#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৪০
#নবনী_নীলা।
” দেখুন, কনসিভ করার দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতিটা মেয়েই কিছু পরিবর্তন খেয়াল করে। আপনার স্ত্রী ও বুঝেছে, তাকে যদিও আমরা কিছুই জানাই নি, তবে তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে ওনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। হয়তো আগে থেকেই মানসিক চাপের স্বীকার তিনি। তাই ওনার দিকে একটু বিশেষ যত্ন নিবেন।” ডাক্তারের কথায় আহানের চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। রুহিকে সামলানটাই এখন আহানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
ডাক্তারের সাথে কথা শেষে আহান দ্রুত রুহির কাছে গেলো। আহান দরজা খুলে ভেতরে যেতেই দেখলো চুপ চাপ বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কান্না করে। আহানের উপস্থিতি বুঝে রুহি মাথা নিচু করে রইলো। আরো অঝোরে কান্না পাচ্ছে তার। আহান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,” আমি আমার ওয়াইফের সাথে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
নার্স আহানের কথা শুনে বেড়িয়ে গেলো। আহান এগিয়ে এসে রুহির পাশে বসলো। রুহি এখনো মাথা নিচু করে আছে, চোখ বন্ধ করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে রুহি। আহান রুহিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। রুহি আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। আহানকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেদে উঠলো। সবটাই ক্ষণিকের মাঝে হয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরেই এই অনুভূতিটা রুহির মনের কোণে জমা বেধেছিল। কিন্তু সেটা এমন ক্ষণিকের মাঝে শেষ হয়ে যাবে রুহি ভাবেনি।
রুহি কাপা কাপা গলায় বলল,” আমি আস্তে আস্তে বুঝেছিলাম, জানেন? কতো কি ভেবেছিলাম আমি কিন্তু সবটা এভাবে শেষ হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। আমার সা..থেই কে..নো এ..মন হয়?”, সব অভিযোগ যেনো আজ বাধ ভেঙেছে, কান্নার মাঝে হিচকি তুলতে তুলতে লাগলো রুহি।
আহান নিজেকে একদম শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। রুহিকে ভেঙে পড়তে দেখে আহানের আরো বেশী কষ্ট হচ্ছে। আহান রুহির মুখ তুলে ধরলো নিজের দিকে, তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,” এভাবে ভেঙে পড়লে কি করে হবে? তুমি ভেঙে পড়লে বাকিরাও তো কষ্ট পাবে বলো। নিজেকে শক্ত রাখো।”
রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর চোখের পানি মুছে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,” সব দোষ আমার। আমার আরো সাবধান হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করুন মেঝেতে তেল পরে ছিলো আমি একদম খেয়াল করিনি।” বলতে বলতে আবার কেদে ফেললো রুহি। নিজের ভুলের জন্যে কষ্টটা যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে রুহির।
” একদম বোকার মতন কথা বলবে না। পুরোটাই একটা অ্যাকসিডেন্ট সেখানে তোমার কোনো দোষ নেই। আর যেটা হবার সেটা হবেই, তুমি আমি চাইলেও আটকাতে পারবো না। কান্না থামাও,বাহিরে সবাই বসে আছে। তোমার নানু এভাবে তোমাকে দেখলে ভেঙে পড়বেন।” আহান রুহির চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর রুহির বাহু ধরে নিজের বুকে মাথা রেখে বললো,” আর উ ওকে? বডিতে কোনো পেইন হচ্ছে নাতো। মাথাটা তো ফাটিয়ে বসে আছো। হাতে পায়ে কোথাও লেগেছে?”, রুহির মাথার ব্যান্ডেজটা ঠিক আছে কিনা দেখতে দেখতে প্রশ্ন করলো।
রুহি নিরবে না সূচক মাথা নাড়লো। তারপর আহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো রুহি। আজ সে বুঝতে পারছে তার মা কেনো এতো কষ্ট করে এতো অপমান নিয়ে শুধু বেচেঁ ছিলো তাকে পৃথিবীর আলো দেখাবে বলে। আজ যখন সে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি তখন মায়ের ভালোবাসাটা সে উপলব্ধি করতে পারছে। মায়ের ভালোবাসা বোঝা যায় যখন একটা মেয়ে নিজেও একদিন মা হয়। এসব যেনো রুহিকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। চোখের পানি সে ধরে আছে ঠিকই কিন্তু মনের ক্ষতটা যেনো আরো গভীর হচ্ছে।
রুহি আহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে রুহির নানু, মনোয়ারা বেগম আর রুহির ছোটো ছোটো মামা ভীতরে এলেন। দরজার শব্দে রুহি চোখ খুললো। সবাইকে আসতে দেখে রুহি আহানের বুক থেকে মাথা তুলে সরে বসতে চাইলো কিন্তু আহান রুহির বাহু ধরে নিজের কাছেই রাখলো। রুহির নানু এক দৃষ্টিতে নাতির দিকে তাঁকিয়ে রইলো। ঠিক রুহির মায়ের চোখে সেদিন যেই ভয়টা ছিলো আজ তা রুহির চোখে স্পষ্ট কিন্তু রুহিকে সেই ভয়টা আকড়ে ধরেছে। এতক্ষণ নানু নিজেকে সামলে নিলেন।
আহানের দিদা এগিয়ে গিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। রুহিকে সাহস দিলেন। কিছুক্ষণ পর নার্স আসলো তারপর বলে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে যাবে তখন পেশেন্টের সাথে শুধু একজন থাকতে পারবে। ছোট মামা আহানের জন্যে একটা শার্ট নিয়ে এলো কারণ আহান অনেক্ষন হলো রক্ত মাখা শার্ট পরে আছে। আহান সেটা নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো। ছোট মামা আহানের দিদাকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গেলো।
রুহির পাশে শুধু নানু বসে আছে। নানু নিজের হাতে রুহিকে খাইয়ে দিলেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা ভালোভাবে জানলেন। তারপর কিছুক্ষণ আশে পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” আহান কোথায়?”
রুহি পানির গ্লাসটা নামিয়ে অবাক হয়ে তাকালো। নানু আহানকে খুঁজছে কেনো? রুহি নীচু স্বরে বলল,” চেঞ্জ করতে গেছে।”
নানু রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তারপর জিজ্ঞেস করলেন ,” ভালোবাসিস ওকে?”
নানু এমন প্রশ্ন করলেন কারণ রুহি কখনো মুখ ফুটে এটা বলেনি যে সে আহানকে ভালোবাসে। প্রতিবার শুধু আহানের দোষগুলো ঢেকে গেছে। হয়তো তাকে ভয় পেয়েও বলতে দ্বিধা করেছে তাই রুহির মনের কথাটা নানুর জানা দরকার।
নানুর হটাৎ এমন প্রশ্নে রুহি অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে? কি বলবে না রুহি কিছুই বুঝতে পারছে না। তারপর নীচের ঠোঁট কামড়ে সাহস যুগিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।
” হুম,ছেলেটা ভালো। আগলে রাখতে জানে।”, নানুর মুখে আহানের প্রশংসা শুনে রুহি চমকালো। তাহলে কি নানুর মন গলতে শুরু করেছে। এর মাঝেই চেঞ্জ শেষে আহান ভিতরে এলো। নানু সরল ভঙ্গিতে আহানের দিকে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,” তুমি যাও নি।”
” নাহ, আমি থাকছি।”আহান কিছু না ভেবেই বললো কারন রুহিকে এ অবস্থায় রেখে গেলে শান্তি পাবে না সে। রুহি অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আহান আরো বললো,” আমি বাহিরে ম্যানেজ করে নিচ্ছি।” বলেই আহান বেরিয়ে যেতেই নানু বললেন,” রুহির নানা বাড়িতে একা তো, ওনার আবার হাই প্রেসার। তুমি রুহিকে দেখে রেখো আমায় যেতে হবে।”
রুহি অবাক হয়ে নানুর দিকে তাকালো। সবচেয়ে বেশি অবাক হলো আহান। নানু উঠে দাড়িয়ে রুহির মাথায় আদর করে দিয়ে আহানের কাছে গেলেন তারপর বললেন,” রুহিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে তাই হাতটা সাবধানে রাখতে হবে। ঘুমিয়ে গেলে তো রুহির হুশ থাকে না তুমি একটু খেয়াল করো। আমি যাই তাহলে।”, বলেই তিনি বেরিয়ে গেলো।
আহান মাথা ঝাকিয়ে বিষয়টা হজম করার চেষ্টা করছে। ঘটনাটা কি হলো? বরফ কি গলে পানি হয়ে গেছে!
আহান এগিয়ে এসে রুহির পাশে বসলো তারপর রুহির কপালের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,” তোমার হিটলার নানি হটাৎ এমন বনলতা সেন হয়ে গেলো কিভাবে?”
রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বললো,” জ্বি না, মোটেও আমার নানু হিটলার না। ওনার বাহিরের দিকটা এমন শক্ত কিন্তু উনি যখন আপন করে নেয় তখন সবটা দিয়ে নেয়।”
আহান বালিশগুলো ঠিক করতে করতে বলল,” হয়েছে বুঝেছি। এবার তুমি ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।” বালিশটা ঠিক করে রুহিকে শুইয়ে দিতেই রুহি আহানের শার্টের হাতা ধরে টানতে লাগলো। আহান রুহির কাছে এগিয়ে এসে বললো,” হুম বলো, এভাবে শার্ট ধরে টানলে কিভাবে বুঝবো?”
রুহি আহানের হাত জড়িয়ে ধরলো। আহান বুঝতে পেরে রুহিকে জড়িয়ে রুহির পাশে শুয়ে পড়লো। তারপর রুহির মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রুহির ক্লান্ত শরীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
________________________
হসপিটাল থেকে পরেরদিনই রুহিকে ডিসচার্জ করে দিলো। বাড়ি নিয়ে আসা হলো রুহিকে। ধীরে ধীরে রুহি সুস্থ হয়ে উঠলো। রুহি সাভাবিক হওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই রুহির নানু আহানের সাথে রুহির বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কারণ এ কয়দিনে আহান যে রুহির জন্য যোগ্য সেটা সে প্রমাণ করেছে।
আহান ছাদে রুহির জন্য অপেক্ষা করছিল। আহানের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হটাৎ নূপুরের শব্দে আহান মাথা তুলে তাকালো। গাঢ় বেগুনি রঙের শাড়ি পড়া খোলা চুলের এক কাঙ্ক্ষিত চেহারা তার সামনে। আহান অপলকে তাকিয়ে আছে,চোখের পাতাও নড়ছে না তার। রুহির নূপুরের শব্দে যেনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আহানের। রুহি এসে আহানের সামনে দাড়ালো তারপর একটা ভ্রু তুলে বললো,” মাঝে মধ্যে এমনভাবে তাকিয়ে থাকেন কেনো? ”
আহান রুহিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখতে দেখতে বললো,” কেমন ভাবে তাকিয়ে থাকি?”
” আপনার চেহারা দেখে মনে হয় যেনো প্রথম আমাকে দেখছেন।”, বলেই এগিয়ে এসে রুহি আহানের সাদা আর গোল্ডেন কাজের পাঞ্জাবির কলারটা ঠিক করে দিতে লাগলো।
” ঠিক আছে এরপর থেকে তাকাবোই না।”, আহানের কথায় রুহি আড় চোখে তাকালো। রুহির চাহনিতে রাগ স্পষ্ট।
আহান সেই চাহনি দেখে বললো,” তাকালেও দোষ না তাকালেও দোষ? তাহলে ম্যাডাম আমি কি করবো?”
” কিছু করতে হবে না।”, নিচের ঠোঁট উল্টে বললো রুহি। আহান রুহির মুখভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো।
তারপর রুহির কোমড় জড়িয়ে কাছে আনতেই রুহি হকচকিয়ে গেলো। আশে পাশের মানুষ দেখলে কি না কি ভেবে বসবে। রুহি নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করে বললো,” মানুষ দেখবে ছাড়ুন।”
” দেখুক। সবাই জানুক, যে তুমি আমার।”,
” কেনো সবাইকে জানতে হবে কেনো? আমি তো জানি, তাতে বুঝি আপনার হচ্ছে না।”,
আহান রুহির কাছে এসে ঠোঁট এলিয়ে বললো,” জানো বুঝি?”আহানের চাহনিতে রুহি লজ্জায় পরে গেলো লজ্জা সরাতে বললো,” আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, এতো দিন আমরা প্রেম করেছি। সবে আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে।”
” তাহলে মানলে আমি পারফেক্ট বয়ফ্রেন্ড? তোমাকে শেষমেষ বিয়ে করছি তাহলে।”
” হ্যা সে আমাকে বিয়ে করার সংগ্রামে আপনি সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনি কিন্তু আমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড আর আমি আপনার?”, বলেই ভ্রু কুচকে রাগী রাগী চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে রুহি।
” তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।”, আহানের উত্তরে রুহির চেহারায় এক ঝিলিক হাসি ফুটে উঠলো।
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৪১
#নবনী_নীলা।
” হ্যা সে আমাকে বিয়ে করার সংগ্রামে আপনি সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনি কিন্তু আমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড আর আমি আপনার?”, বলেই ভ্রু কুচকে রাগী রাগী চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে রুহি।
” তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।”, আহানের উত্তরে রুহির চেহারায় এক ঝিলিক হাসি ফুটে উঠলো। রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে আহ্লাদি গলায় বললো,” সত্যি!”
আহান রুহির একদম কাছে এসে বলে,”হুম সত্যি।”রুহির গাল দুটো লাল আভায় ঢাকা পড়লো। আহান রুহির কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতেই তন্বী সেখানে উপস্থিত হয়।
দুজনকে একসাথে দেখে তন্বী পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে বললো,” আজ আমি সিঙ্গেল বলে কপালের এলোমেলো চুলগুলো নিজেকেই ঠিক করতে হয়। আর এদিকে দেখো দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে যাচ্ছে তাও প্রেম কমছে না এদের।”
তন্বীর কণ্ঠ কানে আসতেই রুহি ছিটকে সরে দাড়ালো। তারপর আশেপাশে তাকাতেই রুহি একদম লজ্জায় পরে গেলো। কেউ জানালা দিয়ে নয়তো কেউ বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখ লুকানোর জায়গা খুজছে রুহি। আহান মুখ দিয়ে তিক শব্দ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তন্বীর দিকে তাকালো। তারপর বললো,”তুই উপরে এসেছিস কেনো?”
” কেনো ডিস্টার্ব করে ফেললাম বুঝি?”, ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো তন্বী।
” বুঝতেই যখন পেরেছিস তখন দাড়িয়ে থাকিস না, নীচে যা।”, তীক্ষ্ণ চোখে বললো আহান।
রুহি খালি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, এই লোকটার জন্য এইসব শুনতে হচ্ছে। তন্বী এগিয়ে এসে রুহির পাশে দাড়ালো তারপর বললো,” নীচে তো যাবো কিন্তু একা যাবো না রুহিকে সঙ্গে নিয়ে যাবো।” রুহির হাত ধরে বললো,” ডিস্টার্ব যখন করেছি একটু ভালোভাবে করি। চলো রুহি নিচে চলো।”
আহান বেগ্রা দিয়ে বললো,” রুহি যাবে না।” আহানের কথায় রুহি বড়ো বড়ো চোখে করে তাকালো। তন্বী বাকা হাসি দিয়ে বললো,” তাহলে আমি কি নীচে গিয়ে বলবো যে আহান রুহির সাথে প্রেম করবে তো তাই রুহিকে আসতে দেয় নি।”
আহান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো তন্বীর দিকে। তন্বী রুহিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,” তোমার রোমিওর চেহারা দেখেছ? মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমাকে গিলে খাবে।” তন্বীর কোথায় রুহি খিল করে হেসে ফেললো।
________________________
আজ গায়ে হলুদ;
সন্ধ্যা থেকে লামিয়া রুহিকে সাজাতে ব্যাস্ত। রুহি বিরক্তি নিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে। এতো বিরক্তি সে আগে কখনো হয় নি। শেষমেশ খুব বিরক্ত হয়ে বলল,” লামিয়া তোর হয়নি। বোন আমার থাম একটু, আর কতো?”
” আরে চুলটা পারফেক্ট হতে হবে। আমি তোকে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছি মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে না। তারপর হুট করে সাজ নষ্ট হলে তখন কি হবে?”, খুব মনোযোগ দিয়ে রুহির চুলে চিকন ক্লিপ বসিয়ে বললো লামিয়া।
” ধুরো এতো পারফেক্ট হতে হবে না। ভাল্লাগছে না আর।”, ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।
” হ্যা, বর তো আজ দেখবে না। ভালোলাগবে কি করে? বর এতো ইম্পর্ট্যান্ট আমাদের থেকে?”,
” উফ আমি কখন এসব বললাম!”
” তুই বলিসনি কিন্তু আমি বুঝেছি ঠিকই।”
” কচু বুঝেছিস।”রুহির কথার মাঝে লামিয়ার ফোন বেজে উঠলো। রুহি তাকিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে নাম উঠেছে জয়। রুহি একটু কেশে উঠে বললো,” তোর নিরামিষ ফোন করেছে।”
কথাটা শুনেই লামিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচ অফ করে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো। রুহি হকচকিয়ে তাকালো,” ওমা! এমন করলি কেনো তুই?”
” কথা বলবো না ওনার সাথে। খুব যখন কাজ তখন ফোন করে কেনো? আমি যখন ফোন করেছিলাম, আমি ব্যাস্ত আছি বোলে তো ঠিক ফোনটা কেটে দিলো। এখন আমিও ব্যাস্ত আছি।”লামিয়ার রাগী চেহারা দেখে রুহি হেসে ফেললো। লামিয়া রাগী চোখে তাকাতেই রুহি ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” আচ্ছা আগে না নামটা নিরামিষ লিখে সেইভ করা ছিলো হটাৎ জয় লেখা?” বলেই রুহি ভ্রু তুলে আবার নামালো।
” কি করবো বেহায়া লোকটা সেদিন যা করলো।”এতটুকু বলেই চুপ করলো লামিয়া। রুহি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি করলো?”
” আরে দেখে ফেলেছিলো আমি যে ওনার নাম নিরামিষ সেইভ করে রেখেছি। তারপর হুট করে কি হলো? আমায় কোলে তুলে ধুমধাম কিস করলো। আরেকটু হলে দম আটকে মারা যেতে নিচ্ছিলাম। তারপর বেহায়া লোকটা বললো, এতটাও নিরামিষ না আমি। খুব জলদি তুমি সেটা টের পাবে।”
” টের পেয়েছিস বুঝি?”, একগাল হাসি নিয়ে বলল রুহি।
” নাহলে কি সাধে বেহায়া বলছি? নিজে নামটা সে নিজেই বদলে দিয়েছে।”
” বাহ্ ভালোই তো। তোর তো নিরামিষ পছন্দ ছিলো না।”
” কে বলেছে? নিরামিষ ভালো ছিলো। কি সুন্দর টিজ করা যেতো।” রুহি লামিয়ার কথায় খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
” উফ! বাদ দে তো। দেখি তোর চুলটার খোঁপা ঠিক করে দেই।”বললো লামিয়া
লামিয়া আরো আধাঘন্টা নিয়ে রুহির চুলের খোপা করলো। এই মেয়েটা সাজগোজ নিয়ে মারাত্মক সিরিয়াস। রুহি নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। লামিয়ার রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” এমনি এমনি কি আর জিজু আবার বিয়ে করছে তোকে? এভাবে একবার দেখলে কি করে বসে?” বলেই মিট মিট করে হাসলো লামিয়া।
রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,” ওনাকে দেখাচ্ছে কে?”
কথার মাঝেই ঘরে রুহির নানু আর নুড়ি আসলো। রুহিকে যেনো চেনাই যাচ্ছে না। রুহির নানু যেনো নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবি দেখছে। চোখ ভিজে আসতেই তিনি একটু কাজল নিয়ে রুহির কানের পিছনে দিয়ে বললেন,” সবাই বসে আছে তো। চলো।”
গান, হইহুল্লোড় শেষ হতে হতে রাত একটার উপরে হয়েছে। একে একে সবাই চলে গেছে। রুহি নিজের রূমে এলো, পুরো গায়ে তার হলুদে মাখামাখি। হলুদ এভাবে কেউ মাখে? রুহি আয়নার সামনে দাড়িয়ে টিসু দিয়ে মুখ পরিস্কার করছিলো। হটাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরতেই রুহির বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। আয়নায় দিয়ে তাকিয়ে পিছনে আহানকে দেখে রুহির মুখ হা হয়ে গেলো। রুহি হা করেই পিছনে তাকালো। প্রত্যেকদিন আসে সেটা এককথা তাই বোলে আজও! সারা বাড়ি ভর্তি এখনো মানুষজন আছে। রুহি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আহান হাত দিয়ে রুহির মুখের হা বন্ধ করে দিয়ে বললো,” এভাবে হা করে থাকলে মুখ ব্যাথা করবে তো।”
রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। তারপর বিস্ময় নিয়ে বললো,” আপনি…! আজ…! এইখানে..! কেনো!”
” তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছিল।”, বলেই রুহিকে জড়িয়ে ধরলো আহান।
” কেনো? কালকে দেখতে পারবেন না? কতো মানুষ আছে বাড়িতে। কেউ এসে পড়লে? আমি তো দরজাও শুধু চাপিয়ে এসেছি। ছাড়ুন, ছাড়ুন।” বলেই আহানকে সরিয়ে দেয় রুহি।
আহান বুকের কাছে দুই হাত ভাজ করে রুহির দিকে তাকালো। রুহি কড়া চোখে তাকিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই আহান রুহির হাত টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরে, কোমড় থেকে শাড়ির কিছু অংশ সরে যেতেই আহানের স্পর্শে চোখ বন্ধ করে কেপে উঠলো রুহি। আহান রুহির সামনে মুখ এনে বললো,” আমি এতো কষ্ট করে পাইপ বেয়ে উপরে উঠলাম আর তুমি মানুষ দেখলে কি বলবে? কি হবে? কেউ দেখে ফেলবে এইসব নিয়ে পরে আছো।”
” পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছেন তো কি হয়েছে? এতে নতুন কি আছে? প্রতিদিন তো একই ভাবে আসেন। আমার তো মনে হয় আপনি নিজের রুমেও এখন জানালা দিয়ে ভিতরে যান। কি দরকার ছিলো বলুন তো আজকে আসার? একদিন না দেখলে কি হতো?”, শেষের কথাটা ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।
আহান হাতের কাছে একটা হলুদের বাটি দেখলো। আহান রুহির দুই হাত পিছনে নিয়ে একহাতে শক্ত করে ধরলো। রুহি ছটফট করতে লাগলো। আহান হাত বাড়িয়ে একটু হলুদ নিয়ে রুহির নাকে হালকা মাখিয়ে দিয়ে বললো,”তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছো, এ অভ্যাস আমি বদলাতে পারবো না, আর চাইও না। আজ রাতে হয়তো আমার ঘুমও আসবে না। যদিও এসবে তোমার কি তুমি তো দিব্যি কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাবে।”
” কেনো আপনার বুঝি এবার আমার কোলবালিশকেও হিংসে হয়? সমস্যা কি? আপনিও একটা কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।”, ঠোঁট এলিয়ে বললো রুহি।
” উহু,তোমার চুলের ঘ্রাণ না পেলে আমার ঘুম আসে না। আজকেও থেকে যাই কি বলো?”, আহানের কথায় রুহির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। রুহি আহানকে ঠেলতে লাগলো তারপর বললো,” আপনার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। এক্ষুনি আপনি যান। আজকে লামিয়া থাকবে আমার সাথে, যখন তখন চলে আসবে কিন্তু লামিয়া।”
জয় সেই কখন থেকে এসে বসে আছে কিন্তু লামিয়া জয়কে এড়িয়ে যাচ্ছে। মেজাজ বিগড়ে আছে লামিয়ার। লামিয়া রুহির রূমের দিকে যাচ্ছিলো। জয় পিছু পিছু এসে বললো,” লামিয়া দাড়াও।”
লামিয়া আরো হনহণিয়ে হাঁটতে লাগলো। রুহির রুমের ভিতরে যাবে তার আগেই জয় লামিয়ার হাত ধরে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে ধরলো। লামিয়া আড় চোখে তাকালো জয়ের দিকে তারপর মুখ বাকালো।
” ফোন ধরছো না, কথাও বলছো না।একবার বলবে তো কি হয়েছে?”, শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো জয়।
” কি হয়েছে? আমার চাচির খালাতো বোনের ছেলের মেয়ে হয়েছে।”, বলে আবারও মুখ বাকাল লামিয়া।
” তোমার চাচির খবর আমি জানতে চাই নি। তুমি এমন করছো কেনো জানতে চাইছি।”, শান্ত গলায় বললো জয়।
” আমার কি হবে? আমার বেস্টফ্রেন্ড এর বিয়ে আমি অনেক ব্যাস্ত আছি।”, অন্য দিকে তাকিয়ে বললো লামিয়া।
” উফ, আচ্ছা সরি। এবার থামাও প্লিজ এইসব।”, একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো জয়।
” কেনো আমি কেনো থামাবো? ঐ মেয়ে যখন স্যার স্যার বলছিলো তখন তো তাকে বললেন না কিছু উল্টো আমাকে বললেন ব্যাস্ত আছেন। হুহ! বুঝিনা ভেবেছেন?”
” আচ্ছা, বাসায় চলো। সেখানে গিয়ে ঝগড়া করা যাবে।”
” আমি কোথাও যাচ্ছি না আমার আমি রুহির সাথে থাকবো। আপনি বাসায় গিয়ে আমার ছবির সাথে ঝগড়া করেন।” , বলে জয়ের হাতের নীচ দিয়ে বেরিয়ে দরজা ঠেলতেই দেখলো রুহি আহানের খুব কাছে। লামিয়া আর জয়কে দেখে রুহি ছিটকে সরে দাড়ালো। আহান বুঝতে পারছে না সবাই খালি তাদের ডিস্টার্ব করতে চলে আসে কেনো?
দুজনকে একসাথে দেখে লামিয়া বেশ চমকালো। জয় আস্তে করে বললো,” তোমার মনে হচ্ছে না ওদের মাঝে হাড্ডি হওয়ার দরকার নেই।”
লামিয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” একদমই মনে হচ্ছে না।” বলেই লামিয়া ভিতরে এলো তারপর বললো,” জিজু আপনি এইখানে কি করছেন বলুন তো? কাল বিয়ে একদিন বুঝি সহ্য হয় না?”
আহান কিছু বললো না। রুহি ফিসফিসিয়ে বললো,” আপনি এখন যান।”
” এই হিসেবটা তাহলে তোলা রইলো বাসর রাতের জন্য।”, রুহির কানে বলে সোজা হয়ে দাড়ালো আহান। আহানের কথা শুনে রুহির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। রুহি একটা ঢোক গিললো।
আহান জয়কে হাত দেখিয়ে বললো,” জয় চলো। এরা দুজনেই আজ জোট বেঁধেছে।”
লামিয়া আজ মানবে না বোঝাই যাচ্ছে তাই জয় ব্যার্থতার নিঃশ্বাস ফেললো। আহানকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে রুহি চমকে উঠে বললো,” একি আপনি দরজা দিয়ে বের হচ্ছেন কেনো? সবাই দেখবে তো।”
আহান রুহির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে জয়ের সাথে বেরিয়ে পড়লো। রুহি আর লামিয়া বিছানায় বসে একে অপরের কাধে মাথা রাখলো। বরগুলো একেকটা জুটেছে তাদের কপালে।
[ #চলবে ]
[ #চলবে ]
❣️