#প্রেমের_বর্ষন
#পর্ব_০২
#লেখনীতে_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
টিভির মানুষটাকে দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠে কারণ টিভিতে আর কেউ না নীলাদ্র আছে!নীলদ্রের নর দেহ পরে আছে। নীলাদ্রের মৃত দেহ দেখার মতো না যে কেউ দেখলেই নাক মুখ কুচকে পালাবে।
|৩|
আমার চিৎকার শুনে খালামনি দৌড়ে এসে দেখে আমি মাথা চেপে ধরে বসে আছি। খালামনি দ্রুত আমার কাছে এসে আমার পাশে বসে ব্যস্ত গলায় বলে,’কি হয়েছে অনি?ঠিক আছিস তুই?খারাপ লাগছে ডাক্তার ডাকবো?’
আমি ছলছল নয়নে তাকিয়ে খালামনিকে ইশারা করে টিভির দিকে তাকাতে বলি। খালামনিও টিভির দিকে তাকিয়ে আতকে উঠে। খালামনি দ্রুত রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করে দিয়ে বলে,’এইসব তোকে দেখতে মানা করেছিলাম না। জানিস যেহেতু তোর রক্ত সহ্য হয় না তাও দেখেছিস কেনো?’
খালামনিকে কিভাবে বুঝাবো এ অন্য কেউ না আমার প্রাক্তন। আমি ঠোঁট চেপে বসে আছি। খালামনি আমার কষ্ট আঁচ করতে পেরে একটা গার্ডকে ডেকে বলে ফারিশ ভাইয়াকে ডেকে আনতে। ফারিশ ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে এসে বলে,’কি হয়েছে আম্মু ডাকছো কেনো?’
‘ডক্টর ডাক ফারিশ জলদি।’
ফারিশ ভাইয়া ভ্রুকুচকে বলেন,’কেনো?তোমার শরীর খারাপ?’
খালামনি কাঁপাকাঁপা হাতে আমাকে ইশারা করে। ফারিশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠে। এখনো আমি মাথা চেপে ধরে বসি আছে। বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। ফারিশ ভাইয়া দ্রুত আমার কাছে এসে বলে,’অনি কি হয়েছে তোর??শরীর অনেক খারাপ?’
আমি উত্তর দিতে পারছি না তাকে তাও নিজেকে বহু কষ্টে সামলে উত্তর দিলাম,’আ-মা-র…..
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি ঢোলে পড়লাম ফারিশ ভাইয়ার বুকে।
|৪|
‘ডক্টর অনামিকা এখন কেমন আছে??’
‘আলহামদুল্লিল্লাহ সে ভালো আছে কিন্তু উনি রক্ত সহ্য করতে পারে না জেনেও উনাকে কেনো এইসব জিনিস দেখিয়েছেন?’
‘ডক্টর আমরা কেউই ওকে দেখাই নি।’
ডক্টর বললেন,’আচ্ছা ঠিকাছে বাদ দেন সেইসব। পেশেন্টকে আমি ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছি কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে ইনশাল্লাহ আর পেশেন্টর খাবার অনেক অনিয়ম হয় তার খাবারের দিকেও খেয়াল রাখবেন। আজ আসি তাহলে।’
ফারিশ ডক্টরকে বিদায় জানিয়ে তার আম্মুর কাছে আসে। ফারিশের মা মিসেস ফাহিমা বেগম নিজের চশমা খুলে বলেন,’তোর জন্য অনির খাবার অনিয়ম হয়েছে তাই না?’
মায়ের কথা শুনে ফারিশ হচকিয়ে যায় কিন্তু কিছুই বলে না কিই বা বলবে সে। ফাহিমা বেগম আবার বলেন,’আচ্ছা তোর কি অনির সাথে না লাগলে চলে না?মেয়েটা এমনিই এখন কষ্টের মাঝে আছে তাকে শান্তনা না দিয়ে ওর কষ্ট তুই আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিস।আজকে যদি ওর কিছু হয়ে যেতো তাহলে ওর মাকে তুই কি জবাব দিবি?’
ফারিশ ফাহিমা বেগমের দিকে তাকায়। ফাহিমা বেগম আবার বলেন,’সব জেনেও আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?’
ফারিশ নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। জীবনের প্রথম ওর চোখ ভরে এসেছে। কিই ভুল না করলো সে। আজকে যদি ওর কিছু হয়ে যেতো তাহলে সত্যিই ও কি জবাব দিতো। ফারিশ উঠে নিজের অনামিকার রুমের দিকে পা বাড়ায়। অনামিকার রুমে ঢুকে অনামিকার পাশে বসে ওর হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়।
অনামিকার শুকনো মুখের দিকে চেয়ে আছে। নিজের অজান্তেই কতো কষ্টই না দিয়ে দিয়েছে সে অনামিকাকে। আজ হারে হারে টের পাচ্ছে। ফারিশের অশ্রু অনামিকার হাতে পড়তেই অনামিকা পিটপিট করে চোখ খোলে তাকায়। ফারিশ অনামিকাকে জ্ঞান ফিরতে দেখে নিজের চোখ মুছে অনামিকার থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়। সে নিজেকে অনামিকার সামনে দূর্বল দেখাতে চায় না। অনামিকা ফারিশের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। অনামিকা বুঝার চেষ্টা করছে ফারিশ এইখানে কি করছে। কিন্তু সে ব্যর্থ তার আগেই ফারিশ ঝাঝালো গলায় বলল,’শুন আমি স্যুপ দিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নিবি এতো আহ্লাদ করতে পারবো না আমি।’
অনামিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এইগুলা সহ্য করেই মরতে হবে ওর তা ও খুব ভালো করেই জানে। ফারিশ স্যুপ দিয়ে যেতেই অনামিকা নাক মুখ কুচকে বলল,’এইটা কি স্যুপ ভাইয়া।’
ফারিশ ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বললেন,’আমার মাথা। চুপচাপ খেয়ে নে।’
‘না আমি খাই না এইগুলা।’
ফারিশ একটা ঝাড়ি মেরে চলে যায়। অনামিকা দিশেহারা হয়ে বাধ্য মেয়ের মতো স্যুপ খেয়ে নেয়। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে খালামনির রুমের দিকে পা বাড়াই।
|৪|
খালামনি ইজি চেয়ারে বসে বই পড়ছিলেন। আমাকে আসতে দেখে বই রেখে বলে,’এইদিকে আয় অনি।’
আমি আস্তে করে হেঁটে যেয়ে বিছানায় বসলাম। খালামনি বললেন,’তুই উঠে আসতে গেলি কেনো?দরকার হলে রুবাকে বলতি ও তোকে নিয়ে আসতো!’
আমি স্মিত হেসে বলি,’আমি ওতো বেশি অসুস্থ না যে নিজে হেঁটে আসতে পারবো না।’
খালামনি আমার মাথায় হালকা গাট্টা মেরে বলে,’পাগলী মেয়ে। বল এইবার তুই এইখানে কেনো এসেছিস।’
‘এমনি গল্প করতে।’
খালামনি অবাক হওয়ার ভান করে বলেন,’ওমা তোকে তো সারাবছর খুজেও পাওয়া যায় না আজ কোথাথেকে আসলি?’
খালামনির কথায় আমরা দুইজন একসাথে হেসে উঠলাম। আমি হাসি থামিয়ে খালামনিকে বললাম,’আচ্ছা খালামনি আম্মু দেখতে কার মতো ছিলো?’
‘একদম তোর মতো। টানা টানা চোখ,খাড়া নাক,কোমড় অব্দি চুল।’
আমি কৌতুহল নিয়ে খালামনির কথা শুনতে লাগলাম।খালামনি আবার বললেন,’অনামিকা নাম তোর মাই ঠিক করেছে। তোর মায়ের ইচ্ছা ছিলো তুই হলে নাম এটাই রাখবে। সারাক্ষন তোর সাথে খেলবে। কতশতই স্বপ্ন ছিলো আমার বোনটার। কিন্তু তোকে জন্ম দিতে যেয়ে বোনটা মারা যায় আমার। তারপর থেকে তোর বাবাই তোকে পালা শুরু করেন। তোর বাবা আর খালু অফিসার ছিলেন দুইজন অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন। দুইজনে একটা মিশনে যান কিন্তু ওইখানে যেয়ে তারা মারা যান। পরে আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসি।
কথাগুলো বলতে বলতে টুপ করে এক ফোটা পানি পড়লো খালামনির চোখ থেকে। খালামনি নিজের চোখের পানি মুছে বলেন,’তুই অসুস্থ না?তোর এখন রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। এখন তোর রুমে যা।’
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম। মাথা ধরেছিলো অনেক তাই রাতের খাবার রুবা আপুকে রুমে দিয়ে আসতে বললাম। রাতের খাবার খেয়ে একটা শান্তির ঘুম দিলাম। মাঝরাতে আমার রুমে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম। কেউ গভীর ভাবে আমাকে পর্যবেক্ষন করছে। কারো নিঃশ্বাস আমার মুখে আঁছড়ে পড়ছে। আমি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যা দেখলাম তা দেখে অনেক বেশি অবাক হয়ে যাই
কারণ…..
#চলবে
(কে হতে পারে?দেখি কে কে বুঝতে পারে। রিচেক দেওয়া হয়নি ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর হ্যা এই গল্পটা কাল্পনিক তাই কেউ বাস্তবতার সাথে মিলাবেন না।এইটা কিছুটা না অনেকটাই থ্রিলার টাইপ গল্প হবে। হ্যাপি রিডিং)