#সম্পর্কের__দেয়াল
#সপ্তম__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa|
রিধি হাসি মুখে সম্মতি দেয়। অতঃপর রিধি রিমি কে নিয়ে আসতে রুমে গিয়ে শক্ড….! কারণ রিমি চুল অগোছালো ভাবে ছেড়ে দিয়ে, অদ্ভুদ রকম মেকআপ করে বসে আছে। এ যেনো ঠিক একটা পেত্নী সদ্য শেওড়া গাছ থেকে নেমে এসেছে। কি যে একটা বাজে অবস্থা। রিধি প্রথম দেখে ভয় পেয়ে যায়। বুকে থুথু ছিটিয়ে রুমে আসে।
‘রিমি এ অবস্থায় কেন তুই?’
রিধি হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। রিমি বিয়ে আটকানোর জন্য এসব করেছে তা মস্তিষ্ককে এসে পৌঁছেছে সবে। রিধি আর হাসি চেপে রাখতে না পেরে হো হো করে হেসে উঠে। রিমি প্রচুর বিরক্ত হয়। সে টেনশনে জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছে আর রিধি কিনা তা দেখে হাসছে? রিমির এখন ইচ্ছা তো করছে রিধির সব চুল একে বারে টেনে ছিড়ে দিতে। দাঁত সব কটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে কিন্তু আফসোস তা সে পারবে না। রিমি দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসতে থাকে তাও নিজের ভেতরে ভেতরেই বাহিরে প্রকাশ করা বারণ।
‘রিমি তোর মনে আছে রাজিয়া আন্টির কথা?’
রিধির এমন কথায় রিমি ভ্রুঁ কুঁচকায়।
‘হ্যাঁ একদিন যে এসেছিলো?’
‘হুম উনি ই রাজিয়া আন্টি। আর রাজিয়া আন্টির ছেলে হলো ইমন জুবায়ের। আম্মুর সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পরিচয় হয় সেই সুবাদে আন্টি সেদিন আমাদের বাড়িতে আসেন। মনে আছে তুই তো সারাদিন উনার সাথে কত কথা বলেছিস আড্ডা দিয়েছিস!’
‘হ্যাঁ তো?’
‘তো এটাই যে আন্টি সেদিন তোকে দেখে তোর চাঞ্চল্যিতা দেখেই পছন্দ করেছিলো ইমনের বউ করার জন্য সো তুই এই যে এখন ভূতনি মার্কা সাজ দিয়েছিস এই সাজে কিছুই হবে না। উনারা যেহুতু আগেই তোকে দেখে নিয়েছে এখন এসব করলে তারা বুঝে যাবে তুই দুষ্টুমি করছিস!’
রিমি নিজের বিপদ নিজেই কোলে নিয়ে বসে আছে অথচ মনে মনে এই সব লো মার্কা বুদ্ধি কিভাবে বের করতে পারলো ভেবেই নিজেই নিজের গালে কয়েক টা চড় বসাতে ইচ্ছা হলো। রিধি কি বোঝাতে চাইছে তা সুস্পষ্ট। রিমি বিয়ে ভাঙ্গার জন্যই এই সাজ সে সেজেছিলো। যাতে করে রিমি কে পাগল ভেবে উনারা বিয়ে ক্যান্সেল করে আর রিমির প্ল্যান ফুলফিল হয়ে যায়। এখন তো সব ভেস্তে গেলো। রিমি তোতলিয়ে বললো,
‘ত্ তু্ তুমি কি বলতে চাও! আমি বিয়ে যাতে না হয় এই জন্য এমন করেছি?’
‘হুম তাছাড়া আর কি মনে হবে?’
রিমি ভেঙ্গচি মেরে বললো,
‘একদমি না হঠাৎ করে আমার এমন সাজ দিতে ইচ্ছে হয়েছে তাই সেজেছি আর কিছুই না।আমি এক্ষুনি মুখ ধুয়ে আসছি!’
রিমি রিধির থেকে বাঁচতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। রিধি আবারো হাসলো রিমির এমন আজগুবি সাজ দেখে। মনে মনে এতটুকু খুশি হলো যে তার মিথ্যে কথা কে রিমি বিশ্বাস করেছে! রিমি নিজেকে গালি দিতে থাকে শেষে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে আসে। যেহেতু আর কোনো উপায় নাই। রিধি রিমি কে শাড়ি পরিয়ে দেয়। রিমি রিধি কে কোনো রকমের মেকআপ করতে দিলো না। রিধি ও ভাবলো রিমি তো ন্যাচরাল ই সুন্দর তাই আর ওসবের প্রয়োজন নেই। চুল গুলো একপাশে ছেড়ে দেয়। রিধি বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে। কম ভালোবাসে নি তাও কেন রিমি তার সংসারে আগুন লাগাতে আসলো কে জানে!
রিমির মুখের দিকে তাকালে খুব নিষ্পাপ লাগে তাকে অথচ এই মেয়ে টাই নিষ্পাপ রুপী পাপী। মুখোশধারী সয়তান।
‘কি দেখছো এমন করে?’
রিমির কথায় রিধির ধ্যান ভাঙ্গল।
‘কিছু না চল দেরি হয়ে যাচ্ছে!’
রিধি রিমি কে নিয়ে নিচে আসে। রিমি কে সোজা ইমনের পাশে নিয়ে বসিয়ে দেয়। পাভেল শুধু নিরব দর্শক। কর্তব্য পরায়ণ হওয়ায় হাসছে কথা বলছে জাস্ট এই টুকুই মনের ভেতর তো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। রিমি নিচের দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়। ইমনের বাবা মা ভালো করে রিমি কে দেখলো। রিমি আসলেই সুন্দরী। দেখতে ফর্সা গোলগাল চেহারা টানা টানা হরিণীর মতো চোখ। পাতলা ঠোঁট সেই ঠোঁটের উপর তিল টা তার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে হাজার গুন। কোনো রকম খুঁত ধরতে পারলেন না ইমনের বাবা মা। ইমন তো একেবারে হা হয়ে গেছে। এতো সুন্দর কোনো মেয়ে কে সে মনে হয় আর কখনো দেখে নি। এক নজরে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে সেই তখন থেকে। উপস্থিত সকলে তা খেয়াল করলো। পাভেলের মন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। পারছে না ইমনের চোখ উপড়ে ফেলতে! ইমনের বাবা মা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। ইমনের বাবা গলা ঝাড়েন। ইমন বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে নেয়। রিধি আর তার বাবা মা বুঝে গেলো বিয়ে তবে হবেই।
রিমি চোখ উঠিয়ে একবার দেখেছিলো যে ইমন তার দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ইমনের চৌদ্দ গুষ্টি কে উদ্ধার করতে লাগলো,
‘শালা জীবনে কখনো মেয়ে দেখিস নি? খেয়ে ফেলবি নাকি? রাম ছাগল একটা! সময় থাকতে পালা নাহলে একটা ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো পঙ্গু বানিয়ে উগান্ডা পাঠাবো!আমাকে বিয়ে করার শখ একেবারে ঘুঁচে যাবে!’
যেই না রিমি চোখ উঁচিয়ে একবার রাজিয়া আন্টি কে মানে ইমনের মা কে দেখবে ভাবলো দেখে এ কি এটা কে? আপু না বললো রাজিয়া আন্টি এনার মা তাহলে এই মহিলা কে? রিমি নিজে বিড়বিড় করতে থাকলো। রিধি বিষয় টা খেয়াল করে মনে মনে বললো ‘তুমি যদি চলো ডালে ডালে তাহলে আমি ও চলি পাতায় পাতায়!’
রিধি মূলত তখন রিমি কে নিচে নিয়ে আসার জন্যই মিথ্যা কথাটা বলেছিলো। আসল রাজিয়া যিনি তার কোনো ছেলে নেই ২ টি মেয়ে আছে। তারা বিবাহিত! এই কথাটি তিনি সেদিন বলা সত্ত্বেও রিমির স্মরণে ছিলো না।
——————
হঠাৎ করে পাভেলের ফোন টা বেজে উঠে। অফিসের বস ফোন দিয়েছে দেখে পাভেল ফোন রিসিভ না করে পারবে না দেখে বললো,
‘আপনারা কথা বলুন আমি একটু আর্জেন্ট ফোন টা তুলতে হচ্ছে। কিছু মনে করবেন না!’
ইমনের বাবা বললো,
‘না না সমস্যা নেই!’
পাভেলের অফিস থেকে বস ফোন দিয়েছে খুব জরুরী কাজে তাকে আগামীকালের মধ্যে ঢাকার বাইরে যেতে হবে। একটা ডিল কমপ্লিট করতে হবে এতে কোম্পানি বড় অংকের লাভ হবে। আর এই ডিল কোনো ভাবে ক্যান্সেল হলে কোম্পানি অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবে। বুঝাই যায় এটা কতো গুরুত্বপূর্ণ। পাভেল মহা সমস্যায় পড়ে গেলো। এক দিকে রিমির বিয়ে সংক্রান্ত ঝামেলা অন্য দিকে অফিস। পাভেল কোনো টা ছাড়তে পারবে না তাই বস কে আস্বস্ত করলো সে যাবে আগামীকাল।
——————
যাই হোক সব শেষে বিয়ের পাকা কথা হয়। ইমন জানায় তার পছন্দ হয়েছে। রিধির বাবা মা ও বললো তাহলে আলহামদুলিল্লাহ সামনে এগোনো যাক। পাভেল বাহিরে থেকে সব শুনলো। রিমির বিয়ে আটকাতে গেলে তার নিজের ই মহা সমস্যা হবে। সবাই সন্দেহ করবে। পাভেলের মনে হঠাৎ সয়তানি বুদ্ধি খেলে যায়।
পাভেল বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিধি কে ফোন দেয়।রিধি ফোন রিসিভ করে।পাভেল ব্যস্ততার ভান নিয়ে বললো,
‘রিধি শোনো আমি একটু দরকার বাহিরে যাচ্ছি আসতে রাত হবে তোমরা ওদিক টা এগো! আমার কোনো দ্বিমত নেই!’
‘দ্বিমত মানে?’
‘এখন কথা বলার সময় নেই আমি রাখি!’
পাভেল ফোন রেখে দেয়।
———————
ইমনের বাবা মা ইমন চলে যায়। রিমি রিধি কে ডেকে বললো,
‘আপু তুই আমাকে মিথ্যা কেন বললি যে ওইটা রাজিয়া আন্টির ছেলে?’
রিধি খিলখিল করে হেসে উঠলো।
‘তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি তাছাড়া রাজিয়া আন্টির কোনো ছেলে নেই এই কথাটা তুই ভুলে গেলে কি আমার দোষ?’
‘আমাকে বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দিলে খুশি হবে তাই তো?’
‘মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছিস আজ হোক বা কাল বিয়ে তো করতেই হবে তাই না?’
রিমি চুপ……
—————–
পাভেল বাড়ি ফিরে আসে রাত ১১ টায়। রিমির বিয়ের কথা রিধির বাবা মা তাকে জানায়। সামনে শুক্রবার রিমি আর ইমনের বিয়ে। আজ বুধবার মানে আর দুইদিন। পাভেল সব সহজ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়। পাভেল কে এতো সহজে মেনে নিতে দেখে রিধি আর তার বাবা মা খুব অবাক হন। রিমি আর পাভেল দুজনকে চোখে চোখে রাখতে হবে। পাভেল ও তার মিটিংয়ে এটেন্ড করার কথা জানায়। আর কাল ই তাকে যেতে হবে বলে।
‘তাহলে রিমির বিয়ের কি হবে?’
‘সমস্যা নেই একমাত্র শালিকার বিয়ে আমি না এলে কি হয়। কি বলো শালিকা?’
রিমির দিকে ইশারা করে রিমি জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে তোলে।
‘আমি মিটিংটা একদিনেই শেষ করতে পারবো পরের দিন গায়ে হলুদের সময় এসে যাবো সমস্যা নেই!’
‘আচ্ছা তাহলে তো হলোই!’
‘হুম”
———————-
রিধির পাভেল কে সন্দেহ হয় তাই সে রাতে আর ঘুমাতে পারলো না। কারণ এতো সহজে মেনে নেওয়ার কথা তো পাভেলের ছিলো না। রিধি টেনশনে পড়ে যায়। রিমির তো আরো বাজে অবস্থা। পাভেল কি তবে তাকে ব্যবহার করলো? রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিড়ার উপক্রম। সারারাত কাঁদতে কাঁদতেই গেছে তার। না পাভেল কে বলতে না পারছে না কিছু করতে পারছে! রাতে না ঘুমানোর কারণে সকালে রিমি কে দেখে যেতে পারলো না পাভেল।
রিধি পাভেলের বসের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয় যে আসলেই পাভেল অফিসের কাজেই যাচ্ছে। পাভেল চলে যায়। রিমির ফোনের সিম খুলে রিধি নিজের কাছে রেখে দেয় যাতে পাভেলের সাথে রিমির কোনো প্রকার যোগাযোগ না থাকে। সাবধানের মার নেই!এখনো পর্যন্ত পরিস্তিতি স্বাভাবিক।এমন কি যাওয়ার আগে পাভেলের আচরণ ও।
———————-
সকাল ১১ টার সময় রিধির হঠাৎ পেটে প্রচুর ব্যথা হতে থাকে। আস্তে আস্তে ব্যথা এতোটাই প্রখর হয় যায় যে রিধির পক্ষে তা সহ্য করা দায় হয়ে পড়ে। রিধির মা এসে দেখে খুব খারাপ অবস্থা। সারা বিছানায় রক্তের দাগ তা দেখে রিধি বুঝতে পারে তার পেটে থাকা সেই ছোট্ট প্রাণ টা আর বেঁচে নেই! রিধি গগন কাঁপিয়ে চিৎকার দেয়,
‘আল্লাহ রে….’
চলবে______________