ভালোবাসার রংবদল পর্ব ১৫

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ১৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আজ প্রায় একমাস পর আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। হাতের রিপোর্টটা বার বার দেখছি আর কান্না করছি। এই এক মাসের মধ্যে আজ প্রথম আমি এই অনুভূতির ঘরে আসলাম। আদ্র আমাকে খুব ভালোবেসেই আগলে রেখেছেন। আমাকে কখনো কান্না করতে দেয়নি এইখানে আসার পর। কিন্তু আজ আমার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। বেশ কিছুদিন ধরেই শরীরটা খারাপ লাগছিলো তেমন কোনো পাত্তা দেইনি। আজ ভার্সিটিতে হুট করে মাথা ঘুরে পরে যাই। দীপ্ত আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারলাম আমি এখন আর একা নই। আমার ভিতর এখন আরও একটা অস্তিত্ব বেরে উঠছে। এই কথাটা শোনার পর থেকেই আমার কেমন যেন লাগছে। নিজেকে বড্ড অগোছালো লাগছে। আমি জানি না এখন আমার কেমন অনুভব হচ্ছে, আমার কি করা উচিত আর আদ্রকেই বা কিভাবে এই কথা বলবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথাটা পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

আমি প্রেগন্যান্ট এই কথা শোনার পর দীপ্ত খুশিতে পাগল হয়েছে গেছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি নাচানাচি। ওর নাকি দ্বিগুণ খুশি লাগছে একে তো বেস্ট ফ্রেন্ডের বেবি হবে তারপর আবার একমাত্র ভাবির বেবি হবে। এক সাথেই খালামনি আর ফুপি হবে এটা নিয়ে বেশ গর্ব বোধ করছে দীপ্ত। তবে আমি দীপ্ত প্রমিজ করিয়েছি যেন এই কথা কাউকে না বলে এমনকি আদ্রকেও না। আমি জানি না এই কথা শোনার পর সবাই কেমন রিয়েক্ট করবে বিশেষ করে আদ্র!! আজ আদ্রর সাথে কথা বলিনি। ভার্সিটি থেকে এসেই এই রুমে বসে আছি। মা হওয়ার অনুভূতির কেমন আমার জানা নেই। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো একজন ভালো মা হতে। আর যাইহোক আমার আম্মুর মতো আমি আমার সন্তানকে অবহেলা করবো না। খুব বেশি ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।

হঠাৎ করে আদ্র হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসলেন। আমার কাছে এসে আমার সামনেই মেঝেতে বসে পরলেন। আমার দু গাল আঁকড়ে ধরে অস্থির কন্ঠে বললেন-

—”শুভি কি হয়েছে তোমার?? সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি রিসিভ করছো না। দীপ্তকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম বাসায় এসে পরেছো। বাসার ফোনে কল দিলাম সেটাও রিসিভ করোনি। তাই বাধ্য হয়ে অফিস রেখেই চলে আসলাম। পুরো বাড়ি খুঁজেও অবশেষে এই রুমে পেলাম তোমাকে। এই রুমে তো তুমি কখনো আসো না। তাহলে আজ কি হয়েছে?? মন খারাপ তোমার শুভি?? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?? আমাকে বলো প্লিজ।”

আদ্র এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বললেন। এতক্ষন নিঃশব্দে কান্না করলেও এখন আদ্রর উপর ঝাপিয়ে পরে শব্দ করেই কান্না শুরু করে দিলাম। আদ্র আমার কান্না দেখে উত্তেজিত হয়ে বললেন-

—”শুভি কি হয়েছে এভাবে কান্না করছো কেন?? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে শুভি প্লিজ বলো আমাকে কি হয়েছে।”

আমি কান্না করেই যাচ্ছি ওনাকে জড়িয়ে ধরে। আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো এই কথা। কিছুক্ষন পর কান্না কিছুটা থামিয়ে আস্তে আস্তে বললাম-

—”আদ্র আমি প্রেগন্যান্ট।”

আমার কথা শুনে আদ্র স্তব্ধ হয়ে গেল। আমার মাথায় হাত বুলানো বন্ধ করে দিলো। আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনি মেঝে থেকে উঠে দাড়ালেন। আমি কান্না থামিয়ে ওনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা উনি কি খুশি হোন নি!! আদ্র কি তাহলে বেবি চায় না!!
আদ্র কিছু বলছে না চুপচাপ সারা রুমে একবার পায়চারি করলেন। জানালার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। দু হাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন উনি। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ওনার এমন অদ্ভুত কর্মকান্ড। উনি এমন করছেন কেন!!
আদ্র আমার কাছে এসে আবারও মেঝেতে বসে পরলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন-

—”কি বলেছিলে তুমি? আবার একবার বলবে প্লিজ!!”

—”আমি প্রেগন্যান্ট আদ্র। মা হতে চলেছি আমি।”

আমার কথা শুনে আদ্র একবার খুশিতে লাফিয়ে উঠলেন। খুশিতে চিকচিক করছে তার মুখ। একপ্রকার চেচিয়ে বলে উঠলেন-

—”শুভ্রতা তুমি সত্যি বলছো আমি বাবা হবো??”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম। সাথে সাথেই উনি আমার বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বেশ কিছুক্ষন পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার চোখ মুখ মুছে চুল গুলো ঠিক করে দিলেন। কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার দু গালে হাত রেখে বললেন-

—”এত বড় খুশির খবর তুমি আমাকে এভাবে কান্না করতে করতে দিলে কেন?? আর এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করে এই অবস্থা করেছো কেন নিজের??”

আমি মাথা নিচু করে নিম্ন স্বরে বললাম-

—”আমি জানি না আমার কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে। আমার মধ্যে এখন আরেকটা অস্তিত্ব বড় হচ্ছে ভাবতে কেমন যেন লাগছে। আমি জানি না আমি কেন কান্না করছি আদ্র। কিন্তু আমার কান্না করতে ইচ্ছে করছে ব্যাস।”

আদ্র উচ্চস্বরে হাসছেন আমার কথা শুনে। মনে হচ্ছে আমি কোনো মজার কথা বলেছি। আজ আমার সব কিছুই অদ্ভুত লাগছে। কিছুদিন আগেও আব্বুর কাছে এটা ওটা চেয়ে আবদার করতাম। দিদুমনির পিছন পিছন ঘুরতাম আর আজ হুট করেই যখন জানলাম আমি মা চলেছি এটা শুনে যেন আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলাম। মা হওয়ার অনুভূতি কি সবার এমনই হয় নাকি শুধু আমার কাছেই এমন অদ্ভুত লাগছে!!
আদ্র হাসি থামিয়ে আমার দু’বাহু ধরে বললেন-

—”শোন পিচ্চি বেশি চিন্তা করিস না। এই সময় সব মেয়েদেরই হয়তো এমন অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হয়। আর আমার তো নিজেরই বিশ্বাসই হচ্ছে আমাদের বেবি হবে। আজ আমি অনেক খুশি শুভি অনেক বেশিই খুশি। তুই আজ আমাকে অনেক বড় একটা উপহার দিলি। আমি তো বুঝতেই পারছি আমি কি করবো এখন। খুশিতে আমি আত্মহারা হয়ে যাচ্ছি শুভি।”

আদ্র শেষের কথা গুলো চিৎকার করে বলে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। পুরো বাড়ি ঘুরছেন আমাকে কোলে নিয়ে। মনে হচ্ছে উনি খুশি পাগল হয়ে গেছেন। আমি অবাক হয়ে ওনাকে দেখছি। আদ্রকে আজ পর্যন্ত আমি কখনো এতটা হাসিখুশি দেখিনি।

আদ্র আমাকে বেড রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। আমার বরাবর একটা চেয়ার নিয়ে বসে গম্ভীর গলায় বললেন-

—”কিছু কথা বলছি মাথায় ঢুকিয়ে নে ভালো করে। আজ থেকে তোর সব লাফালাফি, দুষ্টুমি করা বন্ধ। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে একদমই অনিয়ম করতে পারবি না। কোনো কাজ করতে পারবি না, ছাদে যেতে পারবি না, একা একা এই রুম থেকে বের হতে পারবি না। তোর কোনো দরকার হলে সব আমাকে বলবি। আর যদি আমার কোনো কথার অবাধ্য হয়েছিস তাহলে খুব খারাপ হবে। আর এখন থেকে একদমই বেখেয়ালি পনা চলবে না। নিজের যত্ন নিবি বেশি বেশি। আমি তোদের দুইজনকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাই না।”

আমি ওনার এমন কড়া হকুম শুনে থ হয়ে গেলাম। এখনই এতো নিয়মকানুন তাহলে কিছুদিন পর কি হবে??? আমি মুখ গোমড়া করে মিনমিনিয়ে বললাম-

—”আপনি কি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন না আদ্র!!”

আদ্র শক্ত গলায় বললেন-

—”না কোনো বাড়াবাড়ি করছি না। যা করছি একদম ঠিক করছি।”

আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ করেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আদ্র সাথে সাথেই নিচে চলে গেলেন। আমিও ওনার পিছুপিছু গেলাম। নিচে যেয়ে আদ্র দরজা খুলতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি ওনার পাশে গিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম আদ্রর আম্মু আর আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাদের দেখে আমি খুব অবাক হলাম। কারন এই একমাসে আদ্রর আম্মু কখনো আমাদের বাসায়৷ আসেনি এমনকি আমাদের কারও সাথে ফোন দিয়ে একবারের জন্য কথাও বলেননি। হঠাৎ করে আজ উনি এখান আসলেন কিন্তু কেন!!

চলবে….

(রিচেক করা হয়নি কোনো ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here