#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-১০
মাধবপুর লেকে থেকে অনেক আগেই বের হয়ে এসে গেছি। এখন যাচ্ছি অন্য স্থানে। জিপিএস থাকার কারনে ঘুরাঘুরির স্থানগুলোতে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। পুরোটা দিন পান্থর বকবকানি শুনে গেছি। পান্থ গাড়ি ড্রাইভ করছেন আর আমি পাশের সিটে বসে ফোন ঘাটছি। লক্ষ্য করলাম যে উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন আর লুকিয়ে লুকিয়ে আড়ালে হাসার চেষ্টা করছেন। উনাকে কিছু বলতে যাবো এর মাঝেই ফোনের স্ক্রিনে মাহিম ভাইয়ার নম্বরটা ভেসে উঠে। আমি উনার আচরনের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই উনি আমাকে একটা ঝারি দিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললেন-
: ফোন কোথায় থাকে আপনার? কতোবার ফোন দিয়ে যাচ্ছি সেই খেয়াল আছে আপনার? আজকে সকালে অফিসে এসে কাউকে কিছু না বলে প্রেজেন্ট দিয়ে চলে গেলেন!
আমি চুপ করে মাহিম ভাইয়ার কথাগুলো শুনছি। পান্থ পাশে থাকায় উনাকে যে কিছু একটা বলবো সেইটাও বলতে পারছি না। তাই খুবই ঠান্ডা এবং নরম সুরে বললাম-
: আমি ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলে এসেছিলাম। আর কাউকে বলা লাগবে বলে আমার মনে হয়নি। হ্যাঁ সারাকে বলে আসাটা উচিত ছিল।
মাহিম ভাইয়া আর কিছু বললেন না। তিনি আমার কথাগুলো শুনে কি মনে করেছেন জানি। উনি পুরো কথা শেষ না করেই ফোনটা কেটে দিলেন। আমিও আর দ্বিতীয়বার তাকে ফোন দেয়নি। আমার প্রতি উনার ইনসিকিউরিটি যেন আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে। সেইটা বন্ধ করতে হবে। তার আগে সারার সাথে আমার কথা বলতে হবে। আমি পান্থকে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললাম-
: এখন আমরা যেখানে যাচ্ছি সেইখানে অন্যদিন গেলে কি চলবে?
উনি আমার দিকে এমনভাভে তাকিয়ে আছেন যেন আমি এই প্রশ্নটা করে অপরাধ করে ফেলেছি। উনি কিছু না আবার গাড়ি ড্রাইভ করতে মনোযোগ দিলে আমি আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি অত্যন্ত ভাবলেশহীন ভাবে বললেন-
: আমি তো একটা অসহ্য লোক। তাহলে দ্বিতীয়বার আবার আসবেন কেন? নাকি অসহ্যের মাত্রা বেড়ে
গেছে দেখে মিথ্যে আশা দিচ্ছেন।
আমি উনার শেষের কথাটা শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম-
: মিথ্যে আশা তারাই দেয় যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে ঠকাতে জানে। মিথ্যে অভিনয় করতে জানে। আমি অতো পাকা খেলোয়াড় নই মি: পান্থ। আজকে একটু কাজ আছে আমার। অন্যদিন আপনার সময়মতো এখানে আসব। আজকে আমাকে যেতে হবে।
: প্রমিস?
উনি গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে চোখগুলো ছোট ছোট করে অত্যন্ত মায়াবী সুরে কথাটা বলায় যেন আমি কিছুক্ষণের জন্য হলেও উনার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম। তারপর চোখ দুটো বন্ধ করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা লাগিয়ে গাড়ির জানালার দিকে ঝুঁকে বললাম-
: যেদিন আপনার সময় হবে তার আগের বলে দিবেন আমি তৈরি থাকবো।
আমার কথাটা শুনে উনি খুশি কতোটুকু হয়েছেন তা বলা মুশকিল। তবে উনি ছোট করে হেসে দিয়ে আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে যান। আমি সেখানে থেকে কিছুদূর পিছনে গিয়ে একটা অটোতে উঠে সারাকে ছোট একটা মেসেজ করে ওর সাথে দেখার করার জন্য রওনা দেই।
—————————————-
সারা তরুনিমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার মিথ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে সারা। তরুনিমা সেইটা উপলব্ধি করতে পারা সত্ত্বেও কিছু বলছে না। বেশ কিছু সময় নীরবতা বজায় রেখে তরুনিমা সারাকে গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করে-
: মাহিম ভাইয়াকে ভালোবাসো তুমি?
তরুনিমার হঠাৎ এমন প্রশ্নে সারা যেন ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে যায়। তরুনিমার সাথে মিথ্যে কথা বলতে নিয়ে সে পারে না। তারপরও মিথ্যে বলার চেষ্টা করতে নিয়েও যেন সব চেষ্টা বৃথা হয়ে গেল সারার। তরুনিমা বিষয়টা বুঝতে পেরে একটা ছোট হাসি দিয়ে বলল-
: চিন্তা করো না সারা। আমি তো আছি। তোমার ভালোবাসাটা অপূর্ণ থাকবে না। আর যদি থাকে তাহলে ভেবে নিও তোমার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
: আমি জানি আপু আমার এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না। কারন আমরা যাকে চাই সেই মানুষটা অন্যকারোতে সীমাবদ্ধ থাকে। আমি জানি মি: মাহিম তোমাকে ভালোবাসে। সে আজকে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিল যে তুমি তাকে ভালোবাসেন কিনা? যদিও উত্তরটা আমার অজানা। কিন্তু সত্যি বলতে কি যখন পুরোপুরি জেনে গেলাম উনার আমার প্রতি বিন্দু পরিমান অনুভূতি নেই তখন খারাপ লাগলেও পরে ঠিকই আবার মানিয়ে নিয়েছি এখান থেকে। সবচেয়ে কষ্ট লাগে সেই মানুষগুলোর জন্য যাদের ভালোবাসাগুলো পূর্ণতা পেতে পেতে আবার হারিয়ে যায়। না পেয়ে হারানোর কষ্টের চেয়ে পেয়েও হারানোর কষ্টটা অনেক আপু।
কথাগুলো শেষ করে সারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তরুনিমা সারার কথাগুলো শুধু শুনে গেল শুধু। কারন সেও জানে, “যখন কোনো কিছু আমরা পেয়ে যাবার পর সেইটা হারিয়ে ফেলি, হয়তো শত আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সেইটা হরিয়ে যায় তার চেয়ে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। তবুও সেইটা মেনে নিয়ে আমাদের চলতে হয়।”
তরুনিমা আর সারা পরে একসাথে বাসার দিকে রওনা দেয়। সারা নেমে যাওয়ার আগে তরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে একটা প্রশান্তি সূচক হাসি দিয়ে বলে-
: ধন্যবাদ তরুনিমা আপু। সামনে উপরওয়ালা কি রেখেছেন জানি না। তবে তুমি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে যেও না প্লিজ! বড় বোনের মতো পাশে থেকো সবসময়। আর হ্যাঁ তোমাদের বিয়ে হলে আমাকে কিন্তু দাওয়াত দিতে ভুলো না। হি..হি!
তরুনিমা সারাকে শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আদরের স্পর্শ দিয়ে সেখানে বিদায় নেয়। তরুনিমা সারার চোখের ছলছল করা পানিগুলো স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে। মেয়েটা যে অনেকটা শক্ত সেইটার প্রমাণ সে আজকে পেয়ে গেছে। কিন্তু তরুনিমা তো মাহিমকে ভালোবাসে না। ভালোবাসা নামক শব্দটায় বিশ্বাস করলে সে আবার নতুন করে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে চায় না। সব অনুভূতি সবকিছু যে তার অনেক আগেই কবর দেয়া হয়ে গেছে। মরা মানুষকে যেমন দ্বিতীয়বার জীবন্ত করা যায় না, ঠিক তেমনভাবেই কোনো জিনিস একবার ভেঙেচূরে নিঃশেষ হয়ে গেলে তা আর পুনরায় ফিরে পাওয়া যায় না। হয়তো পাওয়া যেতে তবে সেইটা আগের মতো নাও হতে পারে।
তরুনিমা বাসায় যেতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলে সবাই ওর জন্য চিন্তা করতে থাকে। সবাই হল রুমে বসে তরুনিমার অপেক্ষা করছে। তরুনিমা দরজায় বেল বাজাতেই অন্তু গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে। তরুনিমা হল রুমে প্রবেশ করতেই মেহু এগিয়ে এসে চিন্তামিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
: কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? পান্থকে ফোন দিয়েছিলাম ও বলল তুমি নাকি অনেক আগেই চলে গেছো। তাহলে এতোক্ষণে?
কবির হাসনাত বসা থেকে উঠে এসে তরুনিমার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করেন-
: কোথায় গিয়েছিলে?
: তোমরা এতো চিন্তা করছো কেন? আমার অফিসের কলিগ সারা ওর সাথে কিছু কাজ ছিল তাই ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পরে ও আর আমি একসাথেই এসেছি।
তরুনিমাও খুবই স্থির ও স্বাভাবিক সুরে বলল। তারপর একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে মেহুর দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল-
: আর ভাবি তোমার ওই তার ছিঁড়া ফ্রেন্ড পান্থ! উনাকে বইলো আগে নিজের যেন মাথার তার গুলো জয়েন্ট লাগায়। অসহ্য একটা লোক। কিছু বললেই হু হা করে হেসে দেয়। সারাটা দিন আজকে আমার মাথা খেয়ে ফেলছে।
মেহুসহ সবাই অবাক হয়ে আছে। গত এক বছরে যেই তরুনিমা নিজ থেকে কখনো কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করলে একটা কথার বেশি কোনো কথাই বলে না সে আজ নিজ থেকে গড় গড় করে সমানে কথা বলে যাচ্ছে। আবার সেই আগের তরুনিমার কথা বলার ভঙ্গি। তরুনিমা সবার এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তরুনিমা বলল-
: কি ব্যাপার? আমাকে কি আদিম যুগে কোনো প্রাণী লাগছে নাকি এইভাবে হা করে তাকিয়ে আছো তোমরা?
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-১১
তরুনিমার কথাবার্তা সেই আগের তরুনিমার মতো লাগছে। অন্তু ওর বোনকে আপাদমস্তক দেখে যাচ্ছে। তরুনিমা অন্তুর সামনে গিয়ে ওকে পা থেকে মাথা অবদি পর্যবেক্ষণ করলে অন্তু দুই কদম পিছনে গিয়ে বলল-
: এই আপু! তুমি আমাকে এই ভাবে পর্যবেক্ষণ করছো কেন হঠাৎ?
: তার আগে বল তুই কেন আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিলি?
অন্তু যেন তরুনিমার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অন্তু চোখগুলো ছোট ছোট করে মিনহাজের দিকে তাকায়। মিনহাজ মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। তরুনিমা মিনহাজের দিকে তাকাতেই মিনহাজ নিজের চেহারায় একটা সিরিয়াস আনে। করবির হাসনাত তরুনিমাকে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে। তরুনিমা নিজের বাবার কথার উপর কোনো কথা বলে না। সে চুপচাপ ঘরে চলে যায়।
কবির হাসনাত মিনহাজ আর মেহুর কাছে গিয়ে বললেন-
: তোমাদের কিভাবে ধন্যবাদ দিব আমি জানি না। তোমাদের জন্যই আজ আমার মেয়েটাকে আমি আবার আগের মতো কথা বলতে দেখলাম। এখন ও পুরোপুরি আগের তরু হতে দেখতে চাই। ওর এমন গুমোট বাধা ভাবে চলা ফেরা, একেবারে শান্ত শিষ্ট তরুনিমা দেখতে পারছি না।
: এইভাবে বলছেন কেন? তরু তো আমার ছোট বোনের থেকেও বেশি। ও যদি ভালো থাকে তাহলে তো আমরাও ভালো থাকবো। এখন শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। আপনি চিন্তা করবেন না। আর এইখানে যদি সবচেয়ে বেশি এফোর্ট দিচ্ছে তা হলো মেহু।
: এখানে এফোর্টের কোনো প্রশ্নই আসে না। যা করছি আমি ওর ভালো জন্যই করছি। এখন শুধু সবাই মিলে দোয়া করো। আর তরু যেন কিছুই জানতে না পারে এখন। তাহলে ও অনেক কষ্ট পাবে।
মিনহাজ আর মেহু দুজনেই কবির হাসনাতকে আশ্বস্ত করে কথা গুলো বলল। কিন্তু ওদের শুধু একটা জায়গায় ভয়। তরুনিমা যদি সব জেনে যায় তাহলে ওদেরকে কি ভুল বুঝবে?
ডানহাতে চশমা আর বাম হাতটা চোখের উপর রেখে ইজি চেয়ারে দুলছে মাহিম। মাহিমের মনের ভিতর অনেক সংশয় কাজ করছে। ওর মনে হচ্ছে ও কি তরুনিমাকে নিয়ে যা ভাবছে তা কি আসলেও ঠিক? মাহিম ইজি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে ওর কোনো একটা বইয়ের ভিতরে থেকে একটা ছোট চিঠি বের করে সেই চিঠিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে একটা অজানা হাসি হেসে সেইটা ও আবার রেখে দেয়। হঠাৎ ওর ফোনে একটা কল আসতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠা নামটা দেখে যেন ওর মুখে একটা হাসির উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। সে ফোনটা রিসিভ করে ওপাশে থাকা ব্যক্তিটাকে বলল-
: কিরে ব্যাটা! এতোদিন পর মনে পড়লো তোর এই বড় ভাইয়ের কথা। এতোদিন কোথায় ছিলি?
মাহিমের কথাশুনে বিপরীতে থাকা মানুষটা ভাবলেশহীন হয়ে বলল-
: তুমি এমনভাবে বলছো তুমি জানোই না আমি কোথায় ছিলাম? এনিওয়ে, একটা গুড নিউজ আছে।
: গুড নিউজ? কিসের?
মাহিম উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললে মানুষটি একটা স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলল-
: সেইটা কয়দিন পরই জানতে পারবে। ও হ্যাঁ বাবা তোমাকে আজকে কালকের ভিতর ফোন দিবে। পার্টি হবে পার্টি।
: তার মানে আই এম ডান?
মাহিম কথাটা উৎসুক হয়ে বললে বিপরীতে থাকা মানুষটা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল-
: ইয়েস মাই ব্রাদার ইউ আর ডান। ইউ ডিড ওয়েল। এখন আমি রাখছি। ওকে?
: হুমম..! রাখ! আর শুন আমি কিন্তু জানি তুই বর্তমানে কোথায় আছিস? তাই সময় নিয়ে দেখা করতে আসবি। নইলে বাবাকে বলে তোকে এইবার টাইট দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
: নেভার! আগে তোমাকে টাইট দেয়া হবে অতঃপর আমাকে। ততোদিন প্যারা নাই চিল মুডে বসে বসে চিল মারবো।
দুইজনই হেসে দেয়। মাহিম কথা শেষ করে ফোনটা রাখে। এখন অনেকটা হালকা লাগছে ওর। যেই জন্য নিজেকে এতো প্রস্তুতি করেছে এখন সেইটা প্রকৃত ফল সে পেতে চলেছে।
————————————————-
ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল টা ব্যালকনিতে মেলিয়ে এসে দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসড কল পরে আছে। পরে খেয়াল করে দেখি ওই শিমপাঞ্জির বংশধর ফোন দিয়েছে। কল ব্যাক আর করতে ইচ্ছে হলো না। ফোনটা স্টাডি টেবিলের উপর রাখতেই মি: শিমপাঞ্জি আবার ফোন দেন। না চাইতে ফোনটা রিসিভ করতেই উনি বললেন-
: ফোনটা কি কোনো গুহায় রেখে দিয়েছিলেন? এতোবার ফোন দিচ্ছি ফোন ধরছেন না?
: ওমাহ! আপনি জানেন না বুঝি আসার সময় তো আমার ফোনটা হনুমানের গর্তের পরে গিয়েছিল। ভাগ্যিস আপনি ফোন না দিলে আমি জানতেই পারতাম না যেই ওইটা গর্ত না গুহা ছিল। খবরদার এখন আমার এই কথায় হাসবেন না।
কথাটা শেষ না করতে না করতেই উনি আবার জোরে জোরে হাসা শুরু করেন। নিজের মাথাটা দেয়ালের বারি দিয়ে ঝাঝরা করে দিতে ইচ্ছে করছে। কথায় কথায় শুধু হাসে। উনি নিজের হাসি থামিয়ে অত্যন্ত জোরালো কন্ঠে বললেন-
: দুই দিন পর আমার চেম্বারে আসবেন। কিছু দরকার ছিল।
: কিসের দরকার আবার?
: দরকার বলেই তো আসতে বলেছি। বাই দ্য ওয়ে আপনাকে পাগল বানাবো নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
: নিজেই তো একটা তারছিড়া পাগল। অন্যকে আবার কি পাগল বানাবে? হুহ!
কথাটা বিরবির করে বললেও উনি ঠিক আমার কথাগুলো শুনে ফেলেছেন। এইবার আবার হাসা শুরু করে দিলেন। এইবার প্রচণ্ডভাবে মেজাজটা বিগড়ে যায়। তাই এইবার আর উনার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে টুস করে ফোনটা কেটে দিয়ে এয়ারপ্লেন মোড দিয়ে রাখি।
চোখে মুখে সূর্যের আলোটা পরায় পিটপিট করে চোখে মেলে তাকাতেই দেখি সকাল হয়ে গেছে। ফোনটাকে নরমাল মোডে দিতে দেখি অফিস থেকে ম্যানেজার সাহেব মেসেজ দিয়েছেন যে আজকে অফিসে মিটিং আছে। আমার চোখগুলো যেন কপালে উঠে গেছে। মেসেজটা গতকাল রাত্রেই দেয়া হয়েছে। ফোনটা পান্থরসাথে মেজাজ দেখিয়ে এয়ারপ্লেন মোড করার পর নরমাল মোডে আনতে মনে ছিল না। ফোনের ক্লকে তাকাতেই ধপাস করে বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে নেই। মাথা পুরো জ্যাম হয়ে গেছে। সারাও অনেকগুলো ফোন দিয়েছে। কারো ফোনই ধরতে পারিনি। নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়ে ফেলতে চাচ্ছে। মেহু ভাবি আমার ঘরে এসে এইভাবে তাড়াহুড়ো করতে দেখে বুঝতে পারেন যে আমার আজ কোনো কারনে লেট হয়ে গেছে। উনি আবার আমার ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার খাবার হাতে ঘরে প্রবেশ করেন। আমি এখন খেতে পারব না বলে যেতে নিলে উনি আমার হাত ধরে আমার মুখে ডিম সিদ্ধটা পুরে দিয়ে বলেন-
: খালি মুখে বাসার থেকে বের হওয়া যাবেনা।
: ভাবি তুমি কি পুরোনো দিনের কথা বলছো। আমি বাহিরে খেয়ে নিতাম। এমনি তেই দেরি হয়ে গেছে।
ভাবি আমাকে ঝাঝালো কন্ঠে বলল-
: এই চুপ! এই কথাটা কোনো পুরোনো কথা নয়। এইটা নিয়ম এই পরিবারে এই পরিবারে। বাহিরে উল্টা পাল্টা জিনিস খেয়ে পরে অসুস্থ হবে। এখন না খেয়ে গেলে পরে যা খাবার তাতে পরে গ্যাস্ট্রিক হবে। চুপচাপ খাবে তুমি এখন!
ভাবির কথা বলার ধরন দেখে যেন মায়ের প্রতিচ্ছবি সামনে ভেসে উঠে আমার। ভাবির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি। এই কথাগুলো এক সময় মা বলতো। নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরে। ভাবি আমার চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে বলল-
: আমি জানি এই কথাগুলো শুনে তোমার খালামনির কথা মনে পড়ছে। কিন্তু এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে অফিসে যাও। নইলে তোমার চাকরি নট করে দিবে।
ভাবি আমাকে বাকি ডিমটাও খাইয়ে দিয়ে অতঃপর আমি অফিসে যাওয়ার জন্য সক্ষম হই। মিটিং এ আধ ঘন্টা লেট করে গিয়ে পৌঁছাতেই ম্যানেজার সাহেব যেন বিরবির করে কিছু একটা বললেন। আমি সেদিকে আর পাত্তা না দিয়ে বাকি মিটিং টা এটেন্ড করি। মিটিং শেষ করে কনফারেন্স রুম থেকে বের হতেই মাহিম ভাইয়া আমাকে পিছন থেকে ডাকেন। আমি উনার কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে নিজের ডেস্কে চলে আসি। সারা ওর ডেস্কে বসে কাজ করছে। সারা আমাকে দেখে একটা ছোট হাসি দিয়ে আবার কাজে মন দেয়। মাহিম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেও না লক্ষ্য না করার চেষ্টা। কারন আপাতত উনাকে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
#চলবে____
(