#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_৬
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি
ইয়াশের হাত আপনাআপনি পদ্মের দুই গাল আঁকড়ে ধরল। ওর মুখে হালকা ফুঁ দিতেই আধ ভেজা চুলগুলো সরে গেল। পদ্ম কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইয়াশও ওর দিকে এগিয়ে গেল কোনো এক অদ্ভুত নেশায়।
.
.
.
.
পদ্ম চোখ বন্ধ করেই ইয়াশের নেশা ছুটিয়ে দিল। খুব জোরে ডান পা মাড়িয়ে দিল। ইয়াশ আউ বলে দূরে সরে গেলে পদ্ম হাসতে থাকে। ইয়াশ মেজাজ খারাপ করে বলে, এটা কি হল?
পদ্ম- দেখেননি কি হল? আবার করে দেখাতে হবে?
ইয়াশ- তুমি আমার পা মাড়ালে কেন?
পদ্ম- আগে আপনি বলেন আপনি কি করতে চাইছিলেন।
ইয়াশ অন্যদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল, কি আর করছিলাম। বাতাসে তোমার মুখের উপর চুল এসেছিল তাই ওগুলো ফুঁ দিয়ে……
পদ্ম- আমি বাচ্চা মেয়ে নই যে আপনি যা বোঝাবেন তাই বুঝে নেব। যা হোক যা করতে যাচ্ছিলেন সেটা আপনার ওই মিস জানুকে দিয়েই পূরণ করুন। আমার কাছে আসবেন তো ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব।
ইয়াশ- এই, তোমার ঝগড়া ছাড়া কি পেটের ভাত হজম হয় না। সারাক্ষণ আমার সাথে ঝগড়া লাগো কেন?
পদ্ম- ঝগড়া কি সাধে করি? যা হোক। উফ্, আপনার সাথে ঝগড়া করে বড্ড ক্ষিধে পেয়েছে। মনে হয় সত্যি সত্যি আমার পেটের ভাত হজম হয়ে গেছে। ইরিনা আপু……
ইরিনার নাম শুনে ইয়াশ ছুটে গিয়ে বারান্দার বাউন্ডারি টপকে নিজের বারান্দায় চলে গেল। পদ্ম এবার বুঝতে পারল ইয়াশ কি করে ওদের বারান্দায় এল। তবে ইয়াশের এভাবে পালিয়ে যাওয়া দেখে পদ্ম মুখ চেপে হাসতে লাগল। ইয়াশ নিজের বারান্দায় এসে ওকে হাসতে দেখে বলল, তোমার লাইফটা যদি আমি হেল না করেছি তবে আমার নাম মিস্টার নেংটি ইঁদুর……ধুর……মিস্টার ইয়াশ আমান না। ইয়াশ নিজের রুমে ঢুকে দরজা মেরে দিল। বারান্দার দরজা কাচের হওয়ায় পদ্ম সব দেখতে পাচ্ছে। ইয়াশ কতক্ষণ মেজাজ খারাপ করে রুমে হাঁটাহাঁটি করল। তারপর বিছানায় শুয়ে দেখল পদ্ম বারান্দায় দাঁড়িয়ে বারান্দার দরজা দিয়ে ওকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। তাই আবার উঠে পর্দা টেনে শুয়ে পড়ল দ্বিতীয় ঘুমের জন্য।
.
.
.
.
নয়টায় সবাই নাস্তার টেবিলে, শুধু ইয়াশ ছাড়া। ইরিনা আর আমিনা বেগম সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। পদ্মও করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমিনা বেগম জোর করে ওকে বসিয়ে দিয়েছেন। ইরিনা ওকে জেলিমাখা পাউরুটি দিতে এলে পদ্ম জিজ্ঞেস করল, তোমার গুনধর ভাই ব্রেকফার্স্ট করবে না?
ইরিনা- না গো বনু, ওর ব্রেকফার্স্ট হবে দুপুর বারোটা।
পদ্ম- কি? এত দেরি?
ইরিনা- জ্বি ম্যাম।
পদ্ম- এটা তো স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। তাহলে তো কিছু একটা করতে হয়।
ইরিনা- পারবি?
পদ্ম চোখ টিপে বলল, পারব। মাহফুজ আমান ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি বলছো দুই বোন মিলে? আমাদেরকেও একটু বলো।
পদ্ম- টপ সিক্রেট।
মাহফুজ- ও তাই! এহে…… আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন আর শোনা হল না। তবে কাজ থেকে এলে কিন্তু শুনব।
পদ্ম- অবশ্যই।
ফরহাদ- আমিও তবে বের হয়ে যাই।
পদ্ম- আমি?
মাহফুজ- আজকে থেকে তুমি এখানে থাকবে মা।
পদ্ম- কিন্তু কিন্তু……
ফরহাদ- ভাই ঠিকই বলেছে। কয়দিন এখানে থাক। ভর্তি হওয়ার পর বাড়িতে ঘুরে আসিস।
ফরহাদ মিয়া আর মাহফুজ আমান বেরিয়ে গেলেন। পদ্ম মন খারাপ করে খেতে লাগল। খাওয়া শেষ হলে ইনু বলল, আপু, আমাকে সিক্রেটটা বলবে না? ইরিনা পদ্মের দিকে তাকাল। পদ্ম বলল, বলব, চলো আগে ইরিনা আপুর রুমে।
.
.
.
.
ইরিনা, পদ্ম, ইনু আর রিনি গোল হয়ে বসে আছে। মিশন ইয়াশের ঘুম ভাঙানো। মিশনের হেড হলো পদ্ম। পদ্ম জিজ্ঞেস করল, তোমাদের ভাইয়া কি বারান্দার দরজা লক করে?
ইনু- আমি যতদূর জানি ভাইয়া লক করে না।
পদ্ম- তোমরা এটা জানো যে এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় যায়।
ইরিনা- জানি। বাঁদোরটা এভাবে এসে খালি জ্বালায়। ঐদিন বিকালে আমরা বারান্দায় বসে লুডু খেলছিলাম। সে নিজের বারান্দায় থেকে বলল, আমার হাতের কফি খাবে। আমি বানিয়ে দিইনি বলে ঐ বারান্দা থেকে লাফিয়ে এসে আমাদের খেলাটা নষ্ট করে দিয়ে আবার নিজের রুমে গিয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিল। আমরা ওর মতো লাফিয়ে পার হতে পারি না। আমার হাইটে ভয় লাগে। আর ওরা তো ছোট। তাই গিয়ে ওর রুমের দরজা পেটাতে লাগল। রিনি এসে বলল, লাভ নেই। ও নাকি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। কেমনটা লাগে বল।
পদ্ম- কেউ যেতে পারবে না বলেই বারান্দার দরজায় লক করে না। বুঝলাম। তাহলে ওখান দিয়ে মিশন পসিবল করতে হবে।
পদ্ম হাত বাড়িয়ে বলল, মিশন মিস্টার নেংটি ইঁদুর অন দ্যা ওয়ে। সবাই হাসতে হাসতে ওর হাতের উপর হাত রেখে বলল, অন দ্যা ওয়ে।
.
.
.
.
পদ্মের গাছে চড়ার অভ্যাস থাকায় ইরিনার বারান্দা থেকে ইয়াশের বারান্দায় লাফিয়ে চলে গেল। আস্তে করে দরজা টেনে দেখল খোলা। পর্দা সরিয়ে আস্তে করে ঢুকল রুমে। পদ্ম ঢুকেই অবাক হয়ে গেল। রুমটা ইরিনার রুমের মতোই বড়। একটা দেয়ালের অর্ধেক আলমারি। তারপাশে একটা লম্বা আয়না। অপর দেয়ালে ছোটখাটো একটা লাইব্রেরি। সেখানে বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকদের বই। তার পাশে দেয়ালে কিছু কাঠ আড়াআড়ি ভাবে লাগানো। সেখানে নানা রকমের ক্রেস্ট। রুমের মাঝে কিছু গোল বালিশের মতো সোফা রয়েছে। তার পাশে একটা গিটার সাজানো। আর একপাশে ইয়াশের বিশাল বড়ো বিছানা যেখানে এখন সে মরার মতো ঘুমাচ্ছে।
পদ্ম আস্তে করে গিয়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটা থেকে এলার্ম ঘড়িটা তুলে নিল। এলার্ম সেট করল নয়টা পয়ত্রিশ। এখন থেকে পাঁচ মিনিট পর। ঘড়িটা টেবিলে রেখে ইয়াশের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আস্তে আস্তে বলল, এবার বুঝিবে ঠেলা মিস্টার নেংটি ইঁদুর, আমার পেছনে লাগার ফল।
.
.
.
.
পদ্ম সোজা হয়ে মাত্র পা বাড়াল এমন সময় হাতে টান অনুভব করল। পেছনে তাকিয়ে দেখল ইয়াশ ঘুমের ঘোরে ওর হাত ধরে ফেলেছে। ও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু ইয়াশ এত শক্ত করে ধরেছে যে ও ছাড়াতেই পারছে না। এদিকে একটু পর এলার্ম বেজে উঠবে। কি করবে বুঝতে পারছে না। ধরা খেলে খবর আছে। হঠাৎ এত কিছুর মাঝে ইয়াশ ওর হাত ধরে একটান মারল। পদ্ম সোজা গিয়ে পড়ল ইয়াশের বুকে।
চলবে……