#প্রিয়দর্শিনী
#সুমাইয়া_যোহা
অন্তিম পর্ব-৩৯
সফট পিংক কালারের মাঝে হোয়াইট স্টোনের কারুকার্য করা লেহেঙ্গা এবং সাথে ম্যাচিং গহনা পড়ে কনে সেজে আমি আর তিথি স্টেজে বসে আছি। বরপক্ষের সবাই উপস্থিত থাকলেও স্বয়ং দুই বর এখনো উপস্থিত না। হুট করে মিউজিক বেজে উঠায় সবাই খানিকটা চমকে গেলেন। তিথির হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে আমি সিড়ির দিকে তাকাতেই আমারও মুখটা ছোট করে হা হয়ে যায়। পান্থ আর মাহিম ভাইয়া মিউজিকের তালে তালে নেচে সিড়ি দিয়ে নামছেন। তারই সাথে সবাই যেন তালে তালে তাল দিয়ে নাচা শুরু করেন। পান্থ আজকে যেন প্রাণখুলে নাচছেন। উনাকে আমি এতোটা খুশি বোধহয় এর আগে কখনোই দেখিনি। স্টেজ থেকে তিথি আর আমাকে রিন্তা আর অন্তু টেনে নিয়ে গিয়ে তিথিকে মাহিম ভাইয়া আর আমাকে পান্থর সাথে দাড় করিয়ে নাচা শুরু করে। পান্থ আমাকে এক পলক দেখে থমকে যায়। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে-
: এতোটাও মায়াবী চোখে তাকিও না। নাহলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলব। রাত অবদি অপেক্ষা করতে পারবে না।
উনার এমন অসভ্যের মতো কথাটা বলায় আমার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। উনি যে আসলেই একটা বেহায়া আর নির্লজ্জ তা আবারও প্রমাণ করলেন।
সৃষ্টি একপাশে দাঁড়িয়ে সবার কান্ড দেখছে। সে তরুনিমার বিয়ে ভাঙতে চেয়ে পারেনি। কিন্তু সে হাল ছাড়বে না। সে তরুনিমার দিকে এগিয়ে যেতেই খপ করে সৃষ্টির হাত কেউ ধরতে সে চমকে উঠে। পিছু ফিরতে দেখে নুহাশ।
: অনেক হয়েছে তোমার এই প্রতিহিংসার খেলা। আজ আর নয়। কাম উইথ মি।
নুহাশ সৃষ্টিকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়। নাচানাচির পর্ব শেষ হলে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কবির হাসনাত নিজের মেয়েকে একজন সঠিক মানুষের সাথে বিয়ে দিতে পেরে তিনি আজ বড্ড খুশি। রুমাল দিয়ে চোখ মুছতেই আহসান শাহরিয়ার উনার কাধে হাত রেখে বলেন-
: চিন্তা করবেন না বেয়াই সাহেব। আপনার মেয়ে আমাদের ঘরে সুখী থাকবে। আমার আগে দুটো ছেলে এখন দুটো মেয়েও হবে। এক তিথি মামনি আরেক তরুনিমা মামনি। কি বলো রুবিনা?
রুবিনা শাহরিয়ার স্মিত হেসে বলেন-
: একদম ঠিক কথা। এতোদিন তো তোমাকে ঠিক করতে পারলাম না। এখন তোমার দুই মেয়ে তোমাকে ঠিক করবে। হেলথের যেই বারোটা বাজিয়ে রেখেছিলে। এবার ঠিক হবে।
রিন্তা একপাশে দাঁড়িয়ে বিয়ের কার্যক্রম দেখছে। অন্তু গলা খেকারি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বলে-
: ভালো আছেন মিস?
: খারাপ থাকার কথা নাকি?
: এতো তেরা তেরা কথা কেন বলেন বলুন তো? একটু সোজা করেই তো কথা বলতে পারেন।
: আপনি তো নিজেই তেরা সেজন্য আপনার সাথেও তেরাভাবে কথাই বলতে হয়।
: তা এই তেরা মানুষটাকে কি পছন্দ হয় না?
: জ্বি?
রিন্তা ভ্রু কুচকে তাকাতে অন্তু যেন কথা ঘুরিয়ে বলল-
: ওই যে বিয়ে প্রায় শেষের দিকে এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে চলুন।
রিন্তা অন্তু কথাটা বুঝতে পেরেও চুপ না বুঝে রইল। কারন তার এখন এসব বিষয়ে ভেবে দেখবার ইচ্ছে নেই। ভবিষ্যতে কি হবে তাও সে আপাতত ভাবতে চায় না। সে এখন শুধুই নিজেকে বুঝতে চায় জানতে চায়।
অবশেষে আমাদের বিয়ে আজ সম্পূর্ণ হলো। আবদ্ধ হলাম এক নতুন পবিত্র বন্ধনে। যে বন্ধনটা অন্য সব বন্ধনের থেকে আলাদা। চোখ বন্ধ করে একবার নিজের অতীতকে স্মরন হতেই চোখ খুলে পান্থর দিকে তাকালাম। একটা জিনিস প্রমাণিত হলো যে সবাই প্রতারক হয় না। প্রকৃত মানুষ হয়তো পান্থর নামের এই মানুষগুলোকে বলেই যারা নিজেদের কথা রাখতে জানে। প্রিয় মানুষকে দেয়া প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা করতে পিছপা হয় না।
——————————————————–
একটা প্লাজো আর টপস পড়ে বেডে উপর বসে পিজ্জা খাচ্ছে তিথি। সারাদিনের ধকলের পর বড্ড ক্ষুধা লেগেছে। মাহিম এই মাঝরাতে ওর জন্য পিজ্জা খুঁজে নিয়ে এসে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই দেখে তিথি পুরো পিজ্জা শেষ করে ফেলেছে। শুধু একটা পিজ্জার টুকরা রেখে দিয়েছে। মাহিম হাতের টাওয়ালটা সোফায় ফেলে দিয়ে বেডে উপর এসে বসে তিথির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। তিথি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে বলল-
: এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? এই যে নাও পিজ্জা। তোমার জন্য বাচিয়ে রেখেছি।
: এহহ.. আমার জন্য বাচিয়ে রেখেছো! খেতে পারছো না দেখে এইটা রেখে দিয়েছো। রাক্ষসী একটা!
: কি আমি রাক্ষসী? খাওয়া লাগবে না তোমার পিজ্জা। আমিই খাবো! হুহ! ঘুমও পেয়েছে রে বাবা।
তিথি পিজ্জা খাওয়া শেষ করে নিজের মতো কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পর। মাহিম তিথি এমন কান্ড রাগে দুঃখে মেজাজ খারাপ করে বেড থেকে উঠে যেতে যেতে বলে-
: খুব ভালো, ঘুমাও তুমি। নিজের বরের জন্যও কোনা মায়া নেই। ধুর….
মাহিম সোফায় গিয়ে বসতে নিলে তিথি পিছন থেকে মাহিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খায় মাহিম। তিথি শান্ত এবং নরম সুরে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে বলে-
: যেই মানুষটার ভালোবাসার মায়ায় আবদ্ধ ছিলাম আমি। তার প্রতি মায়া থাকবে না? উহু… এই মানুষটার প্রতিই আমার সবচেয়ে বেশি মায়া আর একেই নিয়েই আমার সব পূর্ণতা।
তিথি কথা শুনে মাহিমের মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠে। মাহিম তিথির দিকে ঘুরতেই তিথি মাহিমকে নিয়ে বেডে বসিয়ে একটা প্লেটে করে তিন পিস পিজ্জা নিয়ে আসে। মাহিম পিজ্জা দেখে তিথির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে তিথি এক হাত কোমরে গুজে দিয়ে বলল-
: নিজের বরের জন্য না রেখে একা একা খেয়ে নিব এতো বড় রাক্ষসী আমি না। হুহ..
তিথি মুখ বাকিয়ে কথাটা বললে মাহিম ফিক করে হেসে দেয়। হারিয়ে যায় এক অন্য সুখে ভুবনে।
ব্যালকনির ডিভানে মোটা ব্ল্যানকেট জড়িয়ে দুজনই বসে বসে রাতে আকাশ দেখছি। তার সাথে আশেপাশে বইছে ফুরফুরে মৃদু মিষ্টি বাতাস। নিজেকে পান্থর কাছে আরো খানিকটা গুটিশুটি মেরে নিলাম। পান্থ আমাকে আকড়ে ধরে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। হুট করে উনার মাথা কি এলো জানি না। উনি ব্ল্যানকেট সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। সেই সাথে পান্থ আমার হাত ধরে ডিভান থেকে নামিয়ে আমার মুখশ্রীর দিকে নিজের মুখশ্রী নামিয়ে শীতল কন্ঠে বলেন-
: আমি আজ নির্দ্ধিধায় বলতে পারি তুমি দ্বিতীয়বার ভুল করোনি এই মানুষটাকে বাছাই করে। তুমি এবার জিতে গেছো তরুনিমা। তুমি হেরে যাও নি। তোমার বিশ্বাসও জিতে গেছে এবার। সে সাথে জিতেছি আমি।
উনি আমার চোখে চোখ রেখে কপালে পরে থাকা চুলগুলোকে কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বললেন-
: তুমি আমার প্রেয়সী, তুমি আমার প্রিয়দর্শিনী। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি!! আজ থেকে আমার ভালোবাসায় এবং আমার জীবনে শুধু আমার প্রিয়দর্শিনীর অধিকার থাকবে।
পান্থর প্রতিটা কথা আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরনের দোলা বয়ে নিয়ে চলে গেল। এই অনুভূতিটা ওর প্রতি আমাকে আরো মুগ্ধ করে তুলছে। উনার নেশার্ত চোখের সেই মায়াবী জালে যেন আস্তে আস্তে আমি ডুব দিতে চলেছি। যেখানে রয়েছে তার #প্রিয়দর্শিনী নামক এক রমনীর জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা আর সুখ।
~সমাপ্ত~
( অবশেষে গল্পটি শেষ হলো। নিয়মিত আপনাদের কথামতো গল্পও দিতে পারিনি অনেক সময়। তাও আপানাদের থেকে যথেষ্ট ভালোবাসা পেয়েছি। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। জানি না কতোটুকু আপনাদের আশান্বিত করতে পেরেছি। তবে অনুগ্রহ রইল আজকে আপনাদের নিকট থেকে গল্প সম্পর্কে কিছু মতামত তো পেতেই পারি, তাহলে আমার পরিশ্রমটা কিছুটা হলেও সার্থক হবে। আর যেহেতু বাস্তবিকতা ও কাল্পনিকতার সংমিশ্রনে গল্পটি সাজানো ছিল সেহেতু ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর সামনে আদৌ ধারাবাহিক গল্প দিতে পারবো কিনা জানি না তবে অনুগল্প লিখবো আপনাদের জন্য। ভালো থাকবেন সবাই। গুড লাক।)