“ভালোবেসে_তোমায় পর্ব: ১

# ভালোবেসে_তোমায়
Writer: Jannat
পর্ব: ১
.
১৯ বছরের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে ৪বছরের ভালোবাসার হাত ধরে পালিয়ে এসেছিলাম ।
তাও আজ থেকে ৫বছর আগে । ৪ বছরের ভালোবাসা আর ৫ বছরের সংসার মোট ৯বছর । ৯ বছরের ভালোবাসা,হালকা অভিমান, দুষ্ট-মিষ্টি ঝগড়া আর অনেক খানি তৃপ্তি দিয়ে একটু একটু করে গড়া ভালোবাসাময় সংসার, সেখানে আজ থেকে অন্য কেউ রাজত্ব করবে ।
একটা মেয়ের জীবনে এটা মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রনাময় ,কিন্তু আমার কোনো অনুভূতিই নেই । নিজের হাতে আমার বর আর তার নতুন জীবনসঙ্গীর রুমটা নিজের মত করে সাজিয়ে দিয়েছি ।
মেয়েটা তো অনেক আশা নিয়ে এই সংসারে পা রাখতে যাচ্ছে ,সেখানে আমার ব্যাবহার করা জিনিসপত্র ব্যাবহার করবে প্রশ্নেই আসে না ।
যদিও তার বরটাই এটো , এই ৯বছরে শুধু ওর জীবনে না প্রতিটা পশমের গোড়ায় গোড়ায় আমার অস্তিত্ব মিশে আছে তবে আজ থেকে তার সম্পূর্ন দাবি ছেড়ে দিলাম ।
পড়ে থাকতে হবে এই ঘরের কোনো এক কোনায় ,আমার যে আর যাওয়ার কোনো জায়গাই নেই ।
যেদিন বাবা_মায়ের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে রাতের অন্ধকারে শায়নের হাত ধরে পালিয়ে এসেছি সেদিন থেকে তাদের কাছে আমি মৃত্যু । আর শশুড়-শাশুড়ি তারাও আমাকে মন থেকে মেনে নেয়নি তাই তো বিয়ের প্রথম দিন থেকেই আমাদের নতুন সংসার শুরু হয় ।
.
কলিং বেলের শব্দে ভাবনা থেকে বাস্তবে আসে তিশা ,মাথায় ১২ হাত কাপড়ের তের হাত ঘোমটা দিয়ে দরজা খুলে দিল । মন ভরে নিঃশ্বাস নিল আর নতুন বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দোয়া করে দিল ,,,
“যে পূর্নতা আমি দিতে পারিনি সেই পরিপূর্নতা যেন তোমার দ্বারা হয় ”
মুচকি একটা হাসি দিয়ে দরজা থেকে সরে দাড়ালো তিশা ।
তার বর নতুন বউয়ের হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করল । কোনো একদিন তিশাও এভাবে হাতটা আকরে ধরে এই বাসায় প্রবেশ করছিল ।
তবে সেটা তখন শুধু একটা বাসাই ছিল আর এই মেয়েটা একটা সাজানো-গোছানো সংসারে প্রবেশ করল ।
পার্থক্য শুধু এইটুকুই কেই একটা বাসাকে সংসারে পরিনত করছে আর কেউ সেই সংসারে রাজত্ব করবে ।
.
__আপনারা গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসেন ,আমি খাবার রেডি করতেছি
.
শায়ন একবার তিশার দিকে আড়চোখে তাকালো ,হয়ত ভাবছে মেয়েটা অস্বাভাবিক আচারন করবে ,কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যাবে কিন্তু না মেয়েটা একদম স্বাভাবিক আছে তবে কেমন যেন অনুভূতিশূন্য মনে হচ্ছে ।
তিশাও ফ্যালফ্যাল হয়ে তাকিয়ে আছে শায়নের চোখে । মনে মনে বলছে ,শায়ন শেষ অবধি আমার অনুভূতিটুকুও কেড়ে নিলে ।
.
রুমে প্রবেশ করে আশ্চর্য হয়ে যায় শায়ন আর সাথে নতুন বউ । একদম ঝকঝকা নতুন সামগ্রী দিয়ে রুমটা সাজানো ,বিছানার চাদর থেকে শুরু করে রুমের প্রতিটা জিনিস ।
খাবার রেডি করে ওদেরকে ডাক দিল তিশা ,কিছুক্ষনের মধ্যেই রুম থেকে বের হয়ে আসল ওরা । খাবার টেবিলে সব কিছু সাজিয়ে রেখে আড়ালে দাড়িয়ে চোখের জল ঝড়াচ্ছে ।
__কেন কাঁদছিস তিশা…? তুই যে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলি ,তাহলে এভাবে ভেঙে পড়তেছিস ক্যান ?
__ওর পাশে আমি যে কাউকে মেনে নিতে পারি না , আমার দূর্বলতাই তো এই মানুষটা ।
__ না তুই কাঁদবি না ,একদমই না । পরবর্তী ঝড়ের জন্য নিজেকে তৈরি করে নে ।
নিজের অস্তিত্বের সাথে কথা বলে ,চোখের পানি মুছে নিল ।
ওদের খাওয়া শেষ । আবারও বুকটার ভিতর হাহাকার শুরু হল ,যে মানুষটা প্রথম লোকমা আমার মুখে না দিয়ে নিজে মুখে ভাত দিত না । আজ সে একবার জানতেও চাইল না ,আমি খেয়েছি কিনা …?
কি অদ্ভুদ জীবন…!
শায়ন আর তার নতুন বউ রুমে ডুকে যখন ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিল ,মনে হচ্ছে তিশার কলিজায় কেউ ছুরি মেরেছে । ছুরিটা এত্তবেশি দাড়ালো যে ,পুরো হৃদয়টাই ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে ।
.
একটা বাচ্চাই কি জীবনের সব ..?/আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটা এতই ঠুকনো ছিল …?
আমিও তো বাবা-মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান ছিলাম। তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য সেই আদর ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে ,তোমার ভালোবাসায় সারা দিয়েছি ।
সব থেকেও কেউ ছিল না আমার শুধু #ভালোবেসে_তোমায় ।
আর আজ সেই তুমিও পর করে দিলে আমার ।
তোমার কি একটু কষ্ট হবে না গো , ওই বুকে যখন অন্য কেউ লেপ্টে থাকবে…. ?
তখন কি আমার অস্তিত্ব বিন্দুমাত্র নাড়া দিবে না তোমায় ….?
এই সংসারে প্রতিটা কানায় কানায় তোমার আমার ভালোবাসা লেপ্টে আছে , সেই ভালোবাসাকে অন্য কেউ মুছে দিয়ে নিজের ভালোবাসার সূচনা করবে ।
বড্ড কষ্ট হয়,অনেক বেশি যন্ত্রনা হচ্ছে । তুমি কি একটু অনুভব কর না ,আমার অসহনীয় যন্ত্রনা গুলো….?
.
কেউ নতুন ভালোবাসা সৃষ্টিতে ব্যাস্ত আর কেউ বা পুরনো স্মৃতি মনে করে ডুকরে ডুকরে কাঁদে বালিশে মুখ গুজে ।
ভালোবেসে বিয়ে করে,ভালোবাসা দিয়েই একটা ভালোবাসাময় সংসার সাজিয়েছে ২জন । বিয়ের ২বছর পর সেই ভালোবাসার ফসল হিসেবে একটা ছোট্র অস্তিত্ব তিশা পেটে ধারন করে । তখন বুঝি সুখগুলো উপচে উপচে পড়তেছে ।
আর সেই সুখগুলোকে বুঝি হিংসে হচ্ছিল তাই তো প্রেগনেন্ট এর ৭ মাসের সময় বাচ্চাটা মিস্ক্যারেজ হয়ে যায় । সেদিন তিশার চেয়ে শায়ন বোধহয় বেশিই কষ্ট পেয়েছিল । ছেলেরা কাঁদতে নেই কিন্তু সেদিন শায়নকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখেছি ।
কতটা অনুভূতির থাকলে ছোট্র একটা অস্তিত্বকে এতটা ভালোবেসে ফেলা যায় । তবুও শায়ন নিজের কষ্টগুলোকে চেপে রেখে তিশাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছে ।
এই ৩বছরে আরও ৩বার বাচ্চা মিস্ক্যারেজ হয়ে গেছে ।
প্রথম প্রথম শায়ন সাপোর্ট করলেও ইদানিং সেও খুব অমনোযোগি তিশার প্রতি । তিশার প্রতিটা কাজেই সে বিরক্ত । অনেক ডাক্তার দেখানোর পরও কোনো সমাধানই পাচ্ছে না , তাই তো শায়ন আশা ছেড়ে দিয়েছে ।
আগের মত আর ভালোবাসা নেই । ভালোবাসাময় সংসারটা যেন একটু ভালোবাসার জন্য হাহাকার করতেছে । যেই মানুষটার বুকে সুয়ে স্বপ্ন বুনে রাত পাড় করত ,সেই মানুষটাই এতটাই বদলে গেছে যে সামান্য খেয়ালটুকু রাখে না । অফিস থেকে লেইট করে ফিরে , ঠিকমত কথা বলে না । তিশা নিজের থেকে কথা বললেও দায়সারা জবাব দেয় ।
বাসায় এসেই ম্যাসেজের টুংটাং শব্দে মেতে উঠে শায়ন ,আর সেই শব্দে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় তিশা ।
ধীরে ধীরে বুঝতে পাড়ল তার প্রয়োজন ফুরিয়ে
আসতেছে ।
আর তার সেই ধারনা অনুযায়ী আজ নতুন বউ নিয়ে ফিরল শায়ন । হ্যা এর জন্য দায়ী তার অক্ষমতা কারন সে মা হতে পারে না । শায়নকে বাবা হওয়ার সুখটা দিতে সে অক্ষম । কেঁদে কেঁদে সারা রাত কাটিয়ে দিয়েছে , পেটের উপর হাত রাখল ।
আজও সে প্রেগনেন্ট ,কিন্তু তার কোনো ভরসাই নেই । হয়ত ২-১ মাস পর এটাও মিস্ক্যারেজ হয়ে যাবে…..
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here