হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -০৩

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_০৩
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)

রোহান এক পাশে বসে হাঁপাতে শুরু করে। যা দেখে আদ্রাজ চোখ গরম করে তাকাতেই সে কোনো ভাবে উঠে ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তবে যাওয়ার আগে কিছু একটা বলেছিলো।

‘কাজ টা তুই ভালো করলি না! এই কাজের জন্য তোকে অনেক পোহাতে হবে। ভোগ করতে হবে তোকে এর পরিনাম। আরে তুই তো জানিস ও না এর পরিণতি ঠিক কি হতে পারে। রোহান খান কি তোকে বুঝিয়ে দিবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্!’

আদ্রাজ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। সারা শরীরে ভয়ংকর রাগের আক্রোশ বয়ে বেড়াচ্ছে। থরথর করে কাঁপছে সে। রাতুল আদ্রাজের হাত টেনে তাকে উঠিয়ে বলল,

‘চল আমার সাথে!’

আদ্রাজ কে এক প্রকার জোড় করে বাহিরে নিয়ে যায় সে। নিরা এখনো ফুঁপিয়ে কাঁদতে ব্যস্ত। এটি ছিলো তার জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! আদ্রাজ নামক মানুষ টা যদি না আসতো আজ তার সাথে কি হয়ে যেতো ভাবতেই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। আশার নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। তার জন্য ই নিরার এই অবস্থা। সেই সময় যদি এই বাড়িতে নিরা কে একা না ছাড়তো তাহলে এমন কিছুই হয়তো হতো না। কেন যে মরতে মেয়েটা কে একা ফেলে চলে গিয়েছিলো কে জানে! নিজেকে গালি দিলো শ’ খানেক। নিরার সাথে তার অন্যায় হয়েছে। মেয়েটা তো আসতেই চায় নি বরং তাকে জোড় করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আর জোড় পূর্বক নিয়ে এসে এভাবে বিপদে একা ফেলে দেওয়া। আজকে নিরার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতো না সে! মেয়েটা নিজের দুর্বলতা কখনো প্রকাশ করে নি কাঁদতে কখনো দেখে নি তাকে আশা। অথচ আজ তার ই জন্য ভয়ে রিতিমত কাতর সে। শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা জানা নেই তার! শুধু এই টুকু মনে হচ্ছে নিরার জীবন রক্ষাকারী হিসেবে আল্লাহ তার ই ভাই কে পাঠিয়েছিলো। নয়তো রোহান যেই কাজ করতে যাচ্ছিলো তার জায়গায় নিজে থাকলেও স্রেফ মৃত্যুর ডিসিশন টা নিতো।

‘কাঁদিস না আর নিরা। শান্ত হয়ে যা দেখ তুই এখন একদম সেইফ। কিচ্ছু হবে না তোর!’

‘দোস্ত ঐ ছেলেটা…(কথা সম্পূর্ণ বলতেও পারছে না ফুঁপিয়ে কাঁদার জন্য)

‘তোর কিছু করতে পারবে না শান্ত হ তুই প্লিজ!’

‘আজ তোরা না আসলে ঐ ছেলে টা আমাকে…

‘চুপ। একদম কোনো উল্টা পাল্টা কথা বলা তো দূর মুখেও আনবি না। জানোয়ার টা ভুলে গিয়েছিলো তার ও বাপ আছে। আর আমি খুব সরি রে তোর কাছে। তোকে এভাবে একা ফেলে যাওয়া আমার ঠিক হয় নি মাফ করে দে আমাকে!’

নিরা কে ছেড়ে দিয়ে আশা তার সামনে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে নিলে নিরা তাকে বাঁধা দেয়। আর আবারো পূর্বের ন্যায় জাপটে ধরে কাঁদতে থাকে। কেন যেনো মন টা শান্ত হচ্ছে না। বড্ড অশান্ত হয়ে আছে!

সবাই বলে মেয়েদের কষ্ট থাকলে মন খুলে কাঁদতে পারলে নাকি শান্ত হয়! আজ সে কথা টাও মিথ্যা বানোয়াট বলে মনে হচ্ছে! যদি সত্যি ই তাই হয় তাহলে আর কতো কাঁদলে এই অশান্ত মন কে শান্ত করা যাবে বলতে পারেন?

________________

আদ্রাজ বাসার বাহিরে বাগানের দিক টায় একটা চেয়ারে বসে আছে। এখনো রাগে ফুঁসছে সে। রাতুল বলল,

‘দেখ ভাই যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে শান্ত হয়ে যা।’

‘রাতুল তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস? শুয়রের বাচ্চা টা কে আমি ছেড়ে দিতেছে। ও এখনো বেঁচে আছে ভাবতেই আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে!’

‘আর ইউ ম্যাড আদ্রাজ?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল! তাও ওকে আমি আজকে মেরে বুঝাতাম একটা মেয়ের সম্মানহানি করার চেষ্টা করলে নিজের সাথে কি হতে পারে! শুধু আশা আর তোর জন্য পারি নি!’

‘আশার তোর জন্য চিন্তা হচ্ছিল কারণ তুই যেটা করতে চেয়েছিলি ঐ টা টোটালি ভুল ছিলো!’

‘কিসের ভুল? না মরলে ওর শিক্ষা হবে না!’

‘আমার মনে হয় না ও আর এমন কিছু করবে! এতো কিছুর পর ও যদি ওর শিক্ষা না হয় তাহলে ও একটা বেহায়া!’

‘ও আজ ঐ মেয়েটার দিকে হাত দিয়েছে কাল অন্য মেয়ের সাথে যে এমন করবে না তার গ্যারান্টি কি তুই দিতে পারবি?’

‘বললাম তো ভাই শিক্ষা না হলে ও একটা চরম লেভেলের বেহায়া!’

‘রাখ তোর বেহায়া! জীবনে আর কোনো মেয়ের দিকে যেনো না তাকাতে পারে, আর না তো কিছু ভাবতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলাম আমি তোরা বাঁধা দিলি কেন?’

‘হ্যাঁ খুব মহান কাজ করতে যাচ্ছিলেন না আপনি? খুন করে পরে জেলে কে যেতো? ফাঁসি তে কে ঝুলতো?’

‘আমি মনে করি ঐ টাই আমার জন্য ভালো ছিলো!’

‘মাঝখান দিয়ে আমার হবু বউ টা ভাই হারা হয়ে যেতো!'(বিড়বিড় করে)

‘কি বললি তুই?’

‘বললাম যে, শুন আদ্রাজ তুই রেগে আছিস তাই এখন এমন বলছিস! সামনে যদি আর ঐ শালায় এমন‌ কিছু করার চেষ্টা করে তোকে এই আমি কথা দিচ্ছি। এক লাথি মেরে ওর মেইন পয়েন্ট আমি হ্যাংক করে দিবো! প্রমিজ!’

আদ্রাজ নাক মুখ খিচে চুপ করে থাকলো। রাতুল ঠিক ই বলেছে এই কাজ টাই তার এখন করা উচিত ছিলো! জানোয়ার একটা!

রাতুল বলল,

‘এখন ঐ দিক টায় চল! প্রিয়া আপু নিশ্চয়ই তোকে খুঁজছে!’

‘যাবো না আমি! মুড নাই আমার! তুই যা!’

‘মেয়ে মানুষের মতো তুই ও কি এখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকবি নাকি এখানে?’

‘ঐ মেয়ে টার মনের অবস্থা একবার চিন্তা করেছিস? কি যাচ্ছে ওর মনের মধ্যে দিয়ে? আমি আসতে আর একটু দেরি করলে শুয়রের বাচ্চা টা ঐ মেয়ের সর্বনাশ করে দিতো! দেখেছিলো শুনশান স্তব্ধ ঐ রুম টায় কেউ ছিলো না তখন। কেউ কিছুই জানতে পারতো না! ইভেন ঐ টাইমে ওখানে না গেলে আমি ও‌ না!’

নিরা এখন টোটালি সেইফ আছে ভেবে মনস্থির করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো রাতুল।

আদ্রাজ অন্য দিকে তাকিয়ে কথা টা বলছিলো। ‘ঐ মেয়ে’ শব্দ টা ডেডিকেট করে বলছে নিরা কে। আর নিরা সেই মেয়ে যাকে দেখলে আদ্রাজ রেগে যায় তার জন্য আজ এতো চিন্তা হচ্ছে তার বন্ধুর? হাউ কিউট! রাতুল মনে মনে কথা গুলো চিন্তা করে মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো। আদ্রাজ সেটা লক্ষ্য করলো আর নিজে কি বলেছে বুঝতে পেরে কথা কাটানোর জন্য বলল,

‘বাঁদরের মতো হাসার কি আছে আজব!’

‘দোস্ত নিরার জন্য তোর চিন্তা হচ্ছে? লাইক সিরিয়াসলি! আই ক্যান নট এক্সপ্লেইন দিস! দ্যাট্স মিন’স সামথিং সামথিং ব্রো!’ (ভ্রুঁ জোড়া নাচিয়ে)

‘শাট আপ রাতুল!’ (রেগে)

রাতুল হাসতে হাসতে বলল,
‘অকে সরি সরি। চল প্রিয়া আপু কাছে যাই নিশ্চয়ই ওখানে সবাই খুঁজছে তোকে! আফটার অল এই পুরো এরিয়ায় একমাত্র ক্রাশ বয় তো তুমি দোস্ত!’

‘ঐ মেয়ে টা কে নিয়ে আমার সামনে আর কখনো কিছু বলবি না!’

‘এক্সকিউজ মি ব্রো নিরা কে নিয়ে কথা প্রথমে তুমি বলেছিলে আমি না!’

আদ্রাজ আর কিছু বললো না। এই টাইমে রাতুলের এই উল্টা পাল্টা কথা গুলো শুনার কোনো মুড ই নাই তার। তাই এর থেকে প্রস্থান করাই বেটার!

__________________

নিরা কাঁদতে কাঁদতে এবার চুপ হয়ে যায়। আর এক ফোটা শক্তি ও নাই মনে হচ্ছে তার শরীরে যা খরচ করে সে চোখের জল ফেলবে। আশা ও কান্না করে দিয়েছিলো।

‘তুই কাঁদছিস কেন?’

‘আমার জন্যই তো তোকে এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে!’

‘ধুর পাগলী!’

নিরা এখন এমন ভাবে কথা বলছে যেনো একটু আগে এখানে কিছুই হয় নি। আশা এটা দেখে খুব অবাক। এই মেয়ে টা কে বুঝা কষ্টসাধ্য। কখনো নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবে না!

‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসি?’

‘হু।’

নিরা এক পা বাড়ায় আবার পেছন ফিরে। সে কিছু বলুক তার আগে আশা বললো,

‘ভয় নেই আমি এখানেই আছি তুই যা!’

সত্যি ই নিরা ঠিক এই কথা টা ভাবছিলো আশা কিভাবে বুঝে নিলো সেটা? মৃদু হাসল নিরা। অতঃপর একটা জামা নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।

ঝর্না ছেড়ে দিয়ে আবারো নিশ্চুপে কান্না শুরু করে সে। ‘রোহান’ নামের কুৎসিত মানুষ টার কয়েক টা স্পর্শ তার মুখে গলায় লেগে লেপ্টে আছে যা আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছে আর নিরবে নিভৃতে পোড়াচ্ছে তাকে! নিরা পানি দিয়ে সেই কলুষিত, বাজে স্পর্শ গুলো কেই ধুয়ে মুছে নিজের শরীর থেকে দূর করার চেষ্টায় মত্ত রাখছে নিজেকে….! কষ্টের মাঝেও একটা ভালো লাগার অনুভূতি হৃদ মাঝারে স্ব-গোপনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। সেই সুক্ষ্ম সুন্দর ভালো লাগার অনুভূতি টা শুধু ‘আদ্রাজ’ নামের মানুষটি কে ঘিরে..!

চলবে———————

পাঠক/পাঠিকাগনের কাছ থেকে কেমন হয়েছে জানতে পারি কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here