রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:৬

0
346

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ৬
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা

নির্ঝর উত্তর দিলো,,
—আমি আজকেই উকিলের সাথে কথা বলবো তুমি টেনশন কোরোনা।

—আচ্ছা কথা বল,কিন্তু তাড়াতাড়ি একে বিদায় করে দে আমার বাড়ি থেকে, ও আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আমি তোর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করবো,আমি তোর আবার বিয়ে দেবো।

—আরো ক’টা দিন তো সহ্য করতেই হবে ওকে,, কারণ ডিভোর্স তো মুখের কথা নয় কত প্রকারের নিয়ম আছে বলোতো।

নিরা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—দাদা তুই আমাকে কোনো হোস্টেলে দিয়ে দে, এভাবে আমার পক্ষে এতো কথা হজম করা সম্ভব না, আমি বিনা অপরাধে দোষী হতে পারবো না, অযথা দোষ ঘাড়ে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

নির্ঝর নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
—খবরদার এইসব কথা বলবি না বলে দিলাম, তুই কেনো নিজের বাড়ি ছেড়ে যাবি, যার যাওয়ার দরকার সে যাবে, তুই কেনো নিজের বাড়ি থাকতে হোস্টেলে গিয়ে থাকবি, এসব কথা চিন্তাতেও আনবি না, বুঝেছিস?

নিরা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ালো।

———————-
নির্ঝর ব্রেকফাস্ট শেষ করে ঘরে এসে দেখে দিশানী কাঁদছে। নির্ঝর দিশানী কে জিজ্ঞেস করলো,,
—কি হলো নেকামি করে আবার কাঁদছো কেনো?
দিশানী এই কথায় নির্ঝরের দিকে করুণ চোখে তাকালো। কিছুক্ষন ওভাবেই তাকিয়ে থেকে বললো,,
—-নির্ঝর সত্যিই কি আমার প্রতি তোমার এক চুল পরিমাণও মায়া-দয়া নেই? ভালোবাসা নাই থাকলো কিন্তু এতদিনে কি আমার প্রতি তোমার একটুও মায়া জন্মাইনি? একটুও বিশ্বাস জন্ম নেয়নি? এতো সহজে তুমি আমাকে ভুল বুঝলে, আমাকে চেনোনা তুমি, আমি কি কোনো কারণ ছাড়া নিরা কে ওই কথাগুলো বলবো?

—-হতেও পারে কারণ ছাড়াই বলেছো,আসলে তুমি নিরা কে হয়তো সহ্য করতে পারো না তাই এমন করে কথাগুলো বলেছো।

দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,
—তোমার কাছে এসব বলাই ভুল আমার, যে বুঝতে চায়না তাকে বোঝানো বড্ড কঠিন, তুমি তোমার বুঝ নিয়েই থাকো আর আমি আমার বুঝ নিয়েই থাকি, তবে দেখো কোনোদিন যেনো আবার নিজের কর্মের জন্য পস্তাতে না হয়, আসলে উপরে একজন আছেন তো,তিনি সবই দেখছেন,সে তো কখনো অবিচার মেনে নেন না, তোমাদের বিচার না হয় সে-ই করবে।

নির্ঝর জবাব দিলো,
—সে দেখা যাবে, যে কথাটা বলতে এসেছিলাম সেটা আগে শোনো, ভাবছিলাম আজকে উকিলের সাথে কথা বলতে যাবো ডিভোর্সের ব্যাপারে, আমি তোমাকে ডিভোর্স দেবো আর কিছুদিন অপেক্ষা করো।

——————
দিশানী রান্নাঘরে রান্না করছে তখনি নিরা দিশানীর কাছে এলো, দিশানী একবার নিরার দিকে তাকিয়ে আবার রান্নায় মনোযোগ দিলো। নিরা দিশানী কে উদ্দেশ্য করে বললো,,
—দেখলে বৌদি তোমার কথা কিন্তু কেউ বিশ্বাস করলো না, আমার কথা-ই বিশ্বাস করলো,, আর দাদা কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে তাই এই কয়েকদিন আর তুমি আমার সাথে লাগতে এসো না ঠিকাছে?

দিশানী নিরার দিকে না তাকিয়েই বললো,,
—কি করবো বলো তোমাদের রক্ত তো একই, পুরোই অমানুষের রক্ত বয়ে চলেছে তোমাদের শরীরে সেজন্যই তো সবাই আমার কথা না বিশ্বাস করে তোমার কথা বিশ্বাস করলো।

—তোমার মুখ আর চুপ হবে না তাইনা বৌদি,তোমার কথা তো কেউ বিশ্বাসই করে না তাহলে এমনি এমনি কেনো মুখের শব্দ গুলো নষ্ট করো বলোতো?

দিশানী এবার রান্না বাদ দিয়ে নিরার মুখের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,,
—এ বাড়িতে তো আমার আর জায়গা হবেই না, তাই ভাবলাম থাকবোই না যখন তখন মুখ বুঝে তো আর তোমাদের মতো অমানুষের কথা সহ্য করা যায় না তাইনা, তাই ভাবলাম আর কিছু না করতে পারি, প্রতিউত্তর তো করতে পারবো, প্রতিবাদ তো করতে পারবো তাতে লাভ হোক আর না হোক।

—বাই দ্য ওয়ে তোমার এতো সাহস কি ওইদিন নীলাদ্রি কে দেখার পর থেকে এসেছে নাকি?

দিশানী হেসে ফেললো। দিশানী কে হাসতে দেখে নিরা বললো,,
—এভাবে হাসছো কেনো, আমি কি কোনো হাসির কথা বলেছি?

—-না না, তুমি কেনো হাসির কথা বলতে যাবে তোমার মুখ দিয়ে আবার হাসির কথা বের হয় নাকি তোমার মুখ দিয়ে তো শুধু তেতো তেতো কথা বের হয়। তবে নিরা একটা কথা কিন্তু তুমি একদম ঠিক বলেছো,ওইদিন নীলাদ্রি কে দেখার পর থেকেই আমার সাহস বেড়ে গেছে। কেনো জানো?

নিরা দিশানীর কথায় ভ্রু কুঁচকে দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,
—কেনো বলোতো?

-কারণ নীলাদ্রি কে দেখার পর অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেছে আমার, পুরোনো কথা গুলো মনে পড়ে গেছে তো তাই সেই পুরোনো দিশানী কেও মনে পড়ে গেছে সেই প্রতিবাদী আমিটাকে মনে পড়ে গেছে, সেইজন্যই তো সাহস টা বেড়ে গেছে, আর তোমাদের কথার প্রতিবাদ করতে পারছি।

—করে নাও,করে নাও, যত ইচ্ছা প্রতিবাদ করে নাও আর তো ক’টা দিন, তারপর তো তোমার আর দাদার ডিভোর্সই হয়ে যাবে তুমি শুধু দেখে যাবে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারবে না?

—-তুমি কি বোকা নিরা,সত্যিই কি আমার কিছুই করার নেই? আমি যদি চাই তোমাদের নামে পুলিশের কাছে,আদালতে অনেক কিছুই বলতে পারবো, কিন্তু তোমরা কিছু বলতে পারবে না কারণ আদালত প্রমাণ চাইবে যা তোমাদের কাছে নেই,তবে চিন্তা কোরোনা আমি তোমাদের নামে আদালতে কিচ্ছু বলবো না, ডিভোর্স চাই তো তোমাদের, দিয়ে দেবো। আমি তোমাদের কোনো শাস্তি দেবো না,তাই বলে ভেবোনা যে তোমরা কেউই শাস্তি পাবেনা, তোমরা সবাই তিলে তিলে শাস্তি পাবে। আমি তোমাদের শাস্তি দেবো না কারণ সৃষ্টিকর্তা তোমাদের শাস্তি দেবে,প্রকৃতি তোমাদের শাস্তি দেবে।

—-সে দেখা যাবে আমি ঘরে যাচ্ছি।

নিরা রান্নাঘর থেকে বেরোতে নেবে তখনি দিশানী নিরা কে ডাক দিয়ে বললো,,

—নিরা তোমার জন্য একটা স্পেশাল জিনিস রান্না করেছি আজকে!

নিরা পেছন ঘুরে উত্তর দিলো,,
—কি রান্না করেছো?

দিশানী এক গাল হেসে জবাব দিলো,
—নিমপাতা ভাজা!

নিরা অবাক হয়ে বললো,,
—কি? নিমপাতা ভাজা তাও আবার আমার জন্য?

—ভালো না বলো? তোমার জন্য স্পেশাল ভাবে রান্না করেছি কারণ তুমি যে তেতো তেতো কথাগুলো বলো তা দিয়ে তো তোমার কোনো উপকারই হয়না তাই ভাবলাম তোমার জন্য একটু তেতো তেতো নিমপাতা ভাজি তা খেয়ে যদি তোমার কোনো উপকার হয়।

নিরা এসব শুনে রাগে গজগজ করতে করতে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
হ্যাপি রিডিং

কেমন লাগলো আপনাদের এই প্রতিবাদী দিশানী কে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here