হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 04]
দুপুরের দিকে খাওয়া দাওয়া করে চলে যাই অনুরাগ ভাইয়া। আয়মান আঙ্কেল আর আন্টি একসঙ্গে যেতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বললেন উনার কি কাজ আছে তাই দুপুরের খাওয়ার পরপরই চলে যাই। অবশ্য খাওয়া দাওয়ার আগেই যেতে চেয়েছিল আম্মু আব্বু জোর করাতে থেকে যায়। যাওয়ার আগে অনুরাগ ভাইয়া আমার দিকে একপলক তাকিয়েছিল। উনার এমন তাকানোতে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে যাই। একদম রহস্যময় দৃষ্টি উনার।
এদিকে মেধাও অনেকক্ষন আগে চলে গেছিলো। সে পাশের বিল্ডিং থেকে অনুরাগ ভাইয়াকে দেখতে পেয়েছিলো। উনি তখন কোন কল এটেন্ড করছিলেন গার্ডেনে। ব্যাস মেধাও আমাদের বিল্ডিংয়ে এসে উপস্থিত হয়। মেধা আসার পরপরই ভাইয়াকে এটা ওটা বলতে থাকে। ভাইয়া কলেছিলেন। কল কেটে বিরক্তি নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে তারপর আমাকে দেখে এমন একটা ভাব করে যে মনে হচ্ছে কতোইনা খুশি ওর সঙ্গে কথা বলতে পেরে। কিন্তু কথা হচ্ছে ভাইয়া আমাকে জেলাস ফিল করাতে চাইছিলো কেনো? বাই এনি চান্স উনি কি আমাকে পছন্দ করেন? না সেটা কি করে হয় একদিন দুইদিনের দেখাই কেউ কি করে কাউকে ভালোবাসতে পারে,,? আর উনার ভাব সাব দেখে তো মনে হয় না উনি আমাকে পছন্দ করে?সবসময়তো ইগনোর করতেই দেখি।
এতোভেবে কাজকি আমার যে উনার প্রতি ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছে এটা তো পষ্ট কিন্তু একপাক্ষিক কোন কিছুর যে মূল্য নেই।
____________
হাত-পা বাধা অবস্থায় মুখ থুবড়ে পরে আছে একজন। তার মূখ দিয়ে চাপা একটা গোঙানোর আওয়াজ আসছে। একজন ধীর পায়ে দল বল নিয়ে এগিয়ে গেলো লোকটির দিকে। তারপর লোকগুলোকে ইশারা করতেই পরে থাকা লোকটিকে উঠায়। লোকটি সামনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আরো জোরে গোঙানো শুরু করে। মুখ বাধা ছিলো বলে লোকটি চিৎকার করতে পারলো না।
ওদের মাঝে একজন বলে উঠলো,
-“অনিরুদ্ধ স্যার এটাকে এখানে মেরে পুতে দেই?”
এই কথায় লোকটি বড় বড় চোখে কান্না করে মাথা ঝাকিয়ে না না বলল। অনুরাগ বেশি কিছু না বলে ওর চুলগুলোকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। লোকটিযে অনেক আঘাত পেলো সেটা ওর গোঙানো দেখে বোঝা যাচ্ছে।
-“এবার বল ট্রাকটা কি করে আমাদের পিছনে পরলো? কে পাঠিয়েছিলো তোকে?”
লোকটি চুপ করে রইল। এটা দেখে অনুরাগ রাগে রিভলবার বের করে ওর মুখের কাপড় টা সরিয়ে সরাসরি মুখে ঢুকিয়ে দেয়। লোকটি প্রচণ্ড ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনুরাগ দাতঁ চেপে বলল,
-” আমাকে যখন মারতে চেয়েছিস এর মানে তুই আমাকে চিনিস জানিসতো আমার কাছে অনেক পাওয়ার আছে আমি চাইলেই তোকে মেরে ফেলতে পারবো। এখন বল কে পাঠিয়েছিলো তোকে? আমার তোর সঙ্গে ঝামেলা নাই তাই তোকে মারার কোন কারন দেখছিনা কিন্তু তুই যদি সত্যি টা না বলিস তোবে তোকে মরতে হবে গট ইট?”
অনুরাগ রিভলবার টা সরিয়ে বলল তোর কাছে দুইমিনিট সময় আছে। যদি না বলিস তোকে এখানেই সুট করে দিবো আই প্রমিস।
লোকটিকে চুপ থাকতে দেখে অনুরাগ রাগে ওর মাথায় সুট করে দেয়। সবাই ওর কাজে চমকে যাই। কারন তারা ভেবেছিলো অনুরাগ ওকে মারবে না কিন্তু ওদের ধারনাকে চূর্ন করে মেরে ফেলে ওকে।
অনুরাগ রেগে কপালের সামনে পরে থাকাটা চুলটা রিভলবার দিয়ে সরিয়ে আসরাফের উদ্দেশ্যে বলে,
-” সবটা ইনসপেক্টর মাহিরকে জানাও। আর এই লাসটাকে দাফন করার ব্যবস্থা করো।”
-“জ্বী স্যার। ”
আসরাফের কথায় অনুরাগ চলে আসে। তারপর ল্যাবের ভিতরে কি একটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে।
ওপর দিকে আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টিকে নিতে সন্ধার দিকে আবার ফিরে আসে। তখন আমি আঙ্কেল আন্টির সঙ্গে কথা বলছিলাম। ড্রয়িং রুমে আমরা সবাই মিলে এক কাপ কফির সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে সোফাতে গা এলিয়ে দেয়। আমরা সবাই একেঅপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছি এমন সময় উনি নিদির্ধায় বলল
-” এক গ্লাস পানি এনে দে তো তুষ!”
এইপ্রথম উনি আমার নাম ধরে ডাকলেন। আমার সঙ্গে কথা বললেন। অনুরাগ ভাইয়া আমাকে বসে থাকতে দেখে আবার বললেন,
-“কি হলো কি দেখছিস যা না আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়। আমি ক্লান্ত প্রচুর হাফিয়ে গেছি।”
আম্মু বলল আমি যাচ্ছি অনুরাগ।
-” না আন্টি আপনি না ও যাবে। আপনারা ওকে অনেক ল্যায় দিয়ে দিয়েছেন। এজন্য ও এতো ঘারত্যারা। আমার জন্য পানি ও আনবে ব্যাস।”
উনার কথায় মনে হচ্ছে আমি আসমান থেকে পড়লাম। আমি নাকি ঘারত্যারা। আমাকে নাকি লায় দেওয়া হয়। উনার এমন ব্যাবহারে উপস্থিত সবাই হা হয়ে গেলাম। আম্মু আমাকে বলল অনেক ক্লান্ত এজন্য মনে হয় মেজাজ বিগড়ে আছে তুই যা অনুরাগের জন্য পানি নিয়ে আয়। আমি ও চলে গেলাম পানি আনতে।
উনি বেশকিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর আম্মুর উদ্দেশ্যে বললেন,
-“আন্টি আমি প্রচুর টায়ার্ড। আমি কি আজ এখানে থাকতে পারি?”
ভাইয়ার কথায় মাহিমা আন্টি বললেন,
-“এখানে থাকবি কেনো? তুই এখানে থাকলে আমরা বাসায় যাবো কিভাবে?”
-“যাবে না!’
-“মানে?”
-“মানে হলো তোমরা যাচ্ছো না আমার সঙ্গে আজকে এখানে থাকবে।”
উনার কথায় আমাদের সবার চক্ষু চরকগাছ। আম্মু আব্বু তো খুশি হয়ে বলল অবশ্যই কেনো না তোমরা থাকো আজকে। আমি ভাবছিলাম তোমাকে বলবো থাকতে কিন্তু তুমি তো আমার আগেই বলে দিলে অনুরাগ। আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি বললেন এখন আর কি করার আমার ছেলে নিজে থাকতে চেয়েছে আমরা কিভাবে বাধা দেয়?
-“কালকে সকালে আমরা চলে যাবো। তুষ ও আমাদের সঙ্গে যাবে। অনুরাগ তো ল্যাবে যাবে তখন তৃষাতুর কে কলেজে ছেড়ে দিবে। ওর তো কালকে কলেজ ঠিক না?
আমি মাথা ঝাকুনি দিয়ে বললাম,
-“হ্যা কিন্তু আমি একা যেতে পারি। কারো দরকার নেই।”
আমার কথায় অনুরাগ ভাইয়া বললেন,
-“আম্মু তৃণা আন্টি আমার ও শখ নেই যে যেতে চাইনা তাকে জোর করে নিয়ে যেতে।”
যেতে চাইনা মানে? অবশ্যই যাবে। তুমি যদি ওর সঙ্গে যাও ওর প্রবলেম গুলো দেখো এটা ওর জন্য ভালো। তৃষাতুর অবশ্যই যাবে।
আম্মু আমি যাবো না। তাছাড়া আমি একা যেতে পারি।
এইইই তুই একদম চুপ। কালকে তুই অনুরাগের সঙ্গে যাচ্ছিস ব্যাস।
আমি মুখ ফুলিয়ে আব্বুকে বললাম,” আব্বু’
আব্বু বললেন,
-“সমস্যা কোথায় মামুনি। অনুরাগের সঙ্গে গেলে টিচার্সদের তোমার উপর নজর থাকবে। তোমাকে পায়োরিটি দিবে। আফটার অল অনুরাগ ও একি কলেজে পরেছে। ”
আব্বু টিচার্সরা আমাকে এমনিতেই পায়োরিটি দেয়। তবুও তুমি যখন বললে যাবো আমি।
আমাদের কথার মাঝে অনুরাগ ভাইয়া বললেন,
-“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আঙ্কেল আমাকে রুমটা দেখিয়ে দিলে আমি ঘুমাতাম।”
ওহহ হ্যা হ্যা তুমি তো হয়তো অনেক ক্লান্ত। তুষ দেখিয়ে দিবে তোমাকে রুম। তুষ মামুনি যাও অনুরাগকে গেস্ট রুমটা দেখিয়ে দেও। তোমার আঙ্কেল আন্টির সঙ্গে আমার কথা আছে।
আব্বুর কথায় আমি উনাকে গেস্ট রুমের দিকে নিয়ে গেলাম। যাওয়ার পথে হুট করে পরে যেতে লাগলে উনি আমাকে ধরে ফেলেন।
-” খাওয়া দাওয়া করিসনা নাকি? হুটহাট এভাবে পরতে থাকলে সবসময় তো ধরার জন্য আমি থাকবো না।”
উনার কথায় আমার চক্ষু চরাকগাছ! কি বললেন উনি এটা ব্যখ্যা করতে করতে ভাইয়া বললেন কি হলো এখন এভাবে থাকবি নাকা উঠবি?
আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলাম। তারপর উনাকে শুনিয়ে বললাম আমি খাই কি না কাউকে জানতে হবে না। আর আমাকে ধরার জন্য ও আপনাকে সবসময় থাকতে হবে না বলেই চলে আসলাম।
উনি ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে চলে আসে।
_____________
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলাম। নিচে ব্রেকফাস্ট করতে আসলে ভাইয়াকে দেখলাম আব্বু সুট পড়ে আছেন। আব্বু নাকি উনাকে জোর করে পরিয়েছেন। আজকে নাকি উনার অফিসে জুরুরি কাজ আছে তাই খুব দ্রুত যেতে হবে। তাই আব্বু উনাকে আব্বুর নিউ একটা সুট দিয়েছেন যাতে উনি এখান থেকে সরাসরি যেতে পারে।
আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পরলাম। আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি গাড়ির পিছনে বসলেন। এদিকে আমি গাড়ির ফ্রন্ট সিটে উনার পাশে বসলাম।
গাড়িতে অনেকবার লক্ষ্য করলাম ভাইয়া কোন কথা বলছে না। আয়মান আঙ্কেল আন্টি কোন প্রশ্ন করলে হ্যা না উত্তর দিচ্ছে। আমি উনার দিকে কয়েকবার তাকালাম কিন্তু উনার কোন রেসপন্স ই নেই।
শেষে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম।
প্রকৃতির অদ্ভুত স্নিগ্ধ রুপ দেখে মনটা জুরিয়ে যাচ্ছে।
একটা সময় পর উনি আঙ্কেল আন্টিকে বাড়িতে নামিয়ে আমার কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাওয়ার আগে মাহিমা আন্টি বললেন,
-“সবধানে নিয়ে যাস ওকে। আর গাড়ি জোরে চালাসনা।তুষ আবার আসবে কিন্তু মামুনি।”
আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম অবশ্যই কেনো নয় আন্টি!😁
তারপর আমরা কলেজে গেলাম। কলেজের সামনে গিয়ে গাড়ি দাড় করান অনুরাগ ভাইয়া। গাড়ি থেকে নেমে আমি সোজা কলেজের দিকে যেতে লাগলাম । হঠাৎ অনুরাগ ভাইয়া আমাকে ডাক দিয়ে বললেন,
-“তুষষষষ!!”
আমি পিছনে ফিরে জিগ্যেস করলাম
-” কিছু বলবেন!”
-“কিছু না। কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবি।”
আমি মাথা ঝাকিয়ে বললাম,
-“হুম। ”
উনি ওপাশ ফিরে যেতেই একটা ছেলে আমার হাত খপ করে ধরে বলে,
-” তুর ফাইনালি তোমাকে পেলাম। আমার তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিলো।”
ছেলেটা আমাদের কলেজের সিনিয়র। একদম বখাটে বহুদিন ধরে ডিস্টার্ব করে। তেমন পাত্তা দিতাম না কিন্তু আজ একদম লিমিট ক্রস করে আমার হাত ধরে ফেলেছে বলে হাত ছাড়িয়ে একটা থাপ্পড় দিলাম।
-“তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার ইডিয়েট!!”
সবার সামনে থাপ্পড় পড়াই ছেলেটা রাগে চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুরাগ ভাইয়া কিছু একটা আন্দাজ করে সামনে আসতে থাকে। এদিকে ছেলেটা আমাকে পাল্টা থাপ্পড় দিতে গিয়ে উল্টে পরে যাই।
ছেলেটা আমাকে থাপ্পড় দিতে আসলে চোখ বন্ধ করে ফেলি।আমি চোখ খুলে পিছনে তাকিয়ে দেখি অনুরাগ ভাইয়া। অনুরাগ ভাইয়াই ওর হাতটা ধরে একটা লথি দেয় যার কারনে সে উল্টে পরে ।
ভাইয়া অত্যন্ত রেগে গেছে। ওকে বারবার মারতে চাইছিল আমি বাধা দিতেই আমাকে একটি থাপ্পড় দিয়ে বললেন,
-” কাউকে জানাসনি কেনো যে এই রাসকেলটা তোকে ডিস্টার্ব করে ? নাকি ওর এমন বিহেভ তুই ইনজয় করিস কোনটা?
উনার কথায় ছলছল চোখে তাকালাম। গালটা ব্যথা করছে। প্রচুর জোরে মেরেছেন উনি। আমি রাগে বললাম দেখুন আমি স্যারকে বলেছিলাম। স্যার শাষন ও করেছিল জানিনা কেনো আজ কি করে আমার হাত ধরার শাহস পেলো। কান্না করেই দিয়েছি প্রাই। ওখানে মুহূর্তে অনেক মানুষের ভীর হয়ে যাই। সবাই বিনামুল্যে মজা নিতে ব্যস্ত। উনি আবরো ইমানের দিকে এগিয়ে যেতে আমি আবারো বাধা দিলাম। ইমান অনেকটা ইনজার্ড ও প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। স্যারেরা ও এইমুহূর্তে উপস্থিত হয়ে যাই। স্যাররা সবটা জানতে চাইলে উনি রেগে বলেন,
-“কেমন শাষন করেন আপনারা? যে একবার নিষেধ করার পর ও অন্য একটা মেয়ের পিছনে পরে থাকে?
ওই রাসকেলটা তুষের হাত ধরেছে ওকে তো আমি বলে আবারো এগিয়ে যেতে লাগলো।
ইমান নামের ছেলেটা তখন ভয়ে স্যারদের পিছনে চলে যাই!
~চলবে ইনশাআল্লাহ
(