হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 07]
অনুরাগের কথায় ইমানের নাজেহাল অবস্থা। ও যে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে সেটা ওর ফেস না দেখলে কেউ বুঝবে না। অনুরাগ সময় নষ্ট না করে ওর কপালে রিভলবার টা ধরল। ইমান হাতজোড় করে মাফ চাইল তবুও কোনকিছুই আজ অনুরাগকে থামাতে পারবে না।
সে গুলি চালিয়ে দিলো ইমানের কপালে। দুরে ছিটকে পরলো ইমানের নিথর দেহ। এদিকে জন ওর বন্ধুদের যেই ভাবে মেরেছে অবিয়েসলি ওদের কমায় চলে যাওয়ার কথা।
অনুরাগ জনকে লাসগুলোকে নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা বলে গাড়ি নিয়ে চলে আসে। অন্যদিকে জন খুব সুন্দর করে পরিকল্পনা মাফিক লাসগুলোকে নদীতে ফেলে সমস্ত প্রমাণ শেষ করে অনুরাগকে জানায়।
রাতে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছিলাম। হঠাৎ আব্বু বললেন টিভিটা অন করো। আমি টিভি অন করে ডাইনিংএ বসলাম। আব্বু চ্যানেল চেন্জ করতেই ভয়াবহ চারটে লাশ ও হেডলাইন দেখে চমকে উঠলাম আমরা। এরা আর কেউ না ইমান আর তার বন্ধু। সন্ধ্যায় নাকি বর্নালী থানার পুলিশ ওদের লাশ উদ্ধার করে। এদিকে ওদের এমন অবস্থা দেখে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। আব্বু আমাকে শান্ত হতে বলে টিভি অফ করতে বললেন আম্মুকে। আম্মু আব্বু দুজনে আমাকে জরিয়ে শান্তনা দিতে লাগলেন এদিকে ওদের বিভৎস চেহারা দেখে ভয়ে কান্না করে ফেলেছি।
রাতে অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করেছি। আম্মুর কোলে শুয়ে আছি। আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এর মাঝে কখনযে ঘুমিয়ে পরেছি। রাতে ঘুমের মাঝে হাড় কাপানোঁ জ্বর আসে আমার। আব্বু আম্মু দুজনে পাগলের মতো সারারাত জেগে পানি পট্টি দেয়। সকাল হলে ডা. শাহরিয়ারকে ডেকে পাঠায়। ডা. শাহরিয়ার আমার চেকআপ করে একটা ইনজেকশন আর কিছু ওষুধ লিখে দেয়। আব্বু উনাকে বাহিরে রেখে আসার সময় ওষুধ গুলো নিয়ে আসে।
এদিকে আম্মুর মুখে আমার অসুস্থতার খবর শুনে ছুটে আসেন আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি।
সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে উনি আমাদের বাসায় কম আসতো। আজকে ভেবেছিলাম আসবেন উনি দেখতে পাবো পছন্দের মানুষটাকে। কিন্তু আমাকে অবাক করে মাহিমা আন্টি বললেন অনুরাগ ভাইয়া নাকি কাজের পেশারে আছে আসতে পারবেন না। আমার সামনে আঙ্কেল উনাকে ফোন দিলেন উনি বারবার ফোন কেটে দিলেন। আমরা সবাই উনার আশা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে লাগলাম। ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকে জ্বর অনেকটা কমে যাই আমার তবুও মাথাটা ভারি ভারি লাগছিল। আমার অসুস্থতার খবর শুনে মেধাও চলে আসে বাড়িতে। আম্মু আব্বু আয়মান আঙ্কেল মাহিমা আন্টি উনারা ড্রয়িং রুমে গেলেই আমি সবটা খুলে বলি মেধাকে। মেধা খবরটা শুনে এতো পরিমাণে শকড্ হয় যে ও কিছুক্ষণের জন্য কথা বলতে পারছিল না। কেউ জানতো না সেদিন আমাদের সঙ্গে কি হয়েছে ইন্সপেক্টর মাহির ছাড়া। তবে উনি কি ওদের এইভাবে মারবেন?উনি তো আইনের লোক তাছাড়া ওদের মেরে উনার কি লাভ হবে? বড়জোর মাসের পর মাস লকাপে পুরে রাখতে পারবে কিন্তু মারার মতো কারন তো আমি দেখতে পাচ্ছিনা তৃষ! আমি মেধার কথায় সহমত প্রকাশ করে বললাম
-“দেখ কে মেরেছে সেটা সাইডে রাখ কিন্তু কেনো মারলো এটা দেখার বিষয়। তবে যেই মারুক না কেনো এদের বিশাল বড় দোষ পেয়েছে বিধায় মেরেছে। ”
আমার কথায় মেধা আবারো বলে উঠল,
-“ঠিক বলেছিস তদন্ত করলে হয়তো দেখা যাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলো।”
মেধার কথায় বলে উঠলাম,
-“একদম ভুল বলিসনি কিন্তু ওদের বিভৎস চেহারা আমার চোখের সামনে ভাসছে। আল্লাহ্ জানেন কতোক্ষণ ধরে লাশ পানিতে ছিলো। দেখেছিস কেমন সাদা হয়ে গেছিলো সবার শরীর। নদীর মাছেরাও কেমন ঠুকরে খেয়েছে ওদের শরীরের কয়েকটি জাইগা। আমার ভাবলেই শরীর কেপে উঠছে এতো ভয়ংকর মৃত্যু কে দিলো ওদের?”
__________
নদী থেকে লাশ তুলে সাদা কাপড়ের সঙ্গে পেচিয়ে রাখা হয়েছে। এতটাই বিভৎস অবস্থা যে কোন স্বাভাবিক মানুষ এটা দেখে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করবে। আশেপাশে লোক সোমাগমের ভীর। সাংবাদিক সহ পুলিশে ভর্তি রিস্টিকশন জাইগাটা। এরমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক রিপোর্ট তৈরী করতে লাগলো।পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশের হেড ইনসপেক্টর মাহির বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবে নেইনি। সে সরাসরি সাংবাদিকদের সামনে বললেন,
-“এই মাডারের পিছনে কে বা কারা আছে আমরা সেটা খুজে বের করবো। তবে এটা পষ্ট এই মার্ডারের সঙ্গে রাজনৈতিক কোন ইসু আছে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে খুনি কিছুতেই পালাতে পারবেনা ধন্যবাদ সবাইকে।” বলেই ক্যামেরার সামনে থেকে চলে আসে। এদিকে অনুরাগ টিভিতে সবটা দেখতে পাচ্ছে অদ্ভুত একটা হাসি তার পুরো মুখ জুড়ে। অনুরাগ আজ অফিসে যাইনি। ইচ্ছে করে সে তার বাবা মাকে বলেছে তার আজ অনেক কাজ। সে যেতে পারবে না তৃষাতুরদের বাসায়। এরমধ্যে অনুরাগের ফোনে একটা ফোন নাম্বারটা আননন ছিল। অনুরাগ হ্যালো বলতেই অপরপাশে পুরুষালি কন্ঠে একটা আওয়াজ শোনা যাই। “দ্যা গেম ইজ স্টার্ট নাও”। আওয়াজটা শোনার পরপরই অনুরাগ রাগে দুঃখে চিৎকার করে বলে কে তুই? পরিচয় দে? কিসের গেমের কথা বললি রাসকেল? ওপাশ থেকে শুধু হাসির আওয়াজ আসলো তারপর ফোনটা কেটে যায়। অনুরাগের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কে লোকটি যে তার সঙ্গে এইভাবে কথা বলল। একে সামনে পেলে হয়তো সে মেরে পুতে ফেলতো কিন্তু সে এমনটা পারছে না। তার ভিতরে একটা ভয় আসে আছ যা কিছু হলো এর জন্য পরে ওর প্রিয়জনদের সাফার করতে হবে নাতো?
অনুরাগ দৌড়ে কার্বাড থেকে শার্ট আর ব্লেজার বের করে রেডি হয়ে নিলো। উদ্দেশ্যে তার চৌধুরী বাড়ি।
__________
এদিকে মাহির এই দুইবছরে একবারো মাহির মিহুকে ছাড়া ভাবতে পারেনি। কিন্তু এখন অজান্তেই মেধাকে তার ভাবনার মাঝে পাই। যেহেতু এই অনুভূতি ওর জানা মাহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না না চাইতেও সে মেধাকে কতটা প্রায়োরিটি দিয়ে ফেলেছে। ওরমনে অনুরাগের একটা কোথায় আসছে সেটা হলো মিহু চাই ও ভালো থাকুক। কিন্তু এইভাবে মিহুকে মনে পরতে থাকলে তার আর ভালো থাকা হবে না। তাই সে মেধার সঙ্গে কথা বলবে বলে ঠিক করেছে। মাহির গাড়ি নিয়ে প্রথমে ফোনের দোকানে যায়। তারপর ভালো দামী দেখে একটা সুন্দর ফোন প্যাক করে মেধার বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়। সেদিন গুন্ডাগুলো ওর ফোন ভেঙে ফেলে তাই মাহির মেধাকে ওর টাকার কেনা একটা সেলফোন গিফট্ করবে বলে ঠিক করে।
অন্যদিকে চৌধুরী বাড়ি যাওয়ার পথে অনুরাগ দেখে কেউ তার গাড়ির পিছু নিয়েছে। ও যেদিকে যাচ্ছে অন্য একটা গাড়ি সেদিকেই যাচ্ছে। ও ইচ্ছে করে বিষয়টি বোঝার জন্য গাড়ীর স্পীড স্লো করে। অতঃপর ওই গাড়িটার স্পীড ও স্লো হয়ে যায়। এমনিতে বেশ বিরক্ত অনুরাগ এসব দেখে আরো রাগে ফেটে পরছে সে। সে ইচ্ছে করে গাড়িটাকে ঘুরিয়ে বার্না আবাসিকের দিকে নিয়ে যাই। আচর্য্য জনক ভাবে ফলোকৃত গাড়িটাও বার্না আবাসিকের দিকে অনুরাগের গাড়িকে অনুসরণ করে চলতে থাকে।
_________
মাহির বেশ অনেকক্ষণ ধরে মেধার বাসার নিচে দাড়িয়েঁ আছে। মেধাকে ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু বারবার ফোন বন্ধ বলছে। এবার ও ফোন দিতেই মেধা রিসিভ করে বলল,
-” সরি আমার ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো বুঝতে পারিনি ইন্সপেক্টর! কোন বিশেষ দরকার ছিলো কি? ছেলে গুলোর মৃত্যুর খবর আর বিভৎস চেহারাই বেশ আতঙ্কে তৃষাতুর অসুস্থ হয়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে
আপনাকে জানাননো দরকার তাই জানাচ্ছি। ”
-“কি বলছো কি? ওদের মৃত্যুর খবরে তৃষাতুর অসুস্থ?”
-” হুম আমি ঠিকই বলছি। তৃষাতুর অনেক অসুস্থ আমি এখানেই আছি কোন দরকার ছিলো আপনার ?”
মেধার কথায় ইন্সপেক্টর মাহির আমতা আমতা করে বলল,
-” হুহুমম। আপনি ওখানেই থামুন আমি আসছি।”
ইন্সপেক্টর মাহির চৌধুরী বাড়িতে আসতেই আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টিকে দেখে শকড্ হয়ে যাই।মাহির সবাই কে সালাম দিয়ে ইনভেস্টিগেশনের নাম করে আমার আর মেধার সঙ্গে দেখা করতে রুমে আসে। উনি রুমে আসার পর মেধার দিকে তাকিয়ে
আমার দিকে ফিরে একটা শুকনো হাসি উপহার দেয়।
আমি ও বিনয়ের সঙ্গে উনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলাম।
~চলবে ইনশাআল্লাহ
[