তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৬

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি(রোকসানা)

পর্ব (১৬)

“”আরে! আরে!! এতো রাতে আবার কোথায় যাচ্ছিস মাহির? একটু আগেই তো আসলি।””
“”গুন্ডামী করতে খালামনি। আমার রুমটা একটু গুছিয়ে রেখোতো।””

মাহির চোখ টিপ দিয়ে শার্টের হাতাগুলো ভাজ করতে করতে ঠোটে হাসি ফুটালো। আজকে আবার একটি শার্টের ইন্তেকাল হবে!!!

“”স্যার,আপনি আবারও আসছেন?? অথৈ আফা তো বাসায় নাই।””
“”তুমি তো আছো ফুল্লোরানী। যাও এককাপ ধোয়া উঠানো চা নিয়ে আসো।””
“”এই টাইমে কেউ চা খায় স্যার?””
“”কেন তোমার অথৈ আফা কখন কখন চা খায়??””
“”উনি তো চায়ই খায়না,গিরিন টি খায়। আফা কইছে এইডা খাইলে নাকি মোটা হয়না,নাইকা গো মতো শূন্য ফিগার হয়। হের লাইগাইতো অথৈ আফা এতো সুন্দর।””
“”তাহলে আমাকেও গ্রীন টি বানিয়ে দাও তো। এমন করে বানাবে যেন একরাতেই সুন্দর হয়ে যেতে পারি আর তোমার আফা টাস্কি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।””
“”আপনি পাছটা মিনিট বহেন আমি এহনি গিরিন টি নিয়া আইতাছি।””

মাহির সেই পুরোনো সোফাতেই বসে পড়লো। এখানে বসেই অথৈ রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করেছিলো। শুধু তাই নয় আজ চারটা মাস ধরে এই জায়গাটাতে বসেই মাহির ঘন্টারপর ঘন্টা বসে অথৈর অপেক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছিলো। ফুল্লোরানী আর শ্বশুড়ের কথায়ও মাহির অথৈর রুমে দরজায় নক করতে যায় নি কখনো।তার কাছে মনে হতো নিজের বউকে ডেকে আনতে হবে কেন???

“”মাহির,তুই? তুইনা চলে গিয়েছিলি?? আবার এতো রাতে এলি যে! কোনো সমস্যা?””
“”না,বাবা। অথৈকে নিতে এসেছি।””
“”তুই তো অথৈকেই নিতে আসিস। সেটা আবার আজকে ঘটাকরে বলার কি আছে?? কিন্তু আজ পরপর দুবার এলি যে,anything wrong??””
“”Everything wrong,বাবা। অথৈ কখন আসবে?? কোথায় গেছে ও??””
“”কোথায় গেছে মানে? ও তো রুমেই আছে। স্টাডি করছে। কয়েকদিন পর তো এক্সাম তাই।””
“”তাহলে ফুল্লোরানী যে বললো বাইরে গেছে??””
“”ও, অথৈ বলতে বলছে হয়তো। ও পড়তে বসলে নিজের রুমে কাউকে এলাও করেনা এমন কি আমাকেও না। যদি কোনো প্রয়োজন হয় নিজেই চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকবে,কিন্তু রুমে ঢুকতে দিবেনা। আমার মেয়েটা পুরো পাগল বুঝলি,বাবা।””

এনামুল হক দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। এমন ভালো একটা ছেলের জীবনটা কেন যে এলোমেলো করে দিলাম?? সবসময় সবাইকে বলে বেড়িয়েছি অস্থিরতাই কোনো সিদ্ধান্ত যাতে না নেই আর সেই আমিই হুট করে ডিসিশন নিয়ে এই এতিম ছেলের গোছানো জীবনটা অগোছালো করে দিলাম। ও কি আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে?? আমাকে কতটা বিশ্বাস করেছিলো। আর আমি এভাবে ভেংগে দিলাম? নিজের স্বার্থের জন্য ওর ইচ্ছাশক্তির কোনো দামই দিলামনা।

এনামুল হক মাহিরের পাশে বসলেন।

“”মাহির,এক মুহুর্তের জন্য ভেবে নে আমি তোর বাবা নয়,তোর সেই পুরোনো স্যার। আর সেই স্যার হয়ে তোকে একটা কথা বলবো শুনবি??””
“”জ্বি স্যার,বলেন। এমন অনুরোধ করছেন কেন? আপনিতো জানেন আমি আপনার প্রত্যেকটা কথায় মন দিয়ে শুনি,পালন করার চেষ্টা করি। আপনি নির্দিধায় বলতে পারেন।””
“”দেখ,বাবা। আমার একটা ভুল ডিসিশনের জন্য তোর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এসবের জন্য আমিই দায়,তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস!!””
“”স্যার আপনি এসব…””
“”আমার কথা শেষ করতে দে মাহির।””
“”হুম।””
“”এখন আমি চাই তুই আবার নতুন করে সব শুরু কর। হয়তো একটু টাইম লাগবে কিন্তু সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। একটা লক্ষী,শান্ত,সংসারী মেয়েকে ঘরে নিয়ে আয় যে তোকে গুছিয়ে রাখতে পারবে। এভাবে আর কতদিন থাকবি? অথৈর কথা ভুলে যা। ও মনে হয়না তোর সাথে যেতে রাজী হবে। আমি অনেক বুঝিয়েছি কোনো কাজ হয়নি। আমার কথা কানেই নেইনা বুঝবে কিভাবে? আনাকে ডিরেক্ট বলে দিয়েছে আমি যদি তোকে নিয়ে কোনো কথা বলি তাহলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে। তুই বল এ অবস্থায় আমি কি আর কিছু বলতে পারি?? একটাই তো মেয়ে আমার!! ও ছাড়া আর কেইবা আছে?? একবার জোর করতে গিয়ে তোদের দুজনের জীবনটাই উলটপালট করে দিছি তাই আর সাহস পায়না।””

মাহির কিছু বলতে যাবে তখনি এনামুল হক হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলেন।

“”তুই যদি খুজে না পাস আমি হেল্প করবো। তোর মতো আমার অনেক স্টুডেন্ট আছে। একদম লক্ষী দেখতেও ভারী মিস্টি। অথৈর মতো তুইও তো আমার ছেলে। তুই শুধু একবার হ্যা বলে দে,আমি সব থেকে ভালো মেয়েটা তোর জন্য এনে দিবো।””

মাহির এবার ঠোটে হালকা হাসি ফুটিয়ে সোফা ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। এনামুল হকের হাতদুটো চেপে ধরে বললো,,

“”আমি যাকে বলবো তাকেই এনে দিবেন??””
“”হুম। তাকেই দিবো। দরকার হলে আমি তাদের হাতে পায়ে ধরবো তবুও তোর জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে চাই মাহির।””
“”আমার অথৈকে চাই বাবা।””
“”তুই কেন বুঝতে পারছিসনা। তোর কষ্টগুলো আমি দেখতে পারছিনা।””
“”আর দেখতে হবেনা,বাবা। এখন থেকে অথৈকে দেখাবো। তুমি শুধু আমার বউকে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দাও।””
“”মাহির!!!””
“”প্লিজ,বাবা।””

এনামুল হক নিরাশ চোখে মাহিরের দিকে তাকাতেই তার মনে হলো অন্যদিনের মতো আজ মাহিরের মুখটা শুকনো লাগছেনা। চেহারায় বেশ লাবন্যতা দেখাচ্ছে।

“”স্যার,এই লন আপনার গিরিন -টি। একবার টেস্ট কইরা দেখেন তো কেমন হয়ছে? পুরো আধা ঘন্টা ধইরা আপনার জন্য ইসপেশিয়ালভাবে বানাইছি।””

মাহির হাতে নিয়ে ছোট্ট চুমুক দিতেই অথৈর চিৎকার শুনতে পেলো। হঠাৎ অথৈর কন্ঠ কানে আসায় গরম চাটা পুরো ঠোটে পড়ে ছেকা খেলো।

“”ফুল্লোরী,এই ফুল্লোরী। এক কাপ গ্রিন-টি নিয়ে আয়।””
“”জ্বী আফা,এহনি আনতাছি।””
“”এক কাপ না,দুই কাপ নিয়ে আয়। পড়া মাথায় ঢুকতেছেনা। চা দিয়ে কেমিস্ট্রি ভিজিয়ে খেতে হবে তাহলে যদি ঢুকে!!!””
“”আইচ্ছা।””

মাহিরের ঠোট পুরিয়ে শান্তি হলোনা অথৈর। দুজনের চিৎকারে কানদুটোও পুরিয়ে দিলো। সাথে মনটাও জুড়িয়ে দিলো। আহা! আমার অথৈর কন্ঠতো আরো সুন্দর হয়ে গেছে। ইশ!শুনেই মনটা জুরিয়ে গেলো। দেখতে না জানি কত সুন্দর হয়ছে। এমনিতেই তো নেশা ধরানো রুপ। আর সুন্দর হয়ে কি হবে? পরে তো দেখবো ২৪ ঘন্টায় নেশায় ঢুবে আছি। আহার,নিদ্রা সব তো কবরে যাবে!!!!

এতক্ষণ নিচে অপেক্ষা করলেও অথৈর নেশা ধরানো কন্ঠ শুনে আর ১ সেকেন্ডও মাহির অপেক্ষা করতে পারলোনা। তাকে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছে মনে হলো। দরজার সামনে গিয়েই থমকে গেলো। আমাকে দেখে যদি অথৈ রেগে যায় তাহলে কিভাবে সামাল দিবো?? যদি বেশি রেগে যায়???

এই মুহুর্তে ভাবনার সাগরে ডুব দিতে ইচ্ছে হলোনা মাহিরের। দরজায় নক করে বসলো।

“”কিরে,আজ এত তাড়াতাড়ী বানিয়ে ফেললি? বাহ! যা এমাসে মাইনে তে তোকে একশ টাকা বখশিস দেওয়া হবে। বাবা না দিলে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাস।””

অথৈ খই ফুটানোর মতো করে বক বক করতে করতে দরজাটা হালকা করে খুলে নিয়ে নিজের একটা হাত বাইরে বাড়িয়ে দিলো।

“”কই, আমার গ্রিন-টি টা দে,ফুল্লোরী।””

মাহির অথৈর হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরকমই পুরো শরীর ঢেকে শুধু ধবধবে একটা হাত বের করে বিয়ে করেছিলো মাহিরকে। তফাৎ এইটুকুই তখন কাপড়ের আবরনে ঢাকা ছিলো আজ দরজার আড়ালে ঢাকা।

“”কি হলো? কই গেলি ফুল্লোরা??””

অথৈর ডাকে মাহিরের ভ্রম ভাংলো। অথৈর হাতটা টেনে নিয়ে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো।

“”খুনীরানী,কেমিস্ট্রি বুঝতে গ্রিন-টি কে ভিজানের কোনো দরকার নাই। মাহিরকে ভিজিয়ে খেয়ে নিন!! এমনিতেই সব কেমিস্ট্রি মাথায় ফুরফুর করে ঢুকে যাবে!!!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here