/★এই এই পঁচা ছেলেটা, তুমি ওই লোকটাকে এভাবে মারছো কেন?
নিজের এক রাইভালকে মেধরম মারছিল গ্যাংস্টার আদিত্য। লোকটাকে নিচে ফেলে দিয়ে শুট করার জন্য গান বের করতেই, হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ উপরোক্ত কথাটি বলে উঠলো। আদিত্য তাড়াতাড়ি করে গানটা ব্লেজারের ভেতর লুকিয়ে ফেললো। যাতে সাধারণ মানুষ গান দেখে ভয় পেয়ে না যায়। এমন একটা সিচুয়েশনে কোন মেয়ের কন্ঠ শুনে প্রচন্ড বিরক্তি আর রাগ নিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো আদিত্য। পেছনে ফিরতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেল আদিত্য।
ওর সামনে একটা ১৯/২০ বছরের মেয়ে কোমড়ে দুই হাত মুঠি করে রেখে ঠোঁট চেপে বাচ্চাদের মতো চোখ পাকড়িয়ে তাকিয়ে আছে। পরনে একটা পিংক ফ্রক, মাথার চুল দুই দিকে উঁচু করে ঝুটি বাঁধা, কপালের উপর ছোট করে কাটা কিছু চুল পরে আছে।
আদিত্যকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আবার শিশুসুলভ ভাবে বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছ না কেন? তুমি ওই ভুড়িওয়ালা লোকটাকে এভাবে মারছিলে কেন? তুমি জানোনা মারামারি করা পঁচা কাজ? আমার বাবা বলেছে।
মেয়েটির কথায় আদিত্যের ঘোর কাটলো। আদিত্য হঠাৎ আবিস্কার করলো ও একটা মেয়ের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল। ব্রেনের হার্ডডিস্কে সার্চ মেরে কোথাও খুজে পেলনা যে, শেষ কবে ও কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। নাহ রেজাল্ট জিরো। তাকানো তো দূরের কথা, আদিত্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও দেখেছে কিনা সন্দেহ। মেয়ে মানুষ বলতে আদিত্যের কাছে চরম বিরক্তির কারণ ছাড়া আর কিছুই না।
আদিত্যের ভাবনার মাঝেই মেয়েটি আবারও বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছ না কেন? তুমি কি বোবা নাকি?
এবার একটু ভড়কে গেল আদিত্য। যার সামনে লোক চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পায়না।সেখানে এই মেয়ে কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। আদিত্য কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–হোয়াট? এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না? তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছ? তুমি চেনো আমাকে?
মেয়েটি আদিত্যর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কিছুক্ষণ বিচক্ষণ ভাবে স্ক্যানিং করে নিল।তারপর থুতনিতে দুই আঙুল রেখে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। মেয়েটির কার্যকলাপ দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটি কি করছে।
মেয়েটি হঠাৎ উৎসাহ নিয়ে দুই হাতে তালি দিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো।
–আরে হ্যাঁ, আমি চিনে গেছি তোমাকে। এখানে নিশ্চয় কোনো মুভি চলছে, আর তুমি হলে মুভির হিরো তাইনা?
এতক্ষণ মার খাওয়া লোকটিকে ধরে রেখেছিল বিহান। মেয়েটির কথা শুনে হঠাৎ ফিক করে হেসে দিল।তবে আদিত্যর চোখ গরম করে তাকানো দেখে সাথে সাথে হাসি বন্ধ হয়ে গেল। আদিত্য আবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো।
–এই মেয়ে কি বলছো এসব?কিসের মুভি আর কিসের হিরো? আমাকে দেখে কি তোমার হিরো মনে হয়?
মেয়েটি হাসিমুখে বলে উঠলো।
–অবশ্যই। তোমাকে দেখতেও একদম ওই টিভির হিরোদের লাগে। আর ওই হিরোদের মতো মারামারিও করো। দেখেছ আমি কত্তো ইনটেলিজেন্ট? ঠিক ধরে ফেলেছি। আচ্ছা আমি তোমাকে পঁচা বলেছি তারজন্য সরি হ্যাঁ? হিরোরা তো ভিলেন কে মারবেই। তানা হলে কি আর মজা হবে নাকি। তুমি যাও ওই ভুড়িওয়ালাকে আরও মারো, আমি দেখবো আর তালি বাজাবো হ্যাঁ? অনেক মজা হবে।
এতবড় মেয়ের এমন বাচ্চাদের মতো আচার আচরণ দেখে আদিত্য বুঝে গেল যে,মেয়েটির মাথার তাড় ছিঁড়া। গায়ে পায়ে বড় মেয়েটি মস্তিষ্ক থেকে এখনো বাচ্চাই আছে। আদিত্য মাথা ঘুড়িয়ে ওর লোকদের ইশারা করতেই, তারা মার খাওয়া লোকটিকে ধরে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
আদিত্যর থেকে কিছুটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল বিহান। মেয়েটাকে এভাবে আদিত্যের সাথে কথা বলতে দেখে বিহান একটু ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের যে রাগ, তারওপর এমন একটা সিচুয়েশনে মেয়েটা চলে এসেছে যেখানে আদি আগে থেকেই রেগে আছে। নাজানি মেয়েটার কি অবস্থা করে।
কিন্তু বিহানকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য মেয়েটাকে রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। দু কদম যেয়ে পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মেয়েটি কেমন ঠোঁট উল্টিয়ে মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য কেন যেন যেতে নিয়েও যেতে পারে না। আবারও মেয়েটির সামনে এসে জিঙ্গেস করলো।
–এই মেয়ে নাম কি তোমার? এখানে এই নির্জন জায়গায় একা একা কি করছ? তুমি জানো এখানে তোমার সাথে কতকিছু হতে পারে?
মেয়েটি আবারও থুতনিতে দুই আঙুল রেখে কিছু ভাবতে লাগলো। আদিত্য সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হলো উত্তর দাও?
মেয়েটি বলে উঠলো।
–ভাবছি তুমি এত্তো গুলো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর আগে দেব?
আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–ঠিক আছে আগে তোমার নাম বলো?
–কোন নামটা বলবো?আমার তো আবার অনেক গুলো নাম। বাবা আমাকে ডাকে মামুনি বলে, আম্মু ডাকে নূরিমা বলে,নিলা ডাকে আপু বলে। তাহলে কোনটা বলবো?
মেয়েটির কথা শুনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এ কার পাল্লায় পড়লো রে বাবা। অন্য সময় হলেতো মেয়েটাকে ফেলে চলে যেত এখান থেকে। যা খুশি হতো মেয়েটার ওসবের ধার ধারতোনা আদিত্য। তবে আজ কেন যেন মেয়েটাকে ফেলে রেখে যেতে পারছে না। কেন পারছে না সে নিজেও জানে না।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে। এমন একটা জনশূন্য জায়গায় একটা মেয়ের একা থাকাটা সেফ না। তারওপর মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা মেন্টালি আনস্টেবল।
আদিত্য বলে উঠলো।
–বাইরের মানুষ তোমাকে কি নামে ডাকে?
মেয়েটি আবারও কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে উঠলো।
–বাইরের মানুষ তো… অনেকে অনেক কিছুই বলে। তবে বেশির ভাগ লোক নূর বলে ডাকে।
আদিত্য বুঝতে পারলো মেয়েটির নাম তাহলে নূর। আদিত্য আবার জিজ্ঞেস করলো।
–এখানে একা একা কি করছ তুমি? আর কার সাথে এসেছ?
–আমিতো আমার বেবিকে খুঁজতে এসেছি?আমার বেবিটা না হারিয়ে গিয়েছে।
আদিত্য এবার রিতীমত তাজ্জব বনে গেল। সাথে বিহানও ফ্রীতে তব্দা খেয়ে গেল। কি বলে এই মেয়ে? এই মেয়ের আবার বেবিও আছে? যে নিজেই এখনো ডাইপার থেকে বের হয়নি তার আবার বাচ্চাও আছে? আদিত্য বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–তোমার বেবিও আছে?
নূর বলে উঠলো।
–হ্যাঁ আছেতো। কিন্তু হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ও। ওকেই খুজছিলাম, তখনই এক মুছওয়ালা আঙ্কেল আমার কাছে এসে বললো, সে নাকি আমার বেবিকে দেখেছে। আমাকে তার সাথে এদিকে নিয়ে আসলো। আমাকে এখান এনে বললো, আমি যেন এখানেই থাকি সে একটু পরেই আসছে।
নূরের কথায় আদিত্য ব্যাপার টা কিছু আচ করতে পারছে।আদিত্য সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো।
–কোথায় তোমার আঙ্কেল?
নূর কিছু বলার আগেই আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো নূরের পেছন দিক দিয়ে একটা লোক হেটে আসছে। আদিত্যের তাকানো দেখে নূরও পেছনে ফিরে তাকালো। লোকটাকে দেখে নূর হাসিমুখে সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো।
–আরে এটাই তো সেই আঙ্কেল। এই আঙ্কেল এখন বলো আমার বেবি কোথায়?
লোকটা কি বলবে,আদিত্যকে এখানে দেখে তার আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে। আদিত্যকে সে চেনে, আর তার ক্ষমতা সম্পর্কেও জানা আছে। আদিত্য লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লোকটা উত্তর দক্ষিণ না দেখে জানের ভয়ে ওখান থেকে পড়িমরি করে ভো দৌড় লাগালো। লোকটার দৌড়ানো দেখে নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। পেছন থেকে কয়েকবার জোরে জোরে ডাকলো।কিন্তু তার আগেই লোকটা পাগাড় পার।
লোকটার পালানো দেখে আদিত্য এবার হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হয়ে গেল যে, লোকটা নূরকে এখানে খারাপ মতলবে নিয়ে এসেছিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
–এই মেয়ে তোমার কি কমনসেন্স নেই? চেনা নেই জানা নেই একটা লোক তোমাকে নিয়ে এলো আর তুমি তার সাথে ধেই ধেই করে চলে এলে? আর তোমার বাসার লোকজনই বা কেমন,তোমার মতো এমন তাড়ছেরা মেয়েকে একা একা ছেড়ে দিল?
নূর ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানী সুরে বলে উঠলো।
–এই হিরো আমাকে বকছ কেন? আমি কি ইচ্ছা করে এসেছি নাকি? আমার বেবিটা হারিয়ে গেল তাইতো ওকে খুঁজতে এসেছি। আর বাসার লোকজন জানলে না কিছু বলবে।আমিতো লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছি।বাসার লোক কিছু জানেই না। জানলে ওরা কখনো আসতেই দিতোনা। তাহলে আমি আমার বেবিকে কিভাবে খুঁজতাম হুম হুম?
আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে নিয়ে বলে উঠলো।
–আচ্ছা ঠিক আছে তোমার বাসা কোথায় বলো?
নূর যথাযথ ভাবেই বাচ্চাদের মতো করে বলে দিল।
–বাসাতো বাসায় আছে। বাসা আবার কই যাবে?
আদিত্য দাঁত চিবিয়ে বললো।
–মানে তুমি কোথায় থাক?
–আমি আমার বাসায় থাকি।
বিহান অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে। আদিত্যকে এমন উইয়ার্ড সিচুয়েশনে দেখে বিহানের ভীষণ মজা লাগছে। দা গ্রেট আদিত্য আজ একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে ধরাশায়ী হয়ে পরেছে। তবে একটা বিষয় দেখে ভীষণ অবাকও হচ্ছে। যে আদিত্য কোন মেয়েকে নিজের আশেপাশে সহ্যই করতে পারে না। সে কিনা এই অপরিচিত মেয়েটার সাথে এতক্ষণ কথা বলছে, আবার তার সেফটির কথাও ভাবছে? সত্যিই অবিশ্বাস্য। আবির এখানে থাকলে নিশ্চয় বলতো, মামা এটাতো পাতিহাঁস (ইতিহাস) হয়ে গেল।
____________
বিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর বিস্ময় নিয়ে বারবার আয়নায় পেছনের ছিটের দিকে তাকাচ্ছে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আদিত্য সত্যি সত্যিই ওই মেয়েটাকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। এতটাও আশা করেনি বিহান। মেয়েরা আদিত্যের জন্য পাগল। তবে ওর রাগের কারণে কেও ওর ধারেকাছেও এসে সাহস পায়না। যদিও আসে তাদের আদিত্য চরম ভাবে অপমান করে দেয়। আর আজ কিনা এই মেয়েটাকে সোজা গাড়িতে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। বিহানের মনে হচ্ছে ও দিবাস্বপ্ন দেখছে।
আদিত্য না চায়তেও আড়চোখে বারবার পাশে বসে থাকা চঞ্চল মেয়েটাকে দেখছে। মেয়েটা জানালার কাচ নামিয়ে মুখটা বের করে দিয়ে মুখে বাতাস লাগাচ্ছে আর একা একাই হেঁসে যাচ্ছে। ওর হাসির রিনিঝিনি শব্দ আদিত্যর ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। আদিত্য এবার সরাসরি নূরের দিকে তাকালো।ফর্সা নিষ্পাপ মুখটাতে যেন রাজ্যের মায়া ভর করেছে। আদিত্য এক ঝটকায় নিজের মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ওই মুখটার দিকে বেশিক্ষণ তাকালে ওর কোন সর্বনাশ হয়ে যাবে।
তখন অনেক জিজ্ঞেস করার পরও মেয়েটার কাছ থেকে ওর বাসার বা বাসার লোকজনের কোন ইনফরমেশন নিতে পারে নি। আর ওই অবস্থায় ওখানে মেয়েটাকে একা রেখেও আসতে পারছিল না। তাই অগত্যা নূরকে নিজের সাথেই নিয়ে আসে আদিত্য। গাড়িতে উঠেও অনেক ভাবে নূরের বাসার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলতে পারে না।
আদিত্যর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মেয়েটি চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
–এই এই গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও।
আদিত্য চমকে উঠে বললো
–কেন কি হয়েছে? তোমার বাসা কি এখানে কোথাও?
নূর শুধু চিল্লিয়েই যাচ্ছে। অগত্যা বিহান গাড়ি সাইড করে থামাল। গাড়ি থামাতেই নূর তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে নিলেই আদিত্য বলে উঠলো।
–আরে হয়েছেটা কি সেটাতো বলবে? এখানে নামছ কেন?
–আরে আমার বেবি আমার বেবি।
–তোমার বেবি এখানে?
নূর ততক্ষণে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে গেছে। আদিত্যও দরজা খুলে বেড়িয়ে নূরের পিছু পিছু গেল। রাস্তার পাশে নূরের কাছে যেয়ে দেখলো নূর নিচে বসে একটি সাদা বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। নূর বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আদিত্যকে দেখিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো।
–দেখ দেখ হিরো আমি আমার বেবিকে পেয়ে গেছি।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে অবাক কন্ঠে বললো।
–এটা তোমার বেবি?
নূর ঘাড় কাত করে বললো।
–হ্যাঁ, এটাইতো আমার বেবি। আমি ওঁকে কোথায় কোথায় খুঁজছি আর ও এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আদিত্য আরো একবার তাজ্জব হয়ে গেল। ও কি ভেবেছিল আর কি বের হলো। হঠাৎ ওখানে একটি মেয়ে দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটু পরে নূরকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো।
–আপু কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি?জানো আমরা সবাই পাগলের মতো খুঁজছি তোমাকে? মায়ের কাঁদতে কাঁদতে খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। বাবাও তোমার চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। এভাবে একা একা বাড়ি থেকে কেন বের হয়েছো তুমি?
নূর বলে উঠলো।
–আরে বেবিটা হারিয়ে গিয়েছিল। ওকে খুঁজতেই তো বের হয়েছিলাম।
–তাই বলে তুমি একা একা বের হবে? আমাকে বললেই তো আমি খুঁজে দিতাম। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তখন?
–আরে কি হবে? আই এ্যাম এ বিগ গার্ল।
এদের কথাবার্তার ভেতর এবার আদিত্য হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে বললো।
–এক্সকিউজ মি?আপনি কি ওর বোন?
নিলা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
–জ্বি আমি ওর বোন।
–থ্যাংক গড এট লাস্ট ওর ফ্যামিলি মেম্বার কাওকে পাওয়া গেল।
–জ্বি ঠিক বুঝতে পারলাম না? আপনি কে? আর আপুকে কিভাবে চিনেন?
আদিত্য কিছু বলার আগেই নূর প্রফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো।
–আরে নিলা ওকে চিনলি না ও হলো হিরো। এই হিরো তুমি বলোনা, তুমি কত্তো বড় হিরো।
নিলা বুঝতে না পেরে বললো।
–মানে?
আদিত্য বলে উঠলো।
–আরে ওর কথায় ধ্যান দিয়েন না। আমি আপনাকে সবটা বলছি। তারপর আদিত্য নিলাকে সবটা খুলে বললো।
নিলা সবটা শুনে আদিত্যকে কৃতজ্ঞতার সহিত বললো।
–আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তা জানা নেই। আপনি জানেন না আপনি আমাদের ওপর কতবড় উপকার করলেন। আপনার এই উপকার আমরা কখনো ভুলবো না।
–ইটস ওকে,এসবের প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে আপনারা ওর খেয়াল রাখবেন। আমি আসি।
কথাটা বলে আদিত্য একপলক নূরের দিকে তাকালো। তারপর সানগ্লাসটা পরে নিয়ে। গাড়ির দিকে চলে গেল। গাড়িতে বসতেই হঠাৎ গাড়ির কাচে কেউ টোকা দিল। আদিত্য তাকিয়ে দেখলো নূর। আদিত্য দরজা খুলে দিয়ে বললো।
— কি হয়েছে কিছু বলবে?
নূর একটা ডেইরি মিল্ক চকলেটের প্যাকেট আদিত্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে সবসময়ের মতো হাসিমুখে বাচ্চাদের মতো করে বললো।
–তুমি না অন্নেক ভালো হিরো। এটা তোমার জন্য।
আদিত্য একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ওর হাতে থাকা চকলেটের দিকে তাকাচ্ছে। বিহানও বিস্ময় নিয়ে সামনের গ্লাসে তাকিয়ে আদিত্যকেই দেখছে।ও দেখতে চায় আদিত্য কি করে। আদিত্যকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর বলে উঠলো।
–আরে কি হলো নাও? আমি সবাইকে চকলেট দেই না, যাকে আমার ভালো লাগে তাকেই দেই। তুমি অনেক লাকি তাই তুমি আমার চকলেট পাচ্ছো। নাও নাও।
কথাগুলো বলতে বলতে নূর চকলেট টা আদিত্যর শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিল। তারপর হাত নেরে বাই বাই বললো।
চলবে…..
#মরুর বুকে বৃষ্টি
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-১★এই এই পঁচা ছেলেটা, তুমি ওই লোকটাকে এভাবে মারছো কেন?
নিজের এক রাইভালকে মেধরম মারছিল গ্যাংস্টার আদিত্য। লোকটাকে নিচে ফেলে দিয়ে শুট করার জন্য গান বের করতেই, হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ উপরোক্ত কথাটি বলে উঠলো। আদিত্য তাড়াতাড়ি করে গানটা ব্লেজারের ভেতর লুকিয়ে ফেললো। যাতে সাধারণ মানুষ গান দেখে ভয় পেয়ে না যায়। এমন একটা সিচুয়েশনে কোন মেয়ের কন্ঠ শুনে প্রচন্ড বিরক্তি আর রাগ নিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো আদিত্য। পেছনে ফিরতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেল আদিত্য।
ওর সামনে একটা ১৯/২০ বছরের মেয়ে কোমড়ে দুই হাত মুঠি করে রেখে ঠোঁট চেপে বাচ্চাদের মতো চোখ পাকড়িয়ে তাকিয়ে আছে। পরনে একটা পিংক ফ্রক, মাথার চুল দুই দিকে উঁচু করে ঝুটি বাঁধা, কপালের উপর ছোট করে কাটা কিছু চুল পরে আছে।
আদিত্যকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আবার শিশুসুলভ ভাবে বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছ না কেন? তুমি ওই ভুড়িওয়ালা লোকটাকে এভাবে মারছিলে কেন? তুমি জানোনা মারামারি করা পঁচা কাজ? আমার বাবা বলেছে।
মেয়েটির কথায় আদিত্যের ঘোর কাটলো। আদিত্য হঠাৎ আবিস্কার করলো ও একটা মেয়ের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল। ব্রেনের হার্ডডিস্কে সার্চ মেরে কোথাও খুজে পেলনা যে, শেষ কবে ও কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। নাহ রেজাল্ট জিরো। তাকানো তো দূরের কথা, আদিত্য কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও দেখেছে কিনা সন্দেহ। মেয়ে মানুষ বলতে আদিত্যের কাছে চরম বিরক্তির কারণ ছাড়া আর কিছুই না।
আদিত্যের ভাবনার মাঝেই মেয়েটি আবারও বলে উঠলো।
–কি হলো কথা বলছ না কেন? তুমি কি বোবা নাকি?
এবার একটু ভড়কে গেল আদিত্য। যার সামনে লোক চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পায়না।সেখানে এই মেয়ে কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। আদিত্য কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–হোয়াট? এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না? তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছ? তুমি চেনো আমাকে?
মেয়েটি আদিত্যর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কিছুক্ষণ বিচক্ষণ ভাবে স্ক্যানিং করে নিল।তারপর থুতনিতে দুই আঙুল রেখে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। মেয়েটির কার্যকলাপ দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটি কি করছে।
মেয়েটি হঠাৎ উৎসাহ নিয়ে দুই হাতে তালি দিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো।
–আরে হ্যাঁ, আমি চিনে গেছি তোমাকে। এখানে নিশ্চয় কোনো মুভি চলছে, আর তুমি হলে মুভির হিরো তাইনা?
এতক্ষণ মার খাওয়া লোকটিকে ধরে রেখেছিল বিহান। মেয়েটির কথা শুনে হঠাৎ ফিক করে হেসে দিল।তবে আদিত্যর চোখ গরম করে তাকানো দেখে সাথে সাথে হাসি বন্ধ হয়ে গেল। আদিত্য আবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো।
–এই মেয়ে কি বলছো এসব?কিসের মুভি আর কিসের হিরো? আমাকে দেখে কি তোমার হিরো মনে হয়?
মেয়েটি হাসিমুখে বলে উঠলো।
–অবশ্যই। তোমাকে দেখতেও একদম ওই টিভির হিরোদের লাগে। আর ওই হিরোদের মতো মারামারিও করো। দেখেছ আমি কত্তো ইনটেলিজেন্ট? ঠিক ধরে ফেলেছি। আচ্ছা আমি তোমাকে পঁচা বলেছি তারজন্য সরি হ্যাঁ? হিরোরা তো ভিলেন কে মারবেই। তানা হলে কি আর মজা হবে নাকি। তুমি যাও ওই ভুড়িওয়ালাকে আরও মারো, আমি দেখবো আর তালি বাজাবো হ্যাঁ? অনেক মজা হবে।
এতবড় মেয়ের এমন বাচ্চাদের মতো আচার আচরণ দেখে আদিত্য বুঝে গেল যে,মেয়েটির মাথার তাড় ছিঁড়া। গায়ে পায়ে বড় মেয়েটি মস্তিষ্ক থেকে এখনো বাচ্চাই আছে। আদিত্য মাথা ঘুড়িয়ে ওর লোকদের ইশারা করতেই, তারা মার খাওয়া লোকটিকে ধরে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল।
আদিত্যর থেকে কিছুটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল বিহান। মেয়েটাকে এভাবে আদিত্যের সাথে কথা বলতে দেখে বিহান একটু ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের যে রাগ, তারওপর এমন একটা সিচুয়েশনে মেয়েটা চলে এসেছে যেখানে আদি আগে থেকেই রেগে আছে। নাজানি মেয়েটার কি অবস্থা করে।
কিন্তু বিহানকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য মেয়েটাকে রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। দু কদম যেয়ে পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মেয়েটি কেমন ঠোঁট উল্টিয়ে মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য কেন যেন যেতে নিয়েও যেতে পারে না। আবারও মেয়েটির সামনে এসে জিঙ্গেস করলো।
–এই মেয়ে নাম কি তোমার? এখানে এই নির্জন জায়গায় একা একা কি করছ? তুমি জানো এখানে তোমার সাথে কতকিছু হতে পারে?
মেয়েটি আবারও থুতনিতে দুই আঙুল রেখে কিছু ভাবতে লাগলো। আদিত্য সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হলো উত্তর দাও?
মেয়েটি বলে উঠলো।
–ভাবছি তুমি এত্তো গুলো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর আগে দেব?
আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–ঠিক আছে আগে তোমার নাম বলো?
–কোন নামটা বলবো?আমার তো আবার অনেক গুলো নাম। বাবা আমাকে ডাকে মামুনি বলে, আম্মু ডাকে নূরিমা বলে,নিলা ডাকে আপু বলে। তাহলে কোনটা বলবো?
মেয়েটির কথা শুনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এ কার পাল্লায় পড়লো রে বাবা। অন্য সময় হলেতো মেয়েটাকে ফেলে চলে যেত এখান থেকে। যা খুশি হতো মেয়েটার ওসবের ধার ধারতোনা আদিত্য। তবে আজ কেন যেন মেয়েটাকে ফেলে রেখে যেতে পারছে না। কেন পারছে না সে নিজেও জানে না।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে। এমন একটা জনশূন্য জায়গায় একটা মেয়ের একা থাকাটা সেফ না। তারওপর মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা মেন্টালি আনস্টেবল।
আদিত্য বলে উঠলো।
–বাইরের মানুষ তোমাকে কি নামে ডাকে?
মেয়েটি আবারও কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে উঠলো।
–বাইরের মানুষ তো… অনেকে অনেক কিছুই বলে। তবে বেশির ভাগ লোক নূর বলে ডাকে।
আদিত্য বুঝতে পারলো মেয়েটির নাম তাহলে নূর। আদিত্য আবার জিজ্ঞেস করলো।
–এখানে একা একা কি করছ তুমি? আর কার সাথে এসেছ?
–আমিতো আমার বেবিকে খুঁজতে এসেছি?আমার বেবিটা না হারিয়ে গিয়েছে।
আদিত্য এবার রিতীমত তাজ্জব বনে গেল। সাথে বিহানও ফ্রীতে তব্দা খেয়ে গেল। কি বলে এই মেয়ে? এই মেয়ের আবার বেবিও আছে? যে নিজেই এখনো ডাইপার থেকে বের হয়নি তার আবার বাচ্চাও আছে? আদিত্য বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–তোমার বেবিও আছে?
নূর বলে উঠলো।
–হ্যাঁ আছেতো। কিন্তু হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ও। ওকেই খুজছিলাম, তখনই এক মুছওয়ালা আঙ্কেল আমার কাছে এসে বললো, সে নাকি আমার বেবিকে দেখেছে। আমাকে তার সাথে এদিকে নিয়ে আসলো। আমাকে এখান এনে বললো, আমি যেন এখানেই থাকি সে একটু পরেই আসছে।
নূরের কথায় আদিত্য ব্যাপার টা কিছু আচ করতে পারছে।আদিত্য সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো।
–কোথায় তোমার আঙ্কেল?
নূর কিছু বলার আগেই আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো নূরের পেছন দিক দিয়ে একটা লোক হেটে আসছে। আদিত্যের তাকানো দেখে নূরও পেছনে ফিরে তাকালো। লোকটাকে দেখে নূর হাসিমুখে সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো।
–আরে এটাই তো সেই আঙ্কেল। এই আঙ্কেল এখন বলো আমার বেবি কোথায়?
লোকটা কি বলবে,আদিত্যকে এখানে দেখে তার আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে। আদিত্যকে সে চেনে, আর তার ক্ষমতা সম্পর্কেও জানা আছে। আদিত্য লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লোকটা উত্তর দক্ষিণ না দেখে জানের ভয়ে ওখান থেকে পড়িমরি করে ভো দৌড় লাগালো। লোকটার দৌড়ানো দেখে নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। পেছন থেকে কয়েকবার জোরে জোরে ডাকলো।কিন্তু তার আগেই লোকটা পাগাড় পার।
লোকটার পালানো দেখে আদিত্য এবার হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হয়ে গেল যে, লোকটা নূরকে এখানে খারাপ মতলবে নিয়ে এসেছিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
–এই মেয়ে তোমার কি কমনসেন্স নেই? চেনা নেই জানা নেই একটা লোক তোমাকে নিয়ে এলো আর তুমি তার সাথে ধেই ধেই করে চলে এলে? আর তোমার বাসার লোকজনই বা কেমন,তোমার মতো এমন তাড়ছেরা মেয়েকে একা একা ছেড়ে দিল?
নূর ঠোঁট উল্টিয়ে অভিমানী সুরে বলে উঠলো।
–এই হিরো আমাকে বকছ কেন? আমি কি ইচ্ছা করে এসেছি নাকি? আমার বেবিটা হারিয়ে গেল তাইতো ওকে খুঁজতে এসেছি। আর বাসার লোকজন জানলে না কিছু বলবে।আমিতো লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছি।বাসার লোক কিছু জানেই না। জানলে ওরা কখনো আসতেই দিতোনা। তাহলে আমি আমার বেবিকে কিভাবে খুঁজতাম হুম হুম?
আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে নিয়ে বলে উঠলো।
–আচ্ছা ঠিক আছে তোমার বাসা কোথায় বলো?
নূর যথাযথ ভাবেই বাচ্চাদের মতো করে বলে দিল।
–বাসাতো বাসায় আছে। বাসা আবার কই যাবে?
আদিত্য দাঁত চিবিয়ে বললো।
–মানে তুমি কোথায় থাক?
–আমি আমার বাসায় থাকি।
বিহান অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে। আদিত্যকে এমন উইয়ার্ড সিচুয়েশনে দেখে বিহানের ভীষণ মজা লাগছে। দা গ্রেট আদিত্য আজ একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে ধরাশায়ী হয়ে পরেছে। তবে একটা বিষয় দেখে ভীষণ অবাকও হচ্ছে। যে আদিত্য কোন মেয়েকে নিজের আশেপাশে সহ্যই করতে পারে না। সে কিনা এই অপরিচিত মেয়েটার সাথে এতক্ষণ কথা বলছে, আবার তার সেফটির কথাও ভাবছে? সত্যিই অবিশ্বাস্য। আবির এখানে থাকলে নিশ্চয় বলতো, মামা এটাতো পাতিহাঁস (ইতিহাস) হয়ে গেল।
____________
বিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর বিস্ময় নিয়ে বারবার আয়নায় পেছনের ছিটের দিকে তাকাচ্ছে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আদিত্য সত্যি সত্যিই ওই মেয়েটাকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। এতটাও আশা করেনি বিহান। মেয়েরা আদিত্যের জন্য পাগল। তবে ওর রাগের কারণে কেও ওর ধারেকাছেও এসে সাহস পায়না। যদিও আসে তাদের আদিত্য চরম ভাবে অপমান করে দেয়। আর আজ কিনা এই মেয়েটাকে সোজা গাড়িতে নিজের পাশে বসিয়ে দিল। বিহানের মনে হচ্ছে ও দিবাস্বপ্ন দেখছে।
আদিত্য না চায়তেও আড়চোখে বারবার পাশে বসে থাকা চঞ্চল মেয়েটাকে দেখছে। মেয়েটা জানালার কাচ নামিয়ে মুখটা বের করে দিয়ে মুখে বাতাস লাগাচ্ছে আর একা একাই হেঁসে যাচ্ছে। ওর হাসির রিনিঝিনি শব্দ আদিত্যর ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। আদিত্য এবার সরাসরি নূরের দিকে তাকালো।ফর্সা নিষ্পাপ মুখটাতে যেন রাজ্যের মায়া ভর করেছে। আদিত্য এক ঝটকায় নিজের মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে ওই মুখটার দিকে বেশিক্ষণ তাকালে ওর কোন সর্বনাশ হয়ে যাবে।
তখন অনেক জিজ্ঞেস করার পরও মেয়েটার কাছ থেকে ওর বাসার বা বাসার লোকজনের কোন ইনফরমেশন নিতে পারে নি। আর ওই অবস্থায় ওখানে মেয়েটাকে একা রেখেও আসতে পারছিল না। তাই অগত্যা নূরকে নিজের সাথেই নিয়ে আসে আদিত্য। গাড়িতে উঠেও অনেক ভাবে নূরের বাসার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলতে পারে না।
আদিত্যর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মেয়েটি চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
–এই এই গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও।
আদিত্য চমকে উঠে বললো
–কেন কি হয়েছে? তোমার বাসা কি এখানে কোথাও?
নূর শুধু চিল্লিয়েই যাচ্ছে। অগত্যা বিহান গাড়ি সাইড করে থামাল। গাড়ি থামাতেই নূর তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে নিলেই আদিত্য বলে উঠলো।
–আরে হয়েছেটা কি সেটাতো বলবে? এখানে নামছ কেন?
–আরে আমার বেবি আমার বেবি।
–তোমার বেবি এখানে?
নূর ততক্ষণে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে গেছে। আদিত্যও দরজা খুলে বেড়িয়ে নূরের পিছু পিছু গেল। রাস্তার পাশে নূরের কাছে যেয়ে দেখলো নূর নিচে বসে একটি সাদা বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। নূর বিড়াল ছানাকে কোলে নিয়ে আদিত্যকে দেখিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো।
–দেখ দেখ হিরো আমি আমার বেবিকে পেয়ে গেছি।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে অবাক কন্ঠে বললো।
–এটা তোমার বেবি?
নূর ঘাড় কাত করে বললো।
–হ্যাঁ, এটাইতো আমার বেবি। আমি ওঁকে কোথায় কোথায় খুঁজছি আর ও এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আদিত্য আরো একবার তাজ্জব হয়ে গেল। ও কি ভেবেছিল আর কি বের হলো। হঠাৎ ওখানে একটি মেয়ে দৌড়ে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটু পরে নূরকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো।
–আপু কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি?জানো আমরা সবাই পাগলের মতো খুঁজছি তোমাকে? মায়ের কাঁদতে কাঁদতে খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। বাবাও তোমার চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। এভাবে একা একা বাড়ি থেকে কেন বের হয়েছো তুমি?
নূর বলে উঠলো।
–আরে বেবিটা হারিয়ে গিয়েছিল। ওকে খুঁজতেই তো বের হয়েছিলাম।
–তাই বলে তুমি একা একা বের হবে? আমাকে বললেই তো আমি খুঁজে দিতাম। তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তখন?
–আরে কি হবে? আই এ্যাম এ বিগ গার্ল।
এদের কথাবার্তার ভেতর এবার আদিত্য হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে বললো।
–এক্সকিউজ মি?আপনি কি ওর বোন?
নিলা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
–জ্বি আমি ওর বোন।
–থ্যাংক গড এট লাস্ট ওর ফ্যামিলি মেম্বার কাওকে পাওয়া গেল।
–জ্বি ঠিক বুঝতে পারলাম না? আপনি কে? আর আপুকে কিভাবে চিনেন?
আদিত্য কিছু বলার আগেই নূর প্রফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো।
–আরে নিলা ওকে চিনলি না ও হলো হিরো। এই হিরো তুমি বলোনা, তুমি কত্তো বড় হিরো।
নিলা বুঝতে না পেরে বললো।
–মানে?
আদিত্য বলে উঠলো।
–আরে ওর কথায় ধ্যান দিয়েন না। আমি আপনাকে সবটা বলছি। তারপর আদিত্য নিলাকে সবটা খুলে বললো।
নিলা সবটা শুনে আদিত্যকে কৃতজ্ঞতার সহিত বললো।
–আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তা জানা নেই। আপনি জানেন না আপনি আমাদের ওপর কতবড় উপকার করলেন। আপনার এই উপকার আমরা কখনো ভুলবো না।
–ইটস ওকে,এসবের প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে আপনারা ওর খেয়াল রাখবেন। আমি আসি।
কথাটা বলে আদিত্য একপলক নূরের দিকে তাকালো। তারপর সানগ্লাসটা পরে নিয়ে। গাড়ির দিকে চলে গেল। গাড়িতে বসতেই হঠাৎ গাড়ির কাচে কেউ টোকা দিল। আদিত্য তাকিয়ে দেখলো নূর। আদিত্য দরজা খুলে দিয়ে বললো।
— কি হয়েছে কিছু বলবে?
নূর একটা ডেইরি মিল্ক চকলেটের প্যাকেট আদিত্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে সবসময়ের মতো হাসিমুখে বাচ্চাদের মতো করে বললো।
–তুমি না অন্নেক ভালো হিরো। এটা তোমার জন্য।
আদিত্য একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ওর হাতে থাকা চকলেটের দিকে তাকাচ্ছে। বিহানও বিস্ময় নিয়ে সামনের গ্লাসে তাকিয়ে আদিত্যকেই দেখছে।ও দেখতে চায় আদিত্য কি করে। আদিত্যকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর বলে উঠলো।
–আরে কি হলো নাও? আমি সবাইকে চকলেট দেই না, যাকে আমার ভালো লাগে তাকেই দেই। তুমি অনেক লাকি তাই তুমি আমার চকলেট পাচ্ছো। নাও নাও।
কথাগুলো বলতে বলতে নূর চকলেট টা আদিত্যর শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিল। তারপর হাত নেরে বাই বাই বললো।
চলবে…..
#মরুর বুকে বৃষ্টি
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-১