আমারে দিলোনা ভুলিতে পর্ব অন্তিম

#আমারে_দিলোনা_ভুলিতে।

#পর্ব_১৩।(অন্তিম পর্ব)

#লেখা_আরজুমান_তাশা।

“অনেকটা সময় পার হয়ে যায়৷ কিন্তু উল্লাস এবং নিবেদিতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রাখে৷ উল্লাস নিবেদিতার পিঠ থেকে হাত সরাতে চাইলে নিবেদিতা উল্লাসকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভয়ার্ত গলায় বলে,
” প্লিজ ছাড়বেন না।প্লিজ আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না। ”

নিবেদিতা ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছে৷ উল্লাস নিবেদিতার ভয় বুঝতে পেরে নিবেদিতা’র মাথায় পরম যত্নে আলতো করে করে হাত বুলিয়ে দিয়ে গভীর গলায় বলে,
“আমি যাবোনা তোমায় ছেড়ে৷আই প্রমিস। বিশ্বাস কর৷ ”

নিবেদিতার কোন ভাবান্তর হলোনা৷ উল্লাস আগের মত করে বলে,
“অনেক রাত হয়েছে বাসায় চল৷ এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকে খারাপ বলবে। প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর৷এখানে হুট করে যে কেউ চলে আসতে পারে। এই যে তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি আমি তোমায় ছেড়ে যাবোনা৷ ”

উল্লাসের কথায় এবার কাজ হলো৷নিবেদিতা উল্লাসকে ছেড়ে কয়েক কদম দূরে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে মাথানত করে দাঁড়িয়ে অপরাধী গলায় বলে,
“স্যরি।”

উল্লাস নিবেদিতার কাছাকাছি এসে নরম সুরে বলে,
” গাড়িতে বস। ”

নিবেদিতা উল্লাসের মুখের দিকে চায় ফ্যালফ্যাল করে৷ উল্লাস গাড়ির দরজা খুলে বলে,
“বস। ”

নিবেদিতা চুপচাপ গিয়ে বসে পরে৷ উল্লাস ড্রাইভিং সিটে বসে বলে,
” সিট বেল্ট লাগিয়ে নাও৷ ”

নিবেদিতা মাথা নিচু করে বিনাবাক্যে সিট বেল্ট লাগিয়ে নেয়৷ উল্লাস নিবেদিতাকে একপলক চেয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে৷ তাদের গাড়িটা পার্কিং এরিয়া থেকে চলে যেতে উশান আর চন্দ্রা অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে উল্লাসের গাড়ি চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাই-ফাইভ দিয়ে দুজন দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে একসাথে বলে উঠে,
“মিশন কমপ্লিট। ”

উশান আর চন্দ্রার পিছে উল্লাসকে নিয়ে কথা বলা মেয়ে দুটো এসে দাঁড়ায়। তারা আর কেউ না চন্দ্রার কাজিন। মেয়ে দুটো’র মধ্য থেকে একজন তখন উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে,
” কাজ হয়েছে আপু? ”
চন্দ্রা তখন তার সে মেয়ে কাজিনের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলে,
“হান্ড্রেড পারসেন হয়েছে৷! ”
চন্দ্রার কথায় মেয়ে দুটো তৃপ্তির হাসি হাসে৷”

“নিবেদিতার ফ্ল্যাটের সামনে গাড়ি থামিয়ে একদফা নিবেদিতাকে দেখে নেয় উল্লাস। নিবেদিতা ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় উল্লাসের ব্লেজার খামচে ধরে রেখেছে অনেকটা বাচ্চাদের মত।নিবেদিতার কান্ড দেখে উল্লাস আনমনে হেসে ফেললো৷ নিবেদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ধীর গলায় নিবেদিতাকে ডাকতে থাকে৷কিন্তু নিবেদিতার কোন ভাবান্তর দেখতে না পেয়ে উল্লাস গাড়ি থেকে নেমে নিবেদিতাকে কোলে তুলে নেয়৷ এরপর নিবেদিতা’র ফ্ল্যাটে নিবেদিতাকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়ে উল্লাস সরে যেতে গেলে ঘাড়ে টান খায়৷ নিবেদিতা উল্লাসের গলার দিকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। উল্লাস ছাড়াতে চাইলে নিবেদিতা ঘুমের ঘোরে বলে,
” প্লিজ ডোন্ট গো৷ আমি আবার হারাতে চাইনা আপনাকে৷”

উল্লাস নিবেদিতার কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ৷চোখ বুজে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিবেদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি যাচ্ছিনা। আমি এখানে আছি৷ তোমার পাশে৷”

নিবেদিতা আর কিছু বলেনা। গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে৷উল্লাস খুব সাবধানে নিবেদিতার মাথার পাশে বসে নিবেদিতার মাথায় পরম যত্নে বিলি কেটে দিতে থাকে৷ আর পলকহীন দৃষ্টিতে নিবেদিতার মুখ পানে চেয়ে রয়৷ ”

“ভোরের আলো মুখমন্ডলে এসে লাগতে নিবেদিতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাত পা এলিয়ে শরীরের অলসতা দূর করে চোখ খুলে নিবেদিতা হঠাৎ হকচকিয়ে উঠে বসে পরে৷ চারপাশ চোখ বুলাতে থাকে সে। চোখে মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট। দ্রুত বিছানা ছেড়ে হল রুমের দরজার সামনে হুট করে দাঁড়িয়ে পরে৷হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিবেদিতা৷ গলা খাকড়ি দিয়ে নিজেকে শান্ত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে নিবেদিতা৷উদ্বিগ্ন গলায় নিবেদিতা বলে,
” আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে গেছেন আগের মত। আর ভেবেছি এবারও বোধহয় আমি কোন স্বপ্ন দেখেছি৷ ”
পায়ের শব্দ পেয়ে উল্লাস পিছন ফিরে তাকাতে ভুবন ভুলিয়ে হেসে উঠে দাঁড়ায়।প্যান্টের পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে নিবেদিতার কথা শুনে আগের মতো হাসে৷ উল্লাস ফুরফুরে গলায় বলে,
” গুড মর্নিং?

নিবেদিতা তাতে কোন প্রতিক্রিয়া করলোনা। আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মুখে হারিয়ে ফেলার তীক্ষ্ণ চাপ স্পষ্ট। উল্লাস মুখে হাসির রেখা টেনে নিবেদিতার কাছে এসে দাঁড়ায়৷ নিবেদিতা মুখে কয়েকটা ছোট ছোট চুল লেপ্টে আছে৷ উল্লাস খুব সাবধানে চুলগুলো নিবেদিতার মুখ থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
“এবার আর যাইনি। গত বার গিয়ে ভুল করেছি৷

উল্লাসের কথায় নিবেদিতা শুকনো মুখে উল্লাসের মুখপানে চেয়ে থাকে৷ উল্লাস শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে ফুরফুরে মেজাজে বলে,

“তুমি ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখে ডেস্পারেট হয়ে যাবে তা আমার ধারণা ছিলো। তাই তোমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছিলাম৷
উল্লাসের কথায় নিবেদিতা অভিযোগের সুরে বলে
“আপনি ডেকে দিলেন না কেন?

নিবেদিতার অভিযোগের সুর শুনে উল্লাস ঠোঁট প্রশার করে হাসে। হাসিটাতে মিশে আছে একরাশ তৃপ্তি। উল্লাস তার দুইহাত দিয়ে নিবেদিতার মুখ আগলে ধরে আদুরে গলায় বলে,
“রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গানোর মত স্পর্দা কোন সেনার হয়নি এখনো৷

উল্লাসের এমন কথায় নিবেদিতা হাসে। নিবেদিতার হাসি দেখে উল্লাস চোখে মুখে এক গভীর মায়া ফুটিয়ে গভীর গলায় বলে,
“এই হাসিটা অনেক মিস করেছি৷

নিবেদিতা উল্লাসের মুখের দিকে গভীর আচ্ছনতায় তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ৷ পরমুহূর্তে কথা ঘুরিয়ে বলে,
“নাস্তা করেছেন?

উল্লাস ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলে,
” নাহ৷ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷
“আপনি বসুন আমি নাস্তা রেডি করছি।

নিবেদিতা কথাটা বলার সময় তার খোলা চুল হাতখোঁপা করে। উল্লাস নিবেদিতার হাতখোঁপা করার দিকে মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে৷ উল্লাসের কাছে এই দৃশ্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দৃশ্যের মধ্যে অন্যতম। উল্লাসকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিবেদিতা প্রশ্ন করে,
” কি দেখছেন!

উল্লাস ঈষৎ হেসে জবাব দেয়,
“প্রেমিকাকে চুলখোঁপা করতে যে প্রেমিক দেখেছে বলতে হয় সে অনেক ভাগ্যবান।”

উল্লাসের কথায় নিবেদিতা বোকার মত হাসে। উল্লাসের পাশ কেটে চলে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিবেদিতা বেশ অবাক হয়৷ টেবিলে অলমোস্ট নাস্তা তৈরি করে রাখা আছে৷ নিবেদিতা অনেকখানি সারপ্রাইজ হয়ে বলে,
“আপনি বানিয়েছেন?
উল্লাস আলতো হেসে মাথা উপর নিচ দুলিয়ে জবাব দেয়,
” হুম।”
উল্লাসের জবাবে নিবেদিতাও প্রাণবদ্ধ হয়ে হাসে৷

“চন্দ্রা আর উশানের বিয়ের ধুম লেগেছে। নিবেদিতা আজ মেরুন রঙের লেহেঙ্গা পরেছে।নিবেদিতার পুরো দেহ জুড়ে যেন আজ আভিজাত্যের চাপ। উল্লাস নিবেদিতা আজকাল খুব বেশি প্রাণ চঞ্চল দেখে৷সবসময় মুখে হাসি লেপ্টে থাকে। নিবেদিতার নতুন রুপ দেখে অনেকে হয়রান। কারণ যারা কঠোর, গম্ভীর নিবেদিতাকে দেখেছে সে নিবেদিতার সাথে এই নিবেদিতার আসমান জমিন তফাৎ। উল্লাস নিবেদিতার মুখে লেপ্টে থাকা হাসিতে প্রশান্তি অনুভব করে।নিবেদিতার প্রানোজ্জ্বল মুখ দেখে সে পুরনো নিবেদিতার কথা মনে পরে যায়। উল্লাসের মনে হচ্ছে কোন কিছু বদলায়নি৷সব আগের মত আছে। পাঁচটা বছর তাদের মাঝে যে দুরত্ব ছিলো সেটা একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র। উল্লাস সেও এখন যথেষ্ট খুশি। তার মুখে প্রশান্তির চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে৷ উল্লাস আর নিবেদিতা দুজনের মাঝে আজকাল অনেক পরিবর্তন এসেছে। তা তাদের দেখা মাত্র যে কেউ অনুধাবন করে নিতে পারবে। উশান আর চন্দ্রাকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে৷ তাদের দুই পাশে উল্লাস আর নিবেদিতা ছাড়া আরো কয়েকজন দাঁড়িয়েছে। ফটোশুট করা হচ্ছে। চন্দ্রা নিবেদিতার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“উল্লাস স্যার কে দেখলাম। তোকে তো দেখি একদম চোখে হারায়। ”
চন্দ্রার কথায় নিবেদিতা মেরুদণ্ড সোজা করে বসে গলা খাকড়ি দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
” কি যা তা বলছিস?

নিবেদিতার কথায় চন্দ্রা কপট চোখ রাঙিয়ে নিবেদিতার বাহুতে চিমটি কেটে বলে,
“আর নাটক করতে হবেনা আমি সব জানি। শুধু আমি কেন এখানে উপস্থিত সকলে তোদের দুটোর হাবভাব দেখে বুঝতে পারছে তোরা একে অপরের সাথে ফ্লার্ট করছিস। ”

চন্দ্রার কথায় নিবেদিতা ধরা পরে গিয়ে লজ্জায় লাক হয়ে আস্তে করে বলে,
“উফফ চুপ কর। ”
নিবেদিতার লজ্জা মাখা মুখ দেখে চন্দ্রা ঠোঁট টিপে হাসে৷

এদিকে উশান উল্লাসের উদ্দেশ্যে খুব সাবধানে বলে,
” ভালোই তো প্রেম করছিস দেখি৷
উল্লাস হকচকিয়ে জবাব দেয়,
” মানে? ”
উশান উল্লাসের ফ্যালফ্যাল চাহনি দেখে হাসে। হেসে বলে,
“তোর আর নিবেদিতার কথা বলছি৷

উল্লাস আরো অবাক হয়ে বলে,
” তুই কিভাবে জানিস?
বন্ধুর বোকা কথা শুনে উশান উল্লাসের কাধে হাত রেখে বলে,
“তোর হাবভাব বলে দিচ্ছে ব্যাটা৷ ”

উশানের কথায় উল্লাস কাশি দিয়ে গম্ভীর একটা ভাব ধরে৷উল্লাসের কান্ডে উশান হেসে বলে,
“আমার মনে হয় এবার বিয়ে করে নেওয়া উচিত তোদের।”

উল্লাস উশানের পাশ কাটিয়ে নিবেদিতা হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে থাকে প্রাণভরে৷ নিবেদিতার মুখপানে তাকিয়ে থেকে প্রাণবন্ত গলায় বলে,
“হুমম৷ করবো। যখন নিবেদিতা চাইবে৷ ”

নিবেদিতা কথা বলতে বলতে উল্লাসের চোখে চোখ পরে৷ মুখে আলতো হাসির রেখা টেনে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করে কি হয়েছে? উল্লাস জবাবে ঈষৎ হেসে মাথা নেড়ে জবাব দেয়, কিছু হয়নি৷ ”

“উল্লাস হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে নিবেদিতাকে খঁজতে থাকে৷ অনেক্ষণ ধরে দেখছেনা। খুঁজতে খুঁজতে নিবেদিতার দেখাও পেয়ে যায়৷ দূর থেকে নিবেদিতা একপাশ দেখে উল্লাস চিনে নিয়েছে নিবেদিতাকে।মুখে হাসি ফুটিয়ে নিবেদিতার থেকে কিছুটা দূরে এসে উল্লাস থমকে দাঁড়ায়৷নিবেদিতার সামনে অমিত দাঁড়ানো৷ অমিত হাত নেড়ে নেড়ে নিবেদিতাকে কিছু বলছে।আর নিবেদিতা তা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে হাসছে৷ অমিত’কে দেখে উল্লাস ক্ষুব্ধ গলায় নিজে নিজেকে বলে,
“এই ছেলের কি আর কোন কাজ নাই। যখন তখন দেখি নিবেদিতা সাথে হাহা হিহি করতে থাকে৷ এই ছেলের একদিন কি আমার একদিন৷ ”
কথাটা বলে হাতের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরে অমিতের প্রতি আক্রোশ নিয়ে তাদের দিকে এগোতে থাকে৷অমিত উল্লাসকে এদিকে আসত্ব দেখে নিবেদিতাকে বলে,
” তোমার ম্যান আসছে৷ তোমার সাথে আমাকে দেখে তার অবস্থা দেখার মত। আমি যদি আর কিছুক্ষণ এখানে থাকি তবে সে নির্ঘাৎ আমায় মেরে অজ্ঞান করে দিবে। আমি বরং যায়। আর বলছি তা যেন মনে থাকে৷ বাই৷ ”

উল্লাস আসতে আসতে অমিত নিবেদিতার পাশ থেকে চলে যায়। উল্লাস নিবেদিতার জাছে এসে গম্ভীর গলায় কৈফিয়ত চেয়ে বলে,
” ওই ছেলেটার সাথে তুমি এতো কি কথা বলছো?
নিবেদিতা উল্লাসের রাগে লাল হয়ে চাওয়া চেহারা দেখে মুখে হাত রেখে হাসে৷ হাসি উল্লাসের থেকে আড়াল করে উল্লাসকে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলে,
“কিছুনা৷ ”
উল্লাস ভ্রু কুঁচকে বলে,
“সত্যি করে বল৷
” বললো, সে আমায় ভালোবাসে। আমায় বিয়ে করতে চায়। ”

নিবেদিতার কথা শুনে উল্লাসের রাগ মাথায় চড়ে গেলো। ক্রুদ্ধ গলায় বলে,
“ওর বিয়ে করা আমি বের করছি। ”

উল্লাস অমিতের দিকে তেড়ে যেতে চাইলে নিবেদিতা তাড়াতাড়ি উল্লাসের বাহু আকড়ে ধরে শব্দ করে হেসে বলে,
“আরেহ, আরেহ কি করছো? আমি মজা করেছি। ও এমন কিছুই বলেনি। ও তো আমায় ওর বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে৷”

নিবেদিতার কথায় উল্লাস থেমে গিয়ে নিবেদিতার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ৷তারপর নিজের রাগ শান্ত করে স্বাভাবিক গলায় বলে,
“কি বললে?

নিবেদিতা উল্লাসের মুখের দিকে তাকিয়ে আহ্লাদী গলায় বলে,
” বললাম, তুমি অনেক হিংসুটে। ”

নিবেদিতা উল্লাসকে রাগিয়ে দিয়েছে উল্লাস সেটা বুঝতে পেরে নিবেদিতার হাত উল্লাসের বাহু থেকে ছাড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করে নিয়ে গলা খাকড়ি দিয়ে নিবেদিতার দিকে আঙুল তাক করে নিবেদিতাকে শাসিয়ে বলে,
“ভালো করলে না একদম। ”

কথাটা বলে উল্লাস নিবেদিতার পাশ থেকে চলে যায়। নিবেদিতা উল্লাসের পিছু ডাকে কিন্তু উল্লাস তাতে কোন জবাব দিলোনা৷ উল্লাস চলে যেতে নিবেদিতা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে উল্লাসের পিছু নেয়৷ ”

“এক সপ্তাহ গ্রামে বাড়িতে কাটিয়ে সবে বাসায় ফিরলো নিবেদিতা৷বাসায় প্রবেশ করে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে৷ ড্যাবড্যাব করে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর চোখ বন্ধ করে মুখ দিয়ে শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে বসে৷ পাশে পরে থাকা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে উল্লাসের ম্যাসেজ। উল্লাস লিখেছে,
” বাসায় ফিরেছো?

নিবেদিতা ছোট করে , ‘হুম’ লিখে জবাব লিখে৷তারপর মোবাইল বিছানায় রেখে চুল হাতখোঁপা করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়৷

“ভোর পাঁচটায় কলিংবেলের শব্দে নিবেদিতার ঘুম ভাঙ্গে৷ ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দিতে নিবেদিতা কিছু বুঝার আগে উল্লাস নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে আসে৷ উল্লাস জড়িয়ে ধরতে নিবেদিতা চমকে যায়। যার ফলস্বরূপ নিবেদিতার সকল ঘুম মুহূর্তে উড়ে যায়৷ যখন বুঝতে পারলো উল্লাস তখন নিবেদিতাও উল্লাসকে তার বাহুদ্বয়ে আগলে ধরে৷ কিছু মুহূর্ত তারা একে অপরকে আষ্টেপৃষ্টে জন্য ধরে রাখে। সময় অনেকটা অতিবাহিত হওয়ার পর তারা একে অপরকে তাদের বাহু থেকে ছাড়ে। উল্লাস তার ইউনিফর্মে। ডিউটি শেষ করে সোজা নিবেদিতার বাসায় এসেছে। নিবেদিতা তার ঘুমন্ত ফোলা ফোলা চোখে উল্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে এক চিলতে হাসি লেপ্টানো। উল্লাস নিবেদিতার মুখের চুল খুব যত্নে দুইহাত দিয়ে সরিয়ে বাম গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
” আই মিস ইউ সো মাচ। ”

নিবেদিতা উল্লাসকে তার দু’হাত দিয়ে আকড়ে ধরে তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,
“আই মিস ইউ টু।”
নিবেদিতার জবাবে উল্লাস প্রানবন্ত হয়ে হেসে নিবেদিতাকে বাহুতে আগলে নেয়।

নিবেদিতা আর উল্লাস পাহাড়ের চূড়ায় বসে আছে একে অপরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে৷ দুজনে একসাথে আজকের সূর্য দ্বয় দেখবে৷ দুজনে খুন মনোযোগ দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আছে৷ দুজনের গায়ে তাদের ইউনিফর্ম। তাদের জুতো জোড়া কাদায় মাখা মাখা। উল্লাস আর নিবেদিতা মুগ্ধ নয়নে রক্তিম আকাশ পানে চেয়ে রই। কি অপরুপ মুগ্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ এই অপরুপ দৃশ্য দেখতে মন প্রাণ শান্তিতে ভরে উঠে৷ সূর্য উদয় হচ্ছে৷উল্লাস-নিবেদিতা তারা একে অপরের হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে রেখে হাত আকড়ে ধরে৷ সূর্যদ্বয় তারা দুজনে দেখেছে। কিন্তু আজকের মত মুগ্ধতা হয়তো কেউ এর আগে হয়নি। মনে হচ্ছে আজ প্রথম বার তারা সূর্যদ্বয় দেখছে। নিবেদিতা আনন্দে উত্তেজিত হয়ে উল্লাসের জামা খামছে ধরে মুগ্ধ নয়নে সূর্য উদয় দেখতে থাকে৷উল্লাস নিবেদিতার আনন্দে ঝলমল করা মুখপানে চেয়ে থাকে মুগ্ধ নয়নে৷নিবেদিতা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। আনন্দে চোখ চকচক করছে তার। উল্লাস স্মিথ হেসে তার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা নেয়। এরপর নিবেদিতা ডাকে খুব শান্ত মিষ্টি গলায়,
“নিবেদিতা…. ”
নিবেদিতা উল্লাসের দিকে ঘাড় ঘুরায়। উল্লাস আলতো হেসে একটা ছোট বাক্স নিবেদিতার সামনে ধরে। নিবেদিতার মুখের হাসি নিভে যায়। হাসির জায়গায় জায়গায় করে নেয় একরাশ বিস্ময়৷ বিস্ময় চোখে ফ্যালফ্যাল করে উল্লাসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। উল্লাস নিবেদিতার বিস্ময় ভরা চাহনি দেখে মুচকি হেসে বাক্সটা মেলে ধরে নিবেদিতার সামনে৷ নিবেদিতা তার বিস্ময় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। উল্লাসের মুখের দিকে চেয়ে আছে পলকহীন দৃষ্টিতে৷উল্লাস নিবেদিতার দিকে ঘুরে বসে নিবেদিতার ডান হাত আকড়ে ধরে খুব বিনয়ী গলায় আঙুলে রিং পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
“আমাদের সম্পর্কটাকে,আরো একধাপ এগিয়ে নিতে চাই৷ ”

নিবেদিতা এতোটাই বিস্ময়ের পর্যায়ে পৌছে গেছে যে নিবেদিতা বোবা বনে গেলো৷নিবেদিতা হা করে চেয়ে রয়েছে৷নিবেদিতার বিস্ময় দেখে উল্লাস ঠোঁট প্রশার করে হেসে নিবেদিতার কপালে আলতো করে চুমু খায়। এরপর বুকে আগলে নিলে নিবেদিতা উল্লাসের জামা খামচে ধরে উল্লাসের বুকে মুখ গুজে রাখে। নতুন সূর্যদ্বয়ের সাথে সাথে আজ নতুন সম্পর্কের একধাপ এগিয়ে গেলো৷ নতুন দিনের নতুন সূচনা হলো তাদের দু’জনের৷ ”

“(সমাপ্ত)”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here