#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__২২
রিধির অফিসের বস আর কেউ নয় রাহুল ই। এই সাড়ে ৩ বছরে সে জীবনে অনেক কিছু পেয়েছে। যা পাওয়ার কথা সে কখনো ভাবে নি। পাওয়ার হিসেব করেও শেষ করা যাবে না কিন্তু না পাওয়ার সংখ্যা একটাই। আর তাহলো রাহুল তার জীবনে পরিবারের পরে সব থেকে বেশি ভালোবাসে যাকে আপন করে পেতে চেয়েছিলো তাকেই সে পায় নি। এই একটাই না পাওয়ার শূন্যস্থান তার সকল পাওয়া কেও হার মানাতে সক্ষম। সেদিন সে শুধু একটা ভালো জবের জন্য তার ভালোবাসা কে হারিয়েছিলো। এই সাড়ে ৩ বছরে তার সব প্রাপ্তি হয়ে গেছে। জীবন তাকে আর কিছু দিতে কার্পন্যতা করে নি। প্রথমে ভালো চাকরি তারপর আস্তে আস্তে পদোন্নতি করতে করতে আজ রাহুল একজন নামকরা সফল বিজনেসম্যান। গোটা একটা ভালো কোম্পানির মালিক সে। এক নামে সবাই তাকে চিনে। তবে এতো কিছুর পর ও তার জীবনে সেই শূন্যতা এখনো চির বহমান।
এতো গুলো বছর মনের কোণে জোড় করে বন্দি করে রাখা সকল হাহাকার আজ অনাকাঙ্ক্ষিত এক দেখাতেই প্রবল বেগে উত্তাল পাতাল ঝড় শুরু করে দেয়। নিজেকে কন্ট্রোল করা যেখানে দায় সেখানে সে জোড় করে নিজেকে চেপে রেখেছে। তবে নিজেকে দমাতে পারলে ও চোখ দুটো কে দমাতে পারে নি। অনেক বছরের শোধ যেনো তুলছে আজ চোখ দুটি। তৃপ্তি নিয়ে দেখছে সামনে থাকা মানুষ টা কে। সে এক দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। একবারের জন্যও পলক পড়ছে না আঁখি দ্বয়ের।
রিধি ও তেমন ই। তবে সে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রাহুল কোনো এক অজানা অভিমান ও চাপা আর্তনাদে নিজেকে আটকে রেখে বললো,
‘বসুন মিস রিধি!’
ঐ ব্যক্তিটির মুখে নিজের নাম শুনে কেঁপে উঠে সে। প্রবল উৎকন্ঠা চেপে রেখে বসলো সে। কিন্তু মন টা থেমে নেই। লাগাতার অসংখ্য অদ্ভুত ভাবনা মনে ভেসে আসছে। তার মধ্যে কিছু প্রশ্ন হলো,
‘রাহুল এখানে কেন? চোখে কি ভুল দেখছি? আচ্ছা ও কি আমাকে দেখে চমকে গেছে? আমার সম্পর্কে কি ভাবছে রাহুল? ও কি কখনো ভেবেছিলো আমাকে এভাবে তার অফিসে দেখবে? ওর কি আমাকে মনে আছে? চিনেছে আমায়?’
ওর এতো সব ভাবনা সব গোল্লায় গেলো। রাহুল অস্বাভাবিক কোনো আচরণ ই করলো না। উল্টো যেটা করলো তাতে ও নিজেই চমকে যায়। রাহুল এমন ভান করলো যেনো তাকে চিনতেই পারে নি। রিধি কে তার কাজ সব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝিয়ে দিয়ে বললো,
‘আপনি এখন আসতে পারেন!’
কিছুক্ষণ ঐ মানুষটির দিকে তাকানো শেষে বিপরীত জন বললো,
‘জ্বি স্যার!’
রিধি ও ওর এই স্বাভাবিক ব্যবহারে নিজের মতো যা পেরেছে ভেবে নিজেকে শান্তনা দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে। আর মন কে বুঝ দিয়েছে একটাই কথা,
‘উনি আর আগের সেই মানুষ টি নেই। উনি এখন একজন বড় বিজনেসম্যান। তোর মতো ছোকরা কে মনে করার সময় আছে উনার? তোকে ভুলে গিয়েছে তুই ও ভুলে যা। আর মেনে নে যে ও তোর বস আর তুই তার অফিসে চাকরি করা একজন সামান্য ইমপ্লয় ব্যাস!’
মন কে শক্ত করলো সে। পুরনো সব অতীত হয়ে গেছে অতীত ই থাকুক বলে নিজেকে সামলে স্বাভাবিক হয়ে যায় আর কাজে মন দেয়!
————————-
কেটে গেছে ১০ দিন। পাভেল কে বাড়ি তে নিয়ে আসা হয়। তার এক পায়ে ব্যান্ডেজ করা আর অন্য পা তো নেই। যা ও খুইয়েছে। সেই প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত পাভেল চুপ করে আছে আর নিজ চোখে সব অবলোকন করেই যাচ্ছে। এই চোখে চাওয়া যেনো আপন মানুষ টার সয়তানি রূপ দেখার অপেক্ষায় ব্যস্ত। পাভেলের মা আর রিমি কম চেষ্টা করে নি পাভেল কে কথা বলাতে তবে সে মুখ খুলে নি।
তাছাড়া এই অসুস্থ অবস্থায় ও’কে বেশি হাইপার করা ও ঠিক হবে না দেখে কেউ ই আর ওর উপর প্রেশার দিলো না। দিন রাত কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত রিমি। তবে এতো খারাপ এর ভিড়েও একটা দিক ওর ভালো আর তা হলো। পাভেলের প্রতি রিমির ভালোবাসা। যা ধ্রুব সত্য। ভালোবাসার মানুষ টার এই অবনতি তেও সে এক সেকেন্ডের জন্য ও হাত ছাড়ে নি। এসব দেখে পাভেলের মা রিমির উপর আর তেমন অবহেলা চাপান নি। কেননা তিনি যদি এখন অবহেলা করেন তাহলে তার ফলাফল নিজের সন্তান পাবেন। এটা তিনি বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরে নিজের বাকশক্তি কে রুদ্ধ করে রেখেছেন। তবে রিমির চাকরির ব্যাপার তিনি প্রথমে নারাজ থাকলে পরে যখন টাকার প্রসঙ্গ আসে তখন আর কিছু বলতে পারেন না। অবশ্য বলার ওতো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
কারণ এই অবস্থায় পাভেল তো আর চাকরি করতে পারবে না। তিনি ও পারবেন না। তাহলে অবশিষ্ট রইল কে রিমি? তাকে তো করতেই হতো!
পাভেলের অবস্থা লিমন নিজে এসে দেখে গিয়েছে। এবং রিমি কে এই কয়েক টা দিন ছুটি দিয়েছেন। পাভেল সব লক্ষ্য করেও কিছু বলছে না। বলার মতো কিছু নেই তার কাছে।
অসুস্থ স্বামী কে ঔষধ পত্র ঠিকভাবে খাইয়ে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সে। যাওয়ার আগে স্বামীর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তারপর যায়। ঐ মানুষ টি তখন চোখ বন্ধ করে নিজেকে ঘুমন্ত প্রমাণে ব্যস্ত ছিলো। রেডি হয়ে নিচে আসে সে। তখন সামনে পড়ে শাশুড়ি মা।
‘মা আমি যাচ্ছি। আপনি পাভেল কে দেখে রাখবেন। রান্না বান্না ও করা হয়ে গেছে। ওর কিছু লাগলে দিবেন কেমন। আর কোনো ঔষধ শেষ হয়ে গেলে আমাকে প্রেসক্রিপশন টা দিলেই হবে। আমি সন্ধ্যায় আসবো।’
‘যা যা আমি আছি আমার ছেলে কে দেখে রাখার জন্য!’
এই কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এতো কিছু করেও মানুষ টির মুখে থেকে দুটি ভালোবাসার কথা কপালে জুটে না তার। বড় দুর্ভাগ্য তার। তবে ওএই মানুষ টিকে মারার জন্য যেই প্ল্যান সে করেছিলো সেই ঔষধ পত্র গুলো নিজের হাতে ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছে। কেননা এই কয়দিনে একটা কথা সে ভালো ভাবেই বুঝেছে এই জীবনে একটা মানতার খুব প্রয়োজন। আর পাভেল এর ও! কেন জানিনা এখন সে মায়ের অভাব টা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে নিজের অজান্তেই!
তাড়াহুড়ো করে অফিসে ঢুকতে গিয়ে বস আই মিন লিমনের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেইদিনের মতো আজো পড়ে যেতে নেয় রিমি। সেইম আজো লিমন তাকে ধরে ফেললো। খুব দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সামলে বললো,
‘আ’ম সো সরি স্যার!’
‘আমাকে ধাক্কা দাও তোমার এতো বড় সাহস?’ (চোখ গরম করে)
ধমক শুনে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় বিপরীতে থাকা মানুষ টি। যেনো একটু হলেই কান্না করে দেবে। এটা দেখে অন্য জন ফিক করে হেসে দেয়।
‘ইট্ ওকে আমি কিছু মনে করি নি মিস রিমি। আপনি আমার কেবিনে আসুন!’
ভ্যাবলাকান্তের মতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঐ মানুষটির যাওয়ার পানে চেয়ে থাকলো রিমি। পর ভাবছে এটা কি হলো?
যাই হোক নিজের কেবিনে এসে ব্যাগ টা রেখে একটু বসতে যাবে ওমনি অফিসের এক কলিগ বললো,
‘কি ব্যাপার আজ এতো দেরি করলেন যে?’
‘ঐ একটু কাজ ছিলো আর কি!’
‘ওহ আচ্ছা’
‘আমাকে বস উনার কেবিনে যেতে বলেছেন পরে কথা হবে!’
বলেই তাড়াহুড়ো করে কেটে পরলো সে। যেনো চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পেরেছে। তাছাড়া ও এই অফিসের হাতে গোনা দু একজন ছাড়া বাকি দের সামনে পড়লে রিমির অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি হয়ে যায়। তবে সে এখন বসের কেবিনে নয় গেলো ওয়াশরুমে। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসলো।
অনুমতি নিয়ে লিমনের কেবিনে ঢুকলো সে। ঐ ব্যক্তি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘এতো দেরি করে আসলেন যে?’
‘ও..ও.ওই আসলে স্যার…
‘আচ্ছা বুঝেছি। এখন যান আমার জন্য ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন।’
‘আচ্ছা স্যার!’
যথারীতি কফি নিয়ে আসলো। আরো যাবতীয় কিছু কাজ করলো। লিমন রিমির কে চোখে চোখেই রাখলো সারাদিন। তবে সেটা ওর অগোচরে। সেদিনের মতো ওর চোখে খারাপ নজরে পড়তে চায় না বলেই এই উদ্যোগ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। সাথে অফিস ছুটির সময় ও। সবাই একে একে চলে যায়। রিমি ও চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে এমন সময় তার ফোনে কল আসে। গুরুত্বপূর্ণ ভেবে কে কল দিয়েছে না দেখেই রিসিভ করে কানের সাথে লাগিয়ে সে নিজের ফাইল পত্র গুছিয়ে রাখতে লাগলো। ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই দেখে ও বললো,
‘হ্যালো কে বলছেন?’
তখনো চুপ। নেটওয়ার্ক এর সমস্যা ভাবলো সে। কিছুক্ষণ পর ওপ্রান্ত থেকে কেউ বললো,
‘রিমি আমার মেয়েটা আমাদের সবাই কে একা ফেলে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে গেছে রে। যেই ঘুম আর কখনো ভাঙ্গবে না।’
‘মানে?’
‘দিশা মারা গেছে!’
চলবে________________
এখনি লিমন আর রিমির লাভ স্টোরি কল্পনা করে ফেললেন আপনারা? ভালোবাসা কি আপনাদের কাতুকুতু দেয়?😒 বাই দ্যা রাস্তা দিশা’স স্টোরি ক্লোজ! এখন আপনাদের ফিলিংস কেমন?