গল্পের নামঃ-#নিশ্চুপ_ভালোবাসা❤️
লেখিকাঃ-আইদা_ইসলাম_কনিকা
পর্বঃ০৪
রাত তিনটা বাজে কিন্তু আধারের চোখে ঘুম নেই বার বার মনে পরছে তার সেই ছেলেটার কথা যে কিনা তাকে, ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে সে তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছে, অন্য দিকে তার বেলকনির দিকে তাকিয়ে একমনে চেয়ে আছে কেউ তার দিকে । হালকা লেম্প পোস্টের আলোতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে তাকে, আর সে যে বার বার তার চোখের পানি মুছে তা দেখে মানুষটার ভালো লাগছেনা, তাই সে বাধ্য হয়ে চলে যায়। কিন্তু চলে গেলে কি হবে তার সেই নিষ্পাপ টলমল চোখের চাহনি তার ভিতরে ঝড় তুলে দিয়েছে,তার পরের দিন সকালে আধার শাওয়ার নিয়ে বেরহয় রুম থেকে। নিচে নামে মিম আর মারিয়া আধারকে দেখে বুঝতে পারে সে সারা রাত কান্না করছে। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়েগেছে। কপালে কাটা জায়গাটা লাল হয়ে আছে। আধারের মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বলে
—-এই আধার তোর কি হয়েছে আর মাথায় কাটলো কি করে। আধার সবে মাত্র খাবার মুখে তুলেছে সে তার মার দিকে তাকিয়ে বলে
—-বললামই তো কালকে মাথা ব্যাথা ছিল, আর শাওয়ার নেওয়ার সময় পরে গিয়ে কেটে গেছে, অথৈ কোথায়? ওকে তো দেখছি না!! কথা ঘুরানোর জন্য। আধারের মা বলে
—-এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিন ৩০মিনিট আগে বলেছি নিচে আসতে,তোরা খা আমি আসছি,আর আধার ঔষধ খেয়ে তারপর ভার্সিটি যাবি, না থাক আজ তোর যেতে হবে না। আধার বলে
—-আম্মু তুমি যাও তো টেনশন করো না। আধারের মা তো আধারকে ঔষধ না খায়িয়ে ছাড়বে না তখন মিম আর মারিয়া বেপারটা সামলে নেয়। তারপর তিনজনই বেরিয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। কিন্তু আধার চুপ মিম আর মারিয়া তো সেই চেষ্টা করছে আধারকে হাসানোর জন্য কিন্তু না তার মুখে কোনো হাসি নেই। একসময় আধার বিরক্ত হয়ে বলে
—-তোরা চুপ করবি নয়তো, বাসের জানলা দিয়ে দুইটা কেই ফেলে দিব।
বলেই চুপ হয়ে যায়, মিম আর মারিয়াও চুপ হয়ে যায় কারণ তারা জানে আধার রাগলে খবর আছে। তারপর তিনজনই ভার্সিটি পৌঁছে গেলো, কিন্তু আজ গেটের কাছে কোনো বখাটে ছেলে নেই, গেট দিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই দেখে আদ্রিয়ান, আশিক, দিহনা রাতুল সহ আগের মতো তাদের জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আধারকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলে একজন আজ হলুদ কুর্তিতে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু তার মনটা পুরে যাচ্ছে প্রতিদিনের মত সেই হাসি মুখ খানা আজ গুমরা করে রাখা, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে কোনো ছেলেই আধারের কাছে ভুলেও আসছে না প্রায় এক প্রকার দৌড়ে পালাচ্ছে ইভেন তিয়াস ও।
আধার একটু অন্য মনস্ক হয়ে উপরে ওঠেছিল সিঁড়ি দিয়ে তখনই একটা ছেলে আধারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তাড়াতাড়ি করে আধারকে দেখে সে দূরে সরে যায়। মিম বলে
—-এই আজ কি হয়েছে রে সবাই এমন কেনো করছে? মারিয়া বলে
—-তোর দুইটা বাচ্চা হয়েছে, আমি কি তোর আগে আসছি? তোর সাথেই তো ছিলাম তো আমি জানবো কি করে? আমি কি মনো বিজ্ঞানী নাকি? মিম ভেংচি কেটে বলে
—-হ্যা আকাশ থেকে টপকাইছে তো বাচ্চা দুইটা আমার বাচ্চা আমিই জানিনা?! আধার বলে
—-চুপ করবি তোরা? মিম আর মারিয়া নিজেদের ঠোঁটে হাত রেখে চুপ করে যায়। আর আধার ওদের ফেলেই আগে হাটতে লাগলো। মিম আর মারিয়া দৌড়ে আসে তার পিছন পিছন। কিছু সময়ের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়, এমন ভাবে পরপর ২টা ক্লাস শেষ হয়ে যায়, কিন্তু স্যার আসার খবর নেই। তাই সবাই নিজের মতো গান করছে গল্প করছে। আধারের এইসব বিরক্ত লাগছে তাই সে মিম আর মারিয়াকে বলে বাইরে চলে আসে তখন আধারের ক্লাসের একটা মেয়ে এসে আধারকে বলে
—-আধার তোমাকে স্যার ডেকে পাঠিয়েছে, জলদি যাও।
মেয়েটার কথা শুনে আধার ভ্রু-কুচকে ফেলে তার কথা হলো তাকে কেনো ডাকবে? সে আবার কি করলো। আধার কিছু বলে না চুপচাপ লাইব্রেরির দিকে যেতে লাগে, ভাবছে মিম আর মারিয়াকে বলে আসলে ভালো হতো। আর এইসময় এই দিকটায় কেউ নেই ভয়ও করছে সবাই যার যার মতো ক্লাসে মাঠে, কেন্টিনে। আধার যখন ল্যাবের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটা হাত এসে হেচকা টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়, আধার ভয়পেয়ে যায়। সে বলে
—-কে? কে এখানে? কিন্তু কোনো শব্দ নেই আধার এবার ভয় পেয়ে যায়, তাই সে ধীরে ধীরে সামনে আগাচ্ছে তখনই অনেক গুলো জুনাকি উড়তে লাগে, আধার সেটা দেখে আরেক দফা অবাক হয়ে যায় কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। সে একটা জোনাকিকে হাতের মুঠোয় আটকে ফেলে, আর তখনই সে পিছনে কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে। সে পিছনে ফিরে যেই না কিছু বলতে যাবে। তখনই সেই ব্যক্তিটা তাকে বলে
—-একদম চুপচাপ থাকবে নড়বেনা নড়লে খাবর আছে।
—-আপনি কে? আপনি এখানে কি করেন? ব্যক্তিটাকে বলে
—-ফুটবল খেলতে আসছি খেলবা? আধার একটু ভেবে বলে
—-আপনি কি অন্ধ দেখেন না আমি মেসি, নেইমার আর রোনালদোর সাথে ফুটবল খেলছি। আদ্রিয়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে
—-তুমি আমার সাথে যে ভাবে কথা বলো, বড়দের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে? আধার বলে
—–এমন ত্যাড়া কথা বললে ত্যাড়া উত্তরই পাবেন, এখন, বলেন কে আপনি আর এখানে কি করেন? কি চাই।। ব্যক্তিটা বলে
—-এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? আধার বলে
—-আমার ক্লাস শুরু হয়গেছে যেতেদিন,নয়তো চিৎকার করবো। সে বলে
—-আগে আমার কাজ করে নেই তারপর। বলেই আধারকে নিজের কাছে নিয়ে আসে, আর বলে এখন এখানে চুপচাপ বসবা একটা কথা বললে মাথায় তুলে আছাড় মারবো। আধার তো অবাক এইসবের মানে কি সে কিছু বলতে গেলে সেই ব্যক্তিটা তাকে দেয় এর রাম ধমক তাই আধার চুপ হয়ে যায়। সে বাইরে গিয়ে বলে
—-D পেকেট টা দিয়ে যা।
তখনই কেউ আসে আর কিছু একটা দিয়ে চলে যায়। তারপর সেই ব্যক্তিটা এসে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে সেটা দিয়ে আধারের চোখ বেধে দয়। আর নিজের ফোন বের করে ফ্লাসলাইট টা ওন করে আধার কিছু বলতে গেলে সে তার ঠোঁটে হাত রেখে বলে সসসসসসসসু। আধার তো জমে ফ্রিজ। সে তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে পেকেট টা খুলে আর কিছু বের কর। আধার তার মাথায় কাটা জায়গাটায় তরল কিছুর অনুভব করে , আধার ব্যাথায় আহহহহ আম্মু বলে ওঠে। আর সে বলে
—আস্তে আস্তে একটু ওয়েট কর,সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর সে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বলে
—- হয়েগেছে,আর হ্যা আরেক বার যদি দেখছি মন খারাপ করে আছ তাহলে। আধার বলে
—-কে আপনি? সে বলে
—-তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। বলেই গান ধরে
—–Tumhe apna banene ka jonon sarpe hain.. kabse hain….
গান গাইতে গাইতে চেলে যায় কোনো রকম কথা আধার আর শুনে না তখন আধার নিজের চোখের রুমাল খুলে নিয়ে দেখে সম্পূর্ণ ক্লাস খালি কেউ নেই। সে দৌড়ে বাইরে আসে। কিন্তু কাউকে দেখে না কিন্তু একটু আগাতেই সে দেখে লাইব্রেরি দিক থেকে আশিক আর দিহান আসছে। সে ভালো করে তাকিয়ে দেখে আশিক তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে
—-কি খবর কথার রানি কেমন আছ?আর সরি আমরা কালকের জন্য। আধার বলে
—- ঠিক আছে সমস্যা নেই, তখন দিহান বলে
—-ভাবি। তখনই আশিক চোখ পাকিয়ে তাকায় দিহানের দিকে দিহান, হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে
—- ভাবছি আপনার মানে তোমার ঝগরাটে বান্ধবী মারিয়াম কই? আধার বলে
—-ক্লাসে, কেনো কিছু বলবেন। আশাকি বলে
—না, তা তুমি এখন এখানে? আধার বলে
—-এইতো একটু লাইব্রেরিতে। আশিক বলে
—-আচ্ছা যাও সাবধানে যাও আল্লাহ হাফেজ। আধারও আল্লাহ হাফেজ বলে চলে যায়।
চলবে
লেট হওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, ফোন আমার ইন্তেকাল করেছিল, আবার চার্জে দিয়ে সেটা কে জীবিত করলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে💕💕