গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
part:08
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো হূর ছাঁদে আসে গাছে পানি দিতে। কাল সকালে আসা হয়নি। হূর পানি দিচ্ছে গাছে হঠাৎ করেই পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। হূর পিছনে তাকিয়ে দেখে এরিশ দাড়িয়ে আছে পাইপের উপর পা দিয়ে। হূর বলে
” এই পা সরান , আপনার জন্য পানি আসছে না। আর সাথে সাথে এরিশ সরে দাঁড়ায় ফলস্বরূপ পানিতো একরকম ভিজে একাকার হয়েগেছে হূর।
এরিশ হূরের এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে নিচে বসে পরে। হূর কিছু সয়ম এরিশের দিকে তাকিয়ে এরিশকেও ভিজিয়ে দেয়। আচমকা এমন হওয়াতে এরিশ তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ায়। হূর বলে
” হাসুন হাসুন, এরিশ দূরে সরে যায় আর বলে
” দেখ হূর, ভালো হচ্ছে না। হূর বলে
” কি ভালো হচ্ছে না, আপনি করলে ঠিক আমি করলেই দোষ?? তখনই ছাঁদে আসে এরিশের মা। দুজনকে এভাবে দেখে ধমক দিয়ে বলে
” কি শুরু করছিস দুজনে! এতো চিৎকার কেন? হূর বলে
” সব দোষ তোমার এই ছেলের। এরিশ আমতা আমতা করে বলে
” আমি, আমি কি করলাম আবার??? আমি কিছু করিনি। এরিশের মা রেগে বলে
” দুইটাই যা এখান থেকে, সকাল সকাল চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিস। হূর যা ফ্রেশ হয়েনে। নয়তো ঠান্ডা লাগবে। আর এরিশ তুইও।
এরিশ আর হূর দুজনেই চুপচাপ বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো নিচে চলে আসে
হূর যখন রুমে ঢুকবে তখনই এরিশ হূরকে বলে
” তোকে আমি দেখে নিব। হূর বলে
” আমিও ছাড় দিবো না, অকারণে ঝগড়া করবেন তো আমিও ছাড়ছি না। এরিশ হূরকে বেঙ্গ করে বলে
” আমিও ছাড়বো না। যা এখান থেকে পেঁচি। হূর এরিশকে বলে
” আপনি কি পেঁচা। আর রুমে চলে যায় হূর।
_______________
ভার্সিটিতে এসে অনিককে দেখে খুশি হয়ে যায় হূর। অনিককে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
” কিরে আঙ্কেল কেমন আছে?? অনিক বলে
” বলো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আচ্ছা শুন তিথি আর অহি কোথায়?? হূর বলে
” আসবে হয়তো একটু পর। আচ্ছা আমি লাইব্রেরিতে যাই তুই ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়ে আয়।
অনিক বলে
” তুই এই বই পড়তে পড়তে চোখ গুলো খাবি, । হূর চোখ পাকিয়ে অনিকের দিকে তাকালে অনিক বলে
” যাচ্ছি যাচ্ছি।
______________
লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা বই নিয়ে বসে পরে হূর। তেমন কেউ নেই বলেই চলে। হঠাৎ করেই কেউ হূরের সামনে এসে বসে পড়ে। হূর সামনে তাকিয়ে দেখে সেই ব্যক্তি কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তার চোখ গুলো আজ নীল না বরংচ হালকা বাদামি। লোকটাকি লেন্স ব্যবহার করে?? ব্যক্তিটা ভ্রুর উপরে হালকা কিছু একটার দাগ কিন্তু চুলগুলোর কারণে বুঝা যাচ্ছে না তেমন। । ব্যক্তিটা ইশারায় বলে
” কি হয়েছে?? হূর বলে
” আপনি এখানে?? ব্যক্তিটা একটা সপিং ব্যাগ হূরের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে
” এটা তোমার বার্থডে গিফট। আচ্ছা আসি, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তোমার। বলেই উঠে দাড়ায়। হূর বলে
” আমি এটা নিতে পারবো না, আপনাকে আমি চিনি না। আর এই চুর পুলিশের গেম শেষ করুন।
হূরের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে ব্যক্তিটা পা বাড়ায় বাইরের দিকে। হূর ও ব্যাগটা টেবিলে রেখে যেই না বাইরে যাবে তখনই অনিক এসে হাজির। হূরকে দেখে বলে
” কিরে কোথায় যাস? হূর বলে
” তুই একটু থাক আমি আসছি।
বলেই বাইরে আসে। ২য় তালায় নামতেই হূর দেখে এরিশ নিজের শার্টের হাতা গুটাচ্ছে , আবির আর আকাশ দাড়িয়ে কথা বলছে এরিশের সাথে। হূর ভাবে হয়তো এরিশ সেই ব্যক্তিকে দেখেছে।হূর গিয়ে এরিশকে বলে
” ভাইয়া এখান দিয়ে গ্রিন শার্ট, মুখে মাস্ক পড়া কোনো ছেলেকে যেতে দেখেছেন? এরিশ ভ্রু কুচকে বলে
” আমি ছেলে হয়ে ছেলেদের খেয়াল করতে যাবো কেন?? মেয়ে হলে আলাদা হিসাব। হূর বলে
” আমি সেটা বলিনি। এখন বলেন দেখেছেন কিনা?।নয়তো বাসায় গিয়ে বলে দিব আপনি ভার্সিটি আসেন মেয়ে দেখতে। । এরিশ বলে
” আমি বলবো তুই ভার্সিটিতে আসিস গ্রিন -শার্ট পড়া ছেলে খুঁজতে। আবির বলে
” থাম থাম তোরা। হূর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাইয়া আপনি দেখেছেন?? আকাশ বলে
” নীলআদ্র হয়তো পড়েছে গ্রিন শার্ট। ঐ দেখো ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে । হূর উুকি দিয়ে নিচে তাকায় আর বলে
” না, উনি না। আচ্ছা আমি আসি অহি আর তিথিও চলে এসেছে হয়তো। আবির হূরকে ডাক দিয়ে বলে
” হূর তিথির নাম্বার টা দেওয়া যাবে?? হূর পিছনে তাকিয়ে বলে
” এরিশ ভাইয়া এর জন্য নাম্বার চেয়েছিল? আচ্ছা লিখুন। হূর নাম্বার দিয়ে লাইব্রেরিতে চলে আসে দেখে অনিক বসে বসে ফোন চালাচ্ছে। হূরকে দেখে অনিক বলে
” কোথায় গিয়েছিলি? আর কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই আমি দুইটাই খেয়ে ফেলেছি। হূর বলে
” ভালো করেছিস। অনেক বড় রাজকার্য করেছিস। তখনই অহি আর তিথি চলে আসে। তিথি বলে
” দোস্ত জানিস আজকে স্বপ্নে কি দেখেছি?? অনিক বলে
” স্বপ্ন টাকি আঙ্কেল ঠিক করে দিয়েছিল?? তিথি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” চুপ হারামি। তুই একটা আহাম্মক। স্বপ্ন বাবা ঠিক করে দিতে যাবে কেন?? অহি বলে
” ভুল কি বলেছে? তোর তো সবকিছু আঙ্কেলই ঠিক করে। হূর বলে
” চুপ কর আর তুই তিথি কনটিনিউ কর। বলেই টেবিলে রাখা সপিং ব্যাগটা নিজের ব্যাগে ভরে নেয় হূর। তিথি বলে
” স্বপ্নে দেখি আবির আমাকে কল দিয়েছে, অনিক বলে আমিও স্বপ্ন দেখেছি। সবাই একসাথে অনিকের দিকে তাকালে অনিক বলে
” আবির ভাইয়া তিথিকে কল দিয়ে বলেছে, আমাকে দেখলে এমন ড্যবড্যব করে তাকিয়ে থেক না। আমার লজ্জা লাগে। মানুষ কি বলবে । মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে এইভাবে হেনস্তা করো কেন??
তিথি তখন হূরের থেকে বইটা নিয়ে মারতে লাগে অনিক কে।
হূর বলে
” হয়েছে। এখন ক্লাসে চল। পরে সবাই ক্লাসে চলে যায়।
_____________
বাসায় এসে সরাসরি রুমের দরজা লাগিয়ে হূর বের করে সেই সপিং ব্যাগটা। সপিং ব্যাগটা খুলে দেখে
একটা নীল রঙের শাড়ি, সাথে নীল রঙের কাচের চুড়ি। কাঠগোলাপের একটা গাজরা। একটা পায়েল আর ঝুমকা। সাথে একটা চিরকুট
” আমার হূর পরিটা নীল পরির মতো সাজানোর একটা ছোট চেষ্টা। চিরকুট টা পরে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে হূরের। নীল রঙটা বরাবরই হূরের অনেক পছন্দের কাঠগোলাপ টাও তার অনেক পছন্দের যদিও আর্টিফিশিয়াল ।
ওয়াশরুম গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বেড়িয়ে আসে হূর। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হূরের নজর কারে তার গলার চেনটা। এটাতো কালকে সে পরিয়ে দিয়েছিল। হূর ভুলেই গিয়েছিল চেনটার কথা।হাতটা আপনাআপনি চেনটার কাছে চলে যায়। হুয়াইট ইস্টোন বসানো আর খুব সুন্দর করে লেখা হূর।
_______________
সব কিছু ঠিক থাকলেও হূরের মাইন্ডে চলছে অন্য কথা। একটা মানুষ একজনের ভালো লাগা খারাপ লগা কিভাবে জানে? আর সে হূরকে খুব ভালো করে চিনলেও হূর তাকে চিনে না?? তখনই আলাইনা হূরের রুমে নক করে।
” আপ্পি দরজাটা খুলো। হূর একটু অবাক হয় আলাইনা তাও তার রুমে! দরজাটা খুলে দিতেই দেখে আলাইনা দাড়িয়ে চুলগুলো এলোমেলো আর হাতে চিরুনি। হূরের হাতে চিরুনি দিয়ে বলে
” আপি চুলগুলো বেঁধে দাও না একটু। হূর বলে
” হুমম, আজকে আপির কাছে, ভয় করছে না?? আলাইনা বলে
” না তো। আম্মুকে বললাম বেঁধে দিতে সে কাজে ব্যস্ত তোমার কাছে আসতে বলেছে। হূর একটু অবাক হয় আলাইনার চুলগুলো বেঁধে দিয়ে বলে
” নাও হয়েগিয়েছে। আলাইনা হূরের হাত ধরে বলে
” আপি চলো গার্ডেনে যাই। সাইকেল চালাবো।
হূরও খুশি মনে নিচে আসে। সাইকেল টা বেশ বড় হূর বলে
” এটা তো তোমার না আলাইনা। আলাইনা বলে
” জানি জানি এরিশ ভাইয়ার। তুমি চালাবে আমি বসে থাকবো। হূরও বলে
” কিছু বলবে না তো তোমার ঐ এরিশ ভাইয়া? আলাইনা ভেংচি কেটে বলে
” ঐ এরিশ প্যারিশকে আমি ভয় পাইনা সে আমাকে ভয় পায়। বাসার সবাই আমাকে ভয় পায় কেউ কিছু বললে আমাকে বলবা আমি দেখ নিব। আমি বাসার লেডি বস। হূর হাত তালি দিয়ে বলে
” বাহ বাহ্। আলাইনা বলে
” যাও এখান সাইকেল চালাও। পারবে নাকি মৃধা আপুর মতো পরে যাবে?? হূর বলে
” অবশ্যই পারবো। আসো। হূর সাইকেল চালাচ্ছে আর আর আলাইনা মজা করছে । আর এইসব উপর থেকে দেখছে হূরের মা আর চাচি। হূর একটা রাউন্ড দিয়ে আসতেই সামনে পরে এরিশ। এরিশকে দেখে আলাইনা বলে
” ঐ এরিশ ভাইয়া সাইড দাও। এরিশ ব্যস্ত ছিল নিজের ফোনে৷ মাত্রই বাসায় ফিরেছে। এরিশকে দেখে হূর থেমে যায়। এরিশ বলে
” একটুর জন্যই যেতাম। আর সাইকেলটা চেনা চেনা লাগছে। আলাইনা বলে
“যা দেখ তাই তোমার চেনা চেনা লাগে। যাও বাসায় যাও। ফাজিল ছেলে ভার্সিটি শেষ হয়েছে সেই কখন। আর বাসায় ফিরছে এখন। আমার আপির কাছে কিছু শিখতে পারো না??
আলাইনার কথা শুনে হূর অবাক। এরিশ চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে
” যাচ্ছি মহারানি। আলাইনা বলে
” হ্যা যাও যাও, তোমাকে থাকতে বলছি নাকি? আর হূর আপি তুমি সাইকেল থামাবা না। সামনে কেউ পরলে সোজা সাইকেল চাপা দিয়ে দিবা। বাকিটা আমি দেখে নিব।
এরিশ আর হূর দুজনেই অবাক।
চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে