তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৩

#তোমাতে আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২৩)

অথৈর কোনো রেসপন্স না পেয়ে মাহির আসতে আসতে অথৈর দিকে এগিয়ে গেলো। ওর পাশে বসে পড়লো। অথৈর পিঠে হাত দিতেই অথৈ ঘুরে এসে মাহিরকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।

অথৈকে এভাবে কাদতে দেখে মাহির দিশেহারা হয়ে গেলো। এভাবে কাদছে কেন উনি? আমি কি এমন কোনো ভুল করে ফেলছি? উনি কি এখনো ওই থাপ্পড়ের জন্যই কষ্ট পাচ্ছেন? মাহির বেশ করুনা স্বরে বললো,

“”অথৈ, আমি খুব খারাপভাবে দুঃখিত! এ রকম ভুল আর কখনো হবেনা। আমি আর জীবনেও আপনার গায়ে হাত তুলবোনা। দরকার হলে আমার এই হাত কেটে ফেলবো তবুও আপনি এভাবে কাদবেননা। আপনার কান্না আমার সহ্য হচ্ছেনা। অথৈ আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?””

মাহিরের কথার কোনো উত্তরই অথৈ দিলোনা। মাহির বেশ ঘাবড়ে গেলো। অথৈর মুখটা উচু করতেই ওর নিশ্বাসগুলো মাহিরের মুখে এসে পড়তে লাগলো। অথৈ যে ঘুমিয়ে গেছে এটা বুঝার জন্য অথৈর নিস্বাসের ছোয়াই যথেষ্ট। অথৈকে আবার শক্ত করে নিজের বুকের সাথে আগলে ধরলো। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে লাগলো আর কখনো এমন ভুল হতে দিবেনা। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে লাগলো এই ঘুমেই যেন অথৈ খারাপ মুহুর্তটাকে স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দেয়।

সকালের মিস্টিরোদ এসে অথৈর চোখ ছুয়ে দিলো যার ফলে অথৈর ঘুম ভেংগে গেলো। মিটিমিটি করে চোখ মেলতেই নিজেকে মাহিরের বুকের মধ্যে পেলো। মাহিরের ফর্সা বুকের কালে লোমগুলো অথৈর গালে সুড়সুড়ি দিচ্ছে যা খানিকটা লজ্জা অনুভূতি সৃষ্টি করছে অথৈর মনে। কেন জানি অথৈর উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না। একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। অতকিছু না ভেবে আরেকটু গভীরকরে মাহিরের বুকে মুখ গুজে চোখ বুঝলো। মাহিরের বুকের ভেতরে যে হার্টটা লাফাচ্ছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। তাহলে কি মাহির জেগে আছে? অথৈ আরো শক্ত করে চোখ বুঝে নিলো সে কোনোভাবেই চায়না যে মাহির জানুক ও ইচ্ছে করেই মাহিরের বুক ছুয়ে আছে। যদি জেনে যায়,ইশ! কি লজ্জা টাইনা পাবো। এক অস্থিরতাই অথৈর বুকেরও হার্টবিট দ্রুতগতিতে চলতে লাগলো। চোখের পাতাগুলো কাপতে লাগলো।

সকালের রোদ শুধু অথৈকে না মাহিরকেও ছুয়ে দিয়েছে যার ফলে তার ঘুমটাও হালকা হয়ে এসেছে। কিন্তু অথৈকে এভাবে এতটা কাছে পাওয়ার সময়টুকু সে শেষ করে দিতে চায়না। ঘুম ভাংলেই যে তার তোথৈ পাখি তার বুক ছেড়ে উড়াল দেওয়ার জন্য ছটফট করবে সেটা বেশ জানা আছে মাহিরের। কিন্তু সারারাত এভাবে আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে কোমড়টা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোমড় খুব করে চাচ্ছে তাকে এবার একটু রেহাই দিক। মাহির অথৈর দিকে হালকা ঝুকে চেক করতেই মনে হলো সে এখনো গভীর ঘুমে বিভর। তাই খুব হালকাভাবে নড়তেই অথৈ লাফিয়ে উঠলো।

“”ওই, আপনার লজ্জা লাগেনা একটা ঘুমন্ত মেয়ের পেটে হাত দেন? আগে তো ভেবেছিলাম আপনি একটু বেশরম কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আপনি বেশি বেশরম।””

অথৈর এমন হঠাৎ করে রেগে যাওয়ায় মাহির বেশ শক খেলো।

“”আমি আবার কখন আপনার পেটে হাত দিতে গেলাম,অথৈ?””
“”তাহলে কোথায় হাত দিতে চেয়েছিলেন? তারমানে আপনি..ছি!ছি!! খালামনি নাই দেখে আপনি এভাবে আমাকে ইভটিজিং করছেন?””
“”কি সব বলছেন? নিজের বউকে কেউ ইভটিজিং করে?””
“”আপনার মতো বেশরমরাই করে।””

মাহির কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। উনি কি আমাকে একটুও শান্ত থাকতে দিবেনা? আমি কি ইচ্ছে করে উনার পেটে হাত দিতে গেছি? কই সারারাততো কত কষ্ট করে নড়াচড়া না করে আপনাকে ঘুৃমাতে দিলাম ওইটা তো একবারও দেখলেননা আর এখন ভুলে একটু পেট ছুয়ে ফেলছি তার জন্য তো ঠিকই কথা শুনাচ্ছেন!!

“”আমার ক্ষুধা লাগছে।””

মাহির অথৈর দিকে না ঘুরেই রান্নাঘরে চলে গেলো। হঠাৎ মনে পড়লো আরমান একবার অথৈর জন্য আলুর পরোটা বানিয়েছিলো। তাই সেও ওইটা বানানোর কথা ভাবলো। কিন্তু আলু কোথায় আছে সেটা খুজে পাচ্ছেনা। পুরো রান্নাঘর তোলপার করে ফেললো।

“”আমার বেশি ক্ষুধা পেয়েছে।””

পেছন থেকে হঠাৎ অথৈর কথা শুনাই মাহির বসা থেকে উঠতে গিয়ে সানসেটের সাথে বাড়ি খেলো।

“”কি হলো?””

মাহির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে এসে চুলা জ্বালালো।

“”আপনি কি শুনতে পাচ্ছেননা আমার বেশি ক্ষুধা পেয়েছে!””

মাহির এবার বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো। অথৈর কাছে এসে বললো,

“”নিন, হা করুন?””
“”কেন?””
“”হা করতে বলছি, হা করুন।””

অথৈ হা করতেই মাহিরের হাতে থাকা ডিমটা অথৈর কপালে বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে নিলো তারপর অথৈর মুখে ঢেলে দিলো। এমন কাচা ডিম মুখে দেওয়ায় অথৈ সাথে সাথে বমি করে দিলো। ফলে পুরো কাচাডিমটা মাহিরের মুখে পড়ে লেপ্টে গেলো। মাহির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো অথৈর দিকে আর অথৈ খিলখিলিয়ে হাসতেছে।

“”বেশ হয়ছে,আমাকে কাচাডিম খাওয়ানো?””

মাহির চুপচাপ সব সহ্য করে চুলায় আগুন দিলো।অথৈ হাসতে হাসতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মাহির ডিমের ওমলেট করে অথৈর সামনে দিয়ে পানি আনতে গেলো।

“”এটা দেখতে সুন্দর হয়নি। আরেকটা বানিয়ে নিয়ে আসুন। আমি এটা খাবোনা।””

মাহির পানিটা দিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে গেলো। এবার একসাথে চারটা ডিমের ওমলেট করে নিয়ে আসলো।

“”আল্লাহ! আপনার কি আমাকে রাক্ষস মনে হয়?””

মাহির কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলো।

“”এখন যদি আরমান থাকতো তাহলে ও কখনোই আমাকে নিজের হাতে খেতে দিতোনা।””

অথৈ মন খারাপের মতো করে ডিমে হাত দিতে গেলেই মাহির ডিমটা নিজের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর অথৈকে খাওয়াতে নিলে,,,

“”আরমান আমাকে আদর করে খাওয়াতো।””

মাহিরের মাথা আবার গরম হয়ে যাচ্ছে। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য চোখ বুঝে লম্বা নিশ্বাস নিলো।

“”আপনিতো দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছেন, শুকিয়ে একদম সুটকি মাছের মতো হয়ে যাচ্ছেন কয়দিন পরে দেখা যাবে সবাই আপনাকে শুটকি মাছ মনে করে খেয়ে ফেলছে!!””

মাহিরের দিকে অথৈ হা করে তাকিয়ে রইলো।

“”কি হলো এখনও খাচ্ছেননা কেন?””
“”আপনাকে তো আমি বেশরম মনে করেছিলাম এখন তো মনে হচ্ছে আপনি একটা কপিবাজ। অন্যের থেকে আদরও কপি করে…..””

অথৈ কথা শেষ করার আগেই মাহির মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেয়। আপনার তো সব কিছু আরমানের মতো চায় তাহলে ওর কথাগুলোই বললাম বলে এখন কপিবাজ হয়ে গেলাম?

অথৈর পুরো মুখে ডিমে ভরে গেছে। ঠিকমতো চিবুতে পারছেনা। মাহিরের বেশ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসিটা হজম করে পানি এগিয়ে দিলো।

“”চলে যাচ্ছেন যে মুখ মুছিয়ে দিবে কে? আরমান তো…..””
“”চুপ আর একবার আরমানের নাম নিলে আপনাকে খুন করে ফেলবো তখন ভূত হয়ে ওর সাথে প্রেম করবেন।””
“”কিন্তু…””

অথৈর ঠোটে হালকা চুৃমু খেয়ে নিলো মাহির।

“”নিন,মুছে দিয়েছি। আপনি চাইলে আরেকটু মুছে দিবো।””

অথৈ হাত দিয়ে নিজের ঠোটদুটো ঢেকে কপাল গুছিয়ে নিলো। চোখগুলো ছোটছোট করে মাহিরকে বুঝাতে চাইছে সে বেশ রেগে গেছে। কিন্তু মাহির একটা ছোট হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলো। তারমানে কি উনি বুঝতে পারছে আমি জোর করে রাগার চেষ্টা করছিলাম?!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here