প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১৮+১৯

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-১৮

পান্থ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেও পারছে না। ওর চোখ মুখ দেখে পুরোপুরিভাবে তা স্পষ্ট। রিন্তা ওর চেম্বারে ঢুকার জন্য পা দিতেই পান্থ পিছন ফিরে না তাকিয়েই বলে-

: প্লিজ ডোন্ট কাম! আই নিড স্পেস! জাস্ট গো এওয়ে!

পান্থ টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় সে ওর বক্সটা চোখ দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেও পেল না। পান্থ এইবার চেঁচিয়ে বলে-

: এখনও দাঁড়িয়ে আছেন! আমি তো বলছি আই নিড স্পেস! প্লিজ, লিভ!!

রিন্তা পান্থ চেম্বারে দরজাটা বন্ধ করে চেল যায়। আর ওর সেক্রেটারিকেও বলে যায় যাতে এখন কেউ যেন ওর ঘরে না যায়। রিন্তা পান্থকে সব সময় শান্ত হাসি খুশি দেখেছে। কিন্তু হঠাৎ ওর আর আজকে এমন কি হয়ে গেল যেটার জন্য ওর সাথে পান্থ এমন আচরন করে বসে। সেইটাই রিন্তাকে শুধু ভাবাচ্ছে। রিন্তা তরুনিমার কেবিনে আসতেই তরুনিমার হাতে বক্সটা দেখে ও চমকে যায়। রিন্তা তরুনিমাকে কিছু বলবে তার আগে তরুনিমা বলে-

: উনি তো এই পায়েসটা খেতে পারবেন না। এটাতে এলাচির ফ্লেভারটা বেশি আসছে। আর পান্থ তো এলাচি খান না বলতে গেলে সহ্যই হয় না উনার। উনার খাওয়া মাত্রই ভমিটিং শুরু হয়ে যাবে।

রিন্তা তরুনিমার কথা শুনে পুরো অবাক হয়ে যায়। কারন পান্থকে ওর থেকে বেশি কেউ চিনে না। তবে ও জানতো না যে যে পান্থর পায়েসে এলাচি পছন্দ করে না। কিন্তু তরুনিমা জানে-

: তুমি কিভাবে জানো? পান্থ তো বলেছে যে তুমি ওর ফ্রেন্ডের ননদ। এতো কিছু তো জানার কথা নয়।

রিন্তা উৎসুক হয়েই তরুনিমাকে জিজ্ঞেস করে। তরুনিমা উত্তরে মৃদু হাসি দিয়ে বলে-

: তুমিই তো বললে আমি উনার ফ্রেন্ডের ননদ। উনার ফ্রেন্ড আই মিন মেহুর ভাবির থেকেই জেনেছি। উনাকে বলে দিও যাতে উনি এইটা না খান।

: হুমম। তুমি এখন রেস্ট নাও। ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে আমার বিকেলের পর পরই তোমাকে ছেড়ে দিবে।

রিন্তা তরুনিমার হাত থেকে বক্সটা নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে যায়। কিন্তু কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে তরুনিমার প্রতি রিন্তা এক প্রকার খটকা লেগে গেছে। সে সেইটা কোনো ভাবেই মন থেকে দূর করতে পারছে না। তরুনিমা বেডে শুয়ে রেস্ট নিতে নিলে বারবার ওর মাথা পান্থকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। কেন হচ্ছে? সেটা সে জানে তবে চিন্তা হচ্ছে।

——————————————————–

অফিস শেষ করে সারা বেরিয়ে অটো খুঁজছে। একটাও অটো খুঁজে পাচ্ছে না। পিছন থেকে পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে সারা যেন হিম হয়ে গেছে। পিছন ঘুরে সে চমকে যায়। কারন মাহিম ডান হাতের বাহুতে ওর ব্লেজার রেখে প্যান্টের পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারা এতোদিন মাহিমের দিকে তাকায়ও নি। কোনো কাজ থাকলেও কথা বলার সময়ও অন্যদিকে অথবা চোখ নিচে নামিয়ে রেখে কথা বলেছে। মাহিম সারা প্রত্যেকটি আচরণের উপর চিরুনি অভিযান চালিয়েছে। সারাকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহিম ওর সামনে হেটে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে-

: দেখা শেষ হয়ে গেলে বলতে পারেন।

সারা মাহিমের কথায় যেন পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ডান হাত দিয়ে নিজের মুখ আড়াল করে নিজের জিহ্বায় কামড় দেয়। তার এখন লজ্জায় কলা গাছের সাথে ফাঁসি দিতে ইচ্ছে করছে। মাহিম সারা দৃষ্টির আড়ালে হাসি দিয়ে পরে নিজের চেহারায় একটা গাম্ভীর্য ভাব এনে বলে-

: আজকে কি রাস্তায়ই কাটিয়ে দিবেন। বাসায় যাবেন না?

সারা ওর হাত নামিয়ে মাহিমের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে-

: আজকে কি সূর্য উঠেছিল? নাকি এনাকে জ্বীন ভূতে ধরছে? আমার সাথে তো এইজীবনে কথা বললো না জীবনেও। আজকে মুখ দিয়ে ঠাকুরমার ঝুলি বের হচ্ছে। আমি আবার কি ঠাকুরমার ঝুলি লাগাইলাম? তাড়াতাড়ি উনার ছায়া থেকে বের হতে হবে নিলে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।

মাহিম গলা খাকারি দিলে সারা ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে মাহিম আবার জিজ্ঞেস করলে বলে-

: হুম যাবো। অটো মামা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আসি।

: অটো মামা কি আপনার বর হয় নাকি শ্বশুর হয় যে দাঁড়িয়ে আছে?

সারা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই মাহিমের কথাটা বলা মাত্রই সারা ঘাড় বাকিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলে-

: জ্বি?

: না, মানে.. আপনি তো বললেন সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম যে শ্বশুর হয় নাকি বর হয়?

মাহিম সারা দিকে দুই কদম এগিয়ে কথাটা বললে সারা আবারও বিড়বিড় করে বলে-

: ব্যাপার কি? আজকে দেখি বাতাস অন্যদিকে বইছে। আমার বর আর শ্বশুর নিয়ে পড়লো।

মাহিমকে দুই হাত ভাজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সারা নাক টেনে বলে-

: জ্বি না! আমার জামাই লাগে!

সারা কথাটা শেষ করেই হনহন করে সেখান থেকে চলে যায়। রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে তো সে চলে এসেছে যে অটো মামা তার জামাই লাগে। কিন্তু একটা অটোও নেই রাস্তায়। হুট করে একটা অটোরিকশা খুঁজে পাওয়ায় তাড়াতাড়ি হাত দেখিয়ে ঠেকায় ঠিকই কিন্তু সে উল্টো দিকে যাবে না। হঠাৎ ওর চোখে পড়ে মাহিম পিছন থেকে গাড়ির ড্রাইভ করে সামনে আসছে। সারা এইবার চোখ মুখ লাল করে ঝাঝালো কন্ঠে বলে-

: আপনাকে যেতে হবে মানে যেতে হবে মামা! প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে ডাবল ভাড়া দিব তাও চলেন আপনি!

: মাফ কইরা দেন মামা। আপ্নে মোরে যদি দশগুণ ভাড়াও দেন তাও আমি উল্টো পথে যামু না। বাসায় আমার বউ আমার জন্য না খাইয়া বইসা আছে। আমি ওয়াদা করছি যে আমি হের লগে খামু। আমারে মাফ করেন মামা।

: আজকে যদি আমি আপনার বউ হতাম তাইলে কি আপ্নে আমারে রাইখা যাইতেন মামা?

: ছি: ছি: ! এডি কি কইতাছেন মামা আপ্নে? আপ্নে মাথা কি গেছে নাকি? আমার বউ শুনলে আমারে জীবনেও আর ঘরে ঢুকতে দিতো না।

অটোমামা কথাগুলো বলা শেষ করতেই সারা হুশ আসে সে একটু আগে কি বলে ফেলেছে। ওর যেন কথা বলাই বন্ধ হয়ে গেছে। ও এগুলো কিভাবে বলতে পারলো? এসব নানা চিন্তাই মাথা ভনভন করতে করতে সে হঠাৎ গাড়ির হর্ন বাজানো শব্দ শুনতে পায় সে দেখে মাহিম গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছে। সে আশেপাশে তাকাতেই মাহিম আরেকটু আজুনে ঘি ঢালার জন্য খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করে-

: আপনার অটোওয়ালা জামাই আপনার সতিনের কাছে চলে গেছে। আহারে শেষ পর্যন্ত আমাদের “টি-টেক” এর জুনিয়র অফিসারকে সতিনের ঘর করতে করছে। সো স্যাড! হাহ?

সারা যেন নিজের চুল এখন নিজের তো ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছেই পরক্ষণে হঠাৎ মনে হলো এমনিতেও চুল যে গণহারে ঝড়ে। এইবার যদি ওর ছিঁড়তে নেয় তাহলে টাকলু হয়ে যাবে। তাই ডিসিশন চেইঞ্জ করে এখন তার ইচ্ছে করছে মাহিমের চুলগুলো ধরে ছিঁড়তে। সারা আর কোনো কিছু না বলে চুপচাপ সামনে হেটে হেটে চলে যেতেই মাহিম এইবার গাড়ি থেকে নেমে সারা হাত ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে-

: গাড়িতে উঠো তিথি!

তিথি নামটা শুনে সারা চমকে যায়। সে নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে-

: তিথি কে? আমি সারা! আপনার মাথায় মনে হয় গন্ডগোল বেধেছে। কি সব বলছেন?

: আমি তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছি! একটা কথা আমি বারবার বলতে ইচ্ছুক। গেট ইনটু দ্য কার!

সারা মাহিমের রেগে যাওয়া দেখে পুরো চুপসে যায়। আস্তে আস্তে করে সারা গাড়িতে গিয়ে উঠে এবং মাহিমও তার পিছন পিছন যায়।
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-১৯

সন্ধ্যার দিকে ডিসচার্জ শীট নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরুতেই কালো বিড়ালের মতো পান্থ পথ আটকে দাঁড়াতে আমার কপালে কিঞ্চিত বিরক্তির ভাজ পড়ে। উনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিব তার আগেই আমার কলিজা যেন পানি হয়ে গিয়েছে। উনার চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছে জ্বলন্ত অগ্নি। এখুনিই আমাকে তিনি তার চোখ দিয়ে ভৎসনা করে দিবেন। রিন্তাও হসপিটাল থেকে বের হয়ে পেছন থেকে পান্থর কাছে আসতে নিলে পান্থ ওকে হাতের ইশারায় থামিয়ে বলে-

: রিন্তা তোমার সাথে আমার আগামীকাল কথা হবে। ইউ মে গো নাও।

পান্থ রুক্ষ ভাবে কথাটা বলায় রিন্তা আমার দিকে একবার তাকিয়ে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। পান্থ পুরো পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরে আমাকে উনার গাড়ির দিকে নিয়ে যান। আমি উনার এমন অদ্ভুদ ব্যবহারে যেন আকাশ থেকে জমিনে টপ করে পড়ে গেছি। উনি আমাকে উনার গাড়ির সামনে এনে হাত ছেড়ে দিয়ে অত্যন্ত শান্ত এবং শীতল কন্ঠে বলেন-

: গাড়িতে চুপচাপ উঠে গিয়ে বসুন। নাহলে হাত পা বেধে তুলতে বাধ্য হবো।

আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। পান্থ কথাগুলো এতোটাই শান্ত এবং শীতল কন্ঠে বলেন সেগুলো আমার জায়গায় অন্যকেউ যদি থাকতো তাহলে নির্ঘাত তার বিপি লো হয়ে যেত। এদিকে আমার কলিজা একটু আগে পানি হয়ে গিয়েছিল এখন সেই পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তাও অনেক সাহস জুগিয়ে বলি-

: হাত পা বেঁধে কি করবেন? উল্টো ঝুলিয়ে কি জঙলীদের মতো রান্না করবেন। এক কালে এক কার্টুনের দেখেছিলাম জঙ্গলে যদি কেউ হারিয়ে যেত সেখানকার মানুষগুলো ওরা ধরে নিয়ে গিয়ে স্যুপ রান্না করতো। হায় আল্লাহ এখন কি আপনি সেইটাই রান্না করবেন?!

পান্থ আমার কথাগুলো শুনে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আমি একটা শুকনো কাশি দিয়ে বলি-

: এখন কি চোখ দিয়ে গিলে খাবেন? এইভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন?

উনি আমার কথায় নিজের চেহারাটাকে স্বাভাবিক করে একটা গাম্ভীর্য ভাবে এনে বলেন-

: গাড়িতে উঠুন তরুনিমা। আপনি আপাতত আমার দায়িত্ব। কারন আপনি আমার হসপিটাল থেকে বেরিয়েছেন এবং আপনি কিছুটা দুর্বল। তাই আপনাকে আমি এইভাবে একা ছেড়ে দিতে পারি না। গাড়িতে উঠে বসুন প্লিজ! আই রিকুয়েস্ট ইউ, প্লিজ…

আজকে পান্থর কথা বলার ভঙ্গি দেখে অন্যরকম লাগছে। যদিও উনাকে খুব বেশি চিনি না আমি, আর না চিনতে চাই। তবে যতোটুকু উনাকে দেখেছি উনি যতোই স্ট্রেস এবং রেগে থাকুক না কেন উনার ঠোঁটের কোণায় সব সময় একটা হাসি বিরাজমান থাকে। কিন্তু আজ না আছে সেই হাসি আর না উনি আমার কোনো কথায় হাসছেন এবং প্রতিউত্তরে কিছু বলছেন। আমি কি আজে কোনো কারনে উনার এই অদ্ভুত আচরনের কারন? নিজের মাথায় নানা রকম আজগুবি চিন্তা আর প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। উনার কথামতো গাড়িতে উঠে গাড়ির সিটবেল্ট লাগিয়ে স্থিরভাবে বসতেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভ শুরু করেন।

পান্থ আর আমি পাশাপাশি সিটে বসে আছি। উনি পুরো রাস্তায় একটা কথাও বলেন নি। আর না বলেছি আমি। উনি একমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ যেন রাস্তা ফুরোচ্ছেই না আমার কাছে মনে হচ্ছে। বাসার থেকে কল আসেতি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বাবা বলেন-

: কোথায় তুমি তরু? দেরি হবে আজকে?

: না, বাবা। আমি রাস্তায়।

: তোমার কন্ঠ এমন লাগছে কেন? তুমি ঠিক আছো তরু?

আমি নিজের কন্ঠটাকে স্বাভাবিক রেখে যতোই কথা বলতে নেই না কেন বাবা সব বুঝেন। শুধু বাবাই না এই পৃথিবীতে সন্তানের কষ্টগুলো বাবা মাকে না বলতে চাইলেও তারা বুঝে যাবেন। তাদের কাছে কোনো কিছু লুকানো কষ্টসাধ্য। হয়তো সেইজন্য তারা বাবা-মা। বাবা এমন অস্থির ভাবে প্রশ্ন করায় আমি পান্থর দিকে একবার তাকিয়ে বাবাকে আশ্বস্ত করে বলি-

: আমি ঠিক আছে বাবা। তোমার মেয়ে পুরোপুরি সুস্থ আছে।

বাবা আমার কথায় স্বস্তি পেয়েছেন নাকি সেইটা বুঝলাম না। তবে বাবা সন্দেহভাজন কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন-

: তুমি খাবার খেয়েছো?

আমি ব্যাগের ভিতরেই টিফিন বক্সটা দেখে না খুলেই সকালে যেই খাবারটা টেবিলে দেখেছি সেইটাউপর আন্দাজ করেই বলি –

: হ্যাঁ খেয়েছি বাবা। এগ রোলটা ভালো ছিল।

বাবা আর কিছু না বলে ফোনটা টুস করে কেটে দিলেন। আমি বাবা হঠাৎ করে ফোনটা কেটে দেয়ায় কিছুই বুঝতে পারলাম না। মনে হলো বাবা বোধহয় আমার মিথ্যা কথাটা ধরে ফেলেছেন। আমি ব্যাগ থেকে বের করে বক্সটা খুলতেই দেখি একটা স্যান্ডুইচ রাখা। আর আমি বাবাকে বলেছি এগ রোল। এখন নিজের মাথায় নিয়ে বারি দিতে ইচ্ছে করছে। পান্থ গাড়ি ড্রাইভ করা অবস্থায় বলেন-

: মিথ্যে কথাটা না বলে, বলতেন যে দ্বিতীয় বার তোমার মেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে।

আমি উনার কথা শুনে রীতিমতো চমকে উঠি। দ্বিতীয় বার মানে? উনি কিভাবে জানেন যে এটা দ্বিতীয়বার? আচমকা গাড়ির ব্রেক কষতেই আমার কপালে হুট করে বিরক্তির রেখা স্পষ্ট ভেসে উঠে। উনি সামনের দিকে তাকিয়েই বলেন-

: কিছু স্বার্থপরের জন্য নিজেকে এইভাবে বিলীন করে দেয়া কোনো মহান কাজ নয়। পরিবর্তন হয়ে গেলেও কেউ জিজ্ঞেস করবে না আপনি কেন বদলে গেছেন? সবাই আপনাকে খুব ভালোবাসে আর সেজন্যই হয়তো আপনি এখনো বেঁচে আছেন। অপরের জন্য বাঁচতে বাঁচতে নিজের সত্তাটাকে আপনি বিলীন করে দিচ্ছেন। তাই বলছি অপরের সাথে সাথে নিজের জন্যও বাঁচতে শিখুন। নিজেকে সুযোগ দিন।

আমি পান্থর দিকে বাকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি। উনার কথায় আমি কোনো অভিমান দেখতে পারছি না, না পারছি কোনো অভিযোগ দেখতে। কিন্তু উনি একটা ছোট শ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন-

: আপনার বাড়ি চলে এসেছে। অন্তত নিজের খেয়ালটা রাখতে শিখুন মিস টুকটুকি।

উনি শেষের কথাটা বলার সময় না চাইতেও হাসি দিয়ে আমাকে বিদায় জানান। কিন্তু এই হাসিতে যে আমি একরাশ আভিমান আর অভিযোগ দেখতে পারছি আমার জন্যে। এমন চাহনি যেন আমার মনের ভিতর এক অদ্ভুত শিহরণের দোলা দিয়ে গেছে তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে তিনা যতো দ্রুত সম্ভব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যান।

——————————————————–

রিন্তা বাসায় এসে রীতিমতো কারো সাথে কোনো কথা না বলে হনহন করে নিজের ঘরের ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। মেয়ের এমন আচরন দেখে আসিফ শিকদার বিচলিত হয়ে পড়েন। তবুও চেহারায় তার ছাপ পড়তে দেন নি। আসিফ শিকদার যতোটা ভালো মানুষ ঠিক তার চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারেন যদি তার মেয়েকে জড়িয়ে কোনো কিছু ঘটে থাকে।আর তার মেয়ে যদি কোনো বিষয় নিয়ে অখুশি থাকে তাহলে অন্যকেউ সেখানে খুশি থাকবে সেটা তিনি বরদাস্ত করবেন না।

রিন্তা নিজের ঘরে প্রবেশ মাত্রই হাতে থাকা ব্যাগ ও ডাক্তারের সাদা এপ্রোনটা বিছানায় জোরে ছুড়ে ফেলে। ওর হুট করেই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণের আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। সে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে-

: এতো রাগ কেন হচ্ছে আমার? পান্থ আজকে তরু আপুর জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করলো। কে হয় এই তরুনিমা হাসনাত পান্থর? যার কারনে সে আমাকেও ইগনোর করতে রাজী। তরু আপু শুধু পান্থ ফ্রেন্ডের ননদই নয়, আরো বেশি কিছু। নইলে কখনো পান্থ আমার সাথে এমন করবে না। যাই হোক না কেন পান্থকে শুধু আমি ভালোবাসি। আর ওর সাথে আমি অন্যকাউকে সহ্য করতে পারবো না। কাউকে না!!

#চলবে____

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here