দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ পর্ব ১২

#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা

″আহ্″

″কি হলো কায়ু?? ″

আমি এক আঙুল দিয়ে গালের দিকে ইশারা করলাম। রোদ্দুর বুঝতে পারলো আমার গালে খানিকটা লেগেছে। সাথে সাথে তার মুখ কালো হয়ে গেলো,,,,আমাকে ধরে খাটে বসালো। আমার সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়লো। আমি বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে,,, সে কি করতে চাইছে বুঝতে পারছি না। রোদ্দুর আমার দুই হাত তার হাতের মাঝে চেপে ধরে কপাল ঠেকিয়ে দিলো,,,অপরাধী সুরে বললো,,,

″আমায় ক্ষমা করে দিও কায়ু″ আমি তখন নিজের রাগ কন্ট্রল করতে পারিনি। তাই তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি এখন থেকে আর এমন কোনো কিছুই করবো না আমি। শুধু ভালোবাসবো আমার তোতাপাখিটাকে। কোনো প্রকার কষ্ট পেতে দিবো না। মাথা উচু করে আমার দিকে তাকালো রোদ্দুর।

″কিন্তু! আপনি রেগে কেনো গিয়েছিলেন? সেটাইতো বুঝলাম না।″রোদ্দুর উঠে দাড়ালো। টেবিল থেকে ফোনটা এনে আমাকে একটা ছবি দেখালো। যা দেখে আমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমাকে নেহাল কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। আমি ছবি থেকে নজর সরিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললাম,,

এইটা তো,,,, রোদ্দুর আমাকে থামিয়ে বললো,,দেখো কায়ু যা হওয়ার হয়েছে। এখন আমি পুরোনো কথা টানতে চাই না।

″কিন্তু তখন আমি ইচ্ছা করে তো আর এমনটা করিনি।আমাকে ভুল বুঝবেন না।″

রোদ্দুর আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,,,মানে?

″আসলে তখন আমি বাগান থেকে বাড়ির ভিতরে ঢোকার সময় নেহালের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেই। আর নেহাল আমাকে ধরে ফেলে। কিন্তু আপনাকে এই ছবি কে পাঠালো?″

আমার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে এই ছবিটা এসেছিলো। তখন রাগের বসে আর এতো কিছু খেয়াল করিনি। কে চাইবে আমাদের মাঝে এমন ভুল বুঝাবুঝি হোক?

সেইটাতো আমিও বুঝতে পারছি না। আচ্ছা নীরা নয়তো??

কি বলছো কি কায়ু?? নীরা এমনটা করতেই পারেনা। ও খুব ভালো একটা মেয়ে।

″নীরে ভালো মেয়ে″ এই কথাটা শুনে মুহুর্তেই আমার মুখ কালো হয়ে গেলো। কিছু না বলে উঠে গেলাম বসা থেকে। যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই রোদ্দুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে আছি।

কি হলো?

মুখ ফুলিয়েই বললাম,,,, ″কিছু না″

″তাহলে এইভাবে চলে যাচ্ছিলে যে?″ আরেকটু নিজের কাছে টেনে নিলো রোদ্দুর

এমনি,,,,

″নীরার কথা বলায় এমন হলো বুঝি?″

😒😒

″আরেহ্, এইভাবে তাকানোর কি আছে।″

″কিছুই নেই। এইবার ছাড়ুনতো আমায়,,আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। চেঞ্জও তো করেননি। খালি রাগ দেখানোর বেলায় এক্সপার্ট।″

″আচ্ছা,,, সরি বউ আর এমন করে রাগ দেখাবো না। তুমি রাগ করো না, আমার লক্ষীটি। ″

রোদ্দুরের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলাম। এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিলাম দৌড়,,, দরজার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বললাম,,,″ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার নিয়ে আসছি″ কথাটা বলতে দেরি আমার দৌড় দিতে দেরি হলো না। রোদ্দুর কায়নাতের এমন কান্ড দেখে জোরে হেসে
দিলো,,,, ″পাগলী একটা!!″

!!

খাবার নিতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি,,,উফফ্ মনের ভিতর কেমন যানি একটা ভালো লাগা কাজ করছে। রোদ্দুর আমাকে সেই কতো বছর আগে থেকেই ভালোবাসে,,, এই কথাটা যতোবার মনে পড়ছে মনে হচ্ছে খুশিতে নেচে উঠি,,। সামনের ঘরটার দিকে তাকিয়েই আমার মুখের হাসি একদম মিলিয়ে গেলো। মাথায় চিন্তারা এসে বাসা বাধলো। মাথায় একজনকে নিয়ে যতো প্রশ্ন,,, ″নীরা″ মেয়েটা চাইছেটা কি!!! আমি একদম নিশ্চিত এই মেয়েই এইসব করে আমার আর রোদ্দুরের মাঝে দুরুত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু আমিতো তা এখন আর কোনোভাবেই হতে দিবো না। রোদ্দুর আমার,, শুধু আমারই থাকবেন উনি।

!!

খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। রোদ্দুরকে দেখতে পেলাম না। টেবিলে খাবারটা রেখে,, চারদিকে চোখ বুলাতে লাগলাম। রোদ্দুর মনে হয় ঘরে নেই।হঠাৎ বেলকনির দিকে নজর গেলো আমার। আবছা ছায়া দেখা যাচ্ছে কারো। বুঝতে বাকি রইলোনা, রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।

চুপিসারে পাশে গিয়ে দাড়ালাম। রোদ্দুর এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে কি যেনো ভাবছে। আধো চাঁদের আলোয় তার মুখটা আমাকে প্রচুর আকর্ষন করছে। এ যেনো এক অদ্ভুত ঘোর লাগানো নেশা। ইচ্ছে হচ্ছে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু তা আমি পারবো না।

″কি ভাবছেন এতো?″ আকাশের দিকে নজর তাক করে বললাম।

″মা বলেছিলো!! উনি চলে গেলে যখন আমার তার কথা মনে পরবে, তখন আকাশের তারার দিকে তাকাতে,,,মা নাকি ঐ তারার মাঝ থেকেই আমাকে দেখেন…!! বুঝতাম না তখন,,কিন্তু এখন বুঝি সবটাই মিথ্যা ছিলো। তবুও এই মিথ্যাটাকেই সত্য করে নিয়েছি আমি″ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উনি।

এই মানুষটাকে মন খারাপ করলে মানায় না।
তার কপালের চিন্তার ভাজ, মন খারাপের মলিন হাসি এই সবকিছুই বড্ড বেমানান।

আমি কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,,,″আমার মাঝে কি আছে?″

আচমকা এমন প্রশ্নে রোদ্দুর একটু অবাক হলো,,ভ্রুজোরা কুচকে বললো,,,″মানে?″

এইবার রোদ্দুরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক আঙুল দিয়ে আমার মাথা থেকে পা ইশারা করে দেখালাম,,,,আর বললাম,,,

″কি দেখে আমার মতো এক পিচ্চিকে এতো ভালোবাসলেন?″ ভ্রুজোড়া নাচিয়ে!

আমার কথায় রোদ্দুরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো, যা দেখে আমিও একটু মুচকি হাসলাম। রোদ্দুর হাত ধরে তার কাছে টেনে নিলো পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমার পিঠ রোদ্দুরের বুকের সাথে একদম মিশে আছে। রোদ্দুর আমার কাধে থুতনি রেখে বললেন,,,

শুনতে চাও? কেনো এতো ভালোবাসি? জানতে চাও?কেনো এতো চাওয়া তোমাকে নিয়ে?

আমি শুধু মাথা উপর নিচ করে নাড়ালাম। মনে মনে বললাম,,,″হুম খুব করে চাই জানতে″।

রোদ্দুর বলা শুরু করলেন,,,আজ কতো তারিখ আর কোন মাস? বলোতো!!

২৬-শে জুন,,

মনে পড়ে কি সেই দিনের কথা ঠিক ১২ বছর আগে এইদিনে আপনার ছোট্ট মাথাটা কিছুর আঘাতে ফেটে গিয়েছিলো?

হুম,,আপনিই তো করেছিলেন ঐরকম। কিন্তু এই তারিখ আর মাস আপনার মনে ছিলো?? বিস্মিত হয়ে বললাম।রোদ্দুর আরেকটু আকড়ে ধরে আবার বলা শুরু করলেন,,,,

″জীবনের বেস্ট উপহারটা যে সেইদিন পেয়েছিলাম,,,তাহলে কেনো মনে রাখবো না? হুম? লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। কপালের চুল গুলো একহাতে কানে গুজে নিচু সুরে বললাম,,,″হুম তাইতো!!″

রোদ্দুর আকশের দিকে তাকালো,,,,″সেইদিন বুঝিনি ঐ পিচ্চি মেয়েটা যে আমাকে এতোটা নাজেহাল করে ছাড়বে। পাগল বানিয়ে দিবে আমাকে।″ রোদ্দুর বলা শুরু করলেন,,

″খুব ভালো লাগতো সেই পিচ্চি মেয়েটাকে জ্বালাতে,,ভয় দেখাতে। ধীরে ধীরে সে যে আমার খুব কাছের একজন হয়ে উঠছিলো তা আমি তখনো বুঝিনি কিন্তু যখন সে চলে গেলো খুব কষ্ট লেগেছিলো আমার। তারপর মাস,, ধীরে ধীরে বছর অতিক্রম করে গেলো কিন্তু সেই পিচ্চি মেয়েটাকে আমি তখনো ভুলতে পারিনি। কেনো পারিনি,, তা যখন বুঝলাম ছুটে গেছিলাম একটি বার তাকে দেখার জন্য। যদি দেখা মিলে তার। গেলাম সেখানে,,, দেখা মিললো তার কিন্তু সে তখন একজন সদ্য কিশোরী। তাকিয়েছিলাম তার চোখজোড়ায় হারিয়ে গিয়েছিলাম তাতে।কাপা ঠোঁটজোড়া যথেষ্ট ছিলো আমাকে উন্মাদ করার জন্য। চেয়েছিলো মন তাকে আরো নিখুঁতভাবে দেখতে। কিন্তু তার মনে তখনো ছিলো ভয়। পারিনি সব কথা তখনি বলে দিতে তাকে।

চোখ বুজে রোদ্দুরের কথাগুলোকে অনুভব করছিলাম,,,তখনি কারো ঠোঁটের স্পর্শ পাই নিজের ডান গালে সাথে সাথে কেপে উঠি আমি। বুকের ভিতর উথাল-পাতাল শুরু হয়ে গেছে।রোদ্দুর আমাকে আরো তার সাথে মিশিয়ে নিলো,,, বলতে লাগলো…

″পাগলপ্রায় হয়ে চলে এসেছিলাম তখন। মন চাইছিলো বার বার তার কাছে ছুটে যেতে কিন্তু সঠিক সময় তখনো হয়নি। তবে নজর বন্দি করে রেখেছিলাম তাকে। তার প্রতিদিনের সব খবর আসতো আমার কাছে।

″মানে কি? আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন নাকি?″ মাথাটা পেছনে বাকা করে উপরে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

রোদ্দুর হাল্কা হেসে বললো,,, ″বলতে পারো!!″

তার হাসিতে গালে টোল পড়ে গেলো,,,সামনে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি,,,মিনমিনিয়ে বললাম,,″উন্মাদ আপনি করবেন আমাকে,,,আপনার ঐ ভয়ংকর সুন্দর হাসিতে″

″দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো কয়টা বছর। আর সময় হয়ে গেলো আমার তোতাপাখিটাকে নিজের খাচায় বন্দি করার। আর করে ফেললাম তাকে নিজের খাচায় বন্দি। আর উড়াল দিতে দিবো না,,, আটকে রাখবো নিজের কাছে। দিবো ভালোবাসা, দিবো আদর আর যতো কিছু চায় আমার পাখিটা সব দিবো আমি। শুধু থাকতে হবে আমারি পাশে। রোদ্দুর আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো থুতনি ধরে মুখটা উচু করে হাসি টেনে বললো,,,

″থাকবে কি?″

পারলাম না আর নিজেকে সামলাতে। কতো আর সামলাতে পারি নিজেকে এই ঘোর লাগানো হাসিটার মাঝে মিশে যেতে। ছুইয়ে দিলাম ঠোঁট। ৪ সেকেন্ডের মাঝেই ছেড়ে দিলাম তাকে,, হয়তো সে পেয়ে গিয়েছে তার উত্তর। জড়িয়ে ধরলো তার বুকে। ভাবতেই শরীর কেপে উঠছে ঠিক কিছু সেকেন্ড আগেই হারিয়ে গিয়েছিলাম তার ঘোর লাগানো হাসির মাঝে।

!!
!!

#চলবে

_______(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে)________

#_Farju_💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here