#তোর_মায়ায়_আবদ্ধ
#পর্ব_১৬
#আঁধারিনী(ছদ্মনাম)
অনেক মানুষের আর্তনাদ কানে বাজছে।আস্তে আস্তে উঠে বসলাম।মাথায় খুব ব্যথা করছে কিন্তু হাত উঠাতে গিয়েই পারলাম না।আমার হাত বাঁধা!আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম মুখ আর পা ও বাঁধা। পরমুহূর্তেই সব মনে পড়লো।আমি আর মিহি তো ওই লোকটার বলা সেই জায়গায় গিয়েছিলাম।ফেরার পথে কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলেছি।আমি এখন কোথায়!আ..আর মিহিই বা কোথায়।মুখ বেঁধে রাখার ফলে মিহি বলে কয়েকবার ডাক দিতে গিয়েই ব্যর্থ হলাম।আমি বুঝতেই পারছি না আমি কোথায় জায়গা টায় এক ফুটো আলোও নেই।যেদিকে তাকাচ্ছি শুধুই অন্ধকার। আর চারিপাশ থেকে শুধু বাঁচাও বাঁচাও ধ্বনির আর্তনাদ। বুঝতে পারছি এখানে আমি একা নই আরো অনেকে আছে।হয়তো ওদের মুখ বাঁধা নেই।আমি সেসবে কান দিচ্ছি না বর্তমানে আমার মাথায় শুধু এখন মিহির কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটা আমার সাথে এসেছে না জানি এখন কোথায় কেমন আছে।
” বস মেয়ে দুটোর এখন জ্ঞান ফিরার কথা।মনে হয় এতোক্ষণ জ্ঞান ফিরেও গেছে।”
এই টুকু শুনতে পেয়েই আমি কান খাঁড়া করলাম।পাশের ঘরেই হয়তো লোকটা তার বসের সাথে ফোনে কথা বলছে।কিন্তু আর কোনো কথাই শুনতে না পেয়ে হতাশ হলাম।তবে এতোক্ষণে আমি নিশ্চিত হলাম আমি কিডন্যাপ হয়েছি।আর লোকটার কথা মতো যদি মেয়ে দুটো বলতে আমাদের কথাই বলে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আমার সাথে এখানে মিহিও আছে।মিহি আছে ভাবতেই প্রথমে খুশী হলেও সাথে সাথেই ধপ করে নিভে গেলো খুশীটা।
বোধহয় দশমিনিট পরেই একটা লোক এসে রুমের লাইট জ্বালালো।হঠাৎ করে আলো জ্বলতেই চোখ জোড়া কুঁচকে এলো।আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই একটা লোক আমার দিকে এগিয়ে আসলো আর আশেপাশের আর্তনাদ গুলো আরো ভারী হয়ে উঠলো।লোকটা এসে আমার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি বাঁধা দেওয়ার হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।তবে ঘরটা থেকে বেরোনোর আগে ঘরের ভেতরে থাকা দৃশ্য টা দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।কম পক্ষে একশো মেয়ে হবে এখানে।সবার হাত পা বাঁধা! মিহিকেও দেখলাম সঙ্গে ইরানিও ছিলো।সব দেখে আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না আমি কোথায় এসে পরেছি।নারী পাচারকারী কোনো চক্র!ওদের দিকে তাকিয়ে শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি গুলোই বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছি।
” বস মেয়েটাকে নিয়ে এসেছি।”
আমাকে টেনে নিয়ে আসা লোকটা একটা রুমে ঢুকে বললো।লোকটার বলা কথা অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই আমি থমকে গেলাম। আমার সামনে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।অভ্র উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো।লোকটার কথায় অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে আমার পা থেকে আপাদমস্তক একটার তীক্ষ্ণ নজরে পরক করেই দৃঢ় পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।ঠিক আমার বারবার এসে দাঁড়িয়ে আমার পাশে দাঁড়ানো লোকটার দিকে কাঁধ বাঁকিয়ে তাকালো তাতেই যেনো লোক ভড়কে গেলো আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
” ক..কো..নো ভু..ল করেছি বস!আ..আপনি তো এই মেয়েটারই ছবি দেখি…”
লোকটা আর বলতে পারলো না তার আগেই অভ্র লোকটার গালে পাঁচ আঙ্গুলের একটা ছাপ বসিয়ে দিলো।আর রেগে বলতে লাগলো,
” তোদের আমি ওকে এভাবে আনতে বলেছি!কোন সাহসে ওকে এভাবে বেঁধে রেখেছিস!আর বারবার এই মেয়ে এই মেয়ে কাকে বলছিস?ওর থেকে এখুনি ক্ষমা চাইবি।”
অভ্রই আমার হাতের পায়ের আর মুখের সব বাঁধন খুলে দিলো।এরমধ্যেই লোকটা মাথা নিচু করে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলো।অভ্র কপালে বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে পুনরায় বললো,
” যা এখন এখান থেকে। আর বিয়ের সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে কিনা গিয়ে দেখ।”
বিয়ে শব্দ টা কানে আসতেই নড়েচড়ে উঠলাম।কিসের বিয়ের কথা বলছে অভ্র।ও কি করতে চাচ্ছে আর আমাদের এখানে কেনো আনলো।
” এখানে এতো নাটক সাজিয়ে আমাদের আনার মানে কি অভ্র?” ক্রুর চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
” সুইটহার্ট তোমাদের নয় শুধু মাত্র তোমাকে আনার জন্য এতো নাটক সাজিয়েছে।তোমার ননদিনী মিহি মানে আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ও তো নিজে থেকেই তোমার সাথে আমার জালে এসে ধরা দিলো।ওকে আমি যেদিন জানতে পেরেছি তোমার ননদিনী হয় বিশ্বাস করো সেদিন থেকেই ওকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।কিন্তু মেয়েটা আমাকে এতোই ভালোবাসে না এতো কিছুর পরও আমার কাছেই ফিরে আসলো।আমার কি দোষ বলতো।কিন্তু বিলিভ মি তোমাকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসি না।” সাবলীলভাবে জবাব দিলো অভ্র।
” তুমি মেয়েদের পাচার করো তাই না!”
” সব তো নিজ চোখেই দেখে ফেললে। ভেবেছিলাম আমার এই সত্যি টা তোমার সামনে কখনো আসতে দিবো না খুব ভালো একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে তোমার কাছে থাকবো।কিন্তু তা আর হলো কই!আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য সব কিছু উলট পালট হয়ে গেলো।তোমার বাপের ওই বন্ধুর ছেলে কি যেনো নাম?ওহ শুভ্র ও-ই শুভ্র যদি মাঝখানে না আসতো তাহলে সব কিছুই ঠিক থাকতো।”
” তাহলে খুব সহজেই তুমি আমাকে আরো অনেক আগেই বাকী সব মেয়েদের মতো আমাকেও পাচার করে দিতে পারতে তাই না!” তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম।
আমার কথায় অভ্র রেগে গেলো ” কখনোই না আমি তোমাকে ভালোবাসি আলমুন।”
” মিথ্যে বলছেন আপনি মিস্টার অভ্র ওরফে আদিব!আপনাদের কাজ হলো মেয়েদের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তাদেরকে মিথ্যে ভালোবাসার ফাদে ফেলে তাদেরকে যখন আপনাদের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস আনতে পারবে ঠিক তখুনি তাদের সেই বিশ্বাস কে কাজে লাগিয়ে পাচার করে দিবেন।আমার জানা মতে আপনাদের এই কাজ টা তো খুব তাড়াতাড়িই মিটিয়ে ফেলার কথা।তাহলে কেন চারটা বছর ধরে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেললেন?আমি তো আপনাকে অনেক আগেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম।তখনই তো আমার পিঠে চুরিটা বসিয়ে দিতে পারতেন।”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই অভ্র আমার মুখ চেপে ধরলো রাগে থরথর করছে ওর শরীর।
” কারণ তোর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে পরেছিলাম আমি।হ্যাঁ হ্যাঁ তুইও সব মেয়েদের মতো আমার টার্গেট ছিলি।তোকেও পাচার করার জন্যই মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করেছিলাম তোর সাথে। কিন্তু পারিনি তোর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আমি তোর সত্যি কারে ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে পরেছিলাম।যেই আমি হাজার হাজার মেয়ের মন নিয়ে খেলে তাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে খেলেছি।সেই আমিই তোর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে পরেছিলাম। সত্যিকারে ভালোবেসে ফেলেছি তোকে।তোকে আমার চাই মানে চাই!আমি চাইলে তোকে এখুনি পেতে পারি কিন্তু না আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি।তোকে নিজের বউ বানিয়ে হালাল ভাবে পাওয়ার ইচ্ছে আছে।”
অভ্র আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি বলে উঠলাম “আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমি বিবাহিত।”
আমার কথাটা জেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো অভ্রের উপর।চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কিছুক্ষণ কন্ট্রোল করে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।অতিরিক্ত রাগের কারণে ঘরে দরজাটা না লাগিয়েই চলে গিয়েছে।আর আমি এটাই চেয়েছিলাম।ওকে ইচ্ছে করেই এতো রাগিয়েছি।আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলাম।
কাল রাতেই শুভ্র আমাকে বলেছিলেন অভ্রের কথা।অভ্রের নারী পাচারকারী দলের সাথে যোগ আছে।শুভ্রের এক বন্ধু পুলিশের কোনো এক পোস্টে আছে তার থেকেই অভ্রের ব্যপারে জানতে পেরেছে।অভ্র যে আমার উপর আক্রমণ আনতে পারে এটাও বলেছিলো।তবে সকালের সেই ফোন পেয়ে আমি এতোটাই শকড ছিলাম যে এসব কিছু মাথায়ই ছিলো না।কিন্তু এখন এভাবে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না।আমাকে মিহি আর বাকী মেয়েদের কে এখান থেকে বের করতে হবে।আমার কাছে ফোনও নেই যে শুভ্রকে সবটা জানাবো।তবে আমি যখন সেই ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কাউকেই দেখতে পেলাম না তখন শুভ্রকে একটা মেসেজ করে জানিয়ে ছিলাম আমাদের কথা।জানিনা মেসেজ টা এখনো পড়েছে কিনা!
দরজার কাছে এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে আস্তে আস্তে রুমটা থেকে বেরিয়ে আসলাম।পাশের ঘরটাতেই মিহিসহ বাকি মেয়ে গুলো আছে।এখন কেউ নেই এখানে পাহারা দেওয়ার জন্য। হয়তো অভ্রের কথামতো সেই বিয়ের কাজেই ব্যস্ত।তাড়াতাড়ি রুমের দরজা খুলে ভেতরে ডুকেই অন্ধকারে হাতড়ে সুইচ বোর্ড খুঁজে লাইট জ্বালালাম।
লাইট অন হতেই সবার চেচামেচির আওয়াজ বেড়ে গেলো।অনেক কষ্ট ওদের চুপ করালাম। সব মেয়েদের মুখ খোলা থাকলেও মিহির মুখ বাঁধা ছিলো।তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর মুখ খুলে দিলাম।মুখ খুলতেই মিহি কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।খুব ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা।আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম তখনই পিছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরে ফেললো আমি চমকে উঠলাম।
চলবে,,,,,,