#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৯
আয়ানা বেশ চেষ্টা করেও যখন পা মাটিতে ফেলতে পারলো না তখনই দরজাতে খট করে খুলে গেল লাল জামা পরিহিত দুজন লোক ভেতরে এলো!!!
আয়ানা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল–কারা আপনারা??এভাবে ঘরে এলেন কেনো???
লোক দুটি বিশ্রী হাসি দিলো যা আয়ানার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো!!!
আয়ানা বিছানাতে আবারও পিছিয়ে বলল–বের হন ঘর থেকে!!!
কিন্তুু লোক দুটির হেলদোল হলো না!!!
আয়ানা চেঁচাতে যাবে তখনি দেখলো দরজা ঠেলে দাদি এলো!!
আয়ানার মনে হলো প্রাণে পানি এলো!!!
আয়ানা –টেনিস বুড়ি!!এরা কারা??বের করো এদের দ্রুত!!
দাদি এগিয়ে এসে বলল–এরা ওঝা রে বউ!!তুই ঠিক হইয়া যাবি!!!
আয়ানা–কিসব ফালতু কথা বলছো তুমি??
দাদি–হ রে!!হগ্গলে বাইরে গেছে!!এরা তরে ঠিক কইরা দেবে!!
কথাটা বলে দাদি বেরিয়ে গেলো!!
আয়ানা চিৎকার করে দাদি কে ডেকেও কোনো লাভ হলো না!!
লোক দুটোকে বিছানার দিকে এগোতে দেখে আয়ানা আরেকটু পিছিয়ে বলল–খবরদার আসবেন নাহ!!
ওদের মধ্যে একজন কানে ফোন নিয়ে বলল–কাজ শেষ হলে খবর দিবো স্যার!!!
তারপর ফোন নামিয়ে আবারও এগোতে লাগলে,আয়ানা সরে যেতে গিয়ে বিছানা থেকে নিচে পরে যায়!!!
পায়ে বেশ আঘাত ও লাগে!!উঠে দাঁড়াতে না পেরে হেঁচড়ে পেছনে যেতো লাগলো!!
ঐ লোক দুটোর মধ্যে একজন এসে আয়ানার পা দুটো জোড়ে চেপে ধরলো!!
পা জোড়ে ফ্লোরে চেপে ধরায় পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলো!!
আয়ানা হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে চাইতে বলল–ক্ষমা করুন প্লিজ!!!
আরেকজন লোক হাত দুটো কোনো এক ওড়নার সাহায্য নিয়ে বেধে দিল!!!
একখানা ইনজেকশন বের করে তা বেশ জোড়ে আয়ানার কাঁধে পুশ করলো!!!
আয়ানা চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই মুখে কাগজ ঢুকিয়ে দেয়!!!
আয়ানা উম উম আওয়াজ করছে!!
অপরদিকে,,,
রায়ান আর রেশমি টুকিটাকি জিনিস কিনতে বাইরে গিয়েছিল!!
বাড়ির গেটে ঢুকে দাদিকে দরজার বাহিরে পায়চারি করতে দেখে রায়ান জিজ্ঞেস করলো–দাদি!!তুমি এখানে??আয়ানা উঠে নি এখনো??
দাদি–ওঠছে!!ওর জন্য ওঝা ডাকছি ২ জন!!তারা এহন ওরে চিকিৎসা করতাছে!!
রায়ান কপাল কুঁচকে চেচিয়ে বলল–মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার!!
বলেই দৌড় দিলো নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে!!!
রেশমিও জিনিসপত্র ফেলে এগিয়ে গেলো!!
পেছনো দাদি!!
রায়ান নিজের দরজাতে ধাক্কা দিচ্ছে!!!
যেহুতু আগে একবার ভাঙা হয়েছে তাই বার ২ ধাক্কা দিতেই দরজার ছিটকানি ভেঙে গেল!!
ভেতরে এসে রায়ান হতবম্ব!!
আয়ানার হাত পা বাধা!!
একজন আয়ানার পা ধরে আছে আরেকজন মাত্র শার্টের বোতাম খুলেছে!!
রায়ানকে দেখে শার্টের বোতাম খোলা লোকটা এগিয়ে এসে মারতে নিলে রায়ান টেবিলের কোণের কাঠের ফুলদানি দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে!!!
সাথে সাথে লোকটি লুটিয়ে নিচে পড়ে যায়!!!
অন্য লোকটি ঘটনা দেখে পালাতে নিলে রায়ান ধরে বসে!!!
জামার কলার ধরে দেয়ালের সাথে আচমকা বারি দেওয়াতে লোকটির চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে!!অবশেষে সেন্স হারিয়ে পরে যায়!!!
রেশমি ইতিমধ্যে আয়ানার কাছে গিয়ে আয়ানার হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়!!
মুখের কাগজ বের করতেই আয়ানা গলগল করে বমি করে দেয়!!!
পায়ের পাতা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে!!!
রায়ান একবার রক্তচক্ষু নিয়ে দাদির দিকে তাকিয়ে আয়ানার কাছে গিয়ে আয়ানাকে কোলে তুলে নেয়!!!
দাদি সব বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে আছেন!!
তিনি তো আয়ানাকে সুস্থ করতে চেয়েছিলেন কিন্তুু ঘটনাটা এমন হবে নিজেও বোঝেন নি!!!
রেশমি, শাশুড়ীকে বাইরে চলে যায়!!
আয়ানা রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে!! চোখ থেকে পানি পড়ছে!!!
রায়ান বাথরুম থেকে ছোট বালতি ভর্তি পানি নিয়ে আসে,,
পানিতে রুমাল ভিজিয়ে আয়ানার মুখ মুছিয়ে দেয়,,
ফ্লোরে পরে থাকা সবকিছু পরিষ্কার করে রেশমি কে ডেকে আয়ানাকে চেন্জ করে দিতে বলে বাইরে যায়!!
বাইরে এসে সোফাতে বসে থাকা দাদিকে দেখে শান্ত সুরে বলে–আজ একটু দেরি হলে আয়ানার রেপ হতে পারতো!!!
কথাটা বলে রায়ান রান্নাঘরে কিছু খাবার আনতে চলে গেল!!
নিজের ভুল বুঝে দাদি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন আর বারবার বলতে লাগলেন–হায় খোদা!!!আমার জন্যি আজ নাতবৌটার সব্বনাশ হইতো!!!ওরে ওই দুই শয়তান!!!
বাইরে পুলিশ এসে রায়ানকে ডাক দিতেই দাদি ঘাবড়ে যায়!!!
রায়ান দ্রুত বেরিয়ে এসে পুলিশকে মোটামুটি করে পুরো ঘটনা খুলে বলে!!
পুলিশ অবচেতন হয়ে পরে থাকা ২ জন লোককে নিয়ে যায়!!!
দাদি হাফ ছেড়ে বাঁচে!!
রায়ান আবারও রান্নাঘরে গিয়ে ফলের বাটি আর গরম দুধের গ্লাস হাতে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়!!!
রায়ান এসে দেখে রেশমি আয়ানার চুল বেধে দিচ্ছে!!
আর আয়ানা একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে!!!
রায়ান খাবার প্লেট টেবিলে রেখে আয়ানার দিকে এগিয়ে এলো!!!
রায়ানকে দেখা মাত্রই আয়ানা কেঁদে উঠল!! রায়ান পাশে বসতেই তাকে জড়িয়ে ধরল!!
রেশমি চোখের পানি মুছে ছিটকানিহীন দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো!!!
আয়ানা রায়ানকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে!!
রায়ান মাথায় হাত বুলিয়ে বলল–কুল ডাউন!!সব ঠিক আছে!!!
আয়ানা রায়ানের বুকে মাথা লুকিয়ে বলল–জানেন ওরা আমার সাথে কি করতে যাচ্ছিল!!!
রায়ান–ওসব বাদ!!এখন তোমাকে খেতে হবে!!
আয়ানা–না না!!
রায়ান–প্লিজ!!
আয়ানাকে বসিয়ে রেখে খাবার এনে বহু চেষ্টা করেও একটুও খাবার খাওয়াতে পারলো না!!!
আচমকা আয়ানার কাঁধে লাল হয়ে ফুলে থাকা অংশে রায়ানের নজর যায়!!!
শ্যামবর্ণ হলেও জায়গাটা বেশ চোখে লাগার মতো!!!
রায়ান আলতো হাত ছোঁয়াতেই আয়ানা চিৎকার করে বলল–ব্যাথা!!!
রায়ান–কি করে ব্যাথা পেয়েছো??
আয়ানা –জানি না!!!
রায়ান কিছু বলতে গিয়েও বললো না!!
আয়ানাকে ঘুম পারিয়ে বাইরে এসে দেখলো রেদোয়ান সোফাতে কপাল চেপে বসে আছে!!!
রায়ানকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বলল–কেমন আছে বউমা??
রায়ান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল–আছে কোনোরকম!! ঘুমাচ্ছে!!
রেদোয়ান –মা যে কি করে!!
রেশমি–মা ও বুঝতে পারে নি!!কাল ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস!!
রায়ান–হুমম মা!!!আমাকে কিছু খেতে দাও!!খিদা পেয়েছে!!
রেশমি রায়ান আর রেদোয়ানকে খেতে দিয়ে তার শাশুড়ীকে ডাকতে গেল!!
কিন্তুু জোর করেও তাকে বাইরে আনতে পারলো না!!!
রেশমি হাল ছেড়ে চলে এলো!!
হঠ্যাৎ আয়ানার চিৎকারে রায়ান দ্রুত খাবার ছেড়ে ঘরে দৌড়ে গেল!!!
রায়ান যেতেই আয়ানা রায়ানকে জড়িয়ে ধরল!!
আয়ানা ঘামছে আর কাঁপছে!!
রায়ান–কি হয়েছে আয়ু??
আয়ানা–ওই লোকগুলো!!!
রায়ান বুঝে নিল আয়ানা ভয়ে চিৎকার করেছে!!!
রেশমি আর রেদোয়ান ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছে!!!
রায়ান–কেউ নেই আয়ু!!দেখো!!
আয়ানা–নাহ!!ওরা আবার আসবে!!!
রায়ান–কেউ আসবে না!!
আয়ানা আচমকা সেন্স হারিয়ে নিচে পড়ে গেল!!
রেশমি,রায়ান দ্রুত ধরে খাটে শুয়িয়ে দিল!!
রেদোয়ান –রেশমি তুমি দেখো না হলে ডাক্তার ডাকি!!
রেশমি–হুমম!!
অপরদিকে,,
টিমটিম করে জ্বলতে থাকা একটা লাইটের আলো জ্বলছে শান্তর গোডাউনে!!
শান্ত কপাল চেপে চেয়ারে বসে আছে!! রাগে শরীর জ্বালা করছে তার!!!
এরইমাঝে কয়েকটা মাঝবয়েসী ছেলে এসে দুজন লোককে ধাক্কা মেরে শান্তর পায়ের কাছে ফেললো!!
শান্ত তাও মাথা চেপে বসে আছে!!!
লোকদুটো হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছে!!
শান্ত এবার ধীর কন্ঠে বলল–তোদের শুধু ইনজেকশন টা পুশ করে ওকে সেন্সলেস করে রেখে আসতে বলেছিলাম!!তোরা ওকে রেপ করার চেষ্টা করলি কেন??
লোক দুজন–স্যার,,আসলে মেয়েমানুষ দেখে লোভ সামলাতে পারিনি!!মাফ করে দিন আর হবে না!!
শান্ত–হুমম!!আর করবি না তা জানি আমি!!যা তোরা মাফ করে দিলাম!!
লোক দুটো বেশ খুশি মনে চলে যেতে নিলেই পরপর দুটো গুলি তাদের পায়ে গিয়ে লাগে!!
হুমড়ি খেয়ে পরে যায় দুজনে!!
লোকদুটোকে শান্তর ছেলেরা টেনে হাঁটু মুড়ে ধরে বসায়!!
শান্তর হাতে গরম শিক দেখে ওদের চোখ ভয়ে কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম!!
শান্ত–ভুল আমি মাফ করিনা!!শাস্তি দেই!!
কথাটা বলোই একজন লোকের কানের ভেতর শিক চেপে ধরল!!
লোকটা যন্ত্রনা ছটফট করতে থাকলো!!!
অপরদিকে,,,
রাত ১.২০,,
রায়ান অর্ধশোয়া অবস্থায় আছে,,
তার বুকের ওপর আয়ানা ঘুমের ওষুধের কারণে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে!!!
রায়ানের চিন্তা শুধু আয়ানার কাধের ওই ফোলা অংশ নিয়ে!!
রায়ান নিশ্চিত যে এটা কোনো পোকার কামড় নয়!!!
তাহলে কি???
#চলবে
১১১০শব্দের পর্ব😊