#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-২০
তিথি নিজের ফ্লাটে এসে ওয়াশরুমের শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ঝরনার পানির সাথে সাথে যেন তিথির চোখের পানিগুলোও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই চোখের পানি ওর কাছে এতো বছর পর নিজের প্রিয় মানুষটিকে ফিরে পাওয়ার খুশি কারন হবে নাকি সেই প্রিয় মানুষটির প্রতি জমে থাকা সব অভিমানের কারন হবে তা সে বুঝতে পারছে না। বারবার আজেকের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
কিছু ঘন্টা আগে,
মাহিম তিথিকে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও গাড়িতে উঠে ড্রাইভ শুরু করল। গাড়ি এতোটাই স্পিডে চলছিল যে তিথি অনেকটা ভয় পেয়ে গেল। তিথি চোখ খিচে জোরে চিৎকার দিয়ে গাড়ি থামাতে বলল। মাহিম তিথির চিৎকার শুনে অনেকটা জোরে গাড়ির ব্রেক কষে নিজের এক কান হাত রেখে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-
: এই তুমি কি! ষাঁড়ের মতো চিওকার করছো কেন?
: কিহ! আমি ষাঁড়? আপনি কি? মাথায় কি পুরো গোবর ভরা। মরার শখ হলে একা মরুন। সাথে আমাকেও মারার শখ নাকি? এতো জোরে কেউ গাড়ি ড্রাইভ করে। যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যেত তখন কি হতো?
: কি আর হতো তুমি আর আমি একসাথে কবরের যেতাম।
মাহিমের ভাবলেশহীন হয়ে কথাটা বলায় তিথি রেগে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে হাটা শুরু করল। মাহিম তিথির হাত ধরে বলল-
: এইবার আর ছেড়ে যেও না তিথি। অনেক তো এই লুকোচুরি খেলা।
তিথি একটা ছোট শ্বাস নিয়ে হাত ঝেরে পিছন ঘুরে ঝাঝালো কন্ঠে বলল-
: কে এই তিথি? আমি সারা! কেন বুঝতে চাইছেন না? শুধু তরু আপুর কথায় আমি আছি। নইলে আমার চাকরিতে আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না।
: কেন ইচ্ছে ছিল না আসার? কারনটা কি আমি? তুমি সারা নও তুমি তিথি। আর অফিসের ম্যানেজার সাহবে উনি আমাকে তোমার পুরো ডেটেইলস দিয়েছে। তুমি উনার রেফারেন্সে জব করছিলে এতোদিন। আর তোমার ডকুমেন্টস গুলো সব বানানো ছিল। কারন তুমি চাওনি যে তিথি হাসান নামে যেই মেয়েটা আছে তার অস্তিত্ব কেউ খুঁজে বের করুক! কেন তিথি? যখন তুমি আমাকে এখানের সিনিয়র কলিগ হিসেবে দেখলে তখনও তুমি চুপ ছিলে? তুমি একটা বারও আমার কাছে কোনো কিছু জানতে চাও নি কেন? পাঁচ বছরের জমে থাকা অভিমান অভিযোগ গুলো কেন চেপে রাখতে চাইছো? কেন নিজেকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছো আর সাথে আমাকেও?
সেদিন তরুনিমা মাহিমকে সবকিছু খুলে বলেছিল। মাহিম প্রথমে মেনে নিতে না চাইলেও সে পরে মানতে বাধ্য হয়। মাহিম এতোদিন চুপ ছিল যাতে সে তিথি একটু বুঝতে পারে। তিথিকে মাহিম জানার চেষ্টা করতে নিয়ে তিথির প্রতি মাহিমের আগের চেয়ে আরো বেশি অনুভূতিগুলো প্রখর আকার ধারন করতে শুরু করছিল। তাই আজ সবকিছুর বাধ ভাঙতেই সে চায়। তিথি এইবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগান্বিত স্বরে চেঁচিয়ে বলল-
: কষ্ট? অভিমান আর আভিযোগ? কিসের কষ্ট, কিসের অভিমান আর কিসের অভিযোগ? কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই আপনার প্রতি আমার। আমি তো আপনার কাছে বেশি কিছু চাইনি! সেদিন একটি বারের জন্য সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে আসলে কি বড্ড ক্ষতি হয়ে যেত? সেদিন বিকেল থেকে শুরু করে সারাটা সন্ধ্যে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি। আপনি আসেন নি। আমি তো বলেনি আমাকে আপনি ভালোবাসুন! আমি শুধু বলেছিলাম একবার দেখা করতে! এই সামান্য সময়টুকু কি সেদিন আমি পেতাম না?
মাহিম তিথির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তিথির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লে সে সেইটা হাতে উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নাক টেনে আবার বলল-
: আর কি বললেন? আপনাকে কষ্ট দিচ্ছি? আপাকে কষ্ট দেয়ার আমি কেউ না। আমি আমার মতো করে ভলো আছি। ভালোই হয়েছে সত্যিটা জেনে গেছেন। আমি সারা নই আমি তিথি হাসান। সেই তিথি হাসান যে কিনা এমন একজনকে ভালোবেসেছিল যার কাছে তার ভালোবাসার কোনো গুরুত্ব তো দূরের কথা সামান্য মানবিকতাও ছিল না! প্লিজ হাতজোর করে বলছি আমাকে আমার হালে ছেড়ে দিন। আমি আর কয়েকদিনের মেহমান এই শহরে। আপনি আপনার তো ভালো থাকুন এইটাই চাই। তরু আপু অনেক ভালো একটা মেয়ে। তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।
শেষের কথাগুলো মাহিমের যেন সহ্য হলো না। যেহেতু মাহিম অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তাই সেদিকের রাস্তা মানুষ কম বলা চলে। সে তিথিকে নিজের কাছে এনে এক হাত নিচে নামিয়ে ধরে রাখতে ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলে তিথি মাহিমের থেকে নিজেকে ছুটানো চেষ্টা করেও এই সুঠাম দেহের পুরুষের কাছে পারল না। মাহিম তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-
: আমাকে আমার মতো ভালো থাকতে বলছো তাই না? ঠিকাছে থাকবো আমি কিন্তু একা নয় দুজনে একসাথে থাকবো। তরুনিমা খুব ভালো মেয়ে ওকে ভালো রাখার কথা বলছো? একটা কথা আজকে ভালো করে জেনে রাখো তুমি আমি তোমাকে ভালোবাসি। যেদিন তোমার চিঠিটা আমার হাতে এসেছে সেদিন থেকে তোমাকে আমি ভালোবাসি। বিয়ে করতে হলে তোমাকেই করবো! মাহিম শাহরিয়ার ওয়াইফ যদি কাউকে হতে হয় তাহলে তিথি হাসানই হবে মিসেসে তিথি মাহিম শাহরিয়ার। বুঝতে পেরেছো?
দুজনের শরীর বেয়ে বৃষ্টির পানি অঝোরে পড়ছিল। তিথি একপানে মাহিমের দিকে তাকিয়ে ছিল। মাহিম তিথি দিকে ঝুকে স্নিগ্ধ শীতল কন্ঠে বলল-
: আর জেনে রেখো, তোমাকে এমন একজন ভালোবাসে যার সীমানায় অন্যকারো ভালোবাসার প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধুই তার সেই মানুষটির বিচরন থাকবে সেই স্থানে।
তিথি ওয়াশরুমের মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ে। সে যেন বুঝতেই পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে? সে হাঁপিয়ে উঠেছে। নিজেকে শান্ত করার বড্ড চেষ্টা করছে। “সত্যিই কি মাহিম ওকে ভালোবাসে? তা।লে এতোগুলো বছর কোথায় ছিল সে? কেন আসেনি? কেন? হাজরো প্রশ্ন ওর মস্তিষ্কে এসে ভিড় জমাচ্ছে। সে জোরে জোরে অনেকগুলো শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঠিক করে নেয় তা কি করা উচিত?
————————————————–
পান্থ কপালে হাত রেখে ঠেস বেডের সাথে ঠেস দিয়ে
আছে। মিসেস রুবিনা ছেলের কপাল থেকে হাত সরাতে নিলে পান্থ চমকে উঠে। তারপর নিজের মামনিকে দেখে শান্ত গলায় বলে-
: ওহ! মামনি তুমি। কিছু হয়েছে তোমার? ডিনারও করলে না। তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে অনেকটা চিন্তিত।
: কিছু হয় নি তো। আই এম ওকে।
পান্থ নিজের চেহারাটাকে স্বাভাবিক করতে যেয়ে ব্যর্থ হচ্ছে। মিসেস রুবিনা ছেলের মাথা আলতো করে হাত বুলিয়ে তার পাশে বসে বলেন-
: আমি তোমার মা বেটা! আমার থেকে কি লুকাতে চাইছো? কি হয়েছে বলো?
পান্থ একটা হাফ ছেড়ে অভিযোগ ভরা কন্ঠে বলে-
: নিজেকে সারাদিন তরুনিমা যতোটা স্ট্রণ দেখায় ততোটা সে নয় মামনি! আজকে দ্বিতীয়বার সে সেন্সলেস হয়ে প্রাইভেট কারের সাথে এক্সিডেন্ট করতে নিয়েছিল। প্রথমবার তো আমি ওকে বাঁচিয়েছিলাম। তবুও সে নিজেকে একটা বছর ধরে সামলে রেখেছে। কিন্তু দিনশেষে তরুর মাঝে একটা শূণ্যতা কাজ করে। কোথাও একটা চাপা কষ্ট আর আর্তনাদ লুকিয়ে রেখেছে সবার আড়ালে ও মামনি।আজ যদি সময় মতো রিন্তা না আসতো তাহলে আজ তরুনিমাকে হয়তো আবার হারিয়ে ফেলতাম। একবার ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম মামনি। আবার হারাতে চাই না।
এক বছর আগে পান্থই তরুনিভাকে সেদিন হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিন অনেকটাই নার্ভাস ছিল সে তবুও সাভনে আসতে চাইনি তরুনিমা। সময়ের অপেক্ষা করছিল সে। কিন্তু এইবার সে আর অপেক্ষা করতে চাইছে না। মিসেস রুবিনা অস্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন-
: কি করতে চাইছো তুমি, পান্থ? তুমি কি তরুনিমাকে…
মিসেস রুবিনা তার পুরো কথা শেষ করার আগেই পান্থ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
: হ্যাঁ আমি তরুনিমাকে বিয়ে করবো। তুমি বাবাকে আমার মতামত জানাও।
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা
পর্ব-২১
মাথায় টাওয়ালটা ভালোভাবে বেধে তিথি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ফোনটা বিছানায় খোঁজা শুরু করতে করতে পরক্ষণেই মনে হয় যে ও ওর ফোনটা ব্যাগেই রেখেছে। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তরুনিমার নম্বরে ডায়াল করে সে। কিন্তু তরুনিমার ফোন ধরছে না। প্রায় দশ পনেরো বারের মতো ফোন দেয়ার পর তরুনিমা ফোন ধরতেই তিথি কিছু বলার আগে তরুনিমা ওপাশ থেকে যা বলল তাতে আর তিথি কোনো কিছুই বলার ভাষা নেই। সে ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানার একপাশে রেখে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু। এতো বছর পর আজে সে কাদছে। আজকে ওর কান্নার বাধ যেন কেউ ধরে রাখতে পারবে না। ফাকা ঘরটা যেন আজ কারো তীব্র আর্তনাদের কেপে উঠেছে।
মাহিম বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তিথি আর মাহিম দুজনই আজ প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছে একসাথে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে তাদের মাঝে কোনো ভালোবাসা ছিল না, ছিল একরাশ অভিমান আর অভিযোগ। মাহিম এসব কিছু ভাবতে ভাবতে রাতের আবহাওয়া উপভোগ করছে। এটাকে ঠিক উপভোগ বলা চলে না তবে মাহিমের বারবার তিথির বলা কথাগুলো মনে পড়ছে। মাহিমের কপালে ভেজা চুলগুলো মৃদু হাওয়ায় এপাশ ওপাশ উড়ছে। মাহিম সেগুলোকে ঠিক করার কোনো চেষ্টা করছে না। তার অক্ষি কোটরে জমা হয়ে আছে অনেক জল। সেই জলগুলোকেও সে বেরোতে দিচ্ছে না।
: তুমি আমাকে ভালোবাসো তিথি। তুমি যতোবারই অস্বীকার করার চেষ্টা করবে তুমি পারবে না। হয়তো অনেক অভিমান জমে আছে তোমার আমার প্রতি। নয়তো এতোদিন নিজেকে আমার থেকে আড়াল করতে না। দুইটো বছর আড়ালে ভালোবেসেছিলে। আমার প্রতি তোমার ঘৃণা হলে আরও তিন বছর একা থাকতে পারতে না তুমি।
মাহিমের অক্ষি কোটর থেকে এবার জমে থাকা জলগুলো অশ্রু হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। মাহিম সেগুলোকে আর আটকায় না ঝড়তে দেয়। ছেলেদের চোখের জল সহজে ঝরে না। যারা কাউকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে একমাত্র সে মানুষগুলোর চোখে বেয়েই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মাহিম নাক টেনে কপালের চুলগুলো সরিয়ে তিথিকে ফোন দেয়। তিথি ফোনটা রিসিভ করে কিন্তু কোনো শব্দ নেই ওর মুখ চেপে কান্না করছে সে। কিন্তু মাহিমকে সেটা বুঝতে দেয় না সে। মাহিম অশ্রু ভেজা কন্ঠে বলে-
: তোমার আমার বিচ্ছেদের সময় অতি স্বল্প নয় তবে অতি দীর্ঘও ছিল না বটে। তোমার অভিমান আমি ভাঙাবো। এন্ড ইটস মাই ওপেন চ্যালেঞ্জ!
তিথি টুস করে ফোনটা কেটে দেয়। মাহিমের কথাগুলো ওর কোথায় গিয়ে লাগছে সেইটা তিথি কাউকে বুঝাতে পারবে না। তবে ওর যে আজকে কান্না থামছে না-
: কেন কান্না করছি এতো আমি? কেন? যে মানুষটির জন্য এতো বছর অপেক্ষা করে এসেছি আজ কেন পারছি তার কাছে ছুটে চলে যেতে? নিজেকে প্রকাশ করতেও পারিনি। মাহিমও তো কষ্টে পাচ্ছেন আমার জন্য। উনার গলার স্বরে স্পষ্ট কান্না জড়িত ছিল। কেন আমি সবকিছু ঠিক করতে পারছি না?
তিথি তাও হাউমাউ করে কেদে চলেছে। ওর এই আর্তনাদ ব্যাখ্যা দেয়াটা খুব কঠিন। কোনো জিনিস পাওয়ার পরও যখন আমরা সেটাকে মেনে নিতে পারি না তখন হয়তো বহিঃপ্রকাশটা মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুতই হয়। একসময় কাঁদতে কাঁদতে তিথি ঘুমিয়ে পড়ে।
মাহিম ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলল শুধু। সে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কষ্টের পরিসীমা খুব একটা দৈর্ঘ্যের না হওয়াটাই উত্তম। বৃষ্টির বড় বড় ফোটাযুক্ত জলের সাথে সব পুরোনো তিক্ততাগুলো বিলীন হয়ে যাবে। মাহিমের বিশ্বাস আগামীর নতুন ভোর নতুন কিছু বয়ে আনবে।
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে ব্যালকনির ডিভানের উপর আবিষ্কার করে পান্থ। গতকাল রাতে ডিভানেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। ডিভানে ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই যেন ধপ করে আবার ডিভানে বসে পড়ে পান্থ। সে নিজের শরীরের উপর যথেষ্ট জোর দিয়ে ডিভান ছেড়ে উঠে হসপিটালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
——————————————————————
গতকাল রাতে তিথির সাথে কথা বলে ওকে পুরো বিষয়টা জানালাম। মাহিম ভাইয়া ওকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলতে পারবে না সেইটা আমার খুব ভালো করে জানা হয়ে গেছে। তাই নিজেই সবকিছু খুলে বললাম তিথিকে। জানি না তিথি আদৌ সবকিছু মেনে নিবে কিনা? মাহিম ভাইয়ার সাথে তিথি অভিমান থাকলেও তা মিটে যাবে আর সেই কাজটি যে মাহিম ভাইয়াই করবে সেইটা বেশ বুঝতে পারছি আমি। শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রকৃতি আজকে অনেক ঠান্ডা। তবুও সূয্যি মামা মেঘের আড়াল থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছে। বাবা গতকালকের জন্য মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কিছু একটা করে বাসার পরিবেশটা ঠিক করতে হবে।
দুপুরের দিকেও আজকে হালকা গুড়িগুড়ি বষ্টি পড়ছে। যেহেতু আবহাওয়াটা অত্যন্ত শীতল এবং স্নিগ্ধ তাই আজকে বেশ গরম গরম ভুনা খিচুরি সাথে আলু ভাজি এবং বেগুন ভাজা রান্না করে টেবিলে রাখি। বাবা টিভিতে নিউজ দেখছে। আর আমার গুণধর ভাই অন্তু ঘোড়ার ডিমের পাবজি নিয়ে এই এদিকে বোম্ব মার, তোর পিছনে ওইযে ওইটা, হেন তেন ভাতের ফেন এগুলো বলছে আর গেমস খেলছে। ফোনটা আছাড় দিয়ে ভাঙতে খুব ইচ্ছে করে। বাবা এসব একদম পছন্দ করে না দেখে মিনমিন করে ভেজা বিড়ালের মতো কথা বলছে আর গেমস খেলছে। কিন্তু আমিও কম নই মীর জাফরের মতো বাবার কানে বাংলার নবাব থুক্কু ঘরের নবাবজাদা অন্তুর নামে দিলাম বিচার। বাবা যদিও আমার সাথে রেগে আছেন কিন্তু সেই রাগটা ঝাড়ার জন্য অন্তু সামনে পেয়েছেন। তাই এইবার অন্তুকে গিয়ে প্রায় দুচারটা ধমক দিয়ে আবার হাতে রিমোট নিয়ে বসে পড়েন। অন্তু আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ গরম করে ওকে খাবার টেবিলে বসতে বললে অন্তু আমার বলার আগেই ঘ্রাণে সে সুরসুর করে টেবিলে চলে গিয়েছে। প্লেটে রাক্ষসের মতো একগাদা খিচুরি আর বেগুন ভাজা আর আলু ভাজা তুলে নিতেই আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বলি-
: ভাই তুই কয়দিন ধরে খাছ না বলতো? নাকি যা খাওয়াই সব পেট ফুটো হয়ে যায়। এক প্লেটে দুইজন লোকের খাবার তুলছিস যে?
: এই আপু! খবরদার! আমার খাবারের দিকে নজর দিবে না। এগুলো তো কমই। আর কয়েকদিন পর তো ডায়েট করবোই।
আমি ওর কথা শুনে বলার মতো আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি। ওর দিকে নিজের চোখ দুটো গোল গোল করে তাকিয়ে বলি-
: তুই ডায়েট করবি? ডায়েট নামে যে কোনো শ্বদ তোর ডিকশনারীতে আছে নাকি তাও আমার সন্দেহ আছে। আগে দেখে নে তোর ডায়েট কোন বছরের কোন মাস তারিখ বছর থেকে? হুহ…!
অন্তু একটা ভেংচি কেটে টেবিলে চেয়ার টেনে খাওয়া শুরু করে। আমি বাবার জন্য বসে আছি। বাবা আমার দিকে একবার তাকিয়ে না তাকার ভান করে টিভিই দেখছেন। আমি চোখগুলো ছোট ছোট করে মায়ার্ত একটা চেহারা নিয়ে বাবার সামনে যেতে নিলেই হুট দরজায় বেল পড়ে। বাবার রাগ ভাঙাতে গিয়ে এবার নিজেরই রাগ উঠে যায় আমার। আমি পুরো চেহারায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই চোখদুটো যেন আমার ছানাবড়া হয়ে গেছে।
#চলবে____
(