তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১০

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১০.
সাঁঝের এর কেবিনের সাথে যুক্ত মিটিং রুমে সবাই বসে আছে, সাঁঝ প্ল্যান দিচ্ছে সেই মতো একে একে সবাই কাজ করছে সাথে বাকিরাও তাদের প্ল্যান বলছে। তবে এইসব কিছুর মাঝে বেলা একদম চুপচাপ বসে বসে নিজের কাজ করে যাচ্ছে ভুল করেও নিজের মুখ থেকে একটা ওয়ার্ড ও বের করছে না। সাঁঝ প্ল্যান বোঝানোর মাঝে মাঝেই বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু এতে বেলার কোনো নড়াচড়া নেই ভুল করেও সে মাথা উঁচু করে দেখছে না তার সামনে বসা সাঁঝের দিকে। সে তার মত মাথা নিচু করে হাতে থাকা ট্যাবলেট নিয়ে কাজ করছে ওদের বলা প্ল্যান অনুযায়ী।

সাঁঝ একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে যে যার নিজের মত করে কাজ করছে আর কথা বলছে। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাঁকা হাসে। বেলা তার কাজের মাঝে হঠাৎ করে নিজের পায়ে স্পর্শ পেতেই কিছুটা কেঁপে ওঠে। তার পায়ে কেউ পা দিয়ে স্লাইড করছে আর এই কাজটা যে কার হতে পারে এটা বেলা খুব ভালো করেই জানে। বেলা বিরক্তি আর রাগে মাথা তুলে সাঁঝের দিকে তাকাতে দেখে সে এক মনে নিজের ট্যাবলেট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। কোথায় কি হচ্ছে যেনো তার কোনো খোঁজ নেই সে ভালো সেজে বসে ভিতরে ভিতরে যে কূটনামি করে যাচ্ছে সেটা কেউ বুঝতে পারেনা। বেলা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ সাঁঝের মুখের দিকে। তার পায়ের জোর কদমে নিজের পা দিয়ে স্লাইড করে যাচ্ছে। বেলা পিছনের দিকে একটু হেলে গিয়ে টেবিলের নিচের দিকে তাকায় দেখে সাঁঝ তার পায়ের স্টাইলিশ ব্ল্যাক লোফার খুলে তার পায়ে তার রাজত্ব জানিয়েছে। বেলা কিছুক্ষণ সেটা দেখে এবার একদম সাঁঝের মুখের উপরে তার দৃষ্টি রেখে সাঁঝের পায়ে নিজের পায়ের আঙুল দিয়ে জোরে চিমটি বসিয়ে দেয় ফলে পায়ের নখ সাঁঝের পায়ে বসে যায়। কিন্তু এতেও সাঁঝের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বরং তার মুখে ফুটে ওঠে উজ্জ্বল হাসি সে একই ভাবে মুখ নিচু করে মৃদু হাসছে। বেলা একবার টেবিলের নিচে পায়ের দিকে দেখে সাঁঝের ফর্সা পায়ে তার নখ ডেবে বসে গেছে সাথে বিন্দু বিন্দু রক্তের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে এটা দেখেই বেলা একবার সাঁঝের মুখের দিকে তাকায় দেখে সে এখনও সেই একইভাবে বসে মৃদু হাসছে। বেলা তাড়াতাড়ি করে নিজের পা সরিয়ে নেয় দেখে তার পায়ের দ্বারা চিমটি দেওয়ার জন্যে কয়েক জায়গায় নখ বসে ছড়ে গেছে রক্ত বেরহচ্ছে বেলা সাঁঝের মুখের দিকে দেখে তার পা ছেড়ে দিতে এবার সাঁঝ মাথা তুলে বেলার মুখের দিকে তাকায় দেখে বেলা তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে বেলার মুখমন্ডল স্বাভাবিক লাগলেও তার চোখ দুটো অস্থির হয়ে আছে আর এর কারণটাও বোঝে সাঁঝ এতে তার মুখের হাসি আরো কিছুটা বৃস্তিত হয়। সাঁঝের মুখের হাসি দেখে বেলা তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

ওম নিজের মত কাজ করতে করতে হঠাৎ করে মাথা তুলে তাকাতে তার নজরে আসে তার সামনে বসা সাঁঝ আর বেলার একে অপরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সাথে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে সাঁঝের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওটা হাসিটাও চোখ এড়িয়ে যায় না ওমের। ওম এবার তার পাশে বসা বেদের হাতে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করে। ওম বেদ ওদের দুজনকে চোখে চোখে ইশারা করে সামনের দিকে তাকাতে দেখে বাকিরাও মাথা তুলে সামনে তাকায় সাথে তাদের নজরেও আসে সাঁঝ বেলার একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। ওরা সামনের দিকে তাকিয়ে নিয়ে এবার নিজেদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ইশারা করতে থাকে।

বেদ ওম নিশান রুহি সারার কাছে সামনের ঘটতে থাকা ঘটনা খুবই অবাক করা লাগছে। কারণ এটা তাদের কাছে খুবই নতুন বেলার এই আচরণ। বেলাকে কখনই কোনোভাবে কোনো ছেলের সংম্পর্শে আসতে দেখেনি এমনকি খুব সাবধানতার সাথে সে এড়িয়ে যেতো তার কাছে ঘেঁষতে চাওয়া ছেলেদের বেলার অতীত তাকে একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে রাখত সব কিছু থেকে কিন্তু একদিন তার জীবনে প্রাণ সঞ্চার ঘটিয়ে এসেছিল কেউ কিন্তু কে সেটা সবারই অজানা আজও তার সংস্পর্শে থেকে বেলা আবারো নিজেকে মেলে ধরতে থাকে আবারো সে ঠিক হতে থাকে তার জীবনের ভাঙাচোরা অধ্যায় ছেড়ে আবারো নতুন ভাবে সব কিছুই শুরু করেছিলো বেশ ভালোই ছিল কিন্তু সেটাও সহ্য হলোনা আবারও ঝড়ের গতিতে বেলার জীবন আবারো অন্ধকারে ঢেকে যায় সেই প্রাণসঞ্চার করা মানুষের কথাও আর বেলার মুখে শোনা যায়নি আর তারপর থেকে নিজেকে গুটিয়ে না রাখলেও সব সময়ে নিজের মধ্যে একটা সীমারেখা টেনে রেখেছিলো যার গন্ডি সে কখনই পার করত না নিজেকে সব সময়ে ছেলেদের থেকে দূরে রেখেছিলো। আর আজ তারা সকাল থেকেই বেলাকে লক্ষ করছে সাঁঝের প্রতি তার দৃষ্টি কিছুটা অন্যরকম কিন্তু কেনো? কি এই দৃষ্টির মানে? আর সাঁঝ সেই বা কেনো বেলার দিকে ওইরকম মুগ্ধ করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে? এর হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারেনা ওখানে বসে থাকা ছয়জনে।

এর মধ্যেই হঠাৎ করেই রুমের মধ্যে আসা মেয়েলি কন্ঠে আওয়াজে সবাই যে যার চিন্তার জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসে।

-“সাঁঝ! তুমি এখানে আর আমি তোমাকে খুঁজে যাচ্ছি কখন থেকে। দিশা বিগলিত ভাবে বলে ওঠে।

সবাই মাথা ঘুরিয়ে দেখে রুমের মধ্যে দিশা ঢুকে এসে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তবে তাদের দিকে আসছে বললে ভুল হবে সে সাঁঝের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকে গিয়ে সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরতে যায়। সাঁঝ এখনও এক দৃষ্টিতে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর বেলার মুখে ফুটে ওঠা তাচ্ছিল্যভাব টাও চোখ এড়িয়ে যায়না। দিশা জড়িয়ে ধরতে গেলে দিশার হাত টেনে ঘুরিয়ে দেয় সাথে দিশা ঘুরে গিয়ে পিছনের দিকে কিছুটা দূরে সরে যায়। দিশার জড়িয়ে ধরাতো হলোনা সাথে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাঁঝ তার দৃষ্টি বেলার দিকে থেকে এবার দিশার দিকে করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় দিশার দিকে। দিশা তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যে কিছু বলতে নিলেই সাঁঝের রাগী ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে চুপ করে যায় আর কোনো কথা বলেনা।

-“আকাশ! আকাশ! সাঁঝ জোরে চিৎকার করে ডেকে ওঠে।

সাঁঝের চিৎকার শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ রুমে এসে ঢোকে সে একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নেয়।

-” ইয়েস স্যার। আকাশ বলে ওঠে।

-” তুমি জানো আমি এখন জরুরী মিটিংয়ে আছি তাহলে দিশা এখানে কি করে আসলো? তুমি জানোনা আমি কাজের সময়ে ডিসট্রাব পছন্দ করিনা তাহলে? সাঁঝ টেবিলের উপরে জোরে হাত দিয়ে আঘাত করে বলে ওঠে।

-“স্যার মিস দিশাকে আটকানোর আমার কোনো অধিকার নেই কারণ দিশা সম্পর্কে আপনার রিলেটিভ হয় সাথে আপনাদের নাকি ভালো সম্পর্ক তাই আমি তাকে আটকাতে পারিনা। আর যদি এই সাহস দেখানোর চেষ্টা করি তাহলে হয়তো আমার চাকরি নাও থাকতে পারে। আকাশ একবার দিশার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে ইনডাইরেক্টলি দিশার বলা কথা গুলো বলে ওঠে।

আকাশের কথা শুনে সাঁঝ বুঝতে পারে কি ঘটেছে আর এই কথাগুলো কার হতে পারে। এর আগেও সে এমন কথা অনেক শুনেছে কিন্তু কিছুই বলেনি তবে আজ ব্যাপারটা অতিরিক্ত হয়ে গেছে দিশার এই ব্যবহার তার সহ্য হয়না শুধু তাইনা পুরো দিশার অস্তিত্ব টায় তার সহ্য হয়নি কিন্তু তার হাত পা বাঁধা তাই সে চেয়েও কিছু করতে পারেনা বাধ্য হয়ে এই মেয়েকে সহ্য করে যায় নাহলে কবেই একে সরিয়ে দিতো।

———–

বেদ সারা শান্তা নিশান ওম রুহি একসাথে এস.আর গ্রুপে তাদের কাজ সেরে করে বেরিয়ে অফিস থেকে বের হয়। নিজেদের মধ্যে আজকের ঘটে যাওয়া বেলা ও সাঁঝের ঘটনা নিয়ে তারা আলোচনা করতে করতে পার্কিং এর দিকে যেতে থাকে। এর মধ্যে রুহি ওদের থেকে কিছুটা দূরে হয়ে যায়, রুহি তার হাতে থাকা স্টাইলিস ব্যাগ থেকে বাইকের কিজ বের কর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নেয়। রুহি নিজের কাজে এত ব্যস্ত ছিল যে সামনের দিকে আর এক পা বাড়াতে না বাড়াতে ধাক্কা খেয়ে নিচু পড়তে যায়। তবে রুহি পড়ে না তাকে কেউ ধরে নিয়েছে। রুহি পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখে চেপে বন্ধ করে নেয়। কোমরের কারোর স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায় দেখে কেউ তাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। রুহি এবার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তির দিকে তাকায় যে এখনও তাকে ধরে আছে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রুহি একবার মুখের দিকে তাকায়।

-“উম দেখতে বেশ হ্যান্ডসম খুব খারাপ নয়। রুহি নিজের মনে মনে ভাবতে থাকে।

-” আরে ভাই।

পিছন থেকে সারা ডেকে উঠতে রুহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে পিছনের দিকে ফিরে তাকায় দেখে সারা দাঁড়িয়ে আছে সাথে তিনটে ছেলেও এক মেয়ে তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে । সারা এগিয়ে এসে দাঁড়ায় রুহির পাশে।

-” ভাই তুমি এত দেরি করে আসলে কেনো? সারা মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে।

-” সারু আমি মিটিংয়ে ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়েছে। আচ্ছা তুই যা আমি ভিতর যাই কাজ আছে। সারিফ হেসে বলে উঠে একবার রুহির দিকে তাকিয়ে থেকে রহস্যময় হেসে অফিসের ভিতরের ঢুকে যায়।

রুহি এতক্ষণ একভাবে সারা আর সারিফের কথা শুনছিলো সাথে কোনা চোখে সারিফকে স্ক্যান করছিলো সারিফ অফিসে ঢুকে যাওয়ার সময়ে তার দিকে তাকিয়ে হেসেছিলো সেটা রুহির চোখ এড়িয়ে যায়নি। রুহি নিজের মনে মৃদু হেসে সমানে তাকাতে দেখে সারা তার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি নিজেকে সামলে সারাকে টেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here