গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ৫০+৫১

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৫০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিক রান্নাঘরে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। কাজল এইবার নিশ্চিত তাকে বোকা দিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে। বাচ্ছার জন্যে করা সুজি সব পুড়ে গেছে। বলতে গেলে রুদ্রিক নিজেই আগ বাড়িয়েই তার ছোট্ট পরীর জন্যে সুজি রান্না করতে এসেছিলো,কিন্তু তার পরিনয়ে আজ সুজিটা পুড়ে গেলো। রান্নাঘর থেকে কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ আসতেই, রুদ্রিকের মা ও সিথি ছুটে আসলো রান্নাঘরে। রুদ্রিক একেবারে মাসুম মানুষের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সিথি রাগি কন্ঠে বলে,

—-“তোকে কি বলেছিলাম ভাইয়ূ? বলেছিলাম নাহ তুই পারবি নাহ। তুই আমার কোনো কথা শুনতে চাস নাহ। এখন আমাদের কুহুপাখি কি খাবে? ”

রুদ্রিকের মা এইবার রুদ্রিককে সরিয়ে পুড়ে যাওয়া সুজিটা ফেলে বলে,

—” আবারো রান্না করতে হবে। আমার নাত্নীটা কখন ধরে না খেয়ে আছে।
এই ছেলেকে বারণ করলে কোনো কথা শুনেনা। ইচ্ছে করে দু তিনটে দেই কানের নীচে। ”

—-” কে আমার রুদ্রিককে বকছে শুনি? ”

দিয়া শাড়িটা কোনোরকম সামলাতে সামলাতে ঢুকছে। দেখেই মনে হচ্ছে শাড়ি পড়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছে দিয়া। পিছন পিছন লাজুক দিয়ার শাড়ির আচল ধরে রেখেছে। নতুন বউ বলে কথা। এইটুকু তো করতেই হবে।

দিয়াকে দেখে সিথি ছুটে গিয়ে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,

—“পিপি তুমি এসেছো? জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি। এই দুইমাসে তো আমার কোনো খবরই রাখো নাহ তুমি। ”

দিয়া সিথির হাত ধরে বলল,

—–“কি করবো বল? নতুন সংসার। একটু গুছিয়ে নিতে হয় আর এই তোদের লাজুকের আংকেল তো একটা অলস! সারাদিন শুধু আলসেমি করে। আমাকে একটুও হেল্প করেনা।”

লাজুক কিছুটা অবাক হয়ে বলে,

—-“এইটা তুমি বলতে পারলে জান? তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি আর তুমি বাপের বাড়ি এসে আমার নামে বদনাম করছো? ইটস নট ফেয়ার। ”

রুদ্রিক ও রুদ্রিকের মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।

লাজুকের কথা শুনে সিথি মুখ চেপে হাঁসে।

দিয়া লাজুকের পেটে হাল্কা করে ধাক্কা দিয়ে বলে,

—–“সত্যি তোমাকে নিয়ে আমি পারিনা কখন কি বলতে হয় তুমি সত্যি জানোনা। ”

লাজুক হেঁসে উঠে।

রুদ্রিকের মা দিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,

—“দিয়া তুই শাড়ি পড়েছিস কেন? তুই তো শাড়ি হ্যান্ডেলই করতে পারিস নাহ। ”

দিয়া মুখটা কালো করে বলে,

—” কি করবো? শ্বাশুড়ি মায়ের হুকুম বলে কথা। নতুন বউ এই কয়েকটাদিন নাকি শাড়ি না পড়লে হবেনা হুহ। পাড়া-প্রতিবেশি খারাপ ভাববে।”

রুদ্রিক তার পিপির কাঁধে হাত রেখে বলল,

—-‘ কারো কথা শুনার দরকার নেই বুঝেছো?যেই ড্রেস পড়লে তুমি নিজেকে কনফর্মটেবল ফিল করো। সেই ড্র্বেসটাই পড়বে। রুদ্রিকের দিয়া পিপি তুমি বুঝেছো? প্রতিবেশির কথা এতো কানে দেওয়ার কোনো মানে হয়? ”

দিয়া লাজুকের দিকে তাঁকাতেই লাজুক বললো,

—“আমিও তো দিয়াকে কতবার বলি। সে কি শুনে আমার কথা? সারাদিন শুধু কি কি ভাবলো তা নিয়ে চিন্তা। মার সাথে থাকতে থাকতে তোমাদের দিয়া পিপিও সেকালের হয়ে গেছে। ”

—-“আচ্ছা এতোদিন পরে আসলাম একটা সেল্ফি না তুললে কি করে হয়? কাজলকে কেউ ডাক ভাই। কাজলকে ছাডা কি আর সেল্ফি হয়?
দিয়া এইবার ফোনটা হাতে নিয়ে সেল্ফি তুলতে গিয়েও থেমে গেলো। লাজুক দিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,

—-” কি করছো কী দিয়া তুমি কি সব ভূলে গেলে? ”

দিয়া রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে অসহায় হয়ে বলল,

——“আমি সরি রুদ্রিক।আমি সত্যি ভূলেই যাই। কি করবো বল? কাজল তো আমাদের সবার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। এখন ও না থাকলে কোনোকিছুই ভালো লাগেনা। ”

কাজলের কথা উঠে যাওয়াডক রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

—“দিয়া পিপি আমি বরং একটু উপরে যাই। আমার
কুহুর এখনো খাওয়া হয়নি। ”

রুদ্রিক তার মায়ের থেকে সুজির বাটিটা নিয়ে উপরের দিকে চলে গেলো।

মুহুর্তেই পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেলো। রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে সিথি চোখের জল ফেললো।

রুদ্রিক রুমে গিয়ে দেখে তার ছোট্ট মেয়ে কুহু কাঁদছে। রুদ্রিক তার মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামাতে থামাতে বলে,

—-“ওরে আমার মা টা খুব খিদে পেয়েছে তাইনা? এইতো বাবা এসে গেছে। দাঁড়াও এখুনি তোমাকে খাওয়াচ্ছি নাহ হলে তোমার মা তো আমাকে আবার বকা দিবে নাহলে।”

রুদ্রিক তার মেয়েকে খুব যত্ন করে খায়িয়ে দিয়ে, কাজলের কাছে গিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,

—“এইযে ম্যাডাম আপনার মেয়েকে সময়মতো খায়িয়ে দিয়েছি হুহ। এখন কিন্তু আমাকে আর বকতে পারবি নাহ বুঝেছিস? মেয়েটাযে কাঁদছিলো সে খেয়াল আছে নিজের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছিস। ”

রুদ্রিকের করা কোনো কথাই কানে যাচ্ছে নাহ কাজলের। কেননা সে তো এখন কোমায়। কোমায় থাকা রোগী কী কখনো কোনো কথা বলতে পারে? কিংবা কোন কিছু শুনতে পারে?

হ্যা কাজলের ঘটে যাওয়া সেই র্ঘটনার ১০ মাস হয়ে গেছে। কাজল এখন কোমায় রয়েছে। রুদ্রিক নিজের ঘরেই চিকিৎসার সকল সরঞ্জাম এনে কাজলের চিকিৎসার ব্যবস্হা নিজের ঘরেই করে রেখেছে রুদ্রিক। এই ১০ মাসে সবকিছুই পাল্টে গেছে। রুদ্রিকের বিশ্বাস কাজল ঠিক সুস্হ হয়ে ফিরবে।

দিয়া ও লাজুকের বিয়ে হয়েছে ২ মাস হলো। যদিও দিয়া কাজলকে ছাড়া বিয়েটা করতে চাইনি,কিন্তু রুদ্রিকের জন্যে ঘরোয়াভাবে করে নিয়েছে।

কাজলের থেকে কোনোপ্রকার উত্তর না পেয়ে, রুদ্রিক আশাহত হয়। তখনি তার কানে তার মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসে। রুদ্রিক ছুটে তার মেয়ের কাছে গিয়ে তার মেয়ের কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১০ মাস ধরে রুদ্রিকই তার মেয়েকে সামলিয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক ও কাজলের মেয়ের নাম কুহু শেখ। কাজলের নামের সাথে মিলিয়েই রুদ্রিক তার মেয়ের নাম রেখেছে।

মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে কাজলের দিকে এক পলক তাঁকিয়ে রুদ্রিক বারান্দায় চলে গিয়ে, রুদ্রিক এক প্যাকেট সিগারেট বের করে। স্মোকিং করতে করতে
গুন গুন করে গাইতে থাকে,

সবকিছু বদলে গেলো এক রাতের নিমিষে
তুমি হারিয়ে যাবে বলেছিলে কবে?
আজ তোমায় হারিয়ে আমি একা এই রাতে
ভাবনাতে তোমাকে খুঁজেছি কি তবে?

ভাবি তুমি আসবে ফিরে
ধরবে হাতগুলো
বলবে তুমি কেঁদো না
ফিরে এসেছি এই দেখো

আর বলবে কেঁদো না তুমি
এবারই তো শেষ কান্না
বসে আছি আমি তোমার জন্যে…
আসোনা, ফিরে আসোনা
আসোনা, ফিরে আসোনা

ফিরে এসেছি, ভালোবেসে
তোমায় আমি প্রতিটিবার
সব ব্যথা ভুলে, সব কষ্ট ফেলে
এসেছি আজি আমি তোমার কাছে

তবু তুমি নেই আজ আমার পাশে
হারিয়ে গেছো তুমি বহুদুরে

রুদ্রিকের গানের প্রতিটা বেদনা প্রতিটা সুর তার কাজলকে ঘিড়ে। আজ যেনো রুদ্রিক তার গানের মাধ্যমে তার এতোদিনের জমানো কষ্টগুলো প্রকাশ করছে। আজ সত্যি কাজল থেকেও যেনো নেই। আজ কাজল রুদ্রিকের কাছে থেকেও বড্ড দূরে

দরজার বাইরে থেকে সবকিছুই শুনতে পারছে সিথি। সাদি সিথির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

—“আজ রুদ্রিকের গানের প্রতিটা শব্দের পিছনে রয়েছে এতোদিনের লুকিয়ে থাকা কান্না। যা রুদ্রিক শক্ত মুখে এতোদিন সহ্য করে গেছে। আমাদের রুদ্রিক কতটা চাপা স্বাভাবের হয়ে গেছে তাইনা? ”

সিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

—-“আমার ভাইটা নিজের কষ্টগুলো লুকিয়ে কীভাবে দিব্যি ঠোটে হাঁসি ঝুলিয়ে থাকে তাইনা? ভাবতে খুব অবাক লাগে। ”

সিথির কথা শুনে সাদি মাথা নাড়ায়।

গানটা গাইতে গাইতে রুদ্রিক কাজলের কাছে গিয়ে, কাজলের হাতদুটো ধরে কান্নার সুরে বলে,

—‘জানেমান রে আমি আর পারছি নাহ সত্যি। সারাদিন মিথ্যে হাঁসি ঝুলিয়ে রাখতে রাখতে আমি সত্যি আজ ক্লান্ত। আমার যে কতটা কষ্ট হয় আমি সত্যি বলে বুঝাতে পারবো নাহ। আচ্ছা এমনটা তো আমরা কেউ আশা করেনি বল? আমাদের একটি মিষ্টি সংসার হওয়ার কথা ছিলো তাইনা? তাহলে আজ এইরকমটা হলো কেন বল নাহ কাজল? আজ ১০ টা মাস হয়ে গেলো আমাদের মেয়ে এখনো তোর স্পর্শ পায়নি? কেনো হলো এইসব? সবকিছুই যেনো আজ এলোমেলো হয়ে গেলো।”

আফসোস আজকে রুদ্রিকের আর্তনাদ আজ কাজলের কানে পৌঁছাচ্ছে নাহ।

রুদ্রিক কাজলের হাত জোড়া নিজের গালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে।

_____________

রুদ্রিক, সিথি ও সাদি রুদ্রিকের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ডক্টর কাজলকে চেক করছে। প্রতি-সপ্তাহে ডক্টর এসে কাজলকে চেক করে যায়। তখনি হঠাৎ ডক্টর চিৎকার করে উঠে।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৫১
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কাজল ধীরে ধীরে রেসপন্স করছে! সত্যি এইটা মিরাক্কাল। ডক্টর খানিক্টা চিৎকার করেই কথাগুলো বলতেই,রুদ্রিকসহ সকলে ভিতরে চলে গেলো।
রুদ্রিক ভিতরে গিয়ে দেখে কাজলের হাতের আঙ্গুলগুলো আস্তে আস্তে কোনরকম নড়ে উঠছে। দিয়া নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেলে খুশিতে। সিথি তো খুশিতে কেঁদেই উঠে। রুদ্রিকের বাবা-মা সহ, তনয় ছুটকিও কাজলের বাবা-মা ও চলে আসে। কাজলের মা তার স্বামীকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। নিজের চটপটে মেয়েকে এইভাবে নড়তে দেখে তাদের যেন খুশির অন্তর নেই। রুদ্রি ধীরে ধীরে এগিয়ে কাজলের কাছে গিয়ে বসে। রুদ্রিক বুঝতে পারছে কাজলের নিজের চোখজোড়া খুলতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। রুদ্রিক কাজলের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,
‘জানেমান আস্তে ধীরে নিজের চোখ খোলার চেস্টা কর। আমি জানি তুই পারবি। একটিবার খুল প্লিয। ‘

খানিক্টা অসহায় নিয়ে কথাগুলো বললো রুদ্রিক।

রুদ্রিকের কথা শুনে কাজল আস্তে আস্তে করে নিজের চোখজোড়া খুলার চেস্টা করে। সর্বপ্রথম রুদ্রিককেই সে দেখতে পায়। রুদ্রিককেই দেখেই কাজলের অন্তরটা জুড়িয়ে যায়।
এতোদিন পরে কোমায় থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে কাজলের যেনো এতোদিনের সব দুঃখ কষ্ট নিমেষেই যেনো শেষ হয়ে গেলো।

সবার মুখে ফুটে উঠলো। ছুটকি খুশিতে তনয়কে জড়িয়ে ধরলো। তনয় হাঁসলো।

কাজলকে চোখ খুলতে দেখে রুদ্রিক কাজলের মুখে অজস্র চুমু খেলো। এতোদিনের অপেক্ষা অবশেষে তাদের শেষ হলো। তার কাজল তার শুভ্ররাঙাপরী আবারোও সুস্হ হয়ে উঠেছে, রুদ্রিকের খুশি দেখে কে। কাজল ও তার রুদ্রিকের ভালোবাসা ভরা প্রতিটি স্পর্শ মনের গভীর থেকে অনুভব করছে। রুদ্রিক কাজলের হাতজোড়ায় চুমু খেয়ে বলে,

‘আমি আজ কতদিন পর এতোটা খুশি হয়েছি তোকে বলে বুঝাতো পারবো নাহ কাজল। আমার হাত এখনো কেঁপে চলেছে অনাবরত। তুই আজ ঠিক দশ মাস পর আবারো চোখ খুলে তাঁকিয়েছিস। ‘

রুদ্রিকের চোখ থেকে দুফোটো জল গড়িয়ে পড়লো।

কাজল তা সযত্নে মুঁছিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

‘একদম কাঁদবে নাহ বুঝেছো? তুমি দিন দিন মেয়েদের মতো ছিচকাদুনে হয়ে যাচ্ছো বুঝলে? ‘

কাজলের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠে। কাজল কোনরকম উঠতে চাইলে ডক্টর তৎক্ষনাক কাজলকে থামিয়ে বলে,

‘কি করছেন আপনি? এখনো আপনার শরীর ঠিক হয়নি। দীর্ঘ দশ মাস পরে আপনি চোখ খুলেছেন। এইসময় আপনার বেশি কথা বলা ঠিক হবেনা। তাছাড়া আপনার এখনো রিষ্ক আছে। ‘

ডক্টরের কথায় রুদ্রিক কাজলের দিকে কড়া চোখে তাঁকিয়ে বলে,

‘তোকে কে উঠতে বলেছে? ‘

‘কিন্তু আমার মেয়েটা? ও কোথায়? কতদিন হলো আমার মেয়েটাকে দেখিনা। আমি সেই কবে দেখেছিলাম। কোথায় আমার মেয়ে? ‘

কাজলের কথার মাঝেই সিথি কুহুকে নিয়ে কাজলের কোলে দিয়ে বলে,

‘এই নে তোর মেয়ে। দেখেছিস কতটা বড় হয়ে গেছে।
একদম তোর মতো দেখতে হয়েছে কিন্তু। ‘

কাজল তার মেয়েকে কাছে পেয়ে আদরে আদরে তার মেয়েকে ভড়িয়ে দেয়। পুরো ফুটন্ত গোলাপের মতো দেখতে হয়েছে তাদের ছোট্ট মেয়ে। মাশা-আল্লাহ বলে মেয়ের কপালে চুমু খায় কাজল। গোলাপের মতো টুকটুকে মেয়েটাকে দেখে কাজলের প্রাণটা যেনো জুড়িয়ে যায়।
মেয়েটাও তার মায়ের স্পর্শ পেয়েই খিলখিল করে হাঁসতে লাগলো। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে আজ সে অনেক খুশি। কিন্তু আমার সোনটার নামটা কি? কাজল নিজে নিজে প্রশ্নটা করে। কাজল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকাতেই রুদ্রিক বলে উঠে,

‘আমাদের মেয়ে কুহু শেখ। ‘

কুহুপাখি কি সুন্দর নামটা। কাজল তার কলিজার টুকরোকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। রুদ্রিকও প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে কাজল ও তার মেয়ে কুহুকে জড়িয়ে ধরে বুকে।

সবাই মুগ্ধতা নিয়ে ছোট্ট পরিবারটাকে দেখছে। সত্যি কতটা সুন্দর! সাদি এগিয়ে এসে দিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘এই সুন্দর মুহুর্তের একটা সেল্ফি তুললে কেমন হয় দিয়া পিপি? ‘

‘একদম পারফেক্ট ‘

কথাটি বলে দিয়া নিজের ফোনটা বের করতে নিলে, লাজুক তাতে বাঁধা দিয়ে বলে,

‘উহু আজকে সেল্ফি নয়। আজকে একটা ফ্যামেলি পিকচার হয়ে যাক শুধুমাত্র রুদ্রিক, কাজল ও তাদের ছোট্ট মেয়ের। ‘।

লাজুকের কথায় সায় দিয়ে দিয়া টুক করে কয়েকটা পিক তুলে ফেললো। রুদ্রিক -কাজল ও তাদের মেয়ের ছবিগুলো ক্যামেরাবন্দী হয়ে গেলো।

ডক্টর কাজলের কাছে এসে বললেন,

‘ম্যাম এখন কিন্তু আপনার ব্যাড থেকে উঠলে একদম চলবে নাহ। এখনো আপনার অনেক টেস্ট বাকি রয়েছে। মিঃ রুদ্রিক আপনি কালকে আপনার ওয়াইফে কালকে চেকাপ করাতে নিয়ে আসবেন। ‘

‘ওকে ডক্টর। ‘

____________

তনয় গেটের কাছে আসতেই ছুটকি দৌড়ে তনয়ের সামনে এসে বলে,

‘তুমি কী চলে যাচ্ছো তনয় ভাই? ‘

‘কি মনে হয়? ‘

‘চলে যাচ্ছো। থাকবেই নাহ বা কেন? তুমি তো ঢাকায় এসেছিলে আপুনিকে দেখতে। আপুনি এখন সুস্হ হয়ে গেছে। এখন তো চলেই যাবে। আচ্ছা তুমি আপুই কে কি এখনো ভালোবাসো? ‘

খানিক্টা অভিমান নিয়ে কথাগুলো বললো।

ছুটকি তনয় রাগ করলো নাহ বরং হাঁসলো। হেঁসেই বললো,

‘ছুটকি একটা কথা কী জানো? আমি কাজলকে ভালোবাসিনি। আমি ভেবেছি আমার বিরহ ভরা জীবনে কাজলের কাছে আমি নিজের সুখ খুঁজে পাবো তাই কাজলের কাছে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু এইটা বুঝে গেছি রুদ্রিকের থেকে কাজলকে কেউ ভালোবাসতে পারবে নাহ। কেউ নাহ। কাজল শুধুমাত্র রুদ্রিকের জন্যে। আর আমার ভালোবাসার কথা বলছো? এইবার আমি নিজের জীবনের সঠিক সিদ্ধান্তটা নিবো। ‘

কথাটি বলে তনয় সামনের দিকে এগোতে নিলে, ছুটকি বলে উঠে,

‘তোমার কথাটা বুঝলাম নাহ। ‘

‘আমি বোধহয় তোমার ভালোবাসার মায়ায় সত্যি পড়ে গেলাম। ‘

কথাটি বলে তনয় আর দাঁড়ালো নাহ চলে গেলো। ছুটকি মুখে হাত দিয়ে লাফিয়ে উঠলো। আজকে একের পর খুশির খবর আসছে।

______

কাজল মেয়েটাকে ফিটার খাওয়াতে গিয়েও পারছে নাহ। মেয়েটা কেঁদে উঠছে।

‘সত্যি কাজল তুই কিচ্ছু পারিস নাহ। অকর্মা হয়ে গিয়েছিস। ‘

‘ওহ আচ্ছা তাইনা অকর্মা হয়ে গেছি আমি? নিজে কি পারো হুহ? ‘

‘ওকে এখনি দেখাচ্ছি। ‘

রুদ্রিক এগিয়ে এসে, কাজলের থেকে ফিটারটা নিয়ে, তার মেয়েকে সযত্নে খাওয়াতে শুরু করে দিলো। মেয়েটাও বাবাকে দেখে টুকটুক করে খেয়ে নিলো। বাবা-মেয়ের কান্ড দেখে আমি বললাম,

‘ওরে বাবা! এতোক্ষন কি কান্না আর এখন বাবা আসাতেই সব কান্না শেষ? ‘

কাজলের কথা কুহু কি বুঝলো কে জানে? কুহু হেঁসে দিলো।

রুদ্রিক কিছুটা ভাব নিয়ে বললো,

‘দশ মাস ধরে এই কাজ আমি করছি। সো তুই আমাকে চ্যালেন্জ দিতে আসবি নাহ হুহ। ‘

কাজল মুখ বেঁকিয়ে বলল,

‘ওকে আমার তাহলে কি কাজ? আমাকে তো কারো লাগবে নাহ। তাহলে আমি বরং চলে যাই। ‘

কথাটি বলে কাজল চলে যেতে নিলে, রুদ্রিক কাজলের হাত ধরে আমাকে কোলে বসিয়ে বলে,

‘একদম কোথাও চলে যাওয়ার কথা বললে ঠ্যাং খুঁড়া করে দিবো। আমার থেকে দূরে কোথায় যেতে পারবি নাহ। ‘

‘যদি হারিয়ে যাই? ‘

আমার প্রশ্নে রুদ্রিক কিছুক্ষন থেমে বলে,

‘এইসব কি প্রশ্ন করছিস কাজল? ‘

‘তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। আগে বলো যদি কোনদিন হারিয়ে যাই তাহলে?’

‘হারিয়ে যেতে দিবো নাহ। খুঁজে হলেও বার বার তোকে ফিরিয়ে এনে রুদ্রিকের দারপ্রান্তে এসে দাঁড় করাবো। ‘

রুদ্রিকের সোজা উত্তর।

‘যদি ফিরিয়ে আনতে না পারো তাহলে? ‘

‘তাহলে তোর পিছনে পিছনে চলে যাবো। তবুও তোকে আমার থেকে কোনদিন আলাদা হতে দিবো নাহ জানেমান।’

আরেকটা কথা সবসময় মাথায় রাখবি কাজল ছাড়া রুদ্রিক কিচ্ছু নাহ। রুদ্রিকের শুভ্ররাঙাপরী আছে বলেই রুদ্রিক রয়েছে। ‘

কথাটি বলে রুদ্রিক কাজলের কপালে ভালোবাসার পরম একেঁ দিলো। কাজলের শরীর শিউরে উঠলো ভালোলাগার স্পর্শে।

‘রুদ্রিক একটা গান গেঁয়ে শুনাবে? ‘

‘হঠাৎ? ‘

‘অনেকদিন শুনেনা। আজকে শুনতে চাই। ‘

রুদ্রিক কাজলের আবদার ফেলতে না পেরে গিটারটা নিয়ে প্রানভরা নিঃশ্বাস নিয়ে কাজলকে ডেডিকেট করে গাইতে লাগলো,

কাজল তুই আমার কাছেই থেকে যাস বরং….

কেননা……

আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়

তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়

রুদ্রিকের গান শুনে আনমনে কাজল তার সেই ‘গোধূলী বেলার স্মৃতি ‘ ডাইরিতে লিখালিখি করতে লাগলো।

রুদ্রিক গানটা থামিয়ে আমার পাশে বসে বললো,

‘কি এতো লিখছিস আমাকে বলবি? ‘

‘এখন নাহ। যখন সময় আসবে তখন তুমি নিজেই দেখতে পাবে। ‘

‘অনেক হয়েছে। এখন ঘুমাতে হবে। ‘

রুদ্রিক কাজলজে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও বিছানায় শুয়ে পড়ে। তাদের দুজনের মাঝখানে রয়েছে তাদের ছোট্ট পরী কুহু।

রুদ্রিক কাজল ও তার কুহু পরীর হাতদুটো নিজের হাতেত মুঠোয় নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। আজ সে বড্ড নিশ্চিন্ত। কাজল ও রুদ্রিক ও তার মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

মাঝরাতে রুদ্রিকের ঘুম ভাঙ্গতেই রুদ্রিক বিছানায় তাঁকিয়ে দেখে কাজল নেই। কাজল কোথায় গেলো? তখনি তার কানে মৃদ্যু চিৎকার ভেঁসে আসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here