#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৩
নাবিলার হাত ধরে টেনে তুলে রায়ান চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল—এখন তুমি বাড়ি যাবে আমার সাথে!!
নাবিলা ছিটকে সরে আসে তারপর বলল–আমি যাবো না রায়ান!!আমি তোমাকে হারাতে চাই না!!
রায়ান–হারাতে হবে না!!তবে ধৈর্য ধরতে হবে!!
রায়ানের কথাটা দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়ানার বিষাক্ত ছুড়ির আঘাতের মতো মনে হলো!!!
আয়ানা ধীর পায়ে নিজের ঘরে এসে বসে বলল–আমাকে চঞ্চল হতে হবে!!শান্ত মেয়ে রায়ানের পছন্দ নয়!!!
আয়ানা বিছানাতে গা এলিয়ে দিবে তার আগেই হুড়মুড় করে দাদি ঘরে এসে আয়ানার হাত ধরে বলল–তুই তো জাদু কইরা ফালাইছিস ছুড়ি!!!
আয়ানা উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে বলল–কি জাদু করলাম গো টেনিস বুড়ি??
দাদি আয়েশ করে আয়ানার পাশে বসে বলল–ওইযে বরের অধিকার লইতে শিখছিস!!
আয়ানা হালকা হেসে বলল–এখন শিখেছি গো টেনিস বুড়ি!!!
দাদি আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল–বেঁচে থাক নাতবৌ!!সুখি হ!!!
দাদি আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল!!!
আয়ানা বিছানাতে লুটিয়ে পড়ল!!!
নাবিলা এখনো রায়ানের হাত ধরে কান্নাকাটি করছে!!!
রায়ান কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথায় দুটো আঙ্গুল চেপে ধরে বসে আছে!!!
খানিকপর,,
রায়ানের মা এসে বলল–বাবু!!ওকে বাড়ি দিয়ে আয়!!
শুনেই আবারও নাবিলা হিচকি তুলে কাঁদতে শুরু করল!!
রায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল–চলো নাবিলা!!
নাবিলা উঠে রায়ানের হাত জড়িয়ে বলল–তুমি আমায় বিয়ে করবে তো??
রায়ান চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে বলল–কতো বার বলবে কথাটা??
নাবিলা –যতক্ষণ উত্তর না দিবে ততক্ষণ করব!!!
রায়ান–আমি রিক্সা ঠিক করছি!!এসো!!
নাবিলা আবারও হিচকি তুলতে শুরু করল!!!
রায়ান বাইরে বের হলো রিক্সার খোঁজে!!
নাবিলাকে রায়ানের মা চোখ মুছিয়ে বাইরে নিয়ে আসতেই রায়ান তাকে নিয়ে রিক্সাতে উঠে পড়ল!!
রিক্সার গতির সাথে সাথে নাবিলার ফুপানির আওয়াজ বেড়েই যাচ্ছে!!
অতঃপর রিক্সাওয়ালা বলল–মামা,,মামির লগে কি ঝগড়া হইছে??হইলেও মেটায় নেন!!আফনের বউ কেমনে কানতাছে!!!
রায়ান উত্তর না দিয়ে নাবিলাকে এক ধমক দিয়ে বলল–এমন করে কাঁদছ কেন??
নাবিলা–তুমি আমায় ভালোবাসো না একদম!!!
রায়ান–বুঝেছো ভালো করেছো!!
নাবিলা–তুমি বিয়ে করবেতো আমায়??
রায়ান–নাহ!!!আমি বিবাহিত!!
নাবিলা আর কোনো কথা বলল না!!!
নাবিলার বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই নাবিলা বলে উঠল–হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা রায়ান!!বি হ্যাপি!!!
রায়ানের চোখ ভারি হয়ে এলেও শক্ত হয়ে মুখে বলল–ইউ অলছো!!!
নাবিলা রিক্সা থেকে নেমে আর পিছু না ফিরে বাড়ির ভেতর চলে গেল!!
রায়ান নাবিলার পথের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে বলল–চলেন মামা!!!
রিক্সা চলছে!!
রায়ান চোখের পানি আটকাতে বারবার পলক ফেলছে!!
রায়ান মনে মনে –তোমায় আমার অনিশ্চিত জীবনে কিভাবে আটকে রাখি বলোতো!!!আয়ানার আজকের ব্যবহার আমার কাছে একদম নরমাল লাগে নি!!
তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো নাবিলা!!!খুব সুখি হও!!
কথাগুলো ভাবতেই রায়ানের চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি বেরিয়ে এলো!!!
সাথে সাথে মুছে নিল কারণ সে কোথাও পড়েছিল ছেলেদের কাঁদতে নেই!!!
বাড়ির সামনে রিক্সা থামলে রায়ান নেমে ভাড়া পরিশোধ করে ঘরের ভেতরে গেল!!!
রায়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে আয়ানা উঠে রায়ানকে জড়িয়ে ধরল!!
রায়ান স্হির!!
রায়ান একটু ধরা গলাতে বলল–আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ!!
আয়ানা জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলল–নাহ!!আপনি আমার সাথে থাকবেন!!!
রায়ান–প্লিজ!!
আয়ানা ছেড়ে বলল–১০ মিনিট মাত্র!!
আয়ানা ঘর থেকে বের হতেই রায়ান দরজা বন্ধ করে দিল!!
বাথরুমেে বেসিন থেকে বারকয়েক মুখে পানি দিয়ে নিল!!
তারপর বাইরে এসে বিছানাতে দম ধরে বসে রইল!!!
১০ মিনিট পার হতেই আয়ানা দরজা খটখট করতে লাগল!!
রায়ান দরজা খুলে দিল!!
আয়ানা হাত ধরে বলল–আমি নিজে খাবার বানিয়ে এনেছি খেয়ে বলুন!!
রায়ান–খেতে ইচ্ছে করছে না!!
আয়ানা–বসুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি!!
রায়ান সোফাতে বসতেই আয়ানা ছোট টুকরো পরোটা ছিড়ে ভাজি দিয়ে রায়ানের মুখে পুরে দিল!!
রায়ান খেয়েই যাচ্ছে!!
অপরদিকে বসে থাকা আয়ানা খুব আশায় আছে রায়ান তার মুখে এক টুকরো পরোটা তুলে দিবে!!!
কিন্তুু তার আশাতে পানি ঢেলে পুরো খাবারটা রায়ান খেয়ে উঠে গেল!!
আয়ানা একটু মন খারাপ হলেও পরমুহূর্তে আবার রায়ানকে কাছে পাওয়ার চিন্তা করতে লাগল!!
কেটেছে মাঝে ১৫ দিন,,,
রায়ানের মন তেমন ভালো নেই তবে ২ দিনে আয়ানা রায়ানকে বেশ নাজেহাল করে তুলেছে!!
সোফাতে পানি ঢেলে রাখছে ইদানিং,,
বাধ্য হয়ে রায়ান বিছানাতে ঘুমাচ্ছে!! ৩ বেলাই আয়ানাকে খায়িয়ে দিতে হবে!!ঘুমোনোর সময় মাথায় হাত বুলাতে হবে!!রাতে বারান্দাতে বসে তারা গুনতে হবে!!এসব নানা আজগুবি কাজে রায়ান নাজেহাল!!
অফিসের চাপটাও বেশ!!!ছাদে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছিলো রায়ান!!
আচমকা ম্যাসেজের টুন করে আওয়াজে ধ্যান ফিরল!!
কালো থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের পকেট থেকে ফোন করে আনলক করে দেখল নাবিলার আইডি থেকে ম্যাসেজ!!
ম্যাসেন্জারে ঢুকেই দেখল নাবিলা কতগুলো ছবি পাঠিয়েছে,, বউ সেজে আছে মেয়েটা পাশে বসে সুঠাম দেহী এক পুরুষ!!
রায়ান জুম করে নাবিলার ছবিটা দেখে বলল–তোমার পাশে বসে থাকা পুরুষটার ওপর খুব হিংসে হচ্ছে মায়াবতী!!!তবুও তুমি তার সাথে সুখি হও!!তোমায় এমন বউ রুপে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল!!!
নাবিলার একার কয়েকটি ছবি রায়ান ফোনে সেভ করে নিল!!
তারপর আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়ল আকাশ দেখতে!!
ছাইরঙা টি-শার্টের বুকের দিকটায় চোখের কয়েক ফোটা পানিতে ভিজে গেল!!
রাতে,,
সবাই একসাথে খেতে বসেছে!!রায়ান নিজে খাচ্ছে আর অনিচ্ছা শর্তেও আয়ানার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে!!
আয়ানা নিজের একপা দিয়ে রায়ানের পায়ে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে!!
বাবা-মা বসে থাকার দরুণ রায়ান সব সহ্য করে নিচ্ছে!!!
খাওয়ার মধ্যে রায়ানের ফোনটা বেজে উঠল!!
রেদোয়ান একহাতে ফোন রিসিভ করে লাউডে দিয়ে দিলেন!!
রায়ানের পাড়ার কাকা ফোন করেছে!!
রায়ান–জি কাকা!!
কাকা–কোথায় তুই??
রায়ান–বাসায়!!কেন??
কাকা–তুই জানিস না কিছু??
রায়ান–কি কাকা??
কাকা–নাবিলা!!!
নাবিলার কথা শুনতেই সবাই কটাক্ষ চোখে রায়ানের দিকে তাকাল!!
রায়ান লাউড বন্ধ করে ফোন কানে নিল!!
অপরপাশের ব্যক্তির কথাতে চোখ ছলছল করে উঠল!
ভাতের প্লেট ফেলে কোনোমতে হাত ধুয়ে রায়ান ছুটে বাইরে চলে গেল!!!
পেছন থেকে সবাই ডাকলেও রায়ানের কোনো সাড়া পাইনি!!!
রায়ান হাইওয়ে ধরে ছুটছে,,,
বারবার চোখ মুছে চলেছে!!আজ তার মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না!!
রায়ান বারবার মনে মনে বলছে–খোদা যা শুনেছি তা যেন মিথ্যা হয়!!!
ছুটে এসে পৌঁছাল বিয়ের গেট সাজানো বাড়ির সামনে!!
বিয়ে বাড়ি হলেও বাড়িতে শোনা যাচ্ছে বহু মানুষের হাহাকার!!
রায়ান ধীর পায়ে ভেতরে হেঁটে যাচ্ছে!!
কালো থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ছাইরঙা টি-শার্ট পড়া এলোমেলো চুলের রায়ানের দিকে সবাই একটু তাকাচ্ছে!!!
রায়ান নাবিলাদের উঠানে আসতেই দেখল খাটিয়াতে সাদা চাদরে মোড়ানে নাবিলার দেহখানি পড়ে আছে!!
নাবিলার বাবা মেয়ের লাশের মাথার কাছে বসে কাঁদছেন!!
নাবিলার মা অজ্ঞান!!!
রায়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাবিলার মুখের দিকে!!!
রায়ানের পিছু আসা সেই কাকা রায়ানের কাছে এসে বলল–দুপুরেই বিয়ে হয়েছিল,, ঘরে এসেছিল তারপর অনেকক্ষণ দরজা না খোলায় সন্দেহ হলে দরজা ভেঙে দেখে নাবিলা পড়ে আছে!!
হসপিটালে নিলে জানা যায় অতিরিক্ত মেন্টাল প্রেসারে নাবিলা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছে!!
কথা গুলো বলেই থামল কাকা!!রায়ানের স্হির দৃষ্টি নাবিলার মুখের ওপর!!!
#চলবে
১০০০ শব্দের পর্ব♥️