পদ্মপাতার জল পর্ব ৫

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_৫
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ ইরিনাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চারশো বোল্টেজের শক খেলো। ইরিনা কোথায়? এতো পদ্ম!
.
.
.
.
ইয়াশ অনেকক্ষণ পদ্মের দিকে তাকিয়ে রইল। মুখের আশপাশটায় চকলেট লেগে আছে। কালো চোখ জোড়া ওর দিকে ভয়ে, বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। পদ্ম কাঁপা গলায় বলল, আপনি! এখানে?

ইয়াশ- নিজের বোনের রুমে আসতে কি বাইরের মানুষের অনুমতির প্রয়োজন আছে নাকি?

পদ্ম- ইরিনা আপু আপনার বোন?

ইয়াশ- জ্বি মিস, আমার সুপ্রিয় বড়ো বোন। তা তুমি এখানে কি করছো? আমার বোনের শাড়ি পরে?

পদ্ম- ইরিনা আপু দিয়েছে।

ইয়াশ- এখনই হাত করে ফেলছো।

পদ্ম- হাত করছি মানে?

ইয়াশ- না জানার ভান করে লাভ নেই। আসলে তুমিই আমাকে ফলো করছো।

পদ্ম- আশ্চর্য! কি মনে করেন নিজেকে? সুপার স্টার? যে যখনই কেউ দেখবে প্রেমে পড়ে আপনার পেছনে ঘুর ঘুর করবে?

ইয়াশ- তাই বুঝি? তা তোমার কাছে কি মনে হয় মিস গেঁয়ো।

পদ্ম- কি মনে হয়? নেংটি ইঁদুর।

ইয়াশ- কি! ইঁদুর!

পদ্ম- হ্যাঁ, শুধু ইঁদুর না নেংটি ইঁদুর। আর আমি যদি মিস গেঁয়ো হই তবে আপনি মিস্টার ফাজিলের হাড্ডি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ছোটবেলায় আপনি যখন বাড়িতে গিয়েছিলেন আমি শাড়ি পরে উঠোনে খেলছিলাম। আপনি পিছন থেকে এসে কাঁচি দিয়ে আমার ব্লাউজ কেটে দিয়েছিলেন।

ইয়াশ- আমি নেংটি ইঁদুর? ফাজিলের হাড্ডি? দেখবে এই ফাজিল ছেলে কি করতে পারে?

পদ্ম- কি করার বাকি রেখেছেন? আসার সময় আমাকে আর বাবাকে ধুল খাইয়েছেন। আমার পছন্দ করা চকলেট বক্স নিয়ে চলে গেছেন।

ইয়াশ- কই? আমি তো দেখছি সেই চকলেট তোমার পেটেই যাচ্ছে।

এই কথা বলে পদ্মের ঠোঁটে লেগে থাকা চকলেট বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মুছে দিল ইয়াশ। সাথে সাথে পদ্মের সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল।

পদ্ম- আপনার হাত আমার কাঁধ থেকে সরান। আপনার স্পর্শ আমার অসহ্য লাগছে।

ইয়াশ বাঁকা হাসি দিয়ে আরও চেপে ধরে বলল, খুব বেশি অসহ্য লাগছে বুঝি? পদ্ম দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আমি সরাতে বলেছি।

ইয়াশ- না সরালে কি করবে?

পদ্ম আর কিছু বলল। খুব জোরে ইয়াশের বাম পা চটে দিল। সাথে সাথে ইয়াশ ওকে ছেড়ে বাম পা ধরে লাফাতে লাফাতে চিৎকার করতে লাগল। পদ্ম রেগে বলল, এবার দেখেছেন কি করেছি। শুধু লম্বায় ছয় ফুট হয়েছেন বুদ্ধিতে একফুটই রয়ে গেছেন। ইয়াশ লাফাতে লাফাতে পদ্মকে ধরতে গেলে পদ্ম সরে গেল। ইয়াশ গিয়ে পড়ল ড্রেসিং টেবিলের উপর। সেটার সঙ্গে মাথায় বাড়ি খেয়ে বসে পড়ল মেঝেতে।

এমন সময় হাসির আওয়াজ শুনে দুজনে দরজার দিকে তাকাল। ইরিনা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দুজনের কান্ড দেখে হাসছে। পদ্ম তার কাছে গিয়ে বলল, আপু, এই ফাজিলের হাড্ডি তোমার ভাই?

ইরিনা- হ্যাঁ রে পাগলী। শহরের হ্যান্ডসাম ছেলে আর তোর নেংটি ইঁদুর।

কথাটা শুনে ইরিনা আর পদ্ম দুজনেই হাসতে লাগল। ইয়াশ কোনোমতে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি এই গেঁয়ো মেয়েটার পক্ষ নিচ্ছো? তোমার এত কিউট ভালো ভাইটাকে এত কিছু বলল আর তুমি কিছু বলবে না?

ইরিনা ওর কাছে গিয়ে কানটা ধরে বলল, কাকে গেঁয়ো বলছিস? ওর নাম পদ্ম। আর আজ থেকে ও এখানে আমাদের সাথে থাকবে।
ইয়াশ আর পদ্ম, দুজনেই চেঁচিয়ে বললো, কিহ্!!!!!

ইরিনা- হুম। পদ্ম, মিষ্টি খাওয়াও। তোর রেজাল্ট দিয়েছে। তুই চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে চান্স পয়েছিস।

শুনে পদ্মর মুখ থেকে হাসি চলে গেল। মলিন হয়ে গেল মুখটা। ইরিনা জিজ্ঞেস করল, কিরে খুশি হোসনি? পদ্ম ইরিনাকে শক্ত জড়িয়ে ধরে বলল, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় খুশির খবরটা আমাকে দিয়েছ আপু। ইরিনা ওকে ছাড়িয়ে বলল, আরে পাগলি, কাঁদছিস কেন? চোখ মোছ। ইস্। আমার সাজটা পুরো নষ্ট করে ফেলল। ওয়াও, এবার বুঝতে পেরেছি কেন তোর একটা সাজ বেমানান লাগছিল। তোর ঠোঁটে চকলেট কালারের লিপস্টিক দেওয়া উচিত ছিল। এই কাজটা চকলেট করে দিয়েছে। ভালো। এখন মিষ্টি মুখ করাতে হবে। দাঁড়া আমি মিষ্টি আনি।

পদ্ম- মিষ্টি লাগবে না আপু। আসার সময় চকলেট এনে ছিলাম। ওটাই দেবো।

ইরিনা- ওকে বনু। প্রথমে আমার ভাইটাকেই খাওয়া। এটা চকলেট পাগল।

পদ্ম- ওনাকে খাওয়ানো লাগবে না। এর মধ্যে ওনার খাওয়া হয়ে গেছে।

ইরিনা- তোর হাত থেকে খেলে……

পদ্ম- আমার হাত থেকেই খেয়েছে। ওনার আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই। চলো তো। আগে আমি আমার বাবাকে খাওয়াবো।

পদ্ম নিজের ব্যাগ থেকে নিজে কেনা চকলেট বক্সটা নিয়ে ইরিনার সঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইয়াশ পদ্মের কথাগুলো ভেংচি কেটে বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা চকলেট বক্সের দিকে এগিয়ে গেল। মাত্র চকলেটে হাত দেবে এমন সময় কোথা থেকে পদ্ম এসে বক্স ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নিয়ে নিল। তারপর ভেংচি কেটে বক্সটা নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় পদ্ম মনে মনে হেসে বলল, কাল থেকে দেখবেন মিস্টার নেংটি ইঁদুর আমাকে মিস গেঁয়ো বলার ফল।
.
.
.
.
কাল রাতে গল্প করায় ভোরে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা প্রায় বেজে যাচ্ছে। ফজরের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ও দ্রুত ইরিনাকে জাগিয়ে দিয়ে নামায পড়ে নিল। নামায শেষে একটু কোরআন শরীফ পড়ে বারান্দায় চলে গেল পদ্ম। ইরিনার রুমের বারান্দাটাও বড়। বলতে গেলে পাশাপাশি চারটা রুমের সবগুলোর সাথেই এমন বড় বারান্দা আছে। চাইলে যেকেউ এক বারান্দা থেকে অপর বারান্দায় থাকা মানুষের সাথে কথা বলতে পারবে।
বারান্দার কাচের বাউন্ডারির সাথে কিছু গাছ লাগানো টবে। বেশ ভালোই লাগছে দেখে। চারদিকে বাগান। পদ্ম বাউন্ডারির উপর হাত রেখে পূর্ব দিকে তাকিয়ে রইল সূর্য ওঠা দেখার জন্য। হঠাৎ কারো দ্রুত দম নিয়ে কাউন্ট ডাউন করার শব্দ শুনে পূর্ব দিকের বারান্দায় তাকিয়ে চমকে উঠল পদ্ম। ইয়াশ ব্ল্যাক হাফ প্যান্ট আর ব্ল্যাক গেন্জি পরে পুশ আপ করছে। চুলগুলো ঘামে ভিজে ওর সাথে ওঠা নামা করছে। পদ্ম দেখে সাথে সাথে লজ্জায় চোখ সরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। ইয়াশ ব্যাপারটা খেয়াল করে একটা বাঁকা হাসি দিলো।
.
.
.
.
সূর্য উঠছে কিন্তু পদ্ম ইয়াশের জন্য ঐ দিকে তাকালে পারছে না। রাগ লাগছে ভীষণ। লোকটা যেন ওর সব সুন্দর মুহূর্তগুলো নষ্ট করার জন্য সব সময় তৈরী থাকে। কিছু সময় ধরে শব্দ বন্ধ হয়ে আছে দেখে পদ্ম ভাবল ইয়াশ হয়ত রুমে চলে গেছে। তাই আবার পূর্ব দিকে ফিরতেই ও ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। ইয়াশ ওর সামনে দাঁড়িয়ে। এত কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে ইয়াশের মুখ ধোঁয়ার কারনে চুলে জমে থাকা পানিগুলো পদ্মের মুখে টুপটুপ করে পড়তে লাগল। বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, ভেবেছিলে চলে গেছি? পদ্ম কাঁপা গলায় বলল, আপনি ঐ বারান্দা থেকে এই বারান্দায় কি করে এলেন?

ইয়াশ- যেভাবে মানুষ আসে।

পদ্মের চুল খোলা। বাতাসে উড়ছে। ওর রোদে পোড়া চেহারার সাথে উড়ন্ত চুলগুলো বেশ মানিয়ে গেছে। মুখের ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে ওর গালে। সদ্য ওঠা সূর্যের আলোয় ওকে সতেজ লাগছে। ইয়াশের হাত আপনাআপনি পদ্মের দুই গাল আঁকড়ে ধরল। ওর মুখে হালকা ফুঁ দিতেই আধ ভেজা চুলগুলো সরে গেল। পদ্ম কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইয়াশও ওর দিকে এগিয়ে গেল কোনো এক অদ্ভুত নেশায়।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here