মহুয়া পর্ব -০৩

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ৩

_” কী ন্যায় করব? তুই খোলাখু‌লি ভা‌বে স‌ত্যিটা বল‌লে তো ন্যায় করব? মানুষ কো‌নো কিছু নি‌য়ে বিচার তখন ক‌রে যখন সে বিষ‌য়ে প‌রিষ্কার ভা‌বে কিছু জা‌নে। কিন্তু সে‌দিন কী ঘটে‌ছিল তা প‌রিষ্কার ভা‌বে তুই কিছু ব‌লে‌ছি‌লি? কারণ ছাড়া, যু‌ক্তিছাড়া, কতগু‌লো কথা ব‌লে‌ছি‌লি। আর তোর ভি‌ত্তিহীন কথা নি‌য়ে বাবা-মা কত কত ঝা‌মেলা করল। তো‌কে বাবা-মা সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সে তারমা‌নে এটা নয় যে ত‌ুই অন্যায় কর‌লেও তা স‌ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। লজ্জা ক‌রে না তোর বোন হ‌য়ে বো‌নের হ‌য়ে বো‌নের সংসার ভাঙ‌ছিস? আমরা ছোট বেলা থে‌কে একসা‌থে বড় হ‌য়ে‌ছি কিন্তু বাবা-মা তোর দি‌কে সবসময় এক‌চোখা‌গি‌রি ক‌রে‌ছেন। কেন? তুই একা তো তা‌দের মে‌য়ে নস! আমিও তা‌দের মে‌য়ে। তোর চে‌য়ে বয়‌সেও দেড় বছ‌রের বড়ও। আর বড় ভাইয়া তি‌নি আছেন নিজ দু‌নিয়ায়। পরিবা‌রে কি হল না হ‌লো তা নি‌য়ে তার কো‌নো ভ্রু‌ক্ষেপ নেই। বাবা মা‌য়ের তিন‌টি সন্তানই আপন কিন্তু তোর প্র‌তি তা‌দের আদ‌রের ভাগ বরাবরই বে‌শি থা‌কে।
_” তে‌া থাক‌বে না কেন?
_” বাবা মা‌য়ের সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবাসা যখন পে‌য়ে‌ছিস তখন আমার সাংসা‌রিক ভা‌লোবাসা কেন নষ্ট কর‌ছিস? আমি তো তো‌দের থে‌কে দূ‌রে চ‌লে গি‌য়ে‌ছিল‌াম। দি‌ব্যি সু‌খে নি‌জের সংসার কর‌ছিলাম। কিন্তু না ছোট‌বেলা থে‌কে যেমন আমার সব জি‌নি‌সে তুই ভাগ বসা‌তি তেম‌নি আমার সংসা‌রটাও ভাঙ‌তে গে‌লি। নি‌জের বোন‌কে কষ্ট দি‌তে তোর লজ্জা ক‌রে না?

‌প্রেমা খা‌নিক চিৎকার ক‌রে বলল,
_” না ক‌রে না। কারণ তুই আমা‌কে বোন ভাব‌লেও আমি তো‌কে ভা‌লোবা‌সি না। বলতে পা‌রিস এক রকম ঘৃণা ক‌রি।
_” কেন? আমি তোর কী ক্ষ‌তি ক‌রে‌ছি?
_” ছোট বেলা থে‌কে ক্ষ‌তি ক‌রিসনি, বড় হবার পর থে‌কে বহু ক্ষ‌তি ক‌রে‌ছিস। ত‌বে কথায় আছে না কিছু মানুষ কারণ ছাড়াই আপনা‌কে অপছন্দ ক‌রে, ঘৃণা‌ করে। তেম‌নি ছোট বেলা থে‌কেই তো‌কে আমি কারণ ছাড়াই ঘৃণা ক‌রি। আর বড় বেলায় ঘৃণার কারণটা আসিফ।
_” আসিফ কে? আমা‌দের যি‌নি ম্যাথ পড়া‌তেন তি‌নি? আ‌সিফ স্যার?
_” হ্যাঁ। আসিফ স্যার‌কে আমি ভা‌লোবাসতাম। তা‌কে প্র‌পোজ করলাম কিন্তু স্যার আমা‌কে অপমান কর‌লেন। বল‌লেন, তোমার বোন কত ভ‌া‌লো, ভদ্র হও। নি‌জের বো‌নের মত পড়াশুনায় ভা‌লো হও, মান‌সিক দিক থে‌কে ভা‌লো হও। এসব বাজে দি‌কে চিন্তা বাদ দাও। তোমার বোন তো এমন বা‌জে চিন্তা ক‌রে না। ত‌বে তু‌মি ইঁচ‌রে পাকা কেন? নি‌জের বো‌নের থে‌কে কিছু শি‌খো। কেন রে তুই এমন কি মহামানব যে তোর মত হ‌তে হ‌বে? শুধু তাই নয় আমা‌দের প্রায় আত্মীয় স্বজন তোর প্রশংসা ক‌রে, তোর গুনগান গায়। তুই ভদ্র, পড়াশুনায় ভা‌লো হ্যান ত্যান কত কি! এসব সহ্য ক‌রে তো‌কে ঘৃণা করাটা কি অস্বাভা‌বিক কিছু?
_” ও তার মা‌নে তুই প্র‌তি‌শোধ নি‌চ্ছিস?
_” না‌রে প্র‌তি‌শোধ কেন নিব। প্র‌তি‌শোধ নেবার হ‌লে তোর জীবন নরক ক‌রে দিতাম না!
_” এখন নর‌কের চে‌য়ে কম কি?
_” নারে এখন তো শুধু তো‌কে নর‌কের দরজা দেখা‌চ্ছি। পু‌রোপু‌রি নর‌কে ধাক্কা দেইনি। ত‌বে দেবার ব্যবস্থা করব।

‌প্রিয়‌তি কান্না‌ভেজা গলায় বলল,
_” কেন এমন কর‌ছিস প্রেমা?
_” ন্যাকা কান্না ক‌রিস না তো? এসব দেখ‌লে গা‌ জ্ব‌লে। জীবন পুরোপু‌রি নরক বানা‌তে না চাই‌লে তোর শ্বশুর‌কে স‌ত্যিটা বলতে বল। বা‌কিটা আমি ঠিক ক‌রে দিব।
_” আমার বিশ্ব‌াস হয় না বাবা এমন কিছু ক‌রে‌ছেন।
_” বাহ্ কয়মাস আগে পয়দা হওয়া‌ শ্বশু‌রের জন্য এত দরদ। অথচ ২৩-২৪ বছর যাবত যে ‌তোর বোন তার প্র‌তি বিন্দু মাত্র ভরসা নেই!
_” তুই নি‌জেই বল, তোর কথা কি ভরসা করার মত!
‌প্রেমা প্রিয়‌তির কা‌ছে এসে বলল,
_” শোন প্রিয়‌তি আমি কিন্তু তোর সু‌খের শেষ ক‌রে ছাড়ব। ম‌নে রা‌খিস। আমা‌কে কষ্ট দি‌য়ে কেউ সুখী হ‌তে পার‌বে না।

‌প্রেমা চ‌লে গেল। প্রিয়‌তি বা‌লি‌শে মুখ গু‌জে কান্না কর‌তে লাগল। প্রিয়‌তি বড্ড নরম ম‌নের মে‌য়ে। প্রিয়তি ম‌নে ম‌নে বলল,
_” ছোট‌বেলা থে‌কে দে‌খে আস‌ছি বাবা মায়ের প্রেমার প্র‌তি এক‌চোখা ভা‌লোবাসা। বড় ভাইয়া আর আমা‌কে ভা‌লোবাস‌লেও প্রেমার প্র‌তি তা‌দের টানটা যে‌নো সব‌চে‌য়ে বে‌শি। ছোট বেলায় দু বো‌নোর জন্য জামা কি‌নে আন‌লে প্রথ‌মে প্রেমা নি‌জের পছন্দমত নিত তারপর আমাকে নি‌তে বলত। মা‌ঝে মা‌ঝে দেখা যেত প্রেমা একটা জামা প‌রে ঘু‌রে ফি‌রে সেটা প্রিয়‌তি‌কে দিত আর ও নতুনটা নিত। ব‌াসায় ভা‌লো কিছু রান্না হ‌লে সবাইকে সমান ভা‌গে দেয়া হ‌লেও প্রেমার ভা‌গে বে‌শি থাকত, এম‌নকি প্রেমা প‌রে খা‌বে সে জন্যও তু‌লে রাখা হত। আমি বা ভাই চাই‌লে বলত তোরা তো খে‌য়ে‌ছিস। প্রেমাও তো আমা‌দের সা‌থেই খেত তবুও ওর জন্য আলাদা ক‌রে তু‌লে রাখা হত। মা‌ঝে মাঝে আমি রাগ কর‌লে বাবা মা বলত ওতো ছোট। ছোট বো‌নের সা‌থে হিংসা কর‌তে নেই। নি‌জের মন‌কেও তাই ভে‌বে‌ বুঝ দিতাম ও ছোট। ভাইয়াও তাই বলত। কিন্তু সেই ছোট বোনটা যখন আমার সু‌খেও ভাগ বসা‌তে শুরু করল তখন কী বলব? বাবা মা তো ওর প্র‌তি অন্ধ বিশ্বাসী। প্রিয়‌তি চোখ বন্ধ ক‌রে বলল, হে আল্লাহ আমা‌কে পথ দেখাও। আমি আমার রিদু‌কে চাই শীঘ্রই চাই। ওকে যে আমার খুব প্র‌য়োজন।
রিদুর কথা ম‌নে পড়‌তেই প্রিয়‌তির ফোনটা বে‌জে উঠল। কলটা রিদুর। প্রিয়‌তি ফোনটা রি‌সিভ করল না। কেটে মে‌সেজ করল,
_” কিছুক্ষণ পর কল কর‌ছি। আস‌লে প্রিয়‌তি চ‌ায় না রিদু আব‌ার ওর কান্না ভেজা কন্ঠ শুনুক। ত‌বে আবার টেনশন কর‌বে।

৫!!

রিদু ওর বাবার সাম‌নে বসে বলল,
_” বাবা আমি আপনা‌কে সব‌চে‌য়ে বে‌শি সম্মান ক‌রি, বিশ্বাস ক‌রি। প্লিজ বাবা স‌ত্যি ক‌রে বল‌ুন সে‌দিন কী হ‌য়ে‌ছিল? স‌ত্যিটা না জান‌লে তো সমস্যার সমাধান করতে পারব না।
হারুন সা‌হেব শান্ত হ‌য়ে বস‌লেন। ধীর গলায় রিদুর হাত ধ‌রে বল‌লেন,
_” ‌হৃদয় শোন বাবা আমি আগে যা ব‌লে‌ছি এখনও তাই বলব। তুই জা‌নিস আমি মিথ্যা ব‌লি না। আর তোর নি‌জেরও কি প্রেমার কথা ভরসা‌যোগ্য ম‌নে হয়?
‌রিদু ভ‌াবনায় প‌ড়ে গেল। ম‌নে ম‌নে ভাব‌লেন,
_” স‌ত্যি তো বাবাকে তো কখ‌নো মিথ্যা বল‌তে শুনি‌নি। ত‌বে হ‌য়ে‌ছিলটা কি সে‌দিন? স‌ত্যিটা কী? তা তো এখন প্রেমার মুখ থে‌কেই বের কর‌তে হ‌বে। যা ঘাপলা ওর মা‌ঝে আছে। এম‌নি ও মে‌য়ে‌কে ভরসা করার জন্য মন সায় দেয় না।

‌রিদু প্রিয়‌তি‌কে কল করল। কিন্তু প্রিয়তি ফোনটা রি‌সিভ করল না। বেশ ক‌য়েকবার কল করল। কিন্তু ফোন রি‌সিভ কর‌ছে না বা কল কে‌টেও দি‌চ্ছে না। প্রিয়‌তি ব্যস্ত থাক‌লে কল কে‌টে মে‌সেজ ক‌রে। কিন্তু আজ কিছুই কর‌ছে না। রিদু তি‌থিকে কল করল।
_” হ্যা‌লো তি‌থি।
_” হ্যাঁ ভাইয়‌া।
_” প্রিয়‌তি কোথায়? ফোন কেন তু্লছে না?
‌তি‌থি মুখ গোমরা ক‌রে বলল,
_” কিছুক্ষণ আগে প্রেমা আপু কি কথা নি‌য়ে যেন প্রিয়‌তি আপু‌কে ধাক্কা মা‌রে, তখন প্রিয়‌তি আপু প‌ড়ে গি‌য়ে জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছে। মাথা ফে‌টে গে‌ছে বোধ হয়। রক্ত বের হ‌য়ে‌ছে অনেক। চাচা-চা‌চি তা‌কে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে গেছে।
‌রিদু উদ্বিগ্ন হ‌য়ে বলল,
_” কী?
_” হ্যাঁ
_” কোন হস‌পিটা‌লে?
_” তি‌থি নাম বলল।

চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here