Happily_Married পর্ব ১০+১১

#Happily_Married🔥
#Part_10(#ধামাকা_স্পেশাল_1)💥
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


বাহ!কি সুন্দর দৃশ্য!(রামিম সাহেব বসতে বসতে)

তুমি কি সুন্দর দৃশ্য বলছো?আমি তো ভাবছি আজকে নাস্তা খাবো নাকি বিষ!কারণ যে নাস্তা বানাচ্ছে তার উপর আমার কোনো ভরসা নেই।(আলিফ আফসোস করে)

আপনার জন্য দুটোই অফার আছে নাস্তা খেতে পারেন আর না হয় আমি সাদরে আপনাকে নিজের হাতে বিষ খাইয়ে দেবো।কোনটা চান বলুন।মেনুতে সবকিছুই রয়েছে।(আমি হাতে খুন্তি নিয়ে)

তোমাকে এই রূপে দেখে আমার জীবন ধন্য হয়ে গেছে বুঝছো!এখন বিষ খাইলেও কোনো সমস্যা নেই।আর যদি নিজের হাতে খাওয়াও তাহলে আমি তো সাদরে গ্রহণ করবো।
বলেই আলিফ হা করলো।

আমি উনার কান্ড দেখে হেসে উঠলাম।

পরেই আমাদের কথার মাঝখানে বাবাই কাশি দিয়ে উঠলো।

হিয়া মা এসো সব কিছু নিয়ে টেবিলে সাজাও।(আলেয়া বেগম)

আসছি মামনি।
বলেই আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম।

তোর এই রূপ আমার অজানা আলিফ!(রামিম সাহেব)

তাই নাকি?এখন থেকে রোজ এই রূপ দেখবে বাবা!(আলিফ হাসতে হাসতে)

আমি তো চাইই তুই খুশিতে থাক।(রামিম সাহেব মুচকি হেসে)

হুম বাবা।এখন থেকে খুশিই থাকবো।(আলিফ)

এইযে এসে পড়েছে সব খাবার।আজ সব গুলো ভাবী রান্না করেছে।যদিও আম্মু দেখিয়ে দিয়েছে।আর আমি সব কিছু টেস্ট করার বিভাগে ছিলাম।সো টেস্ট নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।সব কিছু একদম ফাটাফাটি হয়েছে।(আলিশা)

আমিও ওর পাশে দাড়িয়ে সব কিছু শুনে হাসছি।

হিয়া মা। তুমিও আমাদের সাথে বসো।(রামিম সাহেব)

বাবাই তাহলে সার্ভ করবে কে?(আমি)

চিন্তা করো না ওইটা সার্ভেন্ট করে দেবে।আমাদের পরিবারের নিয়ম সবাই মিলে এক সাথে এক বেলা হলেও খাবার খায়।(রামিম সাহেব)

আচ্ছা।
বলেই আমিও বসে পড়লাম।

পরেই সার্ভেন্ট আমাদের খাবার বেরে দিলো।

ভাই কেমন হয়েছে ভাবীর রান্না?(আলিশা অনেক উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে)

আগে সব কিছু টেস্ট করতে তো দে।
বলেই আলিফ সব কিছু একটু একটু টেস্ট করছে আর খুদ ধরছে বলছে এইটার লবণ কম হয়েছে,তো ঐটাই নুন বেশি,আরেকটায় এই কম,তো ওইটা কম।
একটা খাবারের প্রশংসাও করছে না।

কি করছিস আলিফ?মেয়েটা কোতো কষ্ট করে আমাদের জন্য রান্না করেছে আর তুই খুদ বের করছিস?(আলেয়া বেগম)

মা আমি আর কি করলাম?সত্যিই কথাই বলছি।(আলিফ)

আমি আলিফের কাছ থেকে সব গুলো ডিস সরিয়ে বললাম
আপনাকে খেতে হবে না।তাই খাবার গুলো সরিয়ে নিলাম।

আরে কি করছো?আমি খাচ্ছি কই!আমি তো শুধু টেস্ট করছি।(আলিফ)

আলিফ তোর টেস্ট করতে হবে না।আমরাই টেস্ট করছি।হিয়া মা তুমি একদম ঠিক বলছো ওর খেতে হবে না।(রামিম সাহেব)

একদিনেই আমার পরিবারকে আমার শত্রু বানিয়ে ফেললে।এখন তো আমিই সব গুলো একাই খাবো।বলেই আলিফ আমার হাত থেকে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলো।

এইভাবেই হাসি দুষ্টামি করতে করতে আমাদের খাবার শেষ হলো।
আমি অযথাই এতো চিন্তা করছিলাম।উনাদের সাথে আমি হাসিখুশিই থাকবো।কষ্ট পেতে হবে না।এখন তো আমার তাই মনে হচ্ছে।উনারা আমাকে কতো তাড়াতাড়ি আমাকে আপন করে নিলো।আমি এতো তামসা করার পরেও আমাকে কিছু বললো না।আমার সাথে কতো তাড়াতাড়ি মিশে গেলো।আমিও কেমন জানি নিজের কথা ভুলে উনাদের সাথে মিশে যাচ্ছি।তবে কি ছয় মাস পর আমাদের এই সম্পর্ক আমার কাছে বোজা মনে হবে না।(আমি মনে মনে)


সকালে খাওয়া শেষ করে
আমি রুমে এসেই বাবাকে ফোন দিলাম।

আসসালমুআলাইকুম আব্বু।(আমি)

অলাইকুম আসসালাম।তুই কবে থেকে এত ভদ্র হলি। ফোনে প্রথমেই সালাম।(হিমেল সাহেব)

দেখো ভদ্র হয়েছি বলে যে অভদ্র হতে পারবো না এই চিন্তা কিন্তু করো না।আমার অভদ্র হতে কিন্তু এক সেকেন্ডেও লাগবে না।(আমি)

তাতো জানি এতো তাড়াতাড়ি তো ঠিক হওয়ার মেয়ে তুমি না।(হিমেল সাহেব)

তুমি কিন্তু গায়ে পরে ঝগড়া করছো আব্বু।(আমি)

ওপাশ চুপ হয়ে গেলো।তবুও যেনো আমার মনে হচ্ছে কেউ ফুফিয়ে কাদঁছে।

আব্বু।আমি তোমাকে একটুও মিস করি না।(আমারও গলা ধরে আসলো)

আমিও তোকে একটুও মিস করিনি।তাই তো এখন ঝগড়াটাও আমাকে ইমোশনাল করতে পারলো না।(হিমেল সাহেব কাদতে কাদতে)

আব্বু।আমি খুব সুখে আছি।(আমি)

আমি জানি।(হিমেল সাহেব)

তারা কেউ আমাকে তোমার মত বকে না।(আমি)

আমি জানি।(হিমেল সাহেব)

তুমি খুব খারাপ।উনারা অনেক ভালো।(আমি কাপা কাপা কণ্ঠে)

আমি জানি।(হিমেল সাহেব)

আব্বু তোমাকে খুব ভালোবাসি।(আমি মনমরা হয়ে)

আমি জানি।(হিমেল সাহেব)

তুমি কেনো জানো সব?(আমি)

কারণ আমি তোর আব্বু যে।যাক আর মন খারাপ করতে হবে না।আচ্ছা বল তুই সেখানে গিয়ে কি কি করলি?(হিমেল সাহেব)

পরেই আমি আর বাবা মিলে অনেকক্ষন গল্প করলাম।


বিকেলে
আলিফ রুমে বসে বসে খেলা দেখছে। আজ অফিসে যাবে না।কাল থেকে অফিসে যাবে।

আলিফ।তোমাকে কিছু বলার ছিলো।(আমি)

হুম। বলো।(আলিফ)

আমাদের বৌভাত এখন না ছয় মাস পরে করো।আসলে আমি দেখতে চাই এই ছয় মাস পরে আমার জীবন কি হয়?ছয় মাস পরে যদি আমি থাকি তাহলে আমি বৌভাতটা এনজয় করতে পারবো।এখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)

আলিফ মুচকি হেসে বললো
আমিও বাবাকে গিয়ে একটু আগেই বলেছি তোমার আর আমার বৌভাত ছয় মাস পরে হবে।আর এতে উনি সায় দিয়েছে।

আপনি কি করে আমার মনের কথা বুঝতে পারেন?(আমি অবাক হয়ে)

কারণ তুমি আমার কাছে একটা খোলা বইয়ের মত।খুব সহজে তোমাকে বোঝা যায়।
বলেই আলিফ আমার নাকে টান মেরে,
বাহিরে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো।
আমি একটু পরেই আসছি তুমি তৈরি থাকো।

আপনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি কিসের জন্য আমাকে তৈরি থাকতে বলেছে?


কিছুক্ষণ পর
আমি টেবিলে বসে আছি সামনে বসে আছে আলিফ,,
আপনি এইজন্যই আমাকে বলেছেন তৈরি থাকতে?(আমি দাত চেপে)

হুম।(আলিফ হা বোধক মাথা নেড়ে)

আমি আমার বামে তাকিয়ে দেখি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর ডানে দাড়িয়ে আছে পিয়া।আর ওদের হাতে ভার্সিটির নোটস।

এইনে বিয়ের আগের পনেরো দিনের নোটস।
বলেই টেবিলের বা দিকে খাতাটা রাখলো আকাশ।

আর এই নে বিয়ের পরের পনেরো দিনের নোটস।
বলেই টেবিলের ডান দিকে খাতাটা রাখলো পিয়া।

আমি একবার ডান তো একবার বাম দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে ওদের মুখে বিজয়ের হাসি।কারণ আমি যে এখন ফাঁদে পড়ছি।

আমি সামনে বসে থাকা আলিফের দিকে কিউট ফেস করে তাকালাম,,,

কিউট ফেস করে লাভ নেই!এই নোটস গুলো পাঁচ দিনের মধ্যে শেষ করবে!(আলিফ)

নাউজুবিল্লাহ।এই নোটস গুলো শেষ করতে আমার মিনিমাম ছয় মাস লাগবে।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

কয় মাস লাগবে?
বলেই আলিফ নিচে থেকে একটা বেতের লাঠি বের করলো।

আপনি এখন আমাকে মারবেন?(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

তোমার বাবা মানে আমার শ্বশুর মশাই এর সাথে আমার কথা হয়েছে।উনি আমাকে বলেছে তুমি নাকি একদম পড়তে বসো না।(আলিফ)

আমি বসি তো। তা না হলে আমার এতো ভালো রেজাল্ট হয় কি করে?(আমি)

কারণ আঙ্কেল সারারাত তোকে নিয়ে বসে থাকে।তুই নিজে থেকে জীবনেও পড়তে বসিস না।জানেন ভাইয়া আংকেলের যদি চোখ এদিক থেকে ওদিক যায় তবেই ও ফাঁকি দেওয়া শুরু করে দেয়।(পিয়া)

ওই মীর জাফর।(আমি রেগে)

ও তো ঠিকই বলছে।তুই যে আঙ্কেলকে কতো জ্বালিয়েছিস আমরা নিজের চোখে দেখেছি।(আকাশ)

ওই,,,
আমি আকাশকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আলিফ জোরে টেবিলে একটা বারি দিয়ে বললো,,
চুপ।কোনো কথা না।বাবা(হিমেল) তোমাকে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছে।

একমাত্র মেয়ে মাথায় তো তুলবেই!(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

কিন্তু আমি তেমন কিছু করবো না।খালি একটু রেজাল্ট খারাপ আসুক।তারপর দেখো কি করি?(আলিফ)

কি শাস্তি দিবেন?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আলিফ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,
তোমাকে তো মারতে পারবো না।তবে রোমান্টিক শাস্তি দিবো।
বলেই আকাশ আর পিয়ার সামনেই কানে কিস করলো।

আর এইটা দেখেই আকাশ আর পিয়া হা হয়ে গেলো।কিন্তু আমি তো জানি ওই বদ দুটো আমার এই অবস্থা দেখে খুবই মজা নিচ্ছে।কারণ আমাকে অবশেষে কেউ জব্দ করতে পেরেছে।

আমি উনার থেকে দূরে সরে আসলাম,,,
এই দে সব নোটস।পাঁচ দিন না আমি তিন দিনেই সব শেষ করে দেবো।
বলেই মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলাম।এই লোকের ভরসা নেই।এখন পিয়া আর আকাশ ছিলো।উনার কথা না শুনলে না জানি আর কার সামনে কি করে বসে!আমি নির্লজ্জ কিন্তু উনি আমাকেও ছড়িয়ে যাবে নির্লজ্জের দিক থেকে।

তোমরা বাহিরে যাও।বাগানে গিয়ে বসো।সেখানে আলিশা আর পিয়াস আছে।আমি ওকে পরিয়ে আসছি।(আলিফ)

জ্বি ভাইয়া।
বলেই আকাশ আর পিয়া নিচে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ

আলিফ?(আমি)

কি হলো?(আলিফ)

আজকে এক জায়গা থেকে এসেছি।যদি না পরি।(আমি কিউট ফেস করে)

ভুলেও না।আজকে তুমি পড়বে।আর শুধু আজকে না প্রতিদিন পড়বে।আমি এসে তোমার পড়া নিবো।(আলিফ)

তার মানে আপনি পড়ানোর সময় আমার পাশে থাকবেন?(আমি অবাক হয়ে)

হুম।(আলিফ আমার নোটস গুলো দেখতে দেখতে)

আমি শুধু মুচকি হাসি দিলাম।কিন্তু আলিফের মুখ দেখে মনে হচ্ছে উনি আমার মুচকি হাসির কারণ এখনো বুঝতে পারলো না।কিন্তু আমি তো জানি আমার এমন বাচ্চামি ব্যবহার করার কারণ।


দুই ঘন্টা পর
আমি অর্ধেক শেষ করে ফেলেছি।(আমি)

হিয়া?(আলিফ)

হুম।(আমি)

তুমি এত ফাস্ট সব কিছু ধরতে পারো।তাহলে কেনো নিজে নিজে পড়ো না।তুমি তো বাচ্চা মেয়ে না যে তোমাকে বসে থেকে পড়াতে হবে।তুমি এখন ভার্সিটিতে।(আলিফ)

আজকেই আমার ব্যাপারে সব জেনে ফেলবেন!(আমি মুচকি হেসে)

তুমি যেমন দেখাও তুমি তেমনটা নও হিয়া।অনেক রহস্যময়ী তুমি।(আলিফ মনে মনে)

বাকি গুলো রেখে দাও।কালকে পড়বে।এখন তোমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও।(আলিফ আমার মাথায় বুলাতে বুলাতে)

ওকে।
বলেই আমি নিচে নেমে গেলাম।আলিফ আসলো না ওর কি বলে একটা কাজ আছে।


বাগানে
আকাশ,পিয়া,আলিশা আর পিয়াস ভাইয়া বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।বাসায় আর কেউ নেই।বাবাই অফিসে গেছে।মামনি উনার কোনো এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে।

আরে তোরা এখানে বসে আছিস?দাড়া আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি।(আমি ওদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে)

না ভাবী তুমি বসো।আমি যাই।আসলে আমি একদমই ভুলে গেছিলাম। সরি।
বলেই আলিশা উঠতে লাগলো তখন পায়ে পা লেগে আকাশের উপর পড়ে গেলো।

পিয়া হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।পিয়াস ভাইয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আমি বুঝলাম না।আমার বিয়ের দিন থেকেই কেউ না কেউ পড়ছে।আর সাথে সাথে কেউ না কেউ ধরছে।কি হচ্ছে?(আমি অবাক হয়ে বসতে বসতে)

আমার কথা শুনে আবার পিয়া লজ্জা পেয়ে গেল।আর পিয়াস ভাইয়া মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

আবার শুরু হয়েছে একজন লজ্জা পাচ্ছে আরেকজন মিটমিট করে হাসছে।সবার ভীমরতি হয়েছে।(আমি মনে মনে)

আলিশা তাড়াতাড়ি করে ভিতরে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর এখন সার্ভেন্ট এসে চা নাস্তা দিয়ে গেলো।কিন্তু আলিশা আর আসলো না।

পরেই আলিফ আসলো আর আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে লাগলাম।


পরের দিন
আমি তোমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো।আবার নিয়ে আসবো।(আলিফ তৈরি হতে হতে)

আপনার কোনো সমস্যা হবে না?(আমি)

না।এইটুকু তো আমি আমার চড়ুই পাখির জন্য করতেই পাড়ি।(আলিফ আমার গালে হাত রেখে)

এখন আপনি আমাকে লাই দিয়ে মাথায় তুলছেন!(আমি)

ব্যাপার না।চলো।
বলেই আমি আর আলিফ নেচে নামলাম।

পরেই সবাই মিলে একসাথে ব্রেক ফাস্ট করে করলাম।তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটিতে গেলাম।আলিফ আমাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে নিজে অফিসে চলে গেলো।


ভার্সিটি শেষ হতেই আমি বেরিয়ে দেখলাম আলিফ ওর গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাহিরে,,
আলিফ।আপনি এসেছেন?(আমি মুচকি হাসি দিয়ে)

আমি প্রমিজ করেছিলাম।এখন গাড়িতে উঠো।(আলিফ)

হুম।
বলেই আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।


বাড়িতে পৌঁছে
আমি বাড়িতে ঢুকতেই কারো আওয়াজ পেলাম।

বাড়িতে মনে হয় মেহমান এসেছে!(আমি গাড়ি থেকে নেমে)

আজকে রিয়া আন্টির আসার কথা!(আলিফ)

রিয়া আন্টি?(আমি অবাক হয়ে)

পিয়াসের ফুপি।আর আমার আম্মুর বেস্ট ফ্রেন্ড।তোমার লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি সেই ডিজাইন করেছে।বিয়ের দিন ব্যবসার কাজে বাহিরে ছিলো।তাই আসতে পারেনি।উনি অনেক ট্যালেন্টেড।একদম বিজনেস ওম্যান।খুবই গোছানো।দেখলে খুবই অবাক হবে।(আলিফ)

এতো তারিফ করছেন দেখা তো করতেই হবে।আর উনাকে ধন্যবাদও দেয়া দরকার এতো সুন্দর একটা লেহেঙ্গা দেয়ার জন্য।(আমি বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে)

আচ্ছা।চলো।(আলিফ)


বাড়ির ভিতর ঢুকেই আমি ওই রিয়া নামের মহিলাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।আলিফ সত্যিই বলেছে আমি উনাকে দেখেই অবাক হয়ে যাবো।আমি সত্যিই খুবই অবাক হয়ে গেছি।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চলতে লাগলাম,,

হিয়া মা।আসো তোমার সাথে উনার পরিচয় করিয়ে দেই।(আলেয়া বেগম)

উনাকে চিনতে আমার কোনো পরিচয় লাগবে না।(আমি রিয়া আন্টির দিকে তাকিয়ে)

উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আপনার মত মানুষকে আমার থেকে ভালো আর কেউ চেনে না।আমার এখন ইচ্ছে করছে আপনাকে এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।কারণ এই বাড়ির মানুষ গুলো খুব ভালো।আপনার মত নোংরা মানুষ গুলো এসে এখানের পরিবেশটা আরো নোংরা করবে।
বলেই সেখানে আর এক মুহুর্ত না থেকে আমি চলে আসলাম রুমে।

রিয়া বেগম সেখানে স্থির দাড়িয়ে রইলো।

আলিফ হিয়া এইসব কি বলে গেলো?(আলেয়া বেগম অবাক হয়ে)

আমি দেখছি মা।
বলেই আলিফ রুমে হিয়ার পিছু পিছু গেলো।


রুমে,,
আলিফ গিয়ে দেখলো হিয়া,ওর বিয়ের লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি বের করেছে।আর কেচি নিয়ে লেহেঙ্গা কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হোয়াট দা হেল হিয়া!কি করছো তুমি মাথা খারাপ হয়ে গেছে!
বলেই আলিফ আমার হাত থেকে লেহেঙ্গা আর কেচিটা নিয়ে গেলো।

আপনিই তো বলেছেন ওই মহিলা নাকি এই লেহেঙ্গা বানিয়েছে।তাই আমি এইটা এখন কুচি কুচি করে কাটবো।আগে জানলে জীবনেও এই লেহেঙ্গা পড়তাম না।
বলেই আমি আলিফের কাছ থেকে লেহেঙ্গাটা নিতে চাইলে আলিফ তা আরো দূরে সরিয়ে বললো,,,

তোমার সব কিছু সহ্য করি বলে।তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে?তুমি জানো কতো যত্ন করে আন্টি এই লেহেঙ্গা বানিয়েছে?যাও এক্ষুনি গিয়ে আন্টিকে সরি বলবে।(আলিফ রেগে)

আলিফ দেখলো হিয়ার চোখ গুলো রাগে লাল হয়ে আছে।

কি বললেন?আপনি আমাকে সহ্য করেন?আমি ভাবছিলাম,,,না থাক আপনি যেহেতু ওই মহিলার কাছের জন আপনিও উনার মতই হবেন।ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে এতো দিন সহ্য করার জন্য!আর আপনাকে কষ্ট করে আমাকে সহ্য করতে হবে না।
বলেই আমাকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম।তখনই আলিফ আমাকে ধরে বললো,,

হিয়া আমি ঐভাবে বলতে চাইনি।তুমি যা করেছো ভুল।

প্রথম কথা আপনি কিভাবে বলেছেন আমি জানতে চাইনি।ছয় মাস থাকতে বলেছিলেন না?এক মাসও হয়নি আপনি অসহ্য হয়ে গেছেন।ছয় মাস তো পরেই আছে।আর দ্বিতীয় কথা আমি ভুল কিছু বলেনি।তাই আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।ওই মহিলার সাথে যাদের সম্পর্ক তাদের আমি ঘৃনা করি আর এখন তার মধ্যে আপনিও আছেন।আজকের পর থেকে আপনি আপনার পথে আমি আমার পথে।আমাদের বিয়েটা কখনও Happily Married হওয়ার জন্য তৈরি হয়নি।

বলেই উনার হাত ছাড়িয়ে হাত ব্যাগটা নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

আলিফ সেখানেই হিয়ার কথা শুনে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।

।#Happily_Married🔥
#Part_11(#Surprise_Part)💥
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আমি নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় ওই মহিলার চোখের চোখ পড়লো।উনি লজ্জায় নিজের চোখ নিচে নামিয়ে নিলো।
অন্যদিকে আমি কিছু না বলেই চলে আসলাম।

হিয়া মা।(আলেয়া বেগম অবাক হয়ে)

কিছুক্ষণ পরেই আলিফ নিচে নেমে আসলো।

আলিফ হিয়া মা কোথায় গেলো?কিছু বলেছে ও কেনো রিয়ার সাথে এমন ব্যবহার করেছে?(আলেয়া বেগম)

আন্টি(রিয়ার দিকে তাকিয়ে)ও আমাকে কিছু বলেনি।আপনিই বলুন কেনো হিয়া এমন করেছে।আমি যতটুকু জানি ও কখনও কষ্ট দিয়ে কথা বলে না।কিন্তু আপনাকে ও সহ্য করতে পারে না।এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।(আলিফ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

কি কারণ আছে! তা হিয়ার বাবাই আমার থেকে তোমাকে ভালো বলতে পারবে।(রিয়া বেগম মাথা নিচু করে)

আলিফ সেখানে এক মুহুর্তও দাড়িয়ে না থেকে বেরিয়ে গেলো।আলেয়া বেগম নির্বাক দৃষ্টিতে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।

রিয়া বেগম দাড়িয়ে থাকা থেকে ধপাস করে বসে পড়লো।

মেয়েটার মনে এতো ঘৃনা জমেছে। এ কি করলাম আমি?মেয়েটার মনে এতো ঘৃনা দিয়ে ভরিয়ে দিলাম।শুধু মাত্র আমার স্বার্থ রক্ষার জন্য।যেটাকে আমি আমার আত্মসম্মান ভেবেছিলাম সেটা ছিলো মিথ্যা অহংকার।আর এই মিথ্যা অহংকারটাই আমার মেয়েটার জীবনে বিষিয়ে তুলেছে।
ভেবেই রিয়া বেগম সেখানে বসে কাদতে থাকে।


অন্যদিকে
আলিফ ড্রাইভ করতে করতে হিমেলকে ফোন দিলো,,

আসসালমুআলাইকুম বাবা!আপনি এখন কোথায়!(হিমেল সাহেব)

অলাইকুম আসসালাম।আমি তো এখন অফিসে থেকে বাড়ি ফিরছি।কেনো বাবা কিছু হয়েছে?হিয়া কি আবার কিছু করেছে নাকি?(হিমেল সাহেব চিন্তিত হয়ে)

উনি জানেন না কিছু!তারমানে হিয়া উনাকে কিছুই বলেনি।(আলিফ মনে মনে)

আলিফ বাবা?(হিমেল সাহেব)

বাবা তেমন কিছু হয়নি।আমি বাসায় আসছি সেখানেই আপনার সাথে কথা হবে।(আলিফ)

আচ্ছা,বাবা।তুমি এসো।
বলেই হিমেল সাহেব ফোনটা কেটে দিলো।

হিয়া।কোথায় গেছে?(আলিফ মনে মনে)

পরেই আলিফ পিয়াকে ফোন দিলো।

হ্যাল্লো ভাইয়া কেমন আছেন?(পিয়া হাসিমুখে)

পিয়া এখন আমার একটা কাজ করতে হবে!(আলিফ)

জ্বি বলুন ভাইয়া!(পিয়া চিন্তিত হয়ে)

তুমি এক্ষুনি গিয়ে হিয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখবে হিয়া ওদের বাড়িতে নাকি!(আলিফ)

কেনো ভাইয়া?হিয়া কি কিছু করছে নাকি?(পিয়া চিন্তিত হয়ে)

পরেই আলিফ পিয়াকে সব কিছু খুলে বললো।পিয়া হিয়াকে কি করে সামলাতে হয় তা ভালো করেই জানেন।তাই এই সময় ওর থেকে সাহায্য নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আলিফ মনে করে।যতো হোক হিয়াকে পিয়া এখন পর্যন্ত আলিফ থেকে বেশি চিনে।

আমি এক্ষুনি হিমেল আঙ্কেলকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি।(পিয়া)

না না।পিয়া বাবাকে ফোন করো না।উনি এখন বাসায় নেই।অফিস থেকে ফিরছে মাত্র।আর উনি জানেও না হিয়ার কথা।আমি এসে উনাকে নিজে যা বলার বলবো।তাই তুমি নিজে গিয়ে একটু দেখো।আর যদি ওকে সেখানে পাও।সেখানেই রাখার চেষ্টা করো যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না আসছি।আরেকটা কথা ওকে বলো না আমি আসছি না হলে আবার পালাবে।(আলিফ)

ভাইয়া আপনি একদম চিন্তা করবেন না। ও এখানে থাকলে আমি ঠিকই ওকে সামনে নিতে পারবো।(পিয়া)

এই জন্যই তুমিই আমার ভরসা।(আলিফ)

আচ্ছা,ভাইয়া রাখি।
বলেই পিয়া ফোন কেটে এক দৌড় দিয়ে হিয়ার বাড়িতে গেলো।


পাঁচ মিনিট পর পিয়া আবার ফোন করলো,,,
হ্যালো পিয়া পেয়েছো ওকে?(আলিফ)

না ভাইয়া।এতো বড়ো তালা দেয়া।আর আসে পাশেও খুঁজেছি কিন্তু ওকে পায়নি।এখন কি করবো?(পিয়া)

দেখো ওর ফোন এখনও অন আছে।আমি ফোন দিচ্ছি ধরছে না।তুমি ওকে ফোন দিয়ে দেখো ও কি বলে?কোথায় আছে?কেমন আছে।(আলিফ)

ঠিক আছে ভাইয়া।
বলেই পিয়া ফোন কেটে দিলো।


হিয়াদের বাড়িতে,,
তুমি কি বলছো?রিয়া?হিয়া রিয়া নামের এক মহিলাকে দেখে এমন রিয়েক্ট করছে?(হিমেল সাহেব অবাক হয়ে)

হুম।(আলিফ পানি খেতে খেতে)

পরেই হিমেল সাহেব আলমারি খুলে একটা ছবি বের করে আলিফকে দেখিয়ে বললো
দেখো তো বাবা।এইটা কি সেই মহিলা?

আলিফ দেখেই অবাক হয়ে গেলো,
এইটাই তো রিয়া আন্টির ছবি।আপনার কাছে কি করে?

কারণ তোমার রিয়া আন্টিই আমার প্রাক্তন স্ত্রী আর হিয়ার জন্মদাত্রী মা।(হিমেল সাহেব চশমা খুলে সোফায় বসলো)

পিয়া কিচেন থেকে তিনজনের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে পাশে বসলো।

হিমেল সাহেব বলতে শুরু করলো,,
রিয়া আর আমার বিয়েটা ভালবাসার ছিলো।(হিমেল)

তাহলে বিয়েটা ভাঙলো কি করে?(আলিফ)

আমি তোমাকে শুরু থেকে কাহিনীটা বলি।
রিয়া অনেক বড়লোক ঘরের এক মাত্র মেয়ে ছিলো।আর আমি ছিলাম অনাথ।ভার্সিটিতে পড়াকালীন আমাদের দেখা হয়।সেখান থেকে পরিচয়,পড়ে বন্ধুত্ব তারপর ভালোবাসা।আমার জীবনযাপন খুব সাধারণ।কিন্তু ওদের হাই সোসাইটিতে ফিট হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।তাই আমি আর রিয়া মিলে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি।আর এতে আমরা সফলও হই।এই শহর থেকে দূরে আমাদের একটা নতুন জগৎ তৈরি হয়।সব কিছু ঠিকমত চলতেছিল।আমি যতটুকু উপার্জন করতে পারতাম তা দিয়েই আমাদের ছোটো সংসার খুব সুন্দর ভাবে চলে যেত।আমাদের বিয়ের দুই বছর পর আমাদের ঘর আলো করে আসে হিয়া।আমাদের ভালোবাসার নিশানী আমাদের হিয়ামনি।অনেক আদরের মেয়ে ছিলো হিয়া আমার আর রিয়ার।কিন্তু হিয়ার যখন ছয় মাস বয়স তখন রিয়ার বড়ো ভাই আর ভাবী(পিয়াসের মা বাবা) ক্যার অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়।তখন রিয়াদের কোম্পানি দেখাশুনা করার জন্য ছিলো না তারপর ওর ভাইয়ের ছেলেও ছোটো ছিল।আর ওর বাবাও কোম্পানি চালানোর মতো অবস্থায় ছিল না।নিজের একমাত্র ছেলে আর ছেলে বউকে হারিয়ে উনিও অনেক নির্জুর হয়ে পড়েছে।এইজন্যই কোনো উপায় না পেয়ে রিয়া কোম্পানির ভার নিজের কাধে নেয়।এতে আমার কোনো আপত্তি ছিলনা । ও আমাকে বলেছে ওদের বাড়িতে গিয়ে থাকতে কিন্তু আমি রাজি হইনি।আমার মান সম্মানে লাগবে বলে। ও আমাকে আর জোর করেনি।
তবে ও অনেক বলতো আমি যেনো ওর সাথে ওদের কোম্পানিতে যোগ দেই।কিন্তু আমি তা চাইনি।আমার আত্মসম্মানের কথা ভেবে।
ধীরে ধীরে আমাদের দূরত্ব বাড়তে লাগলো।আমাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো।কারণ ও কোম্পানি নিয়ে এতই ব্যাস্ত থাকতো যে ওর যে একটা দুধের শিশু আছে ও তা ভুলেই যেতো।আমি সকালে চলে যেতাম, রিয়াও বেরিয়ে যেতো।হিয়াকে আয়ার আছে রেখে যেতো।মেয়েটা মা ছাড়া কিছু বুঝতো না।অনেক কাদত।আমি রিয়াকে বলেছি ওকে নিয়ে অফিসে যাও।তোমার কোম্পানীই তো কেউ কিছু বলার সাহস পাবে না।কিন্তু ও শুনত না।বলতো হিয়াকে নিয়ে গেলে নাকি ওর কাছে বেঘাট ঘটবে।আর কোম্পানিতে নাকি বাচ্চা নিয়ে যাওয়া নিয়ম নেই।এখন বসই নয়ম ভঙ্গ করে তাহলে কেমন দেখায়?এই কথা ভেবে ও আমার মেয়েটাকে রোজ কাদিয়ে অফিসে যেতো।
আমার হাত পা বাঁধা ছিল।আমি করি পরের চাকরি।মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।তাই আমারও ওকে ছেড়ে চলে যেতে হতো।রিয়া প্রায় অনেক রাত করে বাসায় ফিরত।জিজ্ঞেস করলে বলতো ওর নাকি অনেক কাজ করতে হয়।ধীরে ধীরে আমাদের দূরত্ব আরো বেড়ে গেলো।ও আমার আর হিয়ার সাথে সময় কাটানো বন্ধ করে দিলো।তবুও ওকে ভালোবাসি বলে কিছু বলতাম না।মাঝে মধ্যে দুইতিন দিন হয়ে যেতো বাড়ি ফিরত না।তবুও কিছু বলতাম না।
কিন্তু যখন হিয়ার এক বছর তিন মাস তখন ওর অনেক জ্বর হয়। আয়া রিয়াকে এতো ফোন করেছিলো কিন্তু ওকে ফোনে পায়নি।তারপর আমাকে ফোন করলো।আমি সব কিছু ফেলে মেয়ের কাছে চলে আসি।সেদিন হসপিটালে আমার মেয়েটার ওই অসহায় মুখ দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। আয়া কোনোদিন কি মায়ের মত যত্ন নিতে পারে?অযত্নে মেয়েটার চেহারা খুব খারাপ হয়ে গেছিলো।সেদিন সারারাত ফোন করেও রিয়াকে পায়নি।সকাল বেলা মেয়েটার অবস্থা একটু ভালো হয় তখনই রিয়া হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে আসে।ওর চেহারাতেও রয়েছে চিন্তার ছাপ। ও হসপিটালে এসেই মেয়ের অবস্থা দেখে কাদতে শুরু করলো।তাই আমি আর কিছু বললাম না।ওকে আশ্বস্ত করলাম মেয়েটা ভালো হয়ে যাবে।কিছুদিন সব ঠিক চলো।রিয়া আমাদের সাথে সময় কাটাতে শুরু করলো।ঠিক মত বাড়িতে আসতেও শুরু করলো।আমি ভাবলাম যাক সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।
একদিন রিয়ার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।
আবার কবে দেখা করছো?

আমি ম্যাসেজটা দেখতেই রিয়া আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে গেলো।আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো ওর ফোনে কেনো হাত দিয়েছি।কতো পার্সোনাল জিনিস থাকতে পারে।সেদিন যেনো আমি কোনো অপরিচিত মানুষকে নিজের সামনে পেয়েছি।
অবশেষে আমাদের সম্পর্ক ইতি ঘটল যেদিন আমি জানতে পারলাম আমার মেয়ের হসপিটালে ভর্তির সময় ও কারো সাথে হোটেলে ছিলো।আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলো।সেদিন অনেক ঝগড়া হলো আমাদের।ডিভোর্স হয়ে গেলো আমাদের।রিয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। অবশ্য ও হিয়াকে ওর সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই দেইনি।কারণ আমি জানি ও আমার মেয়ের খেয়াল রাখতে পারবে না।ওকে নিয়ে ওই বাড়ি শহর ছেড়ে চলে গেলাম।হিয়া আমাকে প্রায়ই ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতো।যখন আমাদের ডিভোর্স হয় তখন ওর বয়স দেড় বছর ছিলো।যখন ওর বুঝ হয় তখন আমি ওকে সব কিছু বলি।কারণ ও যতো তাড়াতাড়ি জানবে ততই ওর জন্য ভালো হবে কিন্তু এইটাই আমার ভুল ছিল।সব কাহিনী শুনার পর ওর সম্পর্ক,ভালোবাসা গুলো থেকে বিশ্বাসই উঠে আসে। ও মানুষকে বিশ্বাস করাই বন্ধ করে দেয়। কারো সাথে কথা বলতেও চাইতো না।তাই ওকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি যদি ও কারো সাথে একটু মিশতে পারে।এইখানে এসেছি যখন হিয়ার পাঁচ বছর ছিলো।এখানে আসার পর হিয়া,পিয়া আর আকাশের সাথে মিশতে পেরেছে বলে এখানেই থেকে যাই।হিয়া ওর মার জন্য এতো রাগ পুষে রেখেছে যে এইসব কিছু জানার পর আমার কাছ থেকে ওর মায়ের নাম কি ছিল ও তাও জানতে চাইনি কোনো দিন।তবে ওর মার ছবি ও একদিন দেখে ছিলো আর বলেছিলো এই মহিলাকে ও অনেক ঘৃনা করে।আমি কোনো দিন চাইনি হিয়া ওর মাকে ঘৃনা করুক।কিন্তু পরিস্থিতির ওকে এমন বানিয়ে ফেলেছে।
তাই তো যখন বিয়ের কথা আসে তখন ওর মনে হয় ওর বিয়েটাও ভেঙ্গে যাবে। ওও ওর বাবার মতো একা হয়ে যাবে।আমার একাকীত্ব ওর উপর প্রভাব ফেলেছে।ও একা থাকতে ভয় পায়,একা হতে ভয় পায়,মিশতে ভয় পায়,সম্পর্ক তৈরিতে ভয় পায়,ওগুলো ভাঙার ভয় পায়।

ওর মনে সব সময় ভয় থাকতো আমিও হয়তো কোনো একদিন ওকে ছেড়ে চলে যাবো।অন্য কেউকে বিয়ে করবো আর ওকে ভুলে যাবো।তাই ও সব কিছুর জন্য আমার উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতো।আমি রান্না করে খাওয়ালে খাবে,আমি না রান্না করলে সারাদিন রাত না খেয়ে থাকবে।যদি বলতাম কিছু রান্না করে খেয়ে নিতে। ও খেতো না।না খেয়ে থাকবে তবুও রান্না করবে না।আজ পর্যন্ত একটা ডিম ভাজি করে খায়নি।বাড়িতে রান্নাঘর কোন দিকে জিজ্ঞেস করলে ও বলতে পারবে না।(হিমেল সাহেব)

হিমেল সাহেবের এই কথা শুনে আলিফ মুচকি হাসি দিল।
সেদিনও হিয়া কতো মজা করে সবার জন্য খাবার বানালো। কোনোদিনও আমি ভাবিনি হিয়ার ওই বাচ্চামী,জেদী চেহারার পেছনে এতো ভীতু আর ভয় পাওয়া একটা মেয়ের চেহারা দেখতে পারবো।কি কি ফেস করেছে মেয়েটা?একটা ভাঙ্গা পরিবার যে একটা বাচ্চার উপর কতটা প্রভাব ফেলে তা আর কারো অজানা না।মেয়েটা যতো হাসিখুশি থাকুক ওর মনের মধ্যে এক পাহাড় সমান কষ্ট।তার উপর আজকে আমি আবার ওকে কতো কিছু শুনিয়েছি।(আলিফ মনে মনে অনুতপ্ত হয়ে)

এমনকি আমি পড়তে বসালেই ও পড়তে বসতো,কোনো প্রাইভেট টিচারের কাছেও পড়তো না।ওর মনে হয় আমার প্রতি ও যদি সব কাজের জন্য নির্ভরশীল হয়ে থাকে তবে আমি ওকে ছেড়ে যাবো না।(হিমেল সাহেব মুচকি হেসে)

হুম।কারণ ও সম্পর্ক নিয়ে অনেক ভয় পায়।(আলিফ)


চলবে,,,
আজকে আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা সারপ্রাইজ পার্ট🥳🥰।
চলবে,,,
অনেকেই এখনো বাস্তবতা খুঁজছেন।প্লিজ বন্ধ করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here