#ভাগ্য ৮ পর্ব
হাসিব অনেক খুশী হয়েছে মেয়েকে কোলে নিয়ে, আমিও খুশী হলাম আমার মেয়েকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে।
সাতদিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় গেলাম, বাচ্চার নাম এখনো রাখা হয়নি।
আমি বললাম হাসিবকে বাচ্চার নাম রাখতে, হাসিব বলে আমাকে নাম রাখতে।
হাসিবকে আমি বলে দিয়েছি যতদিন সে বাচ্চার নাম না রাখবে ততদিন বাচ্চা নাম বিহীন থাকবে।
আচ্ছা বেবির নাম নিধি রাখলে কেমন হয়, হাসিব আমাকে বলল।
অনেক সুন্দর নাম, কিন্তু শুধু নিধি তার আগে পরে কোন কিছু থাকবে না, না কি অনলি নিধি।
হাসিব বলল, আগে পরে যাই রাখতে হয় সেটা আপনি রাখবেন।
আমি রাখলাম রুবাইয়াত, দুইজনের নাম মিলে হলো রুবাইয়াত নিধি।
হাসিব নিধিকে অনেক আদর করে কখনো কখনো কেউ নিজের সন্তানকেও এতটা ভালোবাসে না।
নিধির এক বছর পৃণ্য হয়েছে, হাসিব নিধির জন্য সোনার চেইন নিয়ে এসে নিধির গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল, সোনার চেইন এ আমার মেয়েকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
নিধি হাসিবকে পাপ্পা বলে ডাকে, নিধিও হাসিব বলতে পাগল।
হাসিব যতক্ষণ বাসায় থাকে নিধি হাসিবের কাছেই থাকে, আমার কোলে আসতে চায়না, খাবার ও হাসিবের হাত থেকেই খায়। হাসিব যখন বাসায় না থাকে, নিধি তখন কান্না করলেই বলে, পাপ্পার কাছে যাবো পাপ্পার কাছে যাবো।
সানডেতে হাসিব নিধিকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায়, মাঝেমধ্যে আমাকে সাথে করে নিয়ে যায় পার্কে ঘুরতে। আমি যেতে চাইনা, হাসিব জোর করে, কি আর করা যাওয়া লাগে, না হলে হাসিব রাগ করবে।
আর ছয়মাস পর হাসিবের পড়াশোনা শেষ হবে।
তারপর হাসিব দেশে চলে যাবে, আমাকে আর নিধিকে সাথে নিয়ে যাবে, তাই সে চাইছে আমি যেন তাকে বিয়ে করি, কিন্তু আমার মত মেয়ে হাসিবের মত ছেলের বউ হবো এ কথা আমি ভাবতে পারিনা।
হাসিব আমাকে সত্যি বিয়ে করতে চায় সেটা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু বিয়েটা করতে চায় শুধু নিধির কথা চিন্তা করে।
আমি চাইনা শুধু নিধির কথা ভেবে আমার মতো একজন অসুন্দর মেয়েকে হাসিব বিয়ে করুক,
সে চাইলে অনেক সুন্দরী মেয়ে তার বউ হবে।
হাসিবকে বলে দিলাম, বাংলাদেশে যেয়ে যা হবার হবে, সেটা আপনার ভাবতে হবে না, আমি পারব না আপনাকে বিয়ে করতে।
হাসিব জানতে চাইলো তাকে বিয়ে করতে আমার প্রব্লেম কি।
কোন প্রব্লেম নেই, আপনাকে স্বামী হিসেবে পাওয়া যে কোনো মেয়ের ভাগ্য, সেই ভাগ্য আমার নেই।
আমি আপনার যোগ্য না, আমি চাইনা শুধু নিধির বাবা পরিচয় দেওয়ার জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করেন।
আপনি অনেক ভালো সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন, আমাকে বিয়ে করলে আপনি সমাজের কাছে আপনার পরিবারের কাছে হাসির পাত্র হবেন, আপনার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
আপনার কথা শেষ হয়েছে, যদি হয়ে থাকে এখন আমার কথা শুনেন। আমি শুধু নিধির বাবা হতে না আপনার স্বামী হতেও চাই। আমি নিধিকে যেমন ভালোবাসি আপনাকেও তেমন ভালোবাসি,
আর কি বললেন, আপনাকে বিয়ে করলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। আমার জীবন তো নষ্ট হবে নিধিকে আর আপনাকে কাছে না পেলে।
সমাজের কাছে আমি হাসির পাত্র হবে এটা বললেন, ধিক্কার এমন সমাজকে যেই সমাজ আপনাদের মত মেয়েদেরকে আদিবের মত অমানুষের হাত রক্ষা করতে পারে না।
আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে বিয়ে করব, এরপর আর কোনো কথা শুনতে চাইনা, আমি যা বলছি তাই হবে।
আমাদের বিয়ে হয়ে গেল, কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো রকমের শারীরিক সম্পর্ক হলো না।
দুইজন আমরা দুই রুমে থাকি, হাসিব কখনো বলেনি তার রুমে থাকতে।
সে যদি থাকতে বলত, অবশ্যই আমাকে তার রুমে থাকতে হতো, এখন হাসিব আমার স্বামী সে বললে তো আমি না করতে পারতাম না, তার পুরো হক আছে আমার উপর।
সবকিছু আগের মতই চলতে থাকল, হাসিব আমাকে আপনি করে বলে এটা আমার খারাপ লাগে।
হাসিবকে বলছি, এতদিন না হয় আপনি করে বলছেন, এখনো কি আপনি করে বলবেন, কখনো তো শুনিনি স্বামী তার স্ত্রীকে আপনি বলে ডাকে, না কি মন থেকে আমাকে স্ত্রী মেনে নিতে কষ্ট হয়।
এখন হাসিব আমাকে তুমি করে বলে,
আমিও চেষ্টা করছি তাকে তুমি করে বলার, কিন্তু পারছিনা, কেমন যেন লজ্জা লাগে।
হাসিব আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিলো, তুমি আমাকে এখনো আপনি করে বল, আমাকে কি স্বামী হিসেবে মানতে কষ্ট হয়।
তার কথা শুনে আমি হেসে দিয়ে বলেছি, ওই কি বল, আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দাও, তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি, তুমি বলে ডাকতে চাই কিন্তু লজ্জায় ডাকতে পারিনি, তবে আজ থেকে তুমিই বলব।
বাংলাদেশে যাবার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে আগামীকাল রাত সাতটায় আমাদের ফ্লাইট।
খুব উত্তেজিত অনুভব করছি, আড়াই বছর পর দেশে যাচ্ছি, মা বাবার বোনদের মুখ দেখতে পাবো, সেটা আজ সম্ভব শুধু হাসিবের জন্য হাসিব যদি আমাকে আশ্রয় না দিতো তাহলে এতদিনে আমি কোথায় না কোথায় ভেসে যেতাম খড়কুটোর মতো।
এখন আমি নিশ্চিত মনে বাংলাদেশে যেতে পারছি, মা বাবার সামনে যেয়ে বলতে পারব, হাসিব আমার স্বামী, আমার সন্তানের বাবা হাসিব।
বাংলাদেশে পৌছে হাসিব আমাকে বলল,
চল আগে তোমাদের বাসায় যাই, সেখানে তোমাকে রেখে, আমি আমার বাসায় যাবো বাবা মা ভাইয়াকে বুঝতে হবে, বলতে হবে ইংল্যান্ডে থাকা কালীন আমি এক অসহায় বাঙালী মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছি তোমাদের না জানিয়ে, আমার দেড় বছর বয়সী মেয়ে আছে।
যেভাবেই হোক তাদেরকে বুঝিয়ে তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো, এখন যদি হুট করে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাই, তাহলে বাবা ভাইয়া বেশী উত্তেজিত হয়ে যাবে।
হাসিব আমাকে নিয়ের আমার বাবার বাড়ি আসল।
আমার মা বাবা যখন জানতে পারল হাসিম আমার স্বামী আর নিধির বাবা, আর ইংল্যান্ড থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে, মা খুব খুশী হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
মনে মনে ভাবলাম আজ যদি হাসিব আমাকে বিয়ে না করতো তাহলে তোমরা আজ খুশী না হয়ে, কুকুরের মত ব্যবহার করে আমাকে তাড়িয়ে দিতে।
হাসিব আমাকে রেখে তার বাসায় চলে যেতে চাইল, মা বাবা কিছুতেই তাকে যেতে দিতে চায়না।
বাবা হাসিবকে বলছেন, বাবা তুমি আজ প্রথম আমাদের বাসায় আসছ, একটা রাত অন্তত থেকে যাও।
হাসিব মা বাবাকে বুঝিয়ে বলল, আরেকদিন আসলে থাকবে, এখন তার বাসায় যেতে হবে না হলে সমস্যা হবে, মায়ের অনেক জোড়াজুড়িতে হাসিব নাস্তা খেয়ে গেল।
যাবার সময় নিধিকে কোলে নিয়ে বলল,
নিধিকে আর তোমাকে রেখে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কি করব, আগে তো মা বাবা ভাইয়াকে বুঝতে হবে।
আমি চলে গেলে তুমি চিন্তা কর না, আমি ফিরে আসব দুই একদিনের মাঝে, তুমি নিধির দিকে খেয়াল রেখো, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নিধি অসুস্থ হতে পারে তুমি বিশেষ ভাবে নিধির যত্ন নিও।
হাসিব নিধিকে কপালে চুমু দিয়ে আমার কোলে তুলে দিলো, আমার হাত ধরে হাসিব বলল, ইসরাত আমি তোমাকে ভালোবাসি একদম ভয় পেয়ো না, ভেবো না আমি ফিরে আসব না।
আমি হাসিবকে বললাম, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, যে মানুষটা আমার জন্য এতকিছু করতে পারে তাকে অবিশ্বাস করা অসম্ভব।
লন্ডন থেকে আসার সময় হাসিব সবার জন্য শপিং করেছে, আমার মা বাবা বোনদের জন্য অনেককিছু শপিং করছে।
মা বাবা আর ছোট বোন মিলিকে তাদের জন্যে কেনা ড্রেস গুলো দিলাম, মেজো বোন ইমা তার বিয়ে হয়ে গেছে, তার জন্যে কেনা জিনিস গুলো রেখে দিলাম, মাকে বললাম, ফোন করে ইমাকে কাল আসতে বলতে।
হাসিব আমার কাছে দশ হাজার টাকা দিয়ে যায়, আমি কিছু টাকা বাবার হাতে দিলাম।
জামাই ইঞ্জিনিয়ার অনেক টাকা রোজকার করবে, হয়তো জামাইয়ের টাকায় বসে খেতে পারবে, সেই আশায় আমার মায়ের মুখ ঝলমল করছে।
আমার মা বাবার রুপ পাল্টে গিয়েছে, আমাকে আর নিধিকে কি আদর, কোল থেকে নিধিকে নামাতেই চায়না
চলবে,,,
সাদমান হাসিব সাদ