#Happily_Married❣️
#Part_14
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আলিফ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখে হিয়া একটা বড়ো বাক্স এনে ঐটা ভ্রু কুঁচকে এক দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে।দেখছে তো দেখছে আবার একবার ঘাড় এদিকে ঘুরায় তো আর একবার ওদিকে।আলিফের সন্দেহ হলো হিয়া মনোযোগ দিয়ে যেহেতু বক্সটা দেখছে নিশ্চয়ই গন্ডগোল আছে বা এই মেয়ে গন্ডগোল লাগাবে।বক্সের চারপাশ ভালো করে দেখে হিয়া একটা হাতুড়ি দিয়ে যেই তার তালা ভাঙতে যাবে ওমনি পেছন থেকে আলিফ ধরে বললো,,
কি করছো?
বক্সের তালা খুলছি।(আমি)
তাতো আমিও দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু কেনো?(আলিফ)
এইটার মধ্যে বাবার গুপ্তধন আছে।বাবা কোনো দিন এটাকে আমায় ছুঁতেও দিতো না।লুকিয়ে রাখতো।আজ বাবার ঘরের আলমারি খুলতেই এইটা পেলাম।আজ আর এইটা খোলার সুযোগ হাত ছাড়া করছি না।
বলেই আবার হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙতে যাবো তখনই আবার আলিফ হাত ধরে বললো,,
অনুমতি ব্যতীত অন্যের জিনিস দেখা ভালো না হিয়া!
আমি কি অপরিচিত মানুষের জিনিস হাত দিচ্ছি নাকি?এইটা আমার বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে এইটাতে আমারও অধিকার আছে।(আমি গর্ব করে)
তাও এইসব ঠিক না।হতে পারে এতে উনার পার্সোনাল জিনিস আছে!(আলিফ)
এই জন্যই তো আমার কৌতূহল।আরেকটা কথা এই সেন্টু গেঞ্জি আর লুঙ্গিতে আপনাকে পুরাই বাঙ্গালী জামাই লাগছে।(আমি চোখ টিপ মেরে)
ফর ইউর কাইন্ড ইনফর্মেশন।আমি বাঙালি জামাই।(আলিফ😒)
না কোনো দিন আপনাকে এই বেশে তো দেখিনি তাই বলছিলাম আর কি?শশুর মশাইয়ের লুঙ্গি পরে কেমন লাগছে!(আমি মজা নিয়ে)
খুবই ভালো। তবে এইসব কথা বলে আমাকে রাজি করাতে পারবে না।আমি তোমাকে অন্যর ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দিতে দেবো না।(আলিফ বুকে হাত বাজ করে দাঁড়ালো)
তাহলে দোষ আপনার!(আমি রেগে)
কেনো?আমি কি করেছি?(আলিফ অবাক হয়ে)
আপনিই তো বললেন বাবার আলমারি থেকে আপনার জন্য কাপড় চোপড় এনে দিতে আপনি ফ্রেশ হবেন।আমি যদি আপনার জন্য আলমারি না খুলতাম তাহলে এই বক্সটাও পেতাম না।আর আমার ইচ্ছেও জাগতো না এইটা খুলে দেখার।
বলেই আমি আলিফের দিকে কিউট ফেস করে তাকালাম।
আলিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আলিফ,আমি জানি আপনারও ইচ্ছে করছে এইটার মধ্যে কি আছে খুলে দেখতে?(আমি বাকা চোখে আলিফের দিকে তাকিয়ে)
ভুলেও না।আমি তোমার মতো না।আমার কিছু আদর্শ আছে।(আলিফ ভ্রু কুঁচকে)
দূর আজকে আদর্শ গুলোকে গুলি মারেন তো।
বলেই আমি আলিফকে আমার পাশে বসিয়েই হাতুড়ি দিয়ে এক বারি মেরে তালা ভেঙ্গে ফেললাম।
তোমার জন্য আমাদের কোন দিন জেলে যেতে হয়!(আলিফ হতাশ হয়ে)
ব্যাপার না দুজন মিলে যেখানে যাবো সেখানেই খুশি থাকবো।
বলেই বক্স খুললাম।
আলিফ হিয়ার কথা শুনে মুচকি হেসে ভাবলো,,
সত্যিই তোমার সাথে আমি সব জায়গাতেই যেতে পারবো,হিয়া।
বক্স খুলে কৌতূহল নিয়ে আমি আর আলিফ তার ভিতরের জিনিস গুলো দেখে অনেক অবাক হয়ে গেলাম,,,
আলিফ দেখেন!এইটা বাবা আর পিয়াস ভাইয়ার ফুপির বিয়ের ছবি।আমি আগে কোনদিন দেখিনি।বাবা এখানে লুকিয়ে রেখেছিল!।(আমি আলিফকে ছবি দেখিয়ে)
উনি পিয়াস ভাইয়ার ফুপি আর সাথে তোমার মাও।(আলিফ আমার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে)
আলিফ,আমি আপনার কথায় উনাকে একটা সুযোগ দিয়েছি।কিন্তু ক্ষমা এখনও করিনি। যাই কারণ থাকুক উনার এইসব করার পেছনে তা আমার কাছে কিছুই না।উনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এইটাই আমার কাছে সব চেয়ে বড় বিষয়।আমি কোনো দিন ভাবি নি উনাকে সুযোগ দেবো।তবে যাই হোক সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন,দিয়েছি।কিন্তু এখন ক্ষমা করার কথা বলবেন না।আমি অতটাও মহান নেই যে উনার মত মানুষকে ক্ষমা করতে পারবো।(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)
যদি উনি সুযোগে তোমার মন গলাতে পারে তাহলে?(আলিফ আমার মাথায় হাত দিয়ে)
আপনি আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করেন।এখনও কি আমার মন গলাতে পেরেছেন?আপনি আমাকে ভালোবাসেন,কিন্তু সত্যি করে বলুন তো,আপনি জানেন কি না আমার মনে আপনার জন্য কি আছে?(আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে)
আলিফ আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।
আমি আপনার মনে কষ্ট দিতে চাইনি।আপনি আমার অনেক খেয়াল রাখেন,আমার কথা বুঝতে পারেন,আমার সব কাজে আপনি সাহায্য করেন,আমাকে ভালোবাসেন।তাই আমি নিজেকে পরিবর্তন করে আপনার ওইসব জিনিস গুলোতে সাড়া দিতে চাই।কিন্তু পারি না।মনের কোণে যে ভয় এতো বছর ধরে জমেছে ওইসব এতো সহজে আমার পেছো ছাড়বে না।আর এই ভয় গুলো আমার মনে ঢুকিয়েছে উনি।তাহলে বলুন উনাকে কি এতো সহজে ক্ষমা করা যায়?আমার জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠুক তা আমিও চাই।কিন্তু আমি পারিনা।উনাকে আমিও ক্ষমা করতে পারবো না।আর সুযোগটা উনি কিভাবে কাজে লাগবে আমি জানি না।শুধু এইটা জানি আমার পক্ষে এখন অসম্ভব।হা, তবে এইটা বলতে পারি আমি উনাকে আগে যতটা ঘৃনা করি ততটাও ঘৃনা করবো না।(আমি মুচকি হেসে)
আর বাবার ক্ষেত্রে?(আলিফ)
বাবা!উনার প্রতি আমার আগে যতটুকু রাগ ছিল এখন তা আর নেই।কারণ উনি সব সময় আমার পাশে থেকেছেন।উনি কোনো দিনও চান নি আমার এরকম অবস্থা।তাই তো ধরে বেধে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে।তবে যাই হোক উনি উনার রাগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার জন্য একটু হলেও আমার কষ্ট পেতে হয়েছে।তাই উনাকেও একটু আমার রাগ সহ্য করতে হবে।বাবা মা হওয়া সহজ না।এইটা উনাদের বুঝতে হবে।যতক্ষণ না তারা এইটা বুঝতে পারছে ততক্ষণ আমিও হাল ছাড়ছি না।(আমি দীর্ঘ্য শ্বাস নিয়ে)
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আলিফ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
হিয়া প্রমিজ করো!তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও, আমাকে তোমায় ভালোবাসা থেকে কখনও দূরে সরিয়ে রাখবে না।
আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
ভুল বলছেন।আপনি প্রমিজ করুন।আমার মন থেকে এই সম্পর্কের ভয় দুর আপনি আমায় ভালোবাসতে বাধ্য করবেন।আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।আমি ওইসব কিছু করতে রাজি আছি যা দিয়ে আমি আপনার ভালোবাসার মায়ায় পড়বো।
আলিফ আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আস্তে করে বললো,,
তুমি ঠিক বলেছো।আমি প্রমিজ করছি এমনটাই হবে।
আচ্ছা চলুন অনেক হয়েছে ওইসব কথা এখন বাবার গুপ্তধনে দেখি কি কি আছে?
বলেই আমি আবার বক্সে হাত দিলাম।
আলিফও অনেক ইচ্ছা নিয়ে বক্সে ঘাটাঘাটি করছে।
আপনি না আদর্শ ছেলে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
যখন লাইফ পার্টনার হয়ে গেছি ক্রাইম পার্টনার হতে সমস্যা কি?(আলিফ চোখ টিপ মেরে)
আমি এক গাল হাসি দিলাম আলিফের দিকে তাকিয়ে।
আলিফ এই দেখুন।এইটা আমার পুতুল,বাবা নিজের হাতে কাপড় আর তুলো দিয়ে বানিয়ে দিয়েছিল।(পুতুল দেখিয়ে)আসলে আমার একটা দোকানের পুতুল দেখে খুব ভালো লেগেছিলো।কিন্তু ওই দোকানে একটাই ঐরকম পুতুল ছিলো।আর আমরা যাওয়ার আগেই কেউ একজন এসে পুতুলটা কিনে নিয়ে গেলো।তাই আমি অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম।বাবা বলেছিলো অন্য রকম পুতুল কিনে নিতে কিন্তু আমি ছিলাম জেদী,ওই পুতুল আমার লাগবেই।তাই বাবাই কোনমতে আমার জন্য এমন একটা পুতুল বানিয়েছে।যদিও এই পুতুল ওই পুতুলের ধারের কাছেও যায়নি।তবুও এইটা আমার কাছে স্পেশাল কারণ বাবা এইটা আমার জন্য বানিয়েছে।ভাবছিলাম এইটা হয়তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু ভাবতে পারিনি বাবা এইটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।(আমি পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে)
বাহ!ভালো তো।কিন্তু আমি তার থেকে ভালো কিছু পেয়েছি।(আলিফ একটা ছবি দেখিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে)
কি এইটা!(আমি সন্দেহ দৃষ্টিতে)
কেউ একজন খালি গায়ে মাটিতে বসে ভে করে কান্না করছে,নাক গিয়ে সর্দিও পড়ছে।আর এমন স্বরনীয় দৃশ্যটাকে একটা ফ্রেমে বন্দী করে রাখা হয়েছে।আর এখন সেটা আমার হাতে।(আলিফ😎)
আলিফ খুব খারাপ হয়ে যাবে।এইটা তো ফেলে দিয়েছিলাম।এখানে আসলো কি করে?বাবাও না।যা খুশি এনে রেখে দিয়েছে।আলিফ দেন এইটা আমার কাছে!(আমি আলিফের কাছ থেকে ছবিটা নেয়ার চেষ্টা করে)
না না।ভুলেও দেবো না।আগেই বলছি অন্যর পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে না।এখন দেখলে নিজের পার্সোনাল জিনিস বেরিয়ে আসলো।এইটাকে তো আমি ফ্রেমে বন্দী করে বাঁধিয়ে রাখবো।(আলিফ হাসতে হাসতে)
আলিফ দিন বলছি।
বলেই আমি আর আলিফ ধস্তাধস্তি করতে লাগলাম।
ধস্তাধস্তি করতে করতে আমি গিয়ে আলিফের বুকে পড়লাম।আলিফ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমিও উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনার চোখে একটা নেশা রয়েছে।একবার তাকিয়ে থাকলে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।আলিফ আসতে করে আমার কপালের চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিল।আর ঠোঁট জোড়া খুব কাছাকাছি নিয়ে আসলো আর তখনই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।চোখ বন্ধ করার পর বুঝতে পারলাম উনি আমার কপালে চুমু দিলো।আমি চোখ খুলতেই উনি কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,
ভালোবাসার পরশ কপালেই সুন্দর।by the way তুমি কি অন্য কিছু ভাবছিলে? ইশ!কি লুচ্চু তুমি,হিয়া!
আমি তাড়াতাড়ি উনার উপর থেকে উঠে নাক ফুলিয়ে বললাম,,,
যার মনে যা লাফ দিয়ে উঠে তা।
আলিফও হাসতে হাসতে উঠলো।পরেই আলিফের চোখ গেলো বক্সে থাকা একটা সাদা কাগজে।
এইটা কি?(আলিফ কাগজটা হাতে নিয়ে)
আমিও কৌতূহল নিয়ে কাগজের দিকে তাকালাম।কাগজটা দেখেই আমাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
আমি আর আলিফ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।
।
।
কিছুক্ষণ পর
আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছি।আলিফ আমার পাশেই দাড়িয়ে আছে।
তাহলে তাদের ডিভোর্স হয়নি?(আলিফ আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি চুপ করে আছি।
আসলে কাগজটা ছিলো বাবা আর মার ডিভোর্স পেপার।সেখানে মা স্বাক্ষর করেছে কিন্তু বাবা করেনি।বাবা হয়তো দেখতে চেয়েছিলো ডিভোর্স পেপার মার সামনে দিলে উনি কেমন রিয়েক্ট করে।যেহেতু উনি কিছু না বলেই স্বাক্ষর করে দিয়েছে এতে বাবাও হয়তো অবাক হয়ে গেছে।কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে দূরে সরিয়ে দিলেও ডিভোর্স পেপার এ স্বাক্ষর করার শক্তি বাবার হয়ে উঠে নি।সবাইকে বাবা জানিয়েছে উনাদের ডিভোর্স হয়েছে।কিন্তু আসল কথা তাদের কোনোদিন ডিভোর্স হয়নি।কারণ বাবা তাতে স্বাক্ষর করে নি।
আমি স্থির দাড়িয়ে আছি।
আলিফ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,
হিয়া কিছু বলো?
তারা একে অপরকে ভালোবাসে!তবুও তারা একে অপরের সাথে থাকতে পারলো না।এতই কষ্ট!ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকা!মাঝে মধ্যে মনে হয় সম্পর্ক কতো সহজ আবার মাঝে মধ্যে মনে হয় এগুলো এতটাই ভারী যে বয়ে নেয়াই অসম্ভব।(আমি নিচের দিকে তাকিয়ে)
এখন তুমি কি করবে?(আলিফ)
আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,,,
তুমি চিন্তা করো না।ওইটা উনাদের মধ্যের কথা।আমি উনাদের মধ্যে পড়তে চাইনা।আমিও তোমার মত দর্শক।আমি শুধু দেখবো ভাগ্য আমার মা আর বাবাকে কোথায় নিয়ে যায়?(আমি আলিফের গালে হাত দিয়ে)
তবে একটা কথা!আর যাই হোক আমাদের সম্পর্ক আমি কিছুতেই উনাদের মত হতে দেবো না।ভালোবাসি কি বাসি না,জানি না।তবে আপনার থেকে কখনও দূরে যাবো না।আজকের পর থেকে না এই বিয়ে থেকে না আপনার থেকে, কারো থেকে পালাবো না।আমি কিছুতেই আমার বাবা মার মতো হবো না।আমার সম্পর্ক আর ভাঙবে না।তাই আলিফ?(আমি কাদতে কাদতে)
আলিফ আমার গালে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,,
হুম।আমাদের সম্পর্ক কখনই উনাদের মত হবে না।
।#Happily_Married❣️
#Part_15
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
হিয়া,আমার রান্না হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি খেতে চলে আয়।
বলেই পিয়া হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকেই দেখে হিয়া আর আলিফ একে অপরের কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
পিয়া তাড়াতাড়ি চোখে হাত দিয়ে বললো
ওপস! সরি সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি,যারা আমাকে খাবার বানানোর তাড়া দিচ্ছিলো সকালে।তারা তাদের ক্ষুদা ভুলে এখানে রোমাঞ্চ করছে। অবশ্য এমন রোমাঞ্চ পেলে ক্ষুদা আর থাকে বুঝি।
আলিফ তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে বাহিরে চলে গেল।
ভাইয়া মনে হয় অনেক লজ্জা পেয়েছে?(পিয়া হাসতে হাসতে)
একটু বেশিই মুখে বুলি আওড়ানো শুরু করেছো,মিস পিয়া?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
এমন ভাবে বলছিস যেনো আমি কি না কি করে ফেলেছি!সরি বলছি তো।
বলেই পিয়া আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
এখন কি করছিস?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
তোর রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছি! যাই হোক ভাইয়া লজ্জা পেয়েছে।তোকে দেখে তো বুঝাই যাচ্ছে তুই একটুও লজ্জা পাসনি!(পিয়া বাকা চোখে তাকিয়ে)
আমি কেনো লজ্জা পাবো।আমার বর,আমি যা ইচ্ছে করবো।লজ্জা তো তোর পাওয়া উচিত।কাবাবের হাড্ডি।(আমি)
সরি না!(পিয়া আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
আরে ছাড়।আমি পিয়াস ভাইয়া না।(আমি ছুটার চেষ্টা করে)
আমার এই কথা বলতেই পিয়া এক ঝটকায় আমাকে ছেড়ে পাশেই ঘুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে রইলো।
হুহ!😒কি হলো?পিয়াস ভাইয়ার কথা শুনতেই আমাকে ছেড়ে দিলো।(আমি মনে মনে)
এখানে পিয়াস ভাইয়া আসলো কোথা থেকে?(পিয়া লজ্জায় লাল হয়ে)
আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি ও লজ্জায় টমেটোর মত লাল হয়ে গেছে।কান এতো লাল হয়ে আছে,মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হবে।
আবারও না।তুই আবারও লজ্জা পেতে শুরু করলি।তোর এই লজ্জা পাওয়া শুরু হলে আর থামতে চায় না।এখন এইসব রাখ।চল খেতে যাবো।
বলেই আমি লজ্জাবতী পিয়াকে নিয়ে বের হলাম।
।
।
বাহিরে বের হতেই দেখি আলিফ স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।
কি হলো আবার আপনার?এইভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছেন কেনো?(আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে)
সামনে দেখো?(আলিফ সামনের দিকে আঙুল দিয়ে)
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি পিয়াস ভাইয়া একটা পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরে দাড়িয়ে আছে।উনাকে পুরাই কাকাতুয়া লাগছে।
আমি আর আলিফ ফিক করে হেসে দিলাম।
দেখলেন কেনো আমি আমি আপনার জন্য পাঞ্জাবি আনি নি।কারণ বাবার পাঞ্জাবিতে আপনি পিয়াস ভাইয়ার মত কাকাতুয়া লাগবেন।(আমি হাসতে হাসতে)
ঠিক বলেছো!তোকে যে আজ কি লাগছে কি বলবো,পিয়াস?ফাটাফাটি।কে দিয়েছে তোকে এইসব?(আলিফ হাসতে হাসতে)
দেখেছো পিয়া,আমি বলেছিলাম আমাকে দেখে ওরা হাসবে।(পিয়াস ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে)
আমি কি করবো?পিয়াস ভাইয়া বলছিল উনার মাথা ব্যাথা করছে। আমি বলছি গোসল করলে ঠিক হয়ে যাবে।উনি বলছে কাপড় চোপড় কিছু আনে নি।গোসল করে আগের কাপড় পড়তে উনার ভালো লাগে না।তাই আমি বেলকনিতে গিয়ে দেখি আংকেলের লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি টানানো।সেখান থেকে আংকেল এর লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি এনে দিয়েছি।(পিয়া আঙ্গুল চুলকাতে চুলকাতে)
একদম ঠিক করেছো পিয়া।ধন্যবাদ তোমাকে।(আলিফ হাসতে হাসতে)
আর তুই উনাকে(পিয়াস) ভাই বলছিস কেনো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
জিজ্ঞেস করো হিয়ামনি।আমি কতো বলছি আমাকে ভাই বলো না।তুমি আমাকে ভাই বললে আমার হার্ট এ্যাটাক হবে।(পিয়াস মাঝখান থেকে)
তাই নাকি?(আমি আর আলিফ,পিয়াস ভাইয়ার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে)
আসলে,,।আসলে আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে।আমাকে খেতে দাও।
বলেই পিয়াস ভাইয়া টেবিলে বসলো।
দিচ্ছি।দিচ্ছি।বসুন।
বলেই পিয়াও টেবিলে খাবার বাড়তে গেলো।
আমি আলিফের কাছে গিয়ে বললাম,
দুইজন একসাথে কতো সুন্দর লাগছে তাই না।খুব ভালো মানাবে ওদের।
হুম।(আলিফ মুচকি হেসে)
হিয়া,আঙ্কেল আর আন্টির কি হবে?উনারা খাবে না।(পিয়া টেবিলে আমাদের জন্য খাবার বাড়তে বাড়তে)
আমি আর আলিফ একে অপরের দিকে তাকালাম।তারপরই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুটো বাজে।আমি উনাদের রুমে বন্ধ করেছিলাম সকাল দশটা নাগাদ।
উনাদের কথাবার্তা হয়েছে?(আমি আলিফের দিকে তাকিয়ে)
জানি না।খুলে দেখো!বন্ধ করার পর কোনো আওয়াজও তো পায়নি।(আলিফ)
হুম।
বলেই আমি দরজা খুললাম।
।
।
আমি দরজা খুলতেই দেখি
বাবা, হাত পেছনে বাজ করে জানালার কাছে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আর মা টেবিলে বসে মাথা নিচু করে কেঁদেই চলেছে।
আমার দরজা খুলার আওয়াজ শুনেই বাবা পেছনে তাকালো।
আমি বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ জোড়া খুবই নিষ্প্রাণ।আমি ভয় পেয়ে যাই।আসলে আমি কোনো দিন বাবার চোখ এত নিষ্প্রাণ দেখিনি।
বাবার চোখ জোড়া সব সময় উনার মনের কথা বলতো।রাগ,জেদ,আমার জন্য ভয়,ভালোবাসা,সবই আমি ওই চোখ জোড়ায় পড়তে পারতাম কিন্তু এখন কেনো জানি?কিছুই বুঝতে পারছিনা না।তবে কি বাবা মা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছে?যার জন্য বাবার এমন অবস্থা।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়েই আছি আর বাবা আমার কাছে এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আমি কিছুই বুঝলাম না কি হলো?
আমি এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।যেখান থেকে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি কি বাবার পিছু হটে যাবো?নাকি মার কাছে গিয়ে উনাকে শান্তনা দেবো?কি করবো?আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা না।
আমার এই দিশেহারা পরিস্থিতি দেখে আলিফ বললো,,
বাবার কাছে যাও।আমি জানি তোমার উনার কাছে যাওয়ার ইচ্ছেই বেশি!
আমি আর কিছু না বলে এক দৌড় দিয়ে বাবার কাছে গেলাম।
।
।
আমি গিয়ে দেখি বাবা বেডে বসে আছে মাথা নিচু করে।
আমি বাবার কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলাম।আমার মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু কেনো জানি সেই প্রশ্ন গুলো মুখ দিয়ে বের হতেই চাচ্ছে না।আমার ঠোট জোড়া যেনো খুব ভারী হয়ে আছে।তাই বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
আমি সব সময় চাইতাম,তুই সম্পর্ক গুলোকে সম্মান দে,সম্পর্ক গুলোকে ভালোবাস,ওইগুলো বুঝ।কিন্তু দেখ আমিই আমার আর তোর মার সম্পর্ক গুলোকে সম্মান দেয়নি,ভালোবাসি নি,বুঝার চেষ্টা করেনি।সেদিন যদি তোর মার কথা বিশ্বাস করে একটু শুনতাম তাহলে তোর,আমার,তোর মার জীবন অন্য রকম হতো।আমরা মানুষ কেনো চাই,যে অপর মানুষটা একদম আমাদের মন মতো হবে?আমরা যা চাই উনি তাই করবে?আমি যদি তোর মাকে একটু বুঝতাম?তবে এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।তোর মাকে আমি বুঝতে পারিনি।এইটা আমার অসফলতা।কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এই জন্য আমি ওকে ক্ষমা করবো না।তবে তোকে ধন্যবাদ।এখন আমি নিশ্চিত যে তোর আর আলিফের সম্পর্ক আমাদের মতো হবে না।
আমি বাবাকে আর কিছুই বললাম না।শুধু উনার হাঁটুর উপর মাথা রেখে শুয়ে রইলাম।
।
।
অন্যদিকে
ফুপি তুমি ঠিক আছো তো?(পিয়াস রিয়া বেগমের কাছে এসে)
পিয়াস আমি খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছি।ও আমাকে ডিভোর্স দেয়নি।সেদিন যদি আমি জেদ ছেড়ে ওকে সব কিছু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতাম।সেদিন যদি ওই ডিভোর্স পেপারটা ছিঁড়ে ওকে বলতাম যে আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।তাহলে আজ আমায় এই পরিস্থিতে পড়তে হয় না।ও আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না।আমি এখন কি করবো?জেদ,রাগে আমি আমার সুখী পরিবার নিজের হাতে ধ্বংস করে দিয়েছি।এখন আমি কি করবো?কি করবো যে হিমেল আমাকে মাফ করে দেয়? ও কি আমায় মাফ করবে,পিয়াস?(রিয়া বেগম পিয়াসের হাত ধরে)
ওইটা তো আপনার উপর নির্ভরশীল।সেদিন আপনার কাছে পথ ছিলো নিজের পরিবারকে বেছে নেয়ার কিন্তু আপনি নেননি।নিজের জেদকে বেছে নিয়েছেন।তাই এখন নিজের পথ নিজে খুঁজে নিন,আন্টি।যে পথ দিয়ে আপনি আঙ্কেলের কাছ থেকে মাফ পাবেন আর হিয়ার মা হয়ে উঠার আরেকটা সুযোগ।(আলিফ)
রিয়া বেগম আলিফের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুমি ঠিক বলেছো আলিফ।নিজের জেদের জন্য সব কিছু ছেড়েছি।এখন সব কিছু পাওয়ার জেদ ধরবো।আমি যে করেই হোক হিয়া আর হিমেলের মনে আবার নতুন করে নিজের জায়গা করবো।ওদের প্রতি করা অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করবো।(রিয়া বেগম)
এখন যেহেতু সব ঠিক হয়ে গেছে।তাহলে সবাই খেতে চলো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।(পিয়া মুচকি হেসে)
হুম।
বলেই পিয়াস রিয়া বেগমের হাত ধরে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো।
আলিফ হিমেল সাহেবের রুমে গিয়ে দেখলো হিয়া হিমেল সাহেবের হাঁটুর উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।
আলিফ হিয়াকে ইশারা করলো আঙ্কেলকে খাবার টেবিলের নিয়ে আসতে,,
আমি আলিফের ইশারা পেয়েই বাবাকে বললাম,,
চলো খেতে চলো।
না আমার ভালো লাগছে।তুই গিয়ে খেয়ে নে।(হিমেল সাহেব)
আমি বাবার গালে হাত দিয়ে বললাম,,
তুমিই তো বলতে না,,যে বিয়েকে একটা সুযোগ দে।আমি দিয়েছি।তুমি না হয় মাকে আরেকটা সুযোগ দাও।
তুই দিতে পারবি আরেকটা সুযোগ?(হিমেল সাহেব)
বিয়েকে একটা সুযোগ দিয়েছি।পরিস্থিতে পরে উনাকেও আরেকটা সুযোগ দিয়েছি।তুমিও দাও।জীবন তো একটাই বাবা।রাগ,জেদ চেপে কেনো কষ্ট পাবে?আমি জানি তুমি মাকে ভালোবাসো।আর উনিও তোমাকে ভালোবাসে।তাই তো এতো বছরেও তোমাদের মনে অন্য কেউ জায়গা করতে পারে নি।(আমি)
তুই কবে থেকে এতো জ্ঞানী হয়ে গেলি।এই কয়দিন আগে নিজের ফালতু কাজ কর্ম দিয়ে আমার মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিতে নিয়েছিলি?আর এখন এতো পাকা পাকা কথা বলছিস?
বলেই বাবা আমার কানে ধরে টান দিতে লাগলো।
আহ্।বাবা।লাগছে।এখন চলো তো।(আমি নেকামি করে)
চল।
বলেই বাবা আর আমি চলতে শুরু করলাম।
আলিফ আমাদের কান্ড দেখে হাসতে শুরু করলো।
পরেই আমরা সবাই মিলে খাবার খেলাম।সারা বিকেল গল্প,লুডু,বালিশ পাস,চোর পুলিশ আর অনেক খেলা খেললাম।সবাই মিলে ভালোই মজা করলাম।
।
।
রাতে আমি আর আলিফ বাড়ি ফিরছি।পিয়াস ভাইয়া মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।বাবার সাথে উনার একটু আকটু কথা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে।আমরা বিদায় নিয়ে সবাই এক সাথেই বেরিয়ে গেছি।আমাদের আর পিয়াস ভাইয়ার বাড়ি দুটোই দুইদিকে।
আমাদের গাড়ি আপন চলছে।রাস্তা ঘাট পুরোই ফাঁকা।মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে লাইট গুলো কয়েকটা অন হয়ে আছে।তো কয়েকটা অফ।এর মধ্যে নামলো বৃষ্টি।
আলিফ?এইটা বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টি না?(আমি এক্সসাইটেড হয়ে)
মনে তো হয়।(আলিফ গাড়ি চালাতে চালাতে)
গাড়িটা থামান।(আমি আলিফকে তারা দিয়ে)
কেনো?(আলিফ গাড়ি থামিয়ে)
চলুন বৃষ্টিতে ভিজবো।(আমি)
ঠান্ডা লাগবে।(আলিফ)
আপনিও না।প্লিজ চলুন।(আমি কিউট ফেস করে)
আচ্ছা বাবা চলো।
বলেই আলিফ গাড়ি থেকে নামলো।
আমিও গাড়ির সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।
আলিফ আসুন।আমি আর আপনি নাচবো।(আমি আলিফের কাছে গিয়ে)
না।ভুলেও না।আমি নাচতে পারিনা।(আলিফ)
আরে আমরা কোথায় কম্পিশনে যাচ্ছি!চলুন।
বলেই আমি আলিফের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নাচতে শুরু করলাম।
প্রেমেরই সুর বাজে গুন গুন
আমার নয়ন তুমিই তো তুমি তো মন
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন
বুকেতে প্রাণ ধক ধক ধুম ধুম
বুকেতে প্রাণ ধক ধক ধুম ধুম
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন
মিউজিক,,,
অসীম আকাশে মন উড়ে যায়,,,,
অনেক মানে থাকে নীরব কথায়,,,,
চোখেরও আয়না তো আমারই এই মন
নতুন সাজে আমি সাজি এখন
কাজল না কাকন না কুমকুম
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন
বুকেতে প্রাণ ধক ধক ধুম ধুম
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন,,
(আমি আলিফকে জড়িয়ে ধরে)
অচেনা অতিথি হলো আপন
তোমায় ঘিরেই তো জীবন মরণ।
প্রেমেরই সুর করে গুন গুন
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন
আমার নয়ন তুমিই তো তুমিই তো মন
।
।
এই বৃষ্টিতে আমি আর আলিফ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছি। এ যেনো এক অন্যরকম প্রশান্তি।এই সম্পর্ক আমরা কোনোদিন ভাঙতে দেবো না।
।
।
চলবে,,,,
।
চলবে,,,