#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে🖤
#পার্ট_৮
#Writer_Liza_moni
দুজন দুজনকে ভালোবাসে।এর থেকে সুন্দর আর কী হতে পারে? সম্পর্ক কখনো এক তরফা টিকিয়ে রাখা যায় না।এক জন ভালোবাসলো মন উজাড় করে আরেক জন সেই ভালোবাসাকে পাত্তাই দিল না। তখন মিছে মিছে একতরফা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর যখন দুই জন মানুষ একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবাসে তখন পরিবার নামক এক মায়াজাল এসে সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে যায়। অদ্ভুত এই ধরনির অদ্ভুত সব রিতী।
দীপ্তর চোখের পানি হিতৈষীর কাঁধে পড়ছে।আর হিতৈষীর চোখের পানি পড়ছে দীপ্তর শার্টে।
এইখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী সিনেমা দেখানো হচ্ছে? অসভ্য ছেলে মেয়ে।
মধ্যে বয়স্ক এক লোকের কথায় দীপ্ত হিতৈষীকে ছেড়ে দিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের পানি মুছে নিল। শান্ত চোখে লোকটার দিকে তাকালো দীপ্ত। তার এখন বলতে ইচ্ছে করছে ভীষণ,,,
প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার কষ্টটা আপনি বুঝবেন না। আমার এত বছরের ভালোবাসা আজ আমি কবর দিয়ে যাচ্ছি।কতটা কষ্ট হচ্ছে বুকের বাঁ পাশে আপনি বুঝবেন না। শেষ একটা বার আমার হিতৈষীকে জড়িয়ে ধরার মাঝে শান্তি খুঁজে নিয়েছি।
কিন্তু মুখে কিছু বললো না দীপ্ত। হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে দেখলো হিতৈষী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
দীপ্ত হিতৈষীর এক হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল সামনের একটা নিরিবিলি জায়গায়।আজ সারাটা দিন হিতৈষীকে দিবে সে। শেষ বার হিতৈষীকে নিয়ে সারাদিন কাটাবে। কাজ,কাম আজ গোল্লায় যাক।
দীপ্তর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হিতৈষী। কষ্ট আর ও বাড়াতে চাচ্ছে না কমাতে?
.
.
ক্যান্টিনে বসে বসে সুন্দর সুন্দর আর্মিদের কে দেখছে আয়রা। এখন ওর কোনো কাজ নেই ।তাই এই কাজটাই বেঁচে নিলো।
সুন্দর হ্যান্ডসাম আর্মি দেখে আয়রা ঢং করে প্রান্ত কে বললো,,
দেখুন কত্ত কিউট আর্মি রসগোল্লা। আবার আফসোসের স্বরে বললো,,কিন্তু এই গুলো সব অন্যের জামাই। আমার জামাইটা যে কিসের পিঠে চড়ে আসতেছে কে জানে।
প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। সিরিয়াসলি মেয়েটা অদ্ভুত। হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। আবার হঠাৎই এক ঝুড়ি কথা কুড়ায়।
আয়রার খুব ক্ষিদা লাগছে।হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১টা। দুপুর হয়ে গেছে। আকাশ মেঘলা বলে বোঝা যাচ্ছে না। কেমন সকাল সকাল লাগছে।
এই যে বুইড়া দাদু শুনছেন,,
প্রান্ত আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,, বুইড়া দাদু ডাকবা না একদম। পিচ্চি মেয়ে।
আয়রা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। প্রান্তর দিকে আঙুল তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
আমাকে পিচ্চি বলবেন না।তা না হলে ভয়ংকর নাম দিবো আপনাকে।
প্রান্ত মুচকি হেসে আয়রার আঙ্গুল ধরে টান মারে।তার ফলে আয়রার কিছুটা প্রান্তর দিকে ঝুঁকে পড়ল।
প্রান্ত মুখটাকে আয়রার একটু কাছে নিয়ে গিয়ে বললো,,
সিরিয়াসলি পিচ্চি, তোমার সব ভয়ঙ্কর নাম শুনতে চাই আমি।বলো,,,
আয়রা ঠিক হয়ে বসে একটা ঢোক গিললো।প্রান্ত ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সোজা হয়ে বসে মোবাইলে মনোযোগ দিলো।
আয়রার খুব ক্ষিদা লাগছে।
এই যে শুনছেন,,,,
প্রান্ত শুনে ও না শোনার ভান করলো।
অদ্ভুত তো।এই লোকের কানে সমস্যা আছে নাকি?
আয়রার একটু জোরেই বললো,,এই যে মিস্টার শুনেন,,,
প্রান্ত বিরক্ত হয়ে তাকালো।
তুমি জানো না আর্মিদের এখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়।এত জোরে ডাকছো কেন?
আজব। আপনি নিজেই তো কানে শুনতে পাচ্ছেন না!যার জন্য একটু জোরে বললাম।
আচ্ছা বাদ দাও।
নিজের বেলায় বাদ দাও, হুঁ 😏।বিড়বিড়িয়ে বললো আয়রা।
কী হয়েছে ?
ক্ষিদা লাগছে আমার। রাহুলের বাচ্চা যে গেছে আসার নাম নাই।লেট লতিফ একটা।
রাহুলের নাম নিতে না নিতেই রাহুল এসে হাজির।
রাহুল কে দেখে প্রান্ত শয়তানি হেসে বললো,,
আপনার বোনের ক্ষিদা লাগছে।
রাহুল চেয়ার টেনে বসে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,,
ক্ষিদা লাগছে বনু?
আয়রা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
প্রান্তর দিকে তাকিয়ে আয়রার উদ্দেশ্যে বললো,,
কেমন ছেলে বিয়ে করেছো বোন? তোমাকে খাওয়ানোর কোনো খবর নেই।
রাহুলের চোখে দুষ্টুমি দেখে প্রান্ত নিঃশব্দে হাসলো।
সবই কপাল বুঝলেন রাহুল ভাই।
রাহুল একটা ওয়েটার কে ডেকে বললো,, তিনটা বার্গার দেওয়ার জন্য।আর সাথে তিনটে কোক।
আয়রার মোবাইলে কল আসায় সে বসা থেকে উঠে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আরে আম্মু আমরা এখনো সেনানিবাস ঘুরে দেখিনি।আজ এত জায়গা দেখা সম্ভব হবে না। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে যাবো না। চিংড়ি ঝর্ণায় ও যাওয়া হবে না।আলি কদম গুহাতে যাওয়া যায় নাকি দেখি,,,,।
.
.
তুই এত বড় একটা কাজ করলি আর আমাকে জানালি না?প্রান্তর দিকে চোখ পাকিয়ে বলল রাহুল।
প্রান্ত শান্ত কন্ঠে বলল,,
কি করলাম আমি?
আয়রা কে কী করে চিনিস?আর বিয়ে করলি কখন?চাচা চাচী জানেন?
প্রান্ত চেয়ারে গা এলিয়ে বসে বললো,,
রিলেক্স ব্রো, আমি কেন আয়রা কে বিয়ে করতে যাবো?
রাহুল রেগে গেলো।রাগি কন্ঠে বললো,,
তুই কি আমার সাথে মজা করিস? আয়রা যে বললো তুই ওর হাসবেন্ড।
প্রান্ত তাচ্ছিল্য হেসে বললো,,,
হুরররর,, আমার মাথা খারাপ নাকি এই পিচ্চি মাইয়ারে বিয়া করমু?
আয়রা যে বললো,,,
জানি না। কেন বলছে সেটা ওর কাছে জিজ্ঞেস করিস।
.
.
শুন আয়রা মাগরিবের আজানের আগে বাড়ি ফিরবি। হিতৈষী কোথায়?
এই রে খাইছে। আম্মু যদি এখন আপুর কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে কী বলবো?আম্মু তো আর জানে না হিতৈষী আপু আমাদের সাথে আসেনি।
আয়রা একটা ঢোক গিলে বললো,,
আছে আপু। বার্গার খাচ্ছে। আমি রাখি টাটা।
মাকে কিছু বলতে না দিয়েই আয়রা কল কেটে দিল।
আয়রা কে আসতে দেখে প্রান্ত রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,, আয়রা কে বলবি না,,আমরা যে চাচাতো ভাই।ওকে,,,?
কেন?
মাথা মোটা।তোকে এত কিছু বুঝতে হবে না।যেটা বলছি সেটা কর।
ওয়েটার এসে বার্গার দিয়ে গেল। আয়রা বসে পড়লো।
খাওয়া শুরু করে দিল তিন জন।
.
.
“”চিঠিতে বলা আছে সমাধান,
ছুঁয়েছে স্মৃতি যাকে বোকা সে।
পকেট খালি প্রেমে পিছুটান,
শ্রাবনই লিখে গেছে আকাশে।””
ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগেই রোদ ছিল। হঠাৎই আকাশ মেঘলা হয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।শ্রাবনেরই দিন।তাই বৃষ্টি আসার কোনো সময় সিমা নেই।
ইট দিয়ে তৈরি রাস্তার পাশের অবহেলায় বেড়ে উঠা একটা বেলি ফুল গাছে ফুল ফুটেছে অনেক গুলো।
দীপ্ত আর হিতৈষী সেখানে দাঁড়িয়েই বৃষ্টিতে ভিজছে। দীপ্ত সেই বেলি ফুল গাছ থেকে দুটো তরতাজা ফুল ছিঁড়ে এনে হিতৈষীর হাতে দিল।
আর বললো,,,,
~শুনো প্রিয়সী,,,
যখন আমি থাকবো না, আমার কথা তোমার খুব মনে পড়বে তখন আমার দেওয়া সব ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখবে। আমি জানি চার বছর ধরে তোমাকে যত ফুল দিয়েছি তুমি সব গুলো ফুল খুব যত্ন করে আগলে রেখেছো। তোমার সেই ডায়রির পাতায় লিখা আমাকে নিয়ে সব কথা, কবিতা,ছন্দ,গল্প গুলো কে আওড়ে দিবে। তোমার ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে ওদের জীবিত করে দিবে।শ্রাবনের ঘন বর্ষার কোনো এক নির্ঘুম রাতে আমার কথা মনে পড়লে রুমে সব জানালা মেলে দিয়ে জানালার গ্রিল ধরে রাতের বৃষ্টি দেখবা।মাঝে মাঝে হাত দিয়ে ছুয়ে দিবা।জানো তোমাকে নিয়ে হাজার বছর বাঁচার ইচ্ছে ছিল আমার। তোমার আমার ছোট্ট একটা চড়ুই পাখির বাসা হবে। সেখানে শুধু থাকবে ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা ।
শেষ একটা কথাই বলবো,,
ভালোবাসি খুব তোমাকে হিতৈষী। আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা যে তুমি। খুব ভালোবাসি।
বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে হিতৈষী আর দীপ্তর চোখের পানি। দুই জন মানুষ একে অপরকে মে ভীষণ ভালোবাসে। বিচ্ছেদ কেন আসলো তাদের প্রেমে?
বৃষ্টির পানি সব ধুয়ে সাফ করে ফেললেও বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো ধুয়ে দিতে পারে না।
চলবে,,,,, 🍁
(এসাইনমেন্ট করতে করতে আমার জীবনের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলো।দেখা যাবে এই এসাইনমেন্টের ঠেলায় আমি খুব সিঘ্ররই বুড়ি হয়ে গেছি।দীপু খালার মনে কোনো দয়া মায়া নাই। এসাইনমেন্ট দিয়ে মেরে ফেলার চিন্তায় আছেন তিনি। দুঃখিত আমি নিয়মিত গল্প দিতে পারছি না। এসাইনমেন্ট নামক প্যারা জীবন থেকে মুছে গেলে আবার প্রতিদিন গল্প দিবো।তত দিন আমার জন্য দোয়া করেন।যেনো এসাইনমেন্ট করতে করতে আমি বুড়ি হয়ে মরে না যাই।কারন আমি এখনো আমার নাতি নাতনির মুখ দেখি নাই 😸😺)