#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৯
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি
হঠাৎ মনে হল কেউ ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় থাকা কাঠবেলীর ঘ্রাণ নিচ্ছে। পদ্মে পেছনে ফিরে চমকে উঠে বলল, আপনি? আরে, কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে। না হলে কিন্তু চিৎকার করব।
আকাশ- করো চিৎকার। দেখি কতজন আসে।
পদ্ম- আপনি কি মনে করছেন আমি মিথ্যা ভয় দেখাচ্ছি?
আকাশ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, মোটেও না। তবে যাই বলো, তোমাকে সেই লাগছে। শাড়িটাও কত সুন্দর করে পরেছ।
পদ্ম- আমার বর পরিয়ে দিয়েছে। সুন্দর তো হবে।
পদ্মের কথা শুনে আকাশের মুখটা কালো হয়ে গেল। বলল, তুমি বিবাহিত?
পদ্ম- কোন সন্দেহ আছে?
আকাশ- হুম। তোমার বরের একটা ছবি দাও। দেখব, কেমন সুদর্শন বর তোমার।
– ছবি দেখে কি হবে, আকাশ?
পদ্ম দেখল ইয়াশ একটা সরবতের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও সব শুনতে পেয়েছে। ইয়াশ সরবত খেতে খেতে ওদের দিকে এগিয়ে এল। গ্লাসটা পদ্মের হাতে দিয়ে বলল, তোমার কাছে রাখো নইলে আজকেই এটার জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, কি বলছিলে আকাশ? ছবি? ওর বরের। ছবি লাগবে না। জলজ্যান্ত দেখে নাও।
আকাশ- কোথায়?
ইয়াশ- চোখে কি ছানি পড়েছে? তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, দেখতে পাচ্ছো না?
আকাশ- তুমি কি নিজেকে ওর বর কল্পনা করছ নাকি?
ইয়াশ- যা সত্যি তাই বলছি।
আকাশ- তুমি বলছ, আর আমাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে? কি প্রমান আছে?
ইয়াশ- কি প্রমান চাও?
মনিকা ইয়াশকে দেখে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল, কি করছিস তোরা? জানু কি হয়েছে? তোমার মুখ এমন কেন? মনে হচ্ছে রেগে আছো।
আকাশ- মনি, তোর জানু বলছে ওর নাকি বিয়ে হয়েছে পদ্মের সাথে।
মনিকা- এসব তুমি কি বলছ জানু! ঐ মেয়েটার সাথে তোমার কেন বিয়ে হবে? ধুর, জানু মজা করছে, তাই? আকাশ তুইও না।
ইয়াশ- আমি মোটেও মজা করছি না। কি প্রমান চাও?
আকাশ- পারবে ওকে সবার সামনে কিস করতে?
মনিকা- আকাশ এসব কি বলছিস? ও মোটেও এমন ছেলে না যে যাকে তাকে কিস করবে। ও……
হাতে গ্লাস নিয়ে ইয়াশের আড়ালে পদ্ম চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াশ পদ্মকে টেনে দুই গাল চেপে ধরল। মিলিয়ে দিল নিজের দুই ঠোঁট পদ্মের রাঙা ঠোঁটের সাথে। কেউই এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আকাশ জানে ইয়াশ কেমন ছেলে৷ ও আর যাই করুক কোনো অবিবাহিত মেয়েকে কিস করবে না। সেটা সে সজ্ঞানে হোক বা রাগের মাথায়। আকস্মিক এমন হওয়ায় পদ্মের হাত থেকে সরবতের গ্লাস পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সেই শব্দে সবার নজর গেল ওদের দিকে। চারদিক নিঃস্তব্ধ হয়ে গেল। মনিকা ইয়াশকে সরানোর চেষ্টা করল কিন্তু ইয়াশ পদ্মকে ছাড়ল না। পদ্ম চোখ বন্ধ করে শাড়ি খাঁমচে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশ একহাত পদ্মের কোমরে দিয়ে ওকে আরও কাছে টেনে নিল। কিছু সময় পর ইয়াশ পদ্মকে ছেড়ে ওর বুকে জড়িয়ে নিল। পদ্মর তখন চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সেই পানি ভিজিয়ে দিল ওর পাঞ্জাবির বুকের বাম পাশটা। মনিকার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ও ইয়াশকে নিজের দিকে ফিরিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল গালে। সাথে সাথে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেল। ইয়াশ কিছু বলল না। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বাম হাতে শক্ত করে জড়িয়ে আছে পদ্মকে। মনিকা চিৎকার করে বলল, কি করলে এটা তুমি? কেন করলে?
ইয়াশ- আকাশ প্রমান চেয়েছিল, প্রমান দিয়ে দিয়েছি। আর কোনো প্রমান দিতে হবে?
পদ্ম ইয়াশের হাতের মধ্যে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। না রাগতে পারছে, না পালাতে পারছে। একটা সামান্য ব্যাপার এত বড় ইস্যু হয়ে যাবে তা ওর মাথাতেও আসেনি।
ইয়াশ- আর কোনো প্রমান লাগবে না? কি হল বলো? সবাই শুনে রাখো, পদ্ম আমার স্ত্রী। যে ওর দিকে এগিয়ে আসবে, আমি ঢাল হয়ে ওর সামনে দাঁড়াব। বুঝেছ?
ইয়াশ পদ্মের হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। আকাশ ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। রাগের মাথায় মনিকা কি করবে বুঝতে পারছে না। শেষে সব রাগ একটা খাবার টেবিলের উপর ঝাড়ল। সব ভেঙে ফেলল। আকাশ গিয়ে ওকে ধরে ফেলল না হলে ও সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। মনিকা কাঁদতে লাগল আকাশের পাঞ্জাবি আঁকড়ে।
.
.
.
.
ইয়াশ পদ্মকে দোতলার ঐ আগের রুমটাতে নিয়ে গেল। রুমে এসে পদ্মের হাত ছেড়ে দিল ও। পদ্ম মেঝের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। দরজা আটকানোর শব্দ শুনে দেখল ইয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভয়ে ওর সারা শরীর কেঁপে উঠল। ভয়ার্ত গলায় বলল, দদরজা বন্ধ ককরলেন কেন?
ইয়াশ- জানতে চাও?
ইয়াশ এগিয়ে এল ওর কাছে। পদ্ম পালাতে চেষ্টা করেও পারল না৷ ইয়াশ ওর হাত টেনে এনে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো।
পদ্ম- কেন এমন করেছেন? কি হয়েছে আপনার?
ইয়াশ- নেশা করেছি। তোমার নেশা।
কথাটা শুনে পদ্মের কাঁপুনি ছুটে গেল। ইয়াশকে দেখে সুবিধার মনে হল না। ওর চোখ এখন অন্য কথা বলছে। এখন না ছাড়াতে পারলে ও শেষ। ইয়াশ ওর হাত দুটো উঁচু করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে। পদ্ম খুব জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল। তবু ইয়াশ ছাড়ল না। বরং ওর দিকে এগিয়ে এল।
এমন সময় কেউ দরজায় নক করল। বাইরে ইরিনার ডাক শোনা যাচ্ছে। ইনু আর রিনিও এসেছে। ওদের কন্ঠ শুনে ইয়াশ ছেড়ে দিল ওকে। ছাড়া পেয়ে দরজা খুলেই ইরিনার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল পদ্ম। ইয়াশ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। ইরিনা পদ্মকে শান্ত করে ইয়াশের দিকে এগিয়ে এল। নিজের দিকে ফিরিয়ে হাত ওঠাল চড় মারার জন্য কিন্তু মারল না। হাত উপরে উঠেই থেমে গেল।
ইরিনা- নিচে যা। সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। বাড়ি ফিরবে।
ইয়াশ কোনো কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে গেল। একবার তাকালোও না পদ্মের দিকে।
.
.
.
.
সকাল সাতটা থেকে সবার ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল। চারদিকে সবাই পাখির মতো কিচিরমিচির করতে লাগল। তিন বন্ধুর খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে টানাটানি করল কিছুক্ষণ। ওদের দেখে হাসির রোল পড়ে গেল সেখানে। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই তৈরী হয়ে নিল নিলাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। সাড়ে এগারটায় ওরা বের হলো বাড়ি থেকে। গুনে গুনে দুইশো তেরজন বর যাত্রী গাড়িতে উঠল। তিনটা বাস, চারটা মাইক্রো আর বরের গাড়ি। সব জায়গায় গাদাগাদি। তিন বন্ধু বরের গাড়িতে এসেছে বলে আরামে গেল বৌয়ের বাড়ি। জুম্মার নামাযের আগেই সেখানে পৌঁছে গেল বর যাত্রী। সবাই বাড়ির ভেতর ঢুকল। কোথাও কেউ আটকাল না টাকার জন্য। ব্যাপারটাতে ওদের কেমন খটকা লাগল। ইয়াশের একটা ফোন আসায় ও একটু সরে এল অন্যদিকে।
বরকে স্টেজে ওঠার সময় হঠাৎ একটা বাচ্চার হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে গেল আদনানের জুতায়। সাথে সাথে বাচ্চাটা কান্না করে দিল। হঠাৎ পদ্মের কোথা থেকে উদয় হল। সাথে তার মেয়ে বাহিনী। পদ্ম এসে বাচ্চাটার কান্না থামিয়ে বলল, ইস্। আদনান ভাই, আপনার জুতো তো নষ্ট হয়ে গেল। আমাকে দিন, পরিষ্কার করে আনি।
আদনান- লাগবে না। ঠিক আছে।
পদ্ম- আরে দিন তো। নোংরা জুতো পরে বিয়ে করবেন নাকি?
পদ্ম জোর করে আদনানের পায়ের জুতা খুলে নিল। এদিকে ইয়াশ কথা শেষ করে স্টেজের দিকে রওনা দিল। ওকে দেখেই পদ্ম মুহূর্তে জুতা নিয়ে হাওয়া। ওর দেখাদেখি মেয়ে বাহিনীও হাওয়া। ইয়াশ কাছে এসে বলল, কি রে,এভাবে খালি পায়ে বসে আছিস কেন?
আদনান আমতা আমতা করে বলল, না মানে, জুতায় আইসক্রিম পড়েছিল তাই পরিষ্কার করতে নিয়ে গেছে।
ইয়াশ- কে নিয়ে গেছে?
আদনান- পদ্ম।
ইয়াশ- বেকুব, ও চাইল আর তুই দিয়ে দিলি? জানিস না বিয়েতে বরের জুতা চুরি করে? এতো রীতিমতো ডাকাতি করেছে।
চলবে……