#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_18
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
ছয়দিন পর আজকে নাফিয়ারা বাড়ি ফিরেছে ।কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফিরতে তাদের রাত হয়ে গিয়েছে ।তবে বেশি রাত হয়নি রাত আটটায় তারা বাড়ি এসে পৌঁছয়েছে।নাফিয়া আর রিয়া নিজেদের ড্রেসগুলো আলমারিতে তুলে রাখছিল এমন সময় আরদিন তাদের সামনে এসে বলে
নাফিয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
নাফিয়া রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আরদিনের দিকে তাকিয়ে বলল
বলুন ভাইয়া আমি শুনছি ।
আরদিন রিয়াকে ইশারা করতেই রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।
আরদিন বলল , তাহলে আমরা বসে কথা বলি ।
নাফিয়া এতক্ষণ রিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিল আরদিনের কথায় তার ধ্যান ভাঙল ।নাফিয়া আরদিনের কথামত বিছানার একপাশে বসে পড়ল আর আরদিন নাফিয়ার মুখোমুখি হয়ে বসল ।কিছুক্ষণ নিরবতা ভেঙে আরদিন শান্ত গলায় বলল
নাফিয়া…কক্সবাজার থাকাকালীন লক্ষ্য করছি তুমি আর স্পর্শ বেশিরভাগ একসাথে ছিলে মানে স্পর্শ সব সময় তোমার পাশাপাশি থাকত আরকি।আরদিনের নাফিয়াকে কথাগুলো বলতে একটু খারাপ লাগছে ।তারপর-ও নাফিয়াকে কথাগুলো না বলে উপায় নেই তার ।তার সবকিছু জানা জরুরি ।আরদিন বলতে লাগল , হিমছড়ি , ইনানি বিচ , লাবণী বিচ , বৌদ্ধ বিহার এই জায়গাগুলোতে ঘুরার সময়ও ও সব সময় তোমার হাত ধরে রাখত ।ও যে তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসে এটা আমি এই ছয়দিনই বুজতে পেরেছি ।ওর তোমাকে ইঙ্গিত করে কথা বলা , ওর তোমার প্রতি এত কেয়ার দেখে আমি কেন গ্রুপের সবাই এটা বুজতে পেরেছিল স্পর্শ ঠিক কতটা তোমার প্রতি দুর্বল ।আমরা হতবাক স্পর্শ যে কোনোদিন কোনো মেয়ের প্রতি এতোটা ফল করে যাবে এটা আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি কখনো।অথচ ও এমন এক মেয়ের প্রেমে পড়ল…. কথাটা বলে আরদিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।এখন তোমার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছি তুমিও কি স্পর্শকে ভালোবাসো ?
নাফিয়ার দৃষ্টি মেঝেতে ।দুইহাত বিছানায় ভর দিয়ে নিচু হয়ে আছে ।তার দৃষ্টি মেঝেতে হলেও আরদিনের প্রত্যেকটা কথা সে মনোযোগ দিয়ে শুনেছে ।আরদিনের কথার প্রত্যুত্তরে কি বলবে সে ভেবে পাচ্ছেনা ।সে কি বলবে ? সে -ও ঠিক স্পর্শের মতো করেই স্পর্শকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে ।তার ভাবনা জুড়ে আজকাল শুধু স্পর্শ-ই থাকে ।আজকাল সে-ও খুব করে চায় স্পর্শকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে ।
আরদিন নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ।আরদিন মনে মনে ভাবে , তার মানে মৌনতা সম্মতির লক্ষন ।সে আগেই কিছুটা বুজতে পেরেছিল ।কক্সবাজার থাকাকালীন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরবার সময় স্পর্শ সব সময় নাফিয়ার হাত ধরে রেখেছিল তাতে নাফিয়া বাধা দেয়নি স্পর্শকে ।আবার খাবার খাওয়ার সময়-ও স্পর্শ সব সময় নাফিয়ার পাশের চেয়ারটাতেই বসে পড়ত তাতেও নাফিয়ার চেহারায় কোনো বিরক্তি দেখা যেতনা ।উমমম এই থেকে সে বুজতে পেরেছিল নাফিয়াও স্পর্শের প্রতি হয়ত ফল করে গেছে ।যদিও সে শিউর ছিলনা তখন ।কিন্তু এখন নাফিয়াকে জিজ্ঞেস করে পুরোপুরি শিউর হয়ে গেল ।কি হবে এদের ? এদের ভবিষ্যৎ-ই বা কি হবে ? আরদিনের চেহারায় একরাশ চিন্তার রেখা ।সে চিন্তিত চেহারা নিয়ে বলল,
আমি তোমাদের নিয়ে খুব চিন্তিত নাফিয়া ।আজকে নাহয় কালকে তোমার বাবা ঠিক তোমাকে খুঁজে বের করবে ।তখন !তখন কি হবে ? এমনিতেই তার জেদ তুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো আবার বিয়ের দিনে ।তারপর যদি শুনে তুমি কারো প্রেমে পড়ে গেছ ।তোমার তো বিপদ হবেই সাথে স্পর্শেরও….. আরদিন আর বলতে পারলনা ।সে বন্ধুর ক্ষতি হওয়ার কথা ভাবতেও পারবেনা ।
আরদিন কিছুক্ষণ নিরবতা ভেঙে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগল ,
তোমার বাবা অনেক ক্ষমতাবান লোক নাফিয়া ।শুনেছি পনেরো বছর বয়স থেকে উনি খুন করে আসছে ।খুন করে আবার খুব সহজে ধামাচাপা দিয়ে দেয় এই লোকটা।
নাফিয়া এবার মুখ খুলে ভাবলেশহীন গলায় বলল , আমার দাদা আখম খাঁন অনেক ক্ষমতাবান লোক ছিলেন ।রাজনীতি করতেন উনি ।উনিও উনার ছেলের মতই অমানুষ প্রকৃতির ছিলেন ।দিনরাত নিজের শত্রুদের খুন করে বেরাতেন এই লোক ।কিন্তু উনি বাহিরের মানুষকে খুন করলেও কোনোদিন নিজের ঘরের মানুষদের এতটুকু আঘাত পর্যন্ত করেনি যেটা উনার ছেলে আজম খাঁন করেছে নিজের মেয়ে আর স্ত্রীকে হত্যা করে ।মায়ের কাছ থেকে শুনেছি আজম খাঁন পনেরো বছর বয়সে নিজের হাতে প্রথম খুন করে নিজের বন্ধুকে ।আখম খান জেনে গিয়েছিল ছেলের কুকীর্তির কথা। কিন্তু উনি ছেলেকে শাসন করার বদলে উল্টো ছেলেকে বাহবা দিয়েছিল ।সাহস দিয়েছিল ছেলেকে কিছু হবেনা ,তোর ভয় পাসনা একটা খুন-ই তো করেছিস ।খুব সুন্দর করে ছেলের খুন ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছিল এই লোক ।সেই থেকে আজম খাঁন-ও বাবার সাহস পেয়ে পেয়ে দিনে দিনে দানব হয়ে উঠে ।দেখা যেত দুই একটা খুনের মামলা তার উপর আসলেও আজম খাঁন আবার মামলা উঠিয়ে নিত নিজের উপর থেকে ।নাফিয়া কথাগুলো বলে থামল ।
আরদিন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে নাফিয়ার প্রত্যেকটা কথা শুনল ।সে ভীত গলায় বলল
একদিকে আমার নিজের বন্ধু আর একদিকে তুমি তো আমার বোন নাফিয়া ।এখন আমি তোমাদের কিভাবে বাধা দেই ?কিভাবে বলি যে তোমরা দুজন দুজনের থেকে আলাদা হয়ে যাও ?আর স্পর্শ তো আমার এই কথা শোনা তো দূর কোনোদিন মানতেও পারবেনা ।আচ্ছা নাফিয়া তোমাকে যদি বলি তুমি স্পর্শকে না করে দাও এই সম্পর্ক টা থেকে তাহলে ?
নাফিয়া হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরদিনের দিকে ।সে এটা কোনোদিন-ও করতে পারবেনা ।মরে গেলেওনা ।স্পর্শ তার শরীরের রন্ধে রন্ধে মিশে গেছে ।স্পর্শকে না করে দেওয়ার আগে তার নিজের মরন হোক ।নাফিয়ার চোখজোড়া পানিতে টলটল করছে ।
আরদিন নাফিয়ার চোখের পানি লক্ষ্য করে শান্ত গলায় বলল
কেঁদোনা নাফিয়া ।তোমার আর স্পর্শের কথা ভেবেই কথাগুলো বলছিলাম ।
আমি জানি এটা তোমার দ্বারা হবেনা ।তুমি চিন্তা করোনা আমি দেখছি কি করা যায় ? স্পর্শের সাথে আমি কথা বলব এই ব্যাপারে হুম ।তুমি আর মন খারাপ করে থেকোনা ।আর আমার কথায় কষ্ট পেয়োনা বোন ।
নাফিয়া মেকি হাঁসি দিয়ে বলল ,না না ভাইয়া ঠিক আছে ।আমি কষ্ট পাইনি আপনার কথায় ।
তাহলে আমি যাই হুম বলে আরদিন রুম থেকে বের হয়ে গেল ।
আরদিন চলে গেলে রিয়া রুমে ঢুকে নাফিয়াকে জিজ্ঞেস করল
ভাইয়া কি বলল তোকে ?
নাফিয়া থমথমে গলায় বলল , স্পর্শ আর আমার ব্যপারে কথা বলতে এসেছিল ।
রিয়া উদাস হয়ে বলল , ভাইয়া খুব চিন্তিত তোদের নিয়ে আর কেউ না জানুক আমরা তো জানি তোর পরিবারটা আসলে কেমন ।তবে তুই চিন্তা করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে রিয়া নাফিয়াকে আশ্বস্ত করে বলল ।
রিয়া ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল আয়ানের সাথে কথা বলতে ।কক্সবাজারে থাকাকালীন সময় আরদিনের আড়ালে আয়ানের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে রিয়ার ।
রিয়া চলে যেতেই নাফিয়ার বাটন ফোনটা বেজে উঠল ।নাফিয়া ভ্রু কুঁচকে ফোনটা হাতে নিল ।আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে ।এই নাম্বারটা একজনেরই হতে পারে আর এটা স্পর্শের নাম্বার হয়ত।আজকে বাস থেকে নামার সময় স্পর্শ তার থেকে নাম্বারটা নিয়ে নেয় ।
নাফিয়া ফোনটা রিসিভ করতেই কেউ ওপাশ থেকে শান্ত গলায় বলল
আসসালামু আলাইকুম ।
হ্যাঁ এটা স্পর্শ-ই ।নাফিয়া অস্ফুটস্বরে জবাব দিল ,ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
ঠিকমতো বাড়িতে পৌঁছেছো তোমরা ?
নাফিয়া জবাবে বলল জ্বি ।আপনি ?
স্পর্শ মুচকি হেঁসে বলল হ্যাঁ আমি ঠিকভাবেই পৌঁছেছি ।কি করো ?
কিছুনা এমনি বসে আছি ।আপনি ?
উমমম তোমার সাথে কথা বলছি ।
নাফিয়া হাঁসল ।
স্পর্শ বলল , ভালোবাসি নাফিয়া ।
নাফিয়া অস্ফুটস্বরে জবাবে বলল , আমিও ।
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল আমিও কি ?
নাফিয়া লজ্জামিশ্রিত গলায় বলল , ভালোবাসি ।
স্পর্শ হোঁ হোঁ হেঁসে উঠল ।ফিঁক করে হেঁসে বলল , তুমি এমন কেন নাফিয়া ? আচ্ছা যাইহোক যে কথাটা বলার ছিল তোমাকে আমার বাবা বাহিরের দেশে গেছে অফিসের কাজের জন্য ।বাবা ফিরলে বাবাকে বলব তোমার কথা । তারপর বাবাকে নিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসবো নাফিজ আঙ্কেলের বাসায়।
নাফিয়া কিছু বললনা চুপচাপ রইল ।
ভবিষ্যতে কি হবে তা তার নিজের-ও জানা নেই আর বিয়ের স্বপ্ন দেখা তো দূর নাফিয়া ভাবে।তার মাথায় আরদিনের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে ।টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।
ওপাশ থেকে নাফিয়ার গলার আওয়াজ না পেয়ে স্পর্শ উত্তেজিত হয়ে হ্যালো হ্যালো বলা শুরু করল ।
স্পর্শের গলার আওয়াজে নাফিয়ার ধ্যানভঙ্গ হলো ।সে শান্তগলায় বলল
হ্যাঁ শুনছি বলুন ।
স্পর্শ বলল , কই হারিয়ে গিয়েছিলে হুম ? আচ্ছা যাইহোক অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো এখন ঘুমিয়ে পড়ো ।রাত জাগবেনা কিন্তু… নাহলে শরীর খারাপ করবে ।গুড নাইট লাভ ইউ বলে স্পর্শ ফোন রেখে দিল ।
ফোনটা রেখে নাফিয়া বারান্দার দিকে তাকাল ।রিয়া এখনো ফুসুরফাসুর করে আয়ানের সাথে কথা বলছে ।সে খুব ক্লান্ত ছিল বিধায় বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয় ।গাঁ এলিয়ে দিতেই নাফিয়া গভীর ঘুমে চলে গেল ।
চলবে,
@Nusrat Hossain