মায়াবিনী_মানবী পর্ব ৩+৪

#মায়াবিনী_মানবী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_০৩

বিয়ের পর একটা অপরিচিত যুবকের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানোর মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আর দুটো নেই।জুইঁর যতোদূর মনে পড়ে হুমায়ুন আহমেদ এমনি একটা কথা বলেছিলেন।জুইঁ ভাবছে জুইঁ যদি লেখিকা হতো তাহলে সেও লেখত-“অপরিচিত একটা যুবকের সঙ্গে হুডি তোলা রিকশায় চাপাচাপি করে বসার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আর তৃতীয়টি নেই”।

জুইরঁ এমন মনোভাব এর কারণ হলো প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলআবি জুইঁ কে নিয়ে ঘুরছে।জুইঁর কাছে এই স্থানগুলো অপরিচিত।কিন্তু তাও জুইঁ এতক্ষন ভালোই উপভোগ করছিল।

রিকশায় চড়তে ভালোবাসে।এমন ধরনের মানুষ গুলো অনেক আরামপ্রিয় হয়ে থাকে।জুইঁ ও নিজেকে তাদের তালিকাভুক্ত একজন ই মনে করে।কিন্তু বিনামেঘে বৃষ্টিপাত বলে একটা কথা আছে।এই বিনামেঘে বৃষ্টিপাতই এখন জুইঁর শত্রু রূপ ধারণ করেছে।

সময়টা ১টা বেজে ১৭ মিনিট। সূর্য তার তাপে তপ্ত করছিল চারপাশ।ঠিক তখনই হলদে রোদের আলোয় জমঝম শব্দে বর্ণহীন বৃষ্টি কণার আবির্ভাব ঘটল।রিকশাচালক তার রিকশা থামিয়ে হুডি টা টেনে তুলে দিলেন।নিজে মাথায় একটা সাদা পলিথিন দিয়ে নিলেন। আলআবি তখন আগ বাড়িয়ে তার কাছ থেকে একটা পলিথিনের আবদার করল।আর রিকশাচালক ও বড় একটা নীল রঙা পলিথিন বের করে জুইঁ আর আলআবির কোমড় অব্দি ঢেকে দিলেন।নীল রঙা পলিথিন টাই মূলত জুইঁর অস্বস্তির প্রথম ও প্রধান কারণ। এই পলিথিন টার জন্যেই জুইঁ কে আলআবির সাথে একটু চেপে বসতে হচ্ছে।

যতবারই জুইঁর বাহুর সাথে আলআবির বাহুর ঈষৎ ছোঁয়া লাগছে ততবারই জুইঁ হালকা নড়েচড়ে উঠছে।

এভাবে প্রায় ১৫-২০ মিনিট যাওয়ার পর বৃষ্টি থেমে যায়।জুইঁ তড়িঘড়ি করে পলিথিন টা সরাতে ই আলআবি বলে ওঠে…

–কি সমস্যা? এটা সরাচ্ছ কেন?

জুইঁ নড়েচড়ে আলআবির থেকে একটু দূরত্বে গিয়ে বলল…

–আপনার চোখের এই চশমা টায় পাওয়ার আছে নাকি শুধু স্টাইলের জন্য?মনে তো হচ্ছে পাওয়ার আছে।

আলআবি জুইঁর দিকে কিছুটা রাগান্বিত ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলল…

–এটা আমার প্রশ্নের উত্তর ছিল?

হঠাৎ করেই জুইঁ আলআবির কন্ঠে আর চোখে ক্রোধের আভাস পেয়ে মিনমিনে স্বরে বলল…

–বৃষ্টি কি এখন আছে নাকি?শুধু শুধু গায়ের উপর পলিথিন দিয়ে রাখব কেন?

আলআবি পূর্বের ন্যায় আবার ও বলতে লাগলো…

–বাইরে এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে।চোখে দেখতে না পেলে আমার চশমাটা নিয়ে দেখে নাও।আর ফারদার আমি কোন প্রশ্ন করলে একদম তেড়া তেড়া উত্তর দিবে না।যা জিজ্ঞেস করবো সোজাসাপটা তার জবাব দিবে। আমার সঙ্গে তেড়ামি করা আমি মোটেও পছন্দ করি না।

আলআবির কথায় জুইঁর মনে কিছু টা ভয় ঢুকে গেল।কারণ এভাবে একমাত্র তার বাবা অর্থ্যাৎ ওলিদূন সাহেব ই কথা বলে থাকেন।এই প্রথম জুইঁ কাউকে দেখল যার মধ্যে অনেকটা তার বাবার রাগের ধাঁচ বিদ্যমান।

জুইঁ যখন আনমনেই কথা গুলো ভাবছিল তখন রাস্তার স্প্রিড ব্রেকার এর সামনে আসতেই জুইঁ হালকা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যেতে নেয় আর আলআবি তখন একহাত জুইঁর হাঁটুর উপর দিয়ে জুইঁ কে ধরে নেয়।জুইঁ সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলেও নেয়।

আলআবি রিকশা চালককে কোন একটা রেস্টুরেন্ট এর নাম বলতেই রিকশা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়।জুইঁ আলআবি কে জিজ্ঞেস করে…

–আমরা কি এখানে খেতে এসেছি?

আলআবি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে জুইঁ কে উদ্দেশ্য করে বলল…

–তোমাকে দেখছি বোকা ভাবাটা বৃথা যায় নি।রেস্টুরেন্টে যখন এসেছি, অবশ্যই খাওয়ার উদ্দেশ্য ই এসেছি।

আলআবি জুইঁকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল..

–আচ্ছা তোমার কি মনে হয় রেস্টুরেন্টে মানুষ কেন আসে?

জুইঁ জবাব দিল…

–কেন আবার? গার্লফ্রেন্ড আর বয়ফ্রেন্ড মিট করতে আসে।আমাদের কলেজের সব মেয়েরাই তো করে।

একেবারে শেষের সিটে গিয়ে ওরা দুজন বসে পরলো।তখন আলআবি জুইঁ কে বলল…

–ওহ তার মানে তুমিও করো।

জুইঁ তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো…

–না না না।একদম না।এসবের ধারে কাছেও যাই নি আজ পর্যন্ত।এসব করলে আব্বু একেবারে মেরেই ফেলবে।

–আব্বু কে খুব ভয় পাও তাই না?

জুইঁ উপর নিচ মাথা ঝুলিয়ে মুখ দিয়ে বলল…

–হুম।

আলআবি মুখে কিঞ্চিৎ বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো…

–এখন থেকে ভয় কে জয় করা শিখিয়ে দিব।

বলেই জুইঁকে একটা চোখ টিপ মারল।আলআবির এরূপ কর্মকান্ডে জুইঁ হকচকিয়ে উঠলো।তখন একটা ওয়েটার এসে ওদের টেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে পরল।আলআবি দুই প্লেট কাচ্চি অর্ডার করে ওয়েটার কে বিদায় করল।ওয়েটার চলে যেতেই খেয়াল করলো জুইঁ মাথা নিচু করে বসে আছে। আশেপাশেও তাকাচ্ছে না।জুইঁ যে লজ্জা পাচ্ছে তা আলআবি বুঝতে পেরে আর কোন কথা বলল না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজন বাড়ির পথে রওনা দিল।এবার আর আলআবি রিকশা নিল না।উবারে কল করে উবার ডেকে নিল।

বাড়িতে এসে জুঁই ফ্রেশ হয়ে মিসেস পারভীন এর কাছে চলে গেল।তিনি লিপির সঙ্গে কিচেনে রান্না শেষে সব গোছগাছ করছিলেন।মিসেস পারভীন জুঁইকে দেখে বললেন…

–কিরে ঘোরাফেরা কেমন হলো?

জুইঁ প্রতিউত্তরে হালকা হাসি দিয়ে বলল…

— এইতো ভালোই ছিল। তবে এখানে রাস্তাঘাটে মানুষ আর গাড়িঘোড়ার কোলাহল অনেক বেশি।

–হ্যাঁ।তা তো হবে ই।রাজধানী বলে কথা।(মিসেস পারভীন)

–পরের দিন কিন্তু আমরা সবাই একসাথে ঘুরতে যাব।একা একা ঘুরতে কি কোন মজা আছে নাকি?(জুইঁ)

–আচ্ছা সেটা দেখা যাবে। এখন আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি। খেয়ে নে।(মিসেস পারভীন)

–আন্টি খেয়ে এসেছি বাইরে থেকে।এখন আর খেতে পারব না।(জুইঁ)

–আচ্ছা যা তাহলে।রুমে গিয়ে রেস্ট নে একটু।

জুইঁ রুমে এসে কিছু সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কিছু সময়ের মধ্যে ই জুইঁ ঘুমিয়ে পড়ল।

লোমশ জাতীয় কিছুর স্পর্শে জুইঁর ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলতেই জুইঁ দেখল একেবারে ধবধবে সাদা বর্ণের লম্বা লম্বা পশমযুক্ত একটা কুকুর ওর হাতের কাছে ঘেঁষাঘেষি করছে।জুইঁ একলাফে শোয়া থেকে উঠে খাটের এককোণায় গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে পরলো।কুকুর টা ধীরে ধীরে জুইঁর কাছে আসতেই জুইঁ হাত দিয়ে কুকুর টাকে দূরে যেতে বলল আর মুখ দিয়ে বলল…

–হুঁশ কুত্তা! হুঁশ! যাহ্! যাহ্!

জুইঁর কথায় কুকুর কি বুঝলো তা জুইঁর জানা নেই।কিন্তু কুকুর টা আস্তে আস্তে জুইঁর দিকে অগ্রসর হতে ই আছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জুইঁ কোনমতে ওড়না টা গায়ে দিয়ে আন্টি বলে জোড়ে চেচিয়ে একদৌড়ে মিসেস পারভীন এর রুমের উদ্দেশ্য রওনা দিল।জুইঁর পিছু পিছু কুকুরটাও কিছু না বুঝেই দৌড়াতে লাগলো। জুইঁ কুকুর টাকে ওর পিছু দৌড়াতে দেখে আরো ভয় পেয়ে গেল।জুইঁ আরো জোড়ে দৌড়াতে গিয়ে আলআবি কে মাঝ পথে দেখে আলআবির পিছনে লুকিয়ে পরলো।

কুকুর টা জুইঁর পায়ের কাছে আসতেই জুইঁ ভয়ে আম্মু বলে শব্দ করে আলআবির সামনে এসে পরল।কুকুর টাও আবার জুইঁর পায়ের কাছে এসে পরল।পুনরায় জুইঁ আলআবির পিছনে চলে গেল।মুখ দিয়ে বলতে লাগলো…

–ওই কুত্তা হুঁশ! হুঁশ!

হুট করে আলআবি হাঁটু গেড়ে বসে পরল।আর কুকুর টাকে কোলে নিয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলো।জুইঁ কুকুর টাকে আলআবির কোলে দেখে বলল…

–ধরে রাখেন।কুত্তা টা ছাড়বেন না কিন্তু।

আলআবি জুইঁর কথায় একটু রাগ হয়ে বলল…

–হোয়াট ননসেন্স! কুত্তা কি?ওর নাম বেনজি।বেনজি বলে ডাকবে ওকে।

–বেনজি আর গেঞ্জি যাই হোক না কেন এইটারে ভালো করে ধরে রাখেন।একদম ছাড়বেন না কিন্তু। আমি আমার রুমে যাব তারপর ছাড়বেন।

জুইঁ আলআবির পিছন থেকে সরে আসতেই আলআবি বেনজি কে কোলে নিয়ে জুইঁর সামনে দাঁড়িয়ে ওর পথ আটকে দিল।একটা ইবলিশ রূপি হাসি দিয়ে জুইঁ কো বলল…

–বাহ্ তোতাপাখি দেখি আমার বেনজি কেও ভয় পায়।তো আমার বেনজি তোমার রুমে ঢুকে গেল কিভাবে?

–আমি কিভাবে জানবো।আপনার এই কুত্তা কেই জিজ্ঞেস করেন কিভাবে আমার রুমে ঢুকে পরল।(জুইঁ)

আলআবি এ বার রেগে গিয়ে বলে উঠলো…

–বলছিনা একবার ওকে কুত্তা বলবে না।আর গেঞ্জি কি হ্যাঁ?সম্মান দিয়ে কথা বলো।আর ওকে সরি বলো।সে সরি।

জুইঁ তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল…

–এহ্।কোথাও দেখছেন কুকুর কে সম্মান দিয়ে কথা বলে।

আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে বেনজিকে ছেড়ে দিল।তখনই বেনজি জুইঁর পায়ের কাছে এসে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল।জুইঁ এটা দেখা মাত্রই আ মূলক একটা শব্দ করে একদৌড়ে নিজ রুমে চলে আসল।এসেই দরজা আটকে দিল।

#পর্ব_০৪ সকালবেলা নাস্তা শেষ করে ডাইনিং টেবিলে বসে ই মিসেস পারভীন,লিপি আর জুইঁ চা খাচ্ছিল।সিরাজ সাহেব নাস্তা করেই কার সঙ্গে যেন দেখা করতে চলে গিয়েছেন।আলআবি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একবার টেবিলে চোখ বুলিয়ে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল… –মা!আমাকে ডেকে দাও নি কেন?কতো ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে জানো? –আমাকে বলেছিস একবারও?না বললে আমি জানব কি করে(মিসেস পারভীন) আলআবির কন্ঠ শুনতে পেয়ে জুইঁ পিছনে ফিরে তাকালো।আলআবি শুভ্র বর্ণের শার্ট কালো পেন্টের সঙ্গে ইন করে পড়েছে। তার হাতেই কালো কোর্ট টা ঝুলছে।তার বেশভূষা প্রকাশ করে দিচ্ছে আজ সে অফিসের জন্য তৈরী হয়েই নেমেছে। জুইঁর কাছে ক্ষনিকের জন্য মনে হলো আলআবি যতটা না আদবহীন তার চেয়ে বেশি সুদর্শন।আলআবি যদি তার ব্যবহারের দিক থেকে আরেকটু পারফেক্ট হতো তাহলে জুইঁ ও নিশ্চয়ই আলআবি কে পছন্দ করে ফেলত।কিন্তু আল্লাহ তো আর সবাই কে সব দিয়ে পরিপূর্ণ করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে না।মানুষের মধ্যে কিছু না কিছুর অভাব তো থাকবেই। আলআবি এসে মিসেস পারভীন এর পাশে বসে পড়ল।আলআবির সামনেই জুইঁ বসে আছে। আলআবি কে সামনে বসতে দেখে জুইঁ একটু নড়েচড়ে বসল।আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে বলল… — রাতের ঘুম কেমন হলো তোমাদের? মিসেস পারভীন ছেলের কথা শুনে বলল… — ঘুম বেশ ভালো হয়েছে। তা হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন কেন করলি। –এমনি করলাম। নাস্তা দেও।আমার লেট হয়ে যাবে। আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি ছুড়ে দিল।এই হাসি দেখেই জুইঁর কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। কালরাতে জুইঁ বেনজিকে দেখার পর থেকে রুমের থেকেই আর বের হয়নি।দরজা ভিতর থেকে লক করে রেখেছিল।রাতের খাবার খাওয়ার জন্য মিসেস পারভীন এসে জুইঁ কে নিচে নিয়ে যায়।জুইঁ ভয়ে ভয়ে কোনো মতন খাবারটা খেয়েই নিজের রুমে ছুটে যায়। রুমে আসতেই জুইঁর মনে হলো আতঙ্ক এসে স্ব জোরে তাকে ধাক্কা মারল।বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর আলআবি বসে বসে বেনজির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জুইঁ কে দেখতে ই আলআবি বলে উঠলো… –হে বিউটিফুল! এতো তাড়াতাড়ি ডিনার শেষ। জুইঁ আলআবি কে বেনজিসহ দেখতে পেয়ে একটু একটু ভয়ের আভাস পেল।কিন্তু তাও মনে সাহস জুগিয়ে আলআবি কে বলল… –আপনার কুকুর এর নাম যেমন বেনজি আমার নামও জুইঁ। জুইঁ নামেই ডাকবেন আমাকে। আলআবি বেনজিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। জুইঁ আলআবি কে দাঁড়াতে দেখে আপনাআপনি দুকদম পিছিয়ে গেল।আলআবি জুইঁ কে পিছিয়ে যেতে দেখে হেঁসে দিল।বুঝাই যাচ্ছে জুইঁ কে ভয় পেতে দেখে আলআবি খুব মজা পাচ্ছে। জুইঁ কে উদ্দেশ্য করে আলআবি বলল… –ভয় পেলেও কিন্তুু তোমাকে বিউটিফুল লাগে। জুইঁ আলআবি কে কপট রাগ দেখিয়ে বলল… –বললাম না আমাকে জুইঁ বলবেন।আর হুটহাট করে একটা মেয়ের রুমে তার পারমিশন না নিয়ে ই ঢুকে পড়েন কেন?এগুলো আমার একদম পছন্দ না। আলআবি বেনজিকে কোল থেকে নামিয়ে দিল।বেনজি জুইঁকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই জুইঁ লাফিয়ে উঠলো। আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে ওর পড়নের থ্রি-কোয়াটার পেন্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা করতে করতে বলল… –আই লাইক ইট। জুইঁ মাথা তুলে আলআবির দিকে তাকিয়ে বলল… –এখন আবার কি পছন্দ হয়ে গেল। আলআবি জুইঁর দিকে তাকিয়ে ভ্রুযুগল ঈষৎ কুঁচকে বলল… –দেখবে?দেখলে তোমার ও পছন্দ হবে। আলআবি জুইঁর কাছে এসে ফোনের স্ক্রিন টা জুইঁর সামনে তুলে ধরলো।ফোনের স্ক্রিনে আলআবি আর জুইঁকে দেখা যাচ্ছে রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে। তবে জুইঁ আলআবি কে চিনলেও ওর মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অন্য কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না ছেলেটা কে। জুইঁ ছবিটা দেখে আলআবির দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই আলআবি বলে উঠলো… –আরও সুন্দর সুন্দর ছবি আছে। দেখবে? আলআবি জুইঁ কে একে একে অনেক গুলো ছবি দেখালো।কোন ছবিতে দুজন কে একসাথে রিকশায় দেখা যাচ্ছে। কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে আলআবি জুইঁর হাত ধরে আছে। আবার দেখা যাচ্ছে দুজন রিকশায় বসে আছে। তবে একটা ছবিতেও আলআবি কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। জুইঁর কাছে আলআবির কর্মকান্ড সুবিধাজনক বলে মনে হচ্ছে না। সে আলআবি কে প্রশ্ন করে বসলো… –আপনি এমন ছবি কোথায় পেলেন? আর এগুলো দিয়ে কি করবেন? –আজ থেকে আগামী ৯ দিন আমি তোমাকে যা যা বলব তুমি তাই তাই করবে।যদি আমার কথা অমান্য করো তবে এই ছবিগুলো ফ্রেমে বাঁধাই করে তোমার আব্বুজানের কাছে পাঠিয়ে দিব।সাথে সুন্দর করে বলে দিব ওটা তোমার বয়ফ্রেন্ড।(আলআবি) আলআবির কথা গুলো বার বার জুইঁর কানে এসে সূচেঁর ন্যায় খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। এমন একটা কথা যে আলআবি বলবে তা জুইঁর ধারণার বাইরে ছিল।জুইঁ বলে উঠলো… –একদম না।আপনি এমন কোন কাজ করবেন না। –একদম হ্যাঁ।(আলআবি) এবার জুইঁ জোড় গলায় বলে উঠলো… –বললেই হলো নাকি।আমি আঙ্কেল আন্টিকে বলব আব্বুকে সত্যি টা জানাতে। আলআবি মৃদু হেসে বলল… –আমি কি তোমার মতো বোকা নাকি। আমি অপশন হাতে রেখেই কাজ করি। –দাঁড়ান আমি এখনি আঙ্কেল আর আন্টিকে বলছি।(জুইঁ) –হ্যাঁ।যাও যাও।বাইরে বেনজি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।(আলআবি) জুইঁ রুমের থেকে বেরিয়ে আসতে নিয়েও আবার বের হলো না।আলআবি আবার বলে উঠলো… –তোমার আঙ্কেল আন্টিকে এ বিষয়ে ভুলেও কিছু বলতে যেও না।কারণ বললে আজকে বেনজি তোমার সাথে ঘুমাবে।একই বিছানায়। কেমন হবে ব্যাপারটা? জুইঁ এমুহূর্ত কিছু বলতেও পারছে না।কিছু করতেও পারছে না।আলআবির কাছ থেকে এরূপ কিছু কল্পনাও করতে পারে নি জুইঁ। সে ভেবে পাচ্ছে না এখন তার কি করা উচিত।জুইঁর আকাশকুসুম ভাবনার মধ্যে আলআবি বলে উঠলো… –এই যে তোতাপাখি! এতো কিছু ভেবে লাভ নেই।আমি একবার যা বলি তাই করি।আগামী ৯ দিন তুমি আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। আলআবি তার বক্তব্য শেষ করে পকেটে দুহাত গুঁজে জুইঁর রুম ত্যাগ করলো।এদিকে জুইঁ আলআবির বলা কথা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অর্ধেক রাত পাড় করে দিয়েছে। মিসেস পারভীন এর কথার শব্দে জুইঁর ধ্যান ভাঙ্গলো।সামনে চোখ পরতেই দপল আলআবি একমনে খেয়ে চলেছে। –শোন আজকে তোর আঙ্কেল এর কিছু পরিচিত লোক আসবে।আমি নিজ হাতে রান্না করব।তারা দুপুরে এখনেই খাওয়া দাওয়া করবে।তুই দুপুরে তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হয়ে থাকিস।(মিসেস পারভীন) নাস্তা শেষে আলআবি তড়িঘড়ি করে মিটিং এর জন্য বেড়িয়ে পরে।জুইঁ।মিসেস পারভীন এর ফোন নিয়ে রুমে এসে ওর আম্মুর সঙ্গে কথা বলে নেয়।এরপর সাদুর নাম্বারে কল দেয়। দুবার রিং হতেই সাদু কল রিসিভ করে।কল রিসিভ হতেই জুইঁ বলতে লাগলো… –দোস্ত আমি মাইনকার চিপায় পইরা গেছি।প্লিজ আমারে বাঁচা। –ঢাকায় তুই মাইনকার চিপা কই পাইলি।(সাদু) –যেই বাড়িতে আছি পুরাটাই মাইনকার চিপা।আমি মনে হয় আমার জানটা নিয়া আর যশোর ফিরতে পারমু না।ওই আদবহীন লোকটা আমারে কি কইছে জানছ?(জুইঁ) –না কইলে আমি জানমু কেমনে?(সাদু) –আমি যদি তার কথা না শুনি আমার নাকি বেনজির সাথে ঘুমানো লাগবো।তার উপর আব্বুরেও কইবো আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।(জুইঁ) –ছিঃ!ছিঃ!আমাগো এলাকীয় ক্রাশ এমন। শেষ পর্যন্ত তোরে একটা ছেলের সাথে ঘুমাইতে কইছে।আচ্ছা সত্যি কইরা কতো এই বেনজি মানে তোর বয়ফ্রেন্ড টারে তোর কপালে জুটাইলে কবে।আমারে তে অন্তত কইতে পারতি তুই বয়ফ্রেন্ড বানাইছোস।(সাদু) সাদুর কথায় জুইঁর ভিতরের সুপ্ত রাগ তরতর করে বেড়ে গেল।জুইঁ ফোনের মধ্যে চেঁচিয়ে বলল… –বেনজি এই বাড়ির কুত্তার নাম। সাদু জুইর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। জুইঁর রাগকে পাত্তা না দিয়ে সাদু হাসতেই রইল। জুইঁ আবারো চেঁচিয়ে বলল… –আমি কোন জোকস শুনাইছি তোরে? সাদু অনেক কষ্টে তার হাসি থামিয়ে বলল… –জোকস এর থিকা কম কিছুও তে শোনাছ নাই।শেষমেশ কিনা কুত্তার সাথে ঘুমাবি। –তোরে সামনে পাইলে না দাঁত একটাও জায়গা মতো রাখতাম না।ফোন রাখ তুই।তোরে আমি চিনি না।(জুইঁ) –আচ্ছা আচ্ছা। শোন শোন।আমার কথা শোন। জুইঁ সাদুর কোন কথা শোনার আগেই কল কেটে দিল।সাদু জানে এখন আর ফোম দিলে জুইঁ ধরবে না।তাই প্রতি বার এর মতো এবারও একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিল। “দোস্ত সরি!আর হাসবো না।যত খুশি বেনজির এর সাথে ঘুমাইছ।এবার শোন আলআবি ভাইয়ার কথা মতো চইলা দেখ।আর না হইলি উনি যেমন ক্যারেক্টারের মানুষ তোরে ওই কুত্তার সাথে ঘুমাইতে দিতেও পারে।যদি এমন কিছু করতে বলে যা তুই করতে পারবি না তখন জোড়ে জোড়ে কান্না শুরু কইরা দিবি।” সাদুর এই ম্যাসেজ টা পড়ে জুইঁর কাছে মনে হলো আলআবি তাকে কি আর করতে বলবে?সারাদিন তো বাড়িতে ই থাকা পড়ে।হয়তো কঠিন কিছু বলতে পারবে না।তার উপর আঙ্কেল আন্টি তো বাড়িতে ই আছে। দুপুরের দিকে তিনজন লোক আসে।সবাই ই সিরাজ সাহেব এর সম বয়সি।খাওয়া দাওয়া করে তারা বাড়ির পিছনে বাগানে ঘাসের উপর বসেই চারজন গল্প করল,হাটাহাটি করল।জুইঁ বিকেলে বারান্দায় বসে দূর থেকে চার প্রবীণের দলটাকে বসে বসে পর্যবেক্ষণ করেছে।এরা যে অনেক দিন পর একে ওপরের সংস্পর্শে এসেছে তা তাের দেখলে ই বোঝা যাচ্ছে। আসরের পরে তারা চলে যায়। সন্ধ্যার সময় জুই, লিপি আর মিসেস পারভীন মিসেস পারভীন এর রুমে বসে গল্প করছিল।সিরাজ সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছিলেন। ঠিক সে সময় আলআবি বাড়িতে আসে।গটগট করে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ায়।মিসেস পারভীন এর রুমে এসে দেখে তিনজন মিলে গল্প করছে।আলআবি তার মাকে বলল… –মা জুইঁর ডাক্তার ওকে নিয়ে তার সাথে একটু দেখা করে আসতে বলেছে। মিসেস পারভীন ছেলের কথা শুনে বললেন… –কালকেই না গেল।আজকে কিসের জন্য যাবে। আরো তো ৬ দিন পরে যাওয়ার কথা। –হ্যাঁ।৬ দিন পর যাওয়ার কথা। কিন্তু ডাক্তার বলল আজকে ও যেন ওকে একটু নিয়ে যাই।(আলআবি) মিসেস পারভীন আলআবি কে উদ্দেশ্য করে বলল… –আচ্ছা যা। তুই ই বরং ওকে নিয়ে যা। এরপর মিসেস পারভীন জুইঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন… –জুইঁ।যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। জুইঁ কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেল।জুইঁর কেন যেন মনে হচ্ছিল আলআবি মিথ্যা বলছে।কিন্তু পরক্ষনেই আবার ভাবলো মায়ের সাথে তো আর মিথ্যা বলবে না। চলবে……… [বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।গল্পের সকল প্রকার চরিত্র, উক্তি কাল্পনিক।অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here