হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 03]
-“বন্ধু তূণর্ব এতো টেনশন করার কিছু নেই। সামান্য একটা এক্সিডেন্ট ছিলো এটা ডোন্ট ওয়ারি।”
আয়মান আঙ্কেলের কথায় আব্বু বলে উঠলো,
-“টেনশন কেনো নিবোনা বন্ধু? আজকে যদি তোমাদের কিছু হয়ে যেত তবে? কারা তোমাদের উপর আঘাত আনতে চেয়েছিল সবটা খুজে বের করবো আমি বন্ধু। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া চলবে না ”
-“এতো ব্যস্ত হয়োনা আর তাছাড়া আমাদের তেমন আঘাত লাগেনি যা আঘাত লাগার সেটা সামান্য পরিমানে অনুরাগের লেগেছে। ”
আয়মান আঙ্কেলের কথায় অনুরাগ ভাইয়া বলে উঠল,
-” আঙ্কেল ব্যস্ত হবেন না। আসলে ট্রাকটা চেয়েছিল আমাদের গাড়িটাকে পিষে দিতে কিন্তু আমি ঠিক সময় মতো অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেওয়াই তেমন ক্ষতি হয়নি। ডাইভিং সিটে বসার কারনে সামান্য পরিমানে আঘাত লেগেছে মাথায়। ও ঠিক হয়ে যাবে। ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই।”
সকাল দশটার সময় আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি আমাদের বাসায় আসে। আজকে উনারা আসবে বলে আম্মু আমাকে কলেজ যেতে নিষেধ করে। ঘুমের ঘাটতির জন্য আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইনি কিন্তু বাসার প্রত্যেকটি রুম গোছানোর করার জন্য আমাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। যার কারনে ড্রয়িং রুমের সোফাতে শুয়ে পরি।
কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ পেয়ে আম্মু আব্বু এগিয়ে যাই। উনারা এসেই সবটা আব্বু আম্মুকে বলেন কি হয়েছিল উনাদের সঙ্গে। আম্মু আব্বু অনেকটা চিন্তিত হয়ে পরেছিল উনাদের কথায় কিন্তু চিন্তা ছিলোনা অনুরাগ ভাইয়ার চোখে মুখে। মাথায় একটু ছিলে যাওয়ার কারনে রক্তটা শুকিয়ে গেছে। তবে উনার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। খুব স্বাভাবিক ভাবে কেউ উনার রাগটা বুঝতে পারবেনা। কারন মিষ্টি চেহরায় কাদলে বা হাসলে হালকা রাগ মিশ্রিত থাকলেও সেটা অল্প বোঝা যাই। অনুরাগ ভাইয়ার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।
উনারা ভিতরে প্রবেশ করতেই আমাকে সোফাতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেন। আম্মু চেয়েছিল ডেকে তুলতে কিন্তু মাহিমা আন্টি আর আয়মান আঙ্কেল নিষেধ করলেন আমাকে ঘুম থেকে উঠাতে। আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি আম্মুর সঙ্গে ডাইনিং গেলেন হালকা নাস্তা করার জন্য। এদিকে থেকে গেলেন শুধু অনুরাগ ভাইয়া। উনি আমার সামনের সোফাতে বসে একপায়ের উপর ভর করে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। একসময় ঘুমের মাঝে আমি কারো হাত গালে অনুভব করি। এমন মনে হচ্ছিলো কেউ আমার সামনের দিকের চুলটা কানের কাছে গুজে দিচ্ছে। চোখ টিপটিপ করে তাকাতেই রেহানা আন্টিকে দেখতে পাই আমি। উনি এখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন।
আমি সেদিন ভেবেছিলাম রেহানা আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু সেটা রেহানা আন্টি ছিলোনা। অনুরাগ ভাইয়াই আমার চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়েছিলো মুখ থেকে।
আমার জেগে যাওয়ার আগেই অনুরাগ ভাইয়া উঠে যাই। তারপর আম্মু ফাস্ট এইডস বক্সটা এনে দিলে আয়মান আঙ্কেল অনুরাগ ভাইয়ার মাথার ব্যান্ডিজ করিয়ে দেয়। ডাইনিংয়ে নাস্তা করতে করতে সবটা শুনাই। পরের আলোচনা সবটা তো জানা আপনাদের।
আমি যখন ঘুম থেকে উঠি তখন মাহিমা আন্টি এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“ঘুম হয়নি? কালকে নিশ্চয় তাড়াতাড়ি ঘুমোওনি?”
আমি মাথাটা হালকা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। আন্টি আমাকে রাত জাগার ফলে যেসব ক্ষতি হয় সেগুলো বললেন। রাত জাগার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ঘুম না হওয়ার প্রভাব পরে। যার ফলে ব্রেনের কোষ গুলো শুষ্ক হয়ে যাই আর এমনটা চলতে থাকলে মানুষের পাগল হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাছাড়া স্কিন খারাপ হয়ে যাই। এছাড়াও রাত জাগার ফলে ঘুমের যে ঘাটতি হয় এটার জন্য বিভিন্ন হরমোন নিস্রিত হয় আর এগুলো জন্য বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে এর মধ্যে ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার অন্যতম। এছাড়া আন্টি তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতাও বললেন। তাড়াতাড়ি ঘুমালে আর ফজরের দিকে খুব দ্রুত উঠে একটু ওয়াকআউট করলে সারাদিন ফিট থাকা যাই। বিভিন্ন কাজকর্ম খুব দ্রুত শেষ করা যাই। মাথার ব্রেন সজীব থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আমি চুপচাপ কথা গুলো শুনলাম আর সিদ্ধান্ত নিলাম আজ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পরবো।
আন্টি আবারো বললেন,
-” এবার থেকে আমি ফোন দিয়ে খোজ নিবো কিন্তু রাত না জেগে ঘুমিয়েছো কিনা জানার জন্য।”
আমি মাথা হালকা ঝাকিয়ে হ্যা বলে গার্ডেনের দিকটাই আসলাম। এদিকটাই এসে যা দেখলাম আমি যাস্ট অবাক। মেধা আর অনুরাগ ভাইয়া একসঙ্গে দাড়িয়েঁ কথা বলছে। অবশ্য অনুরাগ ভাইয়া বুকের উপর দুইহাত ভাজ করে অন্যদিকে বিরক্তির সঙ্গে তাকিয়ে রয়েছে। এদিকে মেধা বকবক করেই যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে অনুরাগ ভাইয়া হুট করে এদিকে তাকাতেই আমাকে দেখতে পাই। আমার মুখের অমন রিয়েকশনে উনি এবার স্বাভাবিক ভাবে মেধার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন।
ওদেরকে একসঙ্গে দেখে কেমন জেলাস ফিল হচ্ছে আমার! 🙂 এই হতছাড়া নাকি কাউকে পাত্তা দেয়না সবসময় এটিটিউড নিয়ে থাকে।কোন মেয়ের বন্ধুও নাই। তাহলে এগুলো কি হ্যা। অসভ্যটা আমাকে ও পাত্তা দেয়না। কালকে একবারো তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি আর আজ আমার বাড়িতে এসে আমার সঙ্গেই কথা বলল না। এদিকে আমাকে দেখিয়ে মেধার সঙ্গে তো আলাপ জুড়ে দিয়েছে। আমি রাগ দেখিয়ে মেধাকে ডাক দিলাম।
-” মেধাআআআ! কি করছিস তুই এখানে? শোন এদিকে।”
-” তুষ আসছি একটু ওয়েট কর অনিরুদ্ধ ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলছিতো। ”
কি অভদ্র! নিজের বান্ধুবী ও আজ বেইমানি করছে। সবটা হচ্ছে অনুরাগ ভাইয়ার জন্য। ইচ্ছে করছে ফুলের টব দিয়ে উনার মাথায় বাড়ি দিতে। রাগে চিৎকার করে ডাকলাম
এইইইইইই মেধার বাচ্চা মেধাআআ। তোকে কখন থেকে ডাকছি?
মেধা অনুরাগ ভাইয়াকে বাই বলে আমার কাছে এসে বলল,
-“দোস্ত রাগ করিসনা। সামনে ক্রাশ আছে তো তাই বলছিলাম একটু পরে আসছি। ”
বাহ্ সবাই দেখছি উনাকে নিয়েই পরে আছে। এই এটিটিউডের ডিব্বার সঙ্গে কিসের এতো কথা বলছিলি?
কথা আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম,
-” উনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বাকা হাসঁলেন। তারপর হাত দিয়ে সামনে পরে থাকা চুলটাকে সরিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।”
মানুষ ঠিক বলে যাকে একটু পাত্তা দেওয়া হয়। তার আকাশ ছোয়াঁ ভাব বেড়ে যাই। অনুরাগ ভাইয়াও এই কাজটা করলেন!! এদিকে রাগান্বিত চোখে আমি মেধার দিকে তাকালাম তারপর জিগ্যেস করলাম কি বলল অনুরাগ ভাইয়া ওকে?
মেধা আমতা আমতা করে বলল,
-” রাগ করিসনা দোস্ত। উনি আমাকে এগুলোই জিগ্যেস করলো কোন ক্লাসে, কি নিয়ে পরছি, কোন কলেজ এসব এসব। আমি একটা সেলফি নিতে চাইলাম উনি রাজি হলেন না।
~চলবে ইনশাআল্লাহ্
[