এক_বাক্স_ভালোবাসা পর্ব ৭+৮

#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৭
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

তোর সঙ্গে কাঁটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভাসছে। এই হিমু আর কখনও তোকে কষ্ট দেবে না প্লীজ আদি আমার কাছে ফিরে আয় এভাবে আমার থেকে দূরে থাকিস না…
তুই আমায় উগান্ডার পেত্নী বললে আর তোকে কিছু বলব না ধার করা টাকাও চাইব না তবু তুই ফিরে আয়।

আজ আদির অনুপস্থিতিতে বুঝতে পারতেছি যে আদি আমার কাছে কতটা ইমপরট্যান্ট। ওর দুষ্টমিগুলো ওর হাসি আমার বাঁচার দিশা ছিল। হঠাৎ ফোনে কল আসতে চমকে উঠি ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি জিসান কল করেছে ভেবেছিলাম কলটা আদি দিয়েছে কিন্তু তার উল্টো হলো তাই ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে যাই।

প্রায় এক ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুম থেকে প্রস্থান করব তখনই নজর পরে আদির টেবিলের উপর। সেখানে কাগজের ব্যাগ যাতীয় কিছু রাখা দ্রুত টেবিলের দিকে এগিয়ে যাই। এর আগে ব্যাগটি এখানে কখনও দেখিনি হয়তো ছিল কিন্তু এই দুদিনে সেটা চোখে পরেনি। ব্যাগটির মুখটি টেপ দিয় আঁটকানো হাতে নিতে বুঝতে পারি ভিতরে শক্ত জাতীয় কিছু। ব্যাগটি দেখে যতটা অবাক হচ্ছি তার থেকেও বেশি ভয় লাগছে তবুও ব্যাগটা ছিঁড়ে ফেলি অঃতপর ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে আসে সাদার রং এর উপরে কিছুটা কালো রং এর দাগ কাঁটা একটি র্টি-শার্ট, একটি চিরকুট এবং একটি কাঠের বাক্স।

এই টি-শার্টটি আমার চির চেনা কারন এটা আমি আদিকে দিয়েছিলাম। টি-শার্টটি পেয়ে আদি খুব খুশি হয়েছিল। আমার যথেষ্ট মনে আমার দেওয়া টি-শার্টটি আদি টানা ৭ দিন পরেছিল এটা নিয়ে আমি আদিকে প্রচুর খেঁপাতাম।

কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো “এটা আমার ফিউচার ওয়াইফ দিয়েছে” এটা নিয়ে আমাদের মাঝে বিশাল ঝগড়া হয়েছিল এমনি কি আঙ্কেলও আমার হয়ে আদিকে খুব বকে ছিল। অঃতপর চিঠিটা খুলে দেখি স্পষ্ট হই যে এটা আদির হ্যান্ড রাইটিং নিজেকে সামলে চিঠিটা পরতে শুরু করি…

“প্রিয় হিমু…
হিমু আমি তোর পথের কাঁটা হতে চাইনি আর কখনও হতেও চাইব না সবসময় তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি। একটা সত্ত্যি কথা কি জানিস যারা সত্ত্যি কারের ভালোবাসে তারাই বুঝতে প্রিয় মানুষটির অবহেলা
কতটা কষ্টের। যেদিন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকেই তোকে হারানোর ভয়টা আরো বেশি ত্রীব হয়ে উঠে ছিল। তোর দুষ্টমিগুলো আমার ভালো লাগত সবসময় তোর ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পূরন করার চেষ্টা করতাম। তুই জিসানকে ভালোবাসিস এটা যে আমি সহ্য করতে পারছি না তাই আজ আমার ভালোবাসার বলিদান দিয়ে তোর থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম হ্যাঁ হিমু আমি তোকে এতটাই ভালোবাসি যে এক মূহুর্ত তোকে না দেখলে আমার মনের ঝড় উঠে।

রাতে যদি তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে হতো তখন তোর বাসায় ছুটে যেতাম তোর শিউলী ফুল গাছ বেয়ে জানালা দিয়ে তোর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আমাদের বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম কিন্তু তুই আমায় বিয়ে করতে রাজি না তাই তোর হাসি মুখটা দেখার জন্য তোকে নিয়ে পালিয়েছিলাম আর সেদিন ইচ্ছে করেই বাসায় ফোন রেখে গিয়েছিলাম যার কারন বাবা আমাদের কথা জানতে পেরে বিয়েটা দেয়।

এসব জেনে একদম কাঁদবি না তুই তো জিসানকে ভালোবাসিস আর জিসানও তোকে খুব ভালোবাসে ও তোকে খুব ভালো রাখবে। আর ডিভোর্সের প্রয়োজন হবে না কারন আমি তো তোর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। ভালো থাকিস আমার জন্য টেনশন করিস না তোর খুশিতেই আমি ভালো থাকব।”

আদির লেখাগুলো পড়ে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। আদি আমার জন্য সবার থেকে দূরে চলে গেছে এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারব না।
পুনরায় আবার পড়তে শুরু করলাম..

” তোর থেকে ৩ হাজার ৪ শত ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা ধার নিয়েছিলাম সেটা ইচ্ছে করেই ফেরত দেইনি তবে আজ দিয়ে দিলাম। মনে আছে ছোটবেলায় তোর এক জোড়া পছন্দের ঝুমকো ছিল সেখান থেকে একটা হারিয়ে ফেলেছিলি তার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছিলি। তখন থেকে ভেবেছিলাম এমন ঝুমকো কিনে তোর মুখে হাসি ফিরিয়ে দেব। এই বাক্সতে এক জোড়া ঝুমকো রয়েছে সেটা তোর জন্য। এই ঝুমকোটা সেই ধার করা টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ঝুমকো কিনতে ৩৫০ টাকা লেগেছিল আর বাকি টাকা বাইকের পিছনে খরচ করেছি মানে ঝুমকোটা খুঁজতে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। খুঁজে পেয়েও তোকে দেইনি ভেবেছিলাম আমাদের বাসরে তোকে নিজের হাতে পরিয়ে দিব কিন্তু সেই অধিকার তুই জিসানকে দিয়েছিস। রেখে গেলাম তোর জন্য আমার এক বাক্স ভালোবাসা। প্লীজ আমার উপর কখনও রাগ করিস না এই সয়তানের হাড্ডিকে মাফ করে দিস আর যদি তোর হৃদয়ে আমার জন্য সামন্য ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে এই নম্বরে কল করিস আমি দৌঁড়ে এসে আমার বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকব। ০১৩১৯৪৫****
ইতি,
তোর সয়তানের হাড্ডি সঙ্গে তোর জন্য এক বাক্স ভালোবাসা।”

না আদি তোকে আমার থেকে কোথাও যেতে দেব না তুই সবসময় আমার সঙ্গে থাকবি। তোকে ছাড়া যে আমার এক মূহুর্তও চলবে না সেটা আমি এই দুদিনেই বুঝতেছি।

দ্রুত ফোনটা হাত নিয়ে বাবাকে আর আঙ্কেলকে কল করে বলি বাসায় ফিরতে অঃতপর নিচে এসে সবাইকে ডেকে বসার ঘরে বসে আছি। কিছুক্ষন পর বাবা এবং আঙ্কেলও বাসায় আসে তারা প্রশ্ন করার আগেই তাদের থামিয়ে চিঠিতে দেওয়া সেই নম্বরে কল দেই রিং হতেই আদি কল রিসিভ করে…

আদি: হিমু আই লাভ ইউ।

~~হুম।

আদি: তুই কি জানিস না হাসব্যান্ড আই লাভ ইউ বললে তার উত্তরে আই লাভ ইউ টু বলতে হয়।

~~এখুনি বাসায় ফিরে না এলে আই লাভ ইউ টু তো দূরের কথা আই লাভ ইউ জিরোও বলব না এই মূহুর্তে বাসায় ফিরে আয়।

আদি: তুই পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি দুই মিনিটে আসছি।

আমরা সবাই আদির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি কারন আঙ্কেল আন্টি খুব ভেঙে পরেছিল আদির জন্য। সিঁড়ি দিয়ে কারোর নামার শব্দ শুনে আমরা অবাক হই কারন বাসার সবাই এখানে রয়েছে তাহলে কে উপর থেকে নামছে..

সিঁড়িতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আমি যথেষ্ট অবাক হই যার কারন আদি উপর থেকে নিচে নামছে। নিচে নামা মাত্র আন্টি আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। খেয়াল করলাম আদি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আদির হাসি দেখে আমার মনে ওর জন্য দ্বিগুণ রাগ সৃষ্টি হলো। আঙ্কেলের মুখ দেখে মনে হচ্ছে আদির উপর খুব রাগ করেছে আর সহ্য করতে না পেরে আদিকে প্রশ্ন করল..

আদির বাবা: কোথায় ছিলি এই দু-দিন?

আদি: বাবা আমি বাসায়ই ছিলাম কিন্তু সবার থেকে আড়ালে।

আদির বাবা: কোথায়??

আদি: আমার রুমের পাশে যে রুমটা আছে ওইখানে কেউ যায় না তাই আমি ওইখানে জল, খাবার নিয়ে লুকিয়ে ছিলাম।

আঙ্কেল আদির কথা শুনে থাপ্পর বসিয়ে দিল অঃতপর বলল..

আদির বাবা: তোর চলে যাওয়ায় আমরা কতটা কষ্ট পেয়েছি সেটার ব্যাপারে কি কোনো ধারনা আছে?

আদি আঙ্কেলের প্রশ্নে কোনো উত্তর দিচ্ছে না বরং গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আদির বাবা: কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন? আজ তোকে আমার ছেলে বলতে ঘৃনা হচ্ছে আমার ছেলে হয়ে এসব কিভাবে করতে পারলি? একবার কি মনে হয়নি যে আমরা কষ্ট পাব। তোর মা কতটা কষ্ট পেয়েছে তা বুঝিস.. আর হিমু.. ও তো সব কিছু বাদ দিয়ে পাগলের মতো তোকে খুঁজেছে।

আদি: সরি বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আদির বাবা: সব ভুলের ক্ষমা সরি দিয়ে হয় না। আদি কিছু কিছু ঘটনা আমাদের বুকে বিঁধে থাকে আর সেই ক্ষত কখনও ভালো হয় না। আমরা তোর মা বাবা এখন নাহলেও কিছুদিন পর ঠিকই ক্ষমা করে দেব কিন্তু তুই তো হিমুর বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিস।

( হিমুর দিকে তাকাতেই দেখি হিমুর চোখ দিয়ে অঝরে জল পরছে হয়তো আমি চলে যাওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমি তো ওর জন্যই এসব করেছি। আমি হিমুর দিকে এগিয়ে যেতেই ওর কান্নার গতিটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।)

আদি: সরি হিমু আর এমন করব প্লীজ এবারের মতো আমায় মাফ করে দে।

~~ কেন করলি এসব, আমাকে কষ্ট দিতে?

আদি: তোর কষ্ট হোক এটা আমি কখনও চাইনি।

~~ তাহলে কেন এমন করলি আমার সাথে?

আদি: আমি বাধ্য হয়ে করছি এসব কারন আমি জানতাম আমার শূন্যতাই তোকে বুঝিয়ে দেবে যে তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস। তোকে সারাজীবন আমার করে রাখতে চেয়েছি কিন্তু সেটা তুই কখনও বুঝিসনি।

~~ তোর শূন্যতা আমাকে একটু একটু করে পুড়িয়ে ফেলতেছিল।

আদি: প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দে আর কখনও এমন করব না।( হাঁটু গেরে)

~~ ভালোবাসি না আমি তোকে। আবার যেখানে ইচ্ছে চলে না।

আদি: প্লীজ হিমু এমন করিস না তুই আমার জীবনে না থাকলে আমি বাঁচতে পারব না। (হিমুকে জড়িয়ে ধরে)

~~ বললাম তো আমি তোকে ভালোবাসি না আমায় ছেড়ে দে।

আদি: আমি জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস প্লীজ একবার বল না আমি তোর মুখ থেকে একটিবার শুনতে চাই।

~~ কতবার তোকে একটা কথা বলতে হবে? আমি যখন বলেছি ভালোবাসি না তার মানে ভালোবাসিই না।(আদিকে ছাড়িয়ে)

আদির বাসা থেকে দৌঁড়ে আমার বাসায় চলে আসি কারন আদিকে কি বলব কিছু বুঝতে পারছিলাম তবে আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি ওকে পেতেই হবে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম কারন আমি জানি আমার রাগ ভাঙাতে আদি ছুটে আসবেই।

আদি: হিমু দরজা খোল আমি তোকে খুব ভালোবাসি এবারের মতো এই সয়তান আদিকে ক্ষমা করে দে.. তোর আদি আর কখনও এমন করবে না এটাই লাস্ট কান ধরছি প্লীজ ক্ষমা করে দে।
#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

আদি: হিমু দরজা খোল আমি তোকে খুব ভালোবাসি এবারের মতো এই সয়তান আদিকে ক্ষমা করে দে.. তোর আদি আর কখনও এমন করবে না। এই হিমু দরজাটা খোল না প্লীজ হিমু!

~~ আদি তুই এখান থেকে চলে যা আমি তোকে ভালোবাসি না আমি শুধু জিসানকে ভালোবাসি কিছুদিন পরে আমি ওকেই বিয়ে করব ভুলে যা আমায়।

আদি: আচ্ছা ভুলে যাব শুধু একটিবার দরজা খোল প্লীজ হিমু!

~~ আমি তোর মুখ দেখতে চাই না চলে যা তুই।

আদি: আমায় যখন সহ্য করতেই পারছিস না তাই চলে
যাচ্ছি আমি। তবে মনে রাখিস এই আদি আর কখনও ফিরবে তোর থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। তোকে আজ আমার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে গেলাম জিসানকে নিয়ে খুব ভালো থাকিস।

আমি উত্তরে কিছু না বলে রুমে চুপটি করে বসে রইলাম কারন আদি শুধু আমাকে নয় দুই পরিবারের সবাইকে কষ্ট দিয়েছে এর ফল তো ওকে পেতেই হবে। প্রায় ৫ মিনিট কেঁটে যায় কিন্তু আদির আর কোনো রেসপন্স পাচ্ছি না তার মানে কি আদি সত্ত্যি চলে গেল.. না আদি আবার এমন করতে পারে না।

আর এক সেকেন্ড বসে না থেকে দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখি আদি নেই। রুম থেকে পা বাড়িয়ে উঁকি মারতেই হঠাৎ আমার হাত ধরে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে আমায় দেয়ালের সঙ্গে চেঁপে ধরে। ঘটনাটা এতোই দ্রুত ঘটে যে কে এমন করল তা বুঝতেই পারলাম না ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখি।

আদি: কি ভেবেছিস আমি চলে গেছি.. এই আদি যেখানে যাবে তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। আমার ভালোবাসার ভাগ আমি কাউকে দেব না।

কথাগুলো শুনে আমি চোখ খুলি। খুব রাগি কন্ঠে কথাগুলো বলছিল আদি। আমাকে দেয়ালের সঙ্গে খুব শক্ত করে চেঁপে ধরায় আমি নড়তেও পারছিলাম না।

~~ আবার ফিরে এলি কেন? আনিকা কি তোকে তার কাছে স্থান দেয়নি নাকি অন্য কোনো মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিস?

আদি: নজর তো সেই ছোটবেলা থেকে তোর দিকে ছিল তা তো কখনও বুঝলি না। নজর দিতে দিতে হয়তো আর কিছুদিন পর আমার চোখ খসে পরে যেত।

~~ আর আমি তোর চোখ নিয়ে ফুটবল খেলতাম। চলেই তো যাচ্ছিলি তাহলে আবার কেন ফিরে এলি?

আদি: ভালোবাসি তাই.. তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও ভালো থাকতে পারি ন্ আমার খুশির চাবি একমাত্র তুই।

~~আমি তোকে ভালোবাসি না চলে যা।

আদি: সেটা আমি জানি। এই হিমু একবার বল না “ভালোবাসি”।

~~ আমি জিসানকে…

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদি আমার ঠোঁট জোড়া আঁটকে দিল তারপর ঠোঁট ছেড়ে আমার কপালে ভালোবাসার পরস এঁকে দিল। আদির মুখের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠি। আদি আমার মুখে হাত রাখতেই দরজায় কেউ নক করল অঃতপর বলল..

মা: হিমু এভাবে দরজা বন্ধ করেছিস কেন?

আদি: আন্টি আমরা প্রেমে ব্যস্ত আছি এখন দরজা কোনোভাবেই খোলা সম্ভব নয়।

~~ মাকে এটা কেন বললি?

আদি: এই আদিত্য রায় সবসময় সত্য কথা বলে তাই আন্টিকেও সত্যই বললাম। এই হিমু একবার বল না আমায় ভালোবাসিস।

~~ আগে আমার বার্ডে গিফট দে তারপর বলব এর আগে নয়।(মুখ কালো করে)

~~ ও আচ্ছা কাল তো তোর পয়দা দিবস ছিল কিন্তু আমি তোকে এক বাক্স ভালোবাসা গিফট করেছিলাম তুই সেটা কেয়ার না করে বাসায় ফেলে এসেছিস।

~~ ওটা রাগ করে করেছি তুই দুই মিনিট ওয়েট কর আমি দৌঁড়ে গিয়ে নিয়ে আসি।

আদি: হয়েছে মহারানি আপনাকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না আমি যখন গিফট দিয়েছি তাই আনার দায়িত্বও আমার।

ওরে আদি কি ম্যাজিক জানে নাকি কোনো পেত্নী কি ওর ঘাড়ে চেঁপে বসে আসে..এমন কিছু না হলে তো বাক্সটা ওর হাতে থাকার কথা নয় অবশ্য আমায় দেয়ালের সঙ্গে চেঁপে ধরার সময় আমি কিছু খেয়াল করিনি। আদির দেওয়া কাঠের বাক্স থেকে ঝুমকো জোড়া বের করে আমার কানে পরিয়ে দিল। ছোটবেলায় হারানো ঝুমকো
আর এই ঝুমকোর সেইম ডিজাইন তবে সেটার তুলনায় এটা একটু বড়।

আদি: এবার খুশি তো?

~~ ৫৩ কেজি খুশি।

আদিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি আজ মনে হচ্ছে আদি আমার পথ চলার একমাত্র চাবিকাঠি। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি ঝগড়া মারামারি হলেও আদি আমায় কখনও কাঁদতে দিত না। আমার প্রতি ওর যে ভালোবাসা সেটা আমি কখনও বুঝিনি হয়তো ও বুঝতেই দেয়নি।

আদি: হিমু আমি তোকে খুব ভালোবাসি প্লীজ তোর থেকে কখনও আমায় দূরে রাখিস না তাহলে কেউ আমায় আর খুঁজে পাবে না।

~~ ভালোবাসি কিনা তা জানিনা তবে তোকে ছাড়া আমি এক মূহুর্তও থাকতে পারব না।

আদি: এতোদিন বলিসনি কেন?

~~ বুদ্ধ তুই জানিস না মেয়েরা মুখ ফুটে কিছু বলে না এসব ছেলেদের আগে বলতে হয়।

আদি: ওরে আমার বউ সাহিত্যিক হয়ে গেছে। কোন টিচারের থেকে ট্রেনিং নিলি রে ভাবছি আমিও সেখানে ভর্তি হয়ে যাব।(হিমুকে ছেড়ে দিয়ে)

~~ ওই সয়তানের হাড্ডি তুই আমায় বউ বললি কেন? আমি তোর কোন জন্মের বউ লাগি?

আদি: তুই তো আমার সেই ছোটবেলা থেকে বউ লাগিস শুধু বাসরটা বাকি ছিল। ভাবছি আজকেই বাসরটা কমপ্লিট করে ফেলব।

~~আদি আমরা তো এই বিয়ে কেউই মানি না তাই ভাবছি আবার বিয়ে করব। আবার বিয়ে করলে শপিং, জুয়েলারি, দামী দামী গিফট পাব আর এসব দিয়ে অনেকদিন বসে বসে খাওয়া যাবে।

আদি: একদম ঠিক বলেছিস আজই বাবাকে জানাতে হবে চল এখনি বাসায় গিয়ে জানাই।

~~তুই যা.. বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার বাসায় থাকব।

আদি: আচ্ছা তাহলে একটা চুম্মা দে এক সেকেন্ডে
চলে যাচ্ছি।

~~ একদমই না বিয়ের আগে হবে না এখন আমার বাসা থেকে বিদায় হ।

আদি: দে না একটা..

~~ দাঁড়া এখুনি বাবাকে ডাকছি..

আদি: এই না না বিয়ের আগে হবু শশুরের বকা খেতে চাই না। এখন চলে যাচ্ছি তবে বিয়ের পর সুদে আসলে তুলে নেব।

আদি চলে গেল। আজ মনের মধ্যে একটা অজানা অনুভূতি কাজ করতে লাগল। আজ এটুকু বুঝেছি যে আদিকে ছাড়া আমার কোনো ভাবেই চলবে না আদি আমার পাশে না থাকলে কখনও আমি ভালো থাকব না। আদিই আমার ভালোথাকার কারন। সেদিন জিসান আমায় বার বার কল করল কিন্তু আমি কল রিসিভ করিনি।

পরবর্তী দিন বিকেলে সবাই মিলে আবার আমাদের বিয়ের প্লান করল আমরা দুজনও সেখানে উপস্থিত। পাঁচদিন পরে আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করে। আবার বিয়ে হবে আমাদের এটা ভাবতে আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। সবার মাঝে আমাদের চোখের ইশ্বারা চলেই যাচ্ছে।

রাতে আদির সঙ্গে কথা বলে ঘুমে মনোযোগ দিব তখন একটা অচেনা নম্বর থেকে কল আসল। আমি রিসিভ করতেই একটা চেনা কন্ঠস্বর আমার কানে ভেসে এলো।কারন কন্ঠস্বরটি জিসানের ছিল।

জিসান: কাল থেকে তোমায় কল করেই যাচ্ছি রিসিভ করছিলে না কেন?(রাগী কন্ঠে)

~~জিসান আমায় আর কখনও কল করো না।

জিসান: কেন কি হয়েছে?

~~এতোদিন তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা এক সাথে চলা সবই শুধু একটা প্লান ছিল অন্য কিছু নয়।

জিসান: মানে?

~~হ্যাঁ এটাই সত্ত্যি। আমি কলেজে গিয়ে ফ্রেন্ডের থেকে যখন শুনেছিলাম যে তুমি কোনো মেয়েদের কেয়ার করো না তখন থেকে তোমার সঙ্গে নাটক করতে শুরু করি আর আমি প্লানে সফল হই।

জিসান: তুমি আমার সঙ্গে এমন করতে পারো না আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয় আমি তোমায় খুব ভালোবাসি হিমু।

~~ জিসান একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমায় ভালোবাসি না সব নাটক ছিল।

জিসান: আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো আচ্ছা তুমি কি তোমার পরিবারের কারনে আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছো তাহলে বলো কালকেই বাবাকে তোমার বাসায় পাঠাচ্ছি।

~~কতবার বলব আমি তোমাকে ভালবাসি না.. আমি আদিকে ভালোবাসি ওর সঙ্গে কিছুদিন পরে আবার আমার বিয়ে।

জিসান: তুমি আমার সঙ্গে কাজটা একদম ঠিক করলে না। হিমু মনে রেখো এর মাসুল তোমায় দিতে হবে।

~~তোমার যা ইচ্ছে তাই করো সো প্লীজ আমায় কখনও বিরক্ত করো না।

জিসানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেঁটে আদির কথা ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে আমি ঘুমের রাজ্যে পা বাড়াই।

মা: হিমু.. এই হিমু কি হয়েছে তোর, ঘুমের মধ্যে এভাবে কাঁদছিস কেন?

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতেই মা আর বোনকে আমার পাশে দেখি। এতো সকালে আমার রুমে তাদের দেখে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করি…

~~ মা আদির থেকে আমায় কেউ আলাদা করতে চায় সে চায় না যে আমরা একসাথে থাকি।

মা: বোকা মেয়ে তুই এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলি কিছু হয়নি আর কে তোদের আলাদা করবে..

রুমে আদির প্রবেশ..
আদি: কি রে পেত্নী ৯টা বাজে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস কলেজ যাবি না নাকি বিয়ের কথা শুনে কলেজকে ভুলে গেছিস।

~~ কি ৯ টা বেজে গেছে.. আমায় একটা কল দিলে পারতি।(মুখ কালো করে)

আদি: তোকে সেই ৭টা থেকে কল করতে করতে আমি দুইবার মরে আবার ফিরে এসেছি আর তুই বলতেছিস আমি তোকে কল করিনি।

ফোন চেক করে দেখি সত্ত্যিই আদি আমায় অনেকবার কল করেছিল কিন্তু আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল। মা, বোন আর আদি নিচে চলে গেল আর আমি দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলাম। সাওয়ার সেরে নিচে এসে দেখি সবাই মিলে গল্প করছে তারপর আমরা নাস্তা করে আদির মোটর বাইকে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আগের তুলনায় এখন আদিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি।

~~আদি তোর থেকে আমায় কে যেন কেঁড়ে নিতে চায়।

আদি: হুম তোর ওই ফালতু স্বপ্নের কথা আন্টির থেকে শুনেছি।

~~ আমার খুব ভয় লাগছে।

আদি: কি বলিস এসব.. উগান্ডার পেত্নীর মুখে এসব মানায় না। কলেজে পৌঁছে গেছি নামবি নাকি এভাবেই জড়িয়ে ধরে থাকবি।

বাইক থেকে আমি আর আদি নেমে ক্যাম্পাসের ভিতরের পা বাড়াতেই কিছুটা অবাক হই.. কারন জিসান আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবে জিসান একা নয় ওর সঙ্গে আরো তিন-চারটা ছেলেও রয়েছে।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে…

( আপনাদের ইচ্ছেতে আদি ফিরে এলো কিন্তু এখন তো হিমু উল্টে রাগ করল। হতে পারে সামনে বিশাল ধামকা হবে। ভাবছেন কি ধামাকা? জানতে চাইলে লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকুন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here