#কল্পনায়_হলেও_শুধু_আমারি_থেকো💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
#পর্ব_০২
আমান নিজের বাম হাতে মেঘের মাথার পেছনে ধরে অন্য হাতে মেঘকে খুব কাছে নিয়ে আসে।
মুহুর্তে মেঘের রাগ সব ভয়ে পরিনত হয়।
মেঘের ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে আমান।
মেঘ কিছু সময় ছোটাছুটি করার পরেই আমান মেঘকে ছেড়ে দেয়।
মেঘ এবার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমান কে চড় বসিয়ে দেয়।
কিন্তু বিপরীতে আমান আবারো মেঘের সাথে একি কাজ করে।
–আর সাহস করো না চড় মারার নাহলে এর পর যা হবে তার জন্য তুমি দায়ি থাকবে।
আমানের কথায় মেঘ ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে।
একটা মানুষ হটাৎ এভাবে তার জীবনে কি করে আসতে পারে।
এটা কি আদও সম্ভব।
–তোমার কাছে ভাবার জন্য সময় আছে কিন্তু মাত্র ৩ দিন৷।
যা করবে ৩ দিনে ভাবো।
মনে রেখো তোমার জন্য আমি সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারি।
কথাটা বলে আমান সেখান থেকে চলে আসে।
আর মেঘকে আমানের লোকেরা বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে।
মেঘ বাসায় পৌঁছাতে,
–কিরে মা কোথায় ছিলি রিমি বলল তোকে কারা তুলে নিয়ে গেছে কি হয়েছে মা (মাহিমা রহমান উত্তেজিত হয়ে)
–মা রিমি তোমার সাথে মজা করেছে তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।
–মানে কি রিমি এটা কোন ধরনের অভদ্রতা। (রেগে)
–কিন্তু মা।
মেঘ রিমিকে ইসারা করে রিমি চুপ হয়ে যায়।
–রিমি একটু চা নিয়ে আয়। (মেঘ)
মেঘ নিজের রুমে চলে আসে।
মেঘ চনচল সভাবের হলেও ভিশন চাপা।
কখনো অতিরিক্ত কষ্ট না হলে তা প্রকাশ করে না।
সবাই তাকে ভালোবাসে ওর কিছু হয়েছে শুনলে সবাই যে কষ্ট পাবে।
রিমি চা নিয়ে আসে মেঘের জন্য।
–আপু চা।
–দে।
–তুমি মিথ্যা বললে কেন।
–বাবা মায়ের উপর এমনি অনেক চাপ প্লিজ তুই আর কিছু বলিস না ওরা সহ্য করতে পারবে না।
–কিন্তু আপু।। ++
–রিমি না।
–ঠিক আছে তোর যা ভালো মনে হয়।
মেঘ চা খেয়ে নেয়,
এভাবে চিন্তার মাঝ দিয়ে ৩ দিন কেটে যায়।
ঠিক ৩ দিন পর।
মেঘ নিজের রুমের বেলকনিতে বসে ছিল হটাৎ কোন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে।
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
–ওয়া আলাইকুম সালাম মিসেস.খান।
মেঘ কন্ঠ শুনে বুঝতে পারে ওপাশের লোকটা কে।
মেঘের বুকের মাঝে ধকধক শব্দ তিব্র হতে থাকে।
–কি চাই?
–আপাতত শুধু তোমাকে।
–দেখুন আমি আপনার এসব ফালতু প্রস্তাবে রাজি নই।
–ওকে সমস্যা নেই সামনে যা ঘটতে চলেছে তার জন্য তুমি দায়ি।
সেদিন আমান শুধু এই কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিয়েছিল।
মেঘ সেদিন না বুঝতে পারলেও প্রায় ৫ দিন পরে বাবার হটাৎ হার্ট এটাক এ বুঝতে পারে কি হচ্ছে তার সাথে।
হসপিটালে দৌড়ে ও কোন কাজ হচ্ছিল না।
মেঘকে জানান দিতে আবারো তুলে নিজের কাছে নিয়ে যায় আমান।
পরের বার ঠিকি সে তার উদ্দেশ্যে সফলতা লাভ করে,
হটাৎ গাড়ি থামার জন্য মেঘ বন্ধ চোখ দুটো খুলে তাকালো।
পাশে বসে থাকা লোকটা তাকে কোলে তুলে নিলো।
এটা এয়ারপোর্ট।
মেঘ অবাক হয়ে আছে।
পাশে প্রেস এর লোক সমানে ছবি তুলছে।
গার্ড রা সামনে দিয়ে অতিরিক্ত লোক গুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে আর আমান কোন গল্পের নায়কের মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে।
আমানের মুখে কালো মাস্ক।
মেঘ খেয়াল করলো তার মুখেও একটা সাদা মাস্ক।
কিছু সময় পরে তারা প্লেনে উঠে এলো।
প্লেন টা যে শুধু মাত্র আমানের জন্য তা ভেতরে এসে বুঝতে বাকি রইলো না মেঘের।
প্লেন এর ভেরতে কেউই নেই।
শুধু দু’জন এয়ার হোস্ট।
ব্যাগ গুলো উপরে তুলে রেখেছে।
আমান মেঘকে একটা সিটে বসিয়ে দেয়।
আর মুখ থেকে মাস্ক টাও খুলে দেয়।
–আমরা কোথায় যাচ্ছি?
–যাচ্ছি কোথাও চিন্তা করো না তোমার স্বামীর বাসায় ই যাচ্ছো তুমি।
মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় ফর্সা বর্ণের এই ছেলেটার দিকে।
চোখ গুলো হালকা কটা।
একটা সাদা সর্ট হাতার গেঞ্জি প্যান্ট এ ইন করা।
মেঘের দিকে ঝুঁকে থাকায় চুল গুলো সামনে এসেছে,
কে বলবে এতো মায়াবী চেহারার লোকটার পেছনে আসল রহস্য টা কি।
–আমি যাবো না কোথাও।
আমায় প্লিজ আমার পরিবার থেকে আলাদা করবেন না।
আমান মেঘের কথায় অট্ট হাসিতে মেতে ওঠে,
–ও মাই গড তুমি কি বললা এগুলা।
আমার ১০ দিনের পরিশ্রম তুমি বুঝেছো।
এতো পরিশ্রম আমি কখনো করি নি কারোর জন্য করি নি।
আমান খান কখনো কিছু পরিশ্রম করে পাই নি সৃষ্টিকর্তার দোহায় সে এমনি পেয়েছে।
কিন্তু তোমার জবাব আমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে।
আমানের কথা গুলো বলার সময় চোখে যে এক রাস ঘৃণা ছিল তা মেঘের চোখ এড়ালো না।
কিন্তু কেন এই ঘৃণা?
আর কে এই লোকটা?
কোথায় যাচ্ছে সে?
আদও কি সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য?
কিছুর উত্তর মেঘের জানা নেই।
আমান মেঘের সামনে থেকে সরে এসে মেঘের মুখোমুখি সিটে বসে পরে।
মেঘ একটা পুতুলের মতো বসে আছে।
সাদা চুরিদারি থ্রি পিচ টাই তার পরনে।
চুল গুলো এতো ঝামেলায় এলোমেলো হয়ে আছে।
কিছুই গোছানো নেই।
আমান ও তার এলোমেলো দৃষ্টি মেঘের দিকে রেখেছে।
মেয়েটার চোখ বাইরের দিকে,
ঘন সাদা মেঘের সাথে তিব্র সূর্যের আলো।
এই দৃশ্য টা যেন অজানা কোন সর্গ।
–(আম্মু, আব্বু, রিমি আমায় কি খুঁজবে তোমরা? নাকি হারিয়ে গেছি বলে ছেড়ে দিবে।)
ভিশন কান্না পাচ্ছে এই মুহুর্তে মেঘের।
সত্যি ভিশন কান্না পাচ্ছে।
কখনো এমনটা কল্পনায় ও আসে নি মেঘের।
যে এটা হতে পারে।
,
,
,
–আম্মু কই তুমি (রিমি)
–কি হয়েছে?
–আম্মু মেঘ আপুকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও।
–মানে কি। ও তো ব্যাঙ্কে গেছিল।
–হ্যাঁ কিন্তু কাউন্টারে ত টাকা জমা পরেছে তাহলে ওর ত হসপিটালে থাকার কথা।
–হ্যাঁ তুই ফোন দে।
–দিয়েছি বন্ধ পরে গিয়ে দেখি
ওর ফোনটা আর ব্যাগ টা কেউ এক জন নিয়ে এসেছে।
প্রশ্ন করতে বলল,
এটা পরা ছিল রাস্তায়।
উনি পেয়েছেন।
–কিন্তু উনি বুঝতে পারলো কি করে এটা মেঘের আর মেঘ তোর বোন।
–আমি ওতো জানি না মা তুমি আপুকে খুঁজো।
–খুঁজো মানে,
মাহিমা বেগম উত্তেজিত হয়ে পরে।
–তোরা দুই বোন মিলে আমার সাথে মজা করিস না রিমি।
এমনি তোর বাবাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি।
–মা বিশ্বাস করো মজা করছি না সত্যি আপুকে পাচ্ছি না।
,
প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেছে মেঘের কোন খোঁজ নেই।
মাহিমা রহমান কান্নায় ভেঙে পরেছে।
রিমিও সাথে।
কি হচ্ছে তাদের সাথে।
,
প্রায় ৪ ঘন্টা হতে চলল মেঘের কোন খোঁজ নেই।
মাহিমা বেগম দৌড়ে পুলিশ স্টেশন এ জান।
তারা যদি তাকে কোন হেল্প করতে পারে,
কিন্তু পুলিশ ও বলেছে যে ২৪ ঘন্টার আগে তারা কোন রিপোর্ট লিখবে না।
এবার সত্যি অসহায় হয়ে আছে দু’জন।
কিছুই করার নেই,
,
,
রাত ১২ঃ৩০ মিনিট,
প্লেনটি গিয়ে ল্যান্ড করেছে সাউথ কোরিয়ার এয়ারপোর্টে,
মেঘ বুঝতে পারে এটা তার দেশ নয় কিন্তু এটা ঠিক কোন দেশ তা বুঝতে পারছে না।
আমান গিয়ে মেঘকে আবারো পাজকোলে তুলে নেয়।
মেঘ চুপচাপ আমানের কলার্ট ধরে রেখেছে।
ভিশন ক্লান্ত চোখ দুটো।
বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে এর মতো এখানের এয়ারপোর্টে এ ও লোকের সমাহার।
মেঘ খেয়াল করে দেখলো টিভিতে আমান আর মেঘের বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট এর ছবি দেখানো হচ্ছে। আর কোরিয়ান ভাষায় সংবাদ পাঠ করা হচ্ছে।
চলবে,