#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ❤️
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা
আমি ফ্লোরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি, আমার প্রিয় ফোনটা আমারই চোখের সামনে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো । আমার ফোনের কি দোষ ছিলো ?? ফোনটাকে এভাবে ভেঙে দিলো কেনো উনি। আমার ফোনটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে,,,যতোই হোক এতোদিন আমার সাথে ছিলো আর পুরোনো যেকোনো জিনিসের দিকেই মায়া থাকবে এইটা স্বাভাবিক।
হঠাৎ এক বিকট শব্দে আমার ধ্যান ভাঙলো। ফ্লোর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানব মুর্তির উপর দৃষ্টি পরতেই আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। রোদ্দুর আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছেন যেনো উনি এক্ষুনি চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবেন।এমনেতেই দানবের ন্যায় শরীর,, জিম করে মানুষের শরীর কেমন হতে পারে তা আজ সর্বপ্রথম স্বচোক্ষে দেখলাম,, আগে টিভির মাঝে দেখেছি কিন্তু কখনো বাস্তবে দেখেনি। রোদ্দুরের চোখ থেকে নজর পরলো সোজা তার হাতের দিকে,,, হাত শক্ত করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখেছেন,।যা দেখে আমি আরেকটা শুকনো ঢোক গিললাম, কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না তার এইরকম রেগে যাওয়ার কারন। আমার জানা মতে আমিতো আর এখন কোনো রুলস্ ভাঙিনি। তাহলে?? ওনার রেগে যাওয়ার কারন কি??
রোদ্দুর এক পা, এক পা করে কায়নাতের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কায়নাত ও ভয়ের চটে এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে কায়নাত একদম বেলকনির রেলিং এর কিনারায় চলে গেছে,,যা সে খেয়াল করেনি আরেক পা পিছোতেই কায়নাত পড়ে যেতে নিবে তখনি রোদ্দুর তার ডান হাত দিয়ে খপ করে কায়নাতকে কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে,,,কায়নাত ভয়ে খিচে চোখ বন্ধ করে আছে,,, কায়নাতের দুই হাত রোদ্দুরের কাধের কাছে মুষ্ঠীবদ্ধ করে রেখেছে তবুও রোদ্দুরকে স্পর্শ করছে না।
রোদ্দুরের গরম নিঃশ্বাস আমার চোখে,, মুখে পড়ছে। রোদ্দুরের এতোটা কাছে থাকতে আমার অস্থির লাগছে। তরিঘরি নিজেকে রোদ্দুরের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালাম। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি। বুকের ভিতর টিপ টিপ আওয়াজ করছে।
রোদ্দুর কায়নাতের কাছে গিয়ে কায়নাতের গাল হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে উঠে,,
কার সাথে কথা বলছিলে? হুম?? রোদ্দুরের চোখ লালবর্ন ধারন করেছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে বোঝা যাচ্ছে। কায়নাত রোদ্দুরের এমন ভয়ানক রূপ দেখে আরো বেশী ভয় পেয়ে যায়।
রোদ্দুর কায়নাতের গাল আরো জোরে চেপে ধরে বলে,,,
কী হলো তোতাপাখি?? এখন কথা বলছো না যে??
আমার মুখ এইভাবে চেপে ধরে আছে। আমি কথাও বলতে পারছি না।আমি হাতের আঙুল দিয়ে আমার মুখের দিকে ইশারা করলাম,
রোদ্দুর বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দিলো।রোদ্দুরের কাছ থেকে কায়নাত ছাড়া পেয়ে রেগে বলে উঠলো,
কি পেয়েছেনটা কি আপনি?? হ্যা?? এইভাবে যখন ইচ্ছা তখন আমার গাল চেপে ধরবেন,,হাত মুচড়ে ধরবেন,,পানিতে ফেলে দিবেন,,রাগ দেখাবেন। এইসব কি?? আমাদের আপনি সাহায্য করেছেন ভালো কথা। কিন্তু আমাকে এইভাবে শাস্তি দেওয়ার মানে কি??কি বুঝাতে চাইছেন টা কি??
আমি কি বুঝাতে চাইছি সেইটা এখন তোমার না বুঝলেও চলবে, তোতাপাখি। তুমি এখন আমাকে উত্তর দাও,, মেঘ কে?? তোমার বয়ফ্রেন্ড?? আর হ্যা যদি বয়ফ্রেন্ড হয়েও থাকে তাকে আগে থেকে বলে দিয়ো, ও যেনো এখন তোমাকে আর ফোন না দেয়। আর নাই তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে।ওকে বলে দিও,, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। নেক্সট টাইম যদি আমি ওর সাথে তোমাকে কথা বলতে দেখেছি তাহলে,,,he will be suffer for that ( সে তার জন্য শাস্তি ভোগ করবে) and you also (এবং তুমিও)
এইদিকে কায়নাত রোদ্দুরের কথার মাথা -মন্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না। কায়নাত তো তার বন্ধু মেঘলার সাথে কথা বলছিলো। কিন্তু এই মহাশয়তো দেখি তার উলটা ভেবে কত্তো গুলো ভাষন কায়নাতকে শুনিয়ে দিলো। কায়নাত অবুঝের মতো ″ হা″ হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুরের সব কথা যেনো কায়নাতের মাথার উপর দিয়ে গেলো। কায়নাতের এমন চাহুনি দেখে রোদ্দুর শক্তভাবে বলে উঠলো,,,
কী হলো এইভাবে হেবলার মতোন তাকিয়ে আছো কেনো?? কি বললাম তা কানে যায়নি??
মি:শাহরিয়ার,,, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,,, আসলে আমি,,,,
কায়নাত আর কিছু বলতে পারলো না। এর মাঝেই রোদ্দুরের ফোন বেজে উঠলো,,,রোদ্দুর ফোনটা হাতে নিয়ে একবার কায়নাতের দিকে তাকিয়ে,,,, বেলকনি থেকে চলে গেলো।
আর এইদিকে বেচারি কায়নাত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো দোষ না করেই খামোখা তার এতোগুলো কথা শুনতে হলো। গালটাও ভিষন জ্বলছে তার। কায়নাত মনে মনে বলে উঠলো,,,
রাগী বনমানুষ একটা। আমাকে আগে জিজ্ঞাসা করলেইতো পারতি যে আমি কার সাথে কথা বলছি। আমি বলে দিতাম,,,কিন্তু এইভাবে আমার ফোনটা ভাঙার কি দরকার ছিলো,,,ফোনটার দিকে তাকিয়ে।
ঘরে এসে বিছানায় বসে আছে কায়নাত আর ভাবছে,,,,
আচ্ছা আমার ফ্রেন্ডের নামতো মেঘলা তাহলে উনি মেঘ কেনো বললো?? ওও হা!!! আমিতো ফোনে মেঘ লিখে সেভ করেছি। আর উনি হয়তো পিছন থেকে স্ক্রিনে মেঘ লেখাটা দেখে উলটা পালটা এইসব ভেবেছেন। কিন্তু উনার তাতে কি?? আমার যদি বয়ফ্রেন্ড থেকেও থাকে!!! আর আমিতো ক্লিয়ার করে বলতেই পারলাম না,,আমার ফ্রেন্ড মেঘলা ও মেঘ না।
আবার কি যেনো একটা ভেবে কায়নাত বলে উঠলো,,,, ভালোই হয়েছে ক্লিয়ার করিনি কিছু,,,যা ভাবার ভাবুক উনি তাতে আমার কি??বলেই এক ভেঙচি কাটলো।
*
*
বসে বসে কাকে ভেঙচি কাটছো,,,তুমি?? দরজার সামনে রোদ্দুর বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে কায়নাতের দিকে।
ক্,,কই কাওকে নাতো,,,আমি তো এমনি এখানে বসে ছিলাম,,,
রোদ্দুর আর কিছু না বলে কাবার্ড থেকে একটা গেঞ্জি আর ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো,,কায়নাত একবার রোদ্দুরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। রোদ্দুর ওয়াশরুমে ঢুকতেই,,কায়নাত একবার ওয়াশরুমের দিকে ঘার উচু করে উকি দিয়ে কি যেনো একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
*
*
রিফা তুই এতো ভালো কি করে সেজে থাকিস বল তো?? তুই ভুলে জাসনা রোদ্দুর তোর সৎ ভাই আর কায়নাত ও তোর সৎ ভাবি। দেখলি তো আজ কি হলো?? যেখানে আমার আজ ঐ সম্মান পাওয়ার কথা ছিলো,, সেখানে দুইদিনের একটা মেয়ে এসে কেড়ে নিলো!! How is this possible (এইটা কি করে সম্ভব.) আর তুই নাকি সেই কায়নাতের সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করছিস। আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় যে তুই আদেও আমার মেয়ে কিনা!!! রিফাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন মিসেস:শাহরিয়ার।
মাম্মা,, তুমি কি একটুও শুধরাবে না?? তুমি কি কম ভালোতে আছো নাকি?? তুমি কেনো ভাইয়াকে সহ্য করতে পারো না?? বার বার আমাকে এইসব কথা শুনিয়ে বিভ্রান্ত করো নাতো,,,, বলেই রিফা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,
আগে ছিলো এই রোদ্দুর আর এখন নতুন যোগ হলো কায়নাত,,,বলেই বিছানায় বসে পরলেন মিসেস: শাহরিয়ার।
*
আরে ভাবি কই যাচ্ছো এতো রাতে। আর ভাইয়া কই হ্যা?? নতুন বউকে রাতে নিজের থেকে আলাদা রাখে নাকি কেউ??? কথা গুলো বলছে আর হাসছে রিফা,,,
তারপর রিফা আর কায়নাত মিলে কতোক্ষন গল্প করলো,,,
________________________________________
বাবারে সত্যিই মেয়েটা মাইক। যা কথা বলতে পারে,,,, ভাবতে ভাবতে রুমের দিকে অগ্রসর হলো কায়নাত,,,,ঘরের ভিতরে ঢুকেতে নিবে তখনি কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে ধপাস করে পরে গেলো কায়নাত। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সামনে তাকালো কায়নাত,,,দেখলো লম্বা মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর। খুবি বিরক্তি লাগলো তার যেখানে যায় সেখানেই এই রোদ্দুর,,,,কবে মুক্তি পাবে এর কাছ থেকে।
এই আপনার শরীর এইটা?? নাকি একটা খাম্বে?? নিজের শরীর ঝারতে ঝারতে বলছে কায়নাত।
what do you mean by ″খাম্বা″??
আপনাকে এখন খাম্বার ইংরেজি শেখাতে গেলে শেষ মেষ দেখা যাবে আমিই পাগল হয়ে গেছি।
এইসব ফালতু কথা বাদ দাও আর এতো রাতে কোথায় ছিলে তুমি?? গম্ভির মুখে বললেন রোদ্দুর,,
কোথায় আবার রিফা আর আয়রার সাথে কথা বলছিলাম কথাগুলো বলতে বলতে কায়নাত রোদ্দুরের সামনে দিয়ে যেতে নিবে অমনি রোদ্দুর কায়নাতের কোমর আবার জড়িয়ে ধরে তার শরিরের সাথে মিশিয়ে নেয়। এইদিকে রোদ্দুরের এমন কান্ডে চোখ মারবেলের ন্যায় হয়ে যায় কায়নাতের।
একি? বার বার আমাকে এমন জড়িয়ে কেন ধরেন আপনি?? নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে কায়নাত।
রোদ্দুর কায়নাতকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,, এইবাড়ির রুলসের সাথে আরেকটা রুলস অ্যাড করে নাও মিসেস: শাহরিয়ার,,,আমি যতক্ষন বাসায় থাকবো,, তোমাকে যেনো ততোক্ষন আমার চোখের সামনে দেখতে পাই। আমাকে না বলে আমার চোখের অগোচর হবে না তুমি। যদি হও তাহলে তোমায় পানিশমেন্ট দেওয়া হবে।
কায়নাত কাপা কাপা গলায় বললো ,,,,ক্ কি পা,,,,,পানিশমেন্ট? কায়নাতের কথা শেষ হতে না হতেই রোদ্দুর যা করলো তাতে কায়নাতের চোখ যেনো তার অক্ষি কোটর বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে
#_Farju_💜