অন্তর্লীন প্রণয় ২৯+৩০ ও অন্তিম পর্ব

শেষ পর্বটা আজ রাতে এখানে এডিট করে দেব। একটু সমস্যার কারণে এখন পাচ্ছেন না রাতের অপেক্ষা করুন।আর প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেল এবং সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান। প্রতিদিন নতুন গল্প গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হবে…. এবং তা গল্পের শহর চ্যানেলের community তে শেয়ার করা হবে….

রাতেই দিলাম….প্রতিদিন এখানেই এডিট করে দেব আরো পর্ব তাই পড়তে এখানে চেক করবেন

#অন্তর্লীন_প্রণয়
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
পর্ব-২৯

পরবর্তী দিন ভোরে সেন্স আসে আয়ন্তিকার।নেত্রপল্লব টেনে খুলে আয়ন্তিকা পেট ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করার মতো অবস্থা। ডানে দৃষ্টি দিতেই দৃশ্যমান হয় অহর্নিশ কে। মেয়েকে কোলে নিয়ে তখন সে ব্যাস্ত ছিলো নানার কথার মধ্যিতে। আয়ন্তিকা গলার স্বর তীব্র করে অহর্নিশ কে দু’বার ডাকে। কিন্তু অহর্নিশ একবারও তাকায় না তার দিকে ফিরে। অভিমান হয় আয়ন্তিকার! অভিমানে নেত্রে এসে জমেছে অশ্রুকণা। ইচ্ছে হলে এখনই সে চুপ হয়ে যেতো কিন্তু তার এই মূর্হতে বাচ্চাদের ছুঁয়ে দেয়ার তীব্র বাসনা জেগেছে। তাই আরেকবার দূর্বল গলায় উঁচু কন্ঠে ডাক দেয় অহর্নিশ কে।

অহর্নিশ তৎক্ষনাৎ সামনে ঘাড় বাকিয়ে তাকায়। আয়ন্তিকার নেত্রপল্লব উন্মুক্ত দেখে সে নিভৃতে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করে। মেয়েকে কোলে নিয়েই অহর্নিশ আয়ন্তিকা নিকট এগিয়ে যায়। বেডের সাইডে দাঁড়িয়ে মৃদু হেঁসে বলল,

‘ ফাইনালি জ্ঞান ফিরেছে তোমার। আলহামদুলিল্লাহ কেমন লাগছে এখন?পেটে ব্যাথা করছে?কোথায় যন্ত্রণা করছে?ঠিক আছো তো?’

অহর্নিশের করা এতো এতো প্রশ্নের একটারও প্রতুত্তর করলো না আয়ন্তিকা। সে অভিমান করেছে বড্ড, অহর্নিশের ওপর! থমথমে কন্ঠে সে অধরের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করে বলল,

‘ আমি বাচ্চাদের দেখতে চাই। ‘

অহর্নিশ অসন্তুষ্ট হেঁসে মেয়েকে আয়ন্তিকার পাশে শুইয়ে দেয়। পরিশেষে পদচারণ করে নিয়ে আসে ছেলেকে। তাকেও আয়ন্তিকার পাশে শুইয়ে দিয়ে অহর্নিশ পাশে একটা টুল টেনে নিয়ে বসে পড়ে। অতঃপর নম্র কন্ঠে বলে,

‘ আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলেনা যে?’

আয়ন্তিকা ছেলে, মেয়ের গালে, হাতে আদুরে স্পর্শ দিয়ে বলল,

‘ দিতে বাধ্য নই! ‘

অহর্নিশ ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। তার বোধগম্য হয়ে গিয়েছে আয়ন্তিকা নিশ্চিত কোনো ব্যাপার নিয়ে তার ওপর অভিমান করেছে। এই মেয়েটা বড্ড অভিমানী! অল্প কিছুতে যেমন কেঁদে আকুল হয়ে উঠে। তেমনি সামান্য ব্যাপার নিয়ে অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এই ব্যাপারটা অহর্নিশের কাছে মোটেও ভালো লাগেনা। বরং রাগ লাগো তার, আর দশটা প্রেমিকের মতো সে না যে প্রেমিকার সব ধরনের ব্যাবহার সে নরমালি নিবে!ভালোবাসবে, আয়ন্তিকা তার সাথে যখন এমন ব্যাবহার দেখায় তখন তার ইচ্ছে হয়ে এই মেয়েকে ধরে তুলে আছাড় দিতে।

নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে অহর্নিশ ফের বলল,

‘ আমি কি কিছু করেছি আয়ন্তিকা? কথা বলছো না কেনো আমার সাথে?’

আয়ন্তিকা এবারও প্রতুত্তর করলো না। সে ব্যাস্ত বাচ্চাদের চুমু খেতে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকছে আবার কিছুক্ষণ আদুরে ভাব নিয়ে চুমু খাচ্ছে। বাচ্চাগুলো হয়েছে একটু বেশিই কিউট। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। আয়ন্তিকা ভেবে পায়না তার মতো শ্যামলা মেয়ের এমন সাদা ধবধবে দুটো কিউট বাচ্চা হলো কি করে?পরক্ষণেই অহর্নিশ এর কথা মনে পড়তে তার কাছে স্বচ্ছ হলো ব্যাপারটি। তার ছেলে – মেয়ে তাদের বাবার মতোই হয়েছে। অতিরিক্ত সুন্দর, অতিরিক্ত কিউট!

অহর্নিশ ধৈর্য রাখতে পারে না।হাস ফাঁস করা শেষে রুষ্ট কন্ঠে বলল,

‘ এই তুমি কি কথা বলবে? ‘

আয়ন্তিকা কেঁপে ওঠে খানিকটা। সাথে তার ঘুমন্ত রাজকন্যা ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দেয়। চোখ দু’টো গরম করে তাকাতেই অহর্নিশ আমতা আমতা করলো। তবে সে দমে না গিয়ে বলল,

‘ এভাবে তাকাচ্ছো কেনো আজব?দোষ তো তোমারই! একটু রিপ্লাই করলে কি আমি অতো জোরে চিল্লিয়ে উঠতাম বলো? কথা বলো আয়ন্তিকা প্লিজ! দেখো কতোটা সময় আমি তোমার গালে একটু আদুরে স্পর্শ দেইনি! কাছে টেনে নিয়ে তোমার চুলের ঘ্রাণ নেইনি! হাতের আঙুলে চুমু খাইনি। তুমি বুঝতে পারছো আমার অবস্থাটা?একটু কথা বল! এমন থম মেরে বসে থাকলে আমি আমার কাজ করতে পারবো না তো। ‘

আয়ন্তিকা মেয়ের কান্না থামিয়ে ওকে পাশে শুইয়ে দেয়। হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে সটান হয়ে বসে। কিছু সময় পার হওয়ার পর সে অভিমানী কন্ঠে বলল,

‘ আপনাকে কতোবার আমি বলেছিলাম আমার সাথে থাকতে। ডাক্তার অনুমতি পর্যন্ত দিয়েছিলো আপনি আসেননি কেনো?’

অহর্নিশ নতজানু হয়ে ঠোঁট কামড়ে লাজুক রূপে রূপান্তর হয়! পরিশেষে সে মাথা উঁচু করে বলল,

‘ নিজের চোখের সামনে তোমাকে কাটা ছেড়া করা দেখতে পারবো না আমি। আর না তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারতাম! তাছাড়া… ‘

‘ তাছাড়া?’

‘ আমি রক্ত, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট ভয় পাই। ‘

আয়ন্তিকা সেকেন্ড খানিক বাকরুদ্ধ রইল। অতঃপর শব্দ করে হেঁসে দেয় সে। হাসতো হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা তার। তবে পেটের দিকে খানিকটা ব্যাথা অনুভূত হতেই সে থেমে যায়। কিন্তু এখনও সে নিঃশব্দে হাসছে। হাস্যরত মুখেই বলল,

‘ সিরিয়াসলি? আপনাকে তো আমি সাহসী মনে করতাম। ছিহ্! এমপি সাহেবের এই হাল তলে তলে?’

অহর্নিশ চোখ পাকিয়ে বলল,

‘ এই টপিক এখানেই অফ! চুপ! ‘

আয়ন্তিকা চুপ হয়ে যায়। মৌন রূপে থাকাকালীন এক সময় সে উৎসাহ নিয়ে বলল,

‘ ছেলে – মেয়ের নাম কি রাখবেন ঠিক করেছেন?’

‘ উঁহু! তুমি ঠিক করো। ‘

‘ তা কি করে হয়?আপনি বাবা আপনার ও তো একটা অধিকার আছে তাই না?’

‘ তাহলে তুমি ছেলের নাম ঠিক করো! আমি মেয়ের নাম দেখি। ‘

‘ ওকে! কয়েক মিনিট পর বলছি। দু’জন একসাথে বলবো। ‘

দু’জন একসাথে মৌন রূপে চলে যায়। কয়েক মিনিট পর আয়ন্তিকা বলে উঠলো,

‘ আমার নাম ভাবা হয়ে গিয়েছে। ‘

অহর্নিশ ম্লান হেঁসে বলল, ‘ আমারও! ‘

‘ ফার্স্টে আপনি বলুন। ‘

‘ আমাদের মেয়ের নাম হবে তোমার নামের সাইরিশ থেকে সাঈশা! সাঈশা আহমেদ ! কেমন হয়েছে? ‘

আয়ন্তিকা গমগম সুরে বলল, ‘ খুব বেশি সুন্দর। ‘

‘ ছেলের নাম কি রাখলে?’

‘ ফারদিন আনাফ ‘

অহর্নিশ ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে তার নাম উচ্চারণ করলো। অহর্নিশের কেনো যেনো মনে হলো তার ছেলে নাম শোনামাত্র হালকা ঠোঁট যুগল প্রসারিত করেছে। যার মানে অহর্নিশ ধরে নিয়েছে তার ছেলে একটু হেঁসেছে।

খানিক বাদে আগমন ঘটে অহনা, ইমান এবং আয়ন্তিকার বাবা মার! একে একে সবাই বাচ্চাদের কোলে তুলে নিয়ে একে একে আদরের বাহার খুলে বসলো। অহর্নিশ, আয়ন্তিকা মুগ্ধ চোখে তা দেখলো। এরই মাঝে টুপ করে অহর্নিশ আয়ন্তিকার ললাটে তার অধরের স্পর্শ মিলিয়ে দিয়েছে। আয়ন্তি তেমন রাগ দেখায়নি এতে! চুপ ছিলো পুরোপুরি!

___________________________

কয়েকদিন পর আয়ন্তিকা কিছুটা সুস্থ হলে হসপিটাল থেকে রিলিজ পায়! আজ তিনদিন হলো সে বাসায়। পুরো দিন তার আনাফ, সাঈশার পিছে ব্যায় হয় তার! অহর্নিশের দিকে বিন্দুমাত্র নজর দেয়ার সময় নেই। এতে অহর্নিশ ভিষণ ক্ষুব্ধ! সে পারে না আয়ন্তিকা কে নিয়ে কোথাও দূরে চলে যায়। আয়ন্তিকা এখন শুধু আনাফ, সাঈশা! আনাফ, সাঈশা করেই পার করে দেয়। অহর্নিশ কে দেখার সময় কই তার?

রাত আটটা!
অহর্নিশ রুমে পায়চারি করছে অস্থিরভাবে। আয়ন্তিকা কে আজ এক নজরও দেখা হয়নি তার। মেয়েটাকে ধরে কেলানি দিতে পারলে বুঝি ভালো হতো। অহর্নিশ কে ইগনোর করা?হুহ্!

অবশেষে রাত একটার দিকে রুমে আসে আয়ন্তিকা। ক্লান্তি সর্ব মুখশ্রীতে এঁটে সেঁটে আছে। তা দেখে অহর্নিশ মন গলে পানি হয়ে যায়। সে মনে মনে এঁটে নিয়েছিলো আয়ন্তিকা রুমে আসলেই ইচ্ছে মতো বকবে! কিন্তু আয়ন্তিকার হাল দেখে তার খারাপ লাগে। মেয়েটা সারাদিন কতো খাটুনিই না করে। সে তো সারাদিন বাহিরে থাকে। কিন্তু আয়ন্তিকা কে দুই বাচ্চাকে সামলাতে হয়, সংসারের সব কাজ করতে হয়, পড়াশোনায় টাইম দিতে হয়, অহনা, ইমানের আদেশ মানতে হয়! ইশশ! কতো চাপ যাচ্ছে মেয়েটার ওপর। একবারও তো অহর্নিশ এটা ভেবেই দেখেনি।

আয়ন্তিকা সাঈশা কে বিছানায় ঠিকঠাক শুইয়ে দিয়ে দুপাশে কোলবালিশ রেখে দেয়। আনাফ অহনার কাছে! সেখানেই ঘুমাবে। দু’জন কে রাখা আয়ন্তিকার পক্ষে সম্ভব না। অহর্নিশ তো ঘুমালে তার দিন – দুনিয়ার কোনো ঠিক থাকেনা। সে বাচ্চাদের দেখবে কি করে?

অহর্নিশ ছটফট করার এক পর্যায়ে বলল,

‘ আয়ন্তিকা?’

আয়ন্তিকা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘ কিছু বলতে চান?’

‘ হু! সাঈশাকে শুইয়ে দিয়েছো না? আর কোনো কাজ থাকলে শেষ করে বারান্দায় আসো। আমি অপেক্ষা করছি। ‘

‘ ঠিক আছে। আপনি যান আমি আসছি! ‘

ক্ষনিক পর আয়ন্তিকা এসে দাঁড়ায় অহর্নিশ এর পাশে। অহর্নিশ তখন বাহিরে দৃষ্টি আবদ্ধ করে পরিবেশ দেখতে মত্ত ছিলো। কারো অবস্থান টের পেয়ে সে বুঝতে পারলো আয়ন্তিকা এসেছে। চট করে ঘাড় বাকিয়ে সে ডানে তাকায়। আয়ন্তিকা তা দেখে বলল,

‘ কি বলবেন?’

অহর্নিশ কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আয়ন্তিকা কে পর্যবেক্ষণ করলো। অতঃপর অদ্ভুত হেঁসে বলল,

‘ সাঈশা, আনাফ হওয়ার পর শুকিয়ে তো কাঠ হয়ে গেছো। বাচ্চারা বড় হলে তোমার হাড্ডি গুনতে পারতো। ‘

এতটুকু বলে থেমে অহর্নিশ আয়ন্তিকার কর্ণধারে ফিসফিস করে কিছু বলল। উক্ত কথা শুনে আয়ন্তিকা তৎক্ষনাৎ লজ্জায় মিইয়ে যায়। খানিক বাদে বলল,

‘ যাহ্ অসভ্য! যত্তসব ফাউল কথা। ‘

অহর্নিশ স্ব- শব্দে হেঁসে বলল, ‘ এটাই সিরিয়াস কথা। ‘

অতঃপর মৌনতা..!
আয়ন্তিকা বাহিরে দৃষ্টি দেয়। ঠিক তখনি অহর্নিশ তার পিছন গিয়ে দাঁড়িয়ে আলত করে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। আয়ন্তিকা কেঁপে ওঠে কিছুটা। অহর্নিশ শীতল কন্ঠে বলল,

‘ আমার জীবনটাকে পূর্ণতা দান করার জন্য ধন্যবাদ আয়ন্তিকা। বিশেষ বিশেষ ধন্যবাদ! আমি তোমার নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো আজীবন।’

আয়ন্তিকা তপ্তশ্বাস ফেলে একটু হাসলো। অহর্নিশ তা দেখে ফের বলল,

‘ আমার সামনে হেঁসোনা তো আর কখনো। ‘

আয়ন্তিকা চমকে বলল, ‘ কেনো?’

‘ তুমি হাসলে গালদুটো কেমন ফুলে ওঠে। তখন ইচ্ছে করে টুস করে কামড় বসিয়ে দিতে। নয়তো আস্ত গালটাই গিলে ফেলতে! তোমার গালদুটো হাসলে আমার কাছে আপেলের মতো দেখতে লাগে। ‘

আয়ন্তিকা বিরক্ত সুরে বলল, ‘ আপনি যে পাগল জানেন? পাবনায় এডমিট করালে ডাক্তাররা নিশ্চিত আপনার উদ্ভট কথা শুনে তারা নিজেরাই পাগল হয়ে যেতো। ‘

অহর্নিশ কিছু বলল না আয়ন্তিকার কথার পরিপ্রেক্ষিতে। সে সরে দাঁড়ালো। চোখ বন্ধ করে নিয়ে ব্যস্ত হলো কিছু মূর্হতের ছবি আঁকতে নিভৃতে! দেখা গেলো তারা একে দিলো আয়ন্তিকার ছবি। নাহ! সে কখনোই বলতে পারবে না আয়ন্তিকা কে নিজের ভালোবাসার কথাটি।

#অন্তর্লীন_প্রণয়
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
পর্ব-৩০ [অন্তিম]

আজ প্রায় কয়েকবছর পর মাহির ফোন দিয়েছিলো অহর্নিশ কে। ফোন দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিয়ে মাহির একটা ম্যাসেজ দিয়েছিলো তাকে। ম্যাসেজটা বড্ড অদ্ভুত লাগে অহর্নিশের নিকট! সেদিন মাহির আয়ন্তিকার সাথে সাক্ষাৎ করে যাওয়ার পর তার কোনো হদিস পায়নি অহর্নিশ। চেষ্টা করেছিলো খুঁজে বের করার কিন্তু ফলাফল শূন্য! দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো সে।

অহর্নিশ ছটফট করছে ম্যাসেজটা পড়ার পর মূর্হতে। বারংবার সামনের দিকে তাকাচ্ছে! অপেক্ষার প্রহর গুনছে আয়ন্তিকা কখন আসবে?কখন তার এই ছটফটানি, অস্থিরতা খানিকটা দমে যাবে? পরিশেষে ক্ষনিক পর আয়ন্তিকা ওয়াশরুম হতে সিক্ত কেশগুলো আলত হাতে মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে। অহর্নিশ এক মূর্হত বিলম্বিত না করে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে আয়ন্তিকার সন্নিকটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে! শুষ্ক অধরে সিক্ততা পূর্ণ করে অস্থির হয়ে উঠে বলে,

‘ আয়ন্তিকা! গত কয়েকবছর আগে মাহির ঠিক তোমাকে কি বলেছিলো? ‘

প্রশ্নটা শ্রবণ করার পর আয়ন্তিকার মুখশ্রী কেমন থমথমে রূপ ধারণ করে। হাতের তোয়ালে বা পাশে রেখে দিয়ে সে নতজানু হয়! প্রতুত্তর করতে ইচ্ছে করছে না তার। কিছু কথা গোপন থাকলে কি খুব বেশি দোষ হয়ে যাবে?
আয়ন্তিকা মিনমিন সুরে বলল,

‘ না বললে কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে?আমি এ বিষয়ে বলতে চাচ্ছিনা। ‘

অহর্নিশ দম ফেলে বলল,

‘ দেখো আয়ন্তিকা, এই প্রশ্নটা আমি তখনই করতাম কিন্তু শুধুমাত্র তোমার মানষিক অবস্থার জন্য আমি সেই কথাটা জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু এখন আমার জানা প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন! প্লিজ স্পিক আপ!’

আয়ন্তিকা ডানে, বামে তাকায়। অস্বস্তি হচ্ছে! তবে পরক্ষণেই কিছু ভেবে নিয়ে সে ধাতস্থ হয়। লম্বা শ্বাস ফেলে সে বলল,

‘ আপনি আমায় একটা এগ্রিমেন্ট এর ওপর ভিত্তি করে বিয়ে করেছেন। মাহির ভাইয়ার সাথে এগ্রিমেন্ট করে! এটা ছিলো দ্বিতীয় কারণ আমায় আপনার বিয়ে করার। তিনি সেটা আমাকে বলেছিলেন। আসলে এই এগ্রিমেন্ট! মাহির ভাইয়ার আমায় পছন্দ হওয়া সব ফাঁদ ছিলো। আপনার মায়ের স্বভাবের কারণে আপনি কোনো মেয়েদের পছন্দ করতেন না। সুযোগ পেলে যেকোনো মেয়েকে নিজের মায়ের মতো মনে করে অপমান করেন। তাই আপনার আব্বু এবং মাহির ভাইয়া এই বুদ্ধি এঁটেছিলো। এগুলো সব প্লান করা ছিলো। মাহির ভাইয়া আমাকে নিজের বোনের মতোই দেখতো। এগ্রিমেন্ট করেছে শুধুমাত্র আপনি যাতে আমায় বিয়ে করেন। মেয়েদের প্রতি আপনার ভুল ধারণা পাল্টে যায়। মাহির ভাইয়া সেদিন তাই বলেছিলেন আমায়! ‘

অহর্নিশ বিষ্ফোরিত চাহনি নিক্ষেপ করে আয়ন্তিকার পানে! অবলোকন করে পুরো দমে তাকে। আয়ন্তিকার বলা বর্তমান কথাটি তার ঠিক হজম হয়নি। অহর্নিশ কোনোমতে বলল,

‘ এতকিছু ঘটে গেছে আমার পিছনে আর আমি জানিই না। গড! কি সাংঘাতিক! ‘

অহর্নিশের হাল দেখে আয়ন্তিকা মৃদু হাসে। নত হয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ মাফ করবেন। মাহিরের বলা পুরো কথাটা আপনাকে বলা সম্ভব না। আপনি আল্লাহর দেয়া আমার জন্য এক বিশেষ উপহার। আপনাকে হারাতে চাইনা আমি। ‘

অহর্নিশ ফের বলল,

‘ সাঈশা, আনাফ কই?’

‘ আম্মুর কাছে। আমি যাচ্ছি! ওদের খাওয়াতে হবে।’

‘ আচ্ছা যাও! খাওয়ানো শেষ হলে নিয়ে এসো। সকাল থেকে দেখিনা ওদের। ‘

আয়ন্তিকা ইশারায় ‘ আচ্ছা ‘ বলে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। তার কষ্ট হচ্ছে প্রবল অহর্নিশ কে পুরো ঘটনা, পুরো কথাটা জানাতে না পারার জন্য। তবে কিছু বিষয় গোপন রেখে যদি প্রিয়জনকে আগলে রাখা যায় তাহলে তা অন্তর্লীনে রাখাই শ্রেয়।

আয়ন্তিকা যেতেই অহর্নিশ মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়ে। সবকিছু কেমন ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে। কিছু তো আছে যা অহর্নিশের এখনো অজানা! অগোচরে ঘটে যাচ্ছে। ফোন বের করে ফের ম্যাসেজটি নেত্র সম্মুখে তুলে ধরলো সে! মাহিরের প্রেরিত ম্যাসেজটি ছিলো অনেকাংশ এমন,

‘ সুখে আছিস আমার আকাঙ্খিত জিনিস নিয়ে? কেমন আছে আয়ন্তিকা? দেখে রাখিস ওকে! আই হোপ আয়ন্তিকা তোকে সবকিছু বলেছে যা আমি সেদিন বলে গিয়েছিলাম। তোর কাঙ্ক্ষিত মানুষ আমারই ছিলো! তবে কাগজে কলমে! মন – দেহে সে তোর।ভুলবশত আমার সাথে তার পূর্ণতা মিলে গিয়েছিলো, তবে পুরোপুরি আজ তোকেই দিলাম। আয়ন্তি কে কখনো কষ্ট দিবিনা। উপরোক্ত কথাগুলো নিয়ে মাথা ঘামাস না। মেঘের আড়ালে সূর্যের থেকে সম্মুখে থাকা সূর্যটাই বেশি সুন্দর হয়! ‘

এতটুকুই ম্যাসেজ!
কিছু কথা স্পষ্টত বুঝতে পারলেও আবার কিছু কথা অহর্নিশের বোধগম্য হয়নি একটুও। তবে মাথা ঘামালো না সে। আয়ন্তিকার ওপর তার পূর্ণরূপে আস্থা আছে। সুঠাম দেহ,ক্লান্ততায় পরিপূর্ণ! চট করে দেহ এলিয়ে দেয় সে বিছানায়। চোখদুটো আঠালো রূপে লেগে আসতে চাইছে। বাধা প্রদান করে না অহর্নিশ। একটু ঘুম আবশ্যক বড্ড!

.

সাঈশাকে অহনার কাছে রেখে আনাফকে কোলে তুলে আয়ন্তিকা রুমে আসে! অহর্নিশ কে বিছানায় ঘুমন্ত দেখে ম্লা হাসে! আনাফকে সে অহর্নিশের পাশে ঠিকঠাক মতোন শুইয়ে দিয়ে দু-পাশে বালিশ দিয়ে অহর্নিশের নিকট এগিয়ে আসে। গালে টুপ করে অধরের স্পর্শ মিলিয়ে দিয়ে খানিকক্ষন মৌন রূপে দাঁড়ায় সে। স্নিগ্ধতার মাঝেই হুট করে মলিনতা এসে ভর করলো যেনো। কাবার্ডের কাছে দ্রুত পানে এগিয়ে শুভ্র রঙের ভাজ করা কাগজটি হাতে তুলে নিয়ে তাতে চোখ বুলায় আয়ন্তিকা।

ভাজ করা শুভ্র কাগজটির ভাজ খুলে নিতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো রঙের কালি দিয়ে লিখা গোটা অক্ষরে ‘ কাবিননামা ‘ যেখানে তার এবং মাহিরের সাইন করা। কাগজে কলমে পূর্ণরূপে তারা দু’জন এক সময় ছিলো স্বামী, স্ত্রী! নিচে আরো একটি কাগজ। সেটা ‘ তালাকনামা ‘ যার অর্থ ডির্ভোস পেপার! সেখানেও তাদের দু’জনের সাইন। তপ্তশ্বাস ফেললো আয়ন্তিকা। ক্ষনের মধ্যেই কাগজ দু’টো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। বৃষ্টির পানিতে সিক্ত রূপে একাকার হয়ে মিলে যায় কিছু তিক্ত সত্য। প্রকৃতিও যেনো উদগ্রীব এই রহস্য খোঁজার প্রয়াসে। তবে আয়ন্তিকা, মাহির যেনো পণ করেছে এই তিক্তকর কিছু কাহিনি, ঘটনা, সম্পর্ক, তারা কাওকেই জানাবেনা!

________

অহর্নিশের মুখ ভেঙে যাওয়ার পর সে তার পাশে আবিষ্কার করে আয়ন্তিকা। চোখমুখ কুঁচকে অদ্ভুতুরে রূপে ঘুমে বিভোর আয়ন্তিকা! এটা কেমন ঘুমানোর স্টাইল?অহর্নিশ তা বোধগম্য হয়না। তবে তার এখন আয়ন্তিকা কে বিরক্ত করার তীব্র বাসনা জেগেছে নিভৃতে। ইচ্ছে দমিয়ে না রেখে সে চট করে আয়ন্তিকার গালে, হাতে সজোরে চিমটি দিয়ে বসে।

আয়ন্তিকার ঘুম ভেঙে যায়। অহর্নিশ কে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে সে বুঝে যায় সর্ব ঘটনা! তবে আয়ন্তিকা অহর্নিশ কে চমকে দিয়ে রেগে না গিয়ে উঠে বসে অহর্নিশকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নেয়।অহর্নিশ চমকে গেলেও সে ততোটা পাত্তা দেয়না।নিজ হস্ত দ্বারা আগলে নেয় সে আয়ন্তিকা কে। বক্ষ পিঞ্জর থেকে হুট করে আয়ন্তিকা মুখ তুলে নিয়ে আড়ষ্ট হয়ে বলল,

‘ আই লাভ ইউ অহর্নিশ! ‘

৪ টা মাত্র শব্দ! অহর্নিশের কাছে তা বড্ড ভারী লাগলো। অবিশ্বাস্য আখিপল্লব মেলে আয়ন্তিকা কে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে সে আশপাশে তাকিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস টানা শুরু করে। এ কি শুনলো সে? বুক এমন ধড়ফড় করছে কেনো?হৃদপিণ্ড এমন বেগতিক ভাবে লাফাচ্ছে কেনো?শিরা – উপশিরায় যেনো রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! ক্ষনের মাঝে হাত পা কাঁপা শুরু হয়ো হীম রূপে রূপান্তর হতে শুরু করেছে। নিজেকে বহু কষ্টে সামলে অহর্নিশ অস্ফুটস্বরে বলল,

‘ স..সত্যি বলছো?ডু ইউ লাভ মি?হু? লাভ মি অর নট?’

‘ মিথ্যা বলতে যাবো কেনো?আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি। প্রচন্ড! এতদিন আপনার সাথে থেকে আপনাকে অনুভব করা শিখেছি। নতুন অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি। ম্যাচিউরিটি আসলে বুঝতে পেরেছি নতুন অনুভূতিটার নাম! তবে,’

‘ তবে?’

‘ আপনি কি আমায় ভালোবাসেন অহর্নিশ? ‘

অহর্নিশ পুরোপুরি চুপ হয়ে যায়। সে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে জানে না। প্রকাশ করতে চায় না। প্রতেকটা অনুভূতি অহর্নিশ তার অন্তর্লীনে সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। এইযে, অয়নের সাথে তার এতো ভালো ফ্রেন্ডশিপ! অথচ অহর্নিশ কখনো তা মুখ ফুটে শিকার করেনি। একটিবার বলেনি ‘ দোস্ত তুই আমার জীবনে আসার পর আমার জীবনটা বদলে গেছে। তুই না আসলে বুঝি আমি মরে যেতাম। তোকে আমার দরকার, তুই আমার ভালো বন্ধু! ‘ এই টাইপ কোনো কথা অয়নকে সে মুখ ফুটে একবারও বলেনি। মায়ের সাথে চমৎকার একটা মা – ছেলের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর সে বলেনি মা ভালোবাসি তোমাকে! বাবাকে একবারও আদুরে স্বরে বাবা বলে ডেকে অনুভূতি তার কনভেস করা হয়নি। তেমনই আয়ন্তিকা কে সে কতোটা ভালোবাসে তাও হয়তো হবেনা বলেনা!

আয়ন্তিকা অভিমানে সরে আসে। ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না আঁটকে নিয়ে বলে,

‘ আপনি আমায় ভালোবাসেন না? এত বছরে আমার প্রতি কি আপনার একটুও ভালোলাগা জন্মেনি?’

অহর্নিশ নিরুত্তর! আয়ন্তিকা দৌড়ে চলে যায় রুম থেকে। ইশ! কি মুশকিল! অহর্নিশ এখন এই অভিমানী কে বোঝায় কিভাবে সে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনা, চায়না!

__________

সন্ধ্যার দিকে আয়ন্তিকা মলিন মুখশ্রী নিয়ে বসে ছিলো রুমে। অহর্নিশ চলে গিয়েছে নিজের কাজে। তার আজ আবার তথ্যমন্ত্রীর সাথে মিটিং পড়েছে। মিটিংটা সন্ধ্যাতেই।

‘ ফুপি..!’

অনয়ের কন্ঠ! আয়ন্তিকা দরজার দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখে অনয় দাঁড়িয়ে। আয়ন্তিকা ম্লান হেঁসে গিয়ে অনয়কে কোলে তুলে নেয়। অনয় সারা এবং অয়নের ছেলে। একটু দুষ্টু টাইপের। কারো কথা শুনতে চায়না, কিন্তু আয়ন্তিকা প্রতেকটা কথা, আদেশ – নির্দেশ সে ঠিকঠাক ভাবে পালন করে। আয়ন্তিকা অনয়ের গালে চুমু খেয়ে আহ্লদীকন্ঠে বলল,

‘ কেমন আছো আব্বু? কার সাথে এসেছো?’

‘ ভালো আ..আছি ফুপি! মামনি বা..বাবাই এর সাথে আ..আসছি। ‘

আয়ন্তিকা একগাল হাসলো। সাথে অনয় নিজেও। অনয় কিছুটা তোতলা টাইপ। কথা বলার মাঝে বারংবার তুতলে কথা বলে। যার কারণে কথা বলতে খানিক সময় বেশিই লাগে তার। অনয় তার ছোট্ট হাত দিয়ে আয়ন্তিকার চুল নিয়ে খেলছিলো। তখনি সারা আসে রুমে। সাথে অয়ন ও! সারা আয়ন্তিকা কে দেখে বলল,

‘ কেমন আছো আয়ন্তি? একি কাঁদছো তুমি?’

আয়ন্তিকা অস্থির হয়ে চটজলদি নেত্র কার্নিশে জমে থাকা অশ্রু মুছে নেয়। অতঃপর কৃত্রিম হেঁসে বলে,

‘ না আপু। ঐ চোখে কিছু পড়েছিলো তাই পানি এসে গেছে। ‘

‘ একদম মিথ্যা বলবেনা। বলো কি হয়েছে? তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি ভালো নেই। ‘

সারার কথা সমাপ্ত হতেই অয়ন ফোড়ন কেটে বলল,

‘ অহর্নিশ কিছু বলেছে ভাবী? আমাদের বলুন। আসার সময় ওর সাথে ফোনে কথা হলো। কন্ঠস্বর ভারী ভারী লাগছিলো। অহর্নিশ যে ভালো নেই তা ফোনে কথা বলেই বুঝেছি। বলুন কি হয়েছে? ‘

আয়ন্তিকা নুইয়ে সবকিছু খুলে বলল! সব শোনার পর সারা, অয়ন দুজনই মলিন হাসে। তা দেখে নিভৃতে বেশ কয়েক প্রশ্ন জাগে আয়ন্তির। ব্যাকুল হয়ে সে বলল,

‘ কি হয়েছে? ‘

সারা অয়নকে ইশারায় নির্দেশ দেয় তাকে বলতে। অয়ন শ্বাস টেনে বলল,

‘ অয়নের কাছে কখনো ‘ ভালোবাসি ‘ শোনার আশা রাখবেন না ভাবী। অহর্নিশ কখনোই তা বলবেনা। ও খুব চাপা স্বভাবের। স্পেশালি নিজের অনুভূতির ব্যাপারে। আমার ওর সাথে এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপ আজ পর্যন্ত ও আমাকে বলেনি তোকে আমার লাগবেই! ও কখনোই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেনা। নিভৃতে পছন্দসই মানুষকে আড়ালে ভালোবেসে যায়। আপনি এতে মন খারাপ করবেন না। অহর্নিশ আপনাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে তা প্রমানিত। আমরা সবাই দেখেছি, বুঝেছি। ওর নিজের কাজ দ্বারাই নিজে বুঝিয়ে দেয় সামনের ব্যাক্তিটাকে তার দরকার। তাকে ভালোবাসে! আপনাকে বুঝে নিতে হবে। মুখে শোনার আশা করতে থাকলে এ জীবনে আর তার মিলবে না। ‘

আয়ন্তিকা চমকে তাকায়! লোকটা এতো চাপা স্বভাবের? জানতো না সে! অনুভূতিই তো। প্রকাশ করলে সমস্যা কোথায়?ধুর! অদ্ভুত লোক জুটলো তার কপালে।

আয়ন্তিকা সারা, অয়ন এবং অনয়ের মাঝে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। রাত আটটার দিকে অহর্নিশ বাসায় ফিরে। মলিন চাহনি! অয়নের সাথে একান্তভাবে কিছু সময় কথা বলার পর তাকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেলো। অহনা, ইমানের সাথে সবাই মশগুল হয় আড্ডায়। রাতের খাবার যখন আয়ন্তিকা টেবিলে সার্ভ করছিলো তখন এক ফাকে অহর্নিশ তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ কাজ শেষে জলদি রুমে এসো! ‘

আয়ন্তিকা ঠোঁট বাকিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অহর্নিশের পানে! পরিশেষে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই অহর্নিশ বাঁকা হেঁসে চলে যায়। রাতে খাওয় দাওয়া শেষে আরেকদফা কথা বলে সবাই যে যার রুমে চলে যায়। আয়ন্তিকা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে নিয়ে বেলকনিতে আসে। তৎক্ষনাৎ অহর্নিশ পিছন ফিরে বলল,

‘ এত দেরী লাগে আসতে?ক্রিকেট ম্যাচ খেলছিলে নাকি?’

‘ কাজ ছিলো! ‘

অহর্নিশ এগিয়ে আসে। হাতে থাকা ডায়মন্ড এর রিং টা সে আয়ন্তিকা হাত টেনে এক আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে। চাদের আলো আংটিতে প্রতিফলিত হয়ে চকচক করছিলো। আয়ন্তিকা নম্র কন্ঠে বলল,

‘ এটা কেনো?’

অহর্নিশ আয়ন্তিকার হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেয়ে বলল,

‘ দরকার ছিলো এটার তাই। ‘

সেই রাত বেলকনিতে বসে কথা বলেই দুজন কাটিয়ে দেয় এক চমৎকার রাত! মাঝেমধ্যে স্নিগ্ধ ভালোবাসা প্রদান করে সিক্ত করে তুলছিলো অহর্নিশ তার প্রিয়তমা কে।

____________________________

কনকনে শীত কেটে গিয়ে প্রকৃতিতে আগমন ঘটেছে
ঋতুরাজ বসন্তের। পাতাঝড়া শেষে গাছে এসেছে নতুন পাতা, সতেজতা, মুগ্ধকর সৌন্দর্য! পার্কের বেঞ্চিতে বসে চারদিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলো আয়ন্তিকা। তার কোলে সাঈশা! আনাফকে কোলে নিয়ে অহর্নিশ সামনে হাঁটছে। আশপাশে দেখা শেষে আয়ন্তি এবার অহর্নিশের পানে দৃষ্টিপাত স্থাপন করে। অহর্নিশ এদিকেই আসছে। এসে তার পাশে বসে পরে। পকেট হতে রুমাল বের করে ললাটের ঘাম মুছে নিয়ে বলল,

‘ হাঁটবে? ওখানে খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে! চলো? ‘

আয়ন্তিকা মিহি কন্ঠে বলল,

‘ আরেকটু পর। আপনি একটু রেষ্ট নিয়ে নিন। ‘

অহর্নিশ রুমাল রেখে আয়ন্তিকার শাড়ীর কর্ণার দিয়ে ঘাম মোছা শুরু করে। আয়ন্তিকা তাতে বাঁধা প্রদান করলো না। পরিশেষে অহর্নিশ লোকসমাগম এর মাঝেই আয়ন্তিকার গালে চুমু খেয়ে বসে। এতে আয়ন্তিকা হকচকিয়ে বলল,

‘ পাবলিক প্লেসে এসব কি? ‘

‘ আদর করতে মন চাইল জান। তাই! চলো সামনে যাই। ‘

অহর্নিশ আনাফকে কোলে তুলে নেয় আর আয়ন্তিকা সাঈশাকে। খালি পায়ে হাঁটছে দু’জন! কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো পায়ে এসে স্পর্শ করে যাচ্ছে। অহর্নিশ আয়ন্তিকার কোমল হাত চেপে ধরে। আয়ন্তিকা তাতে ডানে তাকায়। লোকটা নাই বলুক ভালোবাসার কথাটা মুখে। থাকুক অন্তর্লীন প্রণয় হয়ে! আয়ন্তিকা তো বুঝেই নিয়েছে ভালোবাসাটা। এইযে ঠোঁট, চোখ, হাত সবাই বলে দিচ্ছে অহর্নিশের অন্তর্লীন প্রণয়ের কথা। মুখে না বলুক, দিকভঙ্গি তে প্রকাশ করেছে এটাই তো যথেষ্ট। থাকুক না তাদের প্রেমটা অন্তর্লীন প্রণয় হয়ে!

আয়ন্তিকা এবার কোমল হেঁসে অহর্নিশের পাশ ঘেঁসে হাঁটে। নিঃশব্দে হাসে অহর্নিশ। ফের ছোট্ট করে চুমু একে দেয় সে আয়ন্তিকার হাতে। আনাফ, সাঈশা খিলখিল করে হেঁসে দেয় অজান্তেই। তা দেখে অহর্নিশ, আয়ন্তিকাও হাসে! ইশ! কি চমৎকার এক পরিবার।

(সমাপ্ত)

_____

ধন্যবাদ সবাইকে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here