———আমার নামে আমার স্বামীর কানে বিষ ঢালা হয়েছে!!

——–শোন মিমি তোর স্বামীর কানে তোর কথার বিষ ঢালার আমার বিন্দুমাত্র রুচি নেই।আর এইসব নোংরা কাজ আমি করি না।।

———-হ্যাঁ সেটা তো সবাই জানে আর্নিয়া চৌধুরী কথাটা মহান।আর কত মহান সাজবি রে তুই!!

———আহঃ মিমি তুমি শুধু শুধু অশান্তি করছো এইখানে!!আমি আর্নিয়ার সাথে সেরকম কোনো কথা বলি নি!!

———–আহির তুমি কী ভাবছো??তুমি আমাকে বিয়ে করে এইভাবে কষ্ট দিবে!!তোমার যদি আর্নিয়ার প্রতি এত ভালোবাসা থাকে তাহলে আমার সাথে কোনো সম্পর্ক করলে??
কেনো বিয়ের আগে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে??

——–শোন মিমি তুমি শুধু সব দোষ আমাকে একাই দিতেছ!!আমি কী একাই দায়ী এর জন্যে!!

———হ্যাঁ!!তুমি একাই দায়ী।তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছ।।সমাজের কাছে আমাকে কলঙ্কিত করেছে।।আর আর্নিয়াকে করেছ মহান।।

———–শুধুমাত্র তোমার জন্যে আজ আমার এই অবস্থা।তোমার কারনে এখন ও পর্যন্ত আমার বাবা আমার সাথে কথা বলে না।কোন মুখে এত বড় বড় কথা বলো তুমি।।

———-শোনেন আপনাদের মধ্যে অশান্তি হোক এটা আমি চাই না।।আর মিঃ আহির আপনি আর কখনো আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেন না।কথাটা মাথায় রাখবেন।

———–আহিরকে কথাটা বলে আমি বাহিরে চলে আসলাম।তখন দেখলাম তিথি অন্যান্য মেয়েদের সাথে বসে বসে গল্প করছে।।

————হঠাৎ লক্ষ্য করলাম নীল স্যার দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আরে বাহঃ স্যারকে তো আজ ভীষন সুন্দর লাগছে।সত্যি কথা বলতে আমি কখনো স্যারের মুখের দিকে ঠিকমতো তাকায় নি।এখন দেখছি স্যার ভীষন চমৎকার মানুষ।যে কেউ ই স্যারের প্রেমে হাবু-ডুবু খাবে।
আমিও স্যারের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ কেনো জানি মন বললো স্যারের কাছে যাই।তাই দৌড়ে স্যারের কাছে চলে গেলাম।

———-স্যার কেমন আছেন??

———ভালো!!তুমি কেমন আছো আর্নিয়া??

———-জ্বী ভালো!!

———-আর্নিয়া আমি তোমাকে কাল রাতে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে তো??

———–জ্বী স্যার।

———–মনে থাকবে তো??

———-অবশ্যই স্যার।।

———-তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো!!

———কী সারপ্রাইজ স্যার??

——–বলে দিলে তো আর সারপ্রাইজ হবে না।কাল দেখবে।।এখন যাও।কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে!!

————আচ্ছা স্যার।।

———আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম স্যার আমাকে আবার কী সারপ্রাইজ দিবে!!জানি না কাল কী সারপ্রাইজ আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।।

———-রাত আনুমানিক বারোটা ছুঁই ছুঁই।আমি বাসার সব কাজকর্ম সেরে ঘুমোতে আমার রুমে আসলাম।হঠাৎ করে,,,,,,,,,,,,,,

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here