#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৯
#নবনী_নীলা
” বর পাইসি এমন একখানা, একে নিয়ে যে কি হবে আমার। জানিস অংটি পড়ানোর দিন আমি জিজ্ঞেস করেছি শাড়ি পড়লে আমাকে দেখতে কেমন লাগে। বেতের চেয়ারে বসে ছিলো আমার কথায় পুরো পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। আহ আমি কি খুশি এক্ষুনি প্রসংশা শুনবো। বেটা নিরামিষ কি বললো জানিস? হুঁম মেয়ে মেয়ে লাগছে। ইচ্ছে করছিলো ছাদে নিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। নিরামিষ কোথাগার! বিয়েটা হতে দে, এক বছরের মধ্যে যদি এই নিরামিষকে বাচ্চার বাপ না বানাইতে পারি আমার নাম লামিয়া না।”
রুহি লামিয়ার কথা শুনছিল এমন সময় সেখানে জয় উপস্থিত হয়। শেষের কথাটা,”বিয়েটা হতে দে, এক বছরের মধ্যে যদি এই নিরামিষকে বাচ্চার বাপ না বানাইতে পারি আমার নাম লামিয়া না।” ঠিক সেই সময়ে সেখানে পৌছে নির্বিকার দৃষ্টিতে লমিয়ার দিকে তাকালো জয়। পুরোটাই সে শুনেছে। রুহি একটু কেশে হাতের ইশারায় লামিয়াকে থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কে শোনে কার কথা। এ মেয়ে কি শোনার পাত্র? আহান পর্যন্ত সেখানে পৌছে যায়। বাচ্চার বাপ কথাটা শুনে আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেয়েগুলো কি নিয়ে কথা বলছে?
আহানকে দেখে রুহি কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
” কার বাচ্চা?”, অর্ধেক কথা শুনলে যা হয়। আহান প্রশ্ন করে বসলো।লামিয়া চমকে পিছনে তাকালো। বাহ্ কি সৃতিমধুর দৃশ্য। এই দুটোকে এখনই আসতে হলো। জয় এসেছে ঠিক আছে এসব তার শোনার দরকার কিন্তু আহানকে দেখে চুপ করে অন্যদিকে তাকালো লামিয়া। রুহি তো মুখ লুকানোর জায়গা খুজছে।
আহান প্রশ্নের জবাবে কিছু না পেয়ে বললো
” আমি আর জয় একসাথেই বের হচ্ছি। ওর কিছু কাজ আছে বললো। তোমরা থাকো।”
” আসছি।”, লামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো জয়।
তারপর দুজনেই একসাথে বেরিয়ে গেলো। ওরা চলে যেতেই রুহি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” তুই না একটা…. এই জন্যে বলি একটু আস্তে কথা বল।”
লামিয়া মুখ কালো করে বললো,” ধুর শুনেছে ভালো হয়েছে। খালি তোর জামাইটা না আসলেই হইতো।”তারপর মুখ কালো করে রুহির দিকে তাকাতেই রুহি হেসে ফেললো। লামিয়ার চেহারা দেখার মতোন হয়েছে। রুহির হাসি দেখে লামিয়া নিচের ঠোঁট উল্টে মুখ বাকালো।
______________
রাত দশটার উপরে বাজে আহান এখনও ফিরেনি। আটটার দিকে জয় এসে লামিয়াকে নিয়ে গেছে বাসায়। রুহি পুরো বাসায় একা, বিছানার উপর পা তুলে বসে আছে রুহি। আহানকে কখনো এতো দেরী করতে দেখেনি সে। লোকটা কি রাগ করে এমন করছে। কিন্তু সেই শার্টের কথা মনে পড়তেই রুহির মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। রুহি কাবাড খুলে আবার সেই শার্টটা খুজতে লাগলো। এইতো পেয়েছে সেই শার্ট। শার্টটা হাতে বিছানায় নিয়ে বসলো।
রুহি যদি প্রশ্ন করতো তাহলে আহান কি বলে তাকে বুঝ দিতো? সকালে তো খুব জোর করছিল যাতে তাকে জিজ্ঞেস করে। রাগেই কিছুই বলেনি রুহি।
শার্টটা কি অন্য কারোর? না না শার্টটা আহানেরই মনে হচ্ছে। সিওর এইটা আহানেরই শার্ট। রুহি ভালো করে মনে করার চেষ্টা করলো। এই শার্টটা আহান লাস্ট কবে পরেছে। গতকাল তো গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট পড়েছিল। এই শার্টটা কবে? ভাবতে ভাবতে রুহির মনে পড়লো। আহানের বাড়িতে সেদিন যে গেট টুগেদার হলো সেদিন ব্লু কোর্টের সাথে এই শার্টটা পড়েছিল। সেদিন তো রুহি সারাদিন আহানের সাথেই ছিলো। সামিরা তো ছিলো না আহানের সাথে। আবার থাকতেও পারে চোখের আড়ালে কত কিছু হয়। আচ্ছা সেদিনের ছবি গুলোতো রুহির ফোনে আছে। এই লিপস্টিকের সাথে সামিরার লিপস্টিকের মিল পাওয়া যায় কিনা দেখলেই তেলে জলে আলাদা হয়ে যাবে। রুহি অনেক্ষন ফোন হাতে দেখলো কিন্তু কোনো মিল পেলো না।
রুহি হতাশ হয়ে বললো,” উফ আমার মতন এমন হালকা রঙের লিপস্টিক আবার কে ইউজ করে।”খুজতে খুজতে বিরক্ত হয়ে বললো রুহি।
শার্টের দিকে তাকিয়ে হটাৎ রুহির মাথায় এলো সেদিন রাতে তো রুহি অলমোস্ট ড্রাংক ছিলো। ভাবতেই চোখগুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো রুহি।” এ অকাজ আমার নাতো?”, বলেই মুখ চেপে ধরলো। সন্দেহটা রুহির এবার নিজের উপরই হলো। রুহি তাড়াতাড়ি শার্টটা কাবাডে রাখলো। নিজের উপর থেকে তার বিশ্বাস উঠে গেছে। অকাজটা রুহি যে করেছে সেটা নিয়ে রুহির সন্দেহ নেই এখন। ওসব খেয়ে না জানি আর কতো কি করেছে। এসব তার সাথেই হতে হবে। আহান তার মানে রেগেই আছে। রাগটা করাও স্বাভাবিক। উফ এবার সে মশাইয়ের রাগ ভাঙ্গবে কিভাবে?
আহান সাড়ে দশটার পর এলো। বাহির থেকেই চাবি দিয়ে ভিতরের লক খুললো আহান। দরজা খোলার শব্দে রুহির বুকের ভিতরটা দ্রিম দ্রিম করতে লাগলো। তারপর বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো। আহান গায়ের কোর্টটা খুলে হাতে নিয়ে রুমে আসতেই রুহির দিকে একবার তাকালো। তারপর সোজা কাবাড খুলে নিজের টিশার্ট আর ট্রাজারটা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। বাবারে ভালোই ক্ষেপে আছে মনে হচ্ছে। এই রাগ কিভাবে ভাঙাবি তুই রুহি।
রুহি মুখ কালো করে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আহানের বেড়িয়ে আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। সকালে কি না বলেছি রাগের মাথায় এর জন্যে এখন ভুগতে হচ্ছে। আচ্ছা লোকটা কি আর আমার সাথে কথা বলবে না? বেশী রাগ দেখালে আমিও বলবো না।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আহান বেরিয়ে এলো। খাবার টেবিলেও আহান কোনো কথা বলল না। রুহি দু একটা কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হলো না। প্রয়োজনের চেয়ে বেশী একটা শব্দও আহান বললো না। আহানের এই আচরণ রুহির একদম ভালো লাগছে না। রুহির না পারছে সইতে না পারছে বলতে।
খাওয়া দাওয়া সেরে আহান রুম থেকে লেপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করতে লাগলো কিন্তু অন্যসময় সেটা আহান রুমে বসেই করতো। রুহির দিকে একবার ভালো করে তাকালো পর্যন্ত না।
রুহি অনেক রাত পর্যন্ত আহানের রুমে আসার অপেক্ষা করলো। শেষে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসতেই রুহি ঘুমিয়ে পরে। সকালে চোখ খুলে রুহি আরো অবাক কারণ আহান তার পাশে নেই। কোথায় লোকটা? রুহি হকচকিয়ে উঠে পরে। আহানকে খুজতে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সোফায় বালিশ আর চাদর। রুহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এতো রাগ হয়েছে যে সোফায় এসে ঘুমিয়েছে। রুহির কেমন অসস্তি লাগছে।
আহান আজ খুব তাড়াতাড়ি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। রুহি এসে একপাশে দাড়ালো কারণ তার কিছু বলার ছিল কিন্তু আহান নিজের কাজে ব্যাস্ত।
” আপনার কি আজও ফিরতে দেরি হবে?”, অনেক সাহস নিয়ে প্রশ্ন করলো রুহি।
” হতে পারে।”, সাভাবিক ভাবেই কথাটা বললো আহান তবে রুহির দিকে তাকালো না একবারের জন্য। রুহির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। আর কি বলবে বুঝে উঠলো না। আহান নিজের মতন অফিসে চলে গেলো। প্রয়োজনের বেশি একটাও কথা বললো না। রুহি মন মরা হয়ে বসে রইলো। আহানকে খুব মিস করতে লাগলো। লোকটাকে সরি বলে দিলেই হয়তো এতো রাগ করতো না। বড্ড বোকামি হয়েছে! কখন আসবে সে? গোমড়ামুখো এমন চেহারা বানিয়ে রাখে কথা বলাও দায়। রুহির কাছে প্রতিটা ঘন্টা একেকটা দিনের মতন লাগছে।
আজ আটটার পরই আহান ফিরেছে। সবটাই আগের দিনের মতন চুপচাপ হয়ে করছে। রুহি কথা বলার অনেক সুযোগ খুঁজলো কিন্তু কোনো সুযোগই দিলো না আহান। ক্রমাগত রুহিকে ইগনোর করে যাচ্ছে। আজ ল্যাপটপ নিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই রুহি ল্যাপটপটা আহানের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো। আহান ভ্রু কুচকে রুহির দিকে তাকালো। ল্যাপটপ আবার কি করলো ওকে?
” কি ব্যাপার ল্যাপটপ নিয়ে গেলে কেনো?”,
” আমাকে বলেছেন? শেষমেশ দেখতে পেয়েছেন তাহলে আমাকে। আমার তো নিজেকে অদৃশ্য মানব মনে হচ্ছিল।”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।
আহান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” মানে?”
রুহি ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেগে মুখ ভার করে অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললো,” সরি।”। বোলেই মাথা নুইয়ে ফেললো। আহান এগিয়ে আসছে সেটা না তাকিয়েই রুহি বুঝতে পারলো। আরো কাছে আসতেই রুহির বুকের ভিতরের ধুক ধুক আরো বেড়ে গেলো। আহান হাত বাড়িয়ে রুহির পাশের টেবিলে থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে রুহিকে পাশ কেটে চলে গেলো। আহান এমন কিছু করবে রুহি একদম ভাবে নি। রুহির রাগটা বেড়ে গেলো। এই লোকটাকে আমি ছাড়ছি না। আমাকে ইগনোর করা? আমিও দেখবো কিভাবে আমাকে ইগনোর করে।
রুহি আহানের পিছু পিছু গেলো। আহান সোফায় বসে ল্যাপটপটা অন করতেই রুহি আহানের পাশে গিয়ে বসলো। আহান কোনো রিয়েক্ট করলো না। দৃষ্টি ল্যাপটপের দিকে স্থির আহানের। রুহি রেগে গিয়ে ল্যাপটপের উপরের অংশ ধরে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো। আহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার ল্যাপটপটা খুলতে যাবে রুহি উঠে এসে আহানের কোলে বসে পড়লো। আহান রীতিমত অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে রইলো। রুহি নিজের মুখটা আহানের একদম সামনে এনে বললো,” এবার দেখি কিভাবে আমাকে ইগনোর করেন।”
রুহি এমন কিছুও করতে পারে ভাবাই যায় না। আহান নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে অন্যদিকে তাকালো। রুহি রাগে ফুলতে ফুলতে বললো,” আমি বললাম তো সরি। তারপরও আপনি এমন করছেন কেনো? মানছি ভুল হয়েছে। ভুলের জন্যে কি করতে হবে বলুন।”
” কি ভুল করেছো?”, আহান শক্ত চোখে প্রশ্ন করলো।
” আপনাকে ভুল বুঝেছি।”, মাথা নিচু করে বললো রুহি।
” আচ্ছা।”, বোলে একবার রুহির দিকে তাকালো,” তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমার কাছে চলে এসেছো। না মানে তোমার তো আবার হুট হাট করে আমার কাছে আসায় সমস্যা।”, থুতনির নীচ ডান হাত রেখে বলল আহান।
” আপনি এখণও আমার উপর রেগে আছেন?”, বিষণ্ণতা ভরা চোখে বললো রুহি।
” নাহ্, আমি তা বলিনি। আমি শুধু তোমার বলা কথাগুলো তোমায় মনে করিয়ে দিলাম।”, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল আহান।
আহানের কথায় রুহি ভীষন কষ্ট পেলো।” আপনি অনেক খারাপ। আমি আর কখনো আপনারা কাছে আসবো না।”, ভরা গলায় বলে চোখ থেকে পানি পরার আগেই উঠে পড়লো আহানের কোল থেকে। উঠে যেতেই আহান আবার রুহির হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো। রুহি অন্য হাত দিয়ে চোখের জল মুছতে লাগলো। রুহির রাগ দেখে আহান ঠোঁট এলিয়ে বললো,” আমাকে দিষ্ট্রাক্ট করে কোথায় যাচ্ছো? ভদ্র ছেলের মতন বসে ছিলাম ভালো লাগছিলো না বুঝি।”
রুহি এখনও কেঁদেই যাচ্ছে চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে। শেষে মনে হয় একটু বেশী বেশী করে ফেলেছে আহান তাই রুহিকে থামাতে জড়িয়ে ধরে গলার এক পাশে মুখ গুজে দিলো।
তারপর রুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,” এগ্রিমেন্ট শেষ হলে আমি তোমায় ছেড়ে দিবো, তারপর আর যে সব চিন্তা তোমার মাথায় আছে। সেগুলো তোমার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমি তোমায় কোনোদিন ছাড়ছি না। তোমায় ছাড়া তো আমি থাকতেই পারবো না।”
রুহি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। শুধু শুধু আহানকে ভুল বুঝেছে সে। রুহি কাদো কাদো চোখে আহানকে জড়িয়ে ধরলো। আহান রুহির মুখ তুলে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,” তুমি তো বললে যে ভুলের জন্য শাস্তি নিতে প্রস্তুত। তাহলে একটা পানিশমেন্ট দেই তোমাকে। তোমার পানিশমেন্ট হলো এক্ষুনি আমাকে কিস করবে।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩০
#নবনী_নীলা
আহান রুহির মুখ তুলে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,” তুমি তো বললে যে ভুলের জন্য শাস্তি নিতে প্রস্তুত। তাহলে একটা পানিশমেন্ট দেই তোমাকে। তোমার পানিশমেন্ট হলো তুমি এক্ষুনি আমাকে কিস করবে।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।
রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে আহানের কথায়। আহান রুহির গাল আলতো করে ধরে নিজের কাছে এনে রুহির গাল স্পর্শ করতেই রুহি ওড়নার প্রান্তভাগ খামচে ধরলো। আহান রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” যাও গিয়ে ঘুমাও। আমি কাজটা শেষ করেই আসছি।”
রুহির কথাটা পছন্দ হলো না। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” আপনার রাগ কমেনি?”
” দেখো, তোমাকে আমি যেটা করতে বলেছি সেটা তো তোমার দ্বারা হবে না। তাই রাগটা তো একটু থেকেই গেলো। কোনো ব্যাপার না, তুমি একটু সাহসী হলে ঠিক পারতে। কিন্তু কি বলতো সাহসটাই নেই তোমার।”, খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো আহান।
কথাটা রুহির গায়ে বিধলো। সে সাহসী নয়তো কি ভীতুর ডিম? কি সুন্দর বলছে সাহস থাকলে পারতে। রুহি মুখ কালো করে বললো,” সাহস নেই মানে?”
” থাকলে এতোক্ষণে নিজের বরকে একটা কিস করতে পারছো না! সাহস থাকলে এতক্ষণ ওয়েট করা লাগতো না।”, নিচের ঠোঁট কামড়ে বলল আহান।
রুহি বেশ রেগে গেলো। রুহি আড় চোখে তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো,” আপনি চোখটা বন্ধ করুন তো।”
” কেনো? আবার চোখ বন্ধ করতে হবে কেনো?”, আহান কথাটা বলতেই রুহি নিজের হাত দিয়ে আহানের চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললো,” এতো কথা বলেন কেনো? চোখ বন্ধ করতে বলেছি চুপ চাপ বন্ধ করে রাখুন।”
“ওকে”, বলে চোখ বন্ধ রাখলো আহান। রুহি এক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে রুহির। নিজেকে শান্ত করতে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো রুহি। আহানের গালের কাছে এগিয়ে আসতেই শরীর শিউরে উঠলো রুহির। আহান নির্বিকার ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। রুহির মাথায় যে কি চলছে! হটাৎ গালে আলতো স্পর্শ পেয়ে আহান চমকে চোখ খুললো। আহানের চোখের দিকে চোখ পড়তেই রুহি সরে এসে আহানের কোল থেকে উঠে যেতে নিলো। আহান রুহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। রুহি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। গাল দুটো একদম লাল হয়ে গেছে তার। আহান ঠোঁট এলিয়ে বললো,” যাক কিছু তো উন্নতি হলো? তবে কি এইভাবে চোখ বন্ধ করতে হবে সবসময়?”
রুহি চোখ খুলে আহানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর আহানকে সরিয়ে দিতে বললো,” ছাড়ুন আমার ঘুম পাচ্ছে।”
” তোমার রোমান্সের সময় ঘুম পায় কেনো? এখন থেকে দিনের বেলায় রোমান্স করবো তখন দেখি কি অজুহাত দেও।”, বলেই রুহিকে কোলে করে রুমে নিয়ে এলো।
____________________
আজ লামিয়ার গায়ে হলুদ তাই বিকেলেই রুহিকে সেখানে আসতে হলো। লামিয়া গাড়ী পাঠিয়ে আগে ভাগেই রুহিকে নিয়ে এলো। গাড়ীটা থামলো লামিয়াদের বাড়ির সামনে। লোকজন বাড়িটা সাজাতে ব্যাস্ত কেউ এদিকে ছুটছে তো কেউ অন্যদিকে। চারিদিকে হৈ হৈ ব্যাপার। রুহির ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে লামিয়ার মায়ের সাথে দেখা। রুহিকে দেখে তিনি হেসে উঠে বললো,” কেমন আছো রুহি?”
” এইতো আণ্টি ভালো, আপনি ভালো আছেন?”, বলেই এগিয়ে গেলো।
” আর ভালো সকাল থেকে লামিয়া যা শুরু করেছে। মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।”, কপাল চাপড়ে বললেন তিনি।
” আয় হায় কেনো?”,
” তুমি গিয়েই দেখো না! ওর রূমে আছে, যাও।”, বলেই রূমের দিকে ইশারা করলেন।
রুহি লামিয়ার রুমে ঢুকে অবাক। জামা কাপড় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কি অবস্থা করেছে লামিয়া। রুহি সামনে তাকাতেই দেখলো মুখে ফেস প্যাক লাগিয়ে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে আছে লামিয়া। এইতো ম্যাডামের রুপচর্চা শুরু হয়ে গেছে কখন যে শেষ হবে কে জানে!
” একি অবস্থা করেছিস তুই রুমটার? “, রুহির আওয়াজে লামিয়া চোখের উপর থেকে শশার টুকরো গুলো হাত দিয়ে নামিয়ে রুহিকে দেখেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
“আরে আমার তো তোকেই দরকার।”, রুহিকে দুটো ড্রেস দেখিয়ে বললো,” শোন আমার আর জয়ের গায়ে হলুদ একসাথে হবে যেহেতু আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি। তাই আমি চাই ওই নিরামিষটা কোনো ভাবেই যেনো আমার থেকে চোখ সরাতে না পারে। এবার তুই আমাকে বল আমি কোনটা পড়লে এই উদ্দেশ্যে সফল হওয়া যাবে।”
রুহি মনোযোগ দিয়ে ড্রেসগুলো দেখলো তারপর একটা চুজ করে দিয়ে বললো,” ওনাকে জিজ্ঞেস করলেই পারিস, ভালো হয় না ব্যাপারটা?”
লামিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,” ইস এতো জিজ্ঞেস করা লাগবে না ওনাকে। আচ্ছা তুই একা এসেছিস তোর বর কখন আসবে?”
” জানি না। মনে হয় সন্ধার দিকে আসবে। আচ্ছা চল রেডি হয়ে নে। তোর তো আবার ৪,৫ ঘন্টা লাগবে আজকে।”,
” হ্যা ঠিক বলেছিস। দাড়া মুখটা ধুয়ে আসি।”, বোলেই লামিয়া ফ্রেশ হতে গেলো।
লামিয়াকে রেডি করতে করতে প্রায় সাতটা বেজে গেছে। রুহি আর প্রমা লামিয়াকে হেল্প করেছে। লামিয়ার সাজুগুজু শেষ হতেই রুহির ফোন ভেজে উঠলো। রুহির ফোন হাতে নিয়ে আহানের নাম দেখে কলটা রিসিভ করলো। আহান বাড়িটা চিনতে পারছে না কারোর একই গলিতে দুটো বিয়ে। রুহি বেড়িয়ে যেতেই লামিয়া রুহিকে থামিয়ে বললো,” রুহি রেডি হয়ে নে। আমি যাচ্ছি , প্রমা আয় তো আমার সাথে।”
লামিয়া আর প্রমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুহি ড্রেস চেঞ্জ করে ফেললো। ড্রেসটা আহান পছন্দ করে কিনেছে। কমলা রঙের একটা লং স্কার্ট আর উপরে কোমড় পর্যন্তও টপ আর ওড়না। রুহি টপের চেইনটা আটকাতে গিয়ে চুলের সাথে আটকে গেছে চেইনটা। রুহি মহা মুশকিলে পরে গেলো। উফফ এবার সে কি করবে? রুহি দরজাটা খুলে লামিয়াকে কয়েকবার ডাকলো। কোনো সাড়া পেলো না। যে জোড়ে গান বাজানো হয়েছে শুনবেই বা কি করে। রুহি বিরক্ত হয়ে দরজা চাপিয়ে চেষ্টা করতে লাগলো, এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে রুহি লামিয়াকে বললো,” কোথায় ছিলি এতক্ষণ? আমার চুলটা চেইনের সাথে আটকে গেছে। হেল্প কর না একটু।” উল্টো দিকে মুখ করে থাকায় ঘরে যে আহান এসেছে সেটা রুহি বুঝতে পারিনি।
রুহির কথার উত্তরে আহান কিছু না বলে এগিয়ে এলো। কিছু বললেই এই মেয়েটা এখন চিৎকার করে উঠবে। আহান খুব সাবধানে এগিয়ে এসে রুহির চুলগুলো পিঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে খুব সাবধানে চুলটা ছাড়িয়ে পুরো চেইনটা খুলে ফেললো। আহানের নিশ্বাস রুহির পিঠে আছড়ে পড়তেই রুহি চমকে উঠলো। আহানের নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত তার চেনা। তাই আহানকে চিনতে বাকি রইলো না। রুহি জামার পিঠের অংশটা শক্ত করে ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে আহানকে দেখে দু পা পিছিয়ে এলো।
” আপনি? আপনি নক ছাড়া ভিতরে এসেছেন কেনো? আর আমার জামার…..”, এতোটুকু বোলেই অন্যদিকে তাকালো রুহি।
” লামিয়া বললো এ রুমে আসতে। আর একটু আগে তুমিই তো বললে যেনো আমি তোমার হেল্প করি। কি? বলোনি তুমি?”, বলতে বলতে রুহির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আহান। রুহি পিছাতে পিছাতে বললো,” আম.. আমি তো ভেবেছিলাম লামিয়া এসেছে।”
” সে তুমি যাই ভাবো না কেনো। এখন পিছনে ঘুরো।”
রুহি চোখ বড় বড় করে বললো,” কেনো? পিছনে ফিরবো কেনো?”পিছাতে গিয়ে ওড়নায় পা পেচিয়ে পরে যেতেই আহান রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরলো। পড়ে যাওয়া থেকে বাচতে রুহি জামার পিঠের অংশ ছেড়ে আহানের কলার চেপে ধরলো। আহান রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি কোনো কাজ অর্ধেক করি না করলে পুরোটাই করি।”
রুহির বুকের দ্রিম দ্রিম শব্দটা যেনো আরো জোড়ে জোড়ে বাজতে লাগলো। যা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে রুহি। লোকটা লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছে। এটা কি নিজের বাসা পেয়েছে যে যা ইচ্ছা তাই করবে। ইস কেউ এসে পড়লে কি হবে?
” দেখুন একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবে না। এইটা আপনার বাসা না। যে কেউ এসে পড়বে। ছাড়ুন আমায়।”, বলেই সোজা হয়ে দাড়ালো রুহি। কিন্তু আহান এখনও রুহির কোমড় জড়িয়ে আছে।
” কেউ আসবে না। দরজা লাগানো।”, ঘোর লাগানো কন্ঠে বললো আহান।
” কি করতে চাইছেন আপনি?”, একটা ঢোক গিলে প্রশ্ন করে কোমর থেকে আহানের হাত সরিয়ে নিলো। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় টোকা পড়লো। রুহি আতকে উঠে পিঠে হাত দিলো। উফ অসভ্য লোকটা পুরো চেইনটা খুলে দিয়েছে। রুহি চট জলদি পিঠের চেইনটা লাগিয়ে ফেললো।
দরজায় টোকা পড়ায় ঘোর থেকে বের হতে আহান চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাঁকালো তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,” আমাকে যে ভোগাচ্ছো, উ হ্যাভ টু পে ফর দিস।”
রুহি একটা ঢোক গিলে আহানকে পাশ কাটিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়ালো। প্রমা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” দরজা খুলতে এতো সময় লাগে?” এর পর ভিতরে আহানের দিকে চোখ পড়তেই প্রমা মিটমিটিয়ে হেসে বললো,” সরি রে বুঝতে পারিনি কেনো এত সময় লেগেছে।”
রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রমার দিকে তাকালো। যেনো ঐ দৃষ্টি দিয়ে আজ ভম্ম করে দিবে প্রমাকে। প্রমা পা টিপে টিপে কেটে পড়লো।
রুহি গাল ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনি যাবেন নাকি আপনাকে বিদায় পত্র পাঠাতে হবে।”
আহান রুহির দিকে এগিয়ে আসতেই রুহি জড়োসরো হয়ে গেলো। আবার এদিকে আসছে কেনো? রুহি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে অস্থিরতা দুর করার চেস্টা করছে। আহান রুহির খুব কাছে আসতেই রুহি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। আহান নিরবে হেসে রুহিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর আলতো করে এক চোখ খুলে তাকাতেই রুহি রাগে ফুলে উঠে। আচ্ছা বজ্জাত লোকতো। কথাটা বলেই রুহি সজোরে দরজা লাগলো।
রুহি তৈরি হয়ে অনুষ্ঠানে এলো। স্টেজে লামিয়া বসে আছে।লামিয়ার এক পাশে প্রমা বসা, রুহি আরেক পাশে গিয়ে বসলো। রুহি গিয়ে বসতেই লামিয়া অনেক এক্সাইটেড হয়ে বললো,” জানিস নিরামিষটা তিনবার তাকিয়েছে।”
” বাহ্, সত্যি!”, বলে রুহি একবার জয়ের দিকে তাকাতেই বুঝলো জয়ের চোখ সরছে না লামিয়া থেকে। রুহি হেসে উঠে বললো,” কিসের তিনবার উনি তো দেখি চোখই সরাচ্ছে না তোর থেকে।”
এর মাঝে প্রমা বলে বসলো,” নিজেরটা বল আগে, যে রোমান্স করে আসলা?”
” তোর মুখ কি লামিয়ার মতন লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে?”, আর চোখে বললো রুহি। প্রমা রুহির কথা হেসে উড়িয়ে দিলো।
লামিয়া আর জয়ের গায়ে হলুদ হচ্ছে দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। কি সুন্দর মানিয়েছে ওদের একসাথে। এমন সময় আহান রুহির পাশের চেয়ারে বসতেই রুহি বোলে বসলো,” আমাদের বিয়ের সময় এসব হয়নি কেনো?” প্রশ্ন করেই আহানের দিকে তাকালো রুহি।
” চলো তাহলে আরেকবার বিয়ে করে ফেলি।”,, আলতো হেসে বললো আহান।
রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকালো। তখনই রুহির অন্যপাশের চেয়ারে একটা ছেলে এসে বসলো। আহান ব্যাপারটা খেয়াল করলো।ছেলেটা রুহির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বললো,” হায় আমি সামির।”
রুহি ছেলেটার বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো। এইদিকে সামিরা শাকচুন্নি আবার এখানে সমির মামতো ভূত।
সৌজন্যবোধ দেখাতে রুহি হাত বাড়ানোর আগে আহান ছেলেটার হাত ধরে বললো,” হেলো অ্যাম হার হাজব্যান্ড।”তারপর হাতটা ছেড়ে দিলো। আহান পারে না হাতটা মচকে দেয় ছেলেটার।
হাজব্যান্ড কথাটা শুনে ছেলেটার মুখ শুকনো হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পর ছেলেটা উঠে চলে যেতেই রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনি এটা কি করলে?”
আহান গম্ভীর গলায় বললো,” হ্যান্ডশেক।”
” আচ্ছা। ওটাকে হ্যান্ডশেক বলে আমি তো জানতামই না।”, বেঙ্গো করে বললো রুহি।
” আমি ছাড়া কেউ তোমার দিকে তাকালে আমার সহ্য হয় না, বুঝেছো?”, রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো আহান।
[ #চলবে ]
🎃 কিছু কথা 🎃
গল্পটা আমি প্রতি সোমবার দিবো না সেটা আগেই জানিয়েছিলাম। আমার পড়াশুনা আছে তাই একটা দিন আমার নিজের জন্যে প্রয়োজন। একটা গল্প টানা লিখতে বসলে ৪ থেকে ৫ঘন্টা লাগে, যেটা পড়তে আপনাদের মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় ব্যয় হয়। তাই যখন বলি গল্প দিতে পারছি না তার মানে দিনের কাজের ফাকে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় বের করে আমি গল্পটা লিখতে পারিনি কিংবা লিখলেও শেষ করে উঠতে পারিনি।
যেহেতু মানুষ তাই ব্যাস্ততা থাকেই। অনেকে ব্যাপারটা বোঝে আবার অনেকেই বোঝে না। তাই এতোগুলো কথা বলা।
অনেকেই দেখলাম রেগে গেছেন গল্প না পেয়ে, আশা করি তারা একটু বোঝার চেষ্টা করবেন।
💜আর হ্যাঁ কমেন্টে জানাবেন গল্পটা কেমন হচ্ছে।💜
[ #চলবে ]
{ কালকে গল্পটা হয়তো দিতে পারবো না। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো, সময় পেলে অবশ্যই দিবো।}