#সাইকো_বর
#writer_Tabassum_Tajnim
#part_21
প্রায় দরজার কাছে চলে গিয়েছি,, ঠিক তখনি ফোনটা বেজে উঠলো,,
এই সময় আবার কে ফোন করলো?? মেঘ!!! ওই হবে হয়তো,, যাক মনে মনে একটু খুশিই হলাম। বিয়ের এতদিন পর ও কল দিলো।
বৃষ্টি— ভাবি,, যাও গিয়ে দেখো কে কল দিলো,, আমি নিচে গিয়ে সব রেডি করি,,
আমি দৌড়ে গিয়ে মোবাইল টা হাতে নিলাম,, স্ক্রিনের নাম্বার টা দেখে বিরক্ত হলাম,, সাথে কষ্ট ও পেলাম। নাহ্ মেঘ কল দেয় নি,, কল দিয়েছে 24000। মানে সিম কম্পানি গুলো😠😠 কোনো মানে হয়,,, কি ভাবলাম,, আর কি হলো,,
মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে মারলাম। মেঘ কোনো দিনও আমায় কল দেয় না, কেনো?? ও কি আমায় মিস করে না,, শুধু বাসায় আসলেই ভালোবাসা উপচে পড়ে,, আর সারাদিন অফিসে থাকাকালীন একটা কলও দেয় না,, হারামি,, কুত্তা,, শুধু আমাকে কষ্ট দেয়,, ওর ভালো হবে না, কোনোদিন ও ভালো হবে না।
বিছানায় বসে আছি,, বৃষ্টি ডাকছে,, কিন্তু যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি এখন নিচে না গেলে একটু পর ও আবার আসবে। আবার ফোনটা বেজে উঠলো,, এখন ফোনটা রিসিভ করার কোনো ইচ্ছায় নেই,, বেজে বেজে একসময় থেমে গেলো। আবার বাজছে,, মোবাইলটা হাতে নিলাম। মা মানে শাশুড়ি মা কল দিয়েছে,, রিসিভ করলাম।
মা— অথৈ,, মা কি করছো?? কেমন আছো??
অথৈ— ভালো,,, আপনি কেমন আছেন??
মা— ভালো,,, দুপুরে খেয়েছো??
অথৈ— না মা,, এখন খাবো,,।
মা— সেকি এখনো খাও নি,, এমনিতেই তো তুমি অসুস্থ,, আবার খাওয়া নিয়ে এরকম করছো?? তাড়াতাড়ি খেতে যাও। আমি এখন রাখছি তাহলে।
অথৈ— না,, মা,,
ওপাশ থেকে কেটে দিলো। যাক বাবা, আমাকে তো কিছুই বলার সুযোগ দিলো না,, সত্যি এরা পারেও বটে,, অবশ্য ওরা আমাকে খুব ভালোবাসে। আর আমিও ওদের কে খুব খুব ভালোবাসি। আমি পিছনে ঘুরতেই দেখি বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে,, চমকে গেছি,, কোনো সাড়া শব্দ না করে দাড়িয়ে আছে,,
বৃষ্টি— আরে ভয় পেয়ো না,,
অথৈ— তুমি কখন এলে??
বৃষ্টি— এই তো মাত্রই, এসে দেখি তুমি কথা বলছো,, তাই আর শব্দ করে নি,, তুমি কি গো ভাবি,, সেই কখন থেকে ডাকছি তোমাকে,, আর তুমি সেই থেকে ফোনে কথা বলছিলে!!
আমি আর কিছু বলি নি। মা তো মাত্র ফোন দিয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি তো সেই কখন থেকে ডাকছে। কি বলবো ওকে,, যে আমি ইচ্ছা করেই নিচে যাই নি। তারচেয়ে ভালো ও যা ভেবেছে তাই ঠিক।
অথৈ— আচ্ছা,, চলো এখন।
আমি খাবার নিয়ে বসে আছি একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না,, আর বৃষ্টি গপাগপ খেয়েই চলছে। বৃষ্টি আমাকে দেখলো।
বৃষ্টি— একি ভাবি,, তুমি খাচ্ছো না কেনো?
অথৈ— খেতে ইচ্ছা করছে না,,
বৃষ্টি— খেতে ইচ্ছা করছে না মানে?? কি হয়েছে তোমার?
অথৈ— কিছু না,, এমনিই খেতে ইচ্ছা করছে না,,
বৃষ্টি— এমনি!! কিছু তো হয়েছে তোমার?? ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছো নাকি???
আমি দিকে চোখ বড় করে তাকালাম। মেঘের সাথে ঝগড়া করার সাহস আমার নেই।
অথৈ— আরে না,,,আমার এমনিতেই খেতে ইচ্ছা করছে না।
বৃষ্টি— ওহ,,, আচ্ছা তাহলে অল্প কিছু খাও,, না খেলে আবার শরীর খারাপ করবে।
বৃষ্টির জোরাজুরি তে অল্প কয়েক লোকমা মুখে দিলাম। আর খাওয়া সম্ভব না। উঠে পড়লাম,,
বৃষ্টি— তোমার খাওয়া শেষ!!
অথৈ— হুম,, আমার পক্ষে আর খাওয়া সম্ভব না।
বৃষ্টির খাওয়া শেষ হলে খাবার গুলো ঢেকে রুমে চলে আসলাম। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। মাথা ব্যাথা করছে। শুয়ে পড়লাম,, এত্ত খারাপ লাগছে কেনো আজকে,,
সারাদিন শুয়ে থাকতেও ভালো লাগে না,, তারপরও যদি একটু ঘুমাতে পারতাম তাহলে ভালো হতো,, ঘুম ও আসছে না। উফফ,, কি করবো?? মাথাটাও প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে। বিছনায় চোখ বন্ধ করে পড়ে আছি,,
একবার ভাবলাম বৃষ্টিকে ডাকবো,, নাহ্ বৃষ্টিকে ডেকে কি হবে,, উঠে বসলাম,, একটা ঔষধ খেতেই হবে,, না হলে মাথা ব্যাথা কমবে না। উঠে ফার্স্ট এইড বক্স টা খুজে বের করলাম। একটা ঔষধ খেলাম। তারপর আবার শুয়ে পড়লাম।
এতো মাথা ব্যাথা করছে যে,, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে,,। আমি শুধু এপাশ ওপাশ করছি। একটা সময় মাথার যন্ত্রণা কমে গেলো,, হয়তো তখনি ঘুমিয়ে পড়েছি।
বৃষ্টির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো,, চোখ মেলে দেখি সন্ধা হয়ে গেছে।। অাধা ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছি।
বৃষ্টি— ভাবি,, তুমি এই টাইমে ঘুমাচ্ছো কেনো??
নাহ্,, এখন মাথা ব্যাথা নেই। উঠে বসলাম,, হাই তুলতে তুলতে বৃষ্টিকে দেখলাম।
অথৈ— শরীর খারাপ লাগছিলো তাই শুয়েছিলাম,, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি,,
বৃষ্টি— ওহ,,, তা এখন কেমন লাগছে??
মোটেও ভালো লাগছে না,, তাছাড়া আরও ঘুমুতে ইচ্ছা করছে,, কিন্তু বৃষ্টি কে বলে লাভ নেই। জ্বর এসে গেছে মনে হয়।
অথৈ— ভালো লাগছে,,
বৃষ্টি— তাহলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও,, জোহান আসছে তো।
অথৈ— হুম,,,
কথাটা বলে বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম।
বৃষ্টি— এই ভাবি,,, যাও না,,,
বৃষ্টি চলে গেলো। আজ বৃষ্টি অনেক খুশি,, মেঘ রাজি হয়ে যাবে।। আমি উঠে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলাম। আজকে এমন লাগছে কেনো? বুঝতে পারছি না,,
মেঘ কখন আসবে কে জানে? আমি বৃষ্টির রুমে গেলাম। বৃষ্টি বসে আছে ওর রুমে,, মনে হয় টেনশন হচ্ছে ওর,,
আমি ওর কাধে হাত রাখলাম। বৃষ্টি ঘুরে আমাকে দেখলো।
অথৈ— কি?? টেনশন হচ্ছে নাকি??
বৃষ্টি— ভাবি,, ভাইয়া রাজি হবে তো??
অথৈ— হবে,,,
বৃষ্টি— আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে রাজি হবে না,,
অথৈ— রাজি না হলে কি?? মা বাবা তো রাজি,, তাহলেই হলো,,
বৃষ্টি আমাকে দেখলো,
অথৈ— এখন নিচে চলো,, কিছু তো একটা করতে হবে। তোমার হবু বর আসছে,
আমি বৃষ্টিকে নিয়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দুজনেি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি। জোহান বসে আছে। কখন এলো?? জোহানকেও দেখেও মনে হলো ও টেনশনে আছে। আমাদের কে দেখে হাসি দিলো।
জোহান— অথৈ,, তোমাকে দেখতে চলে এলাম।
অথৈ— হুহ,, আমাকে দেখতে আসছো নাকি অন্য কাউকে,,
বৃষ্টির দিকে ইশারা করে বললাম। আমি আর জোহান দুজনেই হেসে দিলাম।
জোহান— মেঘ কোথায়,
অথৈ— মেঘ তো এখনো আসে নি। তবে এসে যাবে এখুনি। তুমি বসো। তা চা খাবে তো??
জোহান— হুম তা খাওয়া যায়,,
আমি হেসে দিলাম। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই,, বৃষ্টি পিছন থেকে ডাকলো।
বৃষ্টি— ভাবি,, তোমার তো শরীর খারাপ,, আমি চা বানিয়ে আনছি, তুমি বসো।
অথৈ— আরে না,, তুমি কেনো চা বানাতে যাবে,, কয়েকদিন পর থেকে তো এমনিতেই রান্না করতে হবে। এখন একটু জিরিয়ে নাও।
কথাটা বলার পর জোহান আমাকে দেখলো। আমি হেসে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ মাথাটা ঘুরে গেলো। আমি কিছুক্ষণ জায়গাতেই দাড়িয়ে রইলাম। তারপর আবার আস্তে আস্তে রান্নাঘরে গেলাম। চায়ের পাতিল টা বসাতে যাবো ঠিক তখনি চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো,, এক পা বাড়াতেই পড়ে গেলাম। হাতের পাতিল টা পড়ে শব্দ হলো। এরপর আর কিছুই মনে নেই। যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে আমার রুমে আবিষ্কার করলাম। পাশে জোহান আর বৃষ্টি বসে আছে। বৃষ্টি আমাকে দেখে প্রায় কেদে দিলো।
বৃষ্টি— ভাবি,, তুমি ঠিক আছো তো?? তোমার কি হয়েছিল??
আমি কিছুই বলতে পারছি না,, গলাটা শুকিয়ে গেছে।
অথৈ— পা,,,, পানি
বৃষ্টি দৌড়ে পানির বোতলটা হাতে নিলো। বোতলে পানি নেই।
বৃষ্টি— ঘরে পানি নেই। জোহান তুমি এখানে বসো,, আমি পানি নিয়ে আসছি।
আমি শুয়া থেকে উঠে বসতে চাইলাম। বৃষ্টি কোথায় চলে গেলো
চলবে,,,