মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৪৫

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৫

★ কার্তিক মাস পড়ে গেছে। আবহাওয়ায় হালকা ঠান্ডা প্রভাব পড়েছে। আজ দিনটাও কেমন মেঘলা মেঘলা। জানালা খুললেই উত্তরা বাতাসে শরীরে হালকা শীত শীত অনূভুতি হচ্ছে।শুক্রবার হওয়ায় আজ আদিত্য বাসায়ই আছে। নূর ড্রয়িং বসে টিভি দেখছে আর বোর হচ্ছে। আদিত্য সেই সন্ধ্যা থেকে রান্না ঘরে ঢুকেছে বেরোনোর নাম নেই। আজকাল তার আবার একটু বেশিই কুকিং এর শখ জেগেছে। সময় পেলেই কিছু না কিছু বানিয়ে নূরকে খাওয়াবে। তবে তার কড়া নির্দেশ নূর যেন রান্না ঘরে না যায়।

আর এই জন্যই নূরের বিরক্ত লাগে। আরে বাবা এতো আদিখ্যেতার কি আছে? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? সবসময় শুধু এখানে যেওনা, ওটা করোনা৷ যেন বউ শুধু দুনিয়াতে উনার একারই আছে। আরমানুষ যেন রোবট বউ নিয়ে ঘোরে হুহ্। আরে ভাই একটু গেলে কি হয়? আমারও একটু দেখতে ইচ্ছে করে কি করছে ও। কিন্তু উনার একটাই কথা, একদম রান্না ঘরে পাড়া দিবে না। কোথাও লেগে যাবে। ভাবা যায় এল্লা?

বিড়বিড় করে এসব বকে নূর এবার উঠে দাঁড়াল। এবার তো সে রান্নাঘরে যেয়ে দেখবেই জনাব কি এমন মহাভারত অসুদ্ধ করছে। কথাটা ভেবে নূর ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে পাঁ বাড়াল। রান্নাঘরের দরজায় এসে দেখলো আদিত্য খুব মনোযোগ সহকারে চুলায় কিছু নাড়ছে। একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর হাতা কাটা ঢোলা টিশার্ট পরে আছে। রান্নাঘরের গরমে বেচারা ঘেমে উঠেছে। কপালের সিল্কি চুলগুলো ঘামের সাথে লেপ্টে আছে।

নূর কেমন লোলুভ দৃষ্টিতে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, ইশশ আমার জামাই টা কত্তোওও কিউট। একদম হট চিজ মাইরি। ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে ফেলি। নিজের এমন ভাবনার ওপর নিজেই হাসে নূর। তারপর ধীরে ধীরে আদিত্যের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। শাড়ির আঁচল দিয়ে আদিত্যের কপালের ঘাম মুছে দিতে লাগলো।আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে না এখানে আসতে মানা করেছি? যাও বাইরে যাও।

নূর প্রতিবাদি কন্ঠে বললো।
–না যাবোনা আমি। এখানেই থাকবো কি করবে তুমি?

–এমন করছ কেন? যাওনা? দেখ তোমার লেগে যাবে কোথাও।

–কেন লাগবে? আমি কি কচি খুকি? আমি থাকবো মানে থাকবো। আমার বাইরে একা একা ভালো লাগছে না।

–ওকে ফাইন। তাহলে চুপচাপ বসে থাকবে। একদম নড়াচড়া করবেনা।

–আচ্ছা।

আদিত্য নূরকে সিংকের ওপর বসিয়ে দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলো। আর নূর বসে থেকে পা দোলাতে দোলাতে আদিত্যের কাজ দেখতে লাগলো। আদিত্য আটা ঢালতে গিয়ে কিছু আটা আদিত্যের মুখে ছিটে লাগলো।আর এটা দেখে নূর ফিক করে হেঁসে দিল। নূরের হাসি দেখে আদিত্য আঙুলে করে একটু আটা নিয়ে নূরের গালে লাগিয়ে দিল। সাথে সাথে নূরের হাসি থেমে গেল। আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
–কি হলো হাসো এখন। খুব হাসি পাচ্ছিল না?

নূরও আদিত্যের প্রতিত্তোরে হাতের মুঠোয় আটা নিয়ে আদিত্যের মুখে ছিটিয়ে দিল। আদিত্যের সারামুখ সাদা হয়ে গেল। নূর সেটা দেখে হাসতে হাসতে বললো।
–ওয়াও একদম বুড়ো হিরো লাগছে।

আদিত্য নূরের দিকে তেড়ে আসতে আসতে বলে উঠলো।
–দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। বুড়ো হিরো তাইনা?

নূর ভাব সুবিধার না দেখে সিংক থেকে নেমে বাইরের দিকে দৌড়ালো। আর আদিত্যও ওর পেছনে ছুটলো। নূর খিলখিল করে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে। আর আদিত্যও হাসিমুখে ওর পিছে দৌড়াচ্ছে। সোফার চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে একসময় আদিত্য খপ করে নূরের হাত ধরে ফেললো।হাত ধরে টান দিতেই ব্যালেন্স হারিয়ে দুজনেই সোফায় পড়ে গেল। নূর নিচে আর আদিত্য নূরের উপরে পরলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
–এখন কোথায় পালাবে হাঁহ? আমি বুড়ো হিরো তাইনা?

নূর মুচকি হেসে দুই হাতে আদিত্যের গলা জড়িয়ে বলে উঠলো।
–বুড়ো আবতারেও কিন্তু তোমাকে কম লাগে না। একদম হট বুড়ো লাগছে।

আদিত্য হালকা হেঁসে দিয়ে নূরের নাক ঘষে বললো।
–তাই নাকি? তো এই হট বুড়োটার কিছু ইনাম তো পাওয়া উচিৎ তাইনা?
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ঠোঁটের দিকে ঝুঁকতে লাগলো। নূর লাজুক হেসে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্যের ঠোঁট নূরের ঠোঁট ছুঁইছুঁই। তখনই হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। নূর চোখ খুলে তাড়াতাড়ি আদিত্যকে সরাতে লাগলো। আদিত্য একটু বিরক্ত হয়ে উঠে বসে বললো।
–কে এবার এই সময় বিরক্ত করতে আসলো।

নূর মুচকি হেসে বললো।
–তুমি আগে গিয়ে নিজের মুখ পরিস্কার করো।নাহলে সবাই হাসবে। আমি ততক্ষণে দেখছি কে এসেছে।
কথাটা বলে নূর উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতে গেল। আর আদিত্য কিচেনে গিয়ে নিজের মুখ পরিস্কার করে নিল।

নূর দরজা খুলতেই নীলা হঠাৎ কোনকিছু না বলে হনহন করে ভেতরে ঢুকে পড়লো।আর ওর পিছেপিছে আবিরও ঢুকলো।নূর এদের ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারলো না। অগত্যা দরজা আটকিয়ে সে নিজেই এগিয়ে গেল ওদের দিকে।

নীলা রাগী মুডে সোফায় গিয়ে ধুম করে বসে পড়লো। আবির ওর কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।
—নীলা আমার কথাটা তো শোন। আরে তুমি ভুল বুঝছ আমাকে। তুমি যেমন টা ভাবছ তেমন না।

নীলা আবিরের দিকে না তাকিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপু তোমার এই লুইচ্চা মার্কা দেবরকে বলো, আমার সাথে যেন কোন কথা না বলে। আমি তার কোন কথা শুনতে চাই না।

আবির এবার একটু শক্ত গলায় বললো।
–দেখ নীলা এবার কিন্তু তুমি বেশি বেশি করছ। সামান্য একটা ব্যাপার কে তুমি এতোবড় করছ কেন? তোমরা মেয়েরা কি কোনকিছু ইজিলি নিতে পারোনা? সব বিষয়ে এতো ওভার রিয়াক্ট করার কি আছে?

নীলা আরও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আবিরের দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো।
–কিহ? কি বললেন আপনি? আমি ওভার রিয়াক্ট করছি? ও ওয়াও এখন আমি কিছু বললেই ওভার রিয়াক্ট? তারমানে আপনি রঙ্গোলীলা করে বেড়াবেন আর আমি সেটা বলতেও পারবো না?

–তুমি বারবার ঘুরে ফিরে সেই একই কথাই কেন বলছ? আর কতো বার বলবো তোমাকে?

–আমি আপনার সাথে কোন কথাই বলতে চাইনা। আপনি যান আপনার গোপীদের কাছে।

এতক্ষণে আদিত্যও ওখানে চলে এসেছে। আদিত্য আর নূর ওদের কাজকর্ম বুঝতে না পেরে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আদিত্য তখন আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
–কিরে কি হয়েছে? আর দুজন এভাবে ঝগড়া করছিস কেন?

আবির বলে উঠলো।
–ঝগড়া কি আমি করছি নাকি?ঝগড়া তো তোমার শালিকা করছে। অযথা একটা বিষয় নিয়ে ওভার রিয়াক্ট করছে। আমার কোন কথাই শুনতে চাচ্ছে না।

এবার নূর নীলার উদ্দেশ্যে বললো।
–কিরে তুই এতো রাগ করছিস কেন? আগে ওর কথাটা তো শোন? কথা না শুনেই এমন রাগ দেখাচ্ছিস কেন? তুই কবে থেকে এমন ঝগড়াটে হয়ে গেলি?

আদিত্য নূরকে উদ্দেশ্য করে বললো।
–নীলাকে কিছু বলো না। আমি জানি এই হতচ্ছাড়াটাই নিশ্চয় কিছু করেছে। নাহলে নীলা শুধু শুধু রাগ করবে কেন? ও যথেষ্ট বুদ্ধিমান মেয়ে।

আবির তিরস্কার করে হাতে তালি বাজিয়ে মেলোড্রামা করে বলে উঠলো।
–বাহ্ ভাই বাহ্ আজ ভাইয়ের চাইতে শালিকাই তোমার কাছে আপন হয়ে গেল? আর আমি কোন ক্ষেতের মূলা হয়ে গেলাম? হায়রে নিঠুর দুনিয়া। এই দুনিয়ায় আমার আপন বলতে কি কেউ নাই?

নূর আবিরের পাশে বসে বললো।
–কেন নাই, আমি আছি না তোমার ভাবিডল? তুমি একদম একা না।
নূর এবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আর তুমি না জেনেশুনে শুধু শুধু দেবর কে দোষারোপ করছ কেন? একদম দেবরকে বকবে না বলে দিলাম।

আবির আবারও মেলোড্রামা করে বললো।
–ব্যাস ভাবি এক তুমিই তো এই অধমের সাহারা। খালি তুমিই আমারে বুঝলা। আর কেউ বুঝলো না।

এদের কথাবার্তার মাঝেই তখন ওখানে বিহান আর আয়াতের আগমন হলো। ওরা দুজন ওদের কাছে এসে ওখানকার ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে। বিহান সোফায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বললো।
–কি হইচে ভাই? এইহানে এমন গরম গরম ভাব ক্যান? কিছু হইচে নি?

আবির অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো।
–কি আর হবে ভাই, অপক্ব মেয়ের সাথে প্রেম করলে যা হয় আরকি তাই হচ্ছে।

নীলা দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–তো যান না, কে ধরে রেখেছে আপনাকে? আপনি গিয়ে আপনার ওই পরিপক্ব মেয়েদের সাথে প্রেমলীলা করুন। আমি কি আপনাকে বেঁধে রেখেছি ?

বিহান বলে উঠলো।
–আরিব্বাস এইহানে তো মামালা সিরিয়াস লাগতাচে। ঘটনা কি মামা? কি ঘটনা
ঘটাইছোচ এইবার?

আদিত্য এবার বলে উঠলো।
–আচ্ছা হয়েছে টা সেটাতো বলবি?

নীলা বলে উঠলো।
–আরে উনি নিজের কুকর্মের কথা নিজের মুখে বলতে পারবেন না। আমি বলছি জিজু। আপনার এই ভাই আমাকে বললো সে নাকি অফিসের একটা কাজে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। অথচ উনি কাজের নাম করে বাইরে অন্য মেয়েদের সাথে রঙ্গোলীলা করে বেড়াচ্ছে। এই দেখুন জিজু আমার কাছে প্রুভ আছে।
কথাটা বলে নীলা ওর ফোন বের করে আবিরের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে কয়েকটা ছবি বের করে দেখালো। যেখানে আবির বিদেশী কিছু মেয়েদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

সবাই এক এক করে ছবিগুলো দেখলো। আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এসব কি আবির? এই ছবিগুলো দেখে তো নীলার রাগ করা জায়েজই আছে।

আবির বলে উঠলো।
–আরে ভাই এমন কিছুই না। আসলে এদের মধ্যে একটা মেয়ে আমাকে চিনে। লন্ডনে বেড়াতে গিয়ে ওর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আর ওই মেয়েটা আরও কিছু মেয়েদের সাথে বাংলাদেশ ঘুড়তে এসেছে। আমি যখন একটা মিটিং এর জন্য রেস্টুরেন্টে যাই তখন হঠাৎ ওদের সাথে দেখা হয়ে যায়। আর ওরা খুব জোড়াজুড়ি করলো আমি যেন ওদেরকে একটু বাংলাদেশ ঘুরে দেখাই। ওরা এতদূর থেকে আমাদের দেশে ঘুরতে এসেছে। তাই আমি ওদের কথা ফেলতে পারলাম না। আর ওদের কে কিছু জায়গা ঘুরে দেখালাম। আর তখনই ওরা এসব ছবি তুলে আপলোড করে আমাকে ট্যাগ করেছে। ব্যাস এতটুকুই। আমি এতবার করে এই ব্যাপার টাই নীলাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সে কিছু মানতেই রাজি না।

নীলা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–এগুলো শুধু বাহানা। চুরি ধরা পরে গেছে তাই এসব গল্প সাজানো হচ্ছে।

বিহান বাঁকা হেসে বললো।
–বাচ মামা ফাইসা গেছচ মাইকা চিপায়। অহন ক্যামতে বারাইবি? তোরে আগেই কইছি সুধরাই যা। দেখলিতো নিজের কর্মের ফল।

আয়াত আবিরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–এটা তুমি ঠিক করোনি ভাইয়া। তুমি যদি আগেই নীলাকে সব বলে দিতে তাহলে তো আর এসব হতোনা। আসলে তোমরা সব ছেলেরায় এমন। মেয়েদের ফিলিংসের কোন দামই নেই তোমাদের কাছে। সবসময় মেয়েদের টেক ইট ফর গ্রান্টেট নিয়ে নাও তোমারা।

আয়াতের কথায় বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–মোর জ্বালা, তুমি আবার এইহানে নারী আন্দোলন শুরু কইরা দিলা ক্যলা। আর সব ছেলেরা কইতে কি কইবার চাও তুমি?

আবির বিহানের সাথে সায় দিয়ে বললো।
–আরে ভাই মেয়েরা এমনই। ওরা সবসময় সবজায়গায় ফুটেজ খাওয়ার চেষ্টা করে। নিজেদের মহান প্রমাণ করার ধান্দায় থাকে।

বিহান বলে উঠলো।
–হ ঠিকই কইছচ। এহন তো তোর কথাই ঠিক মনে হইতাচে আমার। মাইয়া মাইনসের কামই খালি আজাইরা ক্যাচাল করা।

আয়াত বিহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
–ও আচ্ছা আমাদের কথা ক্যাচাল তাইনা? আর আপনারা সবসময় মহান কাজ করেন তাইনা? চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়ে গেছেন এখন?

বিহান বলে উঠলো।
–কি কইবার চাও তুমি? আমি আবার কি করলাম?

আয়াত তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–এমন ভাব ধরছেন যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারেন না। আপনি কি ভেবেছেন আপনি যে অফিসের রিসিপশনের মেয়েটার সাথে সারাদিন হাসাহাসিতে মেতে থাকেন। সেটা আমি জানিনা বুঝি? সবই দেখেছি আমি। লোকে বলে না বাসার মুরগীও ডালের মতো লাগে। তো আপনাদেরও সেই অবস্থায়ই হয়েছে।

বিহান যেন আকাশ থেকে টুপ করে পড়লো। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এই মেয়ে। আর আমি কখন রিসেপশনিস্টের সাথে হাসাহাসি করলাম? বিহান অবাক কন্ঠে বললো। –কি কইতাছো এইছব? আর আমি কহন রিসেপশনিস্ট এর সাথে হাসাহাসি করলাম? মাথার তাঁর সবগুলো ছিড়ে গেছে নি?

বিহানের কথায় আয়াত দাঁত কটমট করে বিহানের দিকে তাকালো। আবির বিহানের সাথে সায় দিয়ে বললো।
–আরে ভাই এটা তো জানা কথাই। মেয়েদের তো জন্ম থেকেই তিন চার টা তাঁর ছেড়াই থাকে।

এতক্ষণে নূর বলে উঠলো।
–এটা কেমন কথা দেবর? সব মেয়েদের ভেতর কিন্তু আমিও পরি। আর কথা যখন ছেলে মেয়ের পর্যায়ে চলে এসেছে তখন আমিও মেয়েদের পক্ষেই বলবো। হ্যাঁ আয়াত আর নীলা একদম ঠিক বলেছে। তোমরা ছেলেরা সবাই একরকমই। কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তোমরা গিরগিটির মতো রঙ বদলানো শুরু করে দাও।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এক্সকউজ মি, সব ছেলে বলতে কি তুমি আমাকেও বুঝাতে চাইছ? ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আজ পর্যন্ত এই আদিত্য কোন মেয়ের সাথে ফ্লার্ট তো দূরে থাক কোন মেয়েকে আমার কাছেই ঘেঁষতে দেয়নি।

নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি দেখেছি তুমি কতো সাধু। আমার বান্ধবীদের সাথে তোমার সাধুগিরি ভালোই দেখেছি।

–আরে ওটাতো তোমাকে জেলাস করার জন্য ইচ্ছে করে ওমন করেছিলাম।

–আরে বাদ দাও। এগুলো সব বাহানা। আসল কথা হলো তোমাদের কৃষ্ণ সাজার অনেক শখ। তাইতো মেয়েদের দেখলেই রাসলীলা শুরু করে দাও।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
–মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ নূর। কি আবোল তাবোল বলছ?

–আরে আগে নিজের মাইন্ড কে তো ঠিক রাখ।তারপর আমার ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক করতে এসো।

–আরে আজব, পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছ কেন তুমি?

নূর এবার তেতে উঠে বললো।
–কি বললে তুমি? আমি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করি।তারমানে আমি তুমি ঝগড়াটে বলছ?

বেচার আদিত্য তাজ্জব বনে গেল। ও কি বলছে আর এই মেয়েটা কি বানাচ্ছে। আর অযথা এই ঝগড়ার কারনই বুঝতে পারছে না ও। আবির তখন বলে উঠলো।
–কি হলো তখন তো খুব শালিকার পক্ষ নিচ্ছিলে।দেখলে তো মেয়েদের আসল রুপ? ওরা কেমনে রুপ বদলায়?

নীলা রাগী কন্ঠে বললো।
–রুপ বদলানো আমাদের না আপনাদের ধর্ম। আপনারাই এই কাজে মোহিত।

ব্যাস এভাবে কথায় কথায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এখানে। যার একপক্ষে মেয়েরা আর আরেক পক্ষে ছেলেরা। দুই দলই কেউ কারোর চেয়ে কম যায়না। দুই দলই সমান প্রতিত্তোর করে যাচ্ছে। ঝগড়া করতে করতে নূরের একটু গলা শুঁকিয়ে এলো। তাই ও একটু উঠে রান্নাঘরে গেল পানি খেতে। রান্না ঘরে ঢুকে ফ্রীজ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে আবার ফিরতে নিলেই হঠাৎ আদিত্য এসে নূরকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় নূর একটু চমকে গেল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–কি হচ্ছিল বাইরে ওসব হ্যাঁ? কি মনে করে তুমি ওসব বলছিলে?

নূর ভীতু চোখে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
–ক কি বলছিলাম আমি?

–আচ্ছা এখন মনে পড়ছে না তাইনা? কি ছিল তখন ওসব হ্যাঁ?

নূর মেকি হেসে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো।
–আ আসলে ওদের ঝগড়া দেখে না আমারও একটু তোমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছিল। তাই মিছেমিছি ওসব বলেছি। সত্যিই বলছি।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, কি আজব মেয়েরে বাবা। ঝগড়া করারও আবার কারোর শখ হয় নাকি? আদিত্য হালকা হেঁসে বললো।
–আচ্ছা ঠিক আছে। এখন এসব বন্ধ করো। আমার এসব মোটেও ভালো লাগছে না।

নূর চোখ বড়বড় করে বললো।
–এই না না এখনই বন্ধ করা যাবেনা। ওদের ঝগড়া বন্ধ করতে আমাদের এই মিছেমিছি ঝগড়া কন্টিনিউ করতে হবে।

–মানে?

—মানে হলো, ওরা যখন দেখবে যে ওদের জন্য আমাদের দুজনের ভেতর মনমালিন্য হচ্ছে । তখন ওরা নিজেদের ঝগড়াও কমিটি নিবে। প্লিজ আর কিছুক্ষন এসব চালিয়ে যাও?

–আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেশিক্ষণ না কিন্তু।

–ওকে।

নূর আর আদিত্য বাইরে এসে দেখলো বাইরের অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে গেছে। দুই দলের মাঝে তুমুল ঝগড়া চলছে। কেউ ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়। আদিত্য আর নূর একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আদিত্য হঠাৎ উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–অনেক হয়েছে চুপ করবি তোরা এখন?

বিহান বলে উঠলো।
–হ ঠিকই কইছস। এইসব আবাল গো লগে কথা কওনের চেয়ে না কওনই ভালো। শুধু শুধু ব্রেইন লস।

আয়াতও দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আমরাতো যেন মরেই যাচ্ছি আপনাদের কথা বলার জন্য। আরে যান যান আমরাও আমাদের মহামূল্যবান মস্তিষ্ক আপনাদের ওপর খরচ করতে চাইনা।
আয়াত এবার নূরের হাত টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো।
–ভাবি তুমি আমাদের দলে না?

নূর জোরপূর্বক হেসে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। এটা আবার বলতে হয়।

আয়াত বলে উঠলো।
–ঠিক আছে আমরা মেয়েদের টিম ওই ছেলেদের টিমের সাথে কোন কথা নেই। আজকে আমরা তিনজন একসাথে থাকবো। রাতভর অনেক মাস্তি করবো। অপজিশন দলকে বুঝিয়ে দেব আমরা কি জিনিস।

আয়াতের প্ল্যান শুনে আদিত্যর মাথায় যেন ছোটখাট একটা বাজ পড়লো। কি বলছে এরা? একসাথে থাকবে মানে কি? তারমানে নূর রাতে আমার কাছে থাকবে না? না না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। আদিত্য নূরের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে চোখের ইশারায় নূরকে মানা করতে বললো। নূর পরে গেছে এক মহা ঝামেলায়। কার কথা শুনবে ভেবে পাচ্ছে না। শেষমেশ আয়াতের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আমরা এমনই করবো।

নূরের রাজি হওয়া দেখে আদিত্য রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই আবির বলে উঠলো।
–আরে ওরা কি মাস্তি করবে? মাস্তির ম ও জানা নেই ওদের। আরে মাস্তি তো আমরা করবো। আজতো বয়েজ নাইট আউট হবে তাইনা ব্রো?

বিহানও সায় দিয়ে বললো।
–এক্কেরে ঠিক কইছস। আইজকা হইবো হাউজ পার্টি। তাইনারে আদি?

আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
–বলছিলাম কি। এসবের কি দরকার? নিজেদের ভেতর মিটমাট করে নিলেই তো হয়। তারপর নাহয় সবাই মিলেই পার্টি করবো।

বিহান বলে উঠলো।
–কি কস এল্লা? আমরা ওই অপজিশন পার্টির সামনে কখনোই ঝুঁকব না। বি অ্যা ম্যান। ভেতরের মরদটাকে জাগা। মনে কর তোর সামনে তোর বউ না, শত্রুপক্ষ বসে আছে। তাহলে দেখবি আর কোন সফটনেস থাকবে না। একদম স্টিলনেস ম্যান হয়ে যাবি। এহন জোরসে ক, হাউ ওয়াজ দ্যা জোস?

আবির চিল্লিয়ে বললো।
–হাই স্যার।

–হাউ ওয়াজ দ্যা জোস?

আদিত্য জোরপূর্বক কোনরকমে বললো।
–হাই স্যার।

আয়াত এদের চিল্লানি দেখে বিরক্ত হয়ে বললো।
–এই ষাঁড়দের কাছে থাকলে আমাদের কান আর থাকবেনা। চলো ভাবি আমরা আমাদের রুমে যাই।রুমে গিয়ে মজা করবো।

কথাটা বলে আয়াত আর নীলা নূরকে ধরে উপরের দিকে যেতে লাগলো। নূরও অসহায় মুখ করে ওদের সাথে যাচ্ছে। আর আদিত্য বারবার শুধু চোখের ইশারায় নূরকে মানা করছে। তবে তা কাজে দিল না আয়াত আর নীলা নূরকে নিয়ে চলে গেল।মেয়েদের রুমে এসে ওরা ওদের মতো আড্ডা মাস্তি করতে লাগলো। নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে বসে রইলো।

আর নিচে আবির আর বিহান ওদের মতো আড্ডা নাচে গানে মেতে উঠেছে। তবে আদিত্য চরম বিরক্ত হচ্ছে এসবে। মনে মনে নূরের ওপর রাগও হচ্ছে খুব। নূরকে ছাড়া কিছুতেই ওর রাতে ঘুম হবে না। এটা জানা সত্বেও কেমন ধেই ধেই করে ওদের সাথে চলে গেল। একবার মানাও করলোনা। কি ফালতু একটা নাটক শুরু করেছে। আদিত্য বিরক্ত হয়ে ফোন বের করে নূরের ফোনে একটা ম্যাসেজ পাঠালো। যাতে লেখা আছে, এখুনি বাইরে এসে আমার সাথে দেখা করো।নাহলে কিন্তু আমি এখুনি সব নাটক বন্ধ করে দেব।

নূর ম্যাসেজ টা দেখে একটু ভয় পেয়ে গেল। রুম থেকে বেরোনোর জন্য আয়াত নীলার দিকে তাকিয়ে বললো, ও একটু নিচ থেকে খাবার হালকা কিছু নিয়ে আসছে। কথাটা বলে নূর দ্রুত রুমের বাইরে এলো। বাইরে
আসতেই আদিত্য নূরের হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে রাগী কন্ঠে বললো।
–কি হচ্ছে এসব হ্যাঁ? দেখ অনেক হয়েছে বন্ধ করো এসব। আমি কিন্তু কিছুতেই তোমাকে ছাড়া রাতে থাকতে পারবো না। তাই এই নাটক এখনই বন্ধ করে দাও।

নূর অনুনয়ের সুরে বললো।
–দেখ এতো রাগ করোনা প্লিজ? একটু শান্ত হও। এই মুহূর্তে হঠাৎ করে এভাবে নাটক বন্ধ করলে ওরা আমাদের ওপর রাগ করবে। তাই আমাদের নাটক টা কন্টিনিউ করতে হবে। কিন্তু আই প্রমিজ রাতে ওরা ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি তোমার কাছে চলে আসবো। প্লিজ ততক্ষণ একটু ধৈর্য ধরনা?

–ওকে ফাইন। তবে তাড়াতাড়ি আসবে। নাহলে কিন্তু আমি রুমে গিয়ে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো।

–ওকে ঠিক আছে। আমি এখন যাই নাহলে ওরা খুঁজতে আসবে।
কথাটা বলে নূর তাড়াতাড়ি করে আবার চলে গেল।

এভাবেই দুই দল দুই দিকে আড্ডা দিতে লাগলো। আর আদিত্য আর নূর অনিচ্ছুক ভাবে ওদের আড্ডায় যোগ দিয়ে বসে রইলো। আড্ডা দিতে দিতে রাত বারোটা বেজে গেল তবুও কারোর ঘুমের খবর নাই। আদিত্য এবার বিরক্তির শিখরে। ইচ্ছে করছে আবির আর বিহানের মাথায় বাড়ি মেরে বেহুঁশ করে দিতে তাহলে যদি ঘুমায় এরা। ইশশ কখন এখান থেকে যেতে পারবে আর কখন এঞ্জেল টাকে একটু কাছে পাবে? এই আপদগুলো আজ না এলেই ভালো হতো।

আদিত্যর বিরক্তির মাঝেই আরও এক ঘন্টা পার হয়ে গেল। এবার ধীরে ধীরে সবার এনার্জি স্লো হয়ে এলো। আবির আর বিহান এলোমেলো ভাবে হাত পা ছড়িয়ে সোফার উপর শুয়ে পড়লো। আদিত্য যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আদিত্য ফটাফট উপরে উঠে যেতে যেতে নূরের নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠালো ওকে রুমে আসার জন্য।

নূর এদিকে অপেক্ষা করছিল ওদের ঘুমিয়ে পড়ার। নূর আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো আয়াত আর নীলা ঘুমিয়ে গেছে। তাই নূর আস্তে করে নিঃশব্দে ওদের কাছ থেকে উঠে এলো। পা টিপে টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই আদিত্য নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। তারপর নূরকে নিয়ে ওদের বেডরুমে চলে এসে দরজা আটকে দিল।

একটু পরে আয়াত আর নীলা দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। নূরদের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আয়াত বলে উঠলো।
–ওরা ভেবেছে আমরা ওদের নাটক বুঝতে পারিনি। আরে আমিতো প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছি ওরা নাটক করছে। আরে ভাইয়া কখনো ভাবির সাথে ঝগড়া করতেই পারেনা। ভাইয়া ভাবিকে ভালোবেসেই শেষ করতে পারে না। ঝগড়া কখন করবে। সত্যিই ভালোবাসার উদাহরণ দিতে চাইলে ভাইয়া ভাবিকে দেওয়া উচিত। কতো ভালোবাসে ভাইয়া ভাবিকে।

–আমিও কিন্তু আমার বউটাকে কম ভালোবাসি না।
পেছন থেকে আসা বিহানের কন্ঠে কথাটি শুনে আয়াত চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো বিহান আর আবির দাঁড়িয়ে আছে। বিহান এগিয়ে এসে আয়াতের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নরম সুরে আবেগী কন্ঠে বললো।
–হয়তো সবার মতো বলতে পারিনা। নিজের ভালোবাসাকে ব্যাক্ত করতে পারিনা। তাই বলে ভালো কিন্তু কম বাসিনা।

বিহানের কথায় আয়াতের চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো। বিহানের কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলতে পারলোনা। সিচুয়েশন একটু স্বাভাবিক করতে আবির দুষ্টুমি করে বললো।
–ওই তোর শরম করে না বড়ো ভাইয়ের সামনে এইভাবে ভালোবাসার গান গাইতাছস?

বিহান বাঁকা হেসে বললো।
–শরম করবো ক্যা? আমি কি মাইনষের বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতাছি নাকি? চলোতো বউ এইহানে খালি ডিস্টাবেন্স। আমরা নির্জনে গিয়া ভালোবাসা বাসি করিগা।
কথাটা বলে বিহান আয়াতের হাত ধরে নিয়ে গেল। আর আয়াত তো লজ্জায় মাথাই তুলছে না।

ওরা চলে যেতেই আবিরও চলে যেতে লাগলে নীলা পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলো। আবির নীলার দিকে ফিরে একটু অভিমানী সুরে বললো।
–কি হলো আমার মতো খারাপ লোকের সাথে আবার কি কথা?

নীলা এক হাতে কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
–সরি। ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন প্লিজ। আর কখনো এমন হবে না। আসলে মেয়েগুলোর সাথে আপনাকে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল।তাই রাগের মাথায় ওসব বলে দিয়েছি সরি।

আবির মুচকি হেসে বললো।
–ইটস ওকে।আমিও সরি। আসলে তোমাকে প্রথমেই আমার বলে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আর এসব হতোই না।

–ইটস ওকে।যা হবার তা হয়ে গেছে ভুলে যান ওসব।

আবির বাঁকা হেসে বললো।
–আমরা কি আরেক টা জিনিস ভুলতে পারি?

নীলা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি?

–আমরা যে অবিবাহিত সেটা কি আমরা ভুলতে পারি? না মানে শুধু আজকে রাতের জন্য।

নীলা আবিরের বুকে আলতো করে কিল মেরে দিয়ে বললো।
–ছিহ অসভ্য একটা।

আবির হেসে দিল।
______

পরেরদিন আদিত্যকে ওর বিজনেস কনফারেন্স এর জন্য তিনদিনের জন্য লন্ডনে যেতে হলো। হঠাৎ করে এভাবে আদিত্যের দেশের বাইরে যাওয়ায় নূরের প্রচুর মন খারাপ হচ্ছিল। তবে ও আদিত্যকে বাঁধা দেয়নি। কারণ ও চায়না আদিত্য কখনো ওর কারণে পিছিয়ে থাকুক। ও চায় আদিত্য জীবনের সব সফলতায়ই অর্জন করুক। তাই কষ্ট হলেও নূর আদিত্যর সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছে।

আদিত্যেরও ওর নূরকে রেখে যেতে কম কষ্ট হয়নি। তবে এটা ওর ড্রিম প্রজেক্ট ছিল। তাই ওর যাওয়া টা অনেক প্রয়োজন ছিল। অগত্যা আদিত্যও নিজেকে একটু শক্ত করে নূরকে রেখে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। লন্ডনে যাওয়ার পর মাঝখানের দু দিন আদিত্য আর নূর দুজনের জন্যই খুবই কষ্টকর ছিল।ফোনে আর ভিডিও কলে কথা হলেও এটুকুতে তাদের মন ভরতো না। সারাদিন দুজনের কোনভাবে কাটলেও রাতটা কোনভাবেই কাটতে চাইতো না। কাটবে কিভাবে, দুজনেরই যে একজন আরেকজনকে ছাড়া ঘুম আসেনা। ঘুম পাগলি নূরেরও এখন রাতে ঘুম আসে না। সারারাত শুধু এপাশ ওপাশ করেই কাটিয়ে দিত।

এভাবে তিনদিন কোনরকমে পার হয়ে যায়। আজ নূর অনেক খুশী। আজ যে ওর হিরো ফিরে আসবে। খুশিতে যেন ও আত্মাহারা হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকেই প্রফুল্ল হয়ে সব কাজ করছে। আদিত্যের পছন্দের সব খাবার নিজের হাতেই রান্না করেছে ও। আরও অনেক কিছু করেছে। আয়াত আর নীলা এইকয়দিনে এই বাসায়ই আছে। আদিত্যই ওদের থাকতে বলেছে যাতে নূরের একা একা খারাপ না লাগে।

ভোর ছয়টার দিকেই আদিত্য নূরকে বলে দিয়েছে ও একটু পরেই ফ্লাইটে উঠবে। তখন থেকেই নূরের খুশি আর থামছে না।

দুপুর দুটোর দিকে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। হঠাৎ একটা ব্রেকিং নিউজ শুনে সবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। নিউজে বলছে লন্ডন থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইট টা রাস্তায়ই প্লেন ক্রাশ করেছে। প্লেনে থাকা যাত্রীরা কেউই জীবিত নেই। প্লেনের টাইমটাও আদিত্যর ফ্লাইটের টাইমের সাথে মিলে গেছে। নূর যেন মুহূর্তেই অনুভূতি শূন্য পাথরে পরিণত হলো। চোখের সামনে পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো ওর। ওর হিরো, ও ওর হিরো না না এটা হ হতে পারে না ক কখনোই না। নূর আর সহ্য করতে পারলোনা। জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে গেল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here